চন্দ্রাবতীর অমর প্রেমগাথা

আবু সাঈদ তুলু

 

বাঙালি বিদ্বৎসমাজে চন্দ্রাবতীর নাম শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। বাংলার প্রাচীন মহিলা কবি হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন মনসামঙ্গলের পালাকার দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা। চন্দ্রাবতীর জীবন অত্যন্ত নাটকীয়। তাঁর জীবনের বিয়োগান্ত পরিণতি আজো বাঙালি সমাজকে করুণ রসে সিক্ত করে। ‘জাতীয় নাট্যোৎসব-২০১৬’-এ 888sport live chatকলার এক্সপেরিন্টাল থিয়েটার হলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চন্দ্রাবতীর বিয়োগান্ত জীবনচরিত নিয়ে চন্দ্রাবতী কথা নাটকটি মঞ্চস্থ করে কুষ্টিয়ার বোধন থিয়েটার। নাটকটির রচয়িতা আসলাম আলী এবং নির্দেশক শামীম সাগর। নাটকের ওই প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে চন্দ্রাবতীর কিংবদন্তি প্রসঙ্গ, নাট্যবৃত্ত, উপস্থাপন বৈচিত্র্য, নান্দনিকতা ও দর্শকের উপযোগিতা অন্বেষণই লেখাটির মূল লক্ষ্য।

কবি চন্দ্রাবতীর পরিচয় প্রথম দৃষ্টিগোচর হয় সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে-র ১৯১৩ সালে সৌরভ পত্রিকায় প্রকাশিত 888sport liveের মাধ্যমে। কয়েক খণ্ডি প্রকাশিত পূর্ববঙ্গ গীতিকায় সংগৃহীত ঊনচল্লিশটি পালার মধ্য থেকে দশটি পালা নিয়ে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় দীনেশচন্দ্র সেন
সংকলিত-সম্পাদিত মৈমনসিং গীতিকা। এর মাধ্যমে 888sport promo code কবি চন্দ্রাবতীর রচনার সঙ্গে পরিচয় যেমন ঘটে, তেমনি তাঁর বিয়োগান্ত জীবনালেখ্য নিয়ে রচিত পালা-গীতিকার সঙ্গেও বিদ্বৎসমাজ পরিচিত হন। চন্দ্রাবতীর জীবনীভিত্তিক জয়-চন্দ্রাবতী গীতিকা এবং চন্দ্রাবতী পালা উনিশ শতকে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। নয়ানচাঁদ ঘোষের চন্দ্রাবতী পালার কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘চন্দ্রাবতী’, যিনি মনসামঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা ও রামায়ণের রচয়িতা। প্রেমবিচ্ছেদের বিয়োগান্ত কাহিনি এ-পালার মূল উপজীব্য। এ-পালা থেকেই সাধারণত চন্দ্রাবতী চরিত্রের পরিচিতি নির্ধারণ করা হয়। এতে মানবিক রক্তক্ষরণে চন্দ্রাবতীর কাহিনি কিংবদন্তি রূপে তুলে ধরা হয়েছে।

চন্দ্রাবতী মূলত একজন কবি ও সাধিকা। অনেকে বাংলার প্রথম 888sport promo code কবি হিসেবেও তাঁকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের পাটুয়ারী গ্রামে আনুমানিক ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর জন্ম। ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন। বর্তমান কিশোরগঞ্জের পাতুয়ার গ্রামে দাঁড়িয়ে থাকা চন্দ্রাবতীর 888sport sign up bonusবিজড়িত শিবমন্দিরটি তাঁর ঐতিহাসিক সত্য তা প্রমাণ করে।

বাঙালি জীবনের দার্শনিক ভাষ্যকার ‘খনা’র মতো চন্দ্রাবতীরও ছিল সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক। সাধারণ মানুষের মুখে-মুখে প্রচলিত ছিল তাঁর রচনা ও ভণিতার শেস্নাক। তাঁর রামায়ণ পালা গতানুগতিক পুরুষতন্ত্রকে ছাপিয়ে 888sport promo codeবাদী এক আখ্যানে মূর্ত হয়ে উঠেছে। চন্দ্রাবতী পালা রচনা ছাড়াও বাঙালির গার্হস্থ্য জীবন নিয়ে অসংখ্য গান রচনা করেছেন তিনি। তাঁর রচিত পালাগুলো হলো – রামায়ণ, দস্যু কেনারামের পালা, মলুয়া প্রভৃতি। বাংলা 888sport live footballে ‘কবি’ হিসেবে তিনি অমর হয়ে রয়েছেন।

ঐতিহ্যের প্রতি দায়বোধ কুষ্টিয়ার বোধন থিয়েটারের নাট্যচর্চার মূল উৎস, নাট্যপালা চন্দ্রাবতী কথাই তার প্রমাণ। ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার ডাকবাংলোয় একঝাঁক প্রতিশ্রম্নতিশীল তরুণ মিলে গড়ে তোলেন বোধন থিয়েটার। শুরুতেই ‘জনগণের জন্য 888sport live chat’ শিরোনামে 888sport live chatচর্চার আদর্শ ধারণ করে নাট্যদলটি। দেশব্যাপী সুস্থ নাট্য-আন্দোলন গড়ে তুলতে ক্রমশ সচেষ্ট হয়ে ওঠেন তাঁরা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশ-জাতি ও 888sport live chatের প্রতি প্রতিশ্রম্নতিশীল বোধন থিয়েটার। নানা প্রযোজনায় ক্রমশ সমৃদ্ধ করে চলেছেন নাট্য-সমারোহ। দলের আদর্শ সম্পর্কে দলীয় প্রচারপত্রে উল্লেখ –

রক্ত আর ধ্বংসের পাদপীঠে জন্ম নিয়েছে আমাদের দেশ, কিন্তু সেই আত্মত্যাগের বেদিতে গড়ে ওঠেনি প্রত্যাশার নতুন জীবন ও সৃষ্টির ইমারত। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি শোষক শ্রেণি ও তাদের দোসররা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে 888sport live chat-888sport live football ও
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও জবরদখল করে আছে। এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে তোলার লক্ষে ১৯৭৯ সালের ২৬ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা ডাকবাংলোর ৬ নম্বর কক্ষে একদল প্রগতিশীল তরুণ-তরুণী ‘জনগণের জন্য 888sport live chat’ এই সেস্নাগানকে সামনে রেখে বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়া প্রতিষ্ঠা করে। বোধন থিয়েটার বিশ্বাস করে, ‘এ সমাজ পরিবর্তনশীল এবং এই পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় নিজেদের যুক্ত করে দেশব্যাপী সুস্থ নাট্য-আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব।’

বোধন থিয়েটার ১৯৮৩ সালে সংযুক্ত হয়েছে 888sport apps গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে। এ ছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও গ্রাম থিয়েটারে প্রতিনিধিত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ১৯৮৫ সালে গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনের জাতীয় সম্মেলন এবং ১৯৮৭ সালে 888sport apps গ্রাম থিয়েটারের জাতীয় সম্মেলনের আয়োজক ছিল বোধন। ২০০১ সালে 888sport appয় অনুষ্ঠিত আইটিআই থিয়েটার ফেস্টিভালে বোধন থিয়েটারের শুরু করি ভূমির নামে নাটকটি ব্যাপক প্রশংসিত ও আলোচিত হয়। বর্তমানে কুষ্টিয়ার নেতৃস্থানীয় দলে পরিণত হয়েছে বোধন থিয়েটার। তাদের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা –  আলো একটু আলো, ওরা কদম আলী, শুরু করি ভূমির নামে, চোর চোর, হীরক রাজার দেশে, ইংগিত, কোর্ট মার্শাল, জুতা আবিষ্কার, বকফুল কন্যা প্রভৃতি। চন্দ্রাবতী কথা তাদের সাম্প্রতিক প্রযোজনা।

উপচেপড়া দর্শক ছিল সেদিন। দীর্ঘ লাইন ধরে তারা অপেক্ষা করছিলেন চন্দ্রাবতী কথা দেখার জন্য। এ-কৌতূহলের পেছনে সম্ভবত চন্দ্রাবতী চরিত্রের কিংবদন্তি জড়িত। তাছাড়া নাট্যকার আসলাম আলী ও নির্দেশক শামীম সাগর 888sport appর বাইরে থাকলেও নানা কারণে নাট্যাঙ্গনে খুবই পরিচিত মুখ। তাঁরা চন্দ্রাবতীকে কীভাবে দেখেছেন, কীভাবে উপস্থাপন করেছেন – তাও দেখার বিষয় ছিল। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দর্শক প্রবেশের ঘণ্টা বাজে। ঢুকতেই দেখা যায় মঞ্চটি গ্রামের পালা বা যাত্রামঞ্চের আদলে গড়া। ওপরে ঝালর দিয়ে যাত্রামঞ্চের আবহ তৈরি করা হয়েছে। যন্ত্রীদল মঞ্চের পাশে বসা। শুরুতেই যন্ত্রসংগীতের অনুরণন; তারপর শুরু হয় নাটক। বিচারগান কিংবা কবিগানের মতো দুজন গায়েন মঞ্চে আসেন। বর্তমান সময়ের দুই কবিয়াল বা গায়েন ‘কার ভালোবাসা সত্যি, চন্দ্রাবতীর, না জয়ানন্দের?’ এমন এক প্রশ্ন দিয়ে কাহিনিকে নতুন করে যৌক্তিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। তারপর ধীরে-ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে চন্দ্রাবতীর জীবন ও তাঁর বিয়োগান্ত পরিণতি। চন্দ্রাবতীর চরিত্রের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সঙ্গে তৎকালীন সমাজের নানা অসংগতিও ধরা দেয় ঘটনার পরতে-পরতে। শুধু কবিগান নয়, পুরো উপস্থাপনাতে আবহমান বাংলার নানা আঙ্গিকের সমন্বয় ঘটেছে। তর্কের বিভিন্ন পর্যায়ে গায়েন দুজনের একজন জয়ানন্দ ও অন্যজন চন্দ্রাবতী চরিত্রে অভিনয় করেন। মূল কাহিনির চন্দ্রাবতীর নানা অবস্থা, পরিস্থিতিকে দুই গায়েন তর্ক ও অভিনয়ের মাধ্যমে নানাভাবে বিশ্লেষণ করেন। বাংলার আবহ পরিবেশনা-রীতিতেই বর্ণনা, নাচ, গান, অভিনয় সবকিছু অদ্বৈতরূপে মাধুর্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। বোধন থিয়েটার চন্দ্রাবতীর গল্পকে আবহমান বাংলার পরিবেশ888sport promo codeতির সমন্বয়ে নতুন এক পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছে।

নাট্যকার আসলাম আলী বলেন, ‘মৈমনসিং গীতিকায় অনেক পালার মাঝে চন্দ্রাবতী পালা একটি উল্লেখযোগ্য স্থান পেয়েছে। কবি নয়ানচাঁদ ঘোষ পালার মধ্যে চন্দ্রাবতীর 888sport promo codeহৃদয়ের প্রেমের যে-আখ্যান জয়ানন্দের জন্য রচনা করেন তা মর্মস্পর্শী। বঙ্গীয় উপদ্বীপের প্রথম 888sport promo code কবি চন্দ্রাবতী। কিশোরী চন্দ্রা ভালোবেসেছিল গ্রামেরই এক কিশোর জয়ানন্দকে। তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠান যখন আসন্ন, তখন জয়ানন্দ আসমানী নামে এক মুসলিম তরুণীর সঙ্গে এক সর্বনাশা মুহূর্তে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ে। পরে ঘোর কেটে গেলে চন্দ্রাবতীর কাছে ফিরে আসে জয়ানন্দ। চন্দ্রাবতী কথার গল্প শুরু এখান থেকে। বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়া নয়ানচাঁদের চন্দ্রাবতীর গল্পকে নতুন ঢংয়ে বলার চেষ্টা করেছে।’ (দলীয় প্রচারপত্র)

চন্দ্রাবতী কথা নাটকে কবির লড়াইয়ের মাধ্যমে পরিস্ফুট কাহিনিবিন্যাস এমন – বঙ্গীয় উপদ্বীপের প্রথম 888sport promo code কবি চন্দ্রাবতী। পিতা মনসামঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাস। কিশোরী চন্দ্রা ভালোবেসেছিল গ্রামেরই বাল্যসখা এক কিশোর জয়কে। চন্দ্রাবতীর আবেগ ধরা দেয় এভাবে – ‘তোমারে দেখিব আমি নয়ন ভরিয়া/ তোমারে লইব আমি হৃদয়ে তুলিয়া’। পরিবারের সম্মতিক্রমে জয় ও চন্দ্রাবতীর বিয়ে ঠিক হয়। তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান যখন আসন্ন তখন জয়ানন্দ বা জয়চন্দ্র আসমানী নামে এক মুসলিম তরুণীর সঙ্গে এক সর্বনাশা মুহূর্তে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ে। জয়ানন্দ ধর্মান্তরিত হন। চন্দ্রাবতীর হৃদয় ভেঙে যায়। প্রচ- আঘাতে মুষড়ে পড়েন। পিতা বংশীদাস কন্যার এহেন মানসিক অবস্থায় ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। পিতা দ্বিজ বংশীদাস চন্দ্রাবতীকে শোক ভুলে থাকার জন্য শিবপূজা ও রামায়ণ রচনায় রত হতে বলেন। কন্যার জন্য শিবমন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় ঘোর কেটে যায় জয়ানন্দের। জয়ানন্দ ফিরে আসেন চন্দ্রাবতীর কাছে। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। চন্দ্রাবতী শিবের পূজায় মগ্ন। রুদ্ধদ্বার চন্দ্রাবতী জয়ানন্দের বারবার ডাকার মুখে কোনো সাড়া দেননি। চন্দ্রাবতীর প্রত্যাখ্যানের প্রতীক বুঝতে আর বাকি থাকে না জয়ানন্দের। ‘শৈশবকালের সঙ্গী তুমি যৈবনকালের সাথী/ অপরাধ ক্ষমা কর তুমি চন্দ্রাবতী/ পাপিষ্ঠ জানিয়া মোরে না হইলা সম্মত/ বিদায় মাগি চন্দ্রাবতী জনমের মত।’ চিরবিদায় জানিয়ে আত্মগস্নানিতে জয় ফুলেশ্বরী নদীতে প্রাণ বিসর্জন দেন। চন্দ্রাবতী শোকে আরো মুহ্যমান হয়ে পড়েন। পালাকার নয়ানচাঁদ ঘোষের ভণিতায় – ‘স্বপ্নের হাসি স্বপ্নের কান্দন নয়ান চান্দে গায়। নিজের অন্তরের দুষ্কু পরকে বুঝান দায়।’ চন্দ্রাবতী কোনো বিবাহ করেননি। নদীতীরে পিতৃনির্মিত শিবমন্দিরেই বাকি জীবন শিব আরাধনায় কুমারী জীবন অতিবাহিত করেন তিনি। রামায়ণ রচনা অসমাপ্ত রেখেই চন্দ্রাবতী ইহলোকের লীলা সাঙ্গ করেন।

নাটকের নির্দেশক শামীম সাগর বলেন, ‘প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে বঙ্গীয় উপদ্বীপে জন্ম নেওয়া রক্ত-মাংসের দ্রাবিড় রমণী চন্দ্রাবতী ছিলেন বিদুষী, চিন্তা-চেতনায় প্রাগ্রসর এক কবি। বাংলা 888sport live footballের এক ট্র্যাজিক নায়িকা চন্দ্রাবতী, আমৃত্যু তাঁর কেটেছিল ব্যর্থ প্রেমের এক বিয়োগান্ত 888sport sign up bonus নিয়ে। বর্তমানের 888sport promo codeদের অবস্থানও একই অবস্থানে রয়েছে, ৫০০ বছরে যেন কোনোই পরিবর্তন ঘটেনি। তাই নাট্যকাণ্ডির মাধ্যমে কবি চন্দ্রাবতীকে 888sport app download for android ও সম্মান জানানোর মাধ্যমে 888sport promo codeর বর্তমান অবস্থাকে বিশ্লেষণ করা তাই খুবই প্রাসঙ্গিক। বোধন থিয়েটার কুষ্টিয়া সেই উদ্যোগই গ্রহণ করেছে।’ (দলীয় প্রচারপত্র)

দুই কবিয়াল বা গায়েনের কবির লড়াইয়ের মাধ্যমে নাট্যপালাটি উপস্থাপিত হয়। কবিযুদ্ধ অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও মেধাদীপ্ত ছিল। শুধু কবিগান নয়, গ্রামীণ পালা, যাত্রা কিংবা গীতনাট্যের নানা বৈশিষ্ট্যই লক্ষণীয় ছিল উপস্থাপনায়। পালাকার থেকে চন্দ্রাবতী কিংবা পালাকার থেকে জয়ানন্দ চরিত্রে পরিবর্তন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, অভিনয় দক্ষতা ও ধীশক্তিসম্পন্ন হলেও দুজন পালাকারই অত্যন্ত নৈপুণ্যের সঙ্গে তা করতে সমর্থ হয়েছেন। চন্দ্রাবতী, জয়ানন্দ চরিত্রায়নও অত্যন্ত চমৎকার বিশ্বাসযোগ্য পরিম-ল তৈরি করেছে। নাটকে বর্ণনাত্মক অভিনয়ের সঙ্গে চরিত্রাভিনয়ের সমন্বয় ঘটেছে। বংশীদাস, কাজী, আসমানী প্রভৃতি চরিত্রের অভিনয় প্রাণবন্ত হলেও পরিমিতিবোধসহ নানা বিষয়েই মনোযোগের প্রয়োজন আছে। আসমানীর পোশাক নিয়ে নির্দেশকের আরো ভাবার সুযোগ আছে। পালাকারদের উপস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত পেটরা বা ট্রাঙ্কগুলো হাজার বছরের বাংলার পেশাদার পরিবেশ888sport promo codeতির বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরে। কাপড়, চেয়ার প্রভৃতি ব্যবহারের সাজেস্টিক উপায়ে নানা দৃশ্য ও নানা মাত্রার ব্যঞ্জনা প্রকাশ উপভোগ্য। গান-নৃত্যগুলো হৃদয়স্পর্শী। আবহমান ঢংয়ের সঙ্গে সমকালীন বৈশ্বিক জ্ঞান প্রযুক্ত আছে বলে বিধৃত হয়। তবে পরিবেশনায় আঙ্গিক পরিবর্তনে সহজ-সরলীকরণ ও আরো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মতার দরকার আছে। এসবের আড়ম্বর যেন ঘটনার ক্রমবিকাশে বাধাপ্রাপ্ত না হয়। নাটকটিতে উপস্থাপনের যে মিশ্রিত কৌশল ধারণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। বিচ্ছিন্নভাবে ঘটনা উপস্থাপনা আলাদা একটি মাত্রা তৈরি করেছে বটে, তবে তা ডকুমেন্টারির মতো যেন না হয়। ঘটনার সরল ক্রমপ্রবহমানতা বিষয় অনুধাবনে বেশি গুরুত্ব রাখত বলে মনে হয়। এ-নাটকে কোরিওগ্রাফি ও অভিনয় নিয়ে আরো কাজ করার আছে। সর্বোপরি কবির লড়াই, বর্ণনা, নাচ, গান, অভিনয়, গ্রামীণ খেলা সবকিছু মিলে টানটান প্রাণবন্ত নাট্য উপস্থাপনা। সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়েই নাটকটির উত্তরোত্তর মঞ্চসাফল্য কামনা করছি।

মঞ্চে পালাকারগণ – বিশ^জিৎ মজুমদার, ফাইজা ইসলাম পলস্নী, শাহেদ সরোওয়ার্দী, হুমাইয়া তানভীন টুকটুকি, আরিফুজ্জামান, আনিসুর রহমান। সংগীত দল – আশরাফুন নাহার দিনু, শহিদুর রহমান রবি, শাহীন সরকার, আকাশ চক্রবর্তী, ফেরদৌসী পারভীন পপি। নেপথ্যে-আলো – নজরুল ইসলাম খোকন। সংগীত ও কোরিওগ্রাফি – আশরাফুন নাহার দিনু। যাত্রা ও লোক আঙ্গিক – শাহীন সরকার। মঞ্চ-পরিকল্পনায় শাহেদ সরোওয়ার্দী। পোশাক পরিকল্পনায় বিশ^জিৎ মজুমদার। প্রযোজনা অধিকারী আমিরুল ইসলাম। r