চার দিনের বিলাসিতা এবং চার ঘণ্টায় শহর দেখা

পৃথিবীর অনেক মানুষের কাছেই বাহামা যাওয়া স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার। আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের খুব কাছে কয়েকটি ছোট দ্বীপের সমাহার। চারদিকে সাগরের নীল জলরাশি আর অবারিত সৈকত। ঋতুভেদ বিশেষ নেই। আমেরিকা আর কানাডাতে যখন প্রচণ্ড শীত, তখনো সেখানে সারাদিন রোদ। আমেরিকা-কানাডা থেকে পর্যটকরা শীতকালে সেখানে যায় কয়েকটা দিন ঠান্ডা আর বরফ থেকে বাঁচার জন্য। বড় বড় ক্রুজের জাহাজে পর্যটনের একটি প্রধান গন্তব্য বা বিরতির জায়গা এটা। আমার জন্য এটা শুধু নতুন একটি দেশই নয়, একটা অপরিচিত অঞ্চল। সেখানে চার দিনের 888sport slot game ছিল আমাদের ছোট ছেলে সুমন্ত আর তার স্ত্রী প্রতীক্ষার বিশেষ উপহার – আমাদের বিয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে। তবে আমাদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ ছিল তিন প্রজন্মের একসঙ্গে যাওয়া। অবশ্য তিন প্রজন্মের 888sport slot game আমরা একসময় করেছি – যদিও সেটা কয়েক দশক আগের কথা । আর এখন তিন প্রজন্মের মধ্যে আমিই জ্যেষ্ঠ।

সেদিন নিউইয়র্কে ভোর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। তার মধ্যেই উবার ট্যাক্সি ডেকে আমরা কেনেডি এয়ারপোর্টের পথে রওনা হয়ে গেলাম। সাড়ে ৯টায় আমাদের ফ্লাইট, গন্তব্য বাহামা দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী না-স (ইংরেজিতে লেখে Nassau, উচ্চারণ করে naa-saw–না-স)। চেক-ইন, নিরাপত্তা তল্লাশি, বোর্ডিং সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক এবং সময়মতো। এমনকি পাইলট ঘোষণায় বলেও দিলেন যে, আমরা সময়মতো যাত্রা শুরু করে ঠিক সময়ে পৌঁছে যাব। কিন্তু কিছুক্ষণ ট্যাক্সি করে রানওয়েতে গিয়েই তিনি জানালেন যে, বৃষ্টির কারণে অনেক ফ্লাইট একসঙ্গে হয়ে গেছে; আর আমরা সিরিয়ালে বেশ পেছনে আছি বলে একটু সময় লাগবে। সেটা গড়াতে গড়াতে ফ্লাইট শেষমেশ প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে উড়ল। তবে যাত্রা ছিল নির্বিঘ্ন, আর পৌঁছে দেখলাম না-সতে ঝকঝকে রোদ। তার পরের চার দিনও আমরা রোদ পেয়েছিলাম। সেই অঞ্চলে আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর হারিকেনের মৌসুম; সুতরাং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এরকম আবহাওয়া পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয় বইকি।

যদিও ইন্টারনেটের সৌজন্যে আবহাওয়া সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা নিয়ে গিয়েছিলাম, 888sport app বিষয়ে তেমন খোঁজ নিইনি। তাই এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়েই চারদিকে তাকাচ্ছিলাম উৎসাহ নিয়ে। আর দুটি বিষয় সহজেই নজরে পড়ল।

প্রথমটি সে-এলাকার গাছপালা। গরমের দেশ, বৃষ্টিও হয় বেশ। সুতরাং ঘন বন না থাকলেও বড় গাছপালা থাকা স্বাভাবিক বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পর যে-এলাকা দেখলাম তাতে বড় গাছ তেমন ছিল না। অবশ্য রাস্তার দুপাশে সৌন্দর্যের জন্য পামজাতীয় গাছ সারি করে লাগানো ছিল। দ্বিতীয়ত ছিল রাস্তার বাঁপাশ দিয়ে গাড়ি চলা, যেমনটা 888sport apps বা বিলেতে। তখন মনে পড়ল যে, দেশটি আমাদের মতোই ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল; সুতরাং বিলেতের মতো রাস্তার বাঁপাশ দিয়ে গাড়ি চলাটাই স্বাভাবিক। গাড়ির ভেতরে চোখ ফিরিয়ে লক্ষ করলাম, স্টিয়ারিং হুইল বাঁদিকে, ডানে নয়। তার ব্যাখ্যাও পেয়ে গিয়েছিলাম পরে। যেসব গাড়ি আমেরিকা থেকে আমদানি হয় সেগুলোতে সে-দেশের মতো স্টিয়ারিং বাঁদিকে আর জাপান বা কোরিয়া থেকে আসা গাড়ির স্টিয়ারিং ডানদিকে।

সুমন্ত আমাকে বলে রেখেছিল যে, আমাদের থাকার ব্যবস্থা হোটেলে নয়, একটি রিসোর্টে – নাম আলবেনি। সেখানে হোটেল ধরনের কিছু অ্যাপার্টমেন্ট, যার একটি সে ভাড়া নিয়েছে। আলবেনির গেট থেকে ভেতরে ঢোকার পরই বুঝতে পারলাম, এটি একটি বিশাল গ্রাম বা পাড়ার মতো, যেখানে রয়েছে অনেক ভিলা এবং কয়েকটি বহুতল দালান। তারই একটির নাম Honeycomb – সেখানে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট। আমাদের গাড়ি থামতেই একজন এসে দরজা খুলে ধরে আমাদের অভ্যর্থনা জানাল। এই ব্যবস্থা পাঁচতারকা হোটেলে সাধারণ। তবে অতিরিক্ত একটি বিষয় লক্ষ করলাম, ভেতর থেকে এক 888sport promo code বের হয়ে এসে সুমন্তকে তার পোশাকি নাম ধরে অভ্যর্থনা করে নিজের পরিচয় দিলেন। তিনি আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের চাবি সুমন্তর হাতে দিয়ে রিসোর্টে কী কী রয়েছে তার একটি ফিরিস্তি দিলেন। সঙ্গে দিলেন একটি গলফ কার্টের চাবি। গাড়িটি ব্যাটারিচালিত, যে-ব্যাটারি চার্জ করার ব্যবস্থা রয়েছে পার্কিংয়ের জায়গায়।

প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের জন্য একটি করে গলফ কার্ট, কারণ একটি কফি শপ, সুপার মার্কেট আর কয়েকটি দোকান বাদে অন্য সবকিছু, যেমন রেস্তোরাঁগুলি, সুইমিংপুল, সিনেমা, স্পা, নাইট ক্লাব, গলফ কোর্স ইত্যাদি রিসোর্টের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেসব জায়গায় দ্রুত পৌঁছানোর জন্য এ-ব্যবস্থা। হ্যাঁ, রিসোর্টের নিজস্ব সবকিছু। সুতরাং বাইরে কোথাও না গিয়ে কয়েকটি দিন কাটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানেই।

তবে সবকিছু যেমন পাওয়া যায়, তার জন্য কড়িও গুনতে হয় ভালোই। এর উদাহরণ পেয়ে গেলাম প্রথম দিন বিকেলেই। গীতশ্রী তার মাথার টুপি আনতে ভুলে গিয়েছে; কিন্তু এখানে রোদের তীব্রতা এত বেশি যে, বাইরে বের হলে টুপি অতিপ্রয়োজনীয়। সুইমিংপুলের পাশেই পাওয়া গেল খেলাধুলার সামগ্রীর দোকান, আর টুপিও ছিল সেখানে। কিন্তু সবচাইতে কম দামই ছিল ৬১ ডলার (নিউইয়র্কের ম্যানহাটনেও পনেরো থেকে তিরিশ ডলারের মধ্যে এরকম টুপি পাওয়া যায়)! তবে এটি হচ্ছে আলবেনির নিজস্ব লোগো ‘ধ’ খচিত এবং একটি নামকরা কোম্পানির লেবেল লাগানো। সুতরাং দাম তো দিতেই হবে! আমাদের জন্য অবশ্য একটু সান্ত্বনার বিষয় ছিল : লেবেলটিতে লেখা দেখলাম – ‘মেইড ইন 888sport apps’। সুতরাং ৬১ ডলারের সামান্য একটু অংশ নিশ্চয় 888sport appsের ধনীদের হাত হয়ে দরিদ্র শ্রমিকদের হাতে পৌঁছবে। একই সঙ্গে আরেকটি কথা আমার মনে হলো। সাধারণভাবে শোনা যায়, 888sport apps থেকে মূলত মাঝারি এবং নিম্ন আয়ের বাজারের জন্যই পোশাক রফতানি হয়;  ৬১ ডলারের এই টুপি অবশ্যই তার ব্যতিক্রম এবং আমার আশা, এ-ধরনের উদাহরণ ব্যতিক্রম না থেকে সাধারণে পরিণত হবে ।

শুনলাম, করোনা মহামারি যখন তুঙ্গে ছিল এবং মানুষ মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে বাঁচার চেষ্টা করছিল, তখন ধনী লোকের কাছে নাকি এই রিসোর্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। নিজেদের ব্যক্তিগত বিমানে এসে ভিড় এড়িয়ে শহরের একেবারে উল্টো দিকে এই জায়গায় এসে তাঁরা অবকাশ যাপন করেছেন। আর অন্য সময়েও তাঁদের কাছে এটি প্রিয়, কারণ অনেকেই পছন্দ করেন সাধারণের দৃষ্টির আড়ালে নিজের মতো করে সময় কাটাতে। কফিশপ, দোকান, রেস্তোরাঁ, সিনেমা ইত্যাদি সব জায়গায় একটি নোটিশ টানানো দেখলাম : ছবি তোলা এবং অটোগ্রাফ চাওয়া নিষেধ। সরল বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে এই যে, তারকা খ্যাতিসম্পন্ন কাউকে দেখলেই তার সঙ্গে ছবি তুলতে বা তার অটোগ্রাফ চাইতে যেও না।

পরে দেখেছি, না-স’তে বিশাল আকারের বেশ কয়েকটি পাঁচতারা হোটেল রয়েছে; কিন্তু সেসব জায়গায়ও জনসমাগম হয়, কারণ পৃথিবীতে ধনী মানুষও নেহায়েত কম নয়। সুতরাং যাঁরা অতি ধনী এবং তারকা, তাঁরা হয়তো অন্য ধনীদেরও এড়িয়ে চলতে চান।

অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে মনটা আরো ভালো হয়ে উঠলো; বসার, খাওয়ার এবং রান্নার জায়গা থেকে সমুদ্রের একটু অংশ দেখা যায়, আর সেখানে বাঁধা রয়েছে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি প্রমোদতরী। আর সেই ম্যারিনার পরেই অবারিত সমুদ্র। তবে সেটি আটলান্টিকের অংশ নয় – একটি উপসাগর, যার নাম ওল্ড ফোর্ট বে। একদিন আমরা কয়েক ঘণ্টার জন্য নৌকা ভাড়া করে সেই সাগরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেই কথায় আসব একটু পরে।

আলবেনি রিসোর্টে রয়েছে একাধিক সুইমিংপুল আর বাচ্চাদের জন্য ওয়াটার পার্ক। এসব দেখে মনে পড়ে গেল আমার যৌবনের কথা, যখন আমাদের বাচ্চারা পছন্দ করত বিচে বেড়াতে যাওয়া। আর এখন দেখলাম ওরাই ওদের বাচ্চাদের নিয়ে যায় সে-ধরনের জায়গায়। সুমন্ত এবং প্রতীক্ষা দুজনেই পছন্দ করে বাচ্চাদের নিয়ে বিচে বা সুইমিং পুলে সময় কাটাতে। আর এখানে পুলের পাশেই চারদিক খোলা বিশাল এক রেস্তোরাঁ। সেখানে দুপুরের খাওয়া সেরেই ওরা নেমে গেল পুলে।

একটা ব্যাপার আমি লক্ষ করলাম, খুব অল্পসংখ্যক লোকই সাগরে নেমে সাঁতার কাটছিল। এর কারণটা অবশ্য সেখানে কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। আমিও চারদিনের মধ্যে একবারই সমুদ্রে গিয়ে সাঁতার কেটেছিলাম, আর সেটাও অল্প সময়ের জন্য । হাঙরের ভয় থাকলে নিশ্চয় রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ নোটিশ লাগিয়ে রাখত। তবু আমার আশপাশে একেবারে কেউ না থাকাতে একটু ভয় যে লাগছিল না সেটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তাছাড়া ‘সমুদ্রে সাঁতার দিতে গিয়ে বৃদ্ধের সলিলসমাধি’ জাতীয় সংবাদের বিষয় হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। পৃথিবীর অনেক দেশে গিয়েই সমুদ্রে নামার সুযোগ আমার হয়েছে। কিন্তু বাহামার ওই সাগরের পানিতে নেমে একদিকে যেমন সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়েছি এরকম সুযোগ দেওয়ার জন্য, আবার সেখান থেকে উঠেও এসেছিলাম বেশ তাড়াতাড়ি।

আলবেনিতে পুলের ধারের রেস্তোরাঁ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাওয়ার জায়গা – ইতালিয়ান, জাপানি ইত্যাদির আলাদা আলাদা রেস্তোরাঁ। প্রথম দিন গেলাম ইতালিয়ান রেস্তোরাঁয়, যেখানে চেয়ার-টেবিল ছিল একেবারে সৈকতের ওপরেই। আর সন্ধে হওয়ার আগেই গিয়েছিলাম বলে দেখতে পেলাম সৈকতে দিন শেষ হওয়ার অপরূপ দৃশ্য। খাবার অর্ডার দেওয়ার পর গল্পগুজবে কেটে গেল কিছুটা সময়। তখন পুবের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, নীলাভ আকাশে সাদা মেঘের পাশে ফুটেছে একটি সাদা ফুল – প্রায় গোলাকার। পূর্ণিমার আরো কয়েকদিন বাকি ছিল বলে সাগর থেকে উঠে আসা আস্ত গোল থালার মতো চাঁদ দেখার সৌভাগ্য হলো না, কিন্তু যা দেখলাম সেটিও ছিল অপরূপ ।

যে-দেশের চারদিকে সমুদ্র সেখানে সামুদ্রিক মাছ হবে প্রধান খাবার এবং তার দাম থাকবে সাধ্যের মধ্যে, এমনটিই ছিল আমার ধারণা। কিন্তু এই রেস্তোরাঁর মেন্যুতে স্থানীয় মাছ বলে বর্ণনা করা গারুপা (কেউ বলে গ্রুপা) মাছের পদের দাম ছিল 888sport app পদের চাইতে অনেক বেশি। সীমিত আয়ের পরিবার থেকে আসা মানুষ আমি; রেস্তোরাঁতে মেন্যুর ডান দিকটি আগে দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু সুমন্ত আমাকে উৎসাহিত করল সেটিই অর্ডার করতে, বললো, এখানে এসে কেউ মেন্যুর ডান দিকে তাকায় না।

একদিন পরই (যেদিন আমরা ‘শহর’ দেখতে বের হয়েছিলাম) আমি বুঝতে পারলাম যে, মাছ অবশ্যই এখানে একটি উল্লেখযোগ্য খাবার। আমাদের রিসোর্ট থেকে বে রোড ধরে শহরের দিকে গেলে মাঝপথে দুটি রাস্তার নাম ফিশ ফ্রাই ওয়ে এবং ফিশ ফ্রাই স্ট্রিট, যেখানে সারি সারি দোকানে শুধু ভাজা মাছ পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকেদের মতো করে মাছ খাওয়ার জন্য যেতে হবে সে-ধরনের কোনো রেস্তোরাঁতে। এই প্রসঙ্গে আর একটি খাবারের কথা না বললেই নয় – শঙ্খ। হ্যাঁ, শাঁখ – যা বাজানো হয় বিভিন্ন উপলক্ষে। শাঁখের ভেতরে থাকে মাংস, যা বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া হয় বাহামাতে। আমাদের রিসোর্টে যে-রেস্তোরাঁয় দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় খেতে গিয়েছিলাম সেখানে এটা ছিল স্প্যাগেটি বলোনেতে – বিফের বদলে সসের সঙ্গে শঙ্খকুঁচি। খেতে মন্দ ছিল না; তবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, স্থানীয় জিনিস স্থানীয়দের মতো করেই খেতে হয়।

আমাদের চার দিনের বিলাসিতার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল প্রমোদতরীতে 888sport slot game, যার জন্য ভাড়া করা হয়েছিল মিনি সাইজের একটি ইয়ট। ছোট হলেও নৌকাটিতে ছিল দুটি বেডরুম, দুটি বাথরুম, দুটি লাউঞ্জ এবং ছোট্ট এক চিলতে রান্নার জায়গা। বাইরে ছিল দুটি ডেক, যার একটিতে টেবিলের চারদিকে কয়েকজন বসে খেতে বা পান করতে পারে। নৌকাটি চালানোর জন্য ছিল একজন ক্যাপ্টেন। বয়সে তরুণ মনে হলেও তার কথায় বোঝা গেল যে অভিজ্ঞতা নেহায়েত কম নয়। শুধু আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেটভিত্তিক অভিজ্ঞতা ছাড়াও সে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে তার বাবার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে। তার সঙ্গে আলাপে মাছ ধরা সম্পর্কেও একটু ধারণা পেলাম।

আলবেনির ম্যারিনা থেকে বের হয়ে মূল সাগরে পৌঁছেই নৌকা তার পূর্ণ গতিতে চলতে শুরু করল। সে-সময় অবশ্য ক্যাপ্টেন আমাদের সবাইকে ভেতরের লাউঞ্জে থাকতে বলল। তবে ভেতর থেকে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য – বিশেষ করে নীল জল কেটে পেছনে ফেনা উঠিয়ে এগিয়ে যাওয়া ভালোই দেখা যাচ্ছিল। সাগরের বুক চিরে বেশ খানিক দূর যাওয়ার পর ডানদিকে বাঁক নিয়ে নৌকা আবার তীরের দিকে যেতে শুরু করল এবং তটরেখার কাছাকাছি গিয়ে এক জায়গায় নোঙর ফেলল। ক্যাপ্টেন আমাদের জানাল যে, সেখানে গভীরতা বেশ কম এবং চাইলে আমরা নেমে স্নোরকেলিং করতে পারি। আমার এই ব্যাপারে কোনো উৎসাহ ছিল না, কিন্তু সুমন্ত এবং প্রতীক্ষা দুজনেই নেমে পড়ল পানিতে। ওদের কাছ থেকে পরে শুনেছিলাম, অল্প হলেও কিছু মাছ ওরা দেখেছিল। তখন আমার মনে পড়ল, থাইল্যান্ডের কো সামুই গিয়ে একটা ছোট নৌকায় চড়ে আমরা ঝড়ে পড়েছিলাম। তবে একটা ছোট্ট দ্বীপের কাছে গিয়ে নৌকা থেকেই অনেক মাছ দেখেছিলাম।

সে যাই হোক, কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর আমাদের ফেরার পালা। ফেরার পথে সাগরের মাঝখানে যাওয়ার পর নৌকা যখন গতি বাড়াল তখন ক্যাপ্টেন আমাকে ডেকে বসার অনুমতি দিলো। আর তখনই আমি যাত্রাটি ভালোভাবে উপভোগ করার সুযোগ পেলাম। বিচে বসে সমুদ্র দেখার তুলনায় মাঝসমুদ্রে অথই জলরাশির ওপর ছোট একটি নৌকাতে বসে চারদিকের সৌন্দর্য উপভোগ করার মধ্যে পার্থক্য যে অনেক সেটা ওখানে না গেলে বুঝতে পারতাম না। আর নৌকার ভেতরে এয়ার কন্ডিশন করা ঘরে বসে বাইরের দৃশ্য দেখার চাইতে ডেকে বসে সেই একই দৃশ্য দেখার মধ্যেও বিস্তর ফারাক। আমার মাথার ওপর এবং চারদিক দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দুরন্ত বাতাস আর নৌকাটি সাগরের নীল জল কেটে যেতে যেতে পেছনে ঢেউ আর ফেনা তুলে সৃষ্টি করছে এক 888sport live chatকর্ম। সূর্য একটুখানি হেলে পড়েছিল। তার পাশে কয়েক টুকরো মেঘ নীল আকাশের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছিল। আমি চিত্র888sport live chatী হলে হয়তো সেরকম একটি দৃশ্য ক্যানভাসে তুলে ধরতে চেষ্টা করতাম; কিন্তু আপাতত ক্যামেরাতেই তা ধরে রাখার চেষ্টা করলাম ।

চার ঘণ্টায় শহর দেখা

প্রথম দিনই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আলবেনি রিসোর্টের পরিবেশ আমার জন্য কৃত্রিম এবং না-সর আর কোনো কিছু না দেখে ফিরে গেলে দেশটি সম্পর্কে কিছুই জানা হবে না। তাছাড়া কৌতূহল জাগানোর মতো কিছু তথ্য আমি বের করতে পেরেছিলাম। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ এই দেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭৩ সালে। সেভাবে দেখলে এর বয়স 888sport appsের চাইতে কম। তার ইতিহাসে রয়েছে আমেরিকার দাস ব্যবসায়ের শিকার হওয়া এবং ঔপনিবেশিক শাসন। কিন্তু এখন তার মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩০ হাজারের বেশি মার্কিন ডলার, যা ইউরোপের অনেক উন্নত দেশের মতো। দারিদ্র্যের হার হয়তো উন্নত দেশগুলির চাইতে কিছুটা বেশি, কিন্তু সেরকম প্রকট এবং দৃশ্যমান দারিদ্র্য নেই বলা যায়। মূলত পর্যটন এবং আর্থিক সেবা খাতের ওপর ভর করে গড়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি।

সুমন্ত কয়েক ঘণ্টার জন্য একটি গাড়ির (এবং সঙ্গে চালকের) ব্যবস্থা করে দিলো। যথাসময়ে দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি। চালক নিজের পরিচয় দিলো – নাম ইয়েন (আসলে বানান করে Ian)। শুনে আমি বললাম, তুমি কি জানো যে এই নামে একজন বিখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন? সে বিনীতভাবে জানাল, সে নিজে ক্রিকেট খেলে না। তবে সে আমার সঙ্গে পরের কয়েক মিনিট বাহামার ক্রিকেট নিয়ে আলাপ করল। একটু দুঃখের সঙ্গে বলল, আমাদের ক্রিকেট টিম আছে, তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো উঁচু পর্যায়ের নয়। কাকতালীয় ব্যাপার : আমি যেসব জায়গায় যেতে চাইলাম সেই পথের শুরুর দিকেই সে আমাকে দেখিয়ে দিলো বাহামা ক্রিকেট ক্লাবের ভবন এবং সঙ্গে ক্রিকেট খেলার মাঠ (যদিও এটা আমার তালিকায় ছিল না)। দর্শকদের গ্যালারি না থাকলেও মাঠটি সুন্দর এবং ভালোভাবে রাখা আছে দেখে ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আমার বেশ আনন্দ হলো।

যাত্রা শুরুর আগেই আমি আমাদের ড্রাইভার-কাম-গাইড ইয়েনকে একটি ছোট তালিকা দিয়ে বলেছিলাম সেসব জায়গা দেখিয়ে দিতে। তার মধ্যে ছিল ডাউনটাউন এবং পার্লামেন্ট স্কোয়ার, স্ট্র মার্কেট, জেলে নৌকার বন্দর এবং মাছের আড়ত, কুইন্স স্টেয়ারকেইস (রানির সিঁড়ি), আর সবশেষে ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি। ক্রিকেট ক্লাবের কথা যেমন আমার জানা ছিল না, তেমনি জানতাম না ফিশ ফ্রাই ওয়ে এবং মাছের রেস্তোরাঁগুলির কথা। আমার দেওয়া তালিকার বাইরে ইয়েন আরো একটি দ্রষ্টব্য স্থানে নিয়ে গেল, যার নাম ফোর্ট শারলট। তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও পেলাম ওর কাছ থেকে। একসময় বাহামার মানুষের জলদস্যুদের আক্রমণের মোকাবিলা করতে হতো নিয়মিত। আর সে-লক্ষ্যে দ্বীপটির চার কোনায় নির্মিত হয়েছিল চারটি ছোট ছোট দুর্গ, যার একটি এই ফোর্ট শারলট। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা যখন সেখানে গিয়েছি তখন কোনো কারণে সেটি বন্ধ ছিল। মজার ব্যাপার, তার এক অংশে একটি ছোট্ট কফিশপ, যা খোলা ছিল। অন্য সময় হলে আমরা সেখানে বসে যেতাম। কিন্তু সে-সময় আমাদের শহর দেখার এজেন্ডার অনেকখানিই বাকি ছিল বলে আমরা আবার রাস্তায় নামলাম।

ডাউনটাউনে ঢুকেই ইয়েন আমাদের বলল, চাইলে আমরা এখানে নেমে একটু হাঁটাহাঁটি করে পার্লামেন্ট স্কোয়ারে যেতে পারি, এবং সে ওখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। পরামর্শটা আমাদের পছন্দ হলো, কারণ তাহলে আমরা নিজেদের মতো করে কিছুটা সময় কাটাতে পারি, এবং শহরটির জনজীবন সম্পর্কে একটু ধারণা পেতে পারি। গাড়ি থেকে নেমে বাঁদিকে দুই মিনিট হাঁটতেই পৌঁছে গেলাম লঞ্চঘাটে, যেখান থেকে বিভিন্ন সাইজের লঞ্চ যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে এদিক-সেদিক। আন্দাজ করলাম, বিভিন্ন দ্বীপের মধ্যে যাতায়াতের জন্য মানুষ ব্যবহার করে এই লঞ্চ সার্ভিস। সেখানে লোকসমাগম ছিল। কিছু ফেরিওয়ালা এটা-সেটা বিক্রি করছিল। কিন্তু আমার পরিচিত ভিড়, চিৎকার এগুলি ছিল অনুপস্থিত।

বে রোড ধরে পার্লামেন্ট স্কোয়ারের দিকে যেতে যেতে বুঝলাম, ছোট হলেও শহরটিতে প্রাণ আছে। রাস্তায় অবশ্য স্থানীয় লোকের চাইতে পর্যটকই বেশি বলে মনে হলো। কারণ সহজ, কাছেই বড় বড় ক্রুজ জাহাজ এসে ভেড়ে। আর পর্যটকরা নেমে সময় কাটায় বিচে অথবা শহরে। একটু হাঁটতেই বাঁদিকে পেলাম স্ট্র মার্কেট। মাঝখানে বিশাল প্রবেশপথ যার দুপাশে উজ্জ্বল সবুজ রঙের ভিক্টোরীয় স্টাইলের কলাম এবং দুপাশে উজ্জ্বল কমলা রঙের দেয়াল। এতো উজ্জ্বল দুটি রং পাশাপাশি থাকা সত্ত্বেও স্থাপনাটি ভারি দৃষ্টিনন্দন। যদিও নামে স্ট্র শব্দটি রয়েছে এবং অনেক দোকানেই ছিল বেতের এবং সে-ধরনের 888sport app হাতের কাজের বা কুটির888sport live chatের পণ্য, একটু কাছে যেতেই বুঝলাম যে, বাজারটি আমাদের দেশের হকার্স মার্কেট জাতীয় – ছোট ছোট দোকানে সাজানো রয়েছে হরেক রকমের জিনিস। সম্পূর্ণ নতুন একটি দেশে এ-ধরনের একটি জায়গায় আমি বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমাদের সময়ের তুলনায় এজেন্ডা লম্বা; সুতরাং আমরা পা চালালাম পার্লামেন্ট স্কোয়ারের দিকে।

 পার্লামেন্ট স্কোয়ারে পৌঁছে দেখলাম আমাদের গাড়ি তার উল্টোদিকে পার্ক করা এবং ড্রাইভার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তার বাঁদিকে তাকাতেই দেখলাম একটা ব্যানারে লেখা পোর্ট মার্কেট প্লেস। আর তার আশেপাশে ছোট ছোট দোকানে বিভিন্ন ধরনের জিনিস সাজানো।

সে-এলাকাটা ক্রুজের জাহাজ ঘাটের কাছে। সুতরাং দোকানগুলির খদ্দের যে প্রধানত পর্যটকরা তা বুঝতে পারলাম। প্রথমেই আমার নজর গেল একটি স্টলে যেখানে 888sport app জিনিসের সঙ্গে ছিল বেশকিছু বেসবল ক্যাপ জাতীয় টুপি। আসলে স্যুভেনির হিসেবে আমি একটা টুপি মনে মনে খুঁজছিলাম। তাই দুটো দোকানে দেখে পনেরো ডলারে একটি কিনে ফেললাম। মানের দিক থেকে সেটা অবশ্যই আলবেনিতে গীতশ্রীর কেনা ৬১ ডলারের সমতুল্য ছিল না। তবে ওই দামে একটি টুপি পেয়েই আমি খুশি, যদিও সেটি ছিল মেইড ইন চায়না।

আমাদের শহর দেখার সময় সীমিত বলে শপিংয়ের সময়ও ছিল খুব কম। টুপি কেনার পরই পার্লামেন্ট স্কোয়ার। আসলে পোর্ট মার্কেটের ঠিক উল্টোদিকেই সেই জায়গা, যেখানে উল্টো ‘ট’ আকারে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ভবন। মাঝখানে সিনেট (অর্থাৎ সংসদের উচ্চকক্ষ) এবং তার একপাশে সংসদ ও অন্য পাশে সুপ্রিম কোর্ট ভবন। স্থাপত্য বিষয়ে আমার কোনো জ্ঞান না থাকলেও ভবনগুলির বাইরের চেহারা থেকে তাদের স্থাপত্যের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলাম। সামনের দরজার ওপরে ত্রিকোণাকৃতি ডিজাইন, দুপাশের কলাম এবং উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার থেকে বোঝা যায়, এর স্থাপত্য মূলত ভিক্টোরীয় শ্রেণির। আর তা হবে না কেন? রানী ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে এই দেশের ইতিহাস যে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর আমলেই দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটে (সে-কথায় ফিরে আসবো একটু পরেই) এবং স্কোয়ারের মাঝখানে রয়েছে তাঁর শ্বেতশুভ্র মূর্তি। ভবন তিনটি তাদের সামনের আঙিনার তিন পাশে সামঞ্জস্য রেখে তোলা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের সারল্য। তাই এই ধারার গতানুগতিক স্থাপনার তুলনায় ভবনগুলিকে একটু আলাদা বলেই মনে হলো।

পর্যটকদের জন্য পার্লামেন্ট বা সুপ্রিম কোর্টের ভবনের ভেতরে ঢুকে দেখার ব্যবস্থা ছিল না বলে সেখানে আমাদের খুব বেশি সময় কাটাতে হয়নি। এই তিন ভবনের পেছনেই দেখলাম পুলিশের সদর দফতর এবং 888sport app প্রশাসনিক ভবন। বোঝা গেল, পুরো এলাকা বেশ পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে আইন প্রণয়ন, প্রশাসন এবং আইন কার্যকরের ব্যবস্থার জায়গা হিসেবে ।

আমাদের পরের স্টপ ছিল কুইন্স স্টেয়ারকেইস – পার্লামেন্ট স্কোয়ার থেকে যেতে বেশি সময় লাগল না। এক পাহাড়ের (বা টিলার) ওপর ওঠার জন্য ছেষট্টিটি সিঁড়ি। সেখানে একসময় ছিল একটি দুর্গ যা জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ব্যবহার করা হতো। প্রয়োজনে দুর্গ থেকে বের হয়ে শহরের দিকে যাওয়ার জন্য নাকি তৈরি করা হয়েছিল এই সিঁড়ি। সেই কাজের জন্য নিয়োজিত হয়েছিল ছয়শো দাস শ্রমিক। রানি ভিক্টোরিয়া যখন দাসপ্রথার অবসান ঘটান তখন এই সিঁড়িগুলিকে তাঁর নামে নামকরণ করা হয়। সেভাবেই এখন এর পরিচিতি কুইন্স স্টেয়ারকেইস হিসেবে। যখন আমরা সেখানে পৌঁছি তখন লোকসমাগম বেশ ভালোই ছিল। তাদের মধ্যে হয়তো স্থানীয় মানুষও ছিল। কিন্তু যারা ওপরে উঠে যাচ্ছিল তারা যে আমাদের চাইতে অনেক কম বয়সের ছিল সেটা বেশ সহজেই বুঝতে পারছিলাম। তাছাড়া আমাদের এজেন্ডায় তখনো আরো দুটি জায়গা বাকি ছিল। সুতরাং আমরা সেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে শহরের দৃশ্য দেখার সুযোগ ছেড়েই দিলাম। সিঁড়ির গোড়ার কাছে দাঁড়িয়ে আমি সেলফি তোলার চেষ্টা করছি দেখে এক তরুণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমাদের কাছে এসে বললো, চাইলে সে আমাদের ছবি তুলে দিতে পারে। এরকম প্রস্তাবে আমি সবসময়ই রাজি হয়ে যাই।

আমাদের তখনো বাকি ছিল জেলে  নৌকার জেটি এবং আর্ট গ্যালারি দেখা। জেলেদের জেটিতে পৌঁছে অবশ্য দেখলাম যে, সেখানকার প্রায় সব দোকান বন্ধ। বুঝতে পারলাম, মাছধরা জাহাজগুলি খুব সকালে মাছ নিয়ে আসে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাজারের কর্মকাণ্ড শেষ হয়ে যায়। তবে সারি সারি দোকান এবং তাদের কোনো কোনোটির সামনে তখনো নোঙর করা ছিল মাছধরা নৌকাগুলি। আলবেনিতে আমরা যে ইয়ট নিয়ে সমুদ্রে বেড়াতে গিয়েছিলাম তার ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে শুনেছিলাম, ছোট লঞ্চের মতো দেখতে এসব নৌকায় করে জেলেরা মাছ ধরতে চলে যায় গভীর সমুদ্রে এবং কয়েকদিন পর ফিরে আসে বন্দরে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। আবহাওয়ার খবরাখবর নিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে ঝড়ে পড়ে যেতে হয়। আর একনাগাড়ে কয়েকদিন একটি ছোট নৌকায় সমুদ্রে ভেসে মাছ ধরা। জীবন কঠিন বইকি!

আমার শহর দেখার তালিকার শেষ স্টপ ছিল ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি। সেখানে বাহামার ঐতিহ্যবাহী ‘জনকানু’ (Junkanoo) ধরনের 888sport live chatকর্মের এবং দেয়ালে গ্রাফিতির কিছু নিদর্শন দেখা যাবে – এরকম আশা ছিল। জনকানু একটি উৎসব, যা বছরে দুবার অনুষ্ঠিত হয়। উজ্জ্বল রঙের এবং বিভিন্ন ডিজাইনের মুখোশ পরে প্যারেড এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। আর রাস্তার পাশের দেয়ালে গ্রাফিতি নাকি এককালে ছিল বেশ প্রচলিত। কিন্তু আমরা সে-ধরনের কোনো দেয়াল দেখতে পাইনি বলে আশা ছিল যে, আর্ট গ্যালারিতে গিয়ে তাদের কিছু নিদর্শন দেখব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেখানে পৌঁছে দেখলাম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্যালারি সাময়িকভাবে বন্ধ। আর তাই বাহামার ফোক আর্টের উদাহরণ দেখা হলো না। সে-কারণে মনে মনে একটু দুঃখ থাকলেও এই ভেবে ভালো লাগল যে, আমরা অল্প সময়ের জন্য হলেও না-স শহরটি দেখতে বের হয়েছিলাম।