চায়নাম্যান শুধুই কি লন্ড্রিম্যান?

‘Chinaman!’

‘Laundryman!’

 

Wash! Wash!

Why can I wash away

The dirt of others’ clothes

But not the hatred of my heart?

 

Iron! Iron!

Why can I smooth away

The wrinkles of others dresses

But not the miseries of my heart?

 

চীনের বিপস্ন­বী কবি H. T. Tsiang-এর ‘Chinaman, Laundryman’ শিরোনামের 888sport app download apkর অংশ।

কী শক্তিশালী 888sport app download apk! কী সুন্দর তার কথা! 888sport app download apkটির কথা আমি প্রথম জানতে পারি মিউজিয়াম অব দ্য চায়নিজ ইন আমেরিকা (MOCA – সংক্ষেপে মোকা) দেখতে গিয়ে। এ-কথাগুলোর ভিত্তিতে লেখা একটি গান সেই মিউজিয়ামের দেয়ালে এক স্ক্রলে টানানো ছিল। বিংশ শতকের তৃতীয় দশকে এই কবি পড়তে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে; আর তখনই – ১৯২৮ সালে তিনি লেখেন এই 888sport app download apk।

বিংশ শতকের ষাটের দশকে 888sport appয় কিছু চীনা লোক দেখা যেত। তারা চালাত লন্ড্রি অথবা রেসেত্মারাঁ। হাতেগোনা দু-তিনটি বিউটি পার্লারও ছিল তখন, যাদের মালিক ছিল চীনারা। পরে সত্তরের দশকের শেষের দিকে এবং আশির দশকে আমি যখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া যেতে শুরু করলাম, তখন দেখলাম সেসব দেশের জন888sport free betর বিরাট অংশ বংশপরম্পরায় চীনা। আর তারা শুধু যে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত তা-ই নয়, অর্থনৈতিকভাবে তাদের অনেকেই অত্যন্ত ধনী। সেসব দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরাট অংশ আজ চীনাদের হাতে। কিন্তু ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সময় দারিদ্র্য,      প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বাঁচার জন্য চীনারা নিজের দেশ ছেড়ে গেছে অন্য দেশে। হয়তো তাদের অনেকেই নতুন জীবন শুরু করেছিল লন্ড্রি বা রেসেত্মারাঁর মতো কোনো পেশা দিয়ে।

চীনাদের অভিবাসন কিন্তু এখনো চলছে। আর যারা এখন দেশ ছেড়ে যায়, তারা যে অভাবের তাড়নায় যায় না, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তেমনি একজন ছিল হুয়াং – লিমোজিনের ড্রাইভার; আমাকে নিতে এসেছিল নিউইয়র্কের কেনেডি এয়ারপোর্ট থেকে। আলাপ শুরু করেছিল নিজে থেকে। না হলে আমি জানতে পারতাম না, কত কারণে মানুষ দেশ ছাড়ে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চাকরি করত হুয়াং। কিন্তু কোনো একসময় নাকি মনে হয়েছিল, তার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। সে-কারণে শুধু চাকরি নয়, দেশ ছেড়ে চলে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেও যে সে খুব খুশি নয় তা তার কথা থেকেই বোঝা গেল। তবে একটি কারণে সে খুশি : তার মেয়ে বিএ পাশ করেছে নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে। সে পিএইচডি করতে যাবে, তাও জানাল। তার বিষয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। আর হুয়াং যে মেয়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে সেটিও জানাল বেশ গর্ব ও আনন্দের সঙ্গে। আমার সঙ্গেও সে দু-একটি বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করল। কিন্তু আমি অচেনা লোকের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনায় একেবারেই যেতে চাই না। তাছাড়া 888sport slot gameের ক্লামিত্ম তো ছিলই। সুতরাং আলাপ বেশিদূর এগোয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনাদের সম্পর্কে জানার আগ্রহটা জেগে গিয়েছিল তখনই এবং মোকায় আর চায়নাটাউনে যাওয়া সেই আলাপের সূত্র ধরেই।

একটু খোঁজ করতেই জানা গেল শুধু ম্যানহাটন নয়, নিউইয়র্কের 888sport app বরোতেও (যেমন কুইন্স এবং ব্রম্নকলিনে) রয়েছে চায়নাটাউন। তবে আমি যেখানে ছিলাম, সেখান থেকে ম্যানহাটনের চায়নাটাউনে যাওয়াই সুবিধাজনক। তাছাড়া মোকাও তার খুব কাছে। সাবওয়ের এ ট্রেনে ক্যানাল স্ট্রিট স্টেশনে নেমে দশ মিনিট হেঁটে মোকা। দিন ঠিক করেছিলাম ভালো আবহাওয়া দেখে। কিন্তু তার মানে যে এত রোদ আর গরম তা তো ভাবিনি। তবে একটি বেসবল ক্যাপ মাথায় দিয়ে হেঁটেছি বলে তেমন কষ্ট হয়নি।

নিউইয়র্কের নামকরা মিউজিয়ামগুলোর তুলনায় মোকা একটি ছোট্ট মিউজিয়াম। টিকিটের দামও কম – দশ ডলার। আর বয়সে জ্যেষ্ঠ বলে আমার জন্য পাঁচ ডলার। কোন মিউজিয়ামে কে কতটা সময় কাটাবে তা একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়, যা নির্ভর করে নিজের পছন্দ আর কতটা গভীরে যেতে চাই তার ওপর। মোকাতেও তাই। কেউ চাইলে চায়নিজ চায়ের ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি নিয়ে কাটাতে পারে অনেক সময়। যদি আকুপাংচারে উৎসাহ থাকে, তবে তার আদ্যোপান্ত জানার জন্য কিছুটা সময় তো দিতেই হবে। আমি চায়নিজ চা পছন্দ করি, তবে তার ইতিহাস-ভূগোলে তেমন আগ্রহী ছিলাম না বলে
সে-অংশটি সহজেই বাদ দিতে পারলাম। আর আকুপাংচারের গুণাবলির কথা শুনলেও তার ভিত্তি, পদ্ধতি, কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার আগ্রহ ছিল না। তাছাড়া একটি ভিডিওতে দেখানো হচ্ছিল কীভাবে এটা করা হয়। কারো শরীরের কোথাও সামান্য কাটা বা রক্তঝরা দেখলে আমি নার্ভাস হয়ে যাই। রক্ত পরীক্ষার জন্য ডাক্তার বা নার্স সুঁই ঢোকাতে গেলে আমি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি। কারো শরীরের কোথাও তিনটি সুঁই ঢুকিয়ে এটা-সেটা করা হচ্ছে এরকম দৃশ্য আমার জন্য মোটেই আকর্ষণীয় ছিল না। এ-ধরনের ভিডিও দেখে সময় ব্যয় করার চেয়ে আমি বেশি সময় কাটালাম যুক্তরাষ্ট্রে চীনাদের অভিবাসন সম্পর্কে একটু জানার জন্য। আর তা করতে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই আমার সামনে খুলে গেল কৌতূহলোদ্দীপক তথ্যের এক ঝুড়ি, যা থেকে বেরিয়ে এলো তাদের ওপর বৈষম্যমূলক এবং কখনো কখনো অন্যায় আচরণের ইতিহাস। জানলাম, কী কষ্টকর ছিল তাদের জীবন।

এখানে বলা দরকার যে, যুক্তরাষ্ট্রে চীনাদের আসা শুরু হয় ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় এবং প্রথম অভিবাসীরা আসে পশ্চিম উপকূলে – সানফ্রান্সিসকো শহরে। সেখানকার চায়নাটাউন নাকি আমেরিকার সবচেয়ে বড়। চীনের ক্যান্টন (এখনকার নাম গুয়াংজাউ) প্রদেশ থেকে শুরু হয় আসা। আমেরিকায় রেললাইন এবং রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল এবং সেই প্রয়োজন মেটানোর জন্য কম বয়সের পুরুষদেরই আনা হতো। কারো পরিবার থাকলেও 888sport promo code বা শিশুদের আসতে দেওয়া হতো না  (যেমনটা এখন দেখা যায় 888sport apps থেকে অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে)। এই ব্যবস্থা চলতে থাকে প্রায় একশ বছর ধরে। অবশ্য কিছু 888sport promo code যে-কোনোভাবেই হোক এসে গিয়েছিল যৌনকর্মী হিসেবে!  সে যা-ই হোক, সানফ্রান্সিসকোর চায়নাটাউন ছিল প্রায় সম্পূর্ণভাবে পুরুষ-অধ্যুষিত।

888sport promo codeদের অভিবাসনের বাইরে রাখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ হয়নি তা নয়। তা সত্ত্বেও এই ব্যবস্থা বদলাতে সময় লেগেছে প্রায় একশ বছর। সে-সময়কালে কেউ কেউ পশ্চিম উপকূল ছেড়ে পুবদিকে আসতে শুরু করে; আর তারই ফলে নিউইয়র্কে আসে অনেকে – চায়নাটাউন গড়ে ওঠে ম্যানহাটন, ব্রম্নকলিন ও কুইনসে। কিন্তু চীনাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ চলতেই থাকে। উদাহরণ হিসেবে আকুপাংচারের কথা বলা যায়। চিকিৎসার এই পদ্ধতি চীনে কয়েক হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হলেও যুক্তরাষ্ট্রে তার আইনি
স্বীকৃতি মেলে মাত্র সত্তরের দশকে। তাও একটি আকস্মিক ঘটনার ফলে।

চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব শুরু করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন সে-দেশে গিয়েছিলেন ১৯৭১ সালে। সে-সময় তাঁর সঙ্গে যাওয়া নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক সাংবাদিক জেমস রেস্টন হঠাৎ পেটের ব্যথায় আক্রান্ত হলে তাঁর অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন হয়; কিন্তু ব্যথা সারছিল না। তখন তিনি আবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে তাঁরা তাঁকে পরামর্শ দেন আকুপাংচার করাতে এবং সেটা করায় এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ব্যথা সেরে যায়। শুধু তাই নয়, তাঁর আর কখনো সে-ব্যথা হয়নি। রেস্টন সে-অভিজ্ঞতার কথা তাঁর পত্রিকায় লেখেন। (সেই লেখাটির ক্লিপিংয়ের কপি রয়েছে মোকায়)। আর তখন থেকে আকুপাংচারের ওপর আমেরিকানদের বিশ্বাস জন্মে। এরপর থেকে এই চিকিৎসাপদ্ধতি সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়।

অভিবাসী চীনাদের জীবন-জীবিকার বাস্তব নিদর্শন হিসেবে মোকায় রাখা আছে পুরনো দিনের একটি ইস্তিরি আর একটি প্রেসিং মেশিন। ইস্তিরিটি আমাকে নিয়ে গেল আমার শৈশবে। আমাদের বাসায় ঠিক সেরকম একটি ইস্তিরি ছিল। তার ভেতরে ভরতে হতো জ্বলন্ত কয়লা। আর সেই কয়লার গরমে গরম হতো লোহার ইস্তিরিটির তলা। আমাদের বাসায় একজন কাজের লোক ছিল, যার কাজ ছিল সেটি ব্যবহার করে আমাদের সবার কাপড় ইস্তিরি করে দেওয়া।

গোড়ার দিকে চায়নাটাউনে লন্ড্রি ছাড়াও ছিল চায়নিজ খাবারের রেসেত্মারাঁ; ছিল টি-পার্লার আর চুল কাটার সেলুন। একটি রাস্তায় নাকি ছিল শুধুই সেলুন – যাকে বলা হতো বারবার শপ অ্যালি। পোশাকি নাম পেল স্ট্রিট। এখন সেখানে 888sport app দোকানও রয়েছে। এসবের ইতিহাস মোকায় ধারণ করা আছে বেশ সুন্দরভাবে। আমার এজেন্ডায় এখনকার চায়নাটাউন দেখাও ছিল বলে মিউজিয়াম দেখা একটু সংক্ষিপ্ত করে রাস্তায় নেমে পড়লাম।

পুরো চায়নাটাউন ঘুরে দেখতে হলে সময় অনেক লাগবে। সুতরাং আমি আগেই একটি লিস্ট বানিয়ে নিয়েছিলাম। তাতে ছিল ডয়ার স্ট্রিটে চায়নাটাউনের প্রথম চায়ের দোকান – নম ওয়া
টি-পার্লার, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২০ সালে। ছিল বেয়ারড স্ট্রিটের অরিজিনাল চায়নাটাউন আইসক্রিম ফ্যাক্টরি। আর কলম্বাস পার্ক।

মোকা থেকে বেরিয়ে ডানদিকে একটু এগোলেই আবার ক্যানাল স্ট্রিট; আর সে-রাস্তার ডানদিকে ঢুকে গেলেই চায়নাটাউন। ওই এলাকায় হাঁটতে গিয়ে মনে হলো, এটি ম্যানহাটনের অংশ নয়, একেবারে আলাদা ধরনের এক শহর। অনেক দোকানের সাইনবোর্ড চীনা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখা। কোনো কোনো রাস্তার নামফলকেও ইংরেজির পাশাপাশি চীনা ভাষা স্থান পেয়েছে। এক রাস্তার ফুটপাত জুড়ে বসে গেছে সারি সারি ফলের দোকান। আর সেসব দোকানে আপেল, পেয়ারা ইত্যাদি ফলের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে লিচু, রামভুটান, ডুরিয়ান, ড্রাগন ফ্রুট ইত্যাদির মতো এশীয় ফল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো শহরের রাস্তায় হাঁটছি। আশপাশে লোকের ভিড়। যারা ফোনের ম্যাপ দেখে রাস্তা খুঁজছে বা ছবি তুলছে তাদের দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে, তারা ট্যুরিস্ট। কেউবা জিনিসপত্র দরদাম করছে, আবার কেউ দ্রম্নতপায়ে হেঁটে যাচ্ছে।

আমি ঢুকেছিলাম ব্যাকস্টার রোড দিয়ে। এক পাক ঘুরেই এসে গেলাম বেয়ারড স্ট্রিটে। পয়সা বাঁচানোর জন্য আমি টেলিফোনে রোমিং অফ রেখেছিলাম, ফলে ম্যাপ দেখতে পারছিলাম না। তবে বাসা থেকে ম্যাপ দেখে কয়েকটি রাস্তা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা করে নিয়েছিলাম আগেই। তবু ভাবলাম 888sport sign up bonusর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যাক। সামনে পেলাম ‘নিউইয়র্ক বিউটি সেলুন’ – চীনা ভাষায় বড় করে আর ইংরেজিতে ছোট্ট করে নাম লেখা। দোকানের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন এক মাঝবয়সী চীনা লোক। আমি এগিয়ে যেতেই তিনি জানতে চাইলেন, মালিশ চাও? আমার চেহারা, বিশেষ করে চুলের দৈর্ঘ্য এবং দাড়ি দেখে হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, এই লোক তো আর চুল কাটা বা শেভ করার জন্য আসেনি।  কিন্তু মালিশ বা চুল কাটার বদলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, যে-রাস্তার ওপরে বাতি দিয়ে ‘ওয়েলকাম টু চায়নাটাউন’ সাইনবোর্ড ঝোলে, সে-রাস্তাটা কোনদিকে বলতে পারো? আমি তার খদ্দের নই দেখে তিনি একটু হতাশ হলেন বলেই মনে হলো; একটা দায়সারাগোছের জবাব দিয়ে আবার রাস্তার দিকে তাকালেন। আমি অবশ্য এ গলি-ও গলি ঘুরে ঠিকই সে-রাস্তাটা খুঁজে পেয়েছিলাম।

সহজেই পেয়ে গেলাম ডয়ার স্ট্রিট। পুরো রাস্তাটিই এখন শুধু হাঁটার জন্য। আর রাস্তা জুড়ে আঁকা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিটি। সেখানেই চায়নাটাউনের প্রথম চায়ের দোকান – ‘নম ওয়া টি পার্লার’, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২০ সালে। এখনো বহালতবিয়তে রয়েছে দোকানটি। পাশে দু-একটি বিউটি পার্লার। রয়েছে 888sport app দোকানও। আর রাস্তায় পাতা আছে চেয়ার-টেবিল; কেউ চাইলে সেখানে বসে জিরিয়ে নিতে পারে কয়েক মুহূর্ত। কয়েকজন মাঝবয়সী চীনা লোক চা খাচ্ছিল অথবা খাচ্ছিল না। দেখে মনে হয়েছিল সময় সেখানে থমকে গেছে। লোভ হচ্ছিল, টি-পার্লার থেকে চা নিয়ে বসে যাই সেখানে; কিন্তু আমার লিস্টের কয়েকটি জায়গা তখনো দেখার বাকি রয়ে গেছে। তাছাড়া তালিকায় রয়েছে দ্য অরিজিনাল আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, যেখানে গিয়ে আইসক্রিম খাব বলে ভেবে রেখেছি। সুতরাং বসা হলো না ডয়ার স্ট্রিটের নিরিবিলি পরিবেশে, খাওয়া হলো না ১৯২০ সালের সেই দোকানের চা! চললাম কলাম্বাস পার্কের দিকে।

খুবই ছোট এই কলাম্বাস পার্ক, কিন্তু ইতিহাস রয়েছে এর। আদি পর্বে পাঁচটি সরু রাস্তার মাঝখানে এই পার্কের জন্য জায়গা দেওয়া হয়, যদিও এখন তার তিন পাশে তিনটি রাস্তা দেখলাম। শুরুতে বিনোদনের বা বেড়ানোর জায়গা হলেও কোনো এক সময় এটা হয়ে ওঠে সামাজিক অপরাধ আর দলভিত্তিক মারামারির কেন্দ্র। তবে জিউলিয়ানি এবং ব­yমবার্গ যখন মেয়র ছিলেন, তখন এসব অপরাধ নির্মূল করে শহরের বিভিন্ন জায়গার পরিবেশ আবার শামিত্মপূর্ণ করা হয়।

কলাম্বাস পার্কের মাঝখানে চীন রিপাবলিকের প্রথম প্রেসিডেন্ট ড. সান ইয়াত সেনের প্রতিমূর্তিসহ 888sport sign up bonusস্তম্ভ। ১৯৪৯ সালের বিপস্নবের আগে পর্যন্ত তাঁকেই আধুনিক চীনের স্থপতি এবং জাতির পিতা বলে গণ্য করা হতো। কারণ চীনের চিং রাজতন্ত্রকে উৎখাত করার ব্যাপারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি একাধারে ছিলেন চিকিৎসক, দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদ। বিপস্নবী ধ্যানধারণার এই মনীষীকে দুই চীনেই (অর্থাৎ গণচীন এবং তাইওয়ানে) সম্মানের সঙ্গে 888sport app download for android করা হয়। তাঁর 888sport sign up bonusস্তম্ভে বড় আকারে উৎকীর্ণ রয়েছে কয়েকটি চীনা অক্ষর; ইংরেজি 888sport app download apk latest version – ‘Allunderheavenareequal’ লেখা রয়েছে নিচের দিকে। যিনি এই মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন আমার কাছে তিনি শ্রদ্ধেয়।  স্বাভাবিকভাবেই আমি তাঁকে নীরব 888sport apk download apk latest version জানালাম।

ঢোকার মুখেই চলছিল রীতিমতো এক গানের অনুষ্ঠান। চীনের কোনো এক বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে এক লোক আর তার সঙ্গে গান করছে এক মহিলা। একটু ভেতরে যেতে দেখা গেল দুটি বড় টেবিলের চারপাশে 888sport promo code-পুরুষ বসে খেলছে তাস অথবা ‘মাহ্জং’ (চীনের ঐতিহ্যবাহী খেলা যেটি টাইলের গুটি দিয়ে খেলা হয়)। খেলোয়াড় এবং দর্শক সবারই বয়স দেখে বোঝা যায় তারা জ্যেষ্ঠ নাগরিক। খুব ইচ্ছা করছিল কাছে গিয়ে তাদের একটি ছবি তুলি। কিন্তু মনে পড়ে গেল চীনের এক গ্রামাঞ্চলে ছবি তুলতে গিয়ে কেমন অসুবিধায় পড়েছিলাম।

পথের ধারে এক খোলা বাজারে নানা ধরনের জিনিস নিয়ে বসে ছিলেন বিভিন্ন বয়সের 888sport promo code-পুরুষ; তার মধ্যে একজন 888sport promo codeকে দেখে মনে হয়েছিল বয়স আশি-নববইয়ের কম হবে না। তাঁর মুখের চামড়ায় এমন কুঁচকানো ভাঁজ ছিল, যা আমি আগে কখনো দেখিনি। আমার ভুল হয়েছিল, কোনো অনুমতি ছাড়াই তাঁর ছবি তুলতে যাওয়া। আর আমার ক্যামেরা তাঁর দিকে ঘোরাতে দেখেই তিনি ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে কী সব বলতে লাগলেন। আমার সঙ্গের ইন্টারপ্রিটারকে ব্যাপারটার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, চীনের গ্রামে এরকম একটি কুসংস্কার আছে যে, যার ছবি তোলা হয় তার শিগগিরই মৃত্যু হয়। কেউই নিজের মৃত্যু চায় না; আর আমিও কারো মৃত্যু কামনা করি না। তবে কথাটি আর তাঁকে বলা হয়নি।

সে যা-হোক, আমি মাহ্জং খেলোয়াড়দের ছবি তোলা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করে চলে এলাম গানের জায়গায়। সেখানে দেখলাম এক শ্বেতাঙ্গ 888sport slot game-888sport live chatীদের ছবি তুলছে। সেটা দেখে আমারও সাহস হলো; একজনের সঙ্গে দৃষ্টিবিনিময় করে সেলফোনটি দেখালাম। তিনি সহজেই বুঝতে পারলেন আমার প্রশ্ন এবং চোখের ইশারায় অনুমতিও দিয়ে দিলেন। আমি আনন্দের সঙ্গে চটপট ছবি তুলে নিলাম। পরে দেখলাম 888sport live chatীদের সামনে একটি বাদ্যযন্ত্রের বাক্স ডালা খুলে রাখা আছে – যেমনটি থাকে সাবওয়ে স্টেশনের পস্ন্যাটফর্ম বা করিডোরে গান গাইতে থাকা 888sport live chatীদের। বুঝতে পারলাম যে, চায়নাটাউনের কলাম্বাস পার্কের 888sport live chatীদের মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। আমি খুশিমনেই কয়েকটি সবুজ রঙের নোট তাদের বাক্সে চালান করলাম।

কাছেই ছিল বেয়ারড স্ট্রিট; সেখানে গিয়ে সহজেই পেয়ে গেলাম ‘অরিজিনাল চায়নাটাউন আইসক্রিম ফ্যাক্টরি’। আমার মেয়ে আগেই বলে দিয়েছিল যে, সেখানে পাওয়া যাবে নানা ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী আইসক্রিম। আমরা যেসব ফ্লেভার সাধারণভাবে খাই – যেমন ভ্যানিলা, চকলেট ইত্যাদিও থাকবে, তবে তালিকায় এগুলো নিচের দিকে। দোকানটিতে ঢুকে দেখলাম সত্যিই তাই। কত ধরনের ফ্লেভারের আইসক্রিম হতে পারে তা সেখানে না গেলে জানতে পারতাম না। রয়েছে লিচু, ডুরিয়ান, আদা ইত্যাদির মতো ফ্লেভারের আইসক্রিম। কী কী পাওয়া যায় তার মূল্যসহ তালিকা (অর্থাৎ মেনু) হাতে লেখা রয়েছে পুরো দেয়ালে টানানো বোর্ডে। দাম হিসেবে প্রতি স্কুপের জন্য ৫.৩৫ ডলার আমার কাছে একটু বেশি বলে মনে হলো; ম্যানহাটনের 888sport app জায়গায় তিন থেকে চার ডলারের মধ্যেই পাওয়া যায় এক স্কুপ। তবু মেনে নিলাম এই ভেবে যে, এ তো আর সাধারণ দোকান নয়! অরিজিনাল চায়নাটাউন আইসক্রিম ফ্যাক্টরি বলে কথা! তাছাড়া কাউন্টারের ওপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক সুন্দরী চীনা তরুণী। আর কয়েক মুহূর্ত দাঁড়াতেই দেখলাম যে, দাম যাই হোক ক্রেতার কোনো অভাব নেই দোকানটিতে। কিন্তু আসল সিদ্ধামেত্মর বিষয় হলো, কী আইসক্রিম খাব?

খাবারের ব্যাপারে আমি কখনো বেশি দুঃসাহসী হতে চাই না; টাকা খরচ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আমি রাজি নই। সুতরাং কিছুটা নতুন কিন্তু মোটামুটি নিরাপদ – আম আর পেঁপে-মেশানো সোর্বে অর্ডার করলাম। আর নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি কাপে দিতে বললাম। দাম শোধ করার পর সুন্দরী চীনা তরুণীকে জিজ্ঞেস করলাম দোকানটির ছবি তোলা যাবে কিনা। সে অবশ্য ইতোমধ্যেই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল পরের খদ্দেরদের নিয়ে। সুতরাং আমার প্রশ্নকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো কোনো আপত্তি নেই (অন্তত আমি সেরকমই মনে করলাম)। তবে ঝুঁকি এড়ানোর জন্য আমি ছবি তুললাম মেয়েটিকে বাদ দিয়ে – শুধু দেয়ালে লেখা মেনু এবং আমার আইসক্রিমের। আর দোকানের বাইরে থেকে তার সাইনবোর্ডের ছবি আগেই তুলে নিয়েছিলাম।

গ্রীষ্মের লম্বা দিন বলে বেলা ছিল আরো বেশ কিছুক্ষণ। আইসক্রিম নিয়ে আমি ফিরে গেলাম কলাম্বাস পার্কে। গানবাজনা চলছিল তখনো। সামনের বেঞ্চের এক কোণে বসে পড়লাম। পড়ন্ত বেলায় রোদের তেজ কমে গিয়েছিল। আর বসার জায়গাটিতে ছায়া ছিল বলে আইসক্রিম খেতে খেতে গানবাজনা শুনতে ভালোই লাগল।