বিশ্বজিৎ ঘোষ

কার চুড়ি? কে রেখে গেছে চুড়িটা? কেনই-বা রেখে গেল? ইচ্ছে করে রেখে গেল, নাকি নিতে ভুলে গেছে? ক্লান্ত শরীরে এসব ভাবতে ভাবতেই শুয়ে পড়লেন রহমান সাহেব। নরম বিছানা। রাত অনেক হলো, কিন্তু ঘুম আসছে না। ড্রয়ারে পাওয়া মনোরম সোনার চুড়িটা তাঁকে পেয়ে বসেছে। বাগানবাড়িটার চারদিক নিস্তব্ধতা আর নীরবতায় মগ্ন হয়ে আছে। কোথাও কোনো শব্দ নেই – দূরে মাঝে-মধ্যে রেলগাড়ি চলার শব্দ কানে আসছে। রেলগাড়ির শব্দটা পুরনো বাগানবাড়ির নিস্তব্ধতাকে আরো যেন ঘনীভূত করে তুলেছে। চুড়িটার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করছেন ডক্টর আবদুর রহমান – 888sport appsের বিখ্যাত খনি-বিশেষজ্ঞ।

না, কিছুতেই ঘুম আসছে না। বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লেন রহমান সাহেব। আলো জে¦লে ওয়ারড্রব খুলে ডান হাতে তুলে নিলেন মোহনীয় চুড়িটা। কার চুড়ি? আর কেনই-বা রেখে গেছে? কে? কোনো অষ্টাদশী যুবতী, অবিবাহিত কোনো 888sport promo code? নাকি মন-ভোলা কোনো গৃহবধূ? আকৃতি দেখে মনে হয় মাঝারি গড়নের কোনো 888sport promo codeর হাতে উঠেছিল এই চুড়ি। হাতটা নিশ্চয়ই সুন্দর। নাকি সোনার চুড়িটা। কবি কি আর শুধু শুধু বলেছেন – ‘সোনার হাতে সোনার কাঁকন/ কে কার অলংকার?’ কী চমৎকার রং চুড়িটার, কী অপূর্ব নকশা, কী মায়াবী গন্ধ! চুড়িটার, নাকি যার ছিল এই সোনার চুড়ি তার হাতের গন্ধ, শরীরের গন্ধ। নিজের অজান্তেই একবার চুড়িটার গন্ধ নিতে চেষ্টা করলেন রহমান। চুড়িটার, নাকি অনাম্নী কোনো অঙ্গনার?

দুই

888sport app থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে দমদম পৌঁছে একটানা সাত ঘণ্টা গাড়িতে চড়ে আসানসোল পৌঁছতে রাত এগারোটা হয়ে গেল। ডক্টর রহমান উঠেছেন আসানসোল কয়লাখনির বাগানবাড়িতে। পথে শক্তিগড় নেমে ল্যাংচা খেয়েছেন তিনি। এত সময় বুঝতে পারেননি, কিন্তু এবার টের পেলেন পেটের তীব্র ক্ষুধাটা। মুহূর্তেই বাগানবাড়িটা তাকে পেয়ে বসল। ব্রিটিশ আমলের বাগানবাড়ি – বিশাল আয়োজন, সুবিশাল ব্যবস্থা। মাটির নিচ থেকে কয়লা-উত্তোলন ও কয়লা অনুসন্ধান বিষয়ে আন্তর্জাতিক এক সেমিনারে 888sport appsের প্রতিনিধি হয়ে এখানে এসেছেন খনি-বিশেষজ্ঞ ডক্টর আবদুর রহমান। বয়সে তরুণ – মাত্র বত্রিশ। অক্সফোর্ডের পিএইচ.ডি ডিগ্রিধারী আবদুর রহমান এরই মধ্যে অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। রাত এগারোটা হলেও বাগানবাড়িতে পৌঁছে তিনি দেখলেন দুজন কর্মকর্তা তাঁর আগমনের অপেক্ষায় বসে আছেন। ডক্টর রহমানকে দেখেই সসম্মানে তাঁকে নিয়ে গেলেন দোতলার দক্ষিণ দিকের বড় কক্ষটায়। হাত-মুখ ধুয়ে ডাইনিংয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে কর্মকর্তাদ্বয় চলে গেলেন। ডক্টর রহমান হাত-মুখ ধুয়ে মানিব্যাগ, ঘড়ি আর সেলফোনটা রাখার জন্য ওয়ারড্রোবের ড্রয়ার খুলতেই দেখতে পেলেন সাদা কাগজের ওপর পড়ে আছে নকশি-করা একটা সোনার চুড়ি। কার চুড়ি? ভুল করে তাঁকে এ-রুমে নিয়ে আসা হয়নি তো! রুমের চারদিকে তাকালেন ডক্টর রহমান – আলমারি খুললেন – না কোথাও কিছু নেই – অন্য কেউ এ-রুমে থাকার কোনো চিহ্ন চোখে পড়ছে না। তাহলে এই চুড়ি কোথা থেকে এলো? কার চুড়ি? আর

কেনই-বা সযত্নে পড়ে আছে ড্রয়ারে! সযত্নে, কেননা চুড়িটা সাদা একটা কাগজের ওপর যেভাবে পড়ে আছে, তাতে যত্নের ছাপ স্পষ্ট।

ওয়েটার এসে দরজায় টোকা দিলেন – ‘বাবু, খানা প্রস্তুত।’ সম্বিৎ ফিরে এলো ডক্টর রহমানের। ‘বাবু, খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, রাত অনেক হলো। আমাদের যাওয়ার সময় হলো।’ ডক্টর রহমান লজ্জিত হয়ে ওয়েটারের সঙ্গে ডাইনিং রুমে চলে এলেন। ভাবলেন, ওয়েটারকে একবার জিজ্ঞাসা করি, আমার আসার আগে এ-রুমে কোনো 888sport promo code এসেছিলেন কি? কিন্তু লজ্জায় আর জিজ্ঞাসা করা হলো না। ডাইনিং রুমে বসে আছেন সেমিনারের কর্মকর্তাদ্বয়, টেবিলে খাবার। ডক্টর রহমান সামান্য কিছু খেয়েই উঠে পড়লেন। ‘আগামীকাল সকাল দশটায় দেখা হবে বলে’ কর্মকর্তাদ্বয় বিদায় নিলেন। রুমে ফিরে গেলেন খনি-বিশেষজ্ঞ বত্রিশ বসন্ত গায়ে-মাখা তরুণ 888sport apkী খনি-বিশেষজ্ঞ ডক্টর আবদুর রহমান।

তিন

বাগানবাড়ির পুরনো বিশাল ঘড়িটা বেজে উঠল – ঢং ঢং করে বারোটা শব্দ উঠল। আগামীকাল উদ্বোধন অধিবেশনে ডক্টর রহমানের পেপার। দিনাজপুরের উন্মুক্ত কয়লাখনি বিষয়ে তিনি পেপার পড়বেন। সামান্য প্রস্তুতি প্রয়োজন। এখন সারবেন, নাকি ভোরে উঠে। কিন্তু কোথায় কয়লাখনি, কোথায় পেপার – চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে নাম-না-জানা কোনো এক 888sport promo codeর অপরূপ চুড়িটা। নিজের অজান্তেই রহমান খুললেন ওয়ারড্রোবের ড্রয়ার। আলতোভাবে ধরলেন চুড়িটা। আলতোভাবে কেন, চুড়ির মালিক অজানা সেই 888sport promo code হাতে ব্যথা পাবে বলে! দূর, এসব কী ভাবছি? চুড়িটা 888sport promo codeর হাত হয় কীভাবে? আচ্ছা, যে 888sport promo codeর হাতে উঠেছিল এই চুড়িটা, তার নাম কী হতে পারে? মনে-মনে একটা নাম ভেবে ফেললেন রহমান অদেখা-অজানা সেই 888sport promo codeর জন্য। কী নাম দেওয়া যায় চুড়ি-হারানো সেই 888sport promo codeর? ঠিক আছে, মুগ্ধা নামেই তাকে ডাকি। ডাকব? কোথায় সে? সে-কি আমার কথা শুনবে? চুড়িটা খুব সুন্দর – লাল-সবুজ রঙে নকশা আঁকা – খানিকটা চওড়াই বটে। লাল-সবুজ কেন? মুগ্ধা কি 888sport appsের কোনো 888sport promo code? লাল-সবুজ পতাকার আদলে কি তৈরি হয়েছে চুড়িটা?

ঢং করে দূরে একটা ঘণ্টার আওয়াজ – সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল কয়লাখনি এলাকা থেকে জোরে একটা সাইরেনের শব্দ। রাত একটা। কাল সকালের পেপারটা গুছিয়ে রাখি। সেল ফোনটায় চার্জ দেওয়া দরকার। 888sport app থেকে আসার সময় মা বলে দিয়েছেন এই বসন্তেই তিনি ঘরে পুত্রবধূ আনবেন।

ভাবী-বউয়ের জন্য কী কেনা যায়? আচ্ছা, আগামীকাল দেখা যাবে। কিছু কিনতে তো অনেক টাকা লাগবে। সোনার চুড়িটা বিক্রি করলে তো বেশ টাকা পাওয়া যাবে। ওজন তো কমসে কম এক ভরি। ছিঃ, ডক্টর আবদুর রহমান। এসব কী ভাবছেন আপনি। না, অনেক হয়েছে। গোল্লায় যাক সোনার চুড়ি। ওই সোনার চুড়িটাই আমার সেমিনার বুঝি পণ্ড করে দেবে। না, ওটা নিয়ে আর ভাববো না, ওখানেই পড়ে থাক সোনার ওই  জিনিসটা। আমি ওটা দেখিনি, ধরিনিও। এবার শুয়ে পড়া যাক। সারাদিনের ক্লান্তি। রাত অনেক হলো। তবু ঘুম আসছে না কেন? চুড়িটা কি আর একবার ছুঁয়ে দেখব। চুড়ির আড়ালে কী মুগ্ধাকে স্পর্শ করতে চাইছি আমি! দূর, কী সব পাগলামি। একটা বিষয় কিন্তু খুব আশ্চর্যের। চুড়িটায় নকশি করা হয়েছে লাল-সবুজ রং দিয়ে। বাবার কাছেই প্রথম শুনেছি লাল-সবুজ রঙের মহিমা। বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। লাল-সবুজ পতাকার জন্য বাবার মরণপণ সংগ্রামের গল্প শুনেছেন ডক্টর রহমান। বাবার কাছে শৈশবে শুনেছি সেই যুদ্ধদিনের কথা। জাফলংয়ের ডাউকি নদী পেরিয়ে মেঘালয়। সেখানে যুদ্ধের ট্রেনিং। বাবা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার। এক রাতে, জুনের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাউকে কিছু না বলে, কফিলউদ্দিন মাস্টার পাড়ি দিয়েছিলেন অজানা-অচেনা মেঘালয়ের উদ্দেশে। সেদিন তাঁর সম্বল ছিল একটাই। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেননি কফিলউদ্দিন মাস্টার। পথে আরো দশজন একত্র হয়েছিলেন।

লাল-সবুজ পতাকার জন্য বাবার সেই বীরত্বের কথা মনে পড়ল ডক্টর রহমানের। মুগ্ধার বাবাও কি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন? তা না হলে ও লাল-সবুজ নকশি-করা চুড়ি হাতে পরবে কেন? কখন যে চুড়িটা দেখার জন্য ওয়ারড্রোবের কাছে চলে গেলেন ডক্টর রহমান তা নিজেও জানেন না। হঠাৎ দূরে একটা কুকুরের আর্তনাদ শোনা গেল। সম্বিৎ ফিরে এলো রহমানের। আচ্ছা, এমনও তো হতে পারে – চুড়িটা কেউ ভালোবেসে মুগ্ধাকে দিয়েছিল! তারপর এক বসন্তে যে ভালোবাসা এসেছিল মুগ্ধার জীবনে, আরেক বসন্ত আসতে না-আসতেই মরে গিয়েছিল সে – ভালোবাসা।

ভরা-বসন্তের সেই 888sport sign up bonus তাই এখানে রেখে গেছে মুগ্ধা এই মরাবসন্তে। সোনার চুড়িটা কোনো 888sport promo codeর পক্ষে ভুলে এভাবে রেখে যাওয়া কি স্বাভাবিক? সাদা কাগজের ওপর সোনার চুড়ি। লাল-সবুজ নকশি-করা সোনার চুড়ি। আচ্ছা, ভালো কথা, একবার কাগজটা দেখা যাক। কোথাও কিছু লেখা আছে কি না! না, কিছুই তো লেখা নেই, একদম ফাঁকা – সেল নম্বরটা লিখে রাখলে এমন কী দোষ হতো? কেন, ফোন করতেন নাকি রহমান সাহেব? ভারি তো আপনার সাধ! মুগ্ধায় আচ্ছন্ন রহমানের সঙ্গে যেন কথা বলছেন খনি-বিশেষজ্ঞ ডক্টর আবদুর রহমান। নিজের আচরণ আর ভাবনায় খানিকটা বিস্মিত রহমান – হাসলেন খানিকটা। দূর ছাই, এসব কী ভাবছি!

চার

কয়লাখনি এলাকা থেকে ভেসে এলো দুবার সাইরেনের শব্দ। রাত দুটো। রাতের নৈঃশব্দ্যে খান খান করে বাগানবাড়ির পশ্চিম কোণ থেকে একটা কুকুরের পৌনঃপুনিক আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। ডক্টর রহমান বিছানা থেকে উঠে আলো জ¦ালালেন। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে-মুখে পানি ছিটালেন। এক গ্লাস পানি খেলেন। নিঃসীম নিস্তব্ধতা আর অতল নৈঃশব্দ্যে হাঁপিয়ে উঠলেন তিনি। হঠাৎ ভাবলেন, একটু আগে বাগানবাড়ির পশ্চিম কোণ থেকে কুকুরের যে-আর্তনাদ শুনেছেন তিনি – সেটা কি কুকুরের আর্তনাদ, নাকি তাঁর নিজেরই? অক্সফোর্ডের পুরনো দিনগুলিতে চলে গেলেন ডক্টর রহমান। প্রফেসর ডক্টর জন ম্যাথুসের ল্যাবেই পরিচয় হয়েছিল সহ-গবেষক সিরিয়ার মরিয়মের সঙ্গে। সে কি পাগল-করা মন-মাতানো দিন গেছে রহমান আর মরিয়মের। গবেষণার সেই কঠিন-নিরস দিনগুলিতে মরিয়মই হয়ে উঠেছিল রহমানের ভালোলাগার সঞ্জীবনী উৎস। বন্ধুত্বটা দুজনেই উপভোগ করেছেন – রহমান আর মরিয়ম। সারাক্ষণই তাঁরা একসঙ্গে থাকতেন। ল্যাবে কাজ করতেন একসঙ্গে। মনে আছে, 888sport app থেকে ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় মরিয়মের জন্য কার্জন হলের সামনে থেকে মাটির অনেক গহনা নিয়ে গিয়েছিলেন রহমান। কত কী ছিল – কানের দুল, ঝুমকা, গলার মালা, একগুচ্ছ চুড়ি। আবার সেই চুড়ি? না, দাঁতের ব্যথার মতো নাছোড়বান্দা চুড়ি বুঝি রহমানকে কিছুতেই ছাড়বে না আজ এই বাসন্তী রাতে। আহা! স্বপ্নের মতো মায়াবী সেই মরিয়ম একদিন কী যেন বলতে চেয়েছিলেন রহমানকে। কথাটা আর বলা হয়ে ওঠেনি মরিয়মের, কথাটা আর শোনা হয়ে ওঠেনি রহমানেরও। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মরিয়ম হাসপাতালে ভর্তি হলেন। দেশ থেকে যুদ্ধের কারণে মরিয়মের বাবাও দ্রুত আসতে পারলেন না মরিয়মের কাছে। রহমানই হয়ে উঠলেন মরিয়মের একমাত্র উপায়। ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন মরিয়ম – চিকিৎসকদের কোনো প্রয়াসই কাজে আসছে না। মুমূর্ষু অবস্থায় রহমানের হাত ধরে মরিয়ম একদিন বলেছিলেন :

– রহমান, মনে হয় আমার দিন শেষ হয়ে এলো।

– তোমার কিছু হয়নি। দুদিনেই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।

রহমানের কথা শুনে মরিয়ম কিছুই বললেন না – অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন রহমানের দিকে।

– তোমার কিছু হয়নি, মরিয়ম। ডাক্তার বলেছেন, শিগগির তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।

– রহমান, আমি সব দেখতে পারছি। আমার জন্য তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। তোমার জন্য আমার খুব কষ্ট হয় রহমান।

– তুমি একটু চুপ করো মরিয়ম।

– রহমান, আজ তোমাকে একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে। বলব?

– বলো মরিয়ম।

– তোমার দেওয়া গহনাগুলি আমার ঘরে আছে। তুমি ওগুলি নিয়ে যেও। তোমার বউকে দিও। ওগুলি তোমার বউ পরলে, তুমি জেনো, ওগুলি তোমার মরিয়মই পরেছে।

বাইরে রাতের নিঃস্তব্ধতা ভেঙে আবার আর্তনাদ করে উঠল কুকুরটা। কুকুরটা? নাকি খনি-বিশেষজ্ঞ আবদুর রহমান? এই রাতে এ কী সংকটে পড়লেন আবদুর রহমান? সকাল দশটায় সেমিনারে তাঁর পেপার উপস্থাপনের কথা; কিন্তু বাসন্তী রাতটা এ কী পরীক্ষায় ফেলল তাকে?

পাঁচ

এবার দূর থেকে ভেসে এলো সাইরেনের তিনবার শব্দ। রাত তিনটা। সকাল দশটায় সেমিনার। উন্মুক্ত খনি থেকে কয়লা উত্তোলন বিষয়ে পেপার উপস্থাপন। আর তো এভাবে চলে না। সুইচটা টিপে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন আবদুর রহমান। কোথাকার কোন চুড়ি, কোথাকার কোন মুগ্ধা আর হারিয়ে-যাওয়া মরিয়মকে নিয়ে থাকলে তো চলবে না। সকালে আন্তর্জাতিক সেমিনার। পেপারটায় আরো কিছু সংশোধন বাকি আছে। কখন করবেন? ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলো আবদুর রহমানের।

চারদিকে ফুলের সমারোহ – লাল নীল হলুদ বেগুনি। দখিনা হাওয়ায় ভেসে আসছে মিষ্টি গন্ধ। দুলে উঠল আবদুর রহমানের শরীর। দরজায় কে যেন টোকা দিচ্ছে। উঠে দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকল অষ্টাদশী মুগ্ধা। না, মুগ্ধা নয়, ওটা তো একটা চুড়ি। চুড়ির আবার পা গজালো কবে? ওটা তো সোনার চুড়ি।

লাল-সবুজ-নকশি-করা সোনার বৃত্তটা একবার হয় সোনার চুড়ি, একবার মরিয়ম। আরে, ও তো মুগ্ধা নয় – মরিয়ম। দুই ‘ম’ মিলে মম। বিছানা থেকে উঠে ওয়ারড্রব খুলে সোনার চুড়িটা যেই না ধরতে যান আবদুর রহমান, তখনি ওটা হয়ে যায় আগুনের একটা পিণ্ড। হাতে বেশ তাপ লাগছে। মরিয়ম বলেছিলেন, ওর দেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। বোমা পড়ছে। ড্রয়ারে কি বোমার আগুন? না, বাবা যে বলেছিল তার বন্ধু সালমান শেখ পাকিস্তানি সৈন্যের গুলিতে মারা গেছেন, এ কি সেই গুলির আগুন?

একসময় আবদুর রহমান লক্ষ করেন, আগুনটা নিভে গেছে। লাল-সবুজ বৃত্তটা এবার মুগ্ধা হয়ে উঠেছে। পরনে নীল শাড়ি – বৃষ্টিতে ভেজা – দু-হাতে লাল-সবুজ চুড়ি – ও কি আসানসোলের মুগ্ধা, নাকি বৃন্দাবনের রাধা? এ কী, মুগ্ধা এ কি করছে? রহমানের গলা জড়িয়ে ধরে একের পর এক চুমু খাচ্ছে – থামছেই না। একসময় মুগ্ধা বলল, রহমান চলো, বাইরে বেড়িয়ে আসি। দেখো বাইরে কী বৃষ্টি হচ্ছে। চলো আমরা দুজনে বৃষ্টিতে ভিজব – তুমি আর আমি এক সুরে গান গাইব – ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু/অনলে পুড়িয়া গেল।/ অমিয়া-সাগরে সিনান করিতে/ সকলি গরল ভেল।’

মুগ্ধা – মা এই বসন্তেই ঘরে আনবে পুত্রবধূ – কুকুরের আর্তনাদ – কয়লাখনির সাইরেন – মরিয়মের ঠান্ডা হাত – শক্তিগড়ের ল্যাংচা –

লাল-সবুজ নকশা-করা চুড়ি – মাটির ঝুমকা – খনি থেকে কয়লা তোলা – ডক্টর ম্যাথুস – সিরিয়ায় বি-৫২ বোমারু বিমান – লন্ডন ব্রিজ – সেমিনার – কয়লা চুড়ি কয়লা মুগ্ধা। সোনার চুড়িটা হঠাৎই একটা বিশাল পাথর হয়ে চেপে ধরল রহমানের বুক। শ^াস নিতে পারছেন না খনি-বিশেষজ্ঞ বত্রিশ বছরের যুবক ডক্টর আবদুর রহমান। পাথরটা জিহ্বা বের করে রহমানের বুকের রক্ত খেতে চায় – এবার পাথরের দুটো হাত গজায় – হাতে ধারালো ছুরি – রহমানের বুকে ছুরিটা ঢুকিয়ে দেবে বুঝি এখনি …

বাইরে আলো ফুটেছে, কাক ডাকছে। ঘুমের মাঝেই রহমান শুনতে পেলেন কে যেন আস্তে আস্তে দরজায় ঢোকা দিচ্ছে। ছটফট করে উঠে বসলেন রহমান। শরীর থেকে ঘাম বের হচ্ছে – গলা শুকিয়ে আসছে। আবার দরজায় টোকা – এবার জোরে জোরে। দেয়ালঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখেন সকাল ন’টা বাজে। ধড়ফড় করে উঠে দরজা খুলেই রহমান দেখতে পান বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা এক তরুণী দাঁড়িয়ে আছে – কপালে বড় টিপ – শাড়িটা বিশেষ স্টাইলে পরা – বোঝা যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী – সুইপার। মাথার কাছে দু-হাত তুলে করুণ কণ্ঠে তরুণী বলল – বাবু, কালকে তোমার এই রুম হামি ক্লিন করেছি। হামার হাতের চুড়িটা ওই ওখানে ড্রয়ারে রেখেছিলাম। তুমি পেয়েছ হামার চুড়ি? বিয়ের সময় হামার সোয়ামি ওই চুড়িটা দিয়েছিল। মোর সোয়ামি নাই – ওই চুড়িটাই এহন মোর সোয়ামির 888sport sign up bonus। মোর পোলাডাও হাসপাতালে। চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার। চুড়িটা বিক্রি করে মোর পোলাডারে চিকিৎসা করাব। মন ভালো ছিল না। তাই যাওয়ার সময় চুড়িটা নেওয়ার কথা ভুলে গেছিলাম। সকাল সকাল নিতে এলাম। তুমি পেয়েছ হামার সোনার চুড়ি?

বিস্ময় আর বিহ্বলতায় হতবাক খনি-বিশেষজ্ঞ ডক্টর আবদুর রহমান। চুড়ির কথা বলার আগে জিজ্ঞাসা করলেন – তোমার নাম কী?

– হামার নাম? মেরি নাম রাজশ্রী রাজবংশী। তয় মায় মোরে মুগ্ধা নামে ডাহে।

খনি-বিশেষজ্ঞ ডক্টর আবদুর রহমান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মুগ্ধার দু-চোখের দিকে।