চৈতন্যদা আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। মাঝেমধ্যে দেখা হয়। দেখা হলেই গল্পের ঝাঁপি খুলে বসে – নিজের কথা বলতে। নিজের সাফল্য, সমস্যা কিংবা পরিচিত কোনো ঘটনা। এমন নয় সে আত্মকেন্দ্রিক। আসলে কথা বলতে ভালোবাসে। যেহেতু তাঁর জগৎটা ছোট, ঘুরেফিরে তাই নিজের প্রসঙ্গ এসে যায়।
নিজের সম্পর্কে তাঁর কোনো রাখঢাক নেই – সে দাম্পত্য কলহ হোক কিংবা অন্য কোনো পারিবারিক সমস্যা – যখন বলে, বলতেই থাকে, অন্যকে বলার সুযোগ দেয় না। আমিও ডিস্টার্ব করি না। গুণমুগ্ধ শ্রোতার মতো শুনে যাই।
আসলে চৈতন্যদার গল্প মানে একজন মানুষের লড়াই কিংবা সাফল্যের গল্প, শূন্য থেকে শুরু করে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার গল্প, হা-ঘরে জন্মেও প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা, চাকরি, ফ্ল্যাট কালচারের যুগে কলকাতা শহরে বাড়ি কিংবা সবাই বারণ করা সত্ত্বেও চাকরিরত বউ … এইসব আর কী, আর এসবই সম্ভব হয়েছে তার গুরুর কৃপায়। গুরুর সম্মতি ছাড়া সে কোনো কাজ করে না।
সমস্ত প্রসঙ্গে গুরুকে সে একবার 888sport app download for android করবেই। আমার আবার গুরুবাদে এতটুকু আস্থা নেই। তথাকথিত গুরুদের তো দেখছি, বিশ^াস-ভক্তি দূরের কথা, ন্যূনতম 888sport apk download apk latest versionটুকুও রাখতে পারি না। আবার চৈতন্যদার মতো সহজ-সরল মানুষের বিশ^াসে আঘাত করতেও পারি না। চৈতন্যদা যখন গুরুর কথা বলে, একরকম চুপ করে থাকি।
চৈতন্যদা চাষি পরিবারের ছেলে। পাঁচ ভাইবোনের সবচেয়ে ছোট। সামান্য জমিজমা ছিল। তিন দিদির বিয়ে দিতে যার বারো আনা বিক্রি করতে হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে মাস ছয়েকের খোরাকিও হয় না। এদিকে ছোটদির বিয়ের কিছুদিন পর বাবা চলে গেলেন। দাদা সেবার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। চৈতন্য ক্লাস এইটে। পুরো পরিবারের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ল। একরকম বাধ্য হয়ে দাদা পড়াশোনা ছেড়ে কাজে ঢুকলো। চৈতন্যকেও মাঝে মাঝে জন-খাটতে হয়েছে, তবু পড়াশোনা ছাড়েনি, বরং এভাবেই নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে।
হায়ার সেকেন্ডারির পর গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় এলো, ভর্তি হলো রবীন্দ্রভারতীতে। সে-সময় রবীন্দ্রভারতীকে বলা হতো গরিবের বিশ^বিদ্যালয়। হোম ইউনিভার্সিটি হওয়ায় যে সকল শিক্ষক পড়াতেন, তাঁরাই প্রশ্ন করতেন পরীক্ষায়। ঠিকঠাক ক্লাসগুলি অ্যাটেন্ড করলে টিউশনি পড়ার প্রয়োজন হতো না। এসব খোঁজখবর নিয়েই মেসে এসে উঠেছিল। খরচ চালাত টিউশনি করে। এ-ব্যাপারে নিতাইয়ের কথা না বললে অন্যায় হবে। নিতাই তার গ্রামের ছেলে, বছর দুয়েকের বড়, বাড়ির অবস্থাও ভালো। রবীন্দ্রভারতীতে পড়ত। মেসে থেকে পড়াশোনা করত। নিতাইয়ের পরামর্শেই গ্রাম ছেড়েছিল।
– ওই বয়সে এত বড় একটা ঝুঁকি নিতে ভয় করল না? একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
– বড়লোকের ঘরের ছেলেমেয়ের কথা আলাদা, গরিব ঘরে আঠারো বছর খুব কম নয়। ততদিনে বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করতে শিখে গেছি আমরা। তাছাড়া গুরুদেবও সম্মতি দিলেন। বললেন, ভয় কী, তোর তো হারানোর কিছু নেই। পথের ভয় তোকে মানায় না। ব্যস, গুরুদেবের কথায় ভরসা করে নেমে পড়লাম। এখন বুঝতে পারি সিদ্ধান্তে এতটুকু ভুল ছিল না। গুরুদেব কখনো মিসগাইড করেন না আমাকে।
– তারপর?
– তারপর আর কি, বিএ, এমএ, বিএড, এমনকি এমএড-টাও করে ফেললাম। বসে থেকে কী করব?
– গ্রামে ফেরার কথা ভাবেননি?
– ভেবেছিলাম ফিরব, গুরু বারণ করলেন। বললেন, শহরে থেকেই চাকরির চেষ্টা কর। সংসারে ঢুকলে আর হবে না। গুরুবাক্য মেনে নিলাম। খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি, বছর তিনেকের মাথায় চাকরি জুটে গেল। হেলাফেলা করার মতো চাকরি নয়, লোকের কাছে পরিচয় দেওয়ার মতোই।
– সে তো জানি।
– তবু একার আয়ে সংসার চালিয়ে এদিকে মাথা গোঁজার আস্তানা করতে পারতাম না। আমি চাকরি পেতেই দাদা হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কাজকর্ম বিশেষ করত না। বাবুগিরি করেই দিন কাটত। কিছু বলতে গেলে বলত, এতদিন আমি সংসার চালিয়েছি, এবার তুই চালাবি। ভাই অফিসার আর দাদা অন্যের জমিতে কাজ করবে! তোর কোনো দায়িত্ব নেই সংসারের প্রতি? দাদা ততদিনে বিয়ে করেছে, দুটো মেয়ে। সংসার খরচ আমাকেই পাঠাতে হতো। বুঝতে পারছিলাম, একার আয় দিয়ে কিছু করতে পারবো না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম চাকরিরতা মেয়ে বিয়ে করব।
– বাড়ি থেকে বিরোধিতা আসেনি?
– আসেনি আবার! রীতিমতো দলবেঁধে বিরোধিতায় নেমেছিল। শুধু আমার গুরু সঙ্গে ছিল, তাই সুবিধা করতে পারেনি।
– গুরুদেব আপনাকে অনুমতি দিলো?
– সে তো দিলোই, না হলে এত বড় ঝুঁকি নিতে পারি! আমার চৌদ্দপুরুষের কেউ কখনো চাকরিরতা মেয়ে বিয়ে করেছে! চাকরিরতা দূরের কথা, আমাদের বংশে কেউ কখনো চাকরি করেছে! থাক সেসব কথা, তোমার বউদির প্রসঙ্গে আসি। তখন সবে এসএসসি চালু হয়েছে, অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে মুড়ি-মুড়কির মতো চাকরি পাচ্ছে। শিক্ষিকা পাত্রীর অভাব নেই। সত্যি কথা বলতে কি, আমারও পছন্দের পেশা শিক্ষকতা। তবু কম মেয়ে দেখতে হয়নি। শেষ পর্যন্ত তোমার বউদিকে মনে ধরল। সেখানেও অনেক বাধা, তোমার বউদি সুশ্রী হলেও সুন্দরী তো নয়, বাড়ির কারো পছন্দ হলো না। এর আগে অনেক দেখতে ভালো মেয়ে দেখেছি, ভালো ফ্যামিলির মেয়ে দেখেছি, সেসব ছেড়ে এই মেয়েকে কেন পছন্দ? কৈফিয়ত দিতে দিতে মুখ ব্যথা হয়ে গেছে, তবু বোঝাতে পারিনি। শেষটায় গোঁ ধরে বসেছিলাম, বিয়ে করতে হলে এই মেয়েকেই করবো, নইলে না।
– কারণ?
– দেখো ভাই, আমি হা-ঘরের ছেলে। ছোটবেলা থেকে লোকের
লাঠি-ঝাঁটা আর করুণায় মানুষ হয়েছি। চাকরি পেয়ে আর্থিক অবস্থা বদলাতে পারে, কালচারটা বদলায় না অত সহজে। আমি আমার পরিবারকে চিনি, আত্মীয়স্বজনকে বুঝি, সেইসব মেয়ে কোনোভাবেই এদের মানিয়ে নিতে পারত না। শেষ পর্যন্ত আমাকে বউ ছাড়তে হতো, নইলে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হতো।
– বউদিকে দেখে মনে হয়েছিল এই মেয়ে সবকিছু মানিয়ে নিতে পারবে?
– ছোটবেলা থেকে পথে পথে। কম মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে তো হয় না, তোমাকে আগেই বলেছি, একটু-আধটু মানুষ চেনার ক্ষমতা আমার আছে। আমার ধারণা যে ভুল ছিল না সে তো তোমার বউদিকে দেখেই বুঝতে পারছ। দেখতে যেমনই হোক, মেয়েটার মন খুব ভালো। আমি অন্তত ঠকিনি।
মিথ্যে বলছে না চৈতন্যদা, অনেকবার তার বাড়িতে গিয়েছি। ভদ্রমহিলা যেমন আন্তরিক, তেমন অতিথিবৎসল। সহজে আপন করে নেওয়ার সহজাত ক্ষমতা আছে। আমি অবাক হচ্ছি অন্য কারণে। এই প্রথম চৈতন্যদার গুরুদেবের উপস্থিতি চোখে পড়ল না। চৈতন্যদার গুরুভক্তি আমার কাছে প্রথম প্রথম মজার একটা বিষয় হলেও একটা সময় বিরক্ত লাগতে শুরু করে। সবখানে ভদ্রলোককে টেনে আনার বদভ্যাসটা ভালো লাগত না। এতে যে তার মহিমা কমে – সেটা সে বোঝে না। কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলাম, কেবল এক্ষেত্রে গুরুদেবের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন মনে হলো না!
খোঁচাটা চৈতন্যদা বুঝলো বলে মনে হলো না। আর বুঝলেও বিশেষ গুরুত্ব দিলো না। বললো, কী বলছো! তোমাকে তো আগেই বলেছি, গুরুর সম্মতি ছাড়া আমি কিছু করি না। আর এত বড় একটা কাজে গুরুদেবের অনুমতি নেব না! আরে বাবা গুরুদেবের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছিলাম বলেই না মা-দাদা-আত্মীয়দের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাদের বউদিকে বিয়ে করতে পেরেছি।
– সত্যি আপনার গুরুভক্তি
বিবেকানন্দকেও হার মানায়।
– ঠাট্টা করছো? আমি কিন্তু হলফ করে বলতে পারি, গুরুকে ভরসা করে আমি কোনোদিন ঠকিনি, তোমাকেও বলবো, পারলে গুরুর কথা শোনো। দেখবে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান খুব সহজে হয়ে যাচ্ছে।
– আমার কোনো গুরু নেই।
– আলবাত আছে। সবার আছে, খোঁজ রাখো না তাই। এবার একটু ধ্যান দাও।
– সরি, অত সময় আমার নেই। আপনি আপনার গুরুকে নিয়ে থাকুন, আমি বেশ ভালো আছি।
একটু ক্ষুণ্ন হয়ে কথাগুলি বলি। চৈতন্যদা বুঝেও নির্বিকার, বরং আমাকে উত্তেজিত হতে দেখে সে মজা পাচ্ছে। কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে স্থির তাকিয়ে থাকার পর মৃদু হেসে বলল, তুমি অন্ধ। থাক এসব কথা, এখন তোমার মুড নেই। আজ ভালো লাগবে না। অন্য কোনো দিন আলোচনা করব বরং। নাও, একটা সিগারেট খাও।
চৈতন্যদা সিগারেটের প্যাকেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে।
দুই
নতুন বউ নিয়ে মেসে ওঠা যায় না। বাধ্য হয়ে চৈতন্যদাকে একটা বাড়ি ভাড়া নিতে হয়েছিল, যেমন-তেমন বাড়ি নয়, আস্ত একটা ফ্ল্যাট। ভাড়াটাও তেমন। একদিন তাকে বলেছিলাম, এত ভাড়া টানার কোনো মানে হয় না। এবার একটা ফ্ল্যাট নিন। যে-পয়সা ভাড়া দিচ্ছেন আর কিছু বাড়ালেই ইএমআই হয়ে যাবে।
– শোনো ভাই, আমি গ্রামের ছেলে। মাঠে-ঘাটে টো-টো করে বড় হয়েছি। ওসব পায়রার খোপ আমার পোষাবে না। কয়েকটা বছর যেতে দাও, বাড়ি আমি ঠিকই করব।
– এই কলকাতা শহরে বাড়ির জমি কোথায়, আর থাকলেও তার যা দাম …
– সব যখন হয়েছে, গুরুর কৃপা থাকলে ওটুকুও হবে।
চৈতন্যদার গুরুদেবকে নিয়ে এর আগে অনেক মজা-মশকরা করেছি, এখন আর করি না। করে লাভ নেই। চৈতন্যদার গুরুভক্তি তাতে একবিন্দু কমবে না। তাছাড়া অহেতুক তাকে অবিশ্বাসই বা করবে কেন, যখন তাকে বিশ্বাস করে কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, বরং উপকারই হচ্ছে। চৈতন্যদার গুরুদেব মানুষটা যে সজ্জন এবং দূরদর্শী এতদিনে আমিও সেটা বিশ^াস করতে শুরু করেছি। ভদ্রলোককে না দেখলেও তার প্রতি একটা 888sport apk download apk latest versionবোধ জন্মেছে ইতিমধ্যে। একবার দেখতে ইচ্ছে করে কিন্তু সংকোচে বলতে পারি না।
বিয়ের বছর তিনেকের মাথায় চৈতন্যদা একদিন বলল, জমি কিনেছি, কিন্তু এখনই তোমাদের সে জমি দেখাবো না।
– কেন? আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, পাছে কোনো অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়াই? মানে আমাকে বিশ^াস করতে পারছেন না?
– না না, সেসব নয়, আসলে জমিটা দেখলে তোমাদের পছন্দ হবে না। জলা জায়গা, জঙ্গলে ভর্তি, আশেপাশে তেমন বাড়িঘর নেই; কিন্তু আমার বিশ্বাস বেশি দিন এরকম থাকবে না। মানুষের চোখ পড়তে শুরু করেছে। কয়েক বছরের মধ্যে জায়গাটা আমূল বদলে যাবে। বাড়িঘর করি, একেবারে গৃহপ্রবেশের দিনই দেখো।
– বেশ, আপনার যেমন ইচ্ছা।
ঠিক দু-বছরের মাথায় গৃহপ্রবেশের নিমন্ত্রণ পেলাম। না যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রচুর কৌতূহল জমে আছে মনের মধ্যে। সবচেয়ে বড় কৌতূহল তার গুরুদেবকে নিয়ে। এই বিশেষ দিনটিতে গুরুদেব নিশ্চয়ই উপস্থিত থাকবেন। একবার স্বচক্ষে তাকে দেখতে চাই।
নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌঁছে গেলাম। স্টেশন থেকে বাড়ির দূরত্ব হাঁটাপথে মিনিট পাঁচেক। নতুন পাড়া, চকচকে বড় বড় সব বাড়ি, দেখেই বোঝা যাচ্ছে, অবস্থাপন্ন পরিবারের বসতি। চৈতন্যদার বাড়িটাও দেখার মতো। বেশ সুন্দর।
গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে আয়োজন খুব বড় না হলেও একেবারে ছোটও নয়। অন্তত শখানেক মানুষের নিমন্ত্রণ। চৈতন্যদার আত্মীয়-স্বজন আর আমার মতো কেউ কেউ, যাদের সে পছন্দ করে। পাড়া-প্রতিবেশীদেরও কিছু কিছু বলেছে। চৈতন্যদা আমাকে সঙ্গে নিয়ে পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখালো, অনেকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। মেয়ের বয়স দু-বছর লাজুক প্রকৃতির, কথা কম বলে। অনেক চেষ্টা করেও ভাব জমাতে পারিনি। এসবকিছুর মধ্যেও আমার চোখ কিন্তু অন্য কাউকে খুঁজছিল, এমন কেউ যে চেহারায়-পোশাকে সংসারে সম্পূর্ণ বেমানান। আজকের এই শুভ দিনে এখানে যার উপস্থিতি স্বাভাবিক মনে করেছিলাম। অনেকটা সময় কাটানোর পরেও এবং সারাবাড়ি ঘুরে তেমন কাউকে চোখে পড়ল না। খাওয়া-দাওয়ার পর আরো ঘণ্টাখানেক কাটলো গল্পগুজবে। এবার বাড়ি ফেরার পালা। আমি আর কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম, আপনার গুরুদেবকে তো দেখছি না।
কথা হচ্ছিল চৈতন্যদার ছাদে দাঁড়িয়ে। বিদায়ের আগে চারপাশের পরিবেশটা দেখাতে এখানে নিয়ে এসেছে। সিগারেটে টান দিতে গিয়েও থেমে গেল আমার কথায়। প্রথমটায় থতমত খেয়ে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো, তারপর হো-হো করে হেসে উঠলো। মাথার ওপর আকাশ, দূর থেকে ট্রেনের শব্দ ভেসে আসছে, দুটো-একটা ঘুঘু পাখি এক্কাদোক্কা খেলছে ছাদের কার্নিশে। কাছেই এয়ারপোর্ট, খুব নিচ দিয়ে একটা অ্যারোপ্লেন উড়ে গেল। খুব একচোট হাসার পর খুব আস্তে জিজ্ঞাসা করল, সে কি! তাকে দেখনি কোনোদিন?
বললাম, না তো।
– কী করে দেখবে, অন্ধ হলে কি তাকে দেখা যায়!
– হেঁয়ালি রেখে পষ্ট করে বলুন।
চৈতন্যদা বলল, গুরু কি কেবল আমার আছে, সবারই আছে। তোমারও আছে। যে তোমার গুরু, সে আমারও গুরু।
– আপনি ঈশ^রের কথা বলছেন?
এতক্ষণ মজার ভঙ্গিতে কথা বলছিল। এবার সিরিয়াস হলো। বলল, না। ঈশ^র আছে কি নেই আমি জানি না। বাড়িতে ঠাকুর আছে, পুজোআচ্চা হয়, সব বাড়িতে যেমন হয়, তার বেশি কিছু না।
– তাহলে?
– তুমি যে এতকাল আমার সঙ্গে মিশেও আমার গুরুর খবর রাখো না, এটাই বিস্ময়ের। চৈতন্যদা তার ডান হাতের তর্জনী নিজের বুকের মাঝখানে ঠেকিয়ে বলল, আমার গুরু এখানে থাকে। মানে আমার মন। মাথা অংক কষতে জানে, সে স্বার্থ বোঝে, তাই লাভের পথে চালিত করে। প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত করে। আমাদের মন তা করে না। আমাকে যে সবচেয়ে ভালো বোঝে। তাই তার সম্মতি না পেলে কোনো কাজ আমি করি না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.