ছাঁচ ও ছাঁচের বাইরের যতীন সরকার

আধুনিক যুগ শ্রমবিভাজনের যুগ। যে-শ্রমিক কারখানায় জুতার তলা নিয়ে কাজ করেন, তিনি অন্য অংশের খোঁজ রাখেন না; দরকার পড়ে না। কারণ, তার কাজের সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় হুন্দাই কোম্পানির গাড়ি বানানোর কারখানায় গেলাম। দেখলাম, ক্রেনের মাধ্যমে নির্মিতব্য গাড়ি একটা লাইনের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। খানিক পরপর একজন করে শ্রমিক দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ি একেকজন শ্রমিকের কাছে এসে কয়েক সেকেন্ড করে থামছে। শ্রমিক নির্দিষ্ট জায়গায় হাত দিচ্ছেন। কাজ করছেন। আবার লাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণাধীন গাড়িটা চলে যাচ্ছে পরবর্তী শ্রমিকের কাছে। খেয়াল করলাম, একেকজন শ্রমিক গাড়ির আর কোথাও না তাকিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় শুধু একটি বল্টু বা অন্য কিছু একটা লাগিয়ে যাচ্ছেন। সারাদিন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ওই একটা বল্টুই লাগান বা তার স্থিরনির্দিষ্ট কাজটুকুই করেন। গাড়ির অন্য জায়গার দিকে তাকানও না।

চিন্তাচর্চার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যিনি মধ্যযুগ নিয়ে কাজ করেন, আধুনিক যুগের কথা বললে তিনি বলেন, ওটা আমার চর্চার এলাকা নয়। আবার যিনি আধুনিক যুগ নিয়ে কাজ করেন, তিনি হয়তো প্রাচীন বা মধ্যযুগ নিয়ে বিশেষ কোনো পর্যবেক্ষণ রাখতে পারেন না; কথা বলতেও অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এটা খারাপ কিছু তা বলছি না। বরং এর একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে। একই জায়গায় যখন একজন লেখক বা চিন্তক তাঁর সারাজীবনের অভিনিবেশকে নিবদ্ধ রাখেন তখন তিনি হয়তো একটু বেশিই গভীরে দেখতে পান।

কিন্তু বহুবিচিত্র বিষয়ে আগ্রহশীল ও পর্যবেক্ষণপ্রবণ চিন্তকেরও যে আলাদা একটা মহিমা আছে সে-কথা অস্বীকার করা যায় না। সক্রেটিস তো তাঁর যুগের এই ধরনের বিচিত্র বিষয়ে আগ্রহশীল ব্যক্তিদেরই বলতেন ‘ফিলোসফার’। উনিশ শতকের বাঙালি মনীষীদের দিকে লক্ষ করলে এই বিষয়টা বোঝা যায়। উদাহরণ হিসেবে অক্ষয়কুমার দত্তের কথাই ধরা যাক। সাধারণ্যে তিনি একজন ধর্ম-সংস্কারক হিসেবে পরিচিত। অথচ তিনি একইসঙ্গে ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ এবং 888sport live footballিকও। তিনি যে বাংলা ভাষায় ভূগোল ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তা এ-যুগে অনেকের মধ্যে যথেষ্ট বিস্ময়ের উদ্রেক করবে বইকি!

ওপরের কথাগুলো যতীন সরকারের লেখকসত্তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে প্রাসঙ্গিক মনে হলো। কারণ, তাঁর চিন্তার ক্ষেত্রগুলো বেশ ব্যাপক-বিস্তৃত। বিচিত্র বিষয়ে তাঁর আগ্রহশীল চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। 888sport live chat-888sport live football-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে বাংলা ব্যাকরণ হয়ে 888sport appsের ইতিহাস পর্যন্ত সবকিছুতেই যতীন সরকারের ছিল সমান আগ্রহ। এ শুধু আগ্রহশীলতার ব্যাপার না। এসব বিষয়ে তিনি তাঁর নিজস্ব গভীর সব পর্যবেক্ষণ হাজির করেছেন। নানা বিষয়ে স্বকীয় পর্যবেক্ষণের বিশেষত্ব তাঁকে 888sport appsের অন্য অনেক লেখক-চিন্তক থেকে আলাদা করেছে। সেই বিশেষত্বটি ঠিক কোথায় তা দেখানোই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য।

এক

যে-কোনো নিবিষ্ট পাঠক যতীন সরকারের অধিকাংশ রচনার ওপর দিয়ে চোখ বুলালে দেখতে পাবেন, নানা বিষয়ে চিন্তার দিক থেকে তিনি ‘মূলধারার’ বয়ানের অনুগামী লেখক।

888sport live chat-888sport live football-সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিষয়ে 888sport appsে ‘প্রগতিশীল’ লেখক-চিন্তকদের যে-বয়ান, যতীন সরকারের বয়ান তাঁর বাইরে খুব কমই গিয়েছে। কিছু উদাহরণ দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হতে পারে।

888sport alternative link সম্পর্কিত তাঁর চিন্তার কথাই ধরা যাক। তাঁর 888sport alternative linkভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ও 888sport appsের 888sport alternative link নামক গ্রন্থে। এ-গ্রন্থে তিনি 888sport appsের 888sport alternative linkকে বিচার করতে গিয়ে 888sport alternative linkের 888sport live chat, বিষয়, কাহিনি-পরিকাঠামো, জীবনবোধ সবকিছুর ক্ষেত্রেই যে-বাটখারাগুলো ব্যবহার করেছেন সেগুলো ইউরোপীয় 888sport alternative link বিচারের বাটখারা। বাংলা 888sport alternative link যেহেতু ইউরোপীয় 888sport alternative linkের প্রভাববলয়ের মধ্যেই প্রধানত বেড়ে উঠেছে সেহেতু বাংলা 888sport alternative link বিচারের জন্যও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই বুর্জোয়া নন্দনভিত্তিক ইউরোপীয় বাটখারাগুলো ব্যবহার করাই এখানকার চল। যতীন সরকার 888sport alternative linkের প্রশ্নে এখানকার ‘মূলধারার’ ভোক্তা ও তাত্ত্বিক হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁর অধিকাংশ 888sport alternative linkবিষয়ক 888sport liveে। তিনি যখন কোনো 888sport alternative link বিচার করতে গিয়ে বলেন, 888sport alternative linkটিতে ‘ভাষা-বিন্যাসে যথেষ্ট শৈথিল্য বিদ্যমান’ বা যখন বলেন, ‘ভাষা ও ভঙ্গিতে দার্ঢ্য প্রকাশিত’ হয়েছে, অথবা যখন বলেন, এটি ‘888sport live chatসার্থক সৃষ্টিকর্ম’ বা ওটি ‘888sport live chatসার্থক সৃষ্টিকর্ম নয়’ তখন তিনি ধরে নেন যে, একটি 888sport alternative linkের 888sport live chatসার্থক হওয়ার কতকগুলো সূত্র আছে। সেই ছাঁচ বা সূত্রগুলোর বিশদ পরিচয় তিনি দেন না। দেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না। সেগুলো নিয়ে বড় কোনো প্রশ্নও উত্থাপন করেন না। তিনি আসলে ধরে নেন যে, 888sport alternative linkের 888sport live chatরূপ বিষয়ক ব্যাপারটা স্থির-প্রতিষ্ঠিত।

একইভাবে তিনি 888sport app download apkমূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আধুনিক 888sport app download apk বিবেচনার বাটখারাগুলোকে সুচারুরূপে ব্যবহার করেন। তারপর রায় দেন, কোনো একটা 888sport app download apkর কতটুকু 888sport app download apk আর কতটুকু নয়। বা একজন কবি কতটা বড় বা ছোট।

তাঁর ইতিহাসদৃষ্টির মধ্যেও একই ব্যাপার লক্ষ করা যায়। পাকিস্তান আন্দোলন, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী 888sport appsকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি এতদ্বিষয়ক যে-মহাবয়ানটি 888sport appsে চালু আছে সেই মহাবয়ানের মধ্যে থেকেই নিজের ভাষ্য তৈরি করেন।

উনিশ শতকের রেনেসাঁস বিষয়ে তাঁর মুগ্ধতা তিনি নিজেও লুকাতে চাননি। উনিশ শতকের দিকে তিনি অনেকটাই সম্মোহিত দৃষ্টিতে তাকান এবং 888sport appsের অধিকাংশ লেখক-চিন্তকের মতোই বিস্ময় মানেন।

প্রগতি এবং মার্কসবাদকে তিনি কখনো ভোলেন না। বিশেষত আশির দশক থেকে 888sport appsের সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি এই প্যারামিটারকে বেশ নিষ্ঠার সঙ্গেই ব্যবহার করেছেন। 888sport appsের মার্কসবাদী 888sport live footballিক-তাত্ত্বিকরাও ব্যবহার করেন।

যতীন সরকারের চিন্তাবিশ্বের যে-বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা বললাম এর প্রায় সবই 888sport appsের প্রেক্ষাপটে মূলধারার একজন বড় লেখক-চিন্তকের বৈশিষ্ট্য বলে ধরে নেওয়া হয়। এদিক থেকে যতীন সরকার 888sport appsের বড় লেখক; গুরুত্বপূর্ণ লেখক। তাঁকে এই নিক্তিতে বিচার করে বড় লেখক বলে সাব্যস্ত করার ব্যাপারটা বিশেষভাবে তাঁর মৃত্যুর পরের এবং আগেরও নানাজনের লেখাপত্রের মধ্যে দেখা গিয়েছে। তাঁর চিন্তাবিশ্বের এই বৈশিষ্ট্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে এভাবে শনাক্ত করার চেষ্টার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। শুধু গুরুত্ব নয়; এটিই 888sport appsের লেখক মূল্যায়নের প্রধান ধারা-প্রবণতা। কিন্তু একটু গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে, প্রকৃত যতীন সরকারের গুরুত্ব-তাৎপর্য ও বিশেষত্ব অন্য জায়গায়। বরং বলা যায়, এসবের পরে থেকেই লেখক-চিন্তক যতীন সরকারের অভিযাত্রার শুরু। কিছু নমুনা হাজির করা যাক। প্রথমে উল্লেখ করা যাক, পূর্বে আলোচিত 888sport alternative linkভাবনার কথা।

দুই

যতীন সরকার 888sport alternative linkচিন্তায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিলেন মূলত বুর্জোয়া নন্দনতত্ত্বের অনুবর্তী – এ-কথা আগেই বলেছি। তবু একটা বিষয় চোখ এড়িয়ে যায় না যে, তিনি 888sport alternative link মূল্যায়নের প্রথম দিন থেকেই জীবনচেতনার প্রশ্নে ছিলেন শ্রেণিসচেতন। এই শ্রেণিসচেতনতার ব্যাপারটার একটা প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি হয়েছিল হয়তো ছাত্রজীবনে কমিউনিস্ট- সান্নিধ্যে আসার ফলে। এ-কারণে শ্রেণিসচেতনতা তথা মার্কসিস্ট চেতনার ডানা ঝাপটানির শব্দ তাঁর 888sport alternative linkচিন্তার মধ্যে শোনা যায়। যদিও এই ডানা ঝাপটানো পাখিটা উড়াল দিতে ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিন্তু ওই যে মার্ক্সিস্ট সান্নিধ্যে আসার ফলে তৈরি হওয়া প্রাথমিক বোধ থেকে তিনি সহজেই অন্যদের চেয়ে একটু আলাদাভাবেই বুঝতে পারেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র লালসালু 888sport alternative linkের অন্তর্জগৎকে। তিনি ঠিকই শনাক্ত করে ওঠেন মজিদের মাজারনির্ভরতা আর খালেক ব্যাপারীর জমি-জিরাতের মধ্যেকার চরিত্রগত ঐক্য। একই সঙ্গে তিনি আক্কাসকে শনাক্ত করেন সামন্তবিরোধী সম্ভাবনায় ভরা একটি চরিত্র হিসেবে। এটাই যতীন সরকার। এখানেই তাঁর স্বাতন্ত্র্য।

888sport appsের মূলধারার ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের দেশভাগকে ব্যাখ্যা করা হয় সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির ফসল হিসেবে। এইভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা যে ঠিক হয়নি সেই হাহাকারে দীর্ণ 888sport appsের ইতিহাস। এই ইতিহাসে কংগ্রেসকে প্রগতিশীল বলে ব্যাখ্যা করা হয়। মুসলিম লীগ বর্ণিত হয় সাম্প্রদায়িক হিসেবে। যতীন সরকার তাঁর পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যু দর্শন বইয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে মূলধারার ইতিহাসের মতোই ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু দেশভাগের জন্য তিনি অন্যদের মতো শুধু মুসলিম লীগকে এককভাবে দায়ী করেন না। তিনি খুব স্পষ্টভাবেই বলেন, ‘কংগ্রেসের নেতারা যাই বলুন, আমার কিন্তু সেই ১৯৪৬ সালে – যখন আমার বয়স মাত্র দশ এবং আমি রামপুর ফ্রি বোর্ড প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস ফোরের ছাত্র – মনে হয়েছিল যে, কংগ্রেস কেবল হিন্দুদেরই পার্টি।’ এ-সত্য উচ্চারণ করতে তিনি কখনো কুণ্ঠা বোধ করেননি। তাঁর ইতিহাসবীক্ষায় এও ধরা পড়ে যে, পাকিস্তান আন্দোলন ঐতিহাসিক কারণেই পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে একটা অমেয় আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছিল। তিনি খুব মৌলিক পর্যবেক্ষণ দেন সাম্প্রদায়িকতার সম্প্রসারণ নিয়ে। তিনি বলেন, 888sport appsের নিস্তরঙ্গ গ্রামগুলোতে হিন্দু-মুসলমান আলাদা বাস করত কিন্তু সাম্প্রদায়িক আচরণ করত না পরস্পরের সঙ্গে। এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে; ভোটের রাজনীতির প্রতিফল হিসেবে। দেশভাগ যে 888sport appsে দ্বিধারী সাম্প্রদায়িক মনোভঙ্গির জন্ম দিয়েছিল এবং তা যে এককভাবে মুসলিম লীগ বা কংগ্রেস করেনি দুজনই করেছে ইতিহাসের সেই বাস্তব বয়ান হাজির করতে যতীন সরকার কোথাও একচুল কসুর করেননি। তিনি এই ইতিহাস লিখতে গিয়ে কথা-চিবান না; চাতুরির আশ্রয় নেন না। নিজের দেখা বাস্তব পরিস্থিতির বর্ণনার ভেতর দিয়ে তিনি দেশভাগের ইতিহাস ও পাকিস্তান শাসনামলের ইতিহাস তৈরি করেন।

এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, দেশভাগের ইতিহাসে তিনি রুই-কাতলাদের পাশাপাশি নজর দেন প্রান্তিক মানুষের ওপর। এই যে, প্রান্তিক মানুষের জীবনালেখ্য তুলে ধরার ভেতর দিয়ে ইতিহাসকে নির্মাণ করার আকাক্সক্ষা এটাও যতীন সরকারকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দান করেছে। এ-কারণে তাঁর পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু-দর্শন বইটি শুধু রাজনৈতিক ইতিহাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পা বাড়িয়েছে সামাজিক ইতিহাসের দিকে। ইতিহাসের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অপাঙ্ক্তেয় মানুষদের স্থান দেওয়া, তাদের সম্বোধনের মধ্যে নিয়ে এসে জাতীয় ইতিহাস রচনার এই পদ্ধতির কারণেই যতীন সরকার 888sport appsের ইতিহাস লেখকদের মধ্যে বহুকাল স্মরিত হবেন।

888sport appsের 888sport live footballিক-চিন্তকদের সবচেয়ে বড় ‘বদগুণ’ এবং একইসঙ্গে ‘ঐশ্বর্য’ হচ্ছে – তাঁরা জনবিচ্ছিন্ন। যতীন সরকার নিজেও তাই মনে করতেন। তিনি মনে করেন, এই জনবিচ্ছিন্নতার ইতিহাস আর ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস সমান বয়সী। তিনি বলেন, ‘আসলে নাগরিক মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ ইংরেজি বিদ্যায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সমগ্র জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।’ সেই বিচ্ছিন্নতা দিন দিন আরো বেড়েছে; ব্যক্তি, গোষ্ঠী থেকে রাষ্ট্রের চরিত্রের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। 888sport apps রাষ্ট্রটিও এর বাইরের কিছু নয়। এই রাষ্ট্রটি এক অর্থে জনবিচ্ছিন্ন। স্বাধীনতার পর থেকেই রাষ্ট্রটি প্রকৃতপক্ষে কিছু মানুষের রাষ্ট্র হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এর অধিকাংশ সিদ্ধান্ত ও সম্বোধন ওই কিছু মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। 888sport appsের অধিকাংশ বড় বড় প্রকল্প দেখলে তা বোঝা যায়। বোঝা যায় এখানকার যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া দেখলেও। গণমানুষের নামে গ্রহণ করা অধিকাংশ সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয় ব্যতিক্রমহীনভাবে অভিজাততান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানসিকতা দিয়ে। দয়া করে সাধারণ মানুষদের ত্রাণ করা হচ্ছে – এমন একটি ভঙ্গি ও প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। কী ইতিহাসচিন্তায়, কী 888sport live footballচিন্তায়, যতীন সরকারের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব তিনি সাধারণ মানুষকে মাথায় রেখে কথা বলেন এবং বলতে পারেন। এই বলার মধ্যে কোনো ভান-ভনিতা লুকোছাপা থাকে না; থাকে একটা যথার্থ গণপ্রবণ মনের পরিচয়।

উনিশ শতকে ইউরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত একটা শ্রেণি গড়ে উঠেছিল। শিক্ষা, ধর্ম, সমাজ, 888sport promo code ইত্যাদি বিষয়ে ওই শ্রেণিটি একটি উল্লেখযোগ্য আলোড়ন তুলতে পেরেছিল। এই সময়ে সৃজনশীলতার জগতেও একটা বিলোড়ন সৃষ্টি হয়। বাংলার ইতিহাসে এই সময়টি রেনেসাঁসের কাল বলে কীর্তিত ও বর্ণিত হয়। বাংলার পরবর্তী চিন্তা ও সৃজনধারাকে এই রেনেসাঁসের আদর্শ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং এখনো অনেক ক্ষেত্রে করে থাকে। যতীন সরকার এই রেনেসাঁসের মহিমা দ্বারা বেশ সম্মোহিত ছিলেন – এ-কথা আগেই বলেছি। কিন্তু যতীন সরকার এ-কথা উল্লেখ করতে ভোলেন না যে, এই রেনেসাঁসের পরিধি ছিল কিছুটা ‘সংকীর্ণ’। এই রেনেসাঁস যে কলকাতা এবং বাংলার সাধারণ মানুষ ও মুসলমান সমাজকে তার আওতার মধ্যে ভালোভাবে আনতে পারেনি – এই সমালোচনাটি তিনি জারি রাখেন। উনিশ শতকের বিদ্যা যে ইংরেজ-অনুগত একটা শ্রেণি তৈরি করেছিল সে-সম্পর্কেও তিনি যথেষ্ট হুঁশিয়ার থাকেন। এই দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর দিয়ে এই কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, তিনি সাধারণ মানুষের বর্গটিকে মাথায় রেখে চিন্তা করতে পারেন।

888sport appsের বুদ্ধিজীবীরা বিশেষত ইসলাম ধর্মের বিষয়টাকে একদম এড়িয়ে চলেন। ওটা তাঁরা যেন রেখে দিয়েছেন ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষদের জন্য, আলেম-ওলামা ও ধর্মানুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তদের জন্য। অথচ এই আধুনিক শিক্ষাগর্বী শ্রেণিটা যখন ধর্ম নিয়ে কথা বলতে যান, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে উন্নাসিকতা প্রদর্শন করেন। আর এর সঙ্গে যুক্তদের ‘অনাধুনিক’ ‘অপ্রগতিশীল’ বলে অপরায়ণ করেন। আধুনিকতার আত্মগরিমায় তাদের যেন মাটিতে পা পড়ে না। কিন্তু সারা পৃথিবীতে ধর্ম ও ধর্ম সম্পর্কিত বিষয়গুলো মূলত ‘সেক্যুলার’রাই মোকাবিলা করে থাকেন। জীবনের সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে ফেলা, স্বাভাবিকীকরণ করা, জীবনের অনিবার্য অংশ করে তোলার কাজটা সেক্যুলাররাই করে থাকেন। কিন্তু আমাদের এখানে ‘নির্ধর্ম’ হওয়াটাই সেক্যুলারদের জন্য প্রধান গৌরবের বিষয়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। ধর্ম একটা ‘অতিস্পর্শকাতর’, ‘ধরাছোঁয়ার বাইরের’ বিষয় হিসেবে বিরাজ করে। জীবনের অনিবার্য অংশ না হয়ে আরোপিত বিষয় হিসেবে দেখা দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিশেষত ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির সংশ্লেষ। 888sport appsের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের মানুষরা এসব বিষয় মোকাবিলা করেন না বলে ইসলাম বা ধর্ম একচ্ছত্রভাবে ধর্মীয় গোষ্ঠীর হাতে রয়ে গেছে। ধর্ম ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের মতো এত হীনম্মন্য জনগোষ্ঠী পৃথিবীতে খুব কমই আছে বলে মনে হয়।

যতীন সরকার 888sport appsের এই সংকটটা বুঝতেন। তিনি জানতেন ধর্মের প্রশ্নকে, বিশেষ করে ইসলামের প্রশ্নকে, আমলে না নিয়ে 888sport appsে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা প্রায় অসম্ভব এবং অর্থহীনও বটে। এ-কারণে ইসলামকে তিনি অনেকদূর পর্যন্ত অ্যাড্রেস করতে পেরেছিলেন। তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘আখিরাত বা পরলোকে বিশ্বাস অবশ্যই ইসলামের অপরিহার্য অঙ্গ, কিন্তু ইসলাম দুনিয়া বা ইহলোককে ‘মায়া’ বলে উড়িয়ে দেয় না। দুনিয়া ও আখিরাতে যা কিছু উত্তম ও মঙ্গলকর তার সবকিছু প্রাপ্তির আকাক্সক্ষাই ইসলামের ধর্মাবলম্বীদের প্রতিদিনকার প্রার্থনায় মূর্ত হয়ে ওঠে।’

আসলে যতীন সরকার ধর্মের বিষয়টিকে প্রগতির বাইনারি হিসেবে না দেখে বরং প্রগতির পক্ষে ধর্মের বয়ান তৈরি করতে চেষ্টা করেছিলেন। ইসলামকে সব সময় প্রগতিশীল বলে ব্যাখ্যা করে সেই চর্চাকে বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি বিভিন্ন লেখায়।

‘ইকবাল আমাদের’ 888sport liveে এর সবচেয়ে ভালো প্রতিফলন দেখা যায়। তিনি বলছেন, ইকবাল মুসলমানদের বা ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে প্রগতির পক্ষে ব্যবহার করেছেন। এটি বুঝতে হবে এবং ইকবালের সেই ব্যাখ্যা জারি রাখতে হবে। তা না হলে ইকবাল ওই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মশীলদের ভুল ব্যাখ্যার শিকারে পরিণত হবেন এবং তাদের দখলেই রয়ে যাবেন। কিন্তু ইকবালকে তো বুর্জোয়া পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থার বাইরে প্রগতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যাখ্যা করে বলাই যায় যে, ‘ইকবাল আমাদের’। একইভাবে তিনি ব্যাখ্যা করতে চান মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সমীপবর্তী নজরুলকে এবং ‘হিন্দু দর্শন’ ও ‘হিন্দু ঐতিহ্য’ বা ‘ঔপনিষদিক তথা প্রাচীন ভারতীয়
ঐতিহ্য’-প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও। কারণ তাঁরা কোরান-হাদিসের বা উপনিষদের অথবা হিন্দু ও মুসলমানের ইতিহাস ‘ঐতিহ্যের পুনরাবর্তন’ করেননি, বরং ‘নবায়ন’ করেছেন।

এভাবে যতীন সরকার ধর্ম ও ধর্মানুষঙ্গকে প্রগতির বাহন হিসেবে ব্যাখ্যা ও ব্যবহার করার পক্ষপাতী ছিলেন; একটা মোকাবিলাপ্রবণ চেতনা তাঁর লেখালেখির মধ্যে বরাবরই ক্রিয়াশীল থেকেছে। এ-ব্যাপারে তিনি 888sport appsের প্রগতিগর্বী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ব্যতিক্রমীদের দলে পড়বেন। তিনি প্রগতিশীল চিন্তার আওতা বাড়ানোর জন্য নিরন্তর কাজ করে গেছেন। ধর্মকে প্রগতিশীল ব্যাখ্যার আওতার মধ্যে নিয়ে আসার এই প্রবণতা বর্তমান 888sport appsের বুদ্ধিজীবীদের জন্য একটা কাজের অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখা দেওয়ার দাবি রাখে।

শুধু ধর্মের কথা বলি কেন, 888sport live footballের ক্ষেত্রেও তাঁর একই ধরনের গ্রহিষ্ণু মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। তিনি ‘লোক’ বলে পরিচিত অংশকে আলাদা করে রাখতে চান না। কিন্তু আমাদের আধুনিক শিক্ষাগর্বী অংশ বরাবর তাই করে এসেছেন। এই অংশটা ‘সাধারণের’ চিন্তা ও সৃজনবৃত্তির খোঁজ রাখেন না। তাদের ভাবনগর সম্পর্কে জানেন কম। মনে করেন ‘আমরাই’ সেরা। আমরাই আমাদের ইতিহাস রচনা করি। পুরোটা জায়গা দখল করে রাখি। যতীন সরকার মনে করেন, অল্প কিছু মানুষের কীর্তিকলাপে ঠাসা বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস। এখানে একটা খোপ করে ‘লোক’ বলে ছোট্ট পরিসরে আলোচিত হয় ওই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সৃজনকর্ম। যতীন সরকার সম্ভবত 888sport appsের সংস্কৃতিকর্মী ও চিন্তকদের মধ্যে অগ্রগণ্য একজন হবেন যিনি অনেকদূর পর্যন্ত ওই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সৃজনশীল 888sport live footballধারাকে যথাযথ সম্বোধনের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছেন; তাদের ঐশ্বর্যকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। তিনি অনেক লেখায় এদের কাছে কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করেছেন। তিনি শুধু এই ধারাকে স্বীকার ও সম্বোধন করেছেন, তা নয়, কখনো কখনো তিনি এই ধারাকেই প্রধান বলে সাব্যস্ত করেছেন।

যতীন সরকার ‘সমাজতন্ত্রে আস্থাবান ছিলেন’। তিনি যখন 888sport live football, সমাজ, সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করতে যান তখন মার্কসবাদী নানা মাপকাঠি ব্যবহার করেন। কিন্তু একটু গভীরভাবে লক্ষ করলে যে কেউ টের পাবেন যে, তিনি যান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। মানুষের পক্ষে থাকলে একজন মানুষকে যতটুকু সমাজতন্ত্রী বলা যায়, যতীন সরকার সেই গোত্রে পড়বেন বলে মনে করি। যতীন সরকারের সমাজতন্ত্র-সংলগ্নতার এই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য এই সিদ্ধান্তে আসা যে, তিনি আসলে চিন্তার দিক থেকে অনেকদূর পর্যন্ত একজন সমন্বয়বাদী চিন্তক-বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তবে একজন চিন্তক-বুদ্ধিজীবীর মধ্যে যতটুকু বিষ না থাকলে হয় না, ততটুকু তাঁর মধ্যেও ছিল। কারণে তাঁরও শত্রু ছিল। তাঁর বিদেশি বা আন্তর্জাতিক শত্রু পুঁজিবাদ ও এর পুজারি। আর দেশি শত্রু ‘অপ্রগতি’ ও এর
‘পূজক’-শ্রেণি।

আসলে একটা মেইনস্ট্রিম ন্যারেটিভের ভেতরে থেকে শত্রুমিত্র ভেদ জারি রেখে যতটা সমন্বয়বাদী হওয়া যায় যতীন সরকার তা-ই ছিলেন। অনেকে সমন্বয়বাদিতার মধ্যে চরিত্রহীনতার একটা গন্ধ খোঁজেন। কিন্তু যতীন সরকারের ক্ষেত্রে এই কথা খাটবে না। সমন্বয়বাদী চিন্তা বরং তাঁর নিজের পর্যবেক্ষণের পজিশনকে আরো শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে। অনেকে তাঁকে পক্ষভুক্ত বলে পাঠ ও প্রচার করেন। কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে, তিনি অনেকদূর পর্যন্ত 888sport appsের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মূল ভাবনা-কাঠামোর অনুগামী হলেও তাঁকে আর দশজনের ছাঁচে ফেলে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না। প্রচলিত চিন্তা-কাঠামোর বাইরের যতীন সরকার যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রথাগত চিন্তা-কাঠামোর বাইরের এই যতীন সরকার 888sport appsের বাইনারি রোগগ্রস্ত বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জন্য খুব প্রয়োজনীয় বলে মনে করি।