ছোট পরিসরে জীবনের জলছবি

আহমদ রফিক

২৪ বসুবাজার লেন

মাহবুব রেজা

 

অনন্যা

888sport app, ২০০৯

 

৬০ টাকা

 

এগারোটি গল্প নিয়ে সংকলন ২৪ বসুবাজার লেন। গল্পকার মাহবুব রেজা। নামগল্পসহ ছটি গল্পে এবং কিছুটা হলেও অন্য কয়েকটিতে জীবনযাপনের যে-ছবি ধরা পড়েছে তাতে মনে হয় লেখকের কুক্ষিগত অভিজ্ঞতাই প্রধান। মধ্যবিত্ত পরিবারের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দবেদনা, আশা-হতাশা ও ভালোমন্দ ঘিরে অনুভূতির প্রকাশ বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। এসবের ঠিকানা মনে হয় একটাই – ২৪ বসুবাজার লেনের বাড়ি, আশপাশের মানুষজন ও প্রকৃতি। মূল গল্পগুলো এমন একই ধরনের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতায় বাঁধা যে, তা একটি ছোটখাটো 888sport alternative linkের রূপ পেতে পারত।

গল্পগুলো উত্তম পুরুষে ভালোলাগা না-লাগার অনুভূতি নিয়ে লেখা – সেখানে মা-বাবা, ভাইবোনদের নিয়ে সংসারের যে-ছবি অাঁকা হয়েছে তাতে সচ্ছলতা, অসচ্ছলতার পাশাপাশি যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বক্তার অনুভূতি ফুটে উঠেছে তাতে একটি বাড়ি, তার পরিবেশ ও ব্যক্তিক সম্বন্ধগুলো বড় হয়ে উঠেছে। সেগুলো একটি কিশোরমনের আয়নায় প্রতিফলিত। সেখানে আবেগ এতই বেশি যে, বসুবাজার লেনের বাড়ি ও বন্ধু-বান্ধবকে ছেড়ে না যেতে সবকিছুই করা যায়। গল্পগুলো 888sport sign up bonusচারণের ভঙ্গিতে লেখা, কিন্তু সে-অনুভূতি এত তীব্র ও গভীর যে তা অনেকটা নস্টালজিয়ার মতো হয়ে ওঠে এবং তা একাধিক গল্পে একইভাবে ফুটে ওঠে। যেমন নামগল্পে, তেমনি একাধিক গল্পে। যেমন ‘বাড়ি বদলের দিন’ গল্পের শেষ বাক্যটি ‘কিন্তু সাবু ভুলতে পারেনি ২৪ নং বসুবাজার লেনের সেই একতলা বাড়িটার কথা। আর এ জীবনে বোধহয় ভুলতেও পারবে না।’

শৈশব-কৈশোরের 888sport sign up bonus এমনই গভীর অনুভূতিপ্রবণ যে, সংবেদনশীল মনের মানুষ তা ভুলতে পারে না। তাতে দুঃখ, বেদনা, সুখ, আনন্দ সবকিছু নিয়ে একধরনের নস্টালজিয়া হয়ে জেগে থাকে। এখানেও লেখকের 888sport sign up bonusচারণার মধ্যে সে-চরিত্রটা ধরা পড়েছে। সেখানে রয়েছে মা ও বাবার ভিন্ন স্বভাবের কথা, তাদের মধ্যে টানাপড়েনের সম্পর্কের বিষয়, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, বন্ধুর দল – সবকিছু মিলে একটা ক্যানভাস বা প্রামাণ্যচিত্র যেন। গভীর তত্ত্বকথার বদলে একটি পরিবার, একটি সংসারের ভেতরকার আলোছায়া, সাদাকালোর ছবি বক্তার অনুভবের সূত্র ধরে উঠে এসেছে।

গল্পগুলোর আরেক বৈশিষ্ট্য পুরান 888sport appর প্রতি মমতার প্রকাশ, সেখানকার টুকরো টুকরো ছবি, যা 888sport appই চেহারা-চরিত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। ঘুড়ি ওড়ানো থেকে আরো নানা অভিজ্ঞতা সেখানে স্থান পায়, সামনে এগিয়ে 888sport appর পুরনো মহল্লাগুলোর কিংবদন্তিসুলভ পরিচয়। 888sport appর আদিবাসিন্দা অর্থাৎ 888sport appইয়া ছাড়াও বাইরে থেকে এসে বাস করা মানুষও যে কেমন করে পুরান 888sport appকে ভালোবেসে ফেলতে পারে তার নমুনাও গল্পগুলোতে মেলে।

পুরান 888sport appপ্রীতির পাশাপাশি লেখকের প্রকৃতিপ্রীতিও গল্পগুলোতে অনেকটা জায়গায় ছড়িয়ে আছে। গাছপালা, ফুল, আকাশ, মেঘ, বৃষ্টি নানাভাবে গল্পগুলোতে এসে পড়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে খানিকটা কাব্যিক রোমান্টিকতা নিয়ে দেখা দিয়েছে আকাশ এবং মেঘ-বৃষ্টি। মনে হয়, প্রকৃতির এদিকটার সঙ্গে লেখকের আত্মিক যোগ রয়েছে।

যেমন ‘কাকতাড়ুয়া’ গল্পে আকাশ ও বৃষ্টির সঙ্গে মানবিক সম্পর্ক নিয়ে কথকতা। যেমন ওই গল্পে ‘মেঘ করা আকাশটা বারবার অথইকে বলছে, অথই তোমার যখন মন খারাপ করবে, বুকের ভেতর কষ্টেরা হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে বেড়াবে তখন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। একমাত্র আমাকে দেখলে তোমার মন খারাপ ভালো হয়ে যাবে, বুকের কষ্ট যাবে চলে।’

একই গল্পে অথইয়ের বৃষ্টিভেজার দৃশ্যে রোমান্টিকতা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, অনেকটা যেন লেখকের অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়ে। ‘অথই বৃষ্টির মধ্যে হাত ভেজায়।… ছাদে এসে বৃষ্টিটাকে আরো ভালো লাগতে লাগলো অথইয়ের।… বৃষ্টির ফোঁটাগুলো চারদিকে ছিটকে পড়ছে। তাতে বেশ একটা নকশাদার কারুকাজের খেলা হচ্ছে।… বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে অথই।… বৃষ্টি অথইকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।… অথই বৃষ্টির জলে বৃষ্টির জল হয়ে যায়।/ অথই বৃষ্টি হয়ে যায়।/ অথই ওর বাবার কষ্ট-বেদনার অংশীদার হয়ে ওঠে।’

এমনকি তার মায়েরও মনে হতে থাকে, ‘তার মেয়ে প্রচন্ড বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মাঝ ছাদে একাকী দাঁড়িয়ে ভিজতে ভিজতে এক সময় বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।’ প্রকৃতির সঙ্গে এমন এক আত্মিক সম্পর্ক অন্যগল্পেও দেখা যায়। আবার ওই রোমান্টিক চেতনা প্রকৃতির সঙ্গে মিলে পিতৃস্নেহের যে-প্রকাশ ঘটায় তাতেও আশ্চর্য মমতামাখা। জলিল সাহেব ফকিরের উপদেশে ঘর-সংসার ছেড়ে বিবাগী হয়ে যাওয়ার চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রাতে নিঃশব্দে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে উঠানে পা রেখেছেন, কিন্তু দুবছর বয়সী অবুঝ আদুরে মেয়ের ডাক তাকে পেছন ফিরে তাকাতে বাধ্য করে। লেখকের ভাষায়, ‘তখন ভরা পূর্ণিমা। সেই আলোয় যেন সব কিছু ভাসছে। জলিল সাহেবের পুরনো ভাঙ্গা বাড়ি, বাড়ির দেয়াল, গাছপালা লতাগুল্ম, বারান্দা, উঠোন সব ভেসে যাচ্ছে আলোর স্রোতে। জলিল সাহেব উঠোনের মাঝখানে একাকী দাঁড়িয়ে থাকেন। জলিল সাহেবের আর বাইরে যাওয়া হয় না। তার মেয়ের ডাকের কাছে সব কিছু ভেসে যায়। তলিয়ে যায়।’

দুঃসহ জীবনের মধ্যেও এমন এক মমতাভরা রোমান্টিক চেতনা গল্পগুলোতে উঁকি দিয়ে যায়। এ কি জীবনের                   না-পাওয়াগুলোকে বা দুঃখগুলোকে রোমান্টিকতায় মুড়ে সান্ত্বনা খোঁজা, নাকি অতৃপ্তির মধ্যে তৃপ্তিকে খুঁজে ফেরা।  প্রকৃতির সৌন্দর্যে বা মানবিক বোধ অর্থাৎ স্নেহ-মমতা-ভালোবাসায় মানুষ বোধহয় এমনি করে দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়।

মাহবুব রেজার গল্পগুলো সাদামাটা। কিন্তু এগুলোতে রয়েছে আন্তরিকতা, অনুভূতির গভীরতা, মানবীয় মূল্যবোধ, রয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে আনন্দে একাত্ম হওয়া। এসব কারণে গল্পগুলো পাঠকের মন স্পর্শ করতে পারবে বলে মনে হয়। r