জতুগৃহে বসবাস

আস্ত একটা কাঁচা ডিম, ভাঙ্গতে বড়োই সুবিধা

উপর থেকে, ডাইনে থেকে, বাঁয়ে থেকে, নিচ থেকে

যেখান থেকেই চাপ দাও – মুহূর্তেই ভেঙ্গে খান খান,

ভাঙ্গনের মহিমায়, এখন আমরা সায়াহ্কের যাযাবর।

ভাইটি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে অস্তিত্বের শেষ ধাপে

পা রেখে বললো – দাদা আমি আজ থেকে আবু সুফিয়ান,

বোনটি পালাতে পালাতে মধ্যাহ্কে – তবু শেষ রক্ষা হলোনা,

লাথি মেরে ওরা ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে- ভোগ শেষে পূজার উচ্ছিষ্ট নৈবেদ্য।

কন্যার কথা জানিনে, পুত্রের কথা জানিনে-

ওরা দলা দলা অভিশাপ গিলে খেয়ে অভিশপ্ত পাথর পুতুল,

কাজের বুয়ার কাছে করুণার কাহন শুনতে গিয়ে,

মনে হলো – এর চেয়ে অরণ্যে দীপান্তরে অজ্ঞাতবাসে

পালিয়ে যাওয়া ভালো।

ছোটবেলা বাবা শিকড়ের গল্প বলতেন,

গাছের শিকড়, বংশের শিকড়, জীবনের শিকড়-

কিভাবে যুগ যুগ পোঁতা আছে এই সোঁদা মাটির গভীরে,

পৌরাণিক প্রস্তর যুগের ভেতর দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে,

তা কিভাবে এই রত্ত্কের সাথে গায়ত্রী মন্ত্রের মতো,

মিশে আছে – তা টিকা সমেত আমাদের বুঝাতেন।

বাবার চোখের সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মন্বন্তর দেশভাগ,

এতো অকাল রক্তবন্যা, খরা, প্রকৃতির প্রতিশোধ ঘটলো

তবু বাবা বিচলিত হননি, মাটি ছাড়েননি, শিকড় ছাড়েননি-

কঠিন আবেগে বার বার আঁকড়ে ধরেছেন,

শিকড়ের গভীরে লুকানো শিকড় – দুঃখিনী মাটির আমূল।

ইতিহাসের সেই কঠিনতম দিনে বাবা আমাদের শোনাতেন-

মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর সেই বিখ্যাত গান-

্লভাই দেশ ছাইড়া যাইও না,

একভাই যখোন বাইচ্যা আছে আর ভয় কইরোনাশ্।

আজ বাবা নেই, মাথার উপর ছাদ নেই, ছায়া নেই

আজ লোককবি রমেশ শীল নেই,

আবদুল করিম 888sport live football বিশারদ নেই,

স্বাধীনতার ত্রিশ বছর পর, মাটি দিন দিন আরো আগ্লা,

শিকড়ছাড়া অনুর্ব্বর, অনুজ্জ্বল, রক্তগন্ধী, হিংসাশ্রয়ী বিমাতা হয়েছে।

বাবা এখন আমার জতুগৃহে বসবাস- মা, তোমার শ্যামলিমা মাটি ছেড়ে আমি কোথায় দাঁড়াবো?