জনৈক বীরপ্রতীকের বর্তমান

ডান পায়ের হাঁটুর উপরে ব্যথাটা হাড়ের মধ্যে পেরেক ঠোকার মতো অসহ্য যন্ত্রণা ছড়ালে তার মনে হয়, প্রাণটি ঠিক বুকে নয়, বুকের খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে পায়ের মধ্যে নেমে টিসটিস করছে। কোনোরকম কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষতের দাগ নেই, ফোঁড়ার মতো ফুলেও ওঠেনি, কিন্তু ভেতরে খুব ব্যথা। টনটন করে উঠলে ব্যথাটা নিজের মৃত্যুঘণ্টা হয়ে কানে বাজে। সমগ্র শরীর-সত্তা দিয়ে পায়ের ব্যথা ও মৃত্যুচেতনা ছাড়া আর কিছুই অনুভব করতে পারেন না তিনি। আজ সাতদিন ধরেই চলছে এরকম।

নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা বোনক্যান্সার সন্দেহ করায় ব্যথা ও মৃত্যুভয় – দুটোই বেড়েছে তার। আগামী সপ্তাহে চিকিৎসার জন্যে সিঙ্গাপুরে যাবেন তিনি। যোগাড়-যন্ত্র চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অভয় দিয়েছেন, বিদেশী হাসপাতালের পরীক্ষাতেও ক্যান্সার নিশ্চিত হলে ভয়ের কিছু নেই। প্রাথমিক অবস্থা বলে ক্যামোথেরাপিতে আরোগ্যের সম্ভাবনা ষোলো

আনা। খুব বেশি হলে পা-টা কেটে ফেলতে হবে, কিন্তু ব্যথার মানে মৃত্যুঘণ্টা অবশ্যই নয়। ডাক্তার এসব কথা খোলাখুলি বলে তাকে সাহস দেয়ার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু পায়ের ব্যথাটা বলে তাকে অন্য কথা।

ক্যান্সারের আশঙ্কাটি পরিবারের সবার মধ্যে সংক্রমিত হলেও বাইরের লোকজনকে জানাতে নিষেধ করেছেন তিনি। নিজের অফিস ও কারখানার কর্মচারীরা জানে সাহেব-অসুস্থ মাত্র। সামান্য পায়ের ব্যথা সারাতে বিদেশযাত্রা স্বাভাবিকভাবে নেবে সবাই। তারপরেও অসুস্থ বড়কর্তাকে দেখতে অফিসের ম্যানেজার, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে বাসায় অনেকেই আসছে। স্বজন-বন্ধুদের মধ্যে এক মন্ত্রী, প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতাও এসেছিলেন। ব্যথা ও ক্যান্সার-আতঙ্ক গোপন রেখে সবার সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেছেন তিনি। সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মন্ত্রী-বন্ধু দেখামাত্র পায়ের ব্যথাটাকে বাত বলে চিহ্নিত করে জগিংয়ের সময় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে হাসিমুখে। জবাবে তিনি হাসার চেষ্টা করেছেন মাত্র।

পায়ের ব্যথাটা শুরু থেকে সিঙ্গাপুর-যাত্রার প্রস্তুতির মধ্যে বীরপ্রতীকের একবারও মনে হয়নি তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বন্ধু প্রাক্তন মন্ত্রী পর্যন্ত মনে করিয়ে দিতে পারেনি। নামের পূর্বে মেজর (অব:) যেমন, তেমনি নামের শেষে বীরপ্রতীক উপাধিটিও তার বর্তমান সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে এমনভাবে মিশে আছে যে, আলাদাভাবে তা আর নিজের অতীত-গৌরব মনে করিয়ে দিতে পারে না। কিন্তু অনাত্মীয়জনদের মধ্যে বিকেলে দুজন সাংবাদিক তাকে দেখতে এসেছে শুনে সবকিছু ছাপিয়ে নামের বীরপ্রতীক উপাধিটি নিজের ভেতর এমন ঝলসে ওঠে যে, মুহূর্তের জন্যে পায়ের ব্যথাটা পর্যন্ত ভুলে যান।

এর একটি বড় কারণ সম্ভবত একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংবাদপত্রে যতটা পরিচিত হয়েছেন, স্বাধীনতার পর এতগুলো বছরে আর কোনো অর্জন দিয়ে তা পাননি। স্বাধীনতার পর স্বল্পসময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ অনেকে হয়েছে। কোটিপতি 888sport live chatপতি হয়ে সমাজে জাঁকিয়ে বসার পরও তাদের নিয়ে কেচ্ছাকাহিনী অনেক সময় খবরের কাগজে ছাপা হয়, ঋণখেলাপিদের তালিকায় নাম ওঠে। কিন্তু বীরপ্রতীকের ক্ষেত্রে তেমন হয়নি। কালো টাকার মালিক হয়ে অনেকে বড় রাজনৈতিক দলে ভিড়ে এম.পি-মন্ত্রী হওয়ার জন্যে জনসেবা করে নিয়মিত খবরের কাগজে নাম ছাপাতে সচেষ্ট, কেউ-বা আবার নিজেই সংবাদপত্রের মালিক হয়েছেন। কিন্তু বীরপ্রতীক সে পথে যাননি। কাজেই দুজন সাংবাদিক এসেছে শুনে বীরপ্রতীকের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি বড় হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের 888sport sign up bonus নিয়ে স্বাধীনতা বা বিজয়দিবসে পত্রিকায় বেশ কিছু 888sport sign up bonusচারণমূলক লেখা লিখেছেন তিনি। সেসব লেখা নিয়ে নিজের খরচে একটি বইও প্রকাশ করেছেন।

আজ তার অসুস্থতার খবর সংগ্রহ করে পত্রিকায় ছাপিয়ে দেয়ার জন্যে সাংবাদিক এসেছে শুনে বীরপ্রতীক কিছুটা আত্মপ্রসাদ অনুভব করেন। সাংবাদিক আসার নেপথ্যে সরকারি দলের মন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা বন্ধু, কিংবা পরিচিত দৈনিক পত্রিকা মালিকের কথা মনে আসে। পেছনে যে-ই থাক, ওদের সঙ্গে কথা বললে কালকের কাগজে হয়তো খবর বেরুবে – বীরপ্রতীক মুক্তিযোদ্ধা ক্যান্সারে আক্রান্ত, চিকিৎসার জন্যে সিঙ্গাপুর যাত্রা, ক্যান্সারে মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলেও পা কেটে ফেলার পর স্বাধীন দেশে পঙ্গু হয়ে বাঁচার নিয়তিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না। তার এসব ব্যক্তিগত খবর কি দেশময় লোককে জানতে দেয়া উচিত? সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই অপেক্ষমাণ চাকরের কাছে যন্ত্রণাবিকৃত কণ্ঠে জানতে চান।

কেন এসেছে ওরা? কী চায়?

পুরনো কাজের লোক শফিক জানায়, আপনার সঙ্গে বই লেখার কাজ করেছে যে সোম্বাদিকটা, সে আর একজনকে সঙ্গে এনেছে। বলল যে আপনার অসুখ শুনে আপনাকে দেখতে এসেছে।

বীরপ্রতীক ইচ্ছে করলে নিজেও উঠে গিয়ে বসবার ঘরে অতিথিদের দর্শন দিতে পারেন। শুয়ে থাকলে পায়ে যে ব্যথা, হেঁটে গেলেও সেই ব্যথা। কিন্তু নিজের অসুখটাকে বড় করে দেখাতেই যেন সাংবাদিক দুজনকে শোবার ঘরে আনতে বলেন।

আসিফ অচেনা যুবককে নিয়ে ঘরে এসেই তার আসার কারণ বোঝাতে যথেষ্ট ভক্তি888sport apk download apk latest version নিবেদন করে, স্যার অসুস্থ শুনে আমিও দেখতে এলাম। শুনলাম পায়ের ব্যথায় আজকাল গাড়িতে করেও চলাফেরা করতে পারেন না।

বীরপ্রতীক বসার জন্যে শয্যার পাশের চেয়ার দেখিয়ে দেন।

আসিফ শয্যাশায়ী বীরপ্রতীকের শরীর বা অসুখ নিয়ে বিন্দুমাত্র কৌতূহল দেখায় না। আগমনের আসল কারণ বলার জন্যে সঙ্গীকে পরিচয় করিয়ে দেয়, আমার বন্ধু হাসান, সাপ্তাহিক শতাব্দী পত্রিকার রিপোর্টার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে একটা কভার-স্টোরি করছে। আপনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্যে ওর খুব আগ্রহ।

 বীরপ্রতীক শুধু হতাশ নন, বিরক্তও বোধ করেন। এখন আর বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে তার ভালো লাগে না। এসব অনেক হয়েছে। লেখালেখির অভ্যাস নেই, তারপরেও একাত্তরের 888sport sign up bonus নিয়ে আস্ত একটি বই লিখেছেন তিনি। অবশ্য নিজের কলমে লিখতে হয়নি, তিনি বলে গেছেন, সাজিয়ে-গুছিয়ে লেখার দায়িত্ব পালন করেছে এই আসিফ। বই করার আগে লেখাগুলো বিভিন্ন দৈনিকের বিশেষ 888sport free betয় ছাপারও ব্যবস্থা করেছে সে। এ জন্যে অবশ্য আসিফকে দুদফায় হাজার দশেক টাকা দিয়েছেন। কিন্তু নগদ অর্থসম্মানী, বইয়ের ভূমিকায় কৃতজ্ঞতা পেয়েও মন ভরেনি ছেলেটার। নিজের

কারখানায় আসিফের দুই আত্মীয়কে চাকরি দিতে হয়েছে। আজ তরুণ সাংবাদিক-বন্ধুকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে কী ধান্ধা লুটতে এসেছে কে জানে!

যুবকটি নিজেই এবার তার লেখার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে বলে, স্যার, স্বাধীনতার ত্রিশ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অনেকেই আক্ষেপ করেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি এখন শাসন-ক্ষমতায় শরিক। এই পরিপ্রেক্ষিতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে আপনার কিছু মন্তব্য শুনতে চাই।

ছেলেটির কথা শুনে বীরপ্রতীকের পায়ের মধ্যে মৃত্যুচেতনাই আবার চিনচিন করে অস্তিত্ব জানান দেয়। বিরক্তি না লুকিয়ে তিনি জবাব দেন, ওসব চেতনা-ফেতনা আমার মধ্যে নেই।

সাংবাদিক যুবকটি হাসে, যেন বীরবিক্রম দারুণ এক মশকরা করেছে।

স্যার, আপনার একাত্তরের যুদ্ধগাথা বইটি আমি পড়েছি। এ বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেমন ধরা পড়েছে, তেমনি যুদ্ধের বিবরণও বেশ     জীবন্ত।

লেখকরা নাকি খুব প্রশংসা-কাঙাল। কিন্তু তিনি লেখক-বুদ্ধিজীবী সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এসব লেখা লেখেননি। সেরকম বাসনাও জাগেনি কখনো। নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে বীরপ্রতীক, সেনাবাহিনীতে চাকরি করে মেজর হওয়া ছাড়াও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে অর্থ-বিত্ত-সুনাম মেলা অর্জন করেছেন। এসবের ভারে ক্লান্ত মনে হয় নিজেকে, নতুন করে জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। সাংবাদিকদের দ্রুত বিদায় করার জন্যে তিনি বলেন, দেখুন আমি তো লেখক-বুদ্ধিজীবী নই, সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দলও করি না।

দমে যাওয়ার বদলে হাসান নামের ছেলেটি আরো উৎসাহিত হয়ে বলে, সেই জন্যে তো আপনার কাছে আসা স্যার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ওরা কী বলবে, সে তো আমাদের জানা।

 ছেলেটার সবজান্তা ভাব দেখে মেজর সাহেব আরো বিরক্ত বোধ করেন।

কী বলবে ওরা, কী জানেন আপনি?

তরুণ সাংবাদিকটি বেশ স্মার্ট। জবাব দেয় তৎক্ষণাৎ, বিরোধী দল ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা বলবে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবকে হত্যা করার পর দেশের শাসন-ক্ষমতায় যারাই এসেছে, তারা আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দেশটাকে অনেকটা সরিয়ে এনেছে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুকে পুনর্বাসিত করেছে, তাদের সঙ্গে জোট বেঁধে দেশ শাসন করছে। অন্যদিকে সরকারি দলের লোকেরা বলবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ক্ষমতায় থেকে ওরা নিজেরা নিজেরা লুটপাট করে দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আর বাম দলগুলো দুই শাসকদলকে লুটেরা শ্রেণি বলে কমবেশি গালমন্দ করবে। আমরা এসব অনেক শুনেছি স্যার।

বীরপ্রতীক জানতে চান, এসবের মধ্যে কি সত্যতা নেই?

আছে হয়তো। আপনি কাকে সমর্থন করেন, কিংবা করেন না, একজন প্রকৃত বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ব্যাপারটা কীভাবে দেখছেন, এ সম্পর্কে আপনার দু-একটা মন্তব্য হলেই চলবে স্যার।

হাসান নোট বুক ও কলম বাগিয়ে বীরবিক্রমের দিকে তাকিয়ে থাকে। গাইড আসিফও তাকে উৎসাহ দিয়ে বলে, সংক্ষেপে বললেই চলবে স্যার। আমি সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখে দেবো, ছাপার আগে আপনার কাছে ও একবার দেখিয়ে নেবে।

বীরপ্রতীকের সন্দেহ জাগে, বর্তমান রাজনৈতিক ডামাডোলে তার রাজনৈতিক পক্ষপাতকে স্পষ্ট করে তোলার দায়িত্ব নিয়ে সাংবাদিক দুটি এসেছে। কারা তাদের এই অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছে, ঠিক বুঝতে পারেন না তিনি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মরতে বসেছেন বীরপ্রতীক। এটা বুঝেই কি দেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বীরপ্রতীকের শেষ মতামত জানাটা জরুরি হয়ে উঠেছে কারো কাছে?

কিন্তু জানানোর জন্যে ভেতরে ঐ চেতনার স্বপক্ষে একটি কথাও খুঁজে পান না বীরপ্রতীক। প্রাণটা আবার বুক থেকে নেমে পায়ের মধ্যে টিসটিস করে ব্যথা ছড়ায়। পা চেপে ধরে তিনি ছেলে দুটিকে গলাধাক্কা দেয়ার মেজাজ নিয়ে বলেন, আমি ভীষণ অসুস্থ, কথা বলতে পারব না। আপনারা এখন চলে যান।

অপ্রস্তুত সাংবাদিকদ্বয় উঠে দাঁড়ায়, কলম-নোটবুক হাতে হাসান মরিয়া হয়ে বলে, ঠিক আছে স্যার, আপনি একটু সুস্থ হলে আমি আবার যোগাযোগ করব। আপনার মতো খেতাবপ্রাপ্ত নির্দলীয় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মতামত ছাড়া আমার কভারস্টোরির মূল্য থাকবে না।

বীরপ্রতীক ক্রুদ্ধ কণ্ঠে চাকরকে ডাকেন, শফিক, এনাদের ড্রয়িংরুমে নিয়ে চা-টা খাইয়ে দাও। আর কোনো মেহমান বা টেলিফোন এলে আমাকে দিও না।

সাংবাদিকরা চলে যাওয়ার পর বীরপ্রতীক বড় অস্থির বোধ করেন। মনে হয়, মুমূর্ষু অপরাধীর কাছে পুলিশ-গোয়েন্দারা যেভাবে স্বীকারোক্তি আদায় করতে চায়, ছেলেটি তার কাছেও সেরকম কথা আদায় করার চেষ্টা করে গেল। আর নিজের মৃত্যুঘণ্টা শুনতে পেয়েও সত্য উচ্চারণে তিনি ভয় পেলেন কেন? কী যায় আসে তার ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতালোভী বন্ধুরা তাকে ভুল বুঝলে? মৃত্যুর পরেও সন্তানদের মধ্য দিয়ে নিজের সামাজিক অবস্থান, বিত্ত-ব্যবসায় ধরে রাখতে তৎপর তিনি। কিন্তু একাত্তরের সেই নিখাদ দেশপ্রেম ও

মুক্তিযুদ্ধের ফসল বীরপ্রতীকই হয়তো তাকে মৃত্যুর পরেও এ দেশে বাঁচিয়ে রাখবে। পায়ের ব্যথাকে চাপা দিয়ে এ দেশে টিকে থাকার আকাক্সক্ষা কিংবা পুরনো দেশপ্রেম বীরপ্রতীকের বুকে টনটন করে বাজে। পা কেটে ফেললে এ দেশের মাটিতে দৃঢ় পা ফেলে এ জীবনে আর হাঁটতে পারবেন না। এ-কথা ভেবে হাঁটার ইচ্ছেটাও তার জোরালো হয়ে ওঠে।

বীরপ্রতীক আজ পায়ের ব্যথাটাকে আর চুপচাপ সহ্য করা নয়, পরাস্ত করার জেদ নিয়ে বাইরে বেরোনোর সিদ্ধান্ত নেন। না, গাড়িতে চেপে নয়, পায়ে হেঁটে তিনি আজ রাস্তায় বেরুবেন। সান্ধ্য888sport slot game করবেন একা একা।

স্ত্রীও উৎসাহ দিয়ে বলেন, বনের বাঘের আগেই মনের বাঘই তো তোমাকে বেশি ভয় দেখাচ্ছে। কষ্ট করে একটু হাঁটাচলা করতে পারলে দেখবে মনের বাঘটাও ভয় পাবে।

হাতের ছড়িটা সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। ড্রাইভারের পর শফিক পিছু ছুটে আসে, জানতে চায়, সেও সঙ্গে যাবে কি-না। তিনি ধমক দেন, কেন, আমি কি পঙ্গু হয়ে গেছি! ব্যথাটা কত বাড়তে পারে, আজ দেখব আমি। তুই বাড়িতে যা।

শুয়ে থাকলে পায়ে একঘেয়ে ব্যথাটা যেভাবে অনুভব করতেন, এখন সেভাবে নেই। পেইন কিলার খেয়েছেন বলেই হয়তো। তারপরেও হাতের ছড়ি দুলিয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে গিয়ে মনে হয়, পায়ের মধ্যে থেকে থেকে কেউ ছুরি বসিয়ে দিচ্ছে যেন। সতর্ক পা ফেলে এগোন তিনি।

গুলশানে নিজের বাড়ি হওয়ার পর থেকে প্রাতঃ888sport slot gameের অভ্যাসটা চালু করেছিলেন বীরপ্রতীক। এই সুবাদে এলাকার বড়-ছোট     রাস্তাগুলো যেমন চেনা, তেমনি অনেক বিশিষ্ট বাড়ি ও বাড়ির মালিকদের সঙ্গেও চেনা-পরিচয় প্রাতঃ888sport slot gameে বেরিয়ে নিবিড় হয়েছে। দেখা হলে আগ বাড়িয়ে অনেককে গুডমর্নিং জানিয়েছেন, মেজর সাহেব গুডমর্নিং পেয়েছেন বিস্তর। কিন্তু ভোরে ঘুম ভাঙার পর আজকাল আর মর্নিংওয়াকের সময় পান না। ঘরেই হালকা ব্যায়াম ও জগিং করে নেন।

আজ সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরিয়ে বাড়ির কাছের পথঘাটও কীরকম অচেনা রহস্যময় হয়ে ওঠে! মনে হয় তিনি এগোতে পারছেন না, যত সামনে এগোনোর চেষ্টা করছেন, ততই যেন পেছনপানে ছুটে যাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন অপারেশন-যাত্রার 888sport sign up bonus মনে পড়ে। শত্রুশিবির কিংবা টার্গেটের কাছে পৌঁছার জন্যে প্রতিটি অপারেশন ছিল দুর্গম। কিন্তু জোনাকজ্বলা ঝিল্লিমুখর অন্ধকারে নক্ষত্রখচিত আকাশ, মেঠো পথ, পথের দুধারের ক্ষেতপ্রান্তর, খাল-বিল, ঝোপঝাড়, গাছপালা ঘেরা গাঁয়ের ছোট-বড় গেরস্তবাড়িগুলো- সবকিছুকে একান্ত নিজের মনে হতো। ভেতরে জাগত শিরশিরে দেশপ্রেম। এই দেশটাকে ভালোবেসে, দেশটাকে মুক্ত ও স্বাধীন করার জন্যে শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার সময়ে সতর্ক দেশপ্রেমের সঙ্গে মৃত্যুভয়ও মিশে থাকত হয়তো, কিন্তু যুদ্ধযাত্রায় পায়ের গতি তাতে একটুও কমতো না। যুদ্ধের নয় মাসে বিভিন্ন অপারেশনে যতটা পথ পায়ে হেঁটেছেন, স্বাধীন দেশে ত্রিশ-বত্রিশ বছরে ততটা পথ আর হাঁটেননি বোধহয়।

দুনম্বর মোড়ের কাছে এসে হাতের ছড়ি রাস্তায় ঠেকিয়ে বীরবিক্রম দাঁড়িয়ে কোনদিকে এগোবেন ভাবেন। এসময়ে একটি অচেনা লোক তাকে সালাম দেয়, গায়ে পড়ে কথা বলে, স্যার কি হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন?

লোকটাকে চেনার চেষ্টা করেন না, বরং সন্ত্রাসী-ছিনতাইকারী সন্দেহ করে সতর্ক হয়ে ওঠেন, সামান্য মাথা ঝুঁকিয়ে, ডান দিকের রাস্তা ধরে এগোতে থাকেন।

লোকটা সতর্ক করে, স্যার গাড়িছাড়া ওদিকে যাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গোলমাল হয়েছে শুনলাম। পুলিশ মিছিলে গুলি ছুড়েছে। কালকে আবার হরতাল দেবে শুনলাম।

কেন গোলমাল, কিসের মিছিল – বীরপ্রতীক বুঝতে পারেন না। ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতা ও নানা অপকীর্তির কথা বলে তাদের অপসারণের দাবিতে বিরোধী দল আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি হরতাল, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। এইসব আন্দোলন করে ক্ষমতার পালাবদল হলেও দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং ভবিষ্যতে হবে বলেও মনে করেন না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসঙ্গে কেন তার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা জোর গলায় বলতে পারলেন না? সাংবাদিকটিকে আবার বাসায় ডেকে সাক্ষাৎকার দেয়ার কথা ভাবতেই, আশ্চর্য যে, হাসান নামের সেই তরুণ সাংবাদিকটি সামনে এসে দাঁড়ায়। এবার একা।

স্যার সুস্থলোকের মতো এই তো দিব্যি হেঁটে বেড়াচ্ছেন। হাঁটতে হাঁটতেও আমার সাক্ষাৎকারটা দিতে পারেন স্যার।

বীরপ্রতীক উৎফুল্ল মেজাজে বলেন, ক্যান্সারের ব্যথা পরাস্ত করে হাঁটতে যখন পারছি, তোমাকে সাক্ষাৎকারও দিতে পারব। বলো কী জানতে চাও। কিন্তু নোট নেবে কীভাবে?

হাসান পকেট থেকে ছোট টেপ-রেকর্ডার বের করে বলে, অসুবিধা নেই স্যার, আপনি বলুন রেকর্ড হয়ে যাবে। স্বাধীনতার পর আপনার ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কীভাবে কাজ করছে বলুন।

বীরবিক্রম ধীরপায়ে সামনে হাঁটেন, আর পেছনের কথা ভেবে আপন মনে কথা বলেন।

দেখ, স্বাধীনতার পর আমরা জয় বাংলা বিজয়োল্লাসে মেতেছিলাম, কিন্তু সেই উল্লাস তো বেশিদিন টেকেনি। শেখ মুজিব স্বাধীন রাষ্ট্রের হাল ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে সবাইকে ত্যাগ ও সহিষ্ণুতার মনোভাব দেখাতে বলেছিলেন, তিন বছর

দেশবাসীকে কিছুই দিতে পারবেন না বলেছিলেন। সাধারণ মানুষ সকল কষ্ট-দুর্ভোগ নিরুপায়ভাবে সহ্য করেছে। কিন্তু যারা ক্ষমতায় ছিল, যারা অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের মধ্যে শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার সুফল-ভোগের প্রতিযোগিতা। দেশ গঠনে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের এক প্লাটফরমে রাখার মতো কোনো কর্মসূচি দিতে পারেননি। নিরস্ত্র হয়ে তাদের অনেকের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বেড়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে জাতির পিতা হয়েও মুজিব তার দলের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। চেষ্টা করেছিলেন অবশ্য।

হাসান বাধা দিয়ে বলে, আমি আপনার ভূমিকার কথা জানতে চাইছি স্যার।

আমি স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম। সেনাবাহিনীর একজন জুনিয়র অফিসার হিসেবে আমার তেমন কিছুই করার ছিল না। সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা সেনাদের মধ্যে একটা বিরোধ ছিল। দেশের নৈরাজ্যময় পরিস্থিতির প্রভাব ছিল। দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীদের যোগসাজশে এই সেনাবাহিনীরই একটি গ্রুপ যখন জাতির জনক শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে, আমি সেদিনই মনে মনে সেনাবাহিনীর চাকরি-ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এরপর চাকরি ছেড়ে এক বন্ধুর সঙ্গে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করলাম। সেই ব্যবসা নিয়ে আছি এখনো।

বীরপ্রতীকের ভেতরে দেশ এবং দেশপ্রেম এই মুহূর্তে এমন আলোড়িত, ব্যক্তিগত ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথা বলার উৎসাহ বোধ করেন না। কিন্তু তরুণ সাংবাদিক তার ব্যক্তিগত সাফল্য নিয়ে খোঁচা দিয়ে কথা বলে।

তাহলে স্যার, আর্মি থেকে রিটায়ার করার পর একজন সফল ব্যবসায়ী ও বর্তমানের গার্মেন্টস 888sport live chatপতি হিসেবে আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা     বাস্তবায়নের চেষ্টা করে গেছেন?

বীরবিক্রম কিছুমাত্র না ভেবেই জোরগলায় জবাব দেন, অবশ্যই। তুমি নিশ্চয় জানো গার্মেন্টস এখন দেশের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমার বিভিন্ন কারখানায় এক হাজার 888sport promo code-পুরুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

হাসানের খোঁচা আরো তীক্ষè হয়ে ওঠে।

এর বাইরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আপনার কিছু করার ছিল না স্যার? এখনো নেই কি?

বীরবিক্রম আবেগ-বিহ্বল কণ্ঠে কথা বলেন।

এর বাইরে আমি আর কী করতে পারতাম বলো। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনা বাস্তবায়নের জন্যে জাতির জনক সংবিধানে চারটি আদর্শের ওপর দেশটাকে দাঁড় করিয়েছিলেন – গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তা ও ধর্মনিরপেক্ষতা। কিন্তু শেখ মুজিবের সময় থেকেই তো সেই চেতনা ক্ষত-বিক্ষত করার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো কে কতোটা স্বপ্নপূরণে কাজ করেছে, এ প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্যে তোমাদের ইতিহাস ঘাঁটতে হবে না, দেশের সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করলেই পাবে। আমিও অবশ্য রাজনৈতিক দলে ভিড়তে পারতাম, যেমন অনেক নামি-দামি মুক্তিযোদ্ধা ভিড়েছে, রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষ পদগুলো দখল করে থেকেছে। আমিও তাদের মতো এম.পি-মন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করতে পারতাম, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন-চেতনার কথা বলে মিটিং-মিছিলে গলাবাজি করতে পারতাম। কিন্তু তাতে ত্রিশ বছরে যা হয়েছে, তারচেয়ে কমবেশি কিছু হতো বলে আমি মনে করি না।

হাসানের বিদ্রƒপ এবার মর্মভেদী হয়ে ওঠে, তাহলে স্যার নামের আগে সেনাবাহিনীর পদবি ও নামের শেষে বীরপ্রতীক খেতাব লাগিয়ে রেখেছেন কেন?

হাঁটতে গিয়ে বীরপ্রতীক ডান পায়ের হাড়ে যেভাবে ছুরির খোঁচা পাচ্ছিলেন, সেইরকম খোঁচা এবার বুকেও বেঁধে। কান্নার গলায় কথা বলেন তিনি।

তোমরা এ প্রজন্মের ছেলেরা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানো না বলে একাত্তরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে তাচ্ছিল্য কেির কথা বলতে পারো। এই বীরপ্রতীক উপাধি কেউ দয়া করে তো আমাকে দেয়নি। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে অর্জন করেছি। স্বাধীন দেশে গত বত্রিশ বছরে ব্যক্তিগত চেষ্টায় অনেক কিছু অর্জন করেছি আমি, কিন্তু বীরপ্রতীক আমার চেতনায় যে-অহংকার জাগায়, আর কোনো প্রাপ্তি তা জাগায় না। এর কারণ কী জানো? বীরপ্রতীক আমাকে সবসময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে করিয়ে দেয়।

হাসান হাততালি দিয়ে ওঠে, তাহলে স্যার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আপনার মধ্যে এখনো ক্রিয়াশীল!

অবশ্যই ক্রিয়াশীল। এই চেতনা বুঝতে হলে ঘুরেফিরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তোমাদের জানতে হবে, একাত্তরের দিনগুলোতে ফিরতে হবে।         আমি তোমাকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি        888sport sign up bonusর কথা বলব। তাহলেই বুঝতে পারবে, কেন আমি ঘুরেফিরে সেই 888sport sign up bonusর কাছে ফিরে যাই।

হঠাৎ কী-যে রূপান্তর ঘটে বীরপ্রতীকের! পায়ের ব্যথার অস্তিত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যান। দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটেন। বিড়বিড় করে একাত্তরের       888sport sign up bonusচারণ করতে গিয়ে নিজেই সশরীরে ঢুকে যান সেই গল্পে।

তার হাতে স্টেনগান। কোমরে বাঁধা গ্রেনেড। মুক্তিবাহিনীর একটি কোম্পানি-কমান্ডার তিনি। উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী ক্যাম্প থেকে, আগস্ট মাসের এক বর্ষণমুখর রাতে অপারেশনে বেরিয়েছেন। সঙ্গে ষাট জন সশস্ত্র যোদ্ধার একটি বাহিনী। গন্তব্য উজিরপুর নামক একটি জায়গা। সেখানে পাকবাহিনী ক্যাম্প করেছে। রাতের অন্ধকারে কাছাকাছি অবস্থান থেকে শত্রুকে     তিন দিক থেকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছেন

তিনি। চেনা পথ ছেড়ে, স্থানীয় গাইডদের সাহায্যে ঘুরপথে তিন ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে কাদাপানি খচে শত্রুশিবিরের কাছে গিয়ে পৌঁছেন তারা। পরিকল্পনা মতো যোদ্ধাদের তিন গ্রুপে ভাগ করে শত্রুদের তিন দিকে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। নিজে ত্রিশ জন যোদ্ধার দায়িত্ব নিয়ে একটি পাটক্ষেত ভেঙে স্কুলের পেছনে একটি বিলের ধারে গিয়ে পজিশন নেন। দক্ষিণ দিক থেকে ফায়ারিং শুরু হয় প্রথম। শত্রুক্যাম্প থেকে পালটা জবাব আসে না। উত্তর দিক থেকেও মুক্তিবাহিনীর রাইফেলগুলো এক সঙ্গে গর্জে ওঠে। শত্রুরা তখনো সাড়া দেয় না। ক্যাম্প ছেড়ে তারা চলে গেছে এরকম সন্দেহ হয়। শত্রুর শক্তি ও অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েই বীরপ্রতীক তার গ্রুপকেও ফায়ারিংয়ের সংকেত দেন। শত্রুরা তার স্টেনগানের আওয়াজ শোনার অপেক্ষায় ছিল যেন। এক সঙ্গে তাদের কয়েকশ কামান আর মর্টারের শেলবর্ষণ ঝিরঝিরে বৃষ্টিঝরা অন্ধকারকে ফালাফালা করে দেয়। বিলের পানির ওপরে বিদ্যুৎ চমকায়।

পাশে অবস্থান নেয়া সহযোদ্ধার গুলি-খাওয়া আর্তনাদ শুনে দলকে পিছু হটার নির্দেশ দেন তিনি। শত্রুরা 888sport free betয় এবং অস্ত্রশক্তিতে তাদের চেয়ে যে অনেকগুণ জোরালো, বুঝতে দেরি হয় না। আগেই নির্দেশ দেয়া ছিল, কেউ আহত হলে তাকে সঙ্গে নিয়েই পালাতে হবে। উঠে দাঁড়াবার ক্ষমতা ছিল না এবং মর্টারের গোলায় পা উড়ে গিয়েছিল – এমন রক্তাক্ত দুজনকে টেনেহিঁচড়ে পাটবনের ভেতর দিয়ে পিছু হটতে শুরু করে তারা। পাটক্ষেত পেরিয়ে গুলিবিদ্ধ আরো দুজন ক্রলিং করে এগোনোর বদলে, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে সঙ্গীদের শেষ আর্তি জানায়, আমাকে এখানে ফেলে যাবেন না রে ভাই, কুকুর-শিয়ালে খাবে।

কমান্ডারের কঠোর নির্দেশের কারণেই গুলিবৃষ্টির মধ্যেও অক্ষত মুক্তিযোদ্ধারা মৃত ও আহত সঙ্গীদের টেনেহিঁচড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যায়। সব মিলে চারজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছে। তাদের লাশ কাঁধে নিয়ে মুক্ত অঞ্চলের কাছে মহব্বতপুর গ্রামে যখন তারা পৌঁছে, তখন ভোরের আলো ফুটেছে। বৃষ্টিও থেমে গেছে।

মহব্বতপুর গ্রামে মুক্ত অঞ্চলের মাটিতে সঙ্গীদের লাশ দাফন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল কমান্ডার। গ্রামের 888sport promo code-পুরুষ ছোট-বড় সকলেই ভিড় জমিয়েছিল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। একটি বাঁশঝাড়ের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল তাদের। শোকে বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল মুক্তিবাহিনীর জীবিত সদস্যরা, কাঁদারও শক্তি ছিল না তাদের। আপন সন্তানহারা বেদনা নিয়ে অনেকেই কাঁদছিল। কিন্তু এই শোকার্ত ভিড়কে স্তব্ধ করে দিয়েছিল মাঝবয়সী এক চাষার কণ্ঠ। সে কমান্ডারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হঠাৎ হুংকার দিয়েছিল, শালারা হামার মুক্তি ভাইকে গুলি        করি মারছে, চলেন তোমার সাথে এ গ্রামের 888sport promo code-পুরুষ সগাই লাঠিসোঁডা নিয়া যামো হামরা, শয়তানের বাসায় আগুন জ্বালায় দেমো, চলো বাহে সগাই!’

লোকটার কান্না শুনে কান্না থেমে গিয়েছিল সবার। অনেকেই লাঠি-বল্লম নিয়ে বেরিয়েছিল। কমান্ডার তাদের ভাষণ দিয়ে বুঝিয়েছে, আমাদের গুলিতে ওরাও বেশ কয়েকজন মরেছে। পরের অপারেশনে আমরা সবাইকে খতম করব। আপনারা ধৈর্য ধরুন। 888sport appsকে শত্রুমুক্ত করবোই আমরা। জয় বাংলা।

আমার বইটাতে এই অপারেশনের কথা বিশদভাবে আছে। কিন্তু দুঃস্বপ্নের মতো সেই রাত এবং মহব্বতপুর গ্রামের মানুষগুলোকে ভুলতে পারিনি আমি। এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায়, ’৮৭ সালে তাদের কবর দেখার জন্যে নিজেই গাড়ি নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম সেই মহব্বতপুর গ্রামে। সঙ্গে উপজেলার চেয়ারম্যানও ছিলেন। আশ্চর্য যে, মুক্তিযুদ্ধের দুই যুগ না পেরোতেই শহীদদের সেই গোরস্তান 888sport app পড়ে গিয়েছিল ইরি ধানক্ষেতের বিস্তারে। যে-গ্রামের 888sport promo code-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষজন মুক্তিবাহিনীর জন্যে এতো ভালোবাসা দেখিয়েছিল, তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সেই রক্তঝরা ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছিল সময়। বয়স্ক লোকজনের সহযোগিতায় বিরান হয়ে যাওয়া একটি বাঁশঝাড়ের পাশে ইরি ধানক্ষেতের কোণায় চারজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর শনাক্ত করেছিলাম আমি। নিজের টাকায় শহীদদের গোরস্তান পাকা করে দিয়েছিলাম। গোরস্তানের বেদিতে পাথরে তাদের নামও খোদাই করে লেখা হয়েছে। বেশ বড় ধরনের একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল সেদিন। খবরের কাগজেও এসেছিল খবরটা। তুমি বারবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভেতরে সক্রিয় না থাকলে কেন আমি ফিরে গিয়েছিলাম সেই গ্রামে? কেন ফিরে ফিরে এখনো মন ছুটে যায় মহব্বতপুর গ্রামে?

পাশ ফিরে তাকান বীরপ্রতীক, সাংবাদিক যুবকটি কখন চলে গেছে বুঝতে পারেন না। এতক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে কার সঙ্গে তবে বিড়বিড় করে কথা বলছিলেন তিনি? মুক্তিযুদ্ধের 888sport sign up bonus-চেতনার ওপর ভর করে দাঁড়িয়েছিলেন বলে এতক্ষণ পায়ের ব্যথাটাও টের পাননি। কিন্তু নির্জন অন্ধকার ফুটপাথ ধরে সামনে এগোতে গিয়ে মনে হয়, তার পায়ের মালাইচাকি বুঝি পা থেকে ছিটকে পড়বে, মর্টারের শেলবর্ষণে সহযোদ্ধা আলতাফের পা যেমন ছিটকে গিয়েছিল, তেমনি তার ডান পাখানাও বুঝি শরীর থেকে খসে পড়বে এক্ষুনি। আর একটি পাও সামনে ফেলতে পারেন না তিনি। ফুটপাতের দেয়াল ধরে বসে পড়েন।

মনে হয় নিজের তৈরি শহীদ 888sport sign up bonusস্তম্ভের দেয়াল ধরে বসে আছেন বীরপ্রতীক, বিড়বিড় করে সহযোদ্ধাদের যন্ত্রণাবিকৃত কণ্ঠে বলেন তিনি, তোমাদের মতো শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কবরে শুয়ে থাকলে আমার বীরপ্রতীক উপাধিটা পবিত্র  হয়ে থাকত। স্বাধীন দেশে হাঁটা বড় কষ্ট হে! বড় কষ্ট!