জন্মশতবর্ষের 888sport apk download apk latest version-888sport app download for android মোহিনী চৌধুরী : প্রণয় বিরহ মুক্তি জাগরণের গীতিকবি

একসময়ে গ্রামোফোন রেকর্ডের জন্যে যাঁরা গান লিখতেন বা সুর করতেন, রেকর্ড লেবেলে তাঁদের নাম ছাপা হতো না। তিরিশের দশক থেকে ধীরে ধীরে এই নিয়মের পরিবর্তন ঘটে, 888sport live chatীর পাশাপাশি গীতিকার-সুরকার উভয়ের নামই রেকর্ডে উল্লেখ পেতে থাকে। তখন থেকে জানা সম্ভব ও সহজ হয় গীতিকারের নাম। কাজী নজরুল ইসলামের পর আধুনিক বাংলা গানের পর্ব শুরু হলো। কথা, সুর ও গায়কিতে এলো নজর করার মতো পরিবর্তন। অবশ্যই নজরুলের প্রভাব গীতিকারদের কারো কারো ওপর কমবেশি যে পড়েছিল তা কবুল না করে উপায় নেই। এই নতুন পর্বের গীতিকার হিসেবে যাঁরা এলেন দেশভাগের আগে, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও 888sport live chatগুণের জন্যে লোকপ্রিয় হয়ে উঠলেন তাঁদের মধ্যে নাম করতে হয় অজয় ভট্টাচার্য, প্রণব রায়, সুবোধ পুরকায়স্থ, শৈলেন রায়, হীরেন বসু, তুলসী লাহিড়ীর। এই তালিকার সর্বশেষ নাম – মোহিনী চৌধুরী।

দুই
গানের শ্রোতার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকেন 888sport live chatী বা গায়ক। একটি গান মানুষের মনে দোলা দিলে, সেখানে 888sport live chatীর নামই ভেসে ওঠে – নেপথ্যে অজানাই থেকে যান সেই গানের রচয়িতা বা সুরস্রষ্টা। ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে’, ‘হায় কি যে করি এ মন নিয়া’, ‘ভুলি নাই – ভুলি নাই – নয়নে তোমারে হারায়েছি প্রিয়া’, ‘কে আমারে আজো পিছু ডাকে’, ‘ভুলায়ে আমায় দু’দিন শেষে কি হায় ভুলবে’, ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হল বলিদান’, ‘পৃথিবী আমারে চায় রেখো না বেঁধে আমায়’, ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড় তুমি যে বহ্নিশিখা’, ‘শতেক বরষ পরে – তুমি আর আমি ফিরে আসি যেন’, ‘যাদের জীবনভরা শুধু আঁখিজল’, ‘সেই যে দিনগুলি বাঁশী বাজানোর দিনগুলি’ – এই যে গানগুলো এর কোনোটি শচীন দেববর্মন, কোনোটি কৃষ্ণচন্দ্র দে, কোনোটি সত্য চৌধুরী, আবার কোনোটি বা যূথিকা রায়ের গাওয়া – এ-কথা সুররসিক বাঙালির অজানা নয়। কিন্তু কে বেঁধেছিলেন এই মর্মস্পর্শী হৃদয়গ্রাহী গানগুলো – এই প্রশ্নের জবাবে হয়তো অনেকেই নিরুত্তর থাকবেন। মোহিনী চৌধুরী – হ্যাঁ, মোহিনী চৌধুরীই রচনা করেছিলেন কালোত্তীর্ণ 888sport app download for androidীয় কলের গানের স্বর্ণযুগের 888sport sign up bonus-জাগানিয়া এই গানগুলো।

তিন
সেকালের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার কোটালিপাড়া পরগনার অন্তর্গত ডহরপাড়া গ্রামের চৌধুরী-পরিবার ছিল কয়েক পুরুষের বনেদি জমিদার। মোহিনী চৌধুরীর পিতামহ হলধর চৌধুরীর আমলে নানা কারণে এই পরিবারের পড়তি অবস্থা দেখা দিলে তাঁকে চাকরি স্বীকার করতে হয়। হলধর চৌধুরী ছিলেন ‘আদালতের প্রথম পাশ্চাত্যবৈদিক ব্রাহ্মণ নাজির’। এই পরিবারেই জন্মেছিলেন মোহিনী চৌধুরী ডহরপাড়া গ্রামে, ৫ সেপ্টেম্বর ১৯২০ (২০ ভাদ্র ১৩২৭) – দিনটি ছিল রবিবার। মতিলাল চৌধুরী ও গোলাপকামিনী দেবী মোহিনীর জনক-জননী। এঁদের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মোহিনীর অবস্থান তৃতীয়।
মোহিনী চৌধুরীর লেখাপড়ার হাতেখড়ি গ্রামের পাঠশালায়। পিতা মতিলাল চৌধুরী কলকাতায় চাকরি করতেন। তাই দুই-এক বছর পর মোহিনীকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। মতিলাল কলকাতায় বিভিন্ন অঞ্চলে ভাড়া-বাড়িতে থাকতেন বলে মোহিনীকে প্রবেশিকা পর্যন্ত তিনটি স্কুল বদলাতে হয় – প্রথমে পঞ্চানন ইনস্টিটিউশন, পরে সরস্বতী ইনস্টিটিউশন, সবশেষে রিপন কলেজ-স্কুল। মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। রিপন কলেজ-স্কুল থেকে স্টার-মার্কস পেয়ে ১৯৩৭-এ ১৯তম স্থান অধিকার করে মাসিক দশ টাকা বৃত্তি পেয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ওই রিপন কলেজ থেকেই প্রথম বিভাগে আইএসসি পাশ করেন। কিন্তু এত ভালো ফল করা সত্ত্বেও সাংসারিক কারণে লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে – চাকরিতে প্রবেশ করতে হয়। এরপর দীর্ঘ সতেরো বছর বাদে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। রিপন কলেজে মোহিনীর সহপাঠী ছিলেন উত্তরকালে সংগীত-ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রখ্যাত সলিল চৌধুরী। পরে গণনাট্য সংঘ বা গণতান্ত্রিক লেখক-888sport live chatী সংঘের সঙ্গে মোহিনী চৌধুরী সম্পৃক্ত হলে দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার মতো পারিবারিক অবস্থা ছিল না, ফলে মোহিনীকে চাকরিতে যোগ দিতে হয়। সরকারি চাকরি বটে, তবে পদ কেরানির – জিপিওতে ওই পদে বহাল হন ১৯৪০ সালে। এখানে সহকর্মী হিসেবে পান কথা888sport live chatী শক্তিপদ রাজগুরুকে। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক – 888sport live footballই ছিল তার সেতু। এক 888sport sign up bonusচারণায় শক্তিপদ রাজগুরু বলেছেন : ‘১৯৪১ সাল-এর মাঝামাঝি জিপিও-তে চাকরিতে জয়েন করেছি। সেখানেই দেখলাম একটি ফর্সা ছিপছিপে সদাহাস্যময় তরুণকে। পরণে মিহি ধুতি, আদ্দির পাঞ্জাবী। প্রথম দেখা থেকেই দুজনে নিজেদের অজান্তে ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। সেই তরুণই মোহিনী চৌধুরী। … কি খেয়াল বশে লেখালেখি শুরু করলাম। তারই একটা (‘আবর্তন’) গল্প দেশ পত্রিকায় পাঠাতে ছাপলেনও তারা। … এই লেখার মূলে ছিল প্রখ্যাত 888sport live footballিক বিভূতিভূষণের অনুপ্রেরণা আর মোহিনীর উৎসাহ। সেও তখন 888sport app download apk লিখছে, গানও লিখছে। … দুজনের তরুণ মনে তখন বেশ অদম্য উৎসাহ। থামলে চলবে না। দুজনে নিশ্চয়ই কিছু করব। আজ মনে হয় আমার সেই নিঃসঙ্গ – অপরিচিত জীবনে মোহিনী না এলে বোধহয় এত ধাক্কা-ঠোক্কর খেয়েও 888sport live footballচিন্তা নিয়ে পড়ে থাকতাম না। এগোতে পারতাম না।’১
জিপিওতে চাকরির সময়েই গান লেখার পাশাপাশি ফিল্ম-জগতের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। খ্যাতি-পরিচিতি যত বাড়ছিল, সেইসঙ্গে ব্যস্ততাও। চাকরি রক্ষা করে এসব কাজ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। স্ত্রী লীলা চৌধুরী এই সময়ের কথায় জানিয়েছেন : ‘গান লেখার ও নাটক করার সঙ্গে চলতে লাগলো সিনেমা তৈরি কিভাবে করা যায় তার চিন্তা। শৈলজানন্দের সঙ্গে ‘অভিনয় নয়’, ‘মানে না মানা’য় গান লেখার পরে ‘রায় চৌধুরী’ নামক ছবিতে সহকারীর কাজ নিলেন। গান লেখা তো আছেই। জিপিও-র চাকরি আর এতসব কাজকর্ম একই সঙ্গে সামলানো শক্ত হয়ে উঠল ওঁর পক্ষে।’২ লীলা চৌধুরীর সূত্রে জানা যায়, মোহিনীর বাবা বাস্তববুদ্ধির কারণে ছেলেকে পরামর্শ দিলেন : ‘দুনৌকোয় পা দিয়ে চলা যায় না, যা হয় একটা করো।’ আসলে তখনকার অবস্থায় মোহিনী চৌধুরীর বিভ্রান্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না – কেননা ‘তখন গানের বাজার রমরমা, সিনেমার হাতছানি, তরুণ কবিকে করে তুলল অস্থির।’৩ ১৯৪৮-এ এই পাকা সরকারি চাকরি তিনি আগপাছ না ভেবে ছেড়ে দেন। এই সিদ্ধান্তের ফল ভালো হয়নি। ফিল্মের কাজের চাপে গান রচনায় পুরো মন দিতে পারেননি, আবার জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে ফিল্ম সহায়ক হয়নি। নিজে ধারকর্জ করে সাধনা নামে যে-live chat 888sport নির্মাণ করেন, তাও চলেনি। এইভাবে ফিল্মের নেশা তাঁকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে তোলে। বন্ধু শক্তিপদ রাজগুরু এ-প্রসঙ্গে শুভাকাক্সক্ষীর মতোই পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেছেন : ‘সরকারি চাকরী ছেড়ে চলে এল চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের কোন কথাই না শুনে। কিন্তু একজন সহ-888sport live chatীর পক্ষে নিজের 888sport live chatকে বাঁচিয়ে রেখে চিত্রপরিচালনার মত কাজ করা যায় না – বিশেষ করে যদি টাকার অনটন থাকে। মোহিনী সেই জালেই অজান্তে জড়িয়ে গিয়ে নিজের গীতরচনার প্রতিভাকেও আমার মনে হয় ব্যাহত করতে বাধ্য হয়েছিল। তাই দেখি একটা উজ্জ্বল সূর্য যেন সময়-মেঘে 888sport app পড়ে গেছিল। সেই যন্ত্রণা শুধু তাকেই জ্বালায়নি, আমাদেরও জ্বালিয়েছিল – বাংলা গীতরচনার ক্ষেত্রেও একটা প্রতিভাকে মøান হতে দেখা গেছিল।’৪
চাকরি নেই – বাবাও চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন – মোহিনীর নিজের টাকাকড়িও ছবির পেছনে আটকে থাকায় চরম অভাব দেখা দেয় সংসারে। এই বড়ো সংকটময় অবস্থা সামাল দিতে মোহিনীকে আবার চাকরি খুঁজে নিতে হয়। ১৯৫৪ সালে অর্থাৎ জিপিওর চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার ছয় বছর পর তিনি প্রখ্যাত 888sport apkী ও সংসদ সদস্য ড. মেঘনাদ সাহার সংসদীয়-সচিবের পদে যোগ দেন। কিন্তু চাকরির কারণে তাঁকে দিল্লির এমপি নিবাসে থাকতে হতো। এতে করে বাংলা সিনেমা ও সংগীতের ভুবন থেকে তিনি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কলকাতার মাটিতে যাঁর সাংস্কৃতিক শেকড় প্রোথিত, দূর-দিল্লিতে তিনি যেন একা অসহায় ছিন্নমূল বৃক্ষ। হাঁপিয়ে উঠলেন তিনি – 888sport sign up bonusর কলকাতা – সংস্কৃতির কলকাতার তীব্র ডাক যেন তিনি শুনতে পেলেন। পরের বছরেই চাকরি ছেড়ে তিনি কলকাতা ফিরে এলেন। এবারে ১৯৫৫ সালের মে মাসে মোহিনী চৌধুরী তাঁদের আত্মীয় কোটালিপাড়ার খ্যাতিমান 888sport live chatপতি দেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের একান্ত সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেবেন্দ্রনাথের ছিল বিশাল 888sport live chat-সাম্রাজ্য – কলকাতায় ছোটবড়ো অনেকগুলো কলকারখানা, ব্যাংক-বীমা, কটনমিলের স্বত্বাধিকারী ও মুখ্য-নিয়ন্ত্রক ছিলেন। বিখ্যাত বঙ্গলক্ষ্মী কটনমিল ছিল তাঁরই 888sport live chat-প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ষোলো বছর মোহিনী চৌধুরী কৃতিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু নানা কারণে দেবেন্দ্রনাথের ভাগ্য-বিপর্যয় ঘটে – ফলে মোহিনীকেও চাকরি হারাতে হয়। আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্ন-বস্ত্রের সংকট-সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। এ-সময় তাঁর সহায় ও সান্ত¡না হয়ে দাঁড়ান তাঁর স্ত্রী। আবার যথাসাধ্য দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন live chat 888sport ও গীতরচনার মাধ্যমে – তাঁর জীবন ও 888sport live chat-সাধনার লড়াই মৃত্যু অবধি বহাল ছিল।

চার
জিপিওর চাকরিকালেই মোহিনী চৌধুরীর বিয়ে হয় ১৯৪৪ সালের ১২ জুলাই, কনে কোটালিপাড়ার রতাল গ্রামের সুরেশচন্দ্র কাব্যতীর্থের প্রথমা কন্যা লীলা। কলকাতার বেহালায় পৈতৃক ভবনেই মোহিনী-লীলার দাম্পত্যজীবনের সূচনা ও বিস্তার। লীলা ছিলেন সুন্দরী ও বিদুষী এবং সেইসঙ্গে সুগৃহিণীও। মেধাবী ছাত্রী ছিলেন – গানের কণ্ঠও ছিল সুন্দর – অভাব-অনটনকে হাসিমুখে বরণ করেছিলেন – সুখে-দুঃখে, শোকে-আনন্দে সারাজীবন স্বামীর পাশে ছিলেন। বিয়ে ও মধুর দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে লীলা চৌধুরী বলেছেন : ‘বিয়ের কথা বলতে গেলে অনেক কথাই লিখতে হয়। যেহেতু উনি সাধারণের চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের তাই। আমাদের বিয়ে কিন্তু বাবা-মায়ের পছন্দেই হয়েছে। বিয়ের আগে আমরা কেউ কাউকে দেখিনি। আমার শ্বশুরমশাই আর আমাদের মেজদা (ভাসুর) আমাকে দেখে এসে মায়ের কাছে যা বর্ণনা দিয়েছিলেন, আড়ালে বসে তাই শুনে কবি মনে মনে আমার একখানা ছবি এঁকেছিলেন। সামান্য গান জানি। হাতের লেখাও মন্দ না, তাছাড়া যা কবিকে সবথেকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল তা হল তখনকার কালে আমি স্কুলে স্কলারশিপ পাওয়া মেয়ে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, তাঁর উপযুক্ত আমি কোনদিক দিয়েই ছিলাম না। তবে ভাল ছাত্রী ছিলাম। সবকিছু শিখবার আগ্রহ ছিল আমার খুব। তাই দিনের পর দিন রাতের পর রাত কতরকম যে শিক্ষা দিতেন নিজের মনের মত করে গড়ে নেবার জন্যে। তিনি আমার কাছে গান শুনতে চাইতেন। নতুন বউ – গান শোনাবো কি করে? … রাত্রে বাড়ির ভিতরের দরজা বন্ধ করে বাইরে বসে খুব আস্তে আস্তে গান শোনাতাম। মনে হতো যেটুকু জানি যা জানি সবই তাঁকে শোনাই।’৫ পরে স্বামীর কাছ থেকে গান-লেখার কলাকৌশল শিখে গান-রচনার চেষ্টা করেন। নব্বই দশক থেকে লীলা চৌধুরী live chat 888sportে গান লেখা শুরু করেন। বেশকিছু ছবিতে গান লিখে বেশ নাম করেন তিনি।

পাঁচ
মোহিনী চৌধুরীর লেখালেখির হাতেখড়ি ছেলেবেলাতেই – ষোলো বছর বয়সে বিয়ের পদ্য লিখে। এতে আশেপাশে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর অনুরোধে বহু লোকের বিয়ের পদ্য লিখে দেন। নিজের বিয়েতেও একটি পদ্য-পুস্তিকা বের করেছিলেন। পত্র-পত্রিকায় তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা একটি 888sport app download apk – ‘888sport app download apk’ নামে এটি প্রকাশ পায় রিপন স্কুলের বার্ষিকীতে – কবি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে দৈনিক আজাদ পত্রিকার নবি-888sport free betয় ‘হজরৎ মহম্মদ’ নামে তাঁর একটি 888sport app download apk ছাপা হয়। রিপন কলেজ বার্ষিকীতে তাঁর প্রথম 888sport live প্রকাশিত হয় ‘888sport app download apk-লেখা’ এই নামে। বসুমতী, বঙ্গশ্রী, যুগান্তর, ভারত ও আরো-কিছু পত্র-পত্রিকায় তাঁর বেশকিছু গল্প, 888sport app download apk, নাটক ও নিবন্ধ প্রকাশ পায়। সজনীকান্ত দাস, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব বসু, গোলাম মোস্তফা, জসীম উদ্দীন, অজিত দত্ত, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, বিধায়ক ভট্টাচার্য, অখিল নিয়োগী প্রমুখ বিশিষ্ট লেখক তাঁর গদ্য-পদ্য রচনার প্রশংসা করেন। নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে আন্তঃবিদ্যালয়
888sport live প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। বঙ্গশ্রী মাসিক পত্রিকা-আয়োজিত গল্প-প্রতিযোগিতায় ‘আত্মহত্যা’ নামে গল্পের জন্যে মোহিনী চৌধুরী শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পান।
মোহিনী চৌধুরীর 888sport live footballচর্চায় সবচেয়ে 888sport app download for androidীয় দিক হলো তাঁর গীত888sport live football। 888sport app download apk লিখতে লিখতে একসময় গান-রচনার দিকে ঝোঁকেন, তা বেশ বোঝা যায়। তবে
গান-লেখার পেছনে কার প্রেরণা ছিল সে-খবর মেলে না। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মোহিনী চৌধুরীর খ্যাতি-পরিচিতি-প্রতিষ্ঠা বিশেষভাবে গীতিকার হিসেবে। কীভাবে তিনি অনায়াসে গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন তা-এক কাহিনির মতোই ঘটনা।
ছোটবেলা থেকেই খাতাভর্তি 888sport app download apk ও গান-লেখার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল। রেকর্ডে কোনো গান শুনলে – তার অনুকরণ অনুসরণে লিখে ফেলতেন গান। আক্ষরিক অর্থেই তাঁর ছিল মুক্তোর মতো হাতের লেখা। লেখার খাতার নামও দিতেন মুক্তাক্ষরে। এরকম একটি গানের খাতার নাম দিলেন ‘গুঞ্জন’। গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে প্রথমে শখের বশে ও পরে কম্পোজার হিসেবে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সংগীত সমঝদার ও পরে মোহিনীর একান্ত সুহৃদ সুশীল ঘোষের। মোহিনী চৌধুরী বেঁচে থাকতেই তাঁর গীতিকার-সত্তা নিয়ে একটি বড়ো 888sport live লিখেছিলেন।৬ সেই রচনাটি এখন পর্যন্ত গীতিকার মোহিনী চৌধুরীর বিষয়ে শ্রেষ্ঠ মূল্যায়ন হিসেবে বিবেচিত। এই পর্যায়ের তথ্যের জন্যে এই লেখাটির উদার সহায়তা নিয়েছি।
মোহিনী গান তো লিখলেন – এখন তাঁর আত্মপ্রকাশের আকাক্সক্ষা প্রবল হয়ে উঠলো। গ্রামোফোনে গান রেকর্ড করানোর জন্যে মরিয়া হয়ে উঠলেন। রেকর্ড কোম্পানির মাসিক ক্যাটালগ থেকে ঠিকানা জোগাড় করে হিজ মাস্টার্স ভয়েসের দমদমের ঠিকানায় খাতা-খানা পাঠিয়ে দিলেন – সালটা ১৯৩৮, মোহিনীর বয়স তখন আঠারো। সাগ্রহে প্রতীক্ষা করতেন জবাবের আশায় – কয়েকবার এইচএমভির অফিসেও গেছেন তদবিরের জন্যে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। কয়েক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় মোহিনী বিষয়টা ভুলেই গেছেন কিংবা আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। এমন অবস্থাতেই ঘটনাটা ঘটলো – একেবারে অপ্রত্যাশিত-অভাবনীয়।
গ্রামোফোন কোম্পানি লিমিটেডের দুই শাখা – এইচএমভি ও টুইনের কর্তা ছিলেন দুই হেম – হেমচন্দ্র গুহ ও হেমচন্দ্র সোম। হেমচন্দ্র গুহের পর এইচএমভির দায়িত্বে আসেন হেমচন্দ্র সোম। অফিসটাকে নতুন করে সাজাতে গিয়ে আলমারি ও টেবিলের দেরাজে দীর্ঘদিন জমে থাকা বাজে কাগজ ঝেঁটিয়ে বিদায় করার জন্যে লোক লাগালেন। কত কিসিমের কাগজ যে জমে ছিল – তা আর বলার নয়। সবচেয়ে বেশি ছিল ফাঁসকাগজে লেখা গান ও ছোটবড়ো গানের খাতা। সুশীল ঘোষের নেশা হয়ে উঠেছিল সময়-সুযোগ পেলেই এইচএমভি-ভবনে এসে আড্ডায় জমে যাওয়া – সংগীতের বোধটাও ছিল খুব ভালো – বড়ো সংগীত সমঝদার ছিলেন। ফলে গ্রামোফোনের সংগীতভুবনের 888sport live chatী, সুরস্রষ্টা, গীতিকার, কলাকুশলী এবং সেইসঙ্গে গ্রামোফোন কোম্পানির কর্মকর্তা – সকলের সঙ্গেই তাঁর একটি সহজ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। হেমচন্দ্র সোমের অফিসঘরে বসে কাগজ-বিসর্জন-কা- দেখছিলেন সুশীল ঘোষ। সুন্দর হস্তাক্ষরের কারণে ফেলে-দেওয়া একটি গানের খাতা সুশীল ঘোষের নজরে পড়লো। তুলে নিলেন – খাতাটার প্রথম পাতাতেই লেখা আছে – ‘গুঞ্জন’ আর গানগুলো যিনি লিখেছেন তাঁর নাম মোহিনী চৌধুরী। খাতার প্রসঙ্গে হেমচন্দ্র সোম একটু কুণ্ঠিত কণ্ঠে সুশীল ঘোষকে গানগুলো দেখতে বললেন, সেইসঙ্গে মৃদুকণ্ঠে কিছুটা কৈফিয়তের সুরে জানালেন – ‘হ্যাঁ হ্যাঁ দ্যাখো তো। ছেলেটা প্রায়ই আসতো, আজকাল আসা ছেড়েছে। আশাও। দ্যাখো তো কিছু পাওয়া যায় কিনা!’ গানগুলো পড়ে সুশীল ঘোষ অভিভূত হলেন, হেমচন্দ্রও মুগ্ধ। সেই খাতা বিশেষ মন্তব্য লিখে পাঠালেন কমল দাশগুপ্তের কাছে। মোহিনী চৌধুরীর লেখা প্রথম গানের রেকর্ড হলো – ‘রাজকুমারী ওলো নয়নপাতা খোলো/ সোনার টিয়া ডাকছে গাছে ঐ বুঝি ভোর হলো’ – কমল দাশগুপ্তের সুরে গাইলেন কুসুম গোস্বামী। কিন্তু কোনো কারণে এই গানের রেকর্ড রিলিজে বিলম্ব হলো। সেই ফাঁকে ‘পারিজাতের বনে চলো ইন্দ্রধনুর দেশে’ মোহিনী চৌধুরীর লেখা এই গানটির রেকর্ড বেরিয়ে গেল – সুরকার পাঁচু বসু ও 888sport live chatী কুমারী অণিমা ঘোষ। গীতিকার মোহিনী চৌধুরীর প্রথম রেকর্ড হিসেবে চিহ্নিত হলো আগস্ট ১৯৪৩-এ কলম্বিয়া থেকে প্রকাশিত এই রেকর্ডটি। প্রকাশের দিক দিয়ে ‘রাজকুমারী ওলো নয়নপাতা খোলো’ হয়ে গেল দ্বিতীয় রেকর্ড। গানদুটিতে অনেকেই গীতিকারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পেলেন। এরপরে মোহিনীর ‘ভুলি নাই ভুলি নাই/ নয়নে তোমায় হারায়েছি প্রিয়া/ স্বপনে তোমারে পাই’ – এই গানটিতে সুরযোজনা করলেন কমল দাশগুপ্ত, আর কণ্ঠ দিলেন জগন্ময় মিত্র। কথা-সুর-কণ্ঠের 888sport live chat-সমন্বয়ে সাড়া জাগানো এই গানটি এইচএমভি থেকে জুন ১৯৪৪-এ প্রকাশিত হলে মোহিনীকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। বেসিক রেকর্ড ও ফিল্মের গানে মোহিনী এক স্বতন্ত্র ভুবন নির্মাণ করলেন।
মোহিনী চৌধুরী গ্রামোফোন, ফিল্ম, রেডিয়ো – সব মাধ্যমেই সম্মান ও প্রতাপের সঙ্গে কাজ করেছেন। গ্রামোফোনে গীতিকার হিসেবে প্রবেশ সম্ভব হয় এইচএমভির কর্তা হেমচন্দ্র সোমের আনুকূল্যে। live chat 888sportে সুযোগ পান শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ও রেডিয়োতে শচীন দেববর্মনের সৌজন্যে। গ্রামোফোন রেকর্ড কোম্পানির শুরুর কথা বলেছি – এখন বাকি ফিল্ম ও রেডিয়োর কথা। শৈলজানন্দের মানে না মানা ছবিতে (১৯৪৫) প্রথম সিনেমার গান লেখার সুযোগ পান – পরে তাঁর অন্যসব ছবিতেও গান লিখেছেন – ফিল্মের কাজও শিখেছেন তাঁর কাছ থেকে – শৈলজানন্দের সহকারী পরিচালক হিসেবেও অনেক ছবিতে কাজ করেছেন। রেডিয়োতে মোহিনী চৌধুরীর লেখা কয়েকখানা গান গাইবেন শচীনকর্তা – কিন্তু জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন মোহিনী সেখানকার অনুমোদিত গীতিকার নন। শচীনকর্তা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে রেডিয়োতে নিয়ে গিয়ে সুপারিশ করে মোহিনীকে রেডিয়োর গীতিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করালেন।

ছয়
মোহিনী চৌধুরী তাঁর কালের গীতিকবিদের চেয়ে স্বভাবত স্বতন্ত্র। নিজের বিভাজনে তাঁর গানকে তিনি ‘প্রিয়া’ ও ‘পৃথিবী’তে বিন্যস্ত করেছেন। নজরুলের প্রেম ও দ্রোহের চেতনায় তিনি প্রাণিত ও প্রভাবিত। তাঁর এক 888sport live footballপ্রেমী গুণগ্রাহী গীতিকার হিসেবে তাঁর বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন : ‘মোহিনী চৌধুরীর … গানের দুটো দিক আছে। একটা শৌর্যের, আরেকটা মাধুর্যের। একটা দেশপ্রেমের, আরেকটা প্রেমানুভূতির। এই দুটো ধারাকেই তিনি গানের মধ্যে প্রবাহিত রেখেছেন। এবং তাঁর সব গানের মধ্যেই যা একান্তভাবে নিহিত আছে, তা হল তাঁর হৃদয়াবেগ। এই হৃদয়াবেগই তাঁর গানকে প্রাণবন্ত করেছে। তাঁর গান নিবিড়ভাবে হৃদয়কে স্পর্শ করে।’৭
প্রথম পর্যায়ে প্রেম-ভালোবাসা-বিরহ-বিষাদের গানই লিখেছিলেন মোহিনী চৌধুরী। সেসব গান জনপ্রিয়ও হয়েছিল। গীতিকার হিসেবে মোহিনীর সৌভাগ্য যে, তিনি শচীন দেববর্মন, সত্য চৌধুরী, জগন্ময় মিত্র, যূথিকা রায়, কৃষ্ণচন্দ্র দে, গৌরীকেদার ভট্টাচার্য, সন্তোষ সেনগুপ্ত, রামকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং পরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, কিশোর কুমার, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তালাত মাহমুদ, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, গায়ত্রী বসু, ফিরোজা বেগম, জপমালা ঘোষ, নির্মলা মিশ্রের মতো 888sport live chatীকে পেয়েছিলেন। গীতা দত্ত (তখন রায়), উৎপলা সেন, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র ও তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম রেকর্ড বের হয় মোহিনীর গানে।
মোহিনীর লেখা গানের সুরসৃষ্টি করেছেন সেকাল ও একালের অসামান্য মেধাবী সব সুরকার। তাঁদের মধ্যে নাম করতে হয় কমল দাশগুপ্ত, কৃষ্ণচন্দ্র দে, শচীন দেববর্মন, শৈলেশ দত্ত গুপ্ত, সুবল দাশগুপ্ত, কালীপদ সেন, গিরীণ চক্রবর্তী, দুর্গা সেন, সুধীরলাল চক্রবর্তী, নিতাই ঘটক, নরেশ ভট্টাচার্য, সুধীন দাশগুপ্ত, গোপেন মল্লিক, সন্তোষ মুখোপাধ্যায়, চিত্ত রায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং আরো কেউ কেউ। মোহিনীর গানে সবচেয়ে বেশি সুরযোজনা করেছেন কমল দাশগুপ্ত – উদ্দীপক ও প্রেমমূলক উভয় ধরনের গানেই এবং সেইসব গান একসময় মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে।

সাত
মোহিনী চৌধুরীর বড়ো প্রাপ্তি শচীন দেববর্মনের মতো সংগীত-ব্যক্তিত্বের সঙ্গ-সান্নিধ্যলাভ। মোহিনীর খ্যাতির পেছনে শচীনকর্তারও আছে বিশেষ অবদান। গানের কথার জন্যে তিনি বন্ধু অজয় ভট্টাচার্যের ওপর খুব নির্ভর করতেন। অজয়ের মৃত্যুর পর ওইভাবে আর কাউকে পাননি। সেই অভাব অনেকখানি পূরণ করেন মোহিনী। স্ত্রী লীলা চৌধুরী জানিয়েছেন : ‘প্রথম যেদিন কর্তার বাড়িতে যান সেদিন একখানা চেয়ার দেখিয়ে কর্তা বললেন, ‘বসেন ঐখানে। এই যে চেয়ারখানা দেখছেন ঐ খানায় অজয় বইতো। আপনে সুরের উপরে গান লিখতে পারবেন তো?’ উনি তখন স্বর্গীয় অজয় ভট্টাচার্যের চেয়ারে বসেছেন এই ভেবে কি রকম অন্যমনস্ক হয়ে গেছেন। কেননা ‘দেশের মাটি’ ছবিতে অজয়বাবুর গান শুনে উনি নাকি সারারাত কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছিলেন। মনে মনে বলেছেন অজয়বাবু কেন ওঁকে বাড়িতে চাকর রাখেন না। যে গানটা শুনে ওঁর এই কথা মনে হয়েছিল সেই গানটা হলো, ‘নতুনের স্বপ্ন দেখি বারে বারে, দেখি বারে বারে’। আর আজ গান লেখবার জন্য সেই চেয়ারে উনি আমন্ত্রিত।’৮ শচীনকর্তা কথা আর সুরের ওপর গান লেখার ফরমায়েশ করেন মোহিনীকে। অনেক গানই এইভাবে তৈরি। যেমন : ‘কে আমারে আজো পিছু ডাকে’, ‘সুন্দরী লো সুন্দরী’, ‘ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলের জলে’ প্রভৃতি। মোহিনীর লেখা গানে কর্তা সুর করে নিজে গেয়েছেন – আবার অন্যের জন্যেও সুর করেছেন। কর্তার নিজের গাওয়া গানের মধ্যে বেশি মনে পড়বে : ‘পিয়া সনে মিলন পিয়াস’, ‘হায় কি যে করি এ মন নিয়া’, ‘ভুলায়ে আমায় দুদিন’, ‘যদি দূরে যাবে চলিয়া’,
‘প্রেম যমুনায় হয়তো বা কেউ’, ‘সেই যে দিনগুলি/ বাঁশী বাজানোর দিনগুলি’। বিশেষ করে শেষ গানটি একদা পূর্ববঙ্গবাসী গীতিকার ও সুরকার-888sport live chatী দুজনের জন্যেই 888sport sign up bonusকাতর হওয়ার উপকরণে মিশ্রিত।
মোহিনীর গান মানুষের মনে দোলা জাগালো জগন্ময় মিত্রের কণ্ঠে। প্রথমে রেকর্ডে এলো কমল দাশগুপ্তের সুরে এই গানটি – ‘ভুলি নাই ভুলি নাই/ নয়নে তোমারে হারায়েছি প্রিয়া, স্বপনে তোমারে পাই’। উৎকর্ণ শ্রোতা শুনলেন : ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে,/ তোমারে করেছে রানী।/ তোমারি দুয়ারে কুড়াতে এসেছি/ ফেলে-দেওয়া মালাখানি।’ এই তীব্র হাহাকার মথিত করলো শ্রোতার অন্তর। এই বেদনার রেশ মিলাতে না মিলাতে ধ্বনিত হলো : ‘যাদের জীবন ভরা শুধু আঁখিজল/ আমি যে তাদেরি দলে/ ফুলমালা নয় কণ্টকহার পরেছি/ আমার গলে’। এবারে ব্যক্তিগত দুঃখ-যন্ত্রণা পার হয়ে গানটিতে ঠাঁই পেয়েছে সমষ্টির বেদনা-ভাবনা। বিফল প্রেমের বেদনা-বঞ্চনা শেষপর্যন্ত প্রত্যয়দীপ্ত সংগ্রামী প্রেমে উত্তীর্ণ হলো মোহিনী চৌধুরীর অনুভবে, কমল দাশগুপ্তের সুরযোজনায় আর জগন্ময় মিত্রের গায়কিতে : ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়/ তুমি যে বহ্নিশিখা।/ মরণের ভালে এঁকে যাই মোরা/ জীবনের জয়টীকা’।এই কালোত্তীর্ণ গীতিকারের গান নিয়ে জগন্ময় মিত্রের 888sport sign up bonusচারণায় জানা যায়: ‘আজ এই বয়সেও কোথাও অনুষ্ঠান করতে গেলে শ্রোতাদের কাছ থেকে অনুরোধ আসে ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়’ ও ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে’ গাইবার।’৯
মোহিনী চৌধুরীর কথায় নবীন-প্রবীণ, খ্যাত ও প্রতিশ্রুতিশীল অনেক 888sport live chatীই এইচএমভি, কলম্বিয়া, টুইন, হিন্দুস্থান, সেনোলা, রিগ্যাল, ভারতী – এইসব কোম্পানি থেকে গান রেকর্ড করেছেন। নানা ধরনের সে-গান – আধুনিক কাব্যগীতি, স্বদেশগীতি, জাগরণী গণচেতনা, শ্যামাসংগীত, লোকগান। এসব গানের পূর্ণ-তালিকা (বাণী, 888sport live chatী, সুরকার, রেকর্ড নম্বর ও প্রকাশকাল) কেউ তৈরি করেননি – মোহিনী চৌধুরীর রেকর্ডসংগীতের তথ্য এইভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে – ফলে কোনো কোনো গান নিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি বাড়ছে। এই গীতিকারের রেকর্ডসংগীতের তথ্যনিষ্ঠ পরিচয় ও গানের আলোচনা মূলত সুশীল ঘোষের কাছ থেকেই পাওয়া গেছে।
আমরা সুশীল ঘোষের তথ্যঋণের সূত্রে এ-বিষয়ের ওপর দ্রুত দৃষ্টিপাতের চেষ্টা করবো। প্রথমে প্রেম-বিরহের গানগুলো সম্পর্কে খুবই সংক্ষেপে ধারণা নেবো।
যূথিকা রায় যখন খ্যাতির শীর্ষে তখন মোহিনী চৌধুরীর কয়েকটি গান রেকর্ড করেছিলেন – একক ও যুগল কণ্ঠে। যথাস্থানে সে-কথা তুলবো। কাব্যগীতি বা প্রেম-বিরহের গান গেয়ে যূথিকা রায় স্পর্শ করেছেন শ্রোতার মন : ‘আকাশপ্রদীপ ডাকে’, ‘আঁখিজল! আঁখিজল’, ‘কবে পোহাবে রাতি’, ‘যেও না ফিরে যেও না’, ‘গানের পাখী আমি’। গৌরীকেদার ভট্টাচার্যের ‘নাই বা হলো মিলন মোদের এই জীবনে’, ‘দাঁড়ায়ে এপারে ডাকি যে তোমারে’ গানে গভীর আবেদন-সৃষ্টি হলো। একটি ভিন্ন সুরাবেশ তৈরি করল ফিরোজা বেগমের ‘মালার কুসুম কাঁদে’, ‘একটি হৃদয় গান গেয়ে’, ‘আমার মনে সাগর কিনারে’ – সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘এই ধরণিতে প্রথম বিরহী/ নহি আমি নহি গো’ – রবীন মজুমদারের ‘অতল সাগরতলে মুকুতা’ – তালাত মাহমুদের ‘হয়তো সেকথা তোমার 888sport app download for androidে নাই’ – সন্তোষ সেনগুপ্তের ‘একটি নতুন গান রচিনু তোমার তরে’ – সত্য চৌধুরীর ‘তখনো ভাঙেনি’ – রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘তোমার আমার মিলনে’ – তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গগনে ছিল মোর বাদল ঘনঘোর’ – শ্যামল মিত্রের ‘ভোলো গো ভোলো অভিমান’ – নির্মলা মিশ্রের ‘উন্মনা মন স্বপ্নমগন’। কাব্যবোধ, ভাব-ভাষা-ভাবনা, নির্বাচিত শব্দচয়ন, প্রসঙ্গ ও পরিবেশের সংগতি, আবেগ ও সংবেদনা সঞ্চারে মোহিনী চৌধুরীর গানগুলি বিশেষ আবেদন সৃষ্টিতে সমর্থ হয়েছে।
মোহিনী চৌধুরী নানা ভাব ও বিষয়ের গান রচনা করেছেন – যেমন শ্যামাসংগীত ও লোকগান। মৃণালকান্তি ঘোষ ছিলেন নজরুল-রচিত শ্যামাসংগীতের প্রধান 888sport live chatী। তাঁকে দিয়েই মোহিনীর লেখা দু-খানা শ্যামাসংগীত রেকর্ড করা হয় – ‘মার মমতা এ কোন দেশী? বল মা শ্যামা এলোকেশী’ এবং ‘ও মা নয়নজলে ধুইয়ে দেবো তোর চরণের সব কালিমা’। ভাটিয়ালি ঢঙের এই গানটি শৈলেশ দত্তগুপ্তের সুরে গেয়েছিলেন বীণা চৌধুরী : ‘নাইয়া রে। ভাঙা ডিঙা বাইয়া বন্ধুর দেশে যাইয়া/ আমার কথাটি কইও’। মোহিনী ছিলেন নদীকেন্দ্রিক লোকগানের অঞ্চলের মানুষ – হয়তো কাব্যগীতিকে প্রাধান্য দেওয়ায় গ্রাম্য-গানের প্রতি তেমন মনোযোগ দিতে পারেননি।

আট
মোহিনী চৌধুরীর কাব্যগীতিতে তাঁর পূর্বসূরিদের কিছু প্রভাব আবিষ্কার করা যায়। বিশেষভাবে অজয় ভট্টাচার্য-প্রণব রায়-সুবোধ পুরকায়স্থ-শৈলেন রায়ের রচনার ছায়া কখনো কখনো তাঁর গীতাবলিতে নজর করা যায়। রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের গানের ভাব বা কোনো পদ-পঙ্ক্তির সম্প্রসারণ মোহিনীর কিছু রচনার প্রেরণা হতে পেরেছে। এসব দৃষ্টান্ত তাঁর প্রেম-বিরহের গানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, অন্তত একটি ক্ষেত্রে তিনি প্রভাবমুক্ত – সে হলো প্রণয়গীতিতে জাগরণী গণচেতনার ভাব যুক্ত করে যে গীতিগুচ্ছ তিনি রচনা করেছেন, সেখানে। এখানে তিনি স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত, একক ও অদ্বিতীয়।
বিশ্বযুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা, স্বাধীনতার সংগ্রাম, বিপ্লববাদ, সামাজিক সংকট, মানবিক অবক্ষয়, আকাল, দাঙ্গা, দেশভাগ, দেশত্যাগ, উদ্বাস্তু-সমস্যা – এসব ঘটনা মোহিনী চৌধুরীকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। একসময় তিনি বামপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েন – যুক্ত হন গণনাট্য সংঘ, গণতান্ত্রিক লেখক 888sport live chatী সংঘের সঙ্গে।
১৯৪৮-এ কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে সেই কোপ গণনাট্য সংঘের ওপরেও পড়ে। তখন দলের সম্মতি ও সহায়তায় কলকাতার বেহালা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা পায় ‘প্রগতি কৃষ্টি পরিষদ’। মোহিনী এই নতুন সংগঠনেও জড়িত হন এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। গভীর সমাজবীক্ষণ, অর্জিত বিশ্বাস ও প্রগতিপন্থি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাঁর 888sport live chatচেতনাকে নতুন মাত্রা দেয় – তাঁর গান হয়ে ওঠে প্রচলিত বলয়মুক্ত এক নবজীবনের নতুন নির্মাণ।
গানকে মোহিনী গণচেতনার ও সামাজিক অঙ্গীকারের অংশ করে তুলতে চেয়েছিলেন। ‘পৃথিবী আমারে চায়/ রেখো না বেঁধে আমায়/খুলে দাও প্রিয়া খুলে দাও বাহু ডোর’ – কমল গাশগুপ্তের সুরে সত্য চৌধুরীর গাওয়া এই গানটি রেকর্ড বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে – লোকের মুখে মুখে ফিরতে থাকে এই গানের কলি। প্রিয়াকে যখন প্রেমিক বলে – ‘শোনো নাকি ঐ আজ দিকে দিকে হায়/ কত বধূ কাঁদে, কাঁদে কত অসহায়/ পথ ছেড়ে দাও, নয় সাথে চলো/ মুছে নাও আঁখিলোর’ – তখন ভালোবাসার এক অভিনব অর্থ আবিষ্কৃত হয়। মোহিনী চৌধুরীর লেখা এ-গান হলো ‘সুপারহিট’। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কালে ‘ফৌজের মনোবল অটুট রাখার জন্য’ ভারতের নানা সীমান্ত ফ্রন্টে নাচ বা থিয়েটার দেখানোর পাশাপাশি গান শোনানোর ব্যবস্থাও হয়। এই গানের ডালিতে ছিল ‘পৃথিবী আমারে চায়’ গানটিও। ফৌজের বাঙালিরা তো বটেই, যাঁরা বাংলা জানেন না, তাঁরাও কী এক উদ্দীপনার আকর্ষণে এ-গান বারবার শুনতে চাইতেন। ওই সত্য চৌধুরীই আবার গাইলেন – ‘তখনো ভাঙেনি প্রেমের স্বপনখানি’ – মোহিনী চৌধুরীর কথা আর কমল দাশগুপ্তের সুরে। এখানেও শোনা যায় – ‘আজ যতদূরে চাই/ আছে শুধু এক ক্ষুধিত জনতা/ প্রেম নাই প্রিয়া নাই’। এ-যেন ‘পৃথিবী আমারে চায়’-এর জোড়ের গান। মোহিনী-কমল-সত্যর জাদু প্রকাশ পেল এই গানেও : ‘জেগে আছি একা, জেগে আছি কারাগারে’। এখানেও ‘সারা পৃথিবীর বেদনা-ঝরিছে’ প্রিয়ার চোখে। কেননা – ‘পরাধীন দেশে প্রেম চির অভিশপ্ত,/ মুক্তির পথে কত বাধা কত রক্ত’।
মুক্তির বাধা অপসারণে প্রণয়ী-প্রণয়িনীর যে দৃঢ় সংকল্প ও সংগ্রাম-চেতনা তা উদ্ভাসিত হয়েছে জগন্ময় মিত্রের এই গানটিতে : ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়/ তুমি যে বহ্নিশিখা।/ মরণের ভালে এঁকে যাই মোরা জীবনের জয়টীকা’। মুক্তি-আকাক্সক্ষায় চঞ্চল মোহিনীর কলমে লেখা হলো : ‘দু’শো বছরের নিঠুর শাসনে/ গড়া যে পাষাণবেদী/ নতুন প্রাণের অঙ্কুর জাগে/ তারি অন্তর ভেদি’। প্রেমের আবরণে তাই ‘মুক্তি আলোকে ঝলমল করে/ আঁধারের যবনিকা’। মোহিনীর লেখা এ-গানও হলো ‘সুপারহিট’।
মোহিনীর গানে প্রেম ও প্রিয়ার বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে আছে যুগ-যন্ত্রণা ও মুক্তির প্রত্যাশা – তাই প্রেমিক-প্রেমিকার জীবন থেকে কঠিন বাস্তবতার আঘাতে বিদায় নিয়েছে
ফুল-পাখি-চাঁদা নদীর মনোরম দৃশ্যপট। মিলনের অনুকূল সময়ের জন্যে তাই প্রতীক্ষায় থাকতে হবে নিরবধি কাল। মোহিনী লিখলেন যে গান, তাতে সুরারোপ করলেন কমল দাশগুপ্ত, আর তা কণ্ঠে ধারণ করলেন যূথিকা রায় : ‘শতেক বরষ পরে -/ তুমি আর আমি ফিরে আসি যেন/ এই দেশেরই কোনো ঘরে’ – কেননা ‘সেদিন দেখিব ঝড় গেছে থেমে/ স্বরগ এসেছে ধূলিতলে নেমে’ এবং ‘সেদিন মিলিবে একসাথে প্রিয়/ তোমার আমার আশা’। মোহিনীর কথায় যূথিকা আবার গাইলেন – যেখানে রয়েছে এই কাতর প্রশ্ন : ‘এই ঘুমানো দেশের ঘুম ভাঙিবে কবে/ মোদের স্বপ্ন কবে সফল হবে’। যূথিকা রায় ও কমল দাশগুপ্ত যুগল কণ্ঠে যে-গান গাইলেন, সেখানেও মোহিনীর মনে হয়েছে : ‘পথ আজও হয়নি তো শেষ/ তবে কেন মিছে এই স্বপন আবেশ’ – তাই ‘শ্মশানে সাজে না খেলাঘর’। আবারো ওই দুজনের কণ্ঠে বাণী দিলেন মোহিনী, কঠিন-কঠোর ব্রতের : ‘লহরে লহরে মিলাবো আমরা জন-সমুদ্র মাঝে/ মহামিলনের দেবতা মোদের ডেকেছে রুদ্র সাজে’। সংগ্রামের জয়েই প্রেমে সফলতা ও পূর্ণতা আসবে – এই বাণীই মোহিনী ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর গানে গানে।
ধারাবাহিক মন্বন্তর ও নিম্নবর্গের মানুষের নিত্য-অনাহার বাংলার জনজীবনে সবসময়ই চলমান। গ্রামোফোনের জন্যে দুর্ভিক্ষের 888sport app download for androidীয় গান রচনা করেছিলেন তুলসী লাহিড়ী ও জসীম উদ্দীন – সে-গান কমলা ঝরিয়া ও আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে হাহাকার নিয়ে প্রকাশিত। মোহিনী চৌধুরীর কোনো কোনো গানে অনাহার, ক্ষুধা বা আকালের প্রসঙ্গ এসেছে। ‘তখনো ভাঙেনি প্রেমের স্বপনখানি’ – এই যে সত্য চৌধুরীর গাওয়া গানটি, এতে কবির বিস্তৃত দৃষ্টিপাতে ‘প্রেম’ বা ‘প্রিয়া’র সন্ধান মেলেনি – দেখেছেন শুধু ‘ক্ষুধিত জনতা’কে। নিতাই ঘটকের সুরে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়েছিলেন : ‘হায় আমারও যে ঘর ছিল/ ঘরে ভাত কাপড় ছিল/ হায়রে কে তা কেড়ে নিল হায় কে নিল’ – এক গভীর আর্তি ফুটে উঠেছে অভিযোগের ভেতর দিয়ে – বরবাদ হয়ে গেল একটি স্বপ্নময় জীবন, একটি ভরা-সুখের সংসার। সুধীন দাশগুপ্তের সুরারোপে গায়ত্রী বসুর কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল : ‘মেল নয়ন মেল রে/ রাত পোহায়ে গেল রে/ মানিক আমার যাদু আমার/ ঘুমায়ো না/ সোনার কাঠির আলোর ছোঁয়ায়/ জাগো রে সোনা’। ‘হাত পা পাথর’, ‘শ্বাস পড়ে না’, ‘ঠোঁট নড়ে না’ – তবুও মরণঘুমে নিথর ‘বাছা’কে দুঃখিনী মা জানাতে চায় এক অলীক সান্ত¡না বাণী : ‘মানিকরে তুই অনাহারে ছিলি অনেক দিন/ দ্বারে দ্বারে ভিখ মেঙেছি সবাই হৃদয়হীন/ ওঠ রে বাছা বাঁচার উপায় খুঁজি দু’জনা’। সলিল চৌধুরী-জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র-হেমাঙ্গ বিশ্বাস এঁদের বাদ দিলে আধুনিক বাংলা গানে সমাজবাস্তবতার পরিচয় অল্পই মেলে – সেক্ষেত্রে মোহিনী চৌধুরীকে ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করতে হয়।

নয়
মোহিনী চৌধুরী গণচেতনা, জাগরণ, মুক্তি, শহিদ-888sport app download for android ও দেশ-বন্দনার যে-গান রচনা করেছেন তাতে তাঁর সিদ্ধি অসামান্য। কাল পেরিয়ে তার আবেদন স্থায়ী হয়েছে – অনায়াসে সে-গান কালোত্তীর্ণ। অন্তত একটি গানের বাণীর বন্ধন ও সুর888sport sign up bonus মানুষের মনে চির-জাগরূক থাকবে – অন্ধ-888sport live chatী কৃষ্ণচন্দ্র দে এর সুরযোজনা করে নিজেই গেয়েছিলেন : ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে/কত প্রাণ হোল বলিদান/ লেখা আছে অশ্রুজলে’। যোগ্য বাণীর যথার্থ সুরসৃষ্টি – এই 888sport app download for androidে শোকের পাশে প্রাপ্তি, বেদনার সঙ্গে উদ্দীপনা, বিসর্জনের ফলে প্রেরণার সুর বেজে উঠেছে। ভাষাশহিদ-888sport app download for androidে 888sport appsে যেমন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’, ওপার বাংলায় তেমনি দেশশহিদ-888sport app download for androidে রচিত গান ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’। তবে দুদেশের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে এই গান দুটি সব বাঙালির হৃদয়-জাগানো অন্তর-কাঁপানো চিত্ত-দোলানো অমর গীতিতে পরিণত হয়েছে – কথা ও সুরের জাদুতে পেয়েছে কালজয়ী ধ্রুপদি 888sport live chatের মর্যাদা।

দশ
live chat 888sport-888sport live chatের সঙ্গে মোহিনী চৌধুরীর সম্পৃক্ততা এবং তাঁর ফিল্মের গান সম্পর্কে কিছু না বললে তাঁর 888sport live chat-জীবন ও গীতিকার-জীবনের কথা অপূর্ণ থেকে যায়। তাঁর live chat 888sportের কাজ শেখার গুরু কথা888sport live chatী ও live chat 888sport-পরিচালক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়।
অভিনয় নয় ও মানে না মানা – শৈলজানন্দের এই ছবি দুটিতে গান লিখলেন মোহিনী – পরিচালকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়ে উঠলো ঘনিষ্ঠ। live chat 888sportের জগৎ সম্পর্কে তাঁর পূর্বের আগ্রহ আরো পোক্ত হলো। গান লেখার পাশাপাশি শৈলজানন্দের ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে দুই ভূমিকায় কাজ শুরু করলেন – রায় চৌধুরী দিয়ে যার সূচনা। এরপর একে একে শৈলজানন্দের ঘুমিয়ে আছে গ্রাম, রং-বেরং, সন্ধ্যাবেলার রূপকথা, বাংলার মেয়ে, একই গ্রামের ছেলে, ব্লাইন্ড লেন – এসব ছবি তৈরি হলো আর মোহিনী থাকলেন তাঁর সহকারী হিসেবে। খুব ভালোভাবেই live chat 888sport-নির্মাণের খুঁটিনাটি সব বিষয় জানলেন। এবারে নিজেই ছবি বানানোর উদ্যোগ নিলেন। সাধনা নামে সেই ছবি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে মুক্তি পেল ১৯৫৬ সালের ৩০ মার্চ। পরিচালনা-কাহিনি-গীতরচনা মোহিনী চৌধুরীর। গান গেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বিনতা চক্রবর্তী, ইলা চক্রবর্তী ও তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনয় করেছিলেন পাহাড়ি সান্যাল, বীরেন চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চানন ভট্টাচার্য, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, ছায়া দেবী, চন্দ্রাবতী দেবী ও আরো অনেকে।১০ কিন্তু ছবিটি আদৌ ভালো চলেনি – ফিল্মিভাষায় যাকে বলে ‘ফ্লপ’। এই ছবি করতে গিয়ে মোহিনী চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন – সেই পরিস্থিতি কেমন ছিল সে-বিষয়ে স্ত্রী লীলা চৌধুরী জানাচ্ছেন : ‘… ছবিতে হাত দিয়ে … আর্থিক অনটন শুরু হলো। তখন যেখানে যা রোজগার হয় সবই ছবির পেছনে খরচ হয়। আমার গহনা এবং ব্যাংকে সঞ্চিত যা ছিল সবই শেষ হল।’১১ এরপর ফিল্মের সঙ্গে মোহিনীর যোগ রইলো শুধু গীত-রচয়িতা হিসেবে।
মোহিনী চৌধুরী অন্তত তেত্রিশটি ছায়াছবিতে গান লিখেছিলেন – সেই গানের 888sport free bet প্রায় একশ তিরিশ। ফিল্মের প্রথম গান লেখেন শৈলজানন্দের অভিনয় নয় ছবিতে – ‘দীন দুনিয়ার মালিক তোমার/ দীনকে দয়া হয় না?/ কাঁটার জ্বালা দাও তারে যার/ ফুলের আঘাত সয় না।’ ‘দীন দুনিয়া’ এত জনপ্রিয় হয় যে রাস্তাঘাটে ট্রেনেবাসে ভিখিরিরা পর্যন্ত এই গান গেয়ে মানুষের সহানুভূতি অর্জনের সুযোগ নিত। ফিল্মে মোহিনীর লেখা গানে সুর দিয়েছেন শচীনকর্তা থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, তারপরেও থেমে থেমে তাঁর গান ছবিতে থেকেছে। ছবির জন্যে শেষ গান রচনা করেন ১৯৮৭-তে। মানুষ মানুষের জন্য – সেই ছবির নিজের দুটি গান রেকর্ডিংয়ের সময় সারাদিন স্টুডিওয়োত ছিলেন। বাড়ি ফিরে গান-ধারণের গল্প শোনান স্ত্রীকে – সেই রাতেই অকস্মাৎ তিনি চলে যান।

এগারো
মোহিনী চৌধুরীর গান নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। অবশ্য অজয় ভট্টাচার্য, প্রণব রায়, সুবোধ পুরকায়স্থ বা শৈলেন রায় সম্পর্কেই বা কী এমন আলোচনা হয়েছে! প্রথম দুজন কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনোযোগ পেলেও অন্য গীত-রচয়িতারা প্রায়-বি888sport sign up bonusর অন্ধকারেই রয়ে গেছেন। এখানে গায়ক-সুরকার-888sport live chat-সমালোচকদের টুকরো কথার আলোয় মোহিনী চৌধুরীর গীতপ্রতিভার পরিচয় খুঁজবো!
‘পৃথিবী আমারে চায়’ – এই গানটি গেয়ে সত্য চৌধুরী আলোড়ন তুলেছিলেন, নিজে বিখ্যাত হলেন আর মোহিনী পেলেন বিপুল প্রশংসা – ব্যাপক পরিচিতি। মোহিনীর প্রয়াণের পর সেই সত্য চৌধুরী মন্তব্য করেন : ‘ওকে ভোলা যায় না। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যেই মোহিনী বাংলা গানের জগতে তার আসনটিকে পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। … তার লেখার অপরূপ মাধুর্য বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে ভাস্বর হয়ে আছে।’১২
আর-এক 888sport live chatী জগন্ময় মিত্র – যাঁর কণ্ঠে গীত হয়েছিল মোহিনীর ‘ভুলি নাই ভুলি নাই’, ‘ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে’, ‘আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়’ – এসব গানের আবেদন কালান্তরেও ফুরিয়ে যায় না। জগন্ময় মিত্র উল্লেখ করেছেন : ‘মোহিনীবাবু যে যুগে গান লিখেছেন সে যুগে গীতিকার, সুরকারকে পরিচিত করার প্রয়াস ছিল না বললেই চলে। অধিকাংশ গীতিকার তাই অজানা-অচেনাই রয়ে গেছেন। তবে এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আধুনিক বাংলা গানের ভাষা ও বিষয়বস্তুতে মোহিনী চৌধুরী ছিলেন ভিন্নজাতের। তিনি সে-সময়ের বিখ্যাত সব গীতিকারের সঙ্গে সমান দাপট নিয়ে গান লিখেছেন।’১৩
বিগতকালের এক গুণী 888sport live chatী সাবিত্রী ঘোষ প্রসঙ্গক্রমে মোহিনী চৌধুরীর গীতরচনার বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে বলেছেন : ‘এরপর বিশেষ প্রতিভাসম্পন্ন এক গীতিকারের আবির্ভাব – তিনি হলেন মোহিনী চৌধুরী। ওঁর রচনার মধ্যে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য ছিল। ওঁর একটি গান সে যুগে চরম খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে – সেই বিখ্যাত গানটি এখানে উল্লেখ করছি – ‘পৃথিবী আমারে চায় …’। এ গানটি ১৯৪৫ সালে প্রখ্যাত সংগীত888sport live chatী সত্য চৌধুরী ঐ.গ.ঠ. জবপড়ৎফ-এ পরিবেশন করে প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেছেন। দেশ তখন পরাধীন তাই এ-গানের মাধ্যমে পুরুষদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে 888sport promo codeদের এগিয়ে আসার জন্য, ত্যাগ স্বীকারের আকুতি কবির এই রচনার মধ্যে পরিস্ফুট হয়েছে। এটি একটি বিশেষ ধরনের রচনা – এর একটা বৈশিষ্ট্য আছে। … এখানে কবির অন্য ভাবধারার একটি গান উল্লেখ করছি – এটি একেবারে স্বতন্ত্র ভাবধারার গান, কবি লিপিবদ্ধ করেছেন যা আকাশবাণীতে পরিবেশিত হয়ে বিশেষ সুনাম অর্জন করেছে। যেমন – ‘যে পথে ছায়ার আলপনা আঁকা, যে পথে বকুল ঝরে’। এ-গানে কবি কল্পনাকে আশ্রয় করে সুন্দর একটি ছবি এঁকেছেন। গানে সুর-সংযোজনা করেছেন প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক অনুপম ঘটক, গানটির ফরংপ-ৎবপড়ৎফ যদিও প্রকাশিত হয়নি তবে ‘আকাশবাণী’তে প্রচারিত হয়েছে বিভিন্ন সংগীত888sport live chatীর কণ্ঠে যেমন সুপ্রভা সরকার, সাবিত্রী ঘোষ ও মিনতি সরকার।’১৪
মোহিনী চৌধুরীর গানের আবেদন ও জনপ্রিয়তা কেমন সে-বিষয়ে বিশিষ্ট সংগীত-ব্যক্তিত্ব বিমান মুখোপাধ্যায় এক আলাপচারিতায় যে-কথা বলেছেন তা বিশেষ 888sport app download for androidযোগ্য : ‘… একটা বিখ্যাত গান ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’। এ গানটি স্বাধীনতার ঠিক পরেই রেকর্ড হয়, মোহিনী চৌধুরীর লেখা – নিজের সুরে গাইলেন
কৃষ্ণচন্দ্র। ব্যান্ডের তালে ছন্দে এ গানটা এই পঞ্চান্ন বছর পরেও শহীদ তর্পণ হিসেবে আমাদের কাছে অমর হয়ে আছে।’১৫ এই মূল্যায়নের পথ ধরেই গীতিকবি মোহিনী চৌধুরীর শৈল্পিক মেধাকে অনায়াসে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
মোহিনী চৌধুরীর একটি গীতি-সংকলন প্রকাশিত হয় ১৩৮৪-তে। এতে ‘পৃথিবী’ ও ‘প্রিয়া’ এই দুই পর্বে চুয়াল্লিশটি নির্বাচিত গান স্থান পায়। এই বইয়ের ‘বহুলা’ সংস্করণ প্রকাশ পায় সেপ্টেম্বর ২০১২-তে। এই সংস্করণে প্রকাশকের বক্তব্য থেকে জানা যায়: ‘তাঁর [মোহিনী চৌধুরী] … 888sport app download for androidীয় গানের মধ্যে মাত্র খান চল্লিশেক নিয়ে প্রায় চার দশক আগে তিনি নিজেই একটি সংকলন প্রকাশ করেছিলেন। গানগুলি বাছাই করে ‘পৃথিবী’ ও ‘প্রিয়া’ – দুটি পর্যায়ে ভাগ করা থেকে শুরু করে রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রকাশের অনুমতি সংগ্রহ, প্রুফ দেখা, প্রচ্ছদ নির্বাচন – সবই তিনি নিজে করেছেন।’ এই বইটির প্রথম প্রকাশকালে এর একটি ছোট ভূমিকা লিখে দেন প্রখ্যাত লোকসংস্কৃতিবিদ ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য। তাঁর গান সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন : ‘শ্রীযুক্ত মোহিনী চৌধুরীর রচিত সঙ্গীতগুলো ভাবের দিক থেকে একান্ত যুগ-নির্ভর, তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তার তা অন্যতম কারণ। সংগীতগুলোতে গীতিকারের দুটি সত্তার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে – একটি তাঁর বিদ্রোহী সত্তা, আর একটি তাঁর প্রেমিক সত্তা। প্রেমিক সত্তা কেবলমাত্র তাঁর আত্মসর্বস্ব অনুভূতি মাত্র নয় – তার মধ্যে ব্যাপক অর্থে দেশপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম সবই বিধৃত। মানবপ্রেম থেকেই তাঁর মানুষের প্রতি অপরিসীম বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।’১৬ সংগীতজগতের বাইরের একজন বিদ্বজ্জন মোহিনী চৌধুরীর গানকে কীভাবে মূল্যায়ন করেছেন, তার বিশ্বস্ত ভাষ্য এই বক্তব্য।

বারো
মোহিনী চৌধুরীর জন্ম জমিদার-পরিবারে। কিন্তু নানা কারণে এই চৌধুরী-পরিবার ক্ষয়িষ্ণু সামন্তে পরিণত হয়। পিতামহ হলধরের মৃত্যুর পর হয়তো-বা শরিকানা বিবাদে এঁরা চাকরিজীবী মধ্যবিত্তের জীবনযাপনে বাধ্য হয়। এর ওপর আর এক বড়ো আঘাত এসে সব 888sport sign up bonus-স্বপ্ন চূর্ণ করে দেয় – তা হলো সাতচল্লিশের দেশভাগ। সেই পুরোনো ঠাটঠমক আর বড়োমানুষি চাল কাহিনিতে বাসা বাঁধল। মোহিনীর পিতাও ডাক বিভাগের চাকুরে ছিলেন – একসময় তাঁকে কলকাতা থেকে বদলি হয়ে মেসোপটেমিয়ায় (বর্তমান ইরাক) যেতে হয়। মোহিনী তো ছিলেন জিপিওর কনিষ্ঠ কেরানি – তাঁর বাবা মতিলাল বোধহয় মোহিনীর চেয়ে উঁচুপদের অধিকারী ছিলেন। তিনি অবসর নিয়ে পেনশনের টাকায় কলকাতার উপান্তে বেহালায় জমি কিনে বাড়ি না করলে মোহিনীদের হয়তো সীমিত সাধ্যের ভাড়াবাড়িতেই জীবন কাটাতে হতো।
মোহিনী অবশ্য দারিদ্র্য বরণ করেন তাঁর খামখেয়াল, উচ্চাকাক্সক্ষা ও অবিমৃশ্যকারিতার কারণে। তিনি কবি ও গীতিকার হতে চেয়েছিলেন, সে সাধ তাঁর অপূর্ণ থাকেনি। তবে তাঁর শ্রম-সময়-অর্থ-আশা সবকিছুই বিফলে গেছে live chat 888sport-888sport live chatের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায়। তাঁর অভাব ও হতাশা স্থায়ী হয়েছিল। একান্নবর্তী পরিবারে সৌহার্দ্যরে ছন্দ কেটে যায়, পিতার সঙ্গেও মনান্তর ঘটে। আত্মসম্মানের অনুরোধে শিশুসন্তানসহ সপরিবার চেতলায় এক কামরার ভাড়াবাড়িতে ওঠেন। অভাবে-অনাহারে-অসম্মানে জর্জরিত মোহিনী মুহ্যমান হয়ে পড়েন দুর্ঘটনায় দু-বছরের শিশুপুত্রের আকস্মিক মৃত্যুতে। অভাব-শোক-অনাদর তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত করে তোলে যে মোহিনী আত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত করেছিলেন। তাঁর এই সংকটের মুহূর্তে বন্ধু-স্বজন একে একে সকলেই দূরে সরে যান। শেষ আঘাত আসে তাঁর সর্বস্ব ধন দিয়ে তৈরি করা live chat 888sport সাধনা যখন দর্শক নিল না। ততদিনে ব্যাংকে জমানো টাকা, স্ত্রীর গহনা, গান লিখে পাওয়া সম্মানী সব নিঃশেষ। এই নিদারুণ অস্তিত্ব-সংকটের কালে শুধু পাশে পেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীকে – প্রেম-ভালোবাসা-ভরসা-সান্ত¡না নিয়ে আজীবন যিনি ছিলেন কবির একান্ত মরমি সঙ্গী। মোহিনীর কষ্ট-বেদনা-হতাশা-পরাভব কি তাঁর 888sport live chatচর্চায় – তাঁর সংগীতবাণীতে প্রতিফলিত হয়ে ওঠেনি! তাঁর হৃদয়ে অবহেলার বেদনাও তো কম বাজেনি। তাঁর অবদানের প্রাপ্যও কেউ বুঝিয়ে দেয়নি। এইভাবে হাহাকারে-বিদীর্ণ এই মানুষটি অনাদরে-অবহেলায় চলে গেলেন শোক-তাপের ঊর্ধ্বে, ১৯৮৭ সালের ২১ মে’র রাতে, সাতষট্টি বছরের সুখ-দুঃখের অনেক 888sport sign up bonus রেখে।

তেরো
জন্মভূমি পূর্ববঙ্গের সঙ্গে মোহিনী চৌধুরীর ছিল নাড়ির যোগ। দেশভাগের আগ-পর্যন্ত গ্রামের সঙ্গে একটা সংযোগ ছিল – হোক না সে যোগ শিথিল – তবু পাল-পার্বণে বা আত্মীয়স্বজনের বিয়েথা-তে কখনো-সখনো ডহরপাড়ার গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হতো। কিন্তু সাতচল্লিশ সালে দেশ বিভক্ত হলে সে-সুযোগ বন্ধ হয়ে গেল। জন্মভূমির টান মনে মনে খুবই অনুভব করতেন। ১৯৭১ সালে যখন 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো – তখন তিনি খুব উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। নানা সংকট-সমস্যায় সে-সময়ে তিনি জর্জরিত – নানা কষ্ট-বেদনায় ছিলেন আক্রান্ত। তবু নতুন আশা জাগলো মনে – নতুন করে আবার কলম ধরলেন – লেখা হলো মুক্তির গান – জয় বাংলার সংগ্রামের গান। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে তিনি একাত্তরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেকগুলো গান রচনা করেন – প্রতিটি গানের নিচেই তারিখ লিখে রাখেন তাতে স্পষ্টই বোঝা যায় কোন তারিখে গানটি রচিত। এপ্রিল মাসেই সবচেয়ে বেশি গান লিখেছিলেন। ফেলে-আসা দেশের জন্যে তাঁর আবেগ, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন, পাক-হানাদারদের নৃশংসতা ও নিপীড়িত-আক্রান্ত মানুষের জন্যে তাঁর সহানুভূতি এইসব গানে ফুটে উঠেছে। ২৬ এপ্রিল ১৯৭১ তিনি লেখেন : ‘এ কী নীরবতা? কারো মুখে কথা নেই/ শুধু নিশ্চুপ নিঃঝুম কালো রাত্রি/ তবু তরঙ্গ ভেঙে ভেঙে বৈঠাতে/ চলে তরী বেয়ে দুর্গম পথযাত্রী ॥/ পদ্মা আমার ওরে প্রমত্তা নদী/ ক্রুদ্ধ সাপের মত ফুঁসে ওঠো যদি/ মেঘে বিদ্যুতে চিরে যাবে ঐ/ আকাশ জগদ্ধাত্রী/ যখন তোমার বক্ষশোণিতে/ বহিবে রক্তবন্যা/ তখন জাগিবে মাটীর ফাটলে/ পাতালের নাগকন্যা।/ এলোচুলে তার বিশ্বভুবন ছেয়ে/ দিকে দিগন্তে যাবে মাতঙ্গী ধেয়ে/ মৃত্যু সাগর তীর্থে মা তুমি/ নবীন জন্মদাত্রী’। ওই একই তারিখে লেখা আর-একটি গানে উচ্চারিত হয়েছে এই বিষণœগাথা : ‘হায় রে বাংলা সোনার বাংলা/ হায় রে 888sport apps/ এই কি মূর্তি এই কি মা তোর/ দুঃখময়ীর বেশ/ শুনি কান্না কেবল কান্না/ কান্নার বন্যা পা বাড়ালে॥’ পরের দিনই তিনি রচনা করলেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার প্রত্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারের কথা : ‘আমার ডাক এসেছে যুদ্ধে যাবার/ দাও গো বিদায় যাই মা/ আমার প্রাণের দোসর বন্ধু স্বজন/ কেউ তো বেঁচে নাই মা ॥’
যাঁর ঘোষণায় – যাঁর নামের মহিমায় পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠী স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র-রচনার লড়াইয়ে শামিল হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেই মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও গান রচনা করেছিলেন মোহিনী চৌধুরী। বাঙালির মুক্তির লড়াইয়ের দিশারিকে উপলক্ষ করে ওই ২৬ এপ্রিল তিনি লেখেন এই মর্মস্পর্শী গানটি : ‘আকাশভাঙা ঝড়ের রাতে/ কোথায় তুমি কা-ারী হে/ এই আঁধারে পথ দেখি না/ হাত ধরো মোর হাত বাড়িয়ে॥/ শেখ মুজিবর কোথায় তুমি কোথায় তুমি ভাই/ প্রশ্ন জাগে লক্ষ মনে তুমি কি আজ নাই/ আছই যদি কোন্ বেদনায়/ নীরব হয়ে রও দাঁড়িয়ে?/ তোমার সোনার 888sport appsের/ নিশান সে আজ ধূলায় প’ড়ে/ মোদের মা-বোনেদের এ লাঞ্ছনা/ সইবো মোরা কেমন ক’রে/ সব যদি যায় যাক আমাদের তোমায় শুধু চাই/ ঐ আগুনের পরশমণি রক্তে যেন পাই/ সর্বহারার বন্ধু তোমার/ ডাক শুনে মন যাক্ হারিয়ে ॥’ গানটিতে উৎকণ্ঠা, প্রত্যাশা ও নির্ভরতার মিলন ঘটেছে।
মোহিনী চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সমবয়সী এবং একই অঞ্চলের মানুষ। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর ছিল গভীর 888sport apk download apk latest version, অফুরন্ত ভালোবাসা, অকৃত্রিম অনুরাগ এবং সেই সঙ্গে দাবিও। তাই 888sport apps স্বাধীন হওয়ার পরপরই তিনি বঙ্গবন্ধুকে একটি বিশেষ আরজি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন – তাঁর মূল বক্তব্য ছিল এইরকম : ‘জীবনের এই শেষ বেলাটুকু আমরা স্বামী-স্ত্রীতে আমাদের শৈশবের দেখা সেই সোনার বাংলায় একটি মাথা গোঁজার আশ্রয় চাই। … আমরা জীবনভোর একটু প্রাণ ঢেলে বাংলামায়ের সেবা করি। বিদ্যাবুদ্ধি যেটুকু আছে সবটুকু নিঃশেষে একটা নতুন জাতি-গঠনের কাজে লাগাই, বাংলা এবং বাঙালির প্রতি আপনার অফুরন্ত কর্মযজ্ঞে আমাদেরও যা কর্মশক্তি আছে তা সর্ব্বাংশে নিয়োগ করি।’ এখানে তাঁর গভীর আবেগ ও 888sport sign up bonusকাতরতা ও জন্মভূমির প্রতি প্রবল ভালোবাসার পরিচয় জড়িয়ে আছে। কয়েক দশক আগে মোহিনী চৌধুরী এই 888sport sign up bonusকাতর মনে গভীর বেদনা নিয়ে একটি গান রচনা করেছিলেন, তার পরতে পরতে যে কষ্ট ও কান্না লুকিয়ে ছিল তা ঝরে পড়েছিল শচীন দেববর্মনের সুরে – তাঁরই মরমি কণ্ঠে। এই গানটির ভেতর দিয়েই 888sport app download for android করি এক ছিন্নমূল কবিকে – জন্মশতবর্ষে মোহিনী চৌধুরীকে জানাই 888sport apk download apk latest version :
সেই যে দিনগুলি
বাঁশী বাজানোর দিনগুলি
ভাটিয়ালীর দিনগুলি
বাউলের দিনগুলি
আজও তারা পিছু ডাকে
কূলভাঙা গাঙের বাঁকে
তালসুপারির ফাঁকে ফাঁকে
পিছু ডাকে পিছু ডাকে :
যা হারিয়ে যায় – সময়ের স্রোতে যা যায় বিলীন হয়ে – তা চলচ্ছবির মতো বারবার ফিরে আসে 888sport sign up bonusতে – তারই সুর নিরন্তর অনুরণিত হয় – ফিরে ফিরে আসে বহুযুগের ওপার হতে :
শুনি তাক্দুম তাক্দুম বাজে বাজে
ভাঙা ঢোল!
ও মন যা ভুলে যা কী হারালি ভোল রে
ব্যথা ভোল ॥
না না না তেমন তো ঢোল বাজে না,
গাজনে যে লাগতো নাচন মন তো
তেমন নাচে না।
কই গেল সে ঢ্যাংকুড়কুড় ঢ্যাংকুড়কুড়
বোল
কই গেল সে ড্যাংড্যা ড্যাডাং ড্যাংডা
ড্যাডাং বোল ॥
এই না পারে ঢোল বাজে রে ঐ পারে
তার সাড়া,
মাঝখানে বয় থৈ থৈ থৈ নয়নজলের
ধারা।
কই গেল সে গাঁয়ের মাটি কই সে
মায়ের কোল
কই সে হাসি কই সে খেলা কই সে
কলরোল ॥
এক বেগানা শহরে বসেও ছিন্নমূল কবি স্বপ্ন দেখতেন চিরকালের বাংলার। ফেলে আসা সেই হারানো বাংলার 888sport sign up bonus তাঁকে দীর্ঘশ্বাস আর হাহাকারে ব্যাকুল করে তুলতো – গানের ভেলায় ভেসে ভেসে পৌঁছে যেতেন উদার-শ্যামল 888sport sign up bonusময় বাংলার বুকে।

তথ্যসূত্র

১.  পবিত্র অধিকারী-সম্পাদিত অবি888sport app download for androidীয় গীতিকার মোহিনী চৌধুরী, কলকাতা, শ্রাবণ ১৪০৭, শক্তিপদ রাজগুরু, ‘আমার দেখা মোহিনী চৌধুরী’, 

পৃ ৩৮-৩৯।
২. ওই, লীলা চৌধুরী, ‘গীতিকার মোহিনী চৌধুরী’, পৃ ৯।
৩. ওই, পৃ১০।
৪. ওই, শক্তিপদ রাজগুরু, পূর্বোক্ত, পৃ ৪০।
৫. ওই, লীলা চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ ৮।
৬. 888sport live football ও সংস্কৃতি (ত্রৈমাসিক, কলকাতা), বৈশাখ-আষাঢ় ১৩৮৫, সুশীল ঘোষ, ‘গীতিকার মোহিনী চৌধুরী’, পৃ ২১-৬২।
৭. অবি888sport app download for androidীয় গীতিকার মোহিনী চৌধুরী, পূর্বোক্ত, চিত্ত ঘোষ, ‘মোহিনীদার কথা’, পৃ ৪৯।
৮. ওই, লীলা চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ ১৬।
৯. ওই, জগন্ময় মিত্র, ‘গীতিকার মোহিনী চৌধুরী’, পৃ ৩৪।
১০. তপন রায়-সম্পাদিত বিশ শতকের বাংলা ছবি, কলকাতা, জানুয়ারি ২০০১, পৃ ১০৩-১০৪।
১১. অবি888sport app download for androidীয় গীতিকার মোহিনী চৌধুরী, পূর্বোক্ত, লীলা চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ ১০।
১২. ওই, সত্য চৌধুরী, ‘মোহিনীকে ভোলা যায় না’, পৃ ৩৩।
১৩. ওই, জগন্ময় মিত্র, পূর্বোক্ত, পৃ ৩৫।
১৪. সাবিত্রী ঘোষ, যুগসন্ধিক্ষণের বাংলা গানের বাণী ও সুরের ধারা, কলকাতা, আষাঢ় ১৪১৫, পৃ ৩৩।
১৫. সিতাংশু শেখর ঘোষ, বিমানে বিমানে আলোকের গানে, তৃ-স, কলকাতা, জানুয়ারি ২০০৫, পৃ ১৩৫।
১৬. মোহিনী চৌধুরীর 888sport app download for androidীয় গান, কলকাতা, ১৩৮৪, ‘দু’কথা’ (ভূমিকা)।