মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম
মতিউল ইসলাম জন্মেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গুনিয়াউক গ্রামে, ৫ নভেম্বর ১৯১৪ সালে। তাঁর পিতা শাহ ছালামত আলী ও মাতা জিন্নাতুন্নেসা – দুজনই বিশিষ্ট কিছু গুণের অধিকারী ছিলেন। মতিউল ইসলামের জীবনীতে উল্লেখ পাওয়া যায়, তাঁর পিতা সংবাদমূলক 888sport live footballের চর্চা করতেন। মা আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় দক্ষ ছিলেন। পারিবারিক ‘শাহ’ পদবি মতিউল ইসলাম বর্জন করেছিলেন। ২০১৪ সালে নভেম্বর মাসে তাঁর জন্মের একশ বছর পূর্ণ হলো। তাঁর জন্মশতবর্ষে আমরা তাঁর 888sport sign up bonusর প্রতি ভালোবাসা ও 888sport apk download apk latest version নিবেদন করি।
মতিউল ইসলাম জন্মেছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষের বাংলায়। তাঁর জন্মের সময় এবং কিছু আগে থেকে বাংলায় দু-তিনটি রাজনৈতিক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছিল। বাংলা তখন সমগ্র ভারতবর্ষের মুখপাত্র ছিল। বাংলায় কোনো কথা উচ্চারিত হলে সেটা ছিল ভারতবর্ষেরই বক্তব্য। ওই সময়টাকে চিহ্নিত করা হয়েছে বিপ্লববাদী ও স্বদেশি আন্দোলনের যুগ বলে। বিদেশি শাসন-নির্যাতন থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা হয়েছিল ‘স্বদেশি আন্দোলন’, ‘অসহযোগ আন্দোলন’, ‘স্বরাজ আন্দোলন’ প্রভৃতি রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে। যথার্থ অর্থেই, স্বাধীনতা ও আত্মকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা-প্রয়াসী এ-পর্বটাকে বলা হয়েছে ‘অগ্নিযুগ’।
মতিউল ইসলাম এই ‘অগ্নিযুগে’ জন্মেছিলেন। এই যুগে জন্ম নেওয়ার ফলে পরবর্তীকালে তাঁর জীবনাবসানের সময় পর্যন্ত তিনটি সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে তিনি পরিচিত ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের সময় তিনি ছিলেন তেত্রিশ বছরের যুবক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের মৃত্যু আর 888sport appsের জন্মের সময় তাঁর বয়স ছিল সাতান্ন। স্বাধীন 888sport appsে তিনি আরো তেরো বছর বেঁচে ছিলেন। রাজনৈতিক দিক থেকে যদি দেখা যায়, তবে বলতে হয়, তাঁর জন্ম পরাধীনতার অন্ধকারে হলেও স্বাধীনতার আলোকোজ্জ্বলতায় তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। এই বিবেচনায় তিনি ছিলেন সত্যিই ভাগ্যবান। কেননা, তিন-তিনটি রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে তিনি সম্যক পরিচিত ছিলেন। তাঁর এই পরিচয় ইতিহাসের পরিত্যক্ত পুথি পড়ে নয়, নিজের জীবন-সংগ্রামের মধ্যে ছিল তার ভিত্তি। ইতিহাসের এরকম বাস্তবতা মানুষের জীবনকে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে, সেটা স্বাভাবিক সমাজের সুস্থতার চেয়ে মহত্তর। কারণ তার ফলে, সংস্কৃতি-সচেতন ও প্রগতিলুব্ধ মানুষের মধ্যে একটা মহৎ স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা এবং চরিত্রে একটা অনাবিল নির্মলতা এনে দেয়। মতিউল ইসলামের মধ্যে আমরা এরকম স্বপ্নময় মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। কিন্তু আমরা তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম – যারা স্বাধীন 888sport appsে জন্মেছি, পূর্বের অভিজ্ঞতা আর সংগ্রামের সঙ্গে যাদের পরিচয় নেই, পরিচয় হওয়ার সুযোগ ঘটেনি অভাবিত সেই ইতিহাসের সঙ্গে, তারা মতিউল ইসলামকে সহসা চিনতে পারব না। কেননা, আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের ভিত পাকা হয়ে ওঠেনি আজো। স্বীকার করা ভালো, এ-ক্ষতি আমাদেরই।
মতিউল ইসলামের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আইএ পাশ পর্যন্ত এগিয়েছিল। এর পরই তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। খুবসম্ভব তিনি চল্লিশের দশকে স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। জীবনের বিভিন্ন পর্বে তিনি নানা রকম চাকরি করেছেন। সরকারি-বেসরকারি দুরকম চাকরি ছিল তাঁর রুটি-রুজির উপায়। কিন্তু রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পটপরিবর্তনের ফলে তাঁর চাকরি কোথাও স্থিতি লাভ করেনি। তবে তিনি সরকারি চাকরি করেছেন বেশিদিন। শেষে, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান পর্বের অবসান ঘটিয়ে যখন স্বাধীন 888sport appsের জন্ম হলো, তখন দেখা গেল, ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রামে আমদানি-রফতানির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।
মতিউল ইসলাম বিয়ে করেছিলেন তিনটি। তিনি ছাত্রজীবনে, আঠারো বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হয় নিঃসন্তান অবস্থায়। সময়ের কিছু ব্যবধানে তিনি আরো দুটি বিয়ে করেন। শেষোক্ত দুই স্ত্রীর সঙ্গে, চৌদ্দ সন্তানের জনক হয়ে তিনি সামাজিক ও সংসারী হতে পেরেছিলেন। আর তিনি জীবনে যা হতে চেয়েছিলেন, এবার তার কথা বলা যাক।
দুই
আবু সয়ীদ আইয়ুব (১৯০৬-৮২) তাঁর পান্থজনের সখা (১৯৭৩) বইয়ে ফরাসি দার্শনিক ব্রাডলির একটা সুন্দর কথা উদ্ধৃত করেছেন। সমাজ রক্ষার স্বার্থে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বিলুপ্তি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ব্রাডলি বলেছিলেন : ‘মানুষ মানুষই নয় যদি সে সামাজিক না-হয়, তবে সে পশুর চেয়ে খুব একটা ঊর্ধ্বে ওঠে না যদি সামাজিকের চেয়ে বেশি-কিছু না হয়।’ মতিউল ইসলামের জীবন থেকে দেখা যায়, তিনি সামাজিকতাকে অবহেলা করেননি, কিন্তু সেই সামাজিকতা নিয়ে তিনি জীবন কাটাননি। তিনি কবি হতে চেয়েছিলেন। তাঁর ফরিয়াদ (১৯৪৭) কাব্যগ্রন্থের পরিচিতি লিখতে গিয়ে মোতাহের হোসেন চৌধুরী (১৯০৩-৫৬) মতিউল ইসলামের দেখার দৃষ্টি সম্পর্কে লিখেছিলেন, তিনি ‘অপরের চোখ দিয়ে দুনিয়া’ দেখেননি। ‘অরুগ্ন আহার-পুষ্ট রুচি সমৃদ্ধ’ একটা ‘মানব সমাজের স্বপ্ন’ মতিউল ইসলাম দেখেছিলেন। তাঁর 888sport app download apkর সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে এবং সেটা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর দুনিয়া দেখার দৃষ্টিটা মূল্যবান।
মতিউল ইসলামের যে 888sport live football-সৃজনের প্রয়াস, সেখানে দেখা যায়, তাঁর কবি-স্বভাবের প্রকাশই বড় হয়ে উঠেছে। তাঁর সাতটি কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ এ-কথাই প্রমাণ করছে। তাঁর দিবা ও রাত্রি (১৯৫৪) নামে একটি গল্পসংকলনের কথা জানা যায়, কিন্তু তাঁর মধ্যে কবি হওয়ার আকাঙ্ক্ষাই সুপ্রত্যক্ষ এবং সেখানে তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তাঁর কবিমনের ও কাব্যের মূল সুর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি রোমান্টিক ও প্রেমের কবি ছিলেন। আসলে রোমান্টিকতা এবং প্রেম – এ দুটি কবি-স্বভাবের ও 888sport app download apkর প্রায় মৌল প্রত্যয়। প্রত্যেক বড় কবির মধ্যেই রোমান্টিকতা একটা বড় অধ্যায়। আর প্রেমহীন কবি ও 888sport app download apk অকল্পনীয়। মতিউল ইসলাম 888sport app download apkর প্রেমে কীভাবে নিজেকে তন্নিষ্ঠ করেছিলেন, তার সাক্ষী আল মাহমুদ। তিনি মতিউল ইসলাম সম্পর্কে দশ পঙ্ক্তির একটি 888sport app download apk লিখেছিলেন। ‘ঋণ’ নামে সেই 888sport app download apkর ছয় পঙ্ক্তি এরকম :
অন্তরভেদী ও দু’টি চোখের তারা
মনে হয় যেন এখনও আত্মহারা
বৈঠকী ঢংয়ে হেসে ওঠে নির্মল
হাসায় কখনো, কখনো অশ্রুজল।
মাটি ও 888sport promo codeতে মিশিয়ে লবণকণা
তুমি হয়েছিলে 888sport app download apkয় আনমনা
মতিউল ইসলামের কবিমনের, তাঁর কাব্য-স্বরূপের এবং তাঁর চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের এমন সুন্দর পরিচয় আর কোথাও নেই। মতিউল ইসলাম যেন নিজে এসে ধরা দিয়েছেন আল মাহমুদের 888sport app download apkয়। এ-চিত্র যেমন নিখুঁত, তেমনি প্রত্যক্ষ, তেমনি মূল্যবান। মূল্যবান এই অর্থে যে, আল মাহমুদ প্রকৃত মতিউল ইসলামকে তাঁর পাঠকের সামনে মেলে ধরেছেন। সেটা যেমন সম্ভ্রমের সঙ্গে, তেমনি বিনম্রচিত্তে। কাজেই এ-পঙ্ক্তি কয়টি মতিউল ইসলামের কবি-স্বরূপের মূল্যায়ন বটে।
তিন
মতিউল ইসলামের 888sport app download apk সম্বন্ধে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং বাংলা 888sport app download apk অঙ্গনের বিশিষ্ট দুজন কবির বক্তব্যও এ-প্রসঙ্গে শুনে নেওয়া ভালো। আহসান হাবীব (১৯১৭-৮৫) মতিউল ইসলাম সম্পর্কে ‘শেষ আগন্তুকের কথা’ নামে একটি 888sport sign up bonusচারণে লিখেছেন –
মতিউল ইসলামের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় মাসিক সওগাত পত্রিকা অফিসে। তিনি গিয়েছিলেন কয়েকটি 888sport app download apk নিয়ে। সওগাত সম্পাদনার ভার পেয়েছি, কিন্তু আমিও তখন কবি হিসেবে কেবল পরিচিতি লাভ করেছি মাত্র; তা সত্ত্বেও মতিউল ইসলাম নাম বলে চেয়ারে বসে আমার সামনে 888sport app download apk রেখে বললেন, আপনার যেমন খুশি রদবদল করেও যদি ছাপাতে পারেন ছাপিয়ে দেবেন। তাঁর এমনই একটা বিশ্বাস ছিল আমার ওপর – তাঁর কাব্যগ্রন্থ বেরিয়ে যাবার পরও তিনি যখনই আমার হাতে 888sport app download apk দিতেন ছাপানোর উদ্দেশ্যে, তখনও তিনি ওই কথা বলতেন। তাঁর সম্পর্কে একটা কথা বোধহয় আমার মতো আর কেউ জানেন না যে, চারপাঁচটি কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা হয়েও তিনি 888sport app download apk লেখায় শেষ দিন পর্যন্ত 888sport app download apk লেখাকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব সহকারে নিতেন না এবং সেই অনুসারে শ্রম দিতেন না। ফলে তিনি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অথচ প্রয়োজনীয় গুরুত্ব আরোপ করলে তিনি যে তাঁর উপস্থাপিত কাব্য-ফসলকে আরো সমৃদ্ধ করার মতো প্রতিভাবান ছিলেন তা আমি দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠতার ফলে উপলব্ধি করেছিলাম এবং নিজের সৃষ্টির প্রতি এই অবহেলার জন্য তাঁকে তিরস্কার করতে আমি কখনো দ্বিধা করিনি।
আহসান হাবীবের এমন আন্তরিকতাপূর্ণ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। কারণ আহসান হাবীব ছিলেন একাধারে কবি, সাংবাদিক ও কাব্য-সমঝদার। সৈয়দ আলী আহসান তাঁর ‘মতিউল ইসলাম সম্পর্কে’ 888sport sign up bonus-রচনায় লিখেছেন –
মতিউল ইসলাম আমাদের কারো মতোই 888sport app download apk লিখতেন না। প্রেমকে উপজীব্য করে আবেগের স্বার্থপরতায় 888sport app download apkকে তিনি উচ্ছল করেছেন। আমার মনে হয়, মতিউল ইসলাম পরিশ্রম করলে এবং আধুনিককালের ইংরেজি 888sport app download apk অনুশীলন করলে নিশ্চয়ই ভালো 888sport app download apk নির্মাণ করতে সক্ষম হতেন। তবে যা লিখেছেন তা পুরোপুরি হারিয়ে যাবার নয়। তাঁর একটি ব্যাকুলচিত্ততা আছে, যা শব্দে সমর্পিত হয়ে একটি রসঘন কাব্যালোক নির্মাণ করেছে।
এ-বক্তব্যের পরে অবশ্য সৈয়দ আলী আহসান অপর একটি কথা যোগ করেছেন। বলেছেন, ‘মতিউল ইসলাম অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু কোন সুযোগটি গ্রহণ করলে সত্যের অন্বেষণ সার্থক হবে তিনি তা নির্ণয় করতে পারেননি।’ এ ব্যাপারে মতিউল ইসলামের 888sport app download apkর সমঝদার কথা888sport live footballিক অদ্বৈত মল্লবর্মণের (১৯১৪-৫১) কথা 888sport app download for androidযোগ্য। তাঁরা দুজনেই ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান এবং কৃতী সন্তান। তাঁরা একই সময়ে, একই স্থানে জন্মেছিলেন। তাঁরা একে-অপরের বন্ধু ছিলেন। তাঁদের বন্ধুত্বের কথা অনেকেই জানেন। বাংলা 888sport live footballকে অদ্বৈত মল্লবর্মণ তাঁর প্রতিভায় সমৃদ্ধ ও ঋণী করে গেছেন। গত বছর ছিল তাঁরও জন্মশতবর্ষ। মতিউল ইসলামকে অদ্বৈত মল্লবর্মণ একটি অসাধারণ চিঠি লিখেছিলেন। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে লেখা অদ্বৈত মল্লবর্মণের চিঠির দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য খুব সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথম বৈশিষ্ট্য এই যে, এ-চিঠি একজন দৃষ্টিমান মানুষের পাকা হাতের লেখা; দ্বিতীয়ত, সমান বয়সী চিঠির প্রাপকের প্রতি চিঠি লেখকের অনুরাগ। মতিউল ইসলামের 888sport app download apk বিশেষ মনোযোগের সঙ্গে পড়েছিলেন অদ্বৈত। পড়ে, 888sport app download apkর দোষগুণ উল্লেখ করে, মতিউল ইসলামকে অদ্বৈত যা বলেছেন, তার মূলকথা এই যে, ‘সাধনা না করিয়া আত্মপ্রকাশ করিতে নাই। আর সাধনা যাহা করিবেন নীরবে নীরবেই করিবেন। আগুন কখনো ছাই-888sport app থাকে না। আপনার প্রতিভাও একদিন নিশ্চিত সুধীজন সমাজে আদৃত হইবে। ইহা আমি জোর করিয়াই বলিতে পারি। আমার প্রতি যদি আপনার বিশ্বাস ও ভালবাসা থাকে তবে আমার কথায় বিশ্বাস করুন, অনবরত লিখিতে থাকুন।’
এসব বক্তব্য এবং মতিউল ইসলামের 888sport app download apk ও তার সার্থকতা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন শান্তনু কায়সার। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পরে শান্তনু কায়সার সিদ্ধান্তে এসেছেন এই বলে যে, ‘কবি আসলে একটি দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলেন, নিজের ও পরিপার্শ্বের সঙ্গে, প্রারম্ভিক পর্ব থেকে অন্তিম পর্যায় পর্যন্ত। এজন্যে দেখি কাব্যআঙ্গিকের লিরিকের সঙ্গে যেমন অনুসরণ করেছেন ধ্রুপদী দার্ঢ্য ও ঋজুতার, তেমনি দ্রোহ ও প্রতিবাদের পাশাপাশি খুঁজেছেন বিশুদ্ধ সৌন্দর্য ও প্রেম। এতে প্রাথমিক সংশয় দ্বিধায় পরিণত হয়েছে। ফলে কাব্যবিশ্বাস ও আঙ্গিকও হয়ে পড়েছে অনেকটা দুর্বল। তাঁর সামগ্রিক কাব্যফসলে এর পরিচয় বর্তমান।’
হয়তো সেজন্যই বাংলা 888sport app download apkর পরম্পরা এবং তার ইতিহাসের কঠিন আঘাতের কথা ভেবেই সৈয়দ আলী আহসান উল্লেখ করেছেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের 888sport app download apkর ইতিহাস লিখতে গিয়ে মতিউল ইসলামের কথা বাদ দিলে চলবে না।’ এ-দাবি পূরণ হলে আমাদের 888sport app download apkর ইতিহাস সমৃদ্ধ হবে।
চার
888sport live football হচ্ছে মানুষের মগ্নচৈতন্য থেকে উৎসারিত সৃজনশীল উপাদান। তাতে একদিকে থাকে কালের দাবি, অন্যদিকে কালান্তরের উপযোগিতা। 888sport live footballের ইতিহাস রচিত হয় এই উপকরণমূল্যে। সেখানে মানুষের প্রতিভার বিচার চলে তার নানা আঙ্গিকের নতুনত্বে্, সমকালীনতার গুরুত্বে আর কার্যকরী প্রভাবিতার আলোয়। কিন্তু যে-সৃষ্টি মানুষের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে উর্বর করে তোলে; মানুষের মনের সামর্থ্য ও সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে, সেই সৃষ্টির প্রতি মানুষ হৃদয়ের কৃতজ্ঞতা ইতিহাসের অপেক্ষা করে না। মানুষের আচরণও তার সৃজনশীলতার এক পরম উপাদেয় সামগ্রী। 888sport live footballের ইতিহাস আছে, দর্শন-888sport apkের ইতিহাস আছে, সমাজ-সংস্কৃতির ইতিহাস আছে, আছে যুদ্ধবিগ্রহের ইতিহাস; কিন্তু নেই মানুষের আচরণের ইতিহাস।
মতিউল ইসলামের সৃষ্টির থেকে তাঁর সৃজনের বেদনা ছিল বড়। তারও চেয়ে এই সৃজনশীল মানুষটির আচরণ ছিল আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী। এ-কথা প্রমাণ করার জন্য আমাদের আবারো যেতে হবে মতিউল ইসলামের বন্ধুদের কাছে, যাঁরা তাঁকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সৈয়দ আলী আহসান ব্যক্তি মতিউল ইসলামের আচরণ সম্পর্কে লিখেছেন –
মতিউল ইসলামকে আমি 888sport app download for android করি অন্য একটি কারণে। মতিউল ইসলাম আমার এবং ফররুখের কাব্যজীবনের ঘনিষ্ঠ সহচর।
অন্যের প্রতিষ্ঠায় মতিউল ইসলামের মধ্যে কোনো ঈর্ষা কিংবা ক্ষোভ দেখিনি। বরঞ্চ আনন্দিত হতে দেখেছি। তাঁর বন্ধুদের মধ্যে ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব, গোলাম কুদ্দুস এবং আরো অনেকে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেখে মতিউল ইসলাম গর্ববোধ করেছেন। শুধুমাত্র তাই নয়, কখনও কারো কাছে নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি কবি মতিউল ইসলাম, ফররুখ আহমদের বন্ধু।’ জীবনের কর্মকান্ডের বিচিত্র পরিক্রমায় মতিউল ইসলাম একটি বিপুল ঔদার্যের অধিকারী হয়েছেন, যা অনেকের মধ্যে দেখা যায় না। আমাদের চিত্তদ্বার রুদ্ধ থাকে, আমরা অন্যের মুখে নিজের প্রশংসাবাণী শুনতে চাই কিন্তু প্রশংসা করতে চাই না, আমরা শঙ্কিত পদক্ষেপে পথ চলি কিন্তু মতিউল ইসলাম এর বিপরীত। এখনও যদি হঠাৎ তাঁর সঙ্গে দেখা হয় উচ্ছ্বসিত আবেগে পুরনো দিনের কথা বলবেন, ফররুখের কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখে পানি আসবে, কোথায় কার আপ্যায়ন পেয়েছিলেন সে কথা আনন্দের সঙ্গে 888sport app download for android করবেন। আমার তো মনে হয় 888sport app download apk সৃষ্টির জন্য এরকম হৃদয়ই দরকার।
সৈয়দ আলী আহসানের অন্য কথাটিও উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘দীপ্তপ্রাণ, হাস্যোজ্জ্বল এবং সতত চঞ্চল মতিউল ইসলামকে এখনো আমি আমার অল্প বয়সের পরিমন্ডলে দেখতে পাই। কথার মুখরতায় এবং হাসির আনন্দিত আন্তরিকতায় মতিউল ইসলামের তুলনা নেই।’ এই প্রাণবন্ত মানুষটি সম্পর্কে আহসান হাবীব লিখেছেন –
যতদূর মনে পড়ে বছর দুই আগের কথা – অফিসকক্ষে বসে কাজ করছি। এক ভদ্রলোক ঘরে ঢুকে সামনের চেয়ারে বসে পড়লেন এবং মৃদু মৃদু হাসতে লাগলেন। আমি তাঁর আগমনের কারণ জানবার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম এবং কিছুই বলছে না দেখে বিরক্তি বোধ করছিলাম। মাথায় একটি শাদা টুপি, হাঁটুর নীচে অবধি ঝুলওয়ালা কল্লিদার পাঞ্জাবী পাজামা এই তাঁর পোষাক – কাঁচা-পাকা চাপদাড়ি কিন্তু শরীরটা তেমন নয়, যদিও বোঝা যায় বয়স হয়েছে।
আমি অগত্যা প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তাঁর মুখের দিকে তুলে ধরলাম। তারপরও তিনি কয়েক সেকেন্ড সেই কৌতুককর হাসি হাসলেন এবং শেষ পর্যন্ত টেনে টেনে উচ্চারণ করলেন – মতিউল ইসলাম।
মুহূর্তকাল আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক অত্যুজ্জ্বল দেহ-রঙ ক্লিনশেভড্ ধুতি-পাঞ্জাবী পরিহিত আমার প্রায় সমবয়সী এক তরুণ চেহারা, যার বাকভঙ্গি চলাচল উঠাবসা সব কিছুতেই একটা টগবগে ভাব – চঞ্চলতা, অস্থিরতা।
মুহূর্তকাল বিমূঢ় থেকে উচ্চারণ করলাম, কেমন আছেন? – ‘ভালো’ এই শব্দটি এমন ভঙ্গিতে উচ্চারণ করলেন, যাতে করে উপলব্ধি করতে দেরী হলো না যে, লোকটা ভেতরে ভেতরে সেই তরুণ টগবগে সুখী সানন্দ তরুণই রয়ে গেছেন। সেই তরুণ বয়সে যেমন দেখেছি সদানন্দ সুখী উচ্ছল। দুঃখ-কষ্ট দেখা দিলেও সহজে ধার ঘেঁষতে দিতেন না। সমস্যা হয়তো ছিল, যেমন সব মানুষেরই থাকে, কিন্তু সে সব কখনো তাঁর আলাপ-আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতো না।
মতিউল ইসলামের কর্মক্ষেত্র ছিল বিচিত্র ধরনের। থিয়েটারের চাকরি থেকে নিয়ে শিক্ষকতা, প্রাইভেট টিউশনি, রেল, জুটমিল, কাস্টমস হাউসে কেরানিগিরি, সরকারের আমদানি-রফতানি বিভাগে সুপারভাইজারি – এসবই তিনি জীবিকার তাগিদে করেছেন, কিন্তু জীবনে তাঁর আচরণ ফুটেছে দীপ্ত আলোর মতো। কথা888sport live footballিক মিন্নাত আলী, মতিউল ইসলামের এই আচরণ সম্পর্কে লিখেছেন –
শেরওয়ানী প্যান্ট ও জিন্নাহ টুপী পরিহিত গৌরবর্ণের সুদর্শন পঁয়তাল্লিশ বছরের এক যুবক কবি। প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হলাম! প্রথম পরিচয়ের দিন তাঁর মুখে যে স্নিগ্ধ মধুর হাসিটি দেখেছিলাম তার কোনো পরিবর্তন দেখিনি গত এক যুগ ধরে। দেখা হলেই সবার আগে আমাদের মন কেড়েছেন কবি মতিউল ইসলামের আন্তরিক হাসিটি। এমন সদাহাস্য প্রাণবান, সতেজ, জীবন-রসের রসিক মানুষ আমি আর কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
শান্ত, স্নিগ্ধ, উজ্জ্বল সরস ব্যক্তিত্বের মানুষ আজ আমাদের সমাজে বিরল হয়ে উঠেছে। আজকের মানুষের শিক্ষা, মানুষের বিদ্যাবুদ্ধি, মানুষের জ্ঞানের বিস্তার অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে গেছে, কিন্তু সংকীর্ণ হয়েছে তার ধৈর্য, মনের মাধুর্য, চরিত্রের নম্রতা। ধৈর্যের সঙ্গে যে সাহসের যোগ ঘনিষ্ঠ – এটা আজ কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না! কোনো-একটি বিরুদ্ধ কথা চিত্তের উদারতায় গ্রহণ করার শক্তি আজ আমরা প্রায় হারিয়ে ফেলেছি! কাজেই আমরা শিক্ষিত হচ্ছি – এ-কথার অর্থ কী? শিক্ষা মানুষের মনকে যদি পরিবর্তন না করে, প্রসারিত না করে – বিদ্যাশিক্ষার আগের মানুষ আর বিদ্যা অর্জনের পরের মানুষটি যদি এক হয়, তবে এই মানুষের চেয়ে সমাজে গৃহপালিত জীবের মতো উপকারী ও কল্যাণকর কিছু নেই! আমরা কি আজ এই মূঢ়তাকে স্বীকার করব?
মতিউল ইসলাম ১৯৭৬ সালে 888sport app download apkয় অবদানের জন্যে বাংলা একাডেমি 888sport live football 888sport app download bd পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সম্ভবত এই জাতীয় স্বীকৃতির কথাটি ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁর আচরণে তাই প্রকাশ পেত। কেননা ‘আত্মপ্রচারে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিলো’ না উল্লেখ করে ‘কবি মতিউল ইসলাম 888sport app download for androidে’ নামক রচনায় সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘রসিক পুরুষ – সরল, নিরহংকার ও সদাশয়।’
888sport live football যে-আধারে লেখা থাকে তা পাঠ করতে হয়। তার জন্যে লেখাপড়া জানতে হয়। বিশেষ ধরনের শিক্ষিত মন ছাড়া তা উপভোগ করাও সম্ভব নয়। রুচি ও মননের সংযোগ, অনুভূতি ও কল্পনা করার শক্তি, অভিজ্ঞতা ও বাহ্যবস্ত্তর জ্ঞান – এসবই 888sport live footballপাঠের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু একজন 888sport live footballিকের আচরণ, তাঁর হাসিমাখা মুখ, তাঁর স্নিগ্ধ চোখের ইশারা, কথা বলার ভঙ্গি, তাঁর পরিহিত পোশাকের সাধারণ মাধুর্য, দেখে কিংবা শুনে বুঝে ওঠার জন্যে বিশেষ বিদ্যা অর্জনের দরকার হয় না। কেননা এসব বাহ্যিক সংস্কৃতির প্রকাশ চোখে দেখা যায়, কানে শোনা যায় এবং তা সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধিও করা যায়। শুধু তাই নয়, এতে সৌন্দর্য থাকলে, পরিমিতি থাকলে, সৌজন্য থাকলে, সত্য ও বিনয় থাকলে, কপটতা-বর্জিত হলে যে-কোনো সামাজিক মানুষের পক্ষে তা গ্রহণ করাও সহজ হয়। এর ফলও হাতেনাতে পাওয়া যায়। কারণ, কেবল সহাস্য মুখের দিকেই মানুষ হাসিমুখে তাকায়। সমাজে এই আচরণের প্রভাব যে-কোনো লিখিত মাধ্যমের থেকে বেশি হতে বাধ্য। আমরা আজ যে সমাজ ও সাংস্কৃতিক পরিবৃত্তে বাস করছি সেখানে মতিউল ইসলামের মতো বন্ধুপ্রিয়, সদাহাস্য, সুরুচি ও সংস্কৃতিমান মানুষের কথা বিশেষ 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে 888sport app download for androidযোগ্য, বলার যোগ্য তাঁর ইতিবৃত্ত।
তথ্যসংগ্রহ
১. শান্তনু কায়সার, মতিউল ইসলাম, বাংলা একাডেমি, ফেব্রুয়ারি ১৯৯২।
২. শান্তনু কায়সার-সম্পাদিত, মতিউল ইসলাম স্মারকগ্রন্থ, 888sport live chatকলা একাডেমী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, অক্টোবর ১৯৮৫।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.