বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টসে গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ অক্টোবর, ২০১৪ পর্যন্ত ক্যালকাটা গ্রুপের অন্যতম সদস্য গোপাল ঘোষের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। তিরিশ থেকে আশির দশকের মধ্যে তাঁর অঙ্কিত প্রধানত জলরং ও মিশ্রমাধ্যমের কাজ ছিল এ-প্রদর্শনীতে।
গোপাল ঘোষ চল্লিশের দশকে অবয়বনির্ভর সমাজবাস্তবতা সৃজনে উৎকর্ষের ছাপ রেখেছিলেন। তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল কাজের এ-ধারা। পরবর্তীকালে এ-ধারা থেকে তিনি সরে আসেন। নিসর্গকে ভিত্তি করে যে-ছবি আঁকা শুরু করেন তা নানামাত্রিক হয়ে উঠেছিল তাঁর সৃষ্টিতে। আমৃত্যু একই ধারায় ছবি অঙ্কন করে গেছেন গুণী এই 888sport live chatী। 888sport appsের প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য তিনি রঙের ব্যঞ্জনায় এবং রেখার ছন্দময় গতিতে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। 888sport live chatী হিসেবে প্রতিষ্ঠাকালে গোপাল ঘোষ যে-জীবনসংগ্রাম করেছিলেন তা তাঁর মানসগঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
১৯৪৩ সালে গঠিত ক্যালকাটা গ্রুপের তিনি ছিলেন প্রাণসঞ্চারী সদস্য। কলকাতা, মাদ্রাজ, কাশ্মির, মুম্বাইয়ে যে-কটি প্রদর্শনী হয়েছে তাতে তাঁর কাজ ভিন্ন মর্যাদা নিয়ে 888sport live chatানুরাগীরা উপভোগ করেছেন। তিনি ছাড়া ক্যালকাটা গ্রুপের আদি সদস্যরা হলেন – প্রদোষ দাশগুপ্ত, কমলা দাশগুপ্ত, পরিতোষ সেন, নিরদ মজুমদার, শুভ ঠাকুর, রথিন মৈত্র ও প্রাণকৃষ্ণ পাল। পরে যোগ দেন অবনী সেন, রথিন মিত্র, গোবর্ধন আশ, সুনীল মাধব সেন ও হেমন্ত মিশ্র। সদস্য না হলেও বংশী চন্দ্রগুপ্ত ও রামকিঙ্কর বেইজ ক্যালকাটা গ্রুপের দ্বিতীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।
গোপাল ঘোষের জন্ম (১৯১৩) কলকাতায় হলেও পিতার কর্মসূত্রে শৈশব কেটেছে সিমলায়। পিতা ছিলেন সামরিক বিভাগের কর্মকর্তা। পার্বত্য অঞ্চল এবং এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি শৈশবে তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলে। শৈশবে গোপাল ঘোষের ভেতর 888sport live chatী হওয়ার বাসনা লক্ষ্য করে পিতা ছবি অঙ্কনে উৎসাহিত করেন। এই সময়ে তিনি গভীর দৃষ্টি নিয়ে প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য অবলোকন করেন।
এই সময় সম্পর্কে 888sport live chat-সমালোচক প্রশান্ত দাঁ গোপাল ঘোষ বিষয়ে লেখেন, ‘এই পিতাই ছেলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জন রাসকিনের লেখা এলিমেন্টস অব ড্রয়িং বইটি। সে যুগে এই ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। কারণ সেকালে 888sport live chatীদের অর্থোপার্জনের পথ সুগম ছিল না; ছিল না সামাজিক স্বীকৃতি।’
স্কুলে পড়া শেষ করে গোপাল ঘোষ ভর্তি হন জয়পুরে গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসে (১৯৩১-৩৫)। পরবর্তীকালে আবার শিক্ষাগ্রহণ করেন মাদ্রাজ আর্ট স্কুলে। এই স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন 888sport live chatী দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী। স্কুলটির শিক্ষা এবং দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর শিক্ষণ-পদ্ধতি, তাঁর 888sport live chatাদর্শ গোপাল ঘোষের 888sport live chat সৃষ্টি ও সৃজন উৎকর্ষে গভীর ছাপ ফেলে। এখানে শিক্ষাগ্রহণকালে তিনি অ্যানাটমি ও মানুষের শরীরের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করেন। এমনকি ন্যুড স্টাডিও করেন।
এই আর্ট স্কুলে থাকাকালীন গোপাল ঘোষ সাইকেলে চড়ে দক্ষিণ ভারত 888sport slot game করেন। এই 888sport slot gameের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের অভিব্যক্তি অবলোকন ও তা রেখায় নানা ছন্দে ধরে রাখা। তিনি এই সময়ে যে চটজলদি ড্রইং করেন, তা হয়ে ওঠে 888sport live chatমূল্যে উচ্চমানের। 888sport live chatগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গোপাল ঘোষের এই সময়ের সৃষ্টিগুচ্ছে প্রতিভার ছাপ ও অপার সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে খুবই আশান্বিত হন ও তাঁকে আশীর্বাদ জানান।
গোপাল ঘোষ কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। এই সময়ে জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার তাগিদে বিভিন্ন সময়ে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’, ‘শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’, ‘স্কটিশ চার্চ কলেজে’ চাকরি করেছেন অস্থায়ীভাবে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় ১৯৫০-এ। কলকাতার ঐতিহাসিক 888sport live chat-শিক্ষায়তন ‘সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে’ এ-বছরই শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হন। অবসরগ্রহণ করেন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে।
পরবর্তীকালে গোপাল ঘোষ নিসর্গভিত্তিক চিত্রের সফল রূপকার ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। প্রথমদিকের ছবিতে ইম্প্রেশনিস্ট আবহের মধ্যেও আলোর ব্যঞ্জনা বিশেষ রূপ নিয়ে উন্মোচিত হয়েছে এবং এই ব্যঞ্জনা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নির্মাণ করেছে। প্রকৃতিভিত্তিক তাঁর সৃষ্টিতেও এই আলোর সংবেদন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
তাঁর জলরঙের অজস্র সৃষ্টি 888sport live chatানুরাগী মহলে ভিন্ন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি এই সময়ে রচিত অন্যদের নির্মাণ ও সৃষ্টি থেকে গোপাল ঘোষের সৃষ্টির মৌলিক পার্থক্য কোথায়। তিনি ধ্রুপদী ধারার সঙ্গে স্বনির্মিত একটি ধারা সংযোজন করে মৌল এক চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন। সমকালীন অনেকেই চল্লিশের ও পঞ্চাশের দশকে জলরঙে ছবি এঁকেছেন। বিশেষত শান্তিনিকেতনের 888sport live chatশিক্ষায় জলরংকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। বিষয় কখনো প্রকৃতি হলেও গতানুগতিক ধারা থেকে অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারেননি। গোপাল ঘোষ স্বকীয়তায় ও স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল হয়েছেন জলরঙের কাজে নিজস্ব এক শৈলী নির্মাণে, জলরঙের বিন্যাসে নবভাষা সৃষ্টিতে। তাঁর সৃষ্টিতে একদিকে যেমন মাধুর্য আছে, তেমনি আছে বাস্তববাদী ধারা-উদ্ভূত চেতনাবাহী সুন্দরের অনুষঙ্গ।
তাঁর হাতে জলরং এবং নিসর্গের বহুমুখীন অভিব্যক্তি উজ্জ্বলতা অর্জন করে। বাংলার প্রকৃতির নির্যাস ও বহুবর্ণ আর কোনো 888sport live chatী এত দক্ষতায় নির্মাণ করতে পারেননি। বাংলার ভূপ্রকৃতির যে বৈশিষ্ট্য ও রঙের নানামুখীন বিন্যাস তা রূপ ও রসের আবেগে প্রাণদায়ী হয়ে ওঠে। বাস্তবভিত্তিক জলরঙের এসব কাজে তিনি প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যকে অঙ্কন করেন। এতে প্রকৃতি স্বতন্ত্র ও মহিমাময় মর্যাদায় উন্মোচিত হয়েছে। সঞ্চারিত করেন তিনি তাঁর সৃষ্টিতে চিত্রগুণ এবং রঙের গভীর ব্যঞ্জনা আত্মগত করে তিনি নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টি করেছিলেন।
888sport live chat-সমালোচক মৃণাল ঘোষ তাঁর এই সময়ের ছবি গ্রন্থে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা বর্ণনা করেছেন তা প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠে। ‘গোপাল ঘোষই প্রথম 888sport live chatী যিনি সম্পূর্ণভাবে কেবলমাত্র নিসর্গকেই তাঁর প্রকাশমাধ্যম করেছিলেন এবং নিসর্গের ছবির যত কিছু নান্দনিক সমস্যা তার সমাধান করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিত্র নন্দনের দৃঢ় ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও ধ্রুপদী ও রোমান্টিক অভিব্যক্তি, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এই দুই প্রবণতার সঙ্গে ব্যক্তি চেতনার সার্থক সমন্বয়ে নিসর্গচিত্রে স্বতন্ত্র এক মাত্রা যোজনা করতে পেরেছিলেন, যা একই সঙ্গে ভারতীয়, আধুনিক ও বিশ্বজনীন।’
১৯৪৩ সালে ক্যালকাটা গ্রুপ গঠিত হয়েছিল। এই গোষ্ঠীভুক্ত 888sport live chatীরা পূর্ববর্তী ধারায় 888sport live chatীমুক্তির ও ভারতীয় চিত্রকলার আন্দোলনে কোনো নব-উদ্ভাবনী শক্তির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছিলেন না। গতানুগতিক পথ পরিহার করে গোষ্ঠী-সদস্যরা 888sport live chatিত অনুষঙ্গকে ধারণ করে নব-চৈতন্যে আলোড়িত হয়ে গোষ্ঠী গঠন করেন। এই গোষ্ঠীর আদর্শিক চেতনা 888sport live chatাদর্শ ও সৃজন শুধু কলকাতা নয়, ভারতবর্ষের 888sport live chat-আন্দোলনকেও সঞ্জীবিত করেছিল। যদিও এ-কথা আজ প্রতিষ্ঠিত যে, ক্যালকাটা গ্রুপ ভারতবর্ষের 888sport live chat-আন্দোলনের অভিমুখে স্পন্দন সঞ্চার করেছিল অবয়ব গঠনের শৃঙ্খলায়, অঙ্গীকারে ও কিছুটা হলেও পাশ্চাত্যের অনুষঙ্গী চিত্রধারা সৃষ্টিতে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা পূর্বজ 888sport live chatীদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তারা জানতেন, ভারতীয় চিত্রের আত্মপরিচয়ের সমস্যার বীজ কোথায় নিহিত। ভারতীয়তা কেবল ধর্মীয় পুরাণ বা রূপকল্পের স্বরূপে আবর্তিত হয়ে গোলকধাঁধায় পরিণত হয়েছে – এও তাঁরা উপলব্ধি করেন। অথচ চল্লিশের দশকেই পাশ্চাত্যে নানা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে সৃষ্টির ভুবন হয়ে উঠেছে বিচিত্রমুখী এবং আধুনিক।
এই গ্রুপের প্রাণপুরুষ ভাস্কর প্রদোষ দাশগুপ্ত গ্রুপটি গঠন সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘গোষ্ঠী গড়বার কথা আমাদের মাথায় যখন এলো তখন সেটা ১৯৪৩ সালের মে মাস। আমি তখন দিল্লি থেকে এসে রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে একটা দোকান-ঘর ভাড়া নিয়ে আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমার পুরোনো 888sport live chatী বন্ধুরা – গোপাল ঘোষ, পরিতোষ সেন ও আমার স্ত্রী কমলা প্রায়ই আমার স্টুডিওতে তখন যাওয়া-আসা করতেন। আমরা চারজনেই গুরু-ভাইবোন মাদ্রাজে দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর কাছে কাজ শিখেছি। আমরা ইতিমধ্যেই অনেক কাজ করে ফেলেছি কিন্তু কোথাও কোনো সুযোগ কিংবা সুবিধা পাচ্ছিলাম না। তখন ভাবলাম নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে যাতে আমাদের কাজ লোকচক্ষুর সামনে এনে দাঁড় করাতে পারি। একদিন আলোচনা প্রসঙ্গে আমরা গতানুগতিক পথ ছাড়ব বলে ঠিক করলাম। নতুন এক্সপেরিমেন্ট শুরু করব ভারতীয় পথকে অবলম্বন করে, বিদেশি প্রধানত ফরাসি 888sport live chatের নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে হাত মিলিয়ে।’
এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নব্য পথ-সৃষ্টি এবং আধুনিকতার বোধ ও ধারণা এই গ্রুপের সৃষ্টির উদ্দামতায় বিশেষ রূপ পেয়েছিল।
এই প্রদর্শনী উপলক্ষে বেঙ্গল গ্যালারি থেকে প্রকাশিত স্যুভেনিরে যথার্থই বলা হয়েছে, ‘তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ এবং ছেচল্লিশের দাঙ্গা 888sport live chatীকে যেভাবে নাড়া দেয় তাতে গোপাল ঘোষকে শুধু একজন আবেগপূর্ণ গীতিময় শৈলীতে নিসর্গচিত্রের আঁকিয়ে হিসেবে দেখলে, তা হবে তাঁর খন্ডিত রূপ। তাঁর সমগোত্রীয়দের মধ্যে তিনিই হয়তো একমাত্র যিনি ছেচল্লিশের দুর্বিষহ দাঙ্গা নিয়ে ছবি এঁকেছিলেন। তাঁর ব্রাশের সতেজ ক্যালিগ্রাফিক স্ট্রোক, রঙের ছটা এবং এক প্রকারের ত্বরিত চাঞ্চল্য তাঁর কাজে এক্সপ্রেশনিস্ট ধারার স্বাক্ষর বহন করে।’
দুই
গোপাল ঘোষের ছবিতে যে একান্ত নিজস্ব এক রূপভাবনা গড়ে উঠেছে জলরঙের সাধনা ও চর্চায়, তার অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। যদিও কয়েকজন 888sport live chat-সমালোচক তাঁর ছবিতে চৈনিক প্রভাবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, তবু আমাদের মনে হয়, নানা অভিজ্ঞতা, চর্চা ও সাধনার অন্তর্নিহিত চাপ থেকে তিনি ভিন্ন এক পথ নির্মাণ করেছেন শৈলীতে ও রঙের ব্যবহারে। চৈনিক পদ্ধতি থেকে যার দুস্তর ব্যবধান। এক স্নিগ্ধ ভাবনার মধ্য দিয়ে নিসর্গ বহুমাত্রিক হয়েছে তাঁর সৃষ্টিতে। সমকালীনদের জলরং ভাবনায় তাঁর সৃষ্টি প্রাচ্য চেতনার সঙ্গে পরিশীলিত আবেগে ভিন্নপথ সৃষ্টি করেছে। এই নিসর্গের সৌন্দর্য রূপায়ণের মধ্যে গোপাল ঘোষ জীবনের জয়গানই গেয়েছেন। বেঙ্গল-আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে সে-জয়গানেরই সামান্য বিচ্ছুরণ ছিল।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.