এ এম হারুন অর রশীদ
অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম 888sport appsের বিশিষ্ট গাণিতিক পদার্থ888sport apkীদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য এবং বলা যায়, তিনিই বোধহয় প্রবেশের একমাত্র সর্বজনপরিচিত 888sport apkী। রবীন্দ্রনাথের ‘বাতায়নিকের পত্র’ শিরোনামে একটি সুন্দর 888sport live আছে তাঁর কালান্তর গ্রন্থে। 888sport liveটি শুরু হয়েছে এভাবে, ‘একদিকে আমাদের বিশ্বজগৎ, আর একদিকে আমাদের কর্মসংসার। সংসারটাকে নিয়ে আমাদের যত ভাবনা, জগৎটাকে নিয়ে আমাদের যত ভাবনা, জগৎটাকে নিয়ে আমাদের কোন দায় নেই।… তাই আমাদের আপিস থেকে বিশ্বকে বারো মাস ঠেকিয়ে রাখতে রাখতে এমনি হয় যে, দরকার পড়লেও আর তার উদ্দেশ পাওয়া যায় না।
দরকার পরেও না। কেননা বিশ্বটা সত্য। তবু সত্যের সঙ্গে কাজের সম্বন্ধ নাও যদি থাকে, অন্য সম্বন্ধ আছেই।’
রবীন্দ্রনাথের একথা মনে পড়ল আজ এজন্যে যে, প্রিয় বন্ধু জামাল নজরুল ইসলাম এবং ভাবি সুরাইয়া ইসলাম আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে তাঁদের চট্টগ্রামের সার্সন হিলের ভবনে বহুবার বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু যাওয়া হয়নি। এই অনুরোধ এখন আর কেউ করবে না। তবু বিশ্বটাই সত্য, যেমন প্রিয় জামালই সত্য এবং চাক্ষুষ সম্পর্ক আর যদি নাও থাকে, তবু অন্য একটা অশরীরী আত্মিক সম্পর্ক আছে এবং তা থাকবেই। অনন্তকাল ধরে সেই সম্বন্ধ বজায় থাকবে – এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় তাঁর এক 888sport liveের মাধ্যমে। বহুকাল আগে আমি ম্যাথমেটিকাল ফিজিক্স নামে একটি জার্নালে হঠাৎ একটি 888sport live পেয়েছিলাম একদিন, তার লেখকের নাম ‘জে. এন. ইসলাম’। 888sport liveটি সেই সময়কার অত্যন্ত উত্তপ্ত বিষয় ‘ম্যান্ডেলস্টাম রিপ্রেজেন্টেশনে’র (ম্যান্ডেলস্টাম প্রতীকায়নের) ওপর লেখা। বিষয়টা তখন বেশ হট টপিক, জটিল এবং কণা পদার্থ888sport apkের বিচ্ছুরণ তত্ত্বের এক বিশেষ প্রকাশ। দ্বৈত বিচ্ছুরণ তত্ত্বের ওপরে লেখকের এটি একটি মৌলিক অবদান। যেহেতু ওই সময়ে আমি নিজে ওই ধরনের বিচ্ছুরণ সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছিলাম, তাই আমি 888sport liveটি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে পাঠ করি। তখনো আমি জে. এন. ইসলামের সঙ্গে চাক্ষুষভাবে পরিচিত হইনি।
বহুকাল পরে জামালকে আমি এই 888sport liveটির কথা বলায় তিনি তাঁর অতিপরিচিত স্মিত হাসিটি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনি আমার বহুকাল আগের লেখা 888sport liveটাও পড়েছেন এবং মনে রেখেছেন, আশ্চর্য।’ আসলে জামাল নজরুল ইসলাম এবং সুরাইয়া ইসলাম এমন দুজন মানুষ যে তাঁদের ভোলা যায় না। জামালের সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা হয় ১৯৮৪ সালে, যখন তিনি কেমব্রিজ থেকে চট্টগ্রামে চলে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন।
একদিন তিনি টেলিফোনে আমাকে লন্ডন থেকে জানালেন যে, তিনি 888sport appsে চলে আসতে চান। আমি বলেছিলাম, ‘এটা নিশ্চয়ই খুব ভালো সিদ্ধান্ত। তবে তিনি যদি তাঁর দরখাস্তটি অবিলম্বে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন, তাহলে আমি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলাপ করে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারি।’
তারপর তিনি যা বলেছিলেন তা আমি শুনতে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি বললেন, তিনি 888sport appয় যাবেন না, তিনি চট্টগ্রামে যাবেন। কেননা সেখানে রয়েছে তাঁর পৈতৃক ভবন। আমি তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, মনে হয় না, চট্টগ্রামে তিনি খুব ভালো ছাত্র পাবেন এবং হয়তো সেখানে তাঁর গবেষণাকর্ম ব্যাহতই হবে। কিন্তু তিনি সে-কথা মোটেই কানে তুললেন না। তাঁর কথা ছিল একটাই যে, আমি যেন তাঁর দরখাস্তটি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করি। আমি তাই করেছিলাম। এক সকালে ট্রেনে চট্টগ্রামের টিকিট কিনে চট্টগ্রাম পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বলেছিলাম, ‘জামাল নজরুল ইসলাম এদেশের সম্পদ – তাঁকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা আপনাদেরই সৌভাগ্য।’ উপাচার্য করিম সাহেব আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, জামাল নজরুল ইসলামের জন্য একটি অধ্যাপক পদ পদার্থ888sport apk বিভাগে অবিলম্বে সৃষ্টি করে তাঁকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে।
দুঃখের বিষয়, 888sport appয় ফিরে এসে কয়েকদিন পরে খবর পেলাম যে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পদার্থ888sport apk বিভাগে পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। তাই কিছুদিন পরে গণিত বিভাগেই একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তাও দ্বিতীয়বার আমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করার পর। যা হোক, শেষ পর্যন্ত সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং অকুণ্ঠ সহযোগিতায় অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
দুই
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পরই জামাল নজরুল ইসলাম আমাকে এক চিঠি লিখে জানালেন যে, তিনি সেখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে চান। ‘আমি কি তাঁকে সাহায্য করতে পারি?’ আমি বলেছিলাম, ‘আমার পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তা আমি অবশ্যই করব। আপনি একটি প্রজেক্ট প্রোফর্মা (Project Proforma) সুন্দর করে লিখে টাইপ করে পাঠিয়ে দিন।’
অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম এই প্রজেক্ট প্রোফর্মা তৈরি করে নিজে টাইপ করে দ্রুত আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেটা ছিল এক কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট। আমি এই প্রস্তাব নিয়ে তদানীন্তন শিক্ষা সচিব সায়েদুজ্জামান সাহেবের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমার বন্ধুও বটে এবং ছাত্রও বটে। প্রিয় সায়েদুজ্জামান সেদিনই ক্যান্টনমেন্টে 888sport appsের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং আমাকে তৎক্ষণাৎ সুসংবাদটি দেন যে, প্রেসিডেন্ট সাহেব এই প্রস্তাবে তাঁর সদয় সম্পত্তিসূচক সই করেছেন।
এভাবেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল অ্যান্ড ফিজিকাল সায়েন্সেস নামে 888sport appsের সবেধন নীলমণি বিশ্বমানের গবেষণাকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম তাঁর পরিচালক পদে নিয়োজিত হয়েছিলেন। এই কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রণে আমার 888sport app থেকে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আজো মনে পড়ে, আমি মনে মনে প্রার্থনা করেছিলাম যে, কেন্দ্রটি যেমন সুন্দরভাবে জামাল নজরুল ইসলাম গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, সেই রকমভাবেই যেন তা গড়ে ওঠে।
বলা যায়, কেন্দ্রটি শত অসুবিধা সত্ত্বেও মোটামুটি আকর্ষণীয়ভাবেই গড়ে উঠেছে। এই কেন্দ্রের গবেষণার প্রধান বিষয় হলো, সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব, বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব এবং মহাকাশ888sport apk। অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম এই কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন অনুষ্ঠান করেছেন। সম্মেলন উপলক্ষে পৃথিবীবিখ্যাত অনেক গাণিতিক পদার্থ888sport apkী চট্টগ্রামে কিছুদিন অবস্থান করে গিয়েছেন এবং কেন্দ্রের শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে 888sport apkবিষয়ক নানা আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, 888sport appsের কিছুটা হতাশাজনক এবং বিরান
(barren) 888sport apkভুবনে এই কেন্দ্রটি একটিমাত্র আশার আলোকবর্তিকা হয়ে দিনের পর দিন জ্ঞানের আলোক বিতরণ করে চলেছে। এর পেছনে রয়েছে দূরদর্শী জামাল নজরুল ইসলামের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনা। তার সঙ্গে আছে তাঁর প্রিয় 888sport apkের প্রতি অতুলনীয় একনিষ্ঠ দায়বদ্ধতা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা।
অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম দেশে ও বিদেশে বিশেষভাবে পরিচিত তাঁর আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স নামে অত্যন্ত সুলিখিত গ্রন্থটির জন্যে। তিনি 888sport appsের অ888sport apkী পাঠক সমাজের জন্য যে-কাজটি করেছিলেন তা বলা যায় রবীন্দ্রনাথের পথ অনুসরণ করেই করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিশ্বপরিচয় গ্রন্থের ‘নক্ষত্রলোক’ অংশ শুরু করেছেন এভাবে :
‘গোড়াতেই বলে রাখি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রকৃত চেহারা কী তা জানবার জো নেই। বিশ্বপদার্থের নিতান্ত অল্পই আমাদের চোখে পড়ে। তাছাড়া আমাদের চোখ কান স্পর্শেন্দ্রিয়ের নিজস্ব বিশেষত্ব আছে। তাই বিশেষ পদার্থগুলি বিশেষরূপে আমাদের দেখা দেয়। ঢেউ লাগে চোখে, দেখি আলো। আরো সূক্ষ্ম বা আরো ঢেউ সম্বন্ধে আমরা কানা। দেখাটা নিতান্ত অল্প, না-দেখাটাই অত্যন্ত বেশি।’
কিন্তু তবু মানুষ বুঝতে চায়, বোধের সীমানা বাড়াতে চায়, এমনকি বোধের প্রকৃতিটাও অন্যরকম করে নিতে চায়। কোটি কোটি বছর ধরে মানুষ তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের মনেই প্রশ্ন তুলেছে : এই বিশ্ব কেমন করে সৃষ্টি হলো, এই পৃথিবী, ওই চন্দ্র, ওই সূর্য কোথা থেকেই বা এলো? আকাশের গায়ে সারারাত যে তারাগুলি চিকমিক করে সেগুলি আসলে কী, কী দিয়ে সেগুলি তৈরি?
‘নক্ষত্রের বৃত্তাকার গতি যে শব্দ সৃষ্টি করে তা এক ঐকতান’, বলেছিলেন পিথাগোরাস। কিন্তু পিথাগোরীয়রা আশ্চর্য হয়ে ভাবলেন যে, ওই সংগীত আমরা শুনতে পাই না কেন? প্রাচীনদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য এই যে, আমরা শুধু নেপথ্যের আবহসংগীত কল্পনা করেই সন্তুষ্ট থাকি না, আমরা সেই ঐকতান সংগীতের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চাই।
আজ আমরা যে-বিশ্ব দেখছি সেটা ঠিক এই মুহূর্তের বিশ্ব নয়। সুদূরতম নক্ষত্র থেকে আলোর আসতে লাগে কোটি কোটি বছর। সুতরাং কোটি কোটি বছর আগে বিশ্ব কেমন ছিল তাই আজ আমাদের কাছে রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ নিয়ে দৃশ্যমান। এই মহাবিশ্বের বিবর্তনের যে-ছবি 888sport apk আজ তৈরি করেছে তাকে বলে উত্তপ্ত মহাবিস্ফোরণের নকশা বা ফ্রিডমান-রবার্টসন-ওয়াকার বিশ্বসৃষ্টির নকশা। এই নকশা এতটাই সার্থক যে, এটাকে এখন প্রমিত বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব বা স্ট্যান্ডার্ড কসমোলজিও বলা হয়।
জামাল নজরুল ইসলাম এই প্রমিত বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব নিয়েই সারাজীবন অত্যন্ত সার্থকভাবে কাজ করে গিয়েছেন। ১৯১৫ সালে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন সাধারণ আপেক্ষিকতত্ত্বের ক্ষেত্র সমীকরণগুলি লিখে ফেলেছিলেন এবং দুবছর পরে তিনিই প্রথম আধুনিক বিশ্বসৃষ্টির নকশাটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর এই সুন্দর বিশ্বসৃষ্টি নকশার মূল দাবি ছিল একটি প্রসারণশীল বিশ্বের; কিন্তু তিনি তখনকার প্রচলিত সাধারণ ধারণা অনুসারে প্রসারণশীল বিশ্ব স্বীকার না করে একটি মহাবিশ্ব ধ্র“বক অবতারণা করে বিশ্বকে স্থিতিশীল করে দিলেন। এভাবেই তিনি প্রসারণশীল বিশ্বের ভবিষ্যদ্বাণী করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। এর প্রায় দশ বছর পরে বিশ্বের প্রসারণতা আবিষ্কার করে এড্উইন হাবল এবং তারপর লেমাইটার হাবলের এই প্রসারণকে সুনির্দিষ্টভাবে ফ্রিডমান মহাবিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্বের সঙ্গে একত্র করে দিয়েছিলেন।
এ-ধরনের ঘটনা 888sport apkের ইতিহাসে আরো ঘটেছে। ১৯৪৩ সালে জর্জ গ্যামো ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, সৃষ্টির প্রথম মুহূর্তে যে মহাবিকিরণ সৃষ্টি হয়েছিল তার অবশিষ্টাংশ আজো পাওয়া যাবে। কিন্তু তখন তাঁর কথায় কেউ কান দেননি। ১৯৬৪ সালে পেনজিয়াস এবং উইলসন সম্পূর্ণ ঘটনাক্রমে ওই মাইক্রোতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ (microwave background radiation) আবিষ্কার করেন। এই মাইক্রোতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ আবিষ্কারের পর এটা একটা নতুন অবস্থার সৃষ্টি করেছে জ্যোতিঃপদার্থ888sport apkী মহলে। আজ প্রায় সকলেই বিশ্বাস করেন যে, প্রমিত বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব আসলেই সঠিক এবং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ১৯২০ সালে পেনজিয়াস-উইলসনের আবিষ্কৃত প্রসারণশীল বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব এখন একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। প্রায় ২৮,০০০ ছায়াপথ বর্ণালি নিরীক্ষণ করা হয়েছে এবং প্রায় সব বর্ণালিতেই ওই রক্তিম-সরণ (red-shift) দেখা গিয়েছে – শুধু নিকটবর্তী ছায়াপথ ছাড়া। সবচেয়ে দূরবর্তী ছায়াপথ স্তবকের রক্তিম-সরণ প্রায় ০.৯৮। এর অর্থ এই যে, অতি দূরবর্তী নক্ষত্র থেকে যে-আলো আজ আমরা দেখছি তা নিঃসৃত হয়েছে এই বিশাল বিশ্ব যখন ছিল মোটে কয়েকশো বছরের শিশুবিশ্ব!
বিশ্বের বয়স বিভিন্নভাবে মাপা যায়। প্রথমত, পরীক্ষণলব্ধ বিশ্বের প্রসারণ হার ব্যবহার করে ওই মহাবিস্ফোরণের ঠিক সময়টা বর্ণনা করা যায়। এছাড়াও ছায়াপথ স্তবকের প্রাচীনতম তারাটির বয়সও নির্ণয় করা যায়। তৃতীয়ত, তেজস্ক্রিয় পদার্থের বয়স নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যায় পদার্থ888sport apkের নিয়ম অনুসারেই। চতুর্থত, শ্বেতবামন তারকার শীতলীকরণ থেকে তার বয়স পাওয়া যায়। পঞ্চমত, তারকা স্তবকের ভেতরে উত্তপ্ত গ্যাসের শীতলীকরণ থেকে তার বয়স পাওয়া যায়। এইসব বিচিত্র পদ্ধতি ব্যবহার করে এখন বলা হয় যে, বিশ্বের বয়স ১০ থেকে ২০ গিগা বছরের মধ্যে ( গিগা = একশ কোটি = ১০৯)। সুতরাং বিশ্বের বয়স এখন বলা হয় যে সেটা প্রায় ১৩.৭ শত কোটি বছর। বলাই বাহুল্য, কোনো কোনো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অনুসারে বিশ্বের বয়স এর চেয়ে অনেক অনেক কম। কিন্তু 888sport apkের সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্বের বয়সের একটা বৈজ্ঞানিক যুক্তিসংগত 888sport free bet দিয়েছে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
জামাল নজরুল ইসলামের দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স গ্রন্থে এসব কথাই আছে ভিন্ন প্রেক্ষিতে, ভিন্ন আঙ্গিকে। তাঁর রোটেটিং ফিল্ডস ইন রিলেটিভিটি, ইনট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিকাল কসমোলজি এবং ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি এই তিনটি অত্যন্ত সুলিখিত গ্রন্থ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ-কারণেই পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
জামাল নজরুল ইসলামের বাংলায়ও একটি গ্রন্থ আছে, যার নাম কৃষ্ণবিবর এবং সেটি বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত।
তিন.
জামালের প্রিয় সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব
১৯১৫ সালের ২৮ নভেম্বর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন আরনল্ড সমারফেল্ডকে লিখেছিলেন, ‘এই মাসটায় আমি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় কাটিয়েছি এবং একথা বলা ঠিক হবে যে এই সময়টা যথেষ্ট ফলপ্রসূও হয়েছে।’ ওই সময়েই আইনস্টাইন সাধারণ অপেক্ষিক তত্ত্বের মূল ধারণাগুলি আবিষ্কার করেছিলেন, যা পরে জার্মান 888sport apk জার্নাল অ্যানালেন ডার ফিজিকের ৪৯নং 888sport free betয় ৭৬৯-৮২২ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয় ‘আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের ভিত্তি’ শিরোনামে। এই 888sport live পাঠ করার পর বিখ্যাত 888sport apkী ম্যাক্স বর্ন লিখেছিলেন,
‘ওই সময়েই আমার মনে হয়েছে এবং এখনো আমার মনে হয় যে এই তত্ত্ব প্রকৃতি সম্বন্ধে মানুষের চিন্তা-মানসের সর্বোত্তম ফসল; দার্শনিক তীক্ষèতা, ভৌতস্বজ্ঞা এবং গাণিতিক দক্ষতার এ এক অতি দুর্লভ সম্মিলন।… এটা আমার কাছে সুনিপুণ চিত্র888sport live chatের এক অনবদ্য কারুকার্য বলেই মনে হয়েছে, যা শুধু দূর থেকেই উপভোগ করা যায় এবং তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করা যায়।’
এই তত্ত্বে পৌঁছাতে আইনস্টাইনকে অবশ্য দশটি বছর বিক্ষিপ্ত চিত্তে খুঁজে বেড়াতে হয়েছে সঠিক পথের সন্ধানে – যেন ‘ক্ষ্যাপা খুঁজে বেড়ায় পরশ পাথর’। ১৯১১ সালের মধ্যেই আইনস্টাইন জড়ত্ব-ভর এবং অভিকর্ষ-ভরের সমতার নীতিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন। ১৯২২ সালে তিনি প্রাগ থেকে জুরিখে ফিরে এসে বন্ধু মার্সেল গ্রোসমানকে লেখেন যে, ‘তুমি যদি আমাকে সাহায্য না করো তাহলে আমি পাগল হয়ে যাব।’ দুই বন্ধু মিলে টেন্সর ক্যালকুলাস, গাউসিয় বক্র-অক্ষাংশ এবং ক্যালকুলাস ইত্যাদি রপ্ত করে ফেললেন। ১৯১৬ সালের মধ্যেই আইনস্টাইন আকাক্সিক্ষত তত্ত্বের চূড়ান্ত রূপটি বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং পরের বছর তিনি ‘কসমোলজিসে বেট্রাখটুঙ্গেন সুর আলগেইনেম রিসিপটিভিটেটস থিওরি’ নামে একটি 888sport live প্রকাশ করলেন, যাকে বলা হয় বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্বে অজানা অজ্ঞাত জগতে প্রথম সুনিশ্চিত দৃঢ় পদক্ষেপ। এভাবেই আধুনিক পদার্থ888sport apkের জয়যাত্রা শুরু, যার মূল নায়ক নিঃসন্দেহে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।
এই তত্ত্বের কেন্দ্রে আছে সমতুল্যতার নীতি
সমতুল্যতার নীতি (Equivalence Principle) সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। নীতিটি হলো এই যে, কোনো বস্তুর জড়ত্বজনিত ভর এবং অভিকর্ষজনিত ভরের মধ্যে নিখুঁত সমতা mi g=GM mg/r2 যেখানে G হলো নিউটনীয় ধ্র“বক। সুতরাং লেখা যায় mi=rmg যেখানে r ধ্র“বকটিকে ১ নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অভিকর্ষ ত্বরণ লেখা যায় g=GM/r2 অর্থাৎ অভিকর্ষ ত্বরণ বস্তুর গঠন নিরপেক্ষ। বলা হয়ে থাকে যে, ইতালির পিসা নগরের হেলানো গম্বুজের ওপর থেকে বিভিন্ন বস্তু নিচের দিকে নিক্ষেপ করে গ্যালিলিও গালিলেই প্রথম এই নীতিটি আবিষ্কার করেছিলেন। আধুনিককালে ব্যারন ইয়টভসের পরীক্ষণ থেকে আমরা জানি যে, ((mg-mi)/mg<10-8)| অতিসম্প্রতি প্রিন্সটনের অধ্যাপক ডিকি তাঁর পরীক্ষায় পেয়েছেন, (mg-mj)/mg<10-11| সুতরাং জাড্য ও অভিকর্ষ বল সমান বলেই নেওয়া যায়। আইনস্টাইন এই সমতুল্যতার নীতিকে পদার্থ888sport apkের এক অতিপ্রয়োজনীয় নীতিতে পর্যবসিত করে দিয়েছিলেন। নীতিটি হলো এই যে,
‘অভিকর্ষ এবং জাড্য বল ভৌত দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পূর্ণ সমতুল্য – কোনো ভৌত পরীক্ষায় তাদের মধ্যে পার্থক্য করা যায় না।’
এই সমতুল্যতার নীতির তাৎক্ষণিক ফল হলো এই যে, কোনো ধ্রুব অভিকর্ষ ক্ষেত্রকে একটা সুবিধামতো সাধারণ বা ত্বরণগতিসম্পন্ন প্রসঙ্গ কাঠামো ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া যায়। গণিতের ভাষায়, অভিকর্ষ ক্ষেত্রকে রূপান্তরিত করে সম্পূর্ণ অদৃশ্য করে দেওয়া যায়।
সুতরাং সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে জাড্য প্রসঙ্গ কাঠামোর কোনো অস্তিত্ব নেই। বাস্তবিকপক্ষে জাড্য প্রসঙ্গ কাঠামোর সংজ্ঞাই হলো এই যে, এখানে জাড্য ত্বরণ শূন্য। কিন্তু সমতুল্যতার নীতি অনুসারে অভিকর্ষ ত্বরণ জাড্য ত্বরণ থেকে পৃথক করা যায় না। অতএব সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে জাড্য কাঠামোর অস্তিত্বহীনতার অর্থই হলো এই যে, এখানে ত্বরণের কোনো পরম তাৎপর্য নেই। এর পূর্বে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বে আইনস্টাইনকে অনুসরণ করে আমরা দেখেছি যে, গতিবেগ সেখানে সম্পূর্ণ আপেক্ষিক এবং তার কোনো পরম তাৎপর্য নেই। এখন আবার তাঁকেই অনুসরণ করে আমরা দেখি যে, সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে পরম ত্বরণেরও কোনো তাৎপর্য নেই। এ কারণেই এই তত্ত্ব সম্পূর্ণ এক সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব।
আজকাল কৃত্রিম উপগ্রহের দিনে এসব কথা বুঝতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। কৃত্রিম উপগ্রহের অভ্যন্তরীণ যাত্রী উপগ্রহের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত এবং তিনি যে-প্রসঙ্গকাঠামো ব্যবহার করেন, তাকে বলা হয় সহগতির কাঠামো বা (co-moving frame) এবং এই কাঠামোয় তিনি জাড্য অথবা অভিকর্ষ কোনো ত্বরণই উপলব্ধি করেন না। আজকালকার মহাকাশ শাটলের যুগে এটা বুঝতে খুব বেশি অসুবিধা হয় না।
আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, এই সহজ সাধারণ ধারণা ব্যবহার করেই আইনস্টাইন অভিকর্ষ ক্ষেত্রে আলোকরশ্মির বিচ্যুতিও ব্যাখ্যা করেছিলেন।
আকর্ষণকারী ভর থেকে অপস্রিয়মাণ আলোকরশ্মির রক্তিম-সরণ সমতুল্যতার নীতি থেকে সহজেই বর্ণনা করা যায়। দেখানো যায় যে, অসীম দূরত্বে আলোর কম্পাঙ্ক হবে a=1-2M r যেখানে M হলো আকর্ষণী ভর। পাউন্ড এবং রেবকা একটি আলোক কণা h উচ্চতা থেকে নিক্ষেপ করে কম্পাঙ্কের সরণ নির্ধারণ করেছিলেন। দেখানো যায় যে, কম্পাঙ্কের বিচ্যুতি হলো Mh/R2 যেখানে M ও R হলো যথাক্রমে পৃথিবীর ভর ও পৃথিবীর ব্যাসার্ধ। পরীক্ষণে পাওয়া যায় যে কম্পাঙ্কসরণ/কম্পাঙ্ক অনুপাত হলো, (2.570.27)x10-15), যা তত্ত্বের ফলের সঙ্গে (2.84×10-15) সুন্দরভাবে মিলে যায়।
অবশ্য আইনস্টাইন পৃথিবীবিখ্যাত হয়েছিলেন সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে বুধগ্রহের অনুসূরের সরণ ব্যাখ্যা করে। বুধ, শুক্র এবং পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই অনুসূর-সরণ হলো যথাক্রমে প্রতি শতাব্দীতে ৪র্৩র্ , র্৮র্ .৬ এবং র্৩র্ .৮। পরীক্ষণের ফল হলো ৪র্৩র্ .১১র্০র্ , র্৮র্ .৪৪.৮ এবং র্৫র্ .০র্১র্ .২। অভিকর্ষ ক্ষেত্রে আলোর বিচ্যুতি দেখা যায় M/R যেখানে M হলো অভিকর্ষ উৎসের ভর। সুতরাং সূর্যকে ঠিক স্পর্শ করে যায় এরকম আলোকরশ্মির বিচ্যুতি হলো M/R=8.48×10-6=1© © .73 যেখানে M এবং R হলো সূর্যের ভর তার ব্যাসার্ধ। ১৯৫২ সালে সুদানে সূর্যগ্রহণের সময়ে যে ও তার পরীক্ষণলব্ধ মান পাওয়া গেছে তা হলো 1© ©.70© ©.o| এটাকেই আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের অকাট্য প্রমাণ বলা হয়। বলা বাহুল্য, জামাল নজরুল ইসলামের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের বিভিন্ন 888sport live ও গ্রন্থে এসবই সুন্দর এবং বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
সবশেষে এটাই বলার থাকে যে, আমাদের মোটামুটি 888sport app download apk-জর্জরিত, রাজনীতি-লাঞ্ছিত 888sport appsে জামাল নজরুল ইসলামের মতো নিবেদিতপ্রাণ একজন সত্যিকারের 888sport apkীর অভ্যুদয় এক অর্থে কিছুটা স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থী। আবার এক অর্থে এটা প্রত্যাশিতও বলা চলে। কেননা, পৃথিবীর কোনো একটি অঞ্চল সবসময় 888sport apkের আধুনিক ধ্যান-ধারণাবহির্ভূত থেকেই যাবে এটা সৃষ্টিকর্তার সমদর্শী নিয়মেরই ব্যত্যয়। সুতরাং আমরা জামাল নজরুল ইসলামের আবির্ভাবের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আন্তরিকভাবেই কৃতজ্ঞ।
সবশেষে জামাল নজরুল ইসলাম এবং আমার উভয়ের প্রিয় রবীন্দ্রনাথের একটি 888sport app download apkর উদ্ধৃতি দিতে পারি :
বন্ধু, রহো রহো সাথে
আজি এ সঘন শ্রাবণপ্রাতে
ছিলে কি মোর স্বপনে সাথিহারা রাতে॥
বন্ধু, বেলা যায় রে
আজি এ বাদলে আকুল হাওয়ায় রে –
কথা কও মোর হৃদয়ে, হাত রাখো হাতে।
কথা কও মোর হৃদয়ে প্রিয় বন্ধু আমার।
প্রিয় বন্ধু, সবকিছুর জন্যেই ধন্যবাদ।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.