বুলবন ওসমান
কলকাতায় শীতটা তেমন ছিল না। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শান্তিনিকেতনে বিকেল থেকেই শীতটা টের পায় আসাদ। বন্ধু মানস শ্যামবাটিতে রেস্ট হাউস ঠিক করে রেখেছিল বলে কোনো অসুবিধা হয়নি। আর কদিন পর পৌষমেলা, তখন কোথাও জায়গা পাওয়া মুশকিল। এখনো তেমন ট্যুরিস্ট জমেনি। শীতকালটা শান্তিনিকেতনের পর্যটনকাল। বাংলার ও ভারতের নানা প্রান্ত থেকে জনসমাগম হয়। বিদেশ থেকেও আসে অনেকে।
শান্তিনিকেতনে 888sport live chatী আসাদের ভালো লাগার জায়গা হলো কলাভবন, বনের পুকুরডাঙ্গা, গোয়ালপাড়া আর তালতোড় অঞ্চল। আগে প্রান্তিকের দিকটাও তার ভালো লাগত। অনেক বাড়ি গড়ে ওঠায় এখন বাড়ির একটা জটলা মনে হয়। দিনে দিনে শান্তিনিকেতন একটা বস্তি হয়ে যাচ্ছে… আক্ষেপ আসাদের।
ভেবেছিল দিন দশেক থাকবে, কিন্তু হঠাৎ শীতের তীব্রতা তাকে প্রস্থানের তাড়া দেয়।
শীতকাতুরে আসাদ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা ফেরার। অগত্যা রিজার্ভ টিকেট কাটে।
সময়মতো বোলপুর স্টেশনে পৌঁছে গাড়ি আসতে দেখল। যাত্রী নেমে যাওয়ার পর নিজ আসন গ্রহণ করে। জানালার দিকে পড়ায় তাকে আর অন্যকে জায়গা দেওয়ার জন্যে ব্যস্ত হতে হবে না। হকারের কাছ থেকে একটা খবরের কাগজ কেনে। বেশ কয়েকদিন বিশ্বের খবর থেকে দূরে ছিল। চোখ বুলিয়ে চলে বড় খবরে।
পাশের সিট দুটো খালি। গাড়ি ছাড়তে আর প্রায় মিনিট পাঁচেক দেরি। এমন সময় বছর পঁয়তাল্লিশের
এক মহিলাকে দেখল এগিয়ে আসতে। সঙ্গে বছর পনেরোর এক কিশোরী। চেহারা দেখে মনে হলো মা-মেয়ে। পাশে বসার আগে তারা তাদের লাগেজ বাংকারে রাখে। তারপর আসন নেয়। আসনে বসে মহিলা রীতিমতো হাঁপাতে থাকে। আসাদ বোঝে ওরা খুব তাড়াহুড়ো করে এসেছে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে গাড়ি ছেড়ে দেয়। আসাদের পাশে মহিলা বসা। ওপাশে কিশোরী।
সে স্বাভাবিক ভদ্রতা করে বলে, আমি আসাদ, 888sport apps থেকে এসেছি…
আপনি 888sport appsের লোক!
মহিলার চোখেমুখে একধরনের ভালোবাসা-মাখানো 888sport apk download apk latest version।
হ্যাঁ। আপনার বাড়ি কোথায়?
থাকি কলকাতায়। আমাদের বাড়ি ছিল চট্টগ্রামে।
তাই!
হ্যাঁ। বাবা চলে এসেছেন চৌষট্টি সালে। আমার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
888sport appsে আপনার কোথায় বাড়ি?
আমার বাড়ি 888sport appsে নয়। আমি এদিকের লোক। বাড়ি হুগলী। মামাবাড়ি হাওড়া।
আপনারা 888sport appsে কবে গেলেন?
বাবা অপশন দিয়ে গেলেন চট্টগ্রাম। আমরাও বাবার সঙ্গে যোগ দিই পঞ্চাশ সালে। সত্যি বলতে কী, চট্টগ্রাম আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি। দশ বছর ছিলাম। কৈশোরের দশটা বছর ছিল স্বপ্নের মতো। সারা বাংলায় চট্টগ্রাম হলো সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। পাহাড়, ঝরনা, সমুদ্র… একেবারেই স্বর্গপুরী। বলতে-বলতে মহিলাকে আসাদ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। সাধারণ শ্যামলা রঙের মহিলা। কথা বলতে-বলতে মুখ বন্ধ করতে গেলে একটা দাঁত বেরিয়ে থাকে। সে লক্ষ করেছে, এটা করতে গিয়ে ভদ্রমহিলা যে বেশ অস্বস্তিতে ভোগে, তা সে টের পায়।
পাশে বসা তরুণীর কথা জিজ্ঞেস করে জানতে পারে, যা ধারণা করেছিল তা-ই – মেয়ে।
দশম শ্রেণির ছাত্রী। মায়ের মতো শ্যামলা। তবে মুখশ্রী ভালো। আর পঞ্চদশীর নবীনতা সবসময় মানুষকে আকর্ষণ করে।
বাচ্চা বয়সে চলে আসার পর আমি কিন্তু এই পর্যন্ত চট্টগ্রাম যাওয়ার আর সুযোগ পাইনি, বলে মহিলা।
মাফ করবেন, আপনার নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি।
আমি মায়া। মায়া দে। চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্যে খুব ইচ্ছা হয়। বাবা-মায়ের কাছে এত গল্প শুনেছি যে, তাতে একরকম দেখা হয়েই গেছে। শহরে আমাদের বাড়ি ছিল রহমতগঞ্জে।
রহমতগঞ্জ খুব সুন্দর জায়গা। টিলার ঢালে বড়ো মনোরম জায়গা। মাঝখান দিয়ে পাকা রাস্তা চলে গেছে। দুদিকে পাহাড়। ছেলেবেলায় আমরা প্রাতঃ888sport slot gameে রহমতগঞ্জ পর্যন্ত যেতাম। আমরা থাকতাম চন্দনপুরায়। আমাদের বাসা থেকে দূরত্ব কত আর হবে, দু-তিন কিলোমিটার। এই রহমতগঞ্জের পাশ দিয়ে একটা ইট-বিছানো রাস্তা ছিল, যেটা চন্দনপুরার সিরাজদ্দৌলা রোডে মিশেছে – এর মুখে ছিল গনি সওদাগরের বেকারির দোকান। তখন দু-আনা দামের একটা পেস্ট্রি পাওয়া যেত, খুব বিখ্যাত ছিল আর ছিল বেলা বিস্কুট। অনেকটা ব্রেড বিস্কুটের মতো দেখতে। তবে হালকা, আর মিষ্টি। খেতে খুব ভালো। বেলা বিস্কুট চট্টগ্রামের বিখ্যাত বিস্কুট।
আর বলবেন না, আমার খুব লোভ লাগছে।
পাসপোর্ট করে চলে যান। বেলা বিস্কুট খেয়ে আসুন।
যেভাবে বলছেন, তাতে এবার যেতেই হবে।
আপনার স্বামী কী করেন?
ও দমদমে গ্রাউন্ড অফিসার।
এবার গ্রাউন্ড অফিসারকে বলুন আকাশে উড়তে। ঘুরে আসুন। তবে আগের সেই চট্টগ্রামকে এখন আর পাবেন না। চট্টগ্রাম এখন আরো বদলে গেছে। স্বর্গীয় দৃশ্য প্রায় অদৃশ্য। মানুষের লোভের চিতায় সব জ্বলে-পুড়ে খাক হতে শুরু করেছে। আমার এখন আর চট্টগ্রাম যেতেই ইচ্ছা করে না।
আমি খুব ছোট অবস্থায় চলে আসি। আবছা মনে পড়ে। সুন্দর পাহাড়ি অঞ্চল। বাবার কোলে চেপে সকালে রাস্তায় গেলে লোকজন গাল টিপে আদর করত।
আপনি কোন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন?
আমি জেনারেল হিস্ট্রিতে এমএ।
চাকরি করছেন?
না, ওটা আমার করা হয়ে ওঠেনি।
আপনার বিষয়?
আমি নৃতত্ত্বের ওপর পড়াশোনা করেছি। তবে ইতিহাস আমার খুব প্রিয় বিষয়। বিশেষ করে পুরাতত্ত্ব। আর বাংলা ইতিহাসের মধ্যযুগটা আমার খুব ফেভারিট।
এই সময় মেয়েটি তার মাকে জলের বোতলের কথা জিজ্ঞেস করায় তাদের কথোপকথনে ছেদ পড়ে।
জলের বোতল তো হ্যান্ডব্যাগেই আছে, দেখে নাও না… মায়ের সুরে কিছুটা বিরক্তি।
তারপর ঘুরে বলে, হ্যাঁ দাদা কী যেন বলছিলেন… বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাসে আপনার ইন্টাররেস্ট বেশি।
যাক, দাদা যখন বলেছ ভালোই হলো। এখন থেকে তোমাকে তুমি বলার সুযোগ এলো।
অবশ্যই তুমি বলবেন। ভাইবোন সম্পর্কটা কত ভালো বলুন তো!
ঠিকই বলেছ। আমার একটি মাত্র বোন, বিয়ের পর থেকে বিদেশে… এত মন খারাপ হয় দীর্ঘদিনের অদর্শনে…
ঠিক বলেছেন, ভালোবাসার মানুষগুলো অনেকদিন চোখের বাইরে থাকলে বড় কষ্ট হয়। যেমন আমার চট্টগ্রাম দেখতে ইচ্ছা করে। এখন ওখানে না গিয়ে হয়তো আর থাকা যাবে না, কিন্তু জন্মভূমির মায়া মানুষ কোনোদিন ভুলতে পারে না। মনের মধ্যে কেমন একটা আকুলি-বিকুলি করে।
শুধু মানুষ নয়, সব প্রাণীর মধ্যে এ-বোধটা কাজ করে। নিজের পরিচিত জায়গা ছাড়া তার ভালো লাগে না। সুযোগ-সুবিধা বেশি দিলেও না। এমনকি যে-পায়রাকে শান্তির প্রতীক ধরা হয় সেই পায়রাও নিজের খোপের জন্যে বা দাঁড়ের নির্দিষ্ট জায়গাটির জন্য প্রাণপণ লড়াই করে।
এই সময় পাশ দিয়ে চা-কফির হাঁক…
চা না কফি? আসাদ মায়ার সামনে প্রশ্ন রাখে।
আপনিই বলুন, আমি খাওয়াব।
তুমি খাওয়াবে কেন?
কারণ, আপনি আমাদের গেস্ট।
হলো না।
কেন?
জন্মগতভাবে আমি পশ্চিমবঙ্গবাসী, তুমি এখানকার নাগরিক হলেও আমার গেস্ট।
ঠিক আছে, হার মানছি।
আরে না, হার মানার কিছু নেই। আমি হাফ চাঁটগাঁইয়া, তুমি ফুল… আসলে তুমিও আমাকে খাওয়ানোর দাবিদার।
তাহলে আপনি হার মানছেন?
না, না, ওটা কথার কথা। আমিই খাওয়াব।
মায়া কফিতে চুমুক দিয়ে বলে, দাদা, কশে চিনি দিয়েছে।
না, তো! স্বাভাবিকই তো।
তাহলে তুমি দাদা, চিনি বেশি খাও… দেখো দাদা, তোমাকে কিন্তু তুমি বলে ফেললাম। যা হওয়ার তাই হয়েছে।
আমি যে আবার কখন তুই বলে ফেলি, তার কী ঠিক আছে! আমার বোনকে আমি তুই-ই বলি। যাক, তোমাকে বলি, চিনি সত্যি আমি বেশি খাই। এখন অবশ্য কমানোর চেষ্টা করি। তবে চিনি খুব পছন্দ করতেন রবীন্দ্রনাথ।
এ-কথা তো শুনিনি।
কেন, আমি চিনি গো চিনি… চিনি দিয়েই তো বিদেশিনীকে চিনেছেন। নিজে চিনি হয়ে বিদেশিনীকে চিনির সিরায় জড়িয়েছেন। তুমি তো খুব ছোটবেলায় এদিকে চলে এসেছ, বলো তো, তোমার ঘরে সবচেয়ে প্রিয় তরকারি কী?
লইট্টা মাছ। যেটাকে আপনারা বলেন বমলা মাছ।
ঠিক বলেছ। লইট্টা মাছ চাটগাঁবাসীর সবচেয়ে প্রিয় তরকারি। শুধু মাছ নয়, লইট্টা শুঁটকিও।
আপনি তো আবার শুদ্ধ করে বললেন, ওটা হলো লইট্টা ফুওনি।
যথার্থ। ফুওনি মানে শুকনো। এই সময় রেলগাড়ি বর্ধমান স্টেশনে প্রবেশ করে। নানা রকম হকার হাঁকডাক শুরু করে দেয়। খালি সিটগুলো পুরে গেল। একজন অল্পবয়সী বাউল গান করতে করতে ঢুকল। তার গলায় : রাই জাগো গো… জাগো শ্যামের মনমোহিনী, বিনোদিনী রাই… গানটা বেশ একটা আবহাওয়া তৈরি করে। বাউলের গলাটা বেশ সুরেলা। বোঝা যায়, এই লাইনে গান গাওয়ার জন্যে নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করেছে। এদের পাঁচ-দশ টাকা দিতে আসাদের বেশ ভালো লাগে। ছেলেটি গোটা কামরায় গান শেষ করে সবার কাছে হাত পাততে থাকে। এক-দুই টাকা করে লোকে দেয়। আসাদ দেয় দশ টাকা। অগত্যা মায়া পাঁচ টাকার নোট বের করে।
গান গেয়ে মানুষকে বিনোদন দিয়ে রোজগারটা বড় ভালো একটা পেশা – বলে আসাদ।
হঠাৎ করে আসাদের মনে হলো, তারা মায়ার মেয়েটিকে অবহেলা করে চলেছে। এতক্ষণ তারা একটানা কথা বলছে, অথচ মেয়েকে নামটি পর্যন্ত জিজ্ঞেস করা হয়নি।
সে মায়াকে বলে, মাসির নাম কী?
মৈত্রেয়ী।
বাহ্! খুব ভালো নাম। কী পড়ছে?
স্কুল ফাইনাল দেবে।
মাসি একা-একা বোর হচ্ছে না তো?
না না, ও খুব ইন্ট্রোভার্ট। এক-একা থাকতে পছন্দ করে।
তোমরা কোথায় এসেছিলে?
আমরা গিয়েছিলাম তারাপীঠে মানত ছিল। পুজো-আচ্চা করে শান্তিনিকেতনে একদিন থেকে রওনা দিয়েছি।
তারাপীঠ মানে বামাক্ষ্যাপার দেশ?
হ্যাঁ। ওনার বাড়ি অবশ্য অটেলা গ্রামে।
তা জানি। বাংলায় বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট উপদল তৈরি হয়, তার মধ্যে তান্ত্রিক যোগসাধনার ধারা একটা।
আর কী আছে?
আর… নাথধর্মও একটা। আছে সহজিয়া ধারার দল। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বাউল সম্প্রদায়। বর্তমানে এরাই প্রধানভাবে টিকে আছে। দুই বাংলায় এদের 888sport free bet খুব একটা কম হবে না। লালন ফকিরকে কেন্দ্র করে ছেঁউড়িয়ায় বিশাল জমায়েত হয়।
ওটা কোথায়?
কুষ্টিয়ায়। যা আগে নদিয়ার মহকুমা ছিল। এখন ওটা জেলা।
888sport appsে আসলে দেখার অনেক কিছু আছে।
হ্যাঁ। যেমন পশ্চিমবঙ্গেও দেখার অনেক কিছু আছে। বাংলা সংস্কৃতির রূপ নির্ধারণ করতে গেলে দুই বাংলাকেই পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে। রাজনৈতিক বিভাজন থাকার পরও।
কথা বলতে-বলতে আসাদ খেয়াল করে, মায়ার চোখ দুটো কেমন মদির হয়ে উঠছে। প্রায় সময়ই তার চোখে একধরনের মুগ্ধতা লক্ষ করে। আসাদ নিজেকে সংযত করতে করতে মাঝে মাঝে বোধ করে, তার মধ্যেও কেমন একটা ভালো লাগা সঞ্চারিত হচ্ছে। কোথা থেকে একটা অদৃশ্য রজ্জু যেন তাদের বাঁধতে শুরু করেছে। মায়ার চাপা রং ক্রমশ হয়ে উঠছে কোমনীয় উজ্জ্বলতাময়।
সে এসব ভাবছে, এমন সময় টের পায়, মায়ার হাত তার হাতের ওপর স্থাপিত হলো।
উষ্ণ হাতটা ধীরে-ধীরে ঘামছে।
এই সময় মায়া বললেন, আমাদের এবার উঠতে হবে।
কেন? হাওড়া আসতে তো এখনো পনেরো-বিশ মিনিট দেরি?
আমি লিলুয়ায় নামব। ছোটবোনের বাসায় দুদিন থেকে তারপর কলকাতায় যাবো।
কী বলবে আসাদ। কোনো কথা খুঁজে পেল না।
মায়া উঠে লাগেজ নামায়। মৈত্রেয়ী মাকে সহযোগিতা করে। আসাদও ওদের সাহায্যে হাত বাড়ায়। লাগেজ নামানো হয়ে গেছে।
মৈত্রেয়ী সামনে পা বাড়িয়েছে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে।
মায়ার চোখ আসাদের চোখে স্থির। আসাদ খেয়াল করে, মায়ার উঁচু দাঁতটা কখন ঢেকে গেছে। ওকে খুব সুশ্রী লাগছে।
মুখে হাসির ঈষৎ কাঁপন তুলে মায়া বললে, জার্নিটা মনে থাকবে!
বলেই সে সবার সঙ্গে দরজার দিকে এগিয়ে চলে। আসাদের চোখ তাকে অনুসরণ করে; কিন্তু দরজায় পৌঁছনোর আগেই মায়া ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.