জাহানারা নওশীনের 888sport alternative link

বেশ কয়েক বছর হলো আমরা জাহানারা নওশীনের লেখার সঙ্গে পরিচিত। তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘বৃক্ষে বৃক্ষে বিষকরবী’ 888sport live football সমালোচনামূলক গ্রন্থ। 888sport live footballের সামাজিক দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত তাঁর বিশ্বাস ও আবেগ যেমন পাঠকদের তখন স্পর্শ করেছিল, তেমনি তাঁর তীক্ষ্ণধী বিশ্লেষণ সকলের প্রশংসাও অর্জন করেছিল। তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ – বহে না যে নদী তাঁর লেখা গল্পের সংকলনে যেন প্রথম গ্রন্থে যে তাত্ত্বিক প্রস্তাবনা করেছিলেন তারই 888sport live footballিক রূপায়ণ করে দেখালেন। আলোচ্য ‘পিতামহীর পাখি’ তাঁর চতুর্থ গ্রন্থ এবং এটি 888sport alternative link। তবে এই গ্রন্থটির সঙ্গে তাঁর পূর্ববর্তী লেখার একেবারেই মিল নেই। বস্তুতপক্ষে প্রচলিত বাংলা 888sport alternative linkের সঙ্গেই এর কোনো মিল নেই—না বিষয়বস্তুতে, না প্রকরণে, না পরিকল্পনায়, কোনো দিক দিয়েই মিল নেই। একজন বর্ষীয়সী পিতামহীর তাঁর পৌত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতা, 888sport sign up bonusলিপ্ত আত্মকথন ও নিমগ্ন কল্পনাবিহারের মধ্য দিয়ে আত্মঅবলোকন ও আত্মানুসন্ধানই হচ্ছে এই 888sport alternative linkের বিষয়বস্তু।

বাড়ির আমডালে বসা কালো পালকসহ গাঢ় হলুদ রঙের হীরামন নামের পাখিটির আবির্ভাব দিয়ে 888sport alternative linkটির শুরু। পিতামহী তাঁর পৌত্রীর দৃষ্টি পাখিটির দিকে আকৃষ্ট করতে চান। কিন্তু পিতামহী পাখিটির রূপ বর্ণনার দিকে যান না বরং পাখিটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিংবদন্তিটিই মৃদুস্বরে বলতে থাকেন। কেন পাখিটির ডাকের মধ্যে খুকির খোকা হোক, খুকির খোকা হোক’ এই বাক্যটি সংগুপ্ত হয়ে যায় সেই ঐন্দ্রজালিক রূপান্তরের গল্পটি বলেন। এটিই পিতামহীর একমাত্র পাখি নয়। পিতামহী পাপিয়া হো টি টি, মাছরাঙা, ঘুঘু, পেঁচাদের সঙ্গে জড়িত কিংবদন্তির কথাও বলেন। তবে 888sport alternative linkের হীরামনের এই উপকথাটি যেন এক স্বপ্নময় আবহ তৈরি করে দেয়। থেকে যেন অপসৃত অতীত রহস্যময় কোনো অধরা ‘অপ্সরী ঘরময় ঘুরে ঘুরে নাচে। তাঁর

আঁচলের বাতাসে পুরাতন সিন্দুকের সুগন্ধ। কথিত যে, হীরামনের বাতাস যার গায়ে লাগে তার আর ঘরে মন থাকে না, সংসারে সে বাউলি হয়ে যায়।

পিতামহী ও কি সেই সম্মোহনেই আক্রান্ত হন? পৌত্রীকে গল্প বলতে বলতে আপন ভিতরপানে তাকিয়ে তিনিও উদাস হয়ে যান। কোনো গভীর গোপন অন্ধকারে ডুবে যান। হিমশীতল জনহীন এক বনানীর মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে তিনি পথ হারিয়ে ফেলেন। সময়ের পল অনুপল সরে যেতে থাকে।

888sport alternative linkের প্রথম দুপৃষ্ঠার মধ্যেই 888sport alternative linkের সবকটি থিমের ধারাক্রম উন্মোচিত হতে থাকে। বাস্তবের পাখিটি উপকথায় রূপান্তরিত হয়, সংসার আশ্লিষ্ট মনকে যে কুহকের মতো উদাস পথহারা বনানীর মধ্যে নিয়ে ফেলে। সময়ের নিরুদ্দিষ্ট প্রবহমানতায় সুতি ও স্বপ্নের চিত্রমালা ভেসে যেতে থাকে, বাস্তবতা ও কল্পনা মিশে যায়, পৌত্রীর সঙ্গে কথকতা স্বগত সংলাপ পরস্পর প্রবিষ্ট হয়ে যায়, চেতনলোক থেকে 888sport alternative link মগ্নচৈতন্যে প্রসারিত হয়ে একবার চৈতন্যের এ পিঠ একবার ও পিঠ দেখায়, চেতনার অন্তর ও বাহির পাল্টাপাল্টি করতে থাকে। ফলত প্রচলিত সাধারণ অর্থে 888sport alternative linkে যে গল্পের বুনন আমরা আশা করি তা এই 888sport alternative linkে নেই। এখানে সেই চরিত্রচিত্রণ, ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত, প্লটের জ্যামিতিক কাঠামো গল্পের আকাঙ্ক্ষিত পরিসমাপ্তি। এতদসত্ত্বেও ঐ পিতামহীর 888sport sign up bonusর ও নিবিষ্ট ভাবনার বিরামহীন উন্মোচনের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে জীবনের এক গভীর পর্যবেক্ষণ। তার মধ্যে আছে বাসনাসৃষ্ট মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তির মধ্যে দুরপনেয় বিচ্ছেদের আর্তি, অপসৃয়মান মাধুর্যের জন্য হাহাকার, কালের পটে ধৃত, পর্ব থেকে পর্বান্তরে বিস্তৃত মানুষের অভিজ্ঞতার তাৎপর্য ও আত্মপরিচয় সংক্রান্ত নিগূঢ় দার্শনিক জিজ্ঞাসা। সব মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে মগ্নচৈতন্যের এক কাব্যোপন্যাস।

এ 888sport alternative linkে প্রথমেই যেটি দৃষ্টি কাড়ে সেটি হলো এর অসাধারণ কারুকার্যময় ভাষা এবং প্রকৃতি বর্ণনায় লেখিকার উপমা ૩ চিত্রকল্পের চমক। যথা: কাগজী লেবুর চনমনে গন্ধের মতো দুপুর; রূপালী মাছের পিঠে জলতরঙ্গের এক কথক; ভাতের নরম গন্ধে এবং বাষ্পে শিশুদের কলরব সিদ্ধ হয়; চাঁদের মতো ঝকঝকে কাঁসার থালায় সাদা ভূঁই ফুলের মত ভাত বাড়া হয়; কোটি কোটি তীরের মত তীব্রবৃষ্টি বিধে যায় মাটির বুকে, তপ্ত মাটি তাকে শুষে নেয় কামনাপ্রদীপ্ত 888sport promo codeর মত; সিন্দুকে আটকানো পুরোনো 888sport sign up bonusর গন্ধের মত ভেজা খড়ের গন্ধ সারা খামার জুড়ে; নিমগ্নতায় নিঃসঙ্গ দুপুর; রেল স্টেশনের দূরের সিগন্যাল কিংবদন্তির পাখির মতো ডানা মেলে থাকে—পিতামহীর ইত্যাকার চিত্রাবলির মধ্য দিয়ে অনাস্বাদিতপূর্ব প্রকৃতিকে আমরা আবিষ্কার করি। তবে এটাও লক্ষ্য করার মতো যে, এ কিন্তু প্রকৃতি বর্ণনা ততটা নয় যতটা মানবীয় অভিজ্ঞতারই অনন্য উপমা চয়ন। এই যে চিতল মাছের বিভ্রম জাগানো বালির স্তূপে হারিয়ে যাওয়া নদী, তরবারি হাতে প্রহরীর মতো তালগাছ, কামনাপ্রদীপ্ত মাটির বৃষ্টি শুষে নেয়া, ফুটন্ত চালের টগবগানির সঙ্গে শিশুর কলরব মিশে যাওয়া- এই সব কিছুর মধ্যেই কোনো কোনো মানবীয় অভিজ্ঞতার 888sport sign up bonus, বাসনা, ব্যাকুলতা মিশে থাকে। উপমেয় বা উপমান কোনটা প্রধান বোঝা যায় না, প্রকৃতি ও মানুষ এক অখন্ড অস্তিত্ব রূপে প্রতিভাত হয়।

“সমগ্র 888sport alternative linkটিই পৌত্রীকে গল্প বলার ঢঙে পিতামহীর সমগ্র জীবনকে পেছন ফিরে দেখা, তবে তা সময়ের ধারানুক্রম অনুসরণ করে না। হীরামনই ঐ 888sport sign up bonusর প্ররোচক, তবে সব 888sport sign up bonusর মতোই তা এলোমেলোভাবে আসে। পিতামহীর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের গ্রাম, জনপদ, নদী, আকাশ, বিল একে একে মনের ওপর দিয়ে ভেসে যায়। হীরামনই যেন গ্রন্থনার কাজটিও করে। পিতামহী পৌঁছেন তাঁর শৈশবের ঘুঘু ডাকা, তালবন আর বটপাকুড়ঘেরা গ্রাম পারিজাতপুরে। সেখানে পায়রা আর চড়ুইয়ের ওড়াউড়ি এবং লতায় লতায় ঝিঙে ফুল, বান্ধুলী আর তেলাকুচার লাল টুকটুকে ফল ঝোলানো গাছের ঝালর। টুংটাং শব্দ ভাঙা গৃহস্থের আবাস। ফুটন্ত ভাতের তাপমেশানো গন্ধ আর শিশুদের হুল্লোড়। (১৩ পৃষ্ঠা)। এই জীবনের গল্পই 888sport alternative linkটির প্রধান আকর্ষণ।

শৈশবের ঐ শব্দচিত্রমালাই অনিবার্যভাবে পিতামহীকে তাঁর কৈশোরে নিয়ে যায়। তিনি তাঁর মনের আয়নায় এবার দেখতে পান: একটি উত্তর দুয়োরী ঘরের জানালায় ঠেস দিয়ে বই পড়ে এক বালিকা। উঠোনের তারে শুকোতে দেয়া কাপড়। টিয়ে পাখির খাঁচায় ছোলা ভিজিয়ে দিচ্ছে এক এলোকেশী যুবতী। ‘যুবতীর ফর্সা রক্তিম গাল, ওষ্ঠের ওপর বিন্দু বিন্দু ঘাম। বালিকা বই থেকে মুখ তুলে দৃশ্যটি উপভোগ করে। রান্নাঘর থেকে একটি উচ্চহাসির রোল, বালিকাকে উচ্চকিত করে। ঘরের পাঁচটি রমণীর মন ও শরীরের ছন্দ এই মুহূর্তে একসুরে বাঁধা, যেন একটি তারে হাত দিলে সব তারগুলি একসাথে ঝংকৃত হয়।’ মা তার ছোটবেলায় পিতার মাছ ধরার এক ব্যর্থ প্রয়াসের গল্প করছেন। তাই হাস্যরোল। (১৯ পৃষ্ঠা)।

পিতামহী সেই বালিকাকে অনুসরণ করেন যে তার ভাইদের সঙ্গে মাঠেঘাটে খেলা করে বেড়ায়। ধু-ধু মাঠ, দু’চারটি তেঁতুল আর পাকুড় গাছ, আর বাবলা গাছের পানসে ছায়া, কাঁটা বিছানো পথ। তারই মধ্যে দিয়ে ধাবমান কিশোরীর পেছন পেছন পিতামহীর চোখও দৌড়চ্ছে। এবড়ো-খেবড়ো চষাক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে দৌড়তে গিয়ে ঢ্যালায় ঠোক্কর খেয়ে কিশোরীর পা ক্ষতবিক্ষত হয়। তার ভ্রূক্ষেপ নেই। (৪৪ পৃষ্ঠা)

পশ্চিমে বড় দিঘির পাড়ে বিশাল পাকুড়ের ঘন ছায়া। ‘সেই দিঘির বুকে পানিফল পাততাড়ির ফাঁকে ফাঁকে অথৈ কালো জল দুপুরের রোদে হাজার হাজার সোনার ঝলক ফোটায়। কয়েকটি কিশোর কিশোরী ঐ দিঘীতে সাঁতার কাটছে। কালো জলের ভেতর জল ফুঁড়ে ডুবসাঁতার দেয় কিশোরী। তার ঘন চুলের মেঘে জলের তলায় আঁধার ঘনিয়ে আসে। চুলও সাপের মতো হিলহিলিয়ে কিশোরীর পিছু পিছু সাঁতার কাটে। হাত-পা ছোড়া সাঁতারের উদ্যত জলকণা হীরের দ্যুতি ছড়িয়ে আবার জলেই মিশে যায়। (28 পৃষ্ঠা) পিতামহী দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বর্তমানে ফিরে আসেন।

পিতামহীর প্রকৃতি কিন্তু কেবলই সৌন্দর্যময় নয়। ধু-ধু মাঠ… খরার তাপ নিস্তব্ধ দুপুর। হঠাৎ একটি পাখির চ্যাক চ্যাক করে আর্তচিৎকার। একটি বিশাল গোখরো সাপ পাখিটাকে ধরেছে। অনেকে জুটলো, সাপটাকে মারা হলো। পাখিটাও মরে গেল। সাপের বাঁকানো দাঁত পাখির পায়ে বিঁধে আছে। পাখি মুখে সাপটি পড়ে আছে মাটিতে। মাটির মতোই সাপটির রঙ। পাখি আর সাপে, মাটি আর মানুষে এক হয়ে প্রান্তর জুড়ে একটি ছবি তৈরি করল। এখনো সেই ছবিটি তেমনি পড়ে আছে। ‘(২২ পৃষ্ঠা)। প্রায় ফ্রস্টিয়ান এই বর্ণনা এবং এটিই একমাত্র নয় : পাকুড়বেষ্টিত একটি খাড়া তালগাছের মাথায় ছিল পেঁচাদের আবাস। সন্ধ্যার পর হুশ হুশ শব্দে উড়ে যেত তারা মাঠের কোন পাগাড়ে যেখানে মেঠো ইঁদুর ঘরকন্নার ধান যোগাড়ে ব্যস্ত—শিকারী (পেঁচা) ঝাঁপিয়ে পড়তো তখন। তারপর জীবন্ত শিকারের চিক চিক আর্তনাদে ভরে উঠত রাত্রির প্রথম প্রহর।’ (৬১ পৃষ্ঠা)

রাঢ়ভূমির দগ্ধ দুপুরের আরেকটি বর্ণনা : ‘রাঢ়ের দুপুর প্রচণ্ড তাপে ঝলসে যায়। তাপে ফেটে যাওয়া মাটির ফাটলে হতচেতন ব্যাঙ নিস্পন্দ নেতিয়ে থাকে। কাঠফাটা রোদে একলা গাছের ডালে বসে শিস দিয়ে চাতক জল প্রার্থনা করে- ‘ফটিক দাও, ফটিক দাও’। তার কাতর প্রার্থনায় একদিন আকাশ বিহ্বল হয়। বুক হিম করা উত্তুরে ঘনকালো মেঘ জমতে থাকলে ব্যাঙগুলো নড়েচড়ে ওঠে। একটা দমকা বাতাসের ঢেউ আসে প্রথমে, তারপর আর একটা, আর একটা। তারপর শোঁ শোঁ প্রচণ্ড শব্দে ধুলোর ঘূর্ণি উড়িয়ে আসে কালবৈশাখির ঝড়। কালো কালো তালগাছের মাথায় পাতার তলোয়ারের সে কি আস্ফালন। মড় মড় শব্দে ভাঙলো গাছ। বিকট দৈত্যের মত গাছের দেহ পড়লো মাটিতে। মুহূর্তে তলদেশে বড়সড় একটি ডোবা তৈরি হয়ে যায়। মুহুর্মুহু গগনবিদারী বজ্রধ্বনির সঙ্গে বড় বড় ফোঁটায় জলধারা নামে সমস্ত আকাশকে নমিত করে দিয়ে। কোটি কোটি তীরের মত তীব্রবৃষ্টি বিধে যায় মাটির বুকে… বাড়িঘরের চাল উড়িয়ে, গাছ ভেঙে, সমস্ত প্রকৃতিকে মথিত করে ছরকুটে দিয়ে ফিরে যায় ভয়ঙ্কর এক ধ্বংস। দুরন্ত আকাশ শান্ত হয়। আবার সূর্য উঠলে মেঘভাঙা রোদ্দুর সোনার চাদর বিছিয়ে দেয় থরে থরে। সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির অসুন্দর এক লাবণ্যে পূর্ণ হয়ে ওঠে। বুঝি সুরলোকের আলো অসুন্দরের কালিমা ধুয়েমুছে দেয়। ঝড়ে উপড়ে যাওয়া বিশাল তেঁতুল গাছটির ডালপালায় পাড়ার ছেলেমেয়েরা লুকোচুরি খেলতে জুটে যায়। তাদের কলরবের মধ্যে উল্লাস ফেটে পড়ে। এক কিশোরী (ভূ) লুণ্ঠিত মগডালে বসে পা দোলায় আর কোমল আলোয় ঝড়ভাঙা প্রদীপ্ত বৈকালকে দেখে।’ (২৫ পৃষ্ঠা)

পেছন পেছন আসে বর্ষাকাল : ‘বর্ষাকালে মাঠে মাঠে ধান বোনা হয়। সারা মাঠ জুড়ে হৈ চৈ। ধানের জমিতে এখন পা ডোবানো ঘোলা পানি। গরু মোষের লাঙলের ফাল কৃষকের বলিষ্ঠ হাতের চাপে মাটির বুক চিরে চিরে জমির একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত ফালা ফালা করে চিরে চলে যায়। কৃষকের লোনা ঘামে গামছা ভিজে যায়। কপাল গড়িয়ে চোখে পড়ে ঘাম। মাটির বুকে হেঁট হয়ে তারা সারাদিন ধানের চারা পোঁতে। কব্জি ডোবানোর ছন্দময় শব্দ সারা মাঠে ছড়িয়ে বুঝি আকাশকেও নাচিয়ে দেয়। আকাশ মেঘে মেঘে নেমে আসে তাদের পিঠের ওপরে কালামেঘ, ধলামেঘ, তুলোট মেঘ, ওলট মেঘ, পাঁশুট্টে মেঘ, সচল মেঘ, অচল মেঘ, আনকা মেঘ, ধুলোট মেঘ পৌত্রী বলে এতো মেঘ, কই আমি তো দেখতে পাই না? শহরের আকাশ ছোট সোনা, সব মেঘ তাই তুমি দেখনি। আরো কত রকমের মেঘ আছে … বলছি তো সোনা বলছি। তুমি কি পাকা ধানের গন্ধ জানো? তুমি দিগন্তছোঁয়া ধানক্ষেতে বাতাসের ঢেউ দেখেছো? ধানসোনার চূড়া দেখেছো? সোনালী খড়ের মরাই দেখেছো? তুমি ধানগাছকে গর্ভবতী হতে দেখেছো? তবে তুমি কি জানো? (২৮ পৃষ্ঠা) না পৌত্রী এসবের কিছুই দেখেনি, যেমন দেখেননি এই 888sport alternative linkের অনেক পাঠক-পাঠিকা।

পিতামহী শীতের শুকতারা ওঠা ভোরের একটি ছবিও দেখতে পান যেন গত জনমের ফেলে আসা ছবি। দপদপ করে জ্বলে শুকতারা। শস্য তুলে নেয়া শূন্য মাঠ চারি পাশে ছড়িয়ে আছে দিগন্তের কাছাকাছি পর্যন্ত। পরিজন পরিবেষ্টিত বালিকা কুয়াশামাখা শীতের এই ভোরে ভিনগাঁয়ে যাত্রা শুনে বাড়িতে ফিরছে। ভ্রাতারা দেখায়, ঐ দেখ শুকতারা, দেখেছিস কতবড় তারা জ্বলছে দপদপ করে?

ধক ধক করে জ্বলছে। যাত্রার সখীদের কোমর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচের গানটি বালিকার পিছু ছাড়ে না- আকাশ ও আঁধার অধরে অধরে কি তার অর্থ বালিকা বুঝতে পারে না, তবু ভাল লাগে। শুকতারাটি নিভে আসে; শীতের সকাল ফুটে ওঠে আলপথে, ঘাসের মাথায় শিশিরের বিন্দুতে। ভোরের শিশির আর হিমহিম সকাল তাকে নেশাতে জড়ায়। পিতামহী নড়েচড়ে বসেন কিন্তু তাঁর ভেতরের বালিকাটি অনড় থাকে।’ (২৬ পৃষ্ঠা)

কিন্তু শুধুমাত্র নিসর্গ নয়, তার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো ছড়ানো জনপদ এবং তার মধ্যে যাপিত মানুষের জীবনকেও পিতামহী গভীর মমতার সঙ্গে অবলোকন করেন। পিতামহীর নিমগ্ন’ চিত্তে মাঠের পর মাঠ, গ্রামের পর গ্রামের মিছিল চলতে থাকে। নিগন, ক্ষীরগ্রাম, কুরুম্বো, কৈথন, ইটে, পলশনা, গীত গাঁ, সিলুট ভাটপাড়া, কেষ্ট পাটি, শাকোনো, মুরাতপুর, বলগোদা, ঊষা পাটনা, মঙ্গলকোট। আর নদীগুলো? খড়ি, অজয়, কুনুর কাটোয়ার গঙ্গা, গঙ্গার ইলিশ, বনকাবাসীর বৈষ্ণবদের আখড়া, আখড়ায় কীর্তন, ঢোল, করতাল, খঞ্জনি, গলায় কাঁটির মালা জড়ানো বিনু-বৈষ্ণব-তার গুপিযন্ত্রের বিভোল আওয়াজ- গাবগুবা গুব, সিনেমার ছায়াবতী কন্যার চটকদার শাড়ির আঁচলের মতন ধীরে ধীরে ছবিগুলি মেলে দেয়। করোটির ভিতরে বসে কে এমন হারিয়ে যাওয়া জগতের এই খেলা দেখায়? (৩৫ পৃষ্ঠা) ভেবে ভেবে পিতামহী কূল পান না।

খঞ্জনি বাজিয়ে বৈষ্ণবী উমাশশী দিগন্তস্পর্শী লালমাটির রাস্তা পেরোয়। তার কিন্নরীকণ্ঠ কুয়াশা বিস্তার করে। উমাশশী সারাদিন ঘুরে ঘুরে আখড়ায় ফেরে সন্ধ্যায়। মুষ্টিভিক্ষার চাল ফুটতে থাকে উনুনে। গুনগুন রাধাকৃষ্ণের ভজনা চলে। বেড়ার ধারে সন্ধ্যাকালে সেই সুরের মোহে আপন ভোলা যে (মেয়েটি) চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে তার ফ্রকের ঝালরে ঝিরঝিরিয়ে বাতাস কাঁপে। উমাশশীর সুরটি গলায় তোলার বাসনায় বালিকা বেড়া ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। উমাশশী তাকে ডেকে নেয়। বালিকা অজানিতে কখন গলা মেলায় ‘কে বলে গো তোমায় কালো বরণ/কালারূপে মন মজেছে; রাঢ়ভূমির উদাসীন বাউরী বাতাস বয়ে যায় হু হু করে।’ (৩৪ পৃষ্ঠা)

যুগাদ্যার মেলার কথাও পিতামহীর মনে পড়ে, ক্ষীরগ্রামের যুগাদ্যার মেলা। মেলা থেকে বাবা তার জন্য রঙিন কুলো, কাঠের কৃষ্ণ, নাগরী মা পুতুল, একটা বেলুন লাগানো বাঁশি বাজালেই বেলুন ফুলে ওঠে, বাঁশির শব্দ থামলেই বেলুনও চুপসে এতটুকু। যুগাদ্যার মেলায় মানুষ মহিষবলি দেখতে যায় পূজা স্থানে। ক্ষীর দিঘির পাড়ে বলির ছাগলগুলো কালো কালো বড়বড় পোকার মতো কিলবিল করে। তাকে তোলে ধুনোর ধোঁয়ায় আর রোদের আতসে জমে ওঠে মহিষবলির অনুষ্ঠান। উদোম গায়ে পুরোহিত পুরোদমে মন্ত্র ছড়ায়, খাড়া হাতে যূপকাষ্ঠের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে ঘাতক, এক কোপে নামাতে হবে মহিষের মাথা।’ প্রাণীবধের কি সেই আয়োজন। আহা, আহা! পৌত্রী সেই আহাজারি শুনে হাসে, “বারে আমরা যে কোরবানী দি তার বেলা?’ (৩৬ পৃষ্ঠা)

পিতামহীর স্কুলের বান্ধবীরা ভিড় করে আসে মনের আয়নায়। তার বালিকা বয়স ভেসে ভেসে স্কুলের পথে যায়। স্কুলে যাবার পথটি গাছে গাছে সবুজ। পাশে ধোপা-পুকুরটির পাড়ে কাপড় মেলে দেওয়া আছে দড়িতে, বাতাসে নৌকোর পালের মতো পেট ফুলিয়ে নদীর বিভ্রম তোলে। বালিকারা নাচতে নাচতে স্কুলের পথ মাড়ায়। আবার বিকেলে | গানে গানে বাড়িতে ফেরার পথটি ভরে দেয়। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির মতো মেয়েরা ঘরে ফেরে। বন্যা রায়, শ্যামলী দত্ত, রঞ্জনা সেন, সবিতা ভট্টাচার্য, আর সেই শিবানী—একটু খুঁড়িয়ে হাঁটতো যে মেয়েটি। তার পড়ায় মন বসে না, মন ভেসে যেতে থাকে বাড়ির লোনো কুকুরটির জন্য, খেজুর গাছের হলুদ খেজুর কাঁদির জন্য, না কি তালবানে ঝাঁ পিপি আর শালিকের লড়াই দেখার জন্য? বালিকা শহরের জীবনকে কিছুতেই ভালোবাসতে পারে না। কাঁদতে কাঁদতে একদিন দিশাহারা একা একা পালিয়ে এসেছে গ্রামের বাড়িতে, মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার মাথাভরা চুলের রাশি এলিয়ে দেয়। বারো বছরের বালিকার পিঠভাঙা চুলের রাশি ছড়িয়ে পড়ে জানুদেশ পর্যন্ত। কালো মেঘের মত চুল ঝুলে থাকে বালিকার মুখের দু’পাশে।’ (৩৯ পৃ:) এমনি সব দ্রুত হাতে আঁকা ছবির পর ছবি ইম্প্রেশনিস্ট পেইন্টিংয়ের মতো মিশ্রিত রঙের আলোয় ছায়ায়। 888sport alternative linkের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্বাচিত বর্ণনার এই পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে লেখিকা যেন একটি সেন্টিমেন্টাল ফেমিনিস্ট পথের পাঁচালি রচনা করছেন। কিন্তু এহ বাহ্য। পিতামহী তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়টির মুখোমুখি হন, হতেই হবে : তাঁর বিয়ের অভিজ্ঞতা।

সন্ধ্যায় গ্রামবালিকারা ঢোলবাদ্য অনেক রাত অবধি বিয়ের গান করে। সুরে সুরে ভরে যায়। যৌবনবতী কন্যার আসন্ন বাসর গীতধুনি রাত্রির কোমল আঁধারকে ভেদ করে স্বপ্ন বুনতে বুনতে চলে। অথৈ কালো আকাশের পর্দায় অসংখ্য তারার মতো উজ্জ্বল বুটিদার জামদানি শাড়ির আঁচলে 888sport app কন্যাটি লজ্জারুণ কোমল পেলবতায় আপ্লুত। কন্যাটির স্বপ্নে তার দুখানি উষ্ণ ঠোঁট ব্যাকুল প্রার্থনায় মাগে সুখের, শান্তির, প্রেমের। প্রেম আকাঙ্ক্ষায় ঊর্ধ্বমুখী তরুণী তখন চামেলী আর ঝুমকো লতার নীলকুঞ্জে গন্ধবিভোর দোলনায় একলা দোল খায়। যার চোখ তাকে অনুসরণ করে তার আবছা মূর্তির নবীনকান্তি তাকে যেন ডাক দিয়ে যায় পৃথিবীর বাইরে আর এক জগতে যেখানে শুধু দুজনের বিহার, দুজনের কথা-কথা আর কথা, যেন সে নিবেদনের শেষ নেই, সে নিবেদনের পরিণতি নেই। ভালবাসায় ভালবাসায় জীবনের আর এক রূপ কানায় কানায় ভরে যাবে। (৩১ পৃ:) কিন্তু বাস্তবে কি তাই ঘটল?’

আবছা মূর্তি এখন ঝকঝকে আলোয় দৃশ্যমান হয়। ‘সে দৃপ্ত পায়ে এসে দোলনাটি থামিয়ে দেয়। তার পেশীর দৃঢ় প্রক্ষেপণ জেগে ওঠে কণ্ঠের দু’পাশে। তরুণীর উচ্ছল চোখ তাকে আমন্ত্রণ জানায় পাশে যেতে, পাশে জায়গা করে দেয়। সে বসে না। লতায় ফুটে থাকা ফুলগুলি একে একে সে ছেঁড়ে, একটি ফুলেরও সে ঘ্রাণ নেয় না। তরুণী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তারপর ধীরে ধীরে তার বিহ্বল চোখের তারায় কুয়াশা ঘনিয়ে আসে। তাঁর পাঁজর ভেদ করে দুকূলপ্লাবী রক্তস্রোত বেরিয়ে আসতে চায়, কিন্তু কার্যত কিছুই হয় না, সে নিস্পন্দ বসে থাকে।’ (৩২ পৃষ্ঠা)

888sport alternative linkের শুরুতেই ওই সৌন্দর্য হননকারী বাসর রাত্রির কণ্টকময় শয্যার 888sport sign up bonus দেখা দিয়ে গেছে, মেয়েটিকে তখন আমরা ঠিক চিনতে পারিনি। ‘দরজাটি মেলে ধরে ধীরে ধীরে বাইরে এসে যে দাঁড়ায় তার ষোড়শী বয়সের চুল ঝেপে থাকে মুখের দু’পাশে। একটু আগে পূর্ণিমার বাসর রাতে বন্দনাহীন, উপাচারহীন, 888sport sign up bonusহীন অন্ধকারে দ্বন্দ্ববহুল মৃত্যু হলো একটা কুমারীর। ধর্ষিতা বালিকা এখন বারান্দার খুঁটিতে হেলান দিয়ে শ্রাবণের পূর্ণ চাঁদ দেখে। নীলের গোলকে ঝলকে ঝলকে পৃথিবীর সব রঙ ঝরে পড়ে। বালিকা চোখের জলে সেই রঙ গুলে নেয়। তার ঠোঁটে মুখে সেই রঙ লেগে থাকে আজীবন, কুয়াশায় তা ম্রিয়মাণ হয় না, শতবর্ষার জলেও ধুয়ে যায় না। তীব্র গনগনে আগুনে জীবনটা ইটের ভাটার মত রন্ধ্রে রন্ধ্রে পুড়ে যেতে থাকে, থাকে শুধু ভস্মরাশি।’ (১২ পৃষ্ঠা)

কিন্তু পিতামহী সান্ত্বনাহীন রোদন দিয়ে আবিষ্কার করেন ভালবাসার আকাঙ্ক্ষা, বাসনার হাহাকার, তাই বলে অবসিত হয়ে যায় না।’ পাঁজরের হাড়ে হাড়ে জড়িয়ে থাকে এক ‘কাঙাল অভীপ্সা’, রক্তের সঙ্গে মিশে থাকে ভালবাসার অনুসঙ্গ, এক নাছোড় আর্তি সারা শরীরময়, হিসেবহীন দিনরাত্রির পল অনুপলের চাকায় ঘূর্ণিপাক খায় একটি নির্মম দাহ’ (৪১ পৃষ্ঠা)। আপন সন্তানদের মধ্যে সারাজীবন তিনি, সেই ভালবাসার বিকল্প খোঁজেন। কিন্তু তারা আছে ‘যে যার কোটরে, তৃপ্তির বা অতৃপ্তির, সুখের বা দুখের’। দেবশিশুর মতো সন্তানগণ ‘একই গৃহে বাস করেও তারা আজ অচেনা। তাদের অবয়বে মিশে থাকে দূরে চলে যাওয়া ভিন্ন এক জগতের গন্ধ।’ (৩৪ পৃষ্ঠা) কোথায় যে তারা আজ? পিতামহী তাদের খোঁজ পান না। যে পৌত্রীকে লক্ষ্য করে গভীর মমতায় পিতামহী তাঁর জীবনের গল্প বলেন, তার মনেই কি পিতামহীর বেদনা কোন অনুরণন তোলে? তিনি পৌত্রীর মধ্যে সান্ত্বনার, সহমর্মিতার হাত খোঁজেন : কই কোথায় তুই, চলে যাচ্ছিস কোথায়? পৌত্রীর হাতে “পিতামহীর স্থলিত হাত তখন একটি হাতমাত্র, যে হাতের কোন বার্তাই পৌত্রীর মনে পৌঁছায় না। সে পিতামহীর হাত ছেড়ে দেয়। (৩৩ পৃষ্ঠা) পৌত্রী অনুযোগই করে যে সে পিতামহীর কল্পনার জগৎটি দেখতে পায় না। পিতামহী সান্ত্বনা খোঁজেন: ‘তোমার ভেতরের চোখ এখনো ফোটেনি যে। … একদিন দেখবে একটা পুরোনো গন্ধে বা গানের সুরে হঠাৎ তোমার ভেতরের চোখ ফুটবে তখন তোমার ভেতরে গুটিয়ে রাখা সুতোর লাটাই হুড়হুড় করে পাকে পাকে খুলতে থাকবে, ফেলে আসা জগৎ তোমার ঘরের ভেতর ঢুকে যাবে। তখন তুমি দেখবে তোমার বর্তমান এবং তোমার বয়স মুছে গিয়ে তুমি তোমার অতীত জীবনের মধ্যে ঢুকে গেছো মুহূর্তের চেয়ে কম সময়ে।’ (২১ পৃষ্ঠা)

পিতামহী পৌত্রীকে বলেন বটে, কিন্তু অনিবার্য অথচ নিরুত্তর এক জিজ্ঞাসায় তিনি বিদ্ধ হন: করোটির ভেতর বসে কে দেখায় এই সব ছবি? সেকি তারই অন্তর্গত অন্য এক মওবা? সে কি আমারই মধ্যে একজন অচেনা মানুষ যে আমি তবু আমি নয়?’ সে কি এই হাহাকারদীর্ণ জীবনের এক উদাসীন, নিরপেক্ষ, বিযুক্ত দর্শক। (৪৯ পৃ:) কীইবা এই চিত্রমালার অর্থ?

‘জীবনকে তিনিই কি স্পষ্ট করে দেখতে পেয়েছেন? কেউ কি পায়? জীবন তাঁকে কিছু বা দেখিয়েছে বাকিটা অনেক দূরের এক অন্ধকারে। সিকিখানা জীবন জেগে আছে আলোয়, বাকি সব আলো-আঁধারির ও অনিশ্চয়তার আড়ালে গোপনচারী। (১৯ পৃষ্ঠা) কে বলবে জীবন কেমন? (৬২ পৃ:) এই যে আলো-আঁধারির অনিশ্চয়তার আড়ালে গোপনচারী জীবন তাই নিয়েই কি একাকী খেলাঘরের অশেষ জিজ্ঞাসা’? এই কি তবে চিরায়ত মানব-মানবীর হাজার বছর ধরে ঘর খোঁজা?

তিনিও কি খোঁজেননি? ‘চাঁদহীন জোনাকীজ্বলা একরাতের অভিসারে নিমফুলের গন্ধকে সঙ্গে করে যে ঘরে যাবো বলে তিনি বেরিয়েছিলেন সেই ঘর যে কোথায় আজো তার ঠিকানা জানা হলো না। পিতামহী এখনো হাতড়িয়ে বেড়ান সেই ঘরটির শীতল মেঝে, মোমবাতির কোমল আলোয় চিত্রিত দেওয়াল, যার খোলা দরজার পাশে দণ্ডায়মান জ্যোছনার মতো একজনের শরীর। (৩৩ পৃ:) কে সে? সে কি তবে ঐ ‘ব্যাকুল বিবাগী পথিক’ যার কাছে পিতামহীর অন্তর্জগৎ চুরি হয়ে গেছে? এরই বিম্বিত ছায়া কি তাঁর চেতনায় বারবার ফিরে ফিরে আসে, হারানো সুরের কুহক ছড়ায়? সে কি কুনুর নদীর ধারের সেই ছিপছিপে তরুণ যার চোখের তারায় সমস্ত আকাশের নীলিমা ঝিম ধরে থাকে? (৯ পৃষ্ঠা) যার বাঁশি নিরন্তর বাজতেই থাকে এবং যার সুরে তরুণীর হৃদয় স্থলপদ্মের মতো ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে। পিঠে বেণী ঝুলিয়ে, গাছ কোমর বাঁধা শাড়ি জড়ানো তরুণীটি নতজানু সমর্পণে পুষ্পাঞ্জলী রাখে বংশীবাদকের পায়ে। ‘শরতের দুপুর কী আনন্দে যে ধ্বনিত হয়ে ওঠে পাতার মর্মরে, কাশবনের শিষে। বংশীবাদকের দৃষ্টি ছুঁয়ে থাকে কৃষ্ণাঙ্গীর চোখ। তারপর তারা দুজনে রেলপথের সড়ক ধরে হেঁটে চলে যায়— সোজা। রেলপথের দুটি পাটি পাশাপাশি, সমান্তরাল দিগন্ত পেরিয়ে, কোথাও মেলে না। (২৪ পৃষ্ঠা) পিতামহী মুহূর্তের বিভ্রমে ছবিটি ছুঁতে চান, কিন্তু ‘হাতখানি বাড়াতেই কোথাও কিছুই থাকে না, শুধু কিছু স্বপ্ন হেসে হেসে চলে যায়।’

এখন রাত্রির নিস্তব্ধ অন্ধকারে বারান্দায় পিতামহী চুপ করে বসে থাকেন। ‘ভিতরে কোথায় যেন সাত সমুদ্র মথিত হয়। ঢেউ ভাঙার শব্দে সব কথা বাতাস হয়ে উড়ে যায়- একজনের শার্ট উদ্দাম বাতাসে ফুলে ওঠে, একজনের শাড়ির আঁচলে কালিন্দীর জল উথলে ওঠে। ঘরের সীমানা ভেঙে প্লাবনে ভেসে যেতে থাকে পৃথিবী। পিতামহীর নোঙর ভাঙে, পিতামহী একলা ভাসেন অগাধ জলে। কূলকিনারাহীন, সঙ্গীহীন পাথারে।’ কৈশোর প্রেমের যে ডাক, সে অধরা মাধুরীর ডাক। পিতামহী জানেন অগম্য সে স্থান। কেই বা পৌঁছায় সেখানে? কেউ না, কেউ না। পিতামহীর শরীর কাঁপে। প্রাণপণ দু’হাতে ঠেলে রাখেন রুদ্ধ দুয়ার- না না না।”

পিতামহীর জীবন এখন শুধুই রোমন্থন, শুধুই ক্রন্দন আর পিছু হেঁটে ধাবমান সময়কে ধরতে চাওয়া সময় এই 888sport alternative linkের একটি প্রধান বিষয়। সময় ধাবমান, আবার সেই সময়ই 888sport sign up bonusর জগতে মনে হয় ছবির। সময়কে পিতামহীর কখনো মনে হয় অন্ধ, কখনো বধির। কখনো নৃত্যপরায়ণা। প্রাণের মাঝে দুঃখে সুখে শঙ্কাতে কালের মন্দিরা বেজে চলে। সময়কে ধরা যায় না। কারণ মানুষতো কেবল মন নয়, তার আছে শরীর, যে শরীর সময়ের প্রহারে দীর্ণ জীর্ণ হয়। সময়ের গতির সঙ্গে পিতামহীর শরীর আজ আর পেরে ওঠে না। তাঁর শরীরে তমসাঘন অজস্র ফাটল’। পিতামহী চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে চান, কিন্তু চেয়ারটা তাকে কিছুতেই ছাড়ে না। জগদ্দল পাথরের মত ভারী জীবন তাকে দু’হাতে আটকে রাখে।’ (১০ পৃষ্ঠা) তাঁর চারপাশ দিয়ে জীবনের স্রোত বয়ে চলে। নিজের ‘ধর্ষিত জীবনের দিকে তাকিয়ে পিতামহীর মনে হয় ফাটলের ভিতরে রৌদ্রহীন লতার মতো ফ্যাকাশে রক্তহীন কদর্য

ল্যাকপেকে ন্যাতানো জীবন, ছুঁয়ে থাকে বুঝি একটুখানি মাটি, একটুখানি ছায়া, আর একটুখানি তাপকে।’ (৬৩ পৃষ্ঠা)

কিন্তু কে তিনি, কি তিনি-তা তো আজো জানা হলো না। খোঁজারও শেষ হলো না। তাঁর বুদ্ধি অবশ্য বলে, খুঁজতে হবে কেন? ‘সবই তো আছে আপন দেহের অণু-পরমাণুর গোপন রহস্যে, আপন রক্তচক্রের অবিরাম স্রোতের মধ্যে। তারাই তো জানাবে কে তুমি, কি তুমি। (80 পৃষ্ঠা) পিতামহী এখন আপন শরীরে পৃথিবীর সমস্ত পিতামহীকে আবিষ্কার করেন। (৬৩ পৃষ্ঠা)।

কিন্তু নিঃসঙ্গতার হাত থেকে মুক্তি মেলে কই? দিকে দিকে গান বেজে উঠলেও তাঁর একাকীত্বে এতটুকু চিড় ধরে না। … কোথাও কেউ নেই। একা একেবারে একা, নিঃস্ব রিক্ত।’ (৪১ পৃ:)

888sport alternative link ঠিক এভাবে শেষ হয়নি। আমি 888sport alternative linkের বক্তব্যটি সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেওয়ার জন্য যে ভাবে উদ্ধৃতি চয়ন করেছি 888sport alternative linkে সেই ধারাক্রমে ঐ সব ভাবনা আবির্ভূত হয়নি। এই 888sport alternative link সর্বজ্ঞ কথক কর্তৃক বর্ণিত চেতনা প্রবাহের 888sport alternative link। চেতনা প্রবাহটিই এখানে প্রধান প্রকরণ। ফলত চেতনার প্রবাহ যেমন মনের ওপর দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন অসমৃতভাবে বইতে থাকে যার শুরু নেই, শেষ নেই, নেই কাহিনী বলার দায় বা আনন্তর্যের তাড়না, ঠিক তেমনি এ 888sport alternative linkেরও প্লটের বাঁধুনি বা যৌক্তিক পরিসমাপ্তি হয় না। তা ছাড়া অন্যতর তাত্ত্বিক প্রশ্নও তোলা যায়। এটি মনোজগতের 888sport alternative link। মন যতটা যুক্তিক্ষম, ততটা যুক্তিশাসিত নয়। তাছাড়া মনোজগতের কার্যকারণ শৃঙ্খলা সম্পর্কেও কোনো ঐকমত্যে তাত্ত্বিকরা পৌঁছুতে পারেননি। আবার অন্যদিকে 888sport alternative linkমাত্রই নির্মিত ও কৃত্রিম—এমনকি এই 888sport alternative linkও। অন্যথায় লেখিকা তাঁর বিষয়ের উপযোগী যে অনবদ্য ভাষা তৈরি করেছেন তা সযত্নকৃত নির্মাণ ছাড়া সম্ভবপর নয়। পিতামহীর চেতনা নির্মাণে লেখিকা যে, বর্ণ, গন্ধ ও ধ্বনিসূচক শব্দের সমাহার করেছেন তা বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মতো। কিছু উদাহরণ নেওয়া যেতে পারে। যথা-সর্বজয়া ফুল বা তেলাকুচার ফলের টুকটুকে লাল, সর্ষে বা তিপল্লার হলুদ, নুইনী শাকের গোলাপি ঠোঁট স্বর্ণচাপার গুচ্ছ, বিকেলের কমলা রোদ, বহুবর্ণ প্রজাপতি, ময়ূরের পেখমের মতো আঁচল, কাশবনের মতো ধপধপে চুল, রূপালি মাছ, শিশির ভেজা ঘাসে হীরকের বিচ্ছুরণ ইত্যাদি। তেমনি গন্ধবাচক শব্দের মধ্যে আছে, ভেজা খড়ের গন্ধ, কাগজী লেবুর বা ঝরা কামিনীর গন্ধ, সন্ধ্যার চুলে নিমফুলের গন্ধ, ফুটন্ত ভাতের গন্ধ এবং সর্বোপরি সদ্যোজাত তপ্ত শিশুর গন্ধ সবই লেখিকা আমাদের লক্ষগোচর করেন। 888sport alternative linkটি ধ্বনিময়ও বটে: শালবনে বাতাসের স্বনন বা নুপূরের মতো পাতাদের মর্মরধ্বনি যেমন শুনতে পাই, তেমনই পায়ের নিচে ধানকাটা নাড়ার মড় মড় করা আওয়াজও আমাদের কানে আসে। তালবনে ঝাঁ পিপি আর চড়ুইদের কিচিরমিচিরের সঙ্গে মিশে যায় রক্তকরবির ঝাড়ে মৌমাছিদের ঝাপটা। পাষাণ মেঝের ওপরে চলার খসখস আর কাচের চুড়ির মুড়মুড়িয়ে ভেঙে যাওয়ার মতো অতিশয় মৃদুশব্দ যেমন আছে তেমনি আছে কাঁসার থালা পড়ে যাওয়ার ঝানবান বা ডিম ভেঙে যাওয়া পাখির আর্তনাদের মতো তীব্র তীক্ষ্ণ শব্দ। এছাড়াও বৃষ্টির বামবাম, কাশবনের শিষ, সন্ধ্যার পেঁচার উড়ে যাওয়ার হুশহুশ প্রভৃতি বিচিত্র শব্দের একটি দীর্ঘ তালিকা তৈরি করা যায়। কিন্তু এই যে বর্ণ-গন্ধ ও ধ্বনির একটি বিচিত্র অনুভববেদ্য জগৎ তৈরি হয়েছে একি নিতান্তই আপতিক ও তাৎপর্যহীন? মোটেও তা নয়। প্রথমত এ সমস্ত পিতামহীর চেতনার জগৎটিই নির্মাণ করে না এগুলো তাঁর আসক্তিরও দ্যোতক। এ সমস্তই পিতামহীর জীবনে অর্থারোপ করে। লেখিকার উদ্দিষ্ট কিন্তু পাঠকের মন এবং তার প্রতিক্রিয়া। লেখিকা যে চিত্ররূপময়, বর্ণগন্ধের জগৎটি তৈরি করেছেন তা পাঠকের জন্যও আবেগসঞ্চারী। এর সঙ্গে যৌক্তিকতার কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। ভাষা শুধু যুক্তিই বহন করে না, তা আবেগও বহন করে। সঙ্গত কারণেই কার্যকারণের বাঁধুনি এই 888sport alternative linkে শিথিল। কিন্তু তার স্থান অধিকার করেছে সময়ের প্রবাহ। সময় সংক্রান্ত অভিজ্ঞতাই এ 888sport alternative linkে অন্তঃসূত্রের মতো কাজ করেছে। একদিক থেকে দেখলে এটিকে সময় সংক্রান্ত একটি 888sport alternative link বলেও বর্ণনা করা যায় এবং সময়-ভাবনা মাত্রই ভয়ানক আবেগসঞ্চারী। 888sport alternative linkটি সম্পর্কে কি অনুযোগ করার মতো কিছু নেই? আছে, 888sport alternative linkটিকে আমার বড়ো বেশি নিরোধ কণ্টকিত মনে হয়েছে। লেখিকার মনের নিরোধ? পিতামহীর স্বামী বা ঐ বাঁশিওয়ালা তরুণ সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানতে পারি না। আমরা তাদের মুখ দেখতে পাই না, এমনকি তাদের নামও জানান না লেখিকা। এই দুটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে দুটি একটি প্রতীকী ঘটনা ছাড়া কোনো দৈনন্দিন জীবনের বৃত্তে তাদের দেখতে পাই না। ছেলেমেয়েদের চিত্রণের ক্ষেত্রেও প্রায় একই রকম। টেনিস র‍্যাকেট হাতে জ্যেষ্ঠ ছেলে, হারমোনিয়াম ফেলে মেয়ে, হামাগুড়ি দেয়া কনিষ্ঠ পুত্র এবং জিন্স-টি-শার্ট পরা পৌত্রী-এছাড়া এদের সম্পর্কেও খুব একটা কিছু জানা হয় না। আর একটু ডিটেলসে গেলে পারতেন। ফলত যদিও আমরা পিতামহীর আবেগের তীব্রতা অনুভব করি কিন্তু তার উৎস সম্পর্কে একটা অস্পষ্টতা থেকেই যায়। কেন এই নিরোধ? তবে কি এটি আত্মজৈবনিক রচনা? সে ক্ষেত্রে বাস্তব জীবনের দায় আর 888sport live chatের নান্দনিক দায় এই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ অনুস্যূত হয়ে আছে এখানে এবং লেখিকা বাস্তবের দায়ের কাছে নমিত হয়েছেন। এতদসত্ত্বেও 888sport alternative linkটিতে আমরা জীবনের সমগ্রতার চিত্র পাই, যেমন পাই ব্যক্তির গভীরে অবলোকন। সর্বোপরি আছে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে এক গভীর দার্শনিক প্রেক্ষণ যা বাংলা 888sport alternative linkে আজকাল দুর্লভ। এটি একটি সাধারণ 888sport alternative link নয়, এটি ২০০৩-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য 888sport alternative link।