জীবন ও 888sport live footballের আন্তরিক মানুষ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

লেখকের সঙ্গে প্রকৃত পরিচয় ঘটে তাঁর লেখার মাধ্যমেই। যদ্দুর মনে পড়ে আরো অনেকের মতো সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় আশির দশকের শেষে সংবাদ-এর 888sport live football পাতায় ছাপা
888sport live chat-888sport live footballবিষয়ক কলাম ‘অলস দিনের হাওয়া’ পাঠের মাধ্যমে। সাধারণ ভাষায় বিদেশি 888sport live football ও সমাজ ভাবনাসহ বিচিত্র বিষয়ে লিখতেন তিনি। তারপর নব্বইয়ের দশকে। যখন আমরা নবীন লেখক। তাঁর নাম আরো আলোচিত হয়েছে যখন তিনি ব্রাত্য রাইসুর সঙ্গে যৌথভাবে যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক 888sport alternative link লিখতে শুরু করলেন। কেউ কেউ ছ্যাঁ ছ্যাঁ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি রাইসুর মতো ‘ছন্নছাড়া’ তরুণের সঙ্গে এমন একটা লেখা শুরু করতে পারলেন! কেউ কেউ আবার একে ইতিবাচকভাবেও নিলেন। বললেন, নাক উঁচু প্রবীণদের তথাকথিত গাম্ভীর্য ভেঙে সৈয়দ মনজুর প্রথাবিরোধী সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চাইছেন। মোট কথা পাঠক ও বোদ্ধা মহলে বিষয়টি তখন বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সব অর্থেই সেটি ছিল একটি ব্যতিক্রমী নিরীক্ষা। পরে আর কেউ এমন চর্চা করেছেন বলে শোনা যায়নি।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ হয়েছে অনেক পরে। এর আগে তাঁর কিছু ছোটগল্প পড়েছি ছাড়া ছাড়া ভাবে। দেখেছি, তাঁর গল্পের বিষয়বস্তু বিচিত্র। মনে হয়েছে, কথকের ভঙ্গিতে কিছুটা অপ্রচলিত প্রথায় তিনি সরস বাক্যে সুন্দর করে গল্প বলেন। সমালোচকরা তাঁর গল্পে জাদুবাস্তবতার ছোঁয়াও খুঁজে পেয়েছেন। আমাদের মনে হতো, তিনি আলাদা রকমের গল্প লিখতে চান। সময় এবং সমাজের খণ্ড খণ্ড চিত্র তাঁর গল্পে চমৎকারভাবে উঠে আসত। গল্পকথকের মতোই যেন বেশ আয়োজন করে গল্প বলতে বসতেন তিনি। গল্পে বর্ণনার মাঝে মাঝেই অদৃশ্য শ্রোতাদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন চলত। গ্রামবাংলার প্রাচীন কিচ্ছাকারদের গল্প বলার এই শৈলীটি যে তাঁর পছন্দ ছিল, সেটি তিনি বিভিন্ন সময় তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন।

‘আমি গল্প লেখার সঙ্গে গল্প কথনের ঐতিহ্যটা মেলাই। আমার গল্পে পাঠক সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। আমি সর্বজ্ঞ হলেও খুবই দ্বিধান্বিত।’ (গল্পপাঠ)

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কাছে জীবন গুরুত্বপূর্ণ। 888sport live footballে বৃহত্তর মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি আঁকতে চাইতেন তিনি। জীবন থেকে নেওয়া প্রতি মুহূর্তের অভিজ্ঞতা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইতেন; যেন পাঠক বিচ্ছিন্নতা বোধ না করে গল্পের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে।

‘আমার বেশিরভাগ গল্প জীবন থেকে নেয়া। বাস্তবটা মুক্তোর ভেতরে থাকা বালির মতো। গ্রেন অফ ট্রুথ; যা না থাকলে মুক্তো মুক্তো হয় না। আমার সব সময়ই জীবন পাঠ করতে ভাল লাগতো। যখন গল্প লিখতে শুরু করলাম তখন জীবন পাঠ আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো।’ (গল্পপাঠ)

তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি জীবনকে দেখি একেবারে ভেতর থেকে। মানুষকে দেখি তার সত্তার সব শর্ত মেনে। প্রাত্যহিকতার সমগ্রতায়, যেখানে প্রতিটি মানুষের উদ্ভাস হয় ভিন্নতা নিয়ে, আমার ভাষায় অকারণ জটিলতা নেই। যেহেতু নিরীক্ষাধর্মী, প্রকাশ সচেতন, লেখককেন্দ্রিক 888sport live footballের পরিবর্তে বলার ঐতিহ্যে আমার আস্থা বেশি।’ (গল্পপাঠ : সাক্ষাৎকার কুলদা রায়)

 ১৯৯৬ সালে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলা একাডেমি 888sport live football 888sport app download bd পেলেন। ২০০৫ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা বই হিসেবে পুরস্কৃত হলো তাঁর গল্পগ্রন্থ। সমকালীন বাংলা 888sport live footballের প্রধান গল্পকারদের একজন হিসেবে সবাই সমীহের সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে শুরু করল। বলতে গেলে তিনি তখন সেলিব্রেটি। একে তো 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি 888sport live footballের কীর্তিমান অধ্যাপক, অন্যদিকে টেলিভিশনে ও বিভিন্ন 888sport live football অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে তিনি উজ্জ্বল মুখ। কথা888sport live footballিক, প্রাবন্ধিক, চিত্র-সমালোচক এমন নানা পরিচয়ে তিনি অনন্য।

আমার ঠিক মনে নেই, কবে কীভাবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি পরিচয় হলো, তবে সেটা আমার কাজের সূত্রে সংবাদ-এর জন্য ইন্টারভিউ নিতে গিয়েই হবে হয়তো। অন্যের প্রশংসা করতে তিনি সর্বদাই অত্যন্ত উদার। সিনিয়ররা যেখানে সহজে জুনিয়রদের পাত্তা দিতে চান না, সেখানে তিনি তরুণদের লেখা আগ্রহ নিয়ে পড়তেন ও উৎসাহ দিতেন সবসময়। মনে পড়ে, প্রথম দেখাতেই আমাকে চমকে দিয়ে স্মিতহাস্যে বললেন, ‘তোমার লেখা গল্প তো পড়েছি। খুব ভালো।’

এটা শুধু কথার কথা নয়। অনেকেই জানেন, তাঁর এই বিরল গুণের কথা। নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে তিনি সকলের লেখার অত্যন্ত মনোযোগী পাঠক।

তারপর বহুবার স্যারের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। দেখেছি তাঁর শান্তশ্রী ও স্নেহপ্রবণ চেহারা। খুব জমিয়ে গল্প করতে পারতেন তিনি। তাঁর আড্ডায় উচ্চমানের রসরোধ থাকত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ঝিলিক থাকত, সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণ থাকত, পাশাপাশি সহমর্মিতা ও প্রাণখোলা হাসিও থাকত। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন সমকালীন বাংলা 888sport live football, সংস্কৃতি ও মননশীলতার এক অনুপম, উজ্জ্বল প্রতিভূ।

বহুবার তিনি আমার কর্মস্থল নিউজ টোয়েন্টিফোরে গেছেন টক শো’র অতিথি হয়ে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে নঈম নিজাম ভাই, ইমদাদুল হক মিলন ভাই এবং আমি ও 888sport app সহকর্মীর সঙ্গে লাগাতার গল্প চলেছে। একবার চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম কোনো একটা ওয়ার্কশপে যোগ দেওয়ার জন্য, এয়ারপোর্টে স্যারের সঙ্গে দেখা। তিনিও যাচ্ছেন কোনো একটা কাজে। স্যার পিতৃসম দায়িত্বশীলতায় আমার খোঁজখবর রাখলেন সারাটা সময়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না; কিন্তু তিনি ছিলেন আমাদের মতো অনেকের দিশারি হয়ে। 888sport live footballজগতে এমন ব্যক্তিত্ব দুর্লভ। সে-কারণেই তাঁর মৃত্যু 888sport live football ও শিক্ষাঙ্গনে অপরিসীম শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ছিলেন তীক্ষ্নধীসম্পন্ন চিন্তাবিদ। নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। শিক্ষকতাকে তিনি সবসময় উচ্চমূল্য দিয়েছেন। নিজের প্রথম পরিচয় দিতেন শিক্ষক হিসেবেই। তারপর গল্পকার বা কথা888sport live footballিকের পরিচয়। আমরা মনে করতে পারি তাঁর শেষ বক্তৃতার কথা, যেখানে শিক্ষকদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, শিক্ষককে ভালো হতে হবে। শিক্ষককে মেধাবী হতে হবে। আমাদের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা কত বেতন পান? সংস্কার তো ওইখান থেকেই শুরু করতে হবে। বেতন তো বাড়া উচিত প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের! এই বর্তমান বাজারে তাদের যদি দেওয়া হয় এক লক্ষ টাকা করে মাসে, তাদের থাকার জায়গা দেওয়া হয় মানসম্পন্ন। বিসিএস পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার চাইতে এই মেধাবীরা প্রাইমারি স্কুলে এসে ঢুকবে। আপনি ভাবুন, কত বড় একটা বিপ্লব হতে পারে শিক্ষার ক্ষেত্রে!

সমাজের ভালো-মন্দ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন তিনি। ছিলেন উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। অসাম্প্রদায়িক এবং আধুনিক। পারস্পরিক সম্মানবোধ ও আন্তরিকতায় বিশ্বাসী। বিভেদ নয়, ঐক্যের কথা বলেছেন। মিলনের কথা বলেছেন। সামাজিক অবক্ষয় প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য যদি দেখি, তিনি বলেছেন –

আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, দ্বন্দ্বমান সমাজে সব সময় পক্ষ-প্রতিপক্ষ থাকে। পক্ষের দিকে যদি আমরা থাকি, যেখানে শুভ আছে, সুন্দর আছে, কল্যাণ আছে, তাহলে বাকিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা তো ওইদিকে চলে যাই। আমরা অকল্যাণ দেখলেই দৌড়ে পড়ি। অশুভ দেখলেই আমাদের আনন্দ হয়। বীভৎসতা-সহিংসতা আমাদের এত বেশি তৃপ্তি দেয়! একজন নিরীহ মানুষকে ধরে আমরা যে-কোনো ধরনের অন্যায় করতে পারি তার সঙ্গে। তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারি। একজন 888sport promo codeর নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে কখনো দেবো না। তাদেরকে সব সময় একদম এক ধরনের মোরাল পুলিশিংয়ের ভেতর রাখব।

আপাতদৃষ্টিতে আশাবাদী মানুষ হলেও একই বক্তৃতায় বিপুল হতাশা প্রকাশ করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছিলেন, কেউ শোনেননি কথা। আমি বহুদিন থেকে লেখালেখি করছি। কেউ একটা কথাও শোনেননি। সংস্কার হবে কী করে? যারা সংস্কার করবেন তাদেরও তো শিক্ষার অভাব আছে।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এসেছিলেন সোনারগাঁর নয়াপুরে আমাদের প্রশান্তিবাড়িতে। হাতে করে শুভেচ্ছার স্মারক হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন ফুলের তোড়া। তারপর তো চার-পাঁচ ঘণ্টা ভারি আনন্দে আমাদের সময় কেটেছিল। ছবি তুলে, গল্পে, আড্ডায়, হাসিতে স্যার মাতিয়ে রেখেছিলেন পুরোটা সময়। বলেছিলেন, ‘আমার জমি থাকলে আমিও এমন একটা বাড়ি বানাতাম। সিলেটে আমাদের যা জমিজমা ছিল সব দান করে দিয়েছি। এখন আর জমি নেই।’

আমরা বলেছিলাম, ‘আপনি এখানে আসবেন, লেখার প্লট মাথায় নিয়ে চলে আসবেন কয়েকদিনের জন্য।’

তিনি স্মিত হেসে মাথা নেড়েছিলেন।

তাঁর মতো এত কর্মচঞ্চল, প্রাণবন্ত, সৃজনশীল মানুষের আসলে মৃত্যু হয় না। আমরা মনে করি তাঁর এই প্রয়াণ দেহত্যাগমাত্র। তিনি আছেন; তিনি থাকবেন। তার প্রজ্ঞাসঞ্জাত বিপুল
সৃজনশীল-মননশীল কাজ বহুকাল ধরে এই দেশে তিমিরবিনাশী আলোর মশাল হয়ে জ্বলবে।