বাংলা নাটকের প্রবাদপ্রতিম পুরুষ শম্ভু মিত্র জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে ৮২ বছর বয়সে বিদায় নেন ১৯৯৭-তে। সর্বজনশ্রদ্ধেয় জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী প্রয়াত হন ২০১১ সালে ৮৮ বছর বয়সে। দুজনেই তাঁদের ইচ্ছাপত্রে তাঁদের মৃত্যুকে ঘিরে শোকের আড়ম্বর বা আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করতে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। দুজনের ক্ষেত্রেই তাঁদের ইচ্ছার প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বছরচারেক আগে আমাদের সদ্যপ্রয়াত শিক্ষক আনিসুজ্জামানও তেমনই অভিলাষ ব্যক্ত করে তাঁর সন্তানদের একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মাসছয়েক আগে সন্তানদের পীড়াপীড়িতে তাঁর সেই চিঠিটি সংশোধন করে শেষকৃত্যে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না করার জায়গায় সীমিত পরিসরে করার কথা লিখে দেন। কিন্তু নিয়তির কী অমোঘ নির্দেশ, শেষ পর্যন্ত স্যারের ইচ্ছাই পূর্ণ হলো। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো ছাড়া কোনো আনুষ্ঠানিকতাই করা যায়নি, আমাদের কারো পক্ষেই তাঁকে শেষ 888sport apk download apk latest version জানানো সম্ভব হলো না।
অবশ্য কোনো আনুষ্ঠানিকতাই এই মহান শিক্ষকের জন্যে যথেষ্ট নয়। শ্রেণিকক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে ড. আনিসুজ্জামান পরিগণিত হয়েছিলেন জাতির শিক্ষকে। জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান তাঁকেই মানায়। আজীবন শিক্ষকতা, গবেষণা আর লেখালেখিকে অবলম্বন করে বাঁচতে চেয়েছেন। সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন সরকারি উচ্চপদের প্রস্তাব।
তাঁর মতো সৌভাগ্যবান ব্যক্তি খুব কমই আছেন যিনি আমাদের জাতীয় জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কলেজের ছাত্র থাকাকালে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন ১৯৫২-র ভাষা-আন্দোলনে, ১৯৭১-এ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে যোগ দিয়েছিলেন 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সরকারের পরিকল্পনা সেলের সদস্য হিসেবে আর ১৯৭২-এ পালন করেন এক বিরাট দায়িত্ব – 888sport appsের সংবিধানের বাংলা ভাষ্য তৈরি করার, যা সংবিধানের মূল পাঠ হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৬১ থেকে ১৯৬৫, যখন আমি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলাম, তখন বাংলা সাবসিডিয়ারিতে আনিস স্যারের কয়েকটা ক্লাস পেয়েছিলাম। শিক্ষক হিসেবে যে তিনি অতুলনীয়, সেটা তাঁর সব ছাত্রই স্বীকার করেন। তবে তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়েছে 888sport appsের অভ্যুদয়ের পর বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ও সাংগঠনিক সূত্রে। অধ্যাপক কবীর চৌধুরী চলে যাওয়ার পর তিনিই ছিলেন আমাদের প্রধান আশ্রয়। যে-কোনো সংকটে আমরা তাঁর পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা গ্রহণ করেছি, সেটাকেই অভ্রান্ত বলে মেনেছি।
১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল আনিস স্যার অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নিজের ফোক্সওয়াগন গাড়ি চালিয়েই সপরিবারে আগরতলা পৌঁছেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 888sport apps সহায়ক সমিতির আমন্ত্রণে তিনি ১৫ মে গেলেন কলকাতায়, তাঁর গাড়িটি রেখে গেলেন 888sport appsের পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে, যাতে তাঁরা তাঁদের কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
কলকাতা পৌঁছার পরদিনই 888sport apps সহায়ক সমিতির অফিসে গিয়ে দায়িত্ব নিলেন শরণার্থী শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁদের আর্থিক প্রয়োজন পরিমাপ করার। 888sport appsের উদ্বাস্তু শিক্ষকদেরও একটা সমিতি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করায় নবগঠিত সে-সমিতিরও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তিনি। এদিকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ আন্তরিকভাবে চাইলেন আনিস স্যার যেন তাঁর দফতরে যোগ দেন। কিন্তু স্যার যেহেতু শিক্ষক সমিতির দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করা হলো না, তবে যে-কোনো কাজে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করবেন – এ-কথা বলে এলেন। পরে তিনি প্রবাসী সরকারের পরিকল্পনা সেলের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। এর পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন শহরে গিয়ে সভা-সমিতি বা সেমিনারে অংশ নিয়ে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সকলের সমর্থন কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের বেশ কিছু বক্তৃতার খসড়া রচনা করেছেন তিনি। পরিকল্পনা সেলে শিক্ষা-সম্পর্কিত বিষয়াবলি তাঁর দায়িত্বে ছিল। তাঁর আমার একাত্তর গ্রন্থে নেপথ্যের অনেক অজানা ঘটনা তিনি নির্মোহভাবে ব্যক্ত করেছেন।
888sport appsের অভ্যুদয়ের পর ড. আনিসুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পূর্বের পদে যোগ দিলেন। ১৯৭২-এর মার্চে 888sport appsের আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন আনিস স্যারকে জানালেন, শিগগির 888sport appsের সংবিধান রচনার কাজ শুরু হবে; সংবিধানের বাংলা ভাষ্য স্যারকে করে দিতে হবে। এমন ঐতিহাসিক দায়িত্ব কে উপেক্ষা করতে পারে? সংবিধানের কাজে আনিস স্যার সে-বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ১৫ দিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে 888sport appতে দিনরাত এ-কঠিন কাজে সময় দিয়েছিলেন। সহযোগী হিসেবে যদিও আরো দুজন ছিলেন, মূল দায়িত্ব কিন্তু স্যারকেই পালন করতে হয়েছে। এ-সময়ে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভায় সদস্য না হয়েও উপস্থিত থেকে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। অনেক ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দের বিষয়ে সদস্যদের অনুমোদন পেতে বেশ কষ্ট হয়েছিল তাঁর।
এর মধ্যে ১৯৭২ সালের জুলাইয়ে ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদাকে সভাপতি ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে সদস্যসচিব করে 888sport appsের প্রথম যে-শিক্ষা কমিশন গঠিত হলো তারও অন্যতম সদস্য হলেন ড. আনিসুজ্জামান। বছরখানেকের মধ্যে অবশ্য অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে অল্প কিছুকাল পরে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের পর বঙ্গবন্ধু আনিস স্যারকে শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব নিতে বলেন। স্যার সবিনয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেন, ‘আমি মাস্টারি করে এসেছি, তা-ই করতে চাই। সচিব হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।’ স্যার এটাও বললেন যে, লন্ডনে গবেষণার জন্যে তিনি একটা বৃত্তি পেয়েছেন, সে-কাজটি তিনি করতে চান। তথাপি বঙ্গবন্ধু তাঁকে একদিন সময় দিয়ে পরদিন তাঁর সিদ্ধান্ত জানাতে বললেন।
আনিস স্যার তখনই চলে গেলেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কাছে এবং তাঁকে অনুরোধ করলেন বঙ্গবন্ধুকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে তাঁকে এ-বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। তাজউদ্দীন নাকি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, আনিসুজ্জামানকে শিক্ষা সচিব করলে একজন ভালো শিক্ষক হারিয়ে মন্দ প্রশাসক পাওয়া যাবে – তাতে লাভ কী। পরদিন আনিস স্যার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে সবিনয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে লন্ডন যাওয়ার অনুমতি চান। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, তবে কথা দিয়ে যাও, ফিরে এসে চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা করে যাবে। তখন আমি যা বলব, তা কিন্তু শুনতে হবে।’ কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। স্যার দেশে ফিরলেন ১৩ আগস্ট ১৯৭৫, আর ১৫ আগস্টে ঘটে গেল নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞ।
ড. আনিসুজ্জামান সকল প্রতিকূল পরিবেশেও 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বহুত্ববাদী সমাজ ও অসাম্প্রদায়িক 888sport appsের ব্যাপারে ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। ১৯৭৫-পরবর্তী দেশের সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কখনো দ্বিধা করেননি। 888sport appsে যখন যেখানে ধর্মীয় 888sport free betলঘু বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের ওপর হামলা হয়েছে, অসুস্থ শরীর নিয়েও তিনি ছুটে গেছেন সেসব জায়গায় প্রতিবাদে শামিল হতে, নির্যাতিতদের সাহস জোগাতে। আমরা যখন সবাই মিলে ‘888sport apps রুখে দাঁড়াও’ মোর্চাটি গঠন করি, তখন তিনিই তার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। যে-কোনো সংকটে তিনি ছিলেন আমাদের পথনির্দেশক, বিরাট আশ্রয়।
১৯৯১-এর ডিসেম্বরে 888sport appsের স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানি নাগরিক অধ্যাপক গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী 888sport apps সংগঠনটির আমির নির্বাচিত করায় ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে আহ্বায়ক করে যে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়, তাদের উদ্যোগে তদানীন্তন খালেদা জিয়া সরকারের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ 888sport appsের স্বাধীনতা দিবসে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গোলাম আযমের বিচারের জন্যে গণআদালত বসে। সেখানে সৈয়দ শামসুল হক ও বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আনিস স্যার অভিযোগ উত্থাপন করেন। গণআদালতের বিচারে গোলাম আযমকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। পরবর্তীকালে গণআদালতের সঙ্গে যুক্ত আনিস স্যারসহ ২৪ জন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। হাইকোর্ট অবশ্য তাঁদের জামিন দিলেও দীর্ঘদিন তাঁদের বিরুদ্ধে এই মামলাটি ঝুলে ছিল। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনার সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, নির্দিষ্ট দিনে ড. আনিসুজ্জামান যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। সেটা ছিল অত্যন্ত সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কিন্তু দ্বিধাহীনভাবে তিনি তা কর্তব্য বলে বিবেচনা করেছেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অনেক দৃষ্টি-উন্মোচনকারী গবেষণা করেছেন, পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। কিন্তু তাঁর আত্মজৈবনিক তিনটি গ্রন্থ – কাল নিরবধি, আমার একাত্তর এবং বিপুলা পৃথিবী তাঁর সময়কালের এক মহামূল্যবান দলিল। ব্যক্তিজীবনের পাশাপাশি 888sport appsের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনাবলি গ্রন্থ-তিনটিতে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। স্যার তেমনভাবে দিনপঞ্জি লিখতেন না বা নোট রাখতেন না; কিন্তু কী নির্ভুলভাবে ঐতিহাসিক ঘটনাবলি তুলে ধরেছেন। তাঁর নির্মেদ গদ্য অনুকরণীয় এবং ঈর্ষণীয়। তাঁর লেখার মধ্যে কাউকে আহত করেননি, নির্মোহভাবে ঘটনা তুলে ধরেছেন। তাঁর মনোভাব প্রকাশের ভঙ্গিও ভিন্ন। উদাহরণ হিসেবে ১৯৯৭ সালের একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই। 888sport apps বেতার ও টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসনের জন্যে গঠিত কমিশনের সদস্য হিসেবে স্যারসহ আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চূড়ান্ত রিপোর্ট হস্তান্তর করার সময় রিপোর্ট সম্পর্কে তাঁর একটা শীতলতা অনুভব করি। আগেই তাঁর তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও অনুগত আমলারা রিপোর্ট সম্পর্কে তাঁকে একটা বিরূপ ধারণা দিয়েছিলেন। স্যার লিখেছেন, ‘আমরা তড়িঘড়ি চা খেয়ে বিদায় নিলাম। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের চা খুব সুস্বাদু মনে হয়নি।’
মূল 888sport live পাঠ বা একক বক্তৃতা ছাড়া আনিস স্যার কখনো দীর্ঘ বক্তৃতা করতেন না। বেশিরভাগ সময়েই সভাপতির ভাষণ পাঁচ মিনিটের মধ্যেই শেষ করতেন। কিন্তু তার মধ্যেই চুম্বক কথাটা বলে দিতেন। এমন ক্ষমতা দেখেছি অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর মধ্যেও। আর আনিস স্যারের রসবোধ ছিল দারুণ। একটি বক্তৃতার কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। আমার স্ত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের যা ইচ্ছা তাই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের বক্তৃতার শেষদিকে তিনি বললেন, ‘এই বইয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাক্যটি আছে ৭৯ পৃষ্ঠায় যেখানে ফেরদৌসী লিখেছে – ‘আনিসুজ্জামান স্যার আমাদের বিসর্জন পড়াতেন, কী ভালোই পড়াতেন।’ ফেরদৌসী মজুমদারের মতো বিখ্যাত অভিনেত্রী যখন আমার এমন প্রশংসা করেন, তখন আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে, আমি ভালোই পড়াতাম। তাই আপনারা রাস্তাঘাটে আমার সঙ্গে দেখা হলে সালাম দেবেন। তবে আপাতত আমি আপনাদের সালাম জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি।’ হলভর্তি দর্শক-শ্রোতা প্রচণ্ড হাসি আর করতালিতে ফেটে পড়েন। এমনই ছিল স্যারের রসবোধ ও শব্দচয়ন।
নাটকের মানুষেরাও তাঁকে আপনজন হিসেবে পেয়েছে। যখনই ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বা 888sport apps গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, কিংবা আমাদের নাটকের দল থিয়েটারসহ যারাই তাঁকে সেমিনার বা অন্য অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তিনি সানন্দে সাড়া দিয়েছেন। তিনি একসময়ে নাট্যদল নাট্যচক্র এবং নাটকের স্কুল নাট্য শিক্ষাঙ্গনেরও সভাপতি ছিলেন। রূপান্তর করেছেন দুটি নাটক আদর্শ স্বামী ও পুরনো পালা। প্রথমটি অস্কার ওয়াইল্ড-রচিত অ্যান আইডিয়াল হাজব্যান্ড এবং দ্বিতীয়টি সোভিয়েত নাট্যকার আলেক্সেই আরবুজভের স্তারোসোদনাইয়া কোমেদিয়া নাটকের বাংলা রূপান্তর। পুরনো পালা আমরা থিয়েটার থেকে অভিনয় করেছিলাম।
গত বছরদশেক ধরেই আমরা কয়েকজন তাঁর স্নেহের সুযোগ নিয়ে অভিযোগ করতাম যে, আপনি এত অনুষ্ঠানে গিয়ে সময় নষ্ট করেন যে, আপনি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ও গবেষণার সময় পান না। তাঁর জবাব, ‘লোকজন আমার নিষেধ শোনে না, আমিও জোরের সঙ্গে কাউকে না বলতে পারি না।’ আমি তাঁকে বললাম, ‘স্যার আমার পদ্ধতি অনুসরণ করুন। তারিখ বললে আমি বলি, ওইদিন আমি 888sport app থাকব না। নিজেকে রক্ষা করার জন্য এইটুকু মিথ্যা বললে তেমন পাপ হবে না।’ স্যার বললেন, ‘সেটাও বলে দেখেছি। তখন তারা বলে কোন তারিখে আপনি পারবেন, সেটা বলুন আমরা সেদিন অনুষ্ঠান আয়োজন করব।’ অর্থাৎ কোনোভাবেই স্যার অনুরোধ এড়াতে পারেন না।
আমার কেবলই মনে হয়, আমরা এত অবিবেচক ও স্বার্থপর কেন? প্রকাশনা উৎসব, সিডি উদ্বোধন, জন্মদিন, বর্ষপূর্তি – এসব অনুষ্ঠানে তাঁকে ডেকে তাঁর অমূল্য সময় নষ্ট করতে আমাদের এতটুকুও খারাপ লাগেনি? আজকাল 888sport app শহরে যে-যানজট তাতে এক ঘণ্টার অনুষ্ঠানের জন্যে আরো তিন-চার ঘণ্টা রাস্তায় থাকতে হয়। স্যারও সামাজিক নিমন্ত্রণ এড়াতে পারতেন না। কিন্তু কত সময় অপচয় হয়েছে তাঁর। অসুস্থ হওয়ার পরও তাঁকে আমরা রেহাই দিইনি। কিছু পরিচিত মানুষ নিয়মিত তাঁকে পানাহারের আড্ডায় ডেকে নিয়ে নিজেরা জাতে উঠেছেন, কিন্তু স্যারের ক্ষতি করেছেন। অথচ এ-সময়টায় তিনি আমাদের 888sport live football-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আরো কত অবদান রাখতে পারতেন।
দেশে-বিদেশে তাঁর পাণ্ডিত্যের জন্যে নানা সম্মান লাভ করেছেন। 888sport apps সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘স্বাধীনতা 888sport app download bd’ দিয়েছে, পেয়েছেন ‘888sport cricket BPL rateে পদক’ও। ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছে। ২০১২ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বৃত হয়েছেন জাতীয় অধ্যাপকরূপে।
ড. আনিসুজ্জামানের সমর্থন ছিল একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি, কিন্তু কখনো অন্ধ আনুগত্য ছিল না। তাঁর স্বাধীন মতামতের জন্য অনেক সময় তাঁর সমর্থিত সরকারেরই বিরাগভাজন হয়েছেন। তিনি সত্যিকার অর্থে ছিলেন একজন ‘পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল’। তাঁকে হারিয়ে আমরা এখন বিপন্ন বোধ করছি। সংকটকালে কার কাছে যাব আমরা দিশা পেতে? তাঁর বিপুলা পৃথিবীর শেষ বাক্য ছিল – ‘আমাদের পথচলা এক সময়ে থেমে যায়, জীবন থামে না।’ আমরাও বিশ্বাস করি যে, অগণিত মানুষের জীবনে তিনি যে-জীবন যোগ করেছিলেন, তা কোনোদিন থামবে না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.