জ্যোৎস্নাবিভ্রম

শফিক মোটরবাইকটা সিঁড়িঘর থেকে বের করে উদ্বিগ্ন চিত্তে যখন গ্রিলে তালা দিচ্ছিল তখন আশপাশে কোথাও একটা রাতজাগা পাখির কাতর কণ্ঠ শোনা গেল। সে-সময় সে মনস্থ করে এবার বাসাটা বদলে শহরের ভেতর নিতে হবে। প্রায় এক বছর আগে এখানে যখন বাড়িভাড়া নেয় তখন একবারও ভাবেনি রাত-বিরাতে এমন বিপদ হানা দিতে পারে। সবচেয়ে ভালো হতো এই মুহূর্তে তানিয়াকে হাসপাতালে নিতে পারলে। কিন্তু রাত পৌনে দুটোয় এই গ্রামে গাড়ি তো দূরে থাক অটোরিকশা বা ভ্যান কিছুই মিলবে না। তীব্র পেটব্যথায় ছটফট করছে তানিয়া, এ-অবস্থায় ওর পক্ষে বাইকেও ওঠা অসম্ভব। শহর থেকে তিন মাইল দূরে গাছ-গাছালি পরিবেষ্টিত শিকারপুর নামক গ্রামে এই বাসাটা বলতে গেলে তানিয়ার ইচ্ছাতেই নেওয়া। শহরের কোলাহলের চেয়ে পল্লির নিভৃত পরিবেশ তাকে বেশি টানে, যদিও কাছের উপজেলা শহরটা নিতান্তই ছোট একটা জনপদ। শফিক অগ্রণী ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার, আর তানিয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। দোতলা বাড়িটা থেকে তানিয়ার স্কুলের দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। তানিয়া খুব সহজেই অটোতে করে কিংবা হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসা করে। তারা দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচমেট। শফিক ছিল ভূগোলে আর তানিয়া ইতিহাস বিভাগে। চাকরিটা প্রথমে তানিয়াই পেয়েছিল, এর তিন মাসের মধ্যে শফিক ব্যাংকে জয়েন করলে ওদের চার বছরের পরিচয় ও প্রেম বিয়েতে গিয়ে গড়ায়। উপজেলা শহর থেকে গ্রামের দিকে ক্ষয়ে-যাওয়া পাকা রাস্তার পাশে দক্ষিণমুখী বাড়িটা খুব পছন্দ হয়েছিল তানিয়ার। তার অন্তর্গত কবি-স্বভাব এজন্য খানিকটা দায়ী হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন 888sport live football আসরে সে নিয়মিত 888sport app download apk পাঠ করত। কিছু লেখা ইদনীং ছাপাও হচ্ছে নানান জায়গায়। বাড়িওয়ালা 888sport appয় থাকেন, বিশেষ উপলক্ষে বছরে দু-একবারের বেশি আসেন না। নিজেরা নিচতলা রেখে তানিয়াদের জন্য ভাড়া দিয়েছেন দোতলা। দম্পতি মিলে এই কয়েক মাসে বাড়ির পুরো ছাদটা একেবারে ফুলের বাগান বানিয়ে ফেলেছে, ভোরবেলা রাজ্যের পাখি এসে কিচিরমিচির জুড়ে দেয়। শফিক অফিস থেকে ফেরার সময় শহর থেকে সবজি-মাছ, বিস্কুট-ফল, সাবান-পেস্ট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় বাজারঘাট করে নিয়ে আসে। দরকারি ওষুধপত্রও মনে করে রাখা হয় ঘরে। সপ্তাহে কি পনেরো দিনে একবার তানিয়া বরের বাইকে চেপে শহরে যায়। শহরের অদূরে এই অচেনা গ্রামে ভালোই কাটছিল নবদম্পতির জীবন। ছুটির দিনে হাঁটতে-হাঁটতে দুজন নদীর ধারে চলে যাওয়া, ধানক্ষেতের পাশে টং দোকানে পিঁয়াজু-চা খাওয়া, কোনোদিন হয়তো একেবারে অচেনা একটি গ্রামে গিয়ে টাটকা সবজি কেনা, হাটুরে লোকের সঙ্গে লঘু আলাপচারিতা – সত্যিই বেশ কাটছিল দিনগুলো। কিন্তু আজকের মতো দুর্যোগ-রাতের আগমন আশঙ্কা করলে বাসাটা উপজেলা সদরেই নিত। বিয়ের দু-মাস পরে প্রথম তানিয়ার পেটব্যথার কথা জানতে পারে শফিক। তানিয়া বলেছিল, তেমন মারাত্মক কিছু নয় – গ্যাস্ট্রিক; আর সামান্য আলসার আছে পেটে। ব্যথা হলে ভিসেট জাতীয় দুটো ট্যাবলেট খায় ও, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি পায়। কিন্তু আজকের লক্ষণটা ভালো ঠেকে না শফিকের। রাত দশটায় দুটো ভিসেট, আধঘণ্টা বিরতি দিয়ে আরো একটা ট্যাবলেট, সঙ্গে ৪০ পাওয়ারের ওমিপ্রাজলেও কোনো উন্নতি হলো না। ততক্ষণে রাত দেড়টা পেরিয়েছে। শফিক ঠিক করণীয় বুঝে উঠতে না পেরে তানিয়ার মাথার কাছে বসে বলে, ‘কী করি বলো তো? ধারেকাছে তো কোনো ডাক্তার মিলবে না।’ কাতর কণ্ঠে তানিয়া বলল, ‘ইঞ্জেকশন না নিলে কমবে না।’ কিন্তু ঘরে তো ইঞ্জেকশনের ওষুধ বা সিরিঞ্জ কিছুই নেই। সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেই কেবল সারারাত দুটো দোকান খোলা পাওয়া যায়। বের হওয়ার সময় শফিকের মনে হয়েছিল পাশের বাড়ির কোনো মহিলাকে ডেকে তানিয়ার কাছে থাকতে বলবে। কিন্তু গভীর রাতে এতখানি আবদার করার মতো সখ্য দূরে থাক তেমন পরিচয়ই হয়নি কারো সঙ্গে। ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট চ্যানেলের হাওয়ায় আজকাল গ্রামের লোকেরাও বদলেছে, যেচে কারো সঙ্গে খাতির করতে আসে না। তানিয়াকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, সে একাই থাকতে পারবে। মোটরসাইকেলে ওষুধ নিয়ে ফিরতে ২০-২৫ মিনিটের বেশি লাগবে না। ব্যথা নিয়েও সে কেমন পরিহাসের ছলে বলে ওঠে, ‘ভয় নেই, এইটুকু সময়ের মধ্যে আমি মরে যাব না, তুমি যাও। আর মরলেই বা কি – শোনোনি ভাগ্যবানের বউ মরে।’

এই মুহূর্তে এ-জাতীয় রসিকতা শফিকের মোটেও ভালো লাগে না। কিন্তু ওর কথায় রাগও প্রকাশ করতে পারে না। বের হওয়ার সময় কেবল বলে, ‘এখন রসিকতার সময়?’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ‘চব্বিশ ঘণ্টা ফার্মেসি’ আর ‘জনসেবা ফার্মেসি’ – এই দুটো সারারাত খোলা থাকে, এমন কথা সে আগেই জানতো। কিন্তু রাত দুটো ছয় মিনিটে পৌঁছে দেখা গেল দুটি দোকানই বন্ধ। শফিকের তখন ভীষণ অসহায় বোধ হতে থাকে। একবার সে ভাবে হাসপাতালে গিয়ে দেখবে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় কি না। তাহলে তানিয়াকে নিয়ে এসে এখানে ভর্তি করা যাবে। মোটরসাইকেলটা ২০ মিটারের মতো এগিয়ে নিয়ে হাসপাতালের গেটে যায়। একজন গার্ডকে পেয়ে সে অ্যাম্বুলেন্স প্রসঙ্গে না গিয়ে বরং বলে, ‘ভাই ওষুধের দোকানগুলো যে সবই বন্ধ!’

গার্ড জবাব দেয়, ‘দেখেন ২৪ ঘণ্টার সামনে মোবাইল নম্বর লেখা। ওটাতে কল দেন। তবে এখন ডাকলে ২০ পারসেন্ট দাম বেশি নেবে, এটাই ওদের নিয়ম।’

‘তা নিক। দরকার হয় দ্বিগুণ দেব, আমার খুব ইমারজেন্সি।’ শফিক মোটরবাইক ঘুরিয়ে দোকানটার কাছে যায় আবার। পাঁচ-ছয়বার কল দেওয়ার পর দোকানের দরজার পাশে একটা ছোট্ট জানালা খুলে যায় এবং ঘুমজড়িত ভারী পুরুষকণ্ঠ ভেসে আসে – ‘কী লাগবে কন?’

‘চারটে ভিসেট ইঞ্জেকশন, দুটো সিরিঞ্জ আর একপাতা ইমিস্টেট ট্যাবলেট।’

‘আমাদের নিয়ম জানেন তো – রাত একটার পর ঘুম ভাঙালে অন্য রেট।’ লোকটা এখনো অন্ধকার থেকেই কথা বলছে। বোধহয় ঘুমের রেশ যেন না কাটে তাই ঘরের বাতি জ্বলছে না। হয়তো মোবাইলের সামান্য আলোয় ওষুধ হাতড়ে বের করে দেবে।

‘আপনি দেন, বেশিই দেব। অসুবিধা নেই।’

হাতে ওষুধের প্যাকেটটা নেওয়ার সময় আলো-আঁধারিতেও লোকটার অস্বাভাবিক লাল ও বড় বড় চোখদুটো শফিকের দৃষ্টি এড়ায় না। মানুষের চোখ গরুর মতো অত বড় হয় জানতাম না। একসময় দিনের বেলা এসে এই অদ্ভুত মানুষটার খোঁজ করতে হবে। এইসব সাতপাঁচ ভাবলেও শফিক বিনা বাক্য ব্যয়ে ২৯০ টাকা দিয়ে আলোহীন ফার্মেসি থেকে বিদায় হয়। তখন সে ভাবে, গাড়ি নিয়ে উল্টো তানিয়াকে আনতে যাওয়ার চেয়ে ওষুধ পেয়ে বরং ভালো হলো। ও তো জানেই এই ইঞ্জেকশনে তার ব্যথা কমে, কাজেই এখন আর দুশ্চিন্তার কারণ নেই। স্কুল-কলেজে রেড ক্রিসেন্ট করার সময় ফার্স্ট এইড, ইঞ্জেকশন – এসবের ট্রেনিং নেওয়া ছিল। নিজেদের মধ্যে কাজ করে হাতটা চালু রেখেছে শফিক। কাজেই ইঞ্জেকশন পুশ করতে অন্তত বাইরের কাউকে ডাকতে হবে না।

হাসপাতাল পেরিয়ে খানিক দূরে একটা পুরনো মাদ্রাসা তার পর থেকে একেবারে জনমানবের আওয়াজহীন অন্ধকার রাস্তা। জামতলা পেরিয়ে ব্রতপাড়ার দিকে মোড় নিল যে-রাস্তা, সেখানে পুরনো বাঁশবাগানের ভেতরটা ঘোর অন্ধকার। শফিকের মোটরসাইকেলের ব্যাটারি ডাউন হাওয়ায় হেডলাইটের দুর্বল আলোয় রাস্তারটা ঠিক স্পষ্ট দেখা যায় না, তাই সে রাস্তার মোড়ে গতি অনেকটা কমিয়েই চালাচ্ছিল। হঠাৎ মনে হলো একজন মানুষ দাঁড়িয়ে, একটু কাছে গেলে বোঝা যায় জলজ্যান্ত মেয়েমানুষ। তাকে ঘিরে কতক ম্রিয়মাণ জোনাকি ওড়াউড়ি করছে।

‘এই দাঁড়াও, আমি যাব।’

কণ্ঠটা পরিচিত লাগে বলে ঠিক অতখানি ভয়ের অনুভূতি হয় না। কিন্তু এখানে কোনোভাবেই তো তার পরিচিত কোনো 888sport promo code আসার কথা নয়।

বিভ্রান্ত শফিক তাই এগিয়ে যাচ্ছিল। মেয়েটি গতি রোধ করে সামান্য হেসে বলে, ‘আমাকে না নিয়েই চলে যাবে?’ তার শরীর থেকে মাদকতামাখা সুগন্ধ আসছে। এবার শফিক মেয়েমানুষটির মুখের দিকে তাকায়। জীবনে এতটা বিস্মিত কখনো হয়নি, খানিক স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। একবার ঢোক গিলে বলে, ‘তোমাকে না অসুস্থ অবস্থায় রেখে এলাম ঘরে, তুমি কী করে এলে?’ একজোড়া শেয়াল ওদেরকে দেখে সন্তর্পণে রাস্তা পেরিয়ে লিচু বাগানের ভেতর ঢুকে গেল। একটার মুখে মোরগ কিংবা মৃত কোনো পাখি বোধহয়।

‘সেসব পরে বলব। আমি এখন ভালো আছি। জানো আজ পূর্ণিমা রাত। তোমার বাইকের পেছনে বসে সারারাত ঘুরব।’ বলতে বলতে সে শফিকের গা ঘেঁষে বাইকের পেছনে উঠে বসে। মেয়েটির হাত সামান্য ঠান্ডা; তবে কণ্ঠ আর স্পর্শ তো ঠিকই আছে, এ-তো তানিয়াই। শফিক জানতো না আজ পূর্ণিমা। যখন বাইরে বেরিয়েছিল তখন থেকেই চাঁদটা বোধহয় মেঘে 888sport app ছিল। কিন্তু এখন সত্যি সত্যি বিশাল একটি গোলাকার চাঁদ দেখতে পায়। হয়তো এইমাত্র মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়েছে সে।

শফিক বলে, ‘তুমি এখন কেমন বোধ করছ?’

‘ভালো, একেবারে ফুরফুরে মেজাজে। তুমি বাইকটা একটু জোরে চালাও না।’

‘এখন পেটের ব্যথাটা মোটেই নেই?’ শফিকের কণ্ঠ এখনো দ্বিধাগ্রস্ত, গম্ভীর।

‘না, নেই। দেখো জ্যোৎস্নার আলোয় সামনের ওই প্রকাণ্ড ফসলের মাঠটাকে কেমন স্বপ্নের মতো দেখাচ্ছে! তুমি আমাকে নদীর ধারে নিয়ে চলো। ওখানে কাশফুল ফুটতে শুরু করেছে। চাঁদের আলোয় কাশবনে হেঁটেছ কখনো?’

‘যাচ্ছি। তুমি এতো তাড়াতাড়ি আধঘণ্টার ভেতর সুস্থ হয়ে সেজেগুজে কীভাবে কার সঙ্গে চলে এলে? তুমি কি জাদু জানো?’

‘সে তো জানিই, না হলে কোন মন্ত্রবলে তোমাকে বশ করলাম আমি? আচ্ছা আর কিন্তু জেরা করবে না, তাহলে আমার মেজাজ বিগড়ে যাবে। আমি এই জ্যোৎস্নারাতটা তোমার সঙ্গে উপভোগ করতে চাই। কই গতি বাড়িয়েছ?’

‘হ্যাঁ, ৪০ কিলোমিটারে চলছে। এই ভাঙাচোরা রাস্তায় এর চেয়ে জোরে চালানো যাবে না। আবার বাইকের ব্যাটারিও ডাউন।’

মিনিট দশেকের পথ পাড়ি দিয়ে শফিক বলে, ‘এই তো আমরা নদীর ধারে এসে গিয়েছি।’

‘উম্-হু এখানে নয়, আমরা ওই দূরের বাঁকটাতে যাব। ওখানে একটা বাঁশের সাঁকো আছে, জলের স্রোতটাও অনেক বেশি।’ তানিয়ার কণ্ঠে আজ এ কী মাদকতা! জ্যোৎস্নার আলোয় অপরূপ লাগছে তাকে দেখতে। এই তানিয়াকে যেন বাসররাতের তানিয়ার চেয়ে আরো মোহময়ী মনে হচ্ছে  নির্জন পূর্ণিমায়।

‘সে তো আরো কয়েক কিলোমিটার পথ!’

‘বললাম না, আজ সারারাত তোমার সঙ্গে কাটাব। তুমি অমন আড়ষ্ট হয়ে আছো কেন – আমি যেন অন্য কেউ, ইজি হয়ে চালাও!’

যে-ডানহাত দিয়ে মেয়েটি তাকে আঁকড়ে ধরে আছে প্রথমে তা শীতল বোধ হলেও এখন মনে হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে উষ্ণ।

‘তুমি এক ঘণ্টা আগে কী-রকম অসুস্থ ছিলে আর এখন যা করছ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না!’

‘বললাম তো, খুব ভালো আছি। অসুস্থতার কথা আর একবারও বলবে না, তাহলে এবার কিন্তু আমি রেগে আগুন হয়ে যাব।’

শফিক কিছুক্ষণের মধ্যে যেন আজ সন্ধ্যা থেকে রাত দুটো অবধি ঘটে-যাওয়া ঘটনাগুলো বিস্মৃত হয়ে যায়। এক বছরের পুরনো তানিয়া অথচ তার আঙুলগুলো আজ নতুন করে কেমন বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দিচ্ছে শফিকের ত্বকে, রোমকূপে ও মস্তিষ্কে। যেন অতীত-ভবিষ্যৎ বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে না তার চেতনায়। আপাতত কেবলই এই আশ্বিনের জ্যোৎস্নারাতের মায়া, কেবলই এক যুবতীর রঙিন ঠোঁটের হাসি, বাতাসে উড়ন্ত রেশমি চুল, শরীরের সুগন্ধ তাকে ব্যাকুল করে রাখে। তাদের বিবাহিত জীবন এক বছর হতে চলল। অথচ আজ যেন নতুন করে সে আবিষ্কার করছে ২৭ বছর বয়সী তরুণী তানিয়াকে। তারপর কতটা সময় কাটে? এক ঘণ্টা নাকি দুই ঘণ্টা, না আরো বেশি – সময়ের হিসাব আর মাথায় থাকে না শফিকের। তারা দুজন বাইক রেখে নদীর ধারে গিয়ে বসে। তানিয়া একটা গান শোনায় – আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে। তারপর ছোটাছুটি করে চলে আসে বাঁশের প্রশস্ত সাঁকোর ওপর। দুজন নদীতে চাঁদের প্রতিবিম্ব দেখে, নিস্তব্ধতার ভেতর শুনতে পায় রাতজাগা কোনো এক পাখির ডাক। সাঁকো পেরিয়ে চলে যায় নদীর ওপারে কাশবনের ভেতর। আকাশের পূর্ণচাঁদ পশ্চিম দিকে সামান্য হেলে পড়েছে, জলের ধারে সাদা কাশবনে প্রেমে আর স্বপ্নময়তার দোলায় দুলে সময় পেরোয় দুই নর888sport promo codeর।    

চাঁদটা আরো হেলে পড়লে শফিক বলে, ‘এবার বাড়ি যাব। আমার ভীষণ মাথা ধরেছে।’ অবশেষে তানিয়াকে যখন বাড়ি ফেরার জন্য রাজি করাতে পারল তখন রাত হয়তো শেষের দিকে। শফিক তালা খুলে বাইকটা সিঁড়ির নিচে রাখতে রাখতে বলল, ‘তুমি যাও আমি আসছি।’

গ্রিলে তালা দিয়ে দোতলায় নিজের ঘরে ঢুকে শফিক বিছানার দিকে তাকিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে যায়। সেই মলিন পোশাক পরে ব্যথায় ছটফট করছে তানিয়া! তাহলে মোটরবাইকে করে সে যে সুসজ্জিতা, সৌরভ-ছড়ানো 888sport promo codeকে নিয়ে এলো সে কে?

অনেক কষ্টে শয্যাশায়ী 888sport promo code মুখ থেকে অস্ফুট বাক্য উচ্চারণ করে, ‘তুমি এলে শেষ পর্যন্ত!’

শফিকের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গেল যেন। দুর্বিপাক আর কুহকের মিশ্রণে একজন মানুষের জীবনের একটি প্রহর এতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সে কখনোই ভাবতে পারেনি। কিন্তু এখন হতচকিত হওয়ার সময় নয়, খুব ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। একবার তার মনে হলো, সে রাস্তার কাছে গিয়ে দৌড়ে দেখে আসবে এতক্ষণ যে-888sport promo codeর সঙ্গে সে কাটিয়ে এলো সে-888sport promo code কোথায়? আছে আশপাশে, নাকি উধাও? কিন্তু এই মুহূর্তে একটি সেকেন্ডও নষ্ট করা যাবে না, সেবা-শুশ্রূষা করে তানিয়াকে দ্রুত ভালো করে তুলতে হবে। অন্যসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু ওষুধ! – ওষুধের প্যাকেটটা কই? সে বুকপকেট, প্যান্টের পকেট হাতড়ায়। না ঘরে তো আনেনি। শফিক দ্রুত নিচতলায় সিঁড়ির নিচে মোটরসাইকেলটার কাছে যায়। মধ্যরাতের ওইসব ঘটনার ভেতর সে কেবল ওষুধ কেন অবশিষ্ট পুরো পৃথিবীই বিস্মৃত হয়েছিল। ভাগ্যিস মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে প্যাকেটটা ঝোলানো অবস্থায় পাওয়া গেল। আর বোধহয় আধঘণ্টা বাদেই দিনের আলো ফুটবে। শফিক একটা অদম্য কৌতূহল নিয়ে আশপাশে, রাস্তায়, সামনের মাঠটার দিকে দৃষ্টি দেয়। নাহ্, কোনো 888sport promo codeর ছায়া পর্যন্ত নেই। কিন্তু মোটরসাইকেলটা এখনো তীব্র একটা সুবাস ধারণ করে রেখেছে। রাতের ওই 888sport promo code এই সুগন্ধীই মেখেছিল গায়ে।

ওষুধের প্যাকেটটা নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে শফিক। মোড়ক খুলে আশ্বস্ত হয় – যাক ঠিকঠাক আছে ওষুধগুলো। কিন্তু সিরিঞ্জদুটো হাতে নিয়ে আবারও হতভম্ব হতে হয় তাকে। এ কী – এগুলো এমন লাল কেন? দুটো সিরিঞ্জই লালরঙের তরলে ঠাসা। অন্ধকারের রহস্যময় বিক্রেতা যখন এগুলো হাতে দেয় সে তো চেক করে নেয়নি। এই সিরিঞ্জ দিয়ে কীভাবে ওষুধ পুশ করবে তানিয়ার শিরায়। সে ভালো করে পরখ করে এবং গন্ধ শুঁকে নিশ্চিত হয় দুটো সিরিঞ্জই জমাটবাঁধা রক্ত দিয়ে পূর্ণ।

তখন তানিয়ার কণ্ঠ কানে আসে। সে মিনতির মতো করে বলছে, ‘ইঞ্জেকশনটা দাও না, আমি ব্যথায় মরে যাচ্ছি। তুমি যখন ছিলে না, আমার মনে হয় ব্যথায় একবার সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম।’    

কিন্তু ওই সিরিঞ্জ দিয়ে তো ইঞ্জেকশন দেওয়া যাবে না। আবার সিরিঞ্জ পেতে হলে যেতে হবে সেই সাড়ে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালের সামনে। সকাল আটটা-নয়টার আগে গ্রামাঞ্চলে কোনো ফার্মেসি খোলা পাওয়া যাবে না। গেলেও তারা হয়তো সিরিঞ্জ রাখে না। কাল রাতে যদি ওষুধের প্যাকেটটা সে চেক করে নিত! নিজের ওপর ক্ষোভে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে শফিকের। আবার লাল তরল ভর্তি সিরিঞ্জ জোড়া হাতে নেয়। ভাবে, এগুলো ভালো করে ধুয়ে একটু গরম পানিতে ফুটিয়ে নিলেই তো ব্যবহার করা সম্ভব! এই মনে করে সে কিচেনে গিয়ে গ্যাসের চুলোয় একটু পানি বসিয়ে দেয়। আর তানিয়াকে বলে, ‘তুমি আর পাঁচটা মিনিট কষ্ট কর প্লিজ, সিরিঞ্জটায় একটু সমস্যা আছে, আমি ঠিক করে নিয়ে আসছি।’ তখন হঠাৎ 888sport promo codeকণ্ঠের একটা অদ্ভুত হাসির আওয়াজ ভেসে আসে। কে হাসে ওভাবে? তানিয়া তো নয়ই। আওয়াজটা বাইরে থেকে আসছে। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি রেখে মনে হলো ওই বড় বেলগাছ থেকে হয়তো শব্দটা আসতে পারে। হ্যাঁ সত্যিই – এবার সে মিহি কণ্ঠের শ্লেষাত্মক হাসি শুনতে পেয়ে বেলগাছটার মাথায় বড় বড় চোখ করে তাকায়। দেখতে পায় গতরাতের সেই 888sport promo codeকে; মেরুন রঙের বাহারি পোশাক পরা, এখনো সে সেই সাজেই রয়েছে। একটা বাতাসের ঝটকায় রাতের সেই 888sport promo codeর শরীরের সুবাস এসে প্রবল ধাক্কা মারে তার মগজে। শফিক তখন হতের রক্তভর্তি সিরিঞ্জদুটো ছুড়ে ফেলে। আর বিড়বিড় করে বলে, ‘এখন বুঝতে পারছি এইসব তোমারই কারসাজি। আজ এই বিপদের রাতে কেন লাগলে আমার পিছনে, কী ক্ষতি করেছি আমরা?’

শফিক গ্যাসের চুলোটা বন্ধ করতে গিয়ে বুঝতে পারে তার হাত কাঁপছে। মৃদু কম্পন পুরো শরীরে, গলাটা শুকিয়ে আসছে। সে পাশে রাখা বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি খায়। না, থমকে যাওয়ার সুযোগ নেই। তানিয়াকে তো বাঁচাতে হবে। কিন্তু এখন মোটরসাইকেল চালিয়ে অতটা পথ যাওয়ার মতো মানসিক বল নেই তার। হাত-পা কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে আসছে। সে দ্রুত বেডরুমে গিয়ে তানিয়ার মাথার কাছে বসে। কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে, ‘আমার ভুলের জন্য তোমার এতটা কষ্ট হলো আজ। আর একটু ধৈর্য ধরো। আমি ব্যবস্থা করছি।’

প্রায় তখনই শফিকের চট করে মনে পড়ল সহৃদয় সহকর্মী খালেদ হোসাইনের কথা, তার বাসা হাসপাতালের কাছেই। খালেদ শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে, তারপর ফজর। এখনি আজান দেবে। শফিক তাকে ফোন দিয়ে অনুরোধ করে দুটো সিরিঞ্জ কিনে যেন তার নিজের বাইকে চেপে যত দ্রুত পারে শিকারপুর দিয়ে যায়।

ওপাশ থেকে খালেদ আশ্বস্ত করে, ‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছি। বড়জোর কুড়ি মিনিটের ভেতর সিরিঞ্জ নিয়ে হাজির হবো।’

‘ঠিক আছে ভাই, অনেক ধন্যবাদ।’ বলে শফিক ফোনটা কেটে দেওয়ার পরপরই একটা কল আসে। আননোন নম্বর, কে এই ভোরবেলা? রিসিভ করলে ওপাশ থেকে কোনো কথা শোনা যায় না, কেবল শোনা যায় গভীর নিশ^াসের আওয়াজ। শফিক বলে, ‘হ্যালো কে? কে? কল দিয়ে কথা বলছেন না কেন?’

এবার একটি 888sport promo codeকণ্ঠ ভেসে আসে, ‘আমি।’ 

‘আমি কে? এই সাত-সকালে ফাজলামো করার জন্য ফোন দিয়েছেন? রাখুন ফোন!’

‘আমাকে চিনছ না – সেই আমি।’

আবার সেই মিহি হাসি। কয়েক সেকেন্ডে তা শ্লেষাত্মক অট্টহাসি হয়ে ওঠে।

শফিক ত্বরিত কলটা কেটে দিয়ে হ্যান্ডসেটখানা ওয়্যারড্রবের ওপর ছুড়ে ফেলে। তুমি সরে গিয়ে এখন ফোন দিচ্ছ? তোমরা ফোন করতেও জানো? আগে কখনো ভাবিনি।

তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে ছটফট বা নড়াচড়া করছে না। আবার সেন্সলেস হয়ে গেল নাকি! শফিকের বুকের ভেতর ধক্ করে ওঠে। কাছে গিয়ে দেখে নেতানো লতার মতো তানিয়া তাকিয়ে আছে ছাদের দিকে।

‘ব্যথাটা বেশি?’

‘আছে।’

কথা শুনে একটু আশ্বস্ত হয় শফিক, তীব্রতা কমেছে হয়তো। বারান্দায় গিয়ে সে রাস্তার দিকে খালেদের আসার পথপানে তাকিয়ে থাকে। খালেদ খুব পরোপকারী আর দিলখোলা ধরনের মানুষ। আবার বিশ্বচরাচরের বিচিত্র বিষয় নিয়ে গভীর কৌতূহল আছে; এইসব অশরীরী জগৎ নিয়েও যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। তাকেই সব খুলে বলতে হবে। আর বাসাটা বদলাবে। আজই। কিন্তু তারপরও ফোনে যদি ঝামেলা করে? যদি মাঝরাতে রিং দিয়ে ভুতুড়ে হাসি হাসে! সিমটা না হয় বদলে ফেলবে। মানুষের চেয়ে ওদের বুদ্ধি কি আর অধিক! বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদকে সঙ্গে নিয়ে শাস্ত্র ঘেঁটে সমুচিত জবাব দিয়ে দেবে। ওই তো বাতাস কেটে লাল মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে আসছে খালেদ!