জয়নুল আবেদিন

গোলাম কুদ্দুস

ভবিষ্যতে মানুষ যদি ১৯৪৩ সালের বাংলাকে খানিকটা অনুভবে বুঝতে চায় তাহলে তাকে বিস্তর নথিপত্র ঘাঁটা ছাড়াও দুটি 888sport live chatবস্ত্তর নিশ্চয় সন্ধান নিতে হবে – বিজন ভট্টাচার্যের নাটক এবং আবেদিনের ছবি।
কত গভীরভাবে এঁদের নাটক এবং ছবি ১৯৪৩ সালের বিপর্যয়কে লেখায় এবং রেখায় ফুটিয়ে তুলেছিল ওই দুজন 888sport live chatীর কথাতেই তার প্রমাণ পাই। বিজন ভট্টাচার্যের নাটক দেখতে দেখতে জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, ‘তুলি এবং ব্রাশ ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়।’ আর জয়নুলের ছবি দেখে বিজন ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘থাকত ওইরকম ব্রাশ আর তুলি।’
কিন্তু আশ্চর্য মনে হয়, 888sport appsের এক মহৎ 888sport live chatী আবেদিনের দুর্ভিক্ষের ওপর অঙ্কিত এই ছবিগুলির প্রতি তীক্ষ্ণ শ্লেষ বর্ষণ করেছেন। তাঁর মতে, একে তো দুর্ভিক্ষের যন্ত্রণা, তার ওপর রং দিয়ে দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকে দুঃখ বাড়িয়ে লাভ কী? তার চেয়ে বরং দু-পয়সার পান কিনে ঠোঁট রাঙানো ভালো।
কী নিয়ে তাহলে আর্ট? আর্টের প্রেরণা তাহলে কোথায়? যা 888sport live chatীচিত্তের অনুভূতিকে গভীরভাবে নাড়া দেয় সেটা 888sport live chatের বিষয়বস্ত্ত কেন হতে পারবে না?
পরম সুখের বিষয়, এই ধারণা ১৯৪৩ সালে অধিকাংশ 888sport live chatীই স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রাহ্য করেছিলেন, এমন 888sport live chatী কমই ছিলেন, যিনি দুর্ভিক্ষের কিছু না কিছু ছবি এঁকেছেন।
আর একদল লোকের ভালো লাগেনি। তাঁরা আমাদের প্রভু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসক সম্প্রদায়। মিসেস এলা রিডের ইন দোজ ডার্কেনিং ডেজে আবেদিনের যে-ছবি আছে সেজন্যে বইখানিকে বেআইনি করার কথাও শোনা গিয়েছিল। যুদ্ধের কয় বৎসরে বা তারপরে সরকারি ‘সার্ভিস আর্টিস্ট ক্লাব’ও একবারের তরে দুর্ভিক্ষচিত্রের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বলে শুনিনি। যারা দুর্ভিক্ষের স্রষ্টা তারা দুর্ভিক্ষচিত্র দেখতে বা দেখাতে যাবে কেন?
আর ভালো লাগেনি সাম্রাজ্যবাদের অনুচর এবং দুর্ভিক্ষের সহস্রষ্টা অনেক ভারতীয় শোষকের। জি ডি বিড়লা আবেদিনের কোনো ছবি দেখে মন্তব্য করেন, ‘আমি ভুলে যেতে চাই, আমাকে ভুলে যেতে দাও। এসব আমার সম্মুখ হতে সরাও। আমি সহ্য করতে পারিনে।’
সহ্য হবে কী করে? সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এ যে দেশপ্রেমের দুর্জয় প্রতিবাদ, শোষণের বিরুদ্ধে এ যে মানবতার দুর্জয় চ্যালেঞ্জ! এক-একটি দুর্ভিক্ষচিত্র সারা দুনিয়ার সামনে সাম্রাজ্যবাদী শোষকের মুখের ওপর এক-একটি কড়া চাবুক।
শুধু দুর্ভিক্ষচিত্রের কথা নয়, এ-যুগের মানুষ আর্টকে এক শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে দেখেছে। কেননা আর্টের ভিত্তিই যেহেতু মানবতা, সেহেতু আর্টের বিকাশে মানুষের শত্রুদের বিপদ বাড়ে বই কমে না। ফ্যাসিস্টরা সেটা ভালোরকম বুঝত।
888sport live chatাচার্য অবনীন্দ্রনাথ পর্যন্ত হঠাৎ একমুহূর্তে 888sport live chatের এই প্রতিরোধ দিকটা স্বীকার করে ফেলেছেন : ‘এ আমি দেখতে পাচ্ছি – রইল না, দেশের 888sport live chat দেশে রইল না। বিদেশি এলো, চোখে ধুলো দিয়ে নিয়ে গেলো রাতারাতি লুঠ ক’রে। সকালে দেখি আমাদের ঘর শূন্য, ভান্ডার খালি, শুধু 888sport live chatী বসে একটা ভুয়ো কৌলিন্য নিয়ে।… মন ভাবছে না, পা চলছে না, নিষ্ক্রিয় অবস্থায় হাত পেতে বসে আছি। হঠাৎ কোনো একটা সুযোগ যদি এসে পড়ে এই আশায়! এই হল জাতীয় জীবনের সব দিক দিয়ে অতি ভয়ঙ্কর পক্ষাঘাতের প্রথম লক্ষণ – বাইরেটা রইল ঠিক কিন্তু ভিতরটা নিঃসার 888sport live chatের দিক দিয়ে। এই মানসিক এবং বাইরেও হাত পায়ের পক্ষাঘাত নিবারণ কেবল 888sport live chatক্রিয়ার দ্বারা হতে পারে, বহুকাল ধরে হয়েও এসেছে। রাজ্য গেল, রাজা গেল তখন বাঁচবার রাস্তা হল মানুষের পক্ষে 888sport live chat। আপৎকালে 888sport live chatের উপর নির্ভর এটা শাস্ত্রের কথা, কেননা শাস্ত্রকাররা জানতেন ক্রিয়াশীলতা এবং ক্রীড়াশীলতা দুটোই 888sport live chatের এবং জীবনেরও লক্ষণ, তাই ক্রিয়াভেদে কলাভেদ নির্ণয় করে গেছেন।’ (বাগেশ্বরী 888sport live chat 888sport liveাবলী, পৃ ১৫৭)
অবনীন্দ্রনাথ শুধু ‘আপৎকালে’ 888sport live chatের দায়িত্বের কথা বলেছেন, কিন্তু প্রত্যেক 888sport live chatই যদি সত্য ও সুন্দরকে প্রকাশ করে, তাহলে 888sport live chat কেন যে প্রত্যেককালেই মানুষকে তার বিকাশ এবং সংগ্রামে সাহায্য করবে না বোঝা মুশকিল। যা হোক, জয়নুল আবেদিনের মতো 888sport live chatীরা ‘ভয়ংকর পক্ষাঘাতের’ বিরুদ্ধে যখন আঘাত হানেন তখন তাকে যদি কেউ ব্যঙ্গ বা তাচ্ছিল্য করেন, তাঁকে ‘ভুয়ো কৌলীন্যের’ তল্পিবাহক বলতে আমরা ছাড়ব কেন?

দুই

আমরা নতুন 888sport live chatকে অভিনন্দন জানাব, সাগ্রহে মাথায় তুলে নেব, এবং অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করব। যুদ্ধের এই কয় বৎসরে সারা দেশে ব্যাপক ধ্বংসলীলাই চলছে, সামান্য সৃষ্টি হয়েছে। চারিদিকে মরা আর আধমরাদের প্রেতছায়া, সুস্থ নৈতিক বোধের অপমৃত্যু, ঘুষ এবং মুনাফাখোরদের আত্মসন্তুষ্ট হয়ে মন্থর চলাফেরা এবং সর্বপরিশেষে এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দাবানল। সাম্রাজ্যবাদ যুদ্ধের মধ্যে দেশে নতুন কল-কারখানা সৃষ্টিও হতে দেয়নি, যাতে দেশের সমৃদ্ধি হতে পারত। যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থার তুলনায় সাধারণ প্রীতি সৌহার্দ্য বন্ধুত্ব আত্মীয়তাবোধ ঝিমিয়ে পড়েছে বলা যায়। দুর্ভিক্ষ মহামারি বন্যা এবং ভ্রাতৃবিরোধ 888sport appsের সভ্যতার প্রতিটি স্তম্ভ ভেঙে আজ খান-খান। এই ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে কিছু কিছু সৃষ্টির অঙ্কুর কেবল নবজাগ্রত গণচেতনায়, গণসংগঠনে এবং কিছু কিছু 888sport live chat-888sport live footballে খানিকটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আর সহস্র মৃত্যুর মধ্য থেকে বেরিয়ে এলেন এমন একজন 888sport live chatী, যাঁর কালো মোটা রেখাগুলো দুস্থ মূক মানুষকে সারা ভারতের কাছে মুখর করে দিয়েছে।
কিন্তু এই মোটা রেখার জোর কোথা থেকে এলো? আর, দুর্ভিক্ষের আগে ও-জিনিস কোথায়ই বা লুকিয়ে ছিল?

তিন

রেখার জোর সহজে আসেনি। তার জন্য জয়নুল আবেদিনকে যে সাধনা করতে হয়েছে, সেরকমটি বোধ হয় 888sport appsের আর কোনো আর্টিস্টকেই আজ পর্যন্ত করতে হয়নি। দু-একটা নমুনা দিই।
ময়মনসিংহের আর্টবিহীন এবং আর্টবিরোধী গরিব মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে ম্যাট্রিক ক্লাসে পড়ার সময় শুধু কলকাতার আর্ট স্কুলটা চোখে দেখার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় আসে। অনাত্মীয় মহানগর, হাতে মাত্র একটা টাকা সম্বল, ধর্মতলায় দুটো কমলালেবু নিয়ে বিস্তর দরাদরি, ফলে হঠাৎ চপেটাঘাতপ্রাপ্তি! এতে কলকাতাকে বড়ই কঠিন ঠাঁই মনে হলো। অতএব চোখ মুছতে মুছতে শিয়ালদহে ফিরে গিয়ে বিনা টিকিটে স্বদেশ-যাত্রা। সেবার আর্ট স্কুল আর দেখা হলো না।
নীতিবাগীশদের কাছ থেকেও কম বাধা আসেনি। ছেলে আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে কোন বিধানে, ছবি আঁকা যে শরিয়তের বরখেলাপ!
তার পরের বৎসর আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে আবেদিনকে কয়েক মাস ওয়েলেসলি স্কয়ারের বেঞ্চিতে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে। সবচাইতে কষ্টকর ছিল পার্কে ভোর হওয়ার পর শতরঞ্জি বাঁধা তোশকটা বগলে নিয়ে কোথায় রাখব কোথায় রাখব করে নিত্যনতুন জায়গার সন্ধান। আর্টপাগল ছেলেটি পরে জানতে পারে, এক-একটি করে মসজিদের আঙিনাতে কয়েকটি করে রাত অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায়।
888sport live chatী জয়নুল আবেদিনকে এমনি ধারা অজস্র অভিজ্ঞতা নিয়ে এবং শহর ও গ্রামের সাধারণ জীবনধারার মধ্যে থেকে আর্টের সাধনা করতে হয়েছে। দুস্থ কৃষকের মুখ তাঁর রেখায় যে এমন করে ফোটে ড্রইংয়ের জোরই তার সবটুকু কারণ নয়। এই কৃষকদের নানান স্তরের নানা দুঃখবেদনার সঙ্গে আর্টিস্ট অত্যন্ত পরিচিত বলেই যন্ত্রণার সমস্ত আলোছায়া এমনভাবে তাঁর ছবিতে ফুটে বেরোয়। শুধু দুস্থের ছবি নয়, মিল্লাতের পাতায় আবেদিনের গ্রাম্য জীবনযাত্রা সম্বন্ধে যে-ছবি বেরিয়েছে সেগুলি পল্লীজীবনের এত জীবন্ত এবং সুপরিচিত  বাস্তব দৃশ্য! মেয়ে চলেছে বাপের বাড়ি ‘নাইওর’ করতে, ‘পানি আর পান্তা’ নিয়ে কৃষকের ছোট মেয়েটি চলেছে মাঠে; ধান-কাটা,  ধান-মাড়াই, ধান-ঝাড়ার দৃশ্য; কয়েকটি লোক শীতের সন্ধ্যায় নদীর ধারে বসে আছে খেয়াপারের আশায়; শীতের সকালে একদল বস্ত্রহীন মানুষ ভিড় করে পোয়াচ্ছে আগুন; গুণ টেনে চলেছে মাল্লারা; মাছ ধরছে জেলেরা; আসন্ন বৈশাখী ঝড়ের মুখে একজোড়া লাঙলের গরু খেদিয়ে ত্রস্ত কৃষক ফিরছে বাড়ি; এমনি ধারা পল্লিজীবনের শত বিচিত্র দৃশ্য।

চার

কিন্তু দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকার আগে আবেদিনের 888sport live chat-প্রতিভা কোথায় লুকিয়ে ছিল? তখনো তো আবেদিন প্রচুর আঁকতেন, সবাই বলত, ড্রইংয়ে আবেদিনের পাকা হাত, তবু তিনি 888sport live chatী বা জনসাধারণের মনে তেমন সাড়া জাগাতে পারেননি। মনে হয় তার সহজ কারণ, তখন টেকনিক আবেদিনের আয়ত্তে ছিল, ছিল না কেবল বিষয়বস্ত্ত। কিন্তু এবার সোনায়-সোহাগায় মিলেছে। প্রশ্ন আসে : কেন তিনি এর আগে বিষয়বস্ত্ত পাননি? যে নানান বিষয় নিয়ে তিনি তখন ছবি আঁকতেন সেগুলো কি ‘বিষয়বস্ত্ত’র অন্তর্ভুক্ত নয়?
নিশ্চয়ই এমন বিষয়বস্ত্ত নয় যা দিয়ে আবেদিন বড় 888sport live chat সৃষ্টি করতে পারেন, বা, যা দেখে মানুষের মন দারুণভাবে সাড়া দিতে পারে। দুর্ভিক্ষের বাস্তবতা যখন কলকাতার বুকে নেমে এলো তখন 888sport live chatী চোখের সামনেই এমন বিষয়বস্ত্ত পেলেন যা লাখ লাখ মানুষের মন, মস্তিষ্ক ও জীবন ধরে নাড়া দিচ্ছে। ফরাসি 888sport live chatী রঁদ্যা বলেছিলেন, অনুভূতি ও সত্যকে একত্রে প্রকাশ করতে পারলে বড় আর্টের জন্ম হয়। 888sport live chatীর অনুভূতি নিয়ে যখন আবেদিনের ছবিতে দুর্ভিক্ষের সত্য ফুটে উঠল তখন সকলের মনেই তা সাড়া জাগাল।
কিন্তু দুর্ভিক্ষ তো দৈব-দুর্ঘটনা নয়, দুর্ভিক্ষের পশ্চাতে অনেক বাস্তব ঘাত-প্রতিঘাত লুকিয়েছিল, মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে যা বাস্তবিক পক্ষে আঘাত হানছিল – 888sport live chatের বিষয়বস্ত্ত হতে এদের কোনো বাধা কোনোদিন ছিল না।  রোগ-শোক, যন্ত্রণা, শোষণ, ক্রন্দন, কলহ, ভালোবাসা, সংগ্রাম – প্রত্যেকটিই এক-একটি বিষয়। কিন্তু মুশকিল এই, এর কোনোটাই দুস্থ মানুষের মতো সর্বস্ব রাস্তায় বিছিয়ে সর্বসমক্ষে নিজেকে এত উলঙ্গভাবে প্রকাশ করে না। এদের প্রকাশ জানতে হলে, এদের স্বরূপ বুঝতে হলে, প্রত্যেকটাকেই বাস্তব দুনিয়া থেকে খুঁজে পেতে আবিষ্কার করতে হয়, এদের সম্বন্ধীয় সত্যকে উদ্ধার করতে হয়। এই সত্য জিনিসটা কী? সমস্ত বাস্তব দৃশ্য ও পরিস্থিতির যে-সম্পর্ক এবং সমস্তের সমন্বয়ে যে রূপ তাকেই সত্য বলা যায়। কোনো জিনিসকেই বিচ্ছিন্ন করে দেখলে তার সত্য পাওয়া যায় না। এর মানে অবশ্য এই নয় যে, 888sport live chatী কোনোকিছু আঁকতে গেলেই তাকে একবার বিশ্বব্রহ্মান্ড ঘুরে আসতে হবে। এর মানে শুধু এই যে, সামাজিক বাস্তব সত্য সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি থাকলে 888sport live chatরচনায় আরো গভীরত্ব বাড়ে এবং অনুভূতি তীক্ষ্ণতর হয়।
সেই বাস্তব সত্যের সন্ধানে অনেক 888sport live chatীরই অরুচি দেখা যায়। তাঁরা ভাবেন, ওটা সমাজতান্ত্রিক, রাজনীতিক, অর্থনীতিক বা আর কারো কাজ! ফলে বহু জীবন্ত বহু বিচিত্র বহু গভীর বিষয় 888sport live chatী-888sport live footballিকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। 888sport live chatী 888sport live chatের বিষয় খুঁজে মরে সংকীর্ণ বদ্ধচেতনায় বা দৃষ্টির চারপাশে মানুষের বিরাট ব্যাপক জীবনযাত্রা হতে আর্টিস্ট রস সংগ্রহ করতে পারে না। ক্রমে ক্রমে আর্ট এবং জনসাধারণের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

পাঁচ

তার মানে আমি এ বলছিনে যে, গোলাপ ফুল বা পূর্ণ চন্দ্র নিয়ে আর ছবি আঁকা হবে না। 888sport live chatীর অনুভূতি এবং দৃষ্টিতে যা সত্য হয়ে ওঠে, 888sport live chatীর মনে যা অনুপ্রেরণা জোগায় তা নিয়ে 888sport live chatীর ছবি আঁকতে নিশ্চয়ই সাড়ে ষোলো আনা অধিকার থাকবে। কিন্তু শ্রেণিবিভক্ত সমাজের কদর্যতায় বিতৃষ্ণ হয়ে আধুনিক যুগের অনেক 888sport live chatীকে একেবারে সমাজের দিকে পিঠ ফিরিয়ে চিরসুন্দরের বন্দনা করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় জটিল-কুটিল সমাজ সংসারকে এড়িয়ে ফুল চাঁদ নিয়ে ছবি অঙ্কনকেই 888sport live chatী নিজের ‘স্বাধীনতা’ বলে ভুল করেন। এ তো স্বাধীনতা নয়, এ যে পশ্চাদপসরণ, এ যে নিজের পরাজয় নিয়ে আস্ফালন!
অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে এও মনে রাখতে হবে, শ্রেণিবিভক্ত সমাজের বিরুদ্ধে 888sport live chatীর এটা একটা আত্মরক্ষার চেষ্টাও বটে।
কিন্তু সমাজ-সত্যকে না বুঝে এরকম আত্মরক্ষার চেষ্টায় আর্ট ক্ষুণ্ণ হয়। আর এরই ফলে সমাজের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পেরে গগ্যাঁর মতো 888sport live chatী সভ্য জগতের সম্পর্ক এড়িয়ে তাহিতি দ্বীপে আশ্রয় নেন, সেজাঁ নর্দমায় তাঁর ক্যানভাস ছুড়ে ফেলে দেন, ভ্যান গঘকে উন্মাদ আশ্রমে জীবনলীলা সাঙ্গ করতে হয়।
অর্থাৎ সমাজ যত জটিল, যত নির্দয়, যত কর্কশই হোক, মানুষের 888sport live chatের খাতিরে এবং 888sport live chatীর নিজের প্রাণের তাগিদে তাকে কোনোমতেই এড়ানো চলে না। সামাজিক মানুষের পরস্পরের বিচিত্র সম্বন্ধ থেকে কত রূপ কত রস কত বর্ণ এবং কত বিষয়বস্ত্তই না উদ্ভব হতে পারে। 888sport live chatীর তুলি তা কোনোদিন এঁকে শেষ করতে পারবে না। সেই জীবন্ত আর্টের সঙ্গে জনসাধারণের জীবনের যোগও হয় সহজে, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে।
আবেদিনের ছবির বিষয়বস্ত্তর কথাই ধরা যাক। তাঁর পল্লী-চিত্রগুলির মধ্যে জমিদার-মহাজন-কৃষকের পাশাপাশি সন্নিবদ্ধ কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ এ দিয়ে কত বিচিত্র ছবি হতে পারে, যা 888sport live chatী বা জনসাধারণের, উভয়ের, মনকে নাড়া দিতে পারে, খুশি করতে পারে, প্রেরণা জোগাতে পারে। কিংবা শহরে শহরে যে স্ট্রাইক তরঙ্গ ছোটে শ্রমিকের সেই নবজাগ্রত প্রতিরোধের চিত্র কত ছবির বিষয়বস্ত্ত হতে পারে। মোটের ওপর, এই সংগ্রামশীল জীবনের সত্য সম্বন্ধে গভীর চেতনা না থাকার ফলে আবেদিনের এত ছবির মধ্যেও মানুষের প্রতিরোধের একটি চিত্রও পাওয়া যায় না। অথচ এটা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়, মানুষের সুখ-দুঃখ দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের ছবি যেখানে যত গভীরভাবে প্রকাশ পাবে, সেই ছবি মানুষের মনকে তত বেশি নাড়া দেবে।
একে আপনি রাজনীতি, সমাজনীতি বা 888sport live chatনীতি যা খুশি বলতে পারেন। কারণ মানুষ নিয়ে যদি ওই তিনটি জিনিসের কাজ-কারবার হয় তাহলে একটার সঙ্গে আরেকটার যোগ থাকা মোটেই বিচিত্র নয়, অত্যন্ত স্বাভাবিক। যোগাযোগেই পরস্পরের পরম লাভ। সামান্য উদাহরণ ধরুন, জয়নুলের মতো 888sport live chatীকেও দায়ে পড়ে ‘কমার্শিয়াল আর্টে’ যেতে হয়। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা ছেড়েই দিলাম, আজ দেশটা যদি শুধু স্বাধীন থাকত তাহলে আবেদিনকে হয়তো ওই কাজটা করতে হতো না।