আন্দালিব রাশদী
আমার এপিএস আবুল হুসসাম জানে আমার ডিপফ্রিজে কাটা মুণ্ডুটা কার। এপিএস মানে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রাইভেট সেক্রেটারি – সহকারী একান্ত সচিব। তাকে গোপনীয় অনেক কিছু জানতেই হয়, কিংবা সে গোপনীয় অনেক কিছু জানে বলেই তাকে এপিএস করা হয়।
পিএস জানে না। তাকে না জানলেও চলে। কারণ আমি তার ওপর খুব একটা নির্ভর করি না। আমার পিএস সৈয়দ বোরহানউদ্দিন একটু আহাম্মক কিসিমের। এ-কারণেই দাঁত বের করে হাসে, গোপনীয় কথা পেটে রাখতে পারে না। প্রাইভেট মানে যে একান্ত ব্যক্তিগত এটাও পুরো বোঝে না। আমার ব্যক্তিগত বিষয়ের যেটুকু সে জানে বলে মনে করে, সেটুকু আসলে আংশিক জানে। এই আংশিক জ্ঞানের কিছুটা আবার তার
ক্লাসমেট, ব্যাচমেট এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে। তাদেরই কেউ-কেউ আমাকে সতর্ক করে দেয় – প্রাইভেট সেক্রেটারি বদলান। এ শালা তো আপনাকে ডোবাবে।
যেমন একবার সৈয়দ বোরহানউদ্দিন বলেছে, মন্ত্রী মহোদয় ইয়েস, নো, ভেরি গুডের বেশি ইংরেজি জানেন না।
যেমন মন্ত্রী মহোদয়ের নানার ভাই ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়েন এবং গণপিটুনিতে নিহত হন।
যেমন মন্ত্রী মহোদয় ঘুষ খান না। কাজেই পলিটিক্যাল প্রেশার ছাড়া তিনি আপনাদের নথি অনুমোদন করবেন বলে মনে হয় না।
প্রথমত : আমার ইংরেজি জানাকে পিএস আন্ডার এস্টিমেট করেছে। বিদেশি মানে ইংরেজিভাষী কারো সঙ্গে কথা বলতে আমার দোভাষী লাগে না।
দ্বিতীয়ত : গণপিটুনিতে আমার নানাই নিহত হন। তার কোনো ভাই নেই, সাত বোন।
তৃতীয়ত : পলিটিক্যাল প্রেশারে কাজ করার লোক আমি নই। কখনো এমনিতেই করি, তাতে সুনাম হয়, ভোটার বাড়ে; কখনো টাকা দিতে বাধ্য করি। বলতে পারেন, গলায় হাত ঢুকিয়ে গিলে খাওয়া সিকিটা-আধুলিটাও বের করে আনতে জানি।
তবে আমাকে বিপদাপন্ন করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসব বলে না। এমনিতেই বলে যায়। বলে সুখ পায়।
তাকে সরানো আমার জন্য এক মিনিটের ব্যাপার। শুধু ফোন করে বলে দেব, সৈয়দ সাহেবের বদলে অন্য কাউকে দিন। কিন্তু তাতে আমার স্ত্রী ক্ষুব্ধ হবে। ক্ষুব্ধ হওয়ার কথাই। কারণ আমার দ্বিতীয় স্ত্রী বাবলিকে সন্তুষ্ট করতেই তাকে নিয়োগ দিয়েছি। আমি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় সরকারের আট-দশজন উপসচিব আমার পিএস হতে চেয়েছে। তবে সরাসরি কেউ আসেনি। কেউ এগিয়েছে পার্টি লাইনে, কেউ অন্য মন্ত্রীর মাধ্যমে। সৈয়দ বোরহানউদ্দিন তার ক্লাসমেট বাবলিকে ধরে।
বাবলি স্বীকার করেছে, ক্লাসনোট সরবরাহ থেকে শুরু করে এমনকি পরীক্ষায় ছোটখাটো নকল সরবরাহ পর্যন্ত অনেক সেবাই প্রদান করেছে সৈয়দ বোরহানউদ্দিন। বাবলি মনে করে, বোরহান না হলে তার ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট জুটত না। কেন এতকিছু করেছে জিজ্ঞেস করলে বাবলি জবাব দেয়, আমিও তো তা-ই বলি। এমন নিঃস্বার্থও মানুষ হয়। এখন ঋণ শোধের একটা সুযোগ। বোরহানকে তুমি পিএস করে নিলে আমার ঋণটা শোধ হয় আর বোরহানের বসের ওয়াইফ হিসেবে আমার স্ট্যাটাসও একটু বাড়ে।
বাবলি বলেই চলে, আমাদের সঙ্গে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট তো লেকচারার হিসেবে জয়েন করে পিএইচডি করতে লন্ডন গেল, আর ফিরলই না। এখন নাকি নিউইয়র্কে ক্যাব চালায়। ফার্স্টক্লাস সেকেন্ড সৈয়দ বোরহানউদ্দিন সিভিল সার্ভেন্ট হলো। ফার্স্টক্লাস থার্ড হলো হাউসওয়াইফ। তার হাজব্যান্ড তোমার মিনিস্ট্রির একটা ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে কাজ করত। প্রজেক্টের মেয়াদ শেষ। এখন বেকার। দলবেঁধে প্রজেক্টের বেকাররা তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে।
আমার সম্মতির আগেই বাবলি বলে, আগে বোরহান জয়েন করুক। ওকে দিয়েই আমার ক্লাসমেটদের ডিনারে ডাকব। তুমি থাকবে কিন্তু।
সুতরাং সৈয়দ বোরহানউদ্দিনকে নিতেই হয়। পলিটিক্যাল সেক্রেটারিকে বলতে হয়, অসুবিধে নেই, বোরহান আমাদের পার্টিকেই ভোট দেয়। হুট করে সরিয়ে দিলে বাবলি ক্ষুব্ধ হবে। বোরহানের জন্য টানটা আরো বেড়ে যাবে। এমনিতেই সে নিজেকে তার কাছে ঋণগ্রস্ত মনে করে।
আমার এপিএস কে হবে পরিস্থিতিই তা নির্ধারণ করে দেয়। প্রশ্নটি যোগ্যতার ও অভিজ্ঞতার নয়। আবুল হুসসাম জানে আমার ডিপফ্রিজে মুণ্ডুটা কার। এরকম একটি তথ্যের অধিকারীকে জিজ্ঞেস করা যায় না – তোমার যোগ্যতা কী?
দুই
ইলেকশনের আগে আমার নির্বাচনী এলাকায় চারটা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। শুরুতে খুন হয় আমাদের ফজলুল হক। শেরেবাংলার মতোই বিশালদেহী। এরকম একজন মানুষকে শোয়ানো কম কথা নয়।
ফজলুল হক জেলা যুবফ্রন্টের সভাপতি। নমিনেশন তারও চাই। আমি পুরনো সদস্য। ফজলুল হক আমাকে বলল, আপনি তো অনেকদিন চালালেন, নতুনদের সুযোগ দিন।
জিজ্ঞেস করলাম, কেন, আমি আর চালাতে পারছি না?
ঠিক তা নয়, নেতার পলিটিক্যাল সেক্রেটারি আমাকেই গ্রিন সিগন্যাল দিলেন। বললেন, নেতার ব্লেসিংস আছে।
আমি বললাম, শুধু নেতার ব্লেসিংস? আমার ব্লেসিংস লাগবে না? ফজলুল হক চুপ করে থাকে।
এটা ঠিক অনেকদিন ধরেই আমি চালাচ্ছি। তরুণদের জন্য কেন ছাড়ব না। অবশ্যই ছাড়ব। আর দু-এক টার্ম পড়ে ফজলুর চেয়েও তরুণ একজনের হাতে ছেড়ে দেব। সেই তরুণের নাম সোহরাব। সে আমারই পুত্র। প্রথম সন্তানটা নিজেদের মধ্যকার দলাদলিতে খুনের মামলায় আসামি হয়ে দেশান্তরি না হলে জেলার অন্তত দুটো আসন আমাদেরই থাকত। আমারটা পেত সে। আমি দাঁড়াতাম শ্বশুরবাড়িরটাতে। অসুবিধে নেই। সোহরাবও সেয়ানা হয়ে উঠছে। চালাতে পারবে। পিতা হিসেবে আমার দায়িত্ব তার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট আদায় করা। আমি বেঁচে থাকলে সেটা খুব কঠিন কাজ হবে না।
আপাতত ফজলুল হককে সামাল দিতে ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আক্রাম আলীকে ডেকে বললাম, তুমি এগিয়ে যাও। দেখি কার ব্লেসিংস কাজে লাগে – পলিটিক্যাল সেক্রেটারির, না আমার। এবার ছাত্রফ্রন্ট ও যুবফ্রন্ট মুখোমুখি।
ফজলুল হক যুবফ্রন্ট অফিসে টেবিলে পা তুলে কর্মীদের এটা-ওটা নির্দেশ দেওয়ার সময় ঘাতকের ব্রাশফায়ারে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। লাশ নিয়ে যে মিছিল হয়, বয়স, পদ, অভিজ্ঞতা ও 888sport app অব্যক্ত কারণে আমাকেই সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিতে হয়। আমাকে ঘোষণা করতে হয়, হত্যাকারীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
ঘটনাটি আকস্মিক। ফজলুল হকের ছোটভাই বজলুল হক – রাজনীতির সাথে নেই পাঁচে নেই, বলা নেই কওয়া নেই আমার বাড়িতে এসে আমার গলাটিপে ধরে বলে, রুস্তম আলী, বেশি চালাক হয়ে গেছেন? আমার ভাইটাকে আপনি দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলেন।
কী আশ্চর্য! সেদিনের ছেলে বজলু আমার গলায় হাত দিলো! হত্যামামলায় সন্দেহভাজন আসামি আক্রাম আলীকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন সে থানাতেই ছিল, কাদের দারোগার সঙ্গে চা খাচ্ছিল। ওপর থেকে সিগন্যাল এসেছে। না ধরে উপায় নেই।
আমিও আক্রামকে সিগন্যাল পাঠালাম, চিন্তা করিস না, আমি তো আছি। তাছাড়া কারাবন্দি না হলে জনগণের নেতা হওয়া যায় না। নেলসন ম্যান্ডেলা থেকে শুরু করে রুস্তম আলী পর্যন্ত সবাই জেল খেটেছে। সেদিনই বজলুর মুণ্ডুহীন দেহটা আবিষ্কৃত হয় গার্লস কলেজের হোস্টেলের পেছনে একটি বড় রাস্তায়।
শোকসভায় আমাকেই বলতে হয়, হত্যাকারীর বিচার না হলে, হত্যাকারীকে ফাঁসিতে ঝোলাতে না পারলে, এলাকার কলঙ্ক মোচন হবে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় ওসিকে ক্লোজ করা হয়।
আমাদের অপজিশনেরও একই অবস্থা। তোবারক আলী কারচুপির নির্বাচনে তিনবার আসনটা ছিনিয়ে নিয়েছেন। একাত্তরে মেজর বাশারাত গুল আমাদের দুজনকেই ক্যান্টনমেন্টে খাবার সাপ্লাইয়ের কাজ দিয়েছেন। তোবারক আমার চেয়ে বছর কয়েকের ছোটই হবেন। সঙ্গত কারণেই তার স্ত্রীও আমার স্ত্রীর চেয়ে কমবয়সী। আমরা দুজনই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাশারাত গুলকে দাওয়াত করে খাইয়েছি। আমাদের দুজনের স্ত্রীই খাবার পরিবেশন করেছে। তোবারকের স্ত্রী অপেক্ষাকৃত বেশি আকর্ষণীয় হওয়ার কারণেই হয়তো তিনি বেশি পরিমাণ খাবার সাপ্লাইয়ের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছেন। ফলে আমি তাকে রাজাকার বলার সুযোগ পেয়েছি। প্রতিবাদ করলে আমি প্রমাণ করতে সক্ষম হবো যে, ক্যান্টনমেন্টে আমার সরবরাহের পরিমাণ তার চেয়ে কম।
তার দলের বিদ্রোহী প্রার্থী তারই জেলা কমিটির সহকারী মহাসচিব আবদুস সোবহান। আমি আবদুস সোবহানকে অভিনন্দন জানিয়েছি। টেলিফোনে বলেছি, তারুণ্যের অভ্যুদয় ঘটছে। তোবারক আলীর সঙ্গে ইলেকশনটা একঘেয়েমির কম্পিটিশন। তার চেয়ে বাবা তুমি থাকো। আমার দলের ইয়ং ছেলেরাও তোমাকে ভোট দেবে।
আবদুস সোবহান আমার দোয়া চেয়েছে – দোয়া করবেন চাচা। অবশ্যই দোয়া করব। তোমার বাবা একটু দূরের হলেও আমার তো ফুপাতো ভাই। ইলেকশনে তুমি জিতলে, এটা আমারও বিজয়।
বিরোধীদলের নেতার নির্দেশে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সমঝোতা বৈঠকে এসেছেন। একই মঞ্চে দুজন বিশাল জনসভায় হাত মেলালেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকার উচ্ছেদ আন্দোলনের অঙ্গীকার করলেন, গলদা চিংড়ির কোর্মা খেয়ে কেন্দ্রীয় নেতা অতিভোরে 888sport appর উদ্দেশে রওনা হলেন, খবর রটল আবদুস সোবহানকে আর পাওয়া যাচ্ছে না।
কী আশ্চর্য এরকম একটা জলজ্যান্ত মানুষ যাবে কোথায়? আমি বলি। আমি আরো বলি, তোবারক আলীর পক্ষে দু-চারটা মানুষ গুম করা কোনো ব্যাপারই নয়।
আবদুস সোবহানের মুণ্ডুহীন নগ্নদেহ আবিষ্কৃত হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজাহীন একটি কক্ষে। হত্যা যে-ই করুক হুকুমদাতা নিশ্চয়ই তোবারক আলী। মামলা সেভাবেই হলো। তোবারকের এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়ল। আমি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে দক্ষ খানাদার আনিয়েছি। বিরোধীদলকে দৌড়ের ওপর রাখা হবে। কিন্তু এই নিমকহারাম নাকি আমার বিরুদ্ধে একটা গোপনীয় রিপোর্ট পাঠিয়েছে।
হঠাৎ করে আমার এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটু অবনতি ঘটলেও নতুন ওসি (দুমাসের মধ্যেই ওসি বদলাতে বাধ্য হয়েছি) বেশ সামলে নিয়েছে। তার যোগদানের আগের সপ্তাহে কালভার্টের নিচে একটা মুণ্ডুহীন দেহ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, তার নাম মুনিরুল ইসলাম। ডিগ্রি কলেজের ছাত্র। 888sport app download apk-টবিতা লিখত। গার্লস কলেজে আমাদের ছাত্রফ্রন্টের সভানেত্রী নূরে চেমন আরার সঙ্গে একটা ভাবের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটিকে সতর্ক করে দেওয়া হয় : মুনিরুল ইসলাম খুব সুবিধের নয়, অপজিশনের সঙ্গে একটা আঁতাত করে চলেছে। ডিগ্রি কলেজেরই সারোয়ার আলীর সঙ্গে নূরে চেমন আরা আরো বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল। আমাকে আবার বলতে হলো, হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।
মামলায় সারোয়ার আলী, নূরে চেমন ও তাদের ঘনিষ্ঠ কজন জড়িয়ে গেল। নূরে চেমনের হোস্টেল কক্ষে তল্লাশি চালানো হলে তাকে লেখা মুনিরুল ইসলাম ও সারোয়ার আলীর প্রেমপত্র আবিষ্কৃত হয় এবং স্থানীয় সংবাদপত্রে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় মুনিরুল সম্ভবত ত্রিভুজ প্রেমের বলি।
নূরে চেমনকে রক্ষা করতে আমাকে নামতেই হয়। এমনিতে আমার নির্বাচনী এলাকায় আমাদের পার্টির মহিলা ফ্রন্ট খুব দুর্বল। পার্টির কথা চিন্তা করে তাকে আরো বেশি সাপোর্ট দিতে হয়। হোস্টেল তার জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হবে না বিবেচনা করেই আমার বাড়িতে এনে তুলতে হয়। এদেশের মানুষ অভ্যাসগতভাবেই 888sport promo codeর বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায়। তাদের মুখ বন্ধ করতেই নূরে চেমনকে আমার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। এতে তার লাভই হয়েছে বেশি – চার্জশিট থেকে নামটা বাদ পড়েছে। আমার প্রথম স্ত্রী আরজুদা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার চেষ্টা করলে শুধু বলি, মুণ্ডুহীন লাশের 888sport free bet বেড়ে গেলে আমাদের এলাকার দুর্নাম হবে। আরজুদা লোকজনের সামনে বলে বসে, আপনার লজ্জাশরম নেই, মেয়েটা তো বয়সে আমার রুস্তমের চেয়েও ছোট।
আরজুদা এমনই। হঠাৎ-হঠাৎ রেগে যায়। তুচ্ছ বিষয় নিয়েই। আরজুদা আমার পৈতৃক বাড়িতে থাকে, বাবলি থাকে 888sport appয়। বাবলি এখনো নিঃসন্তান।
যথাসময়ে সাধারণ নির্বাচন হলো। চার্জশিট গৃহীত হওয়ায় তোবারক আলীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেল। সেজন্যই আমি প্রতিযোগিতার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলাম। বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। এতদিনের রাজনৈতিক জীবনের বড় স্বীকৃতি মন্ত্রিত্ব লাভ।
তিন
আবুল হুসসাম ফিসফিস করে বলল, দুটো সামাল দিয়েছি। কেবল একটা আছে।
আমি জিজ্ঞেস করি, কোনটা?
আপনার ডিপফ্রিজেরটা।
আপাতত থাকুক। অনেক কষ্ট করেছ। তোমারও তো একটা রিওয়ার্ড দরকার। আমার সঙ্গে চলো। এপিএস হিসেবে জয়েন করো। তারপর আস্তে-আস্তে নিজের ক্যারিয়ার ঠিক করে নিতে পারবে।
আমাদের বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু আমার চারপাশের কর্তৃত্ব নিয়ে আবুল হুসসামের সঙ্গে আমার ছেলে সোহরাবের লেগে যায়। বাবা হিসেবে আমি তো আর সেই রুস্তম নই যে ছেলে সোহরাবকে হত্যা করব। আমাকে ছেলের পক্ষই নিতে হয়। নেতারা তাই করে থাকেন। গণতান্ত্রিক উত্তরণে সন্তানরা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়।
যখন আবুল হুসসামকে ছাঁটাই করতে যাচ্ছি, আমাকে মনে করিয়ে দেয়, সে জানে আমার ডিপফ্রিজে মুণ্ডুটা কার।
এটা তো তার জানার কথাই। কিন্তু সে যা জানে না তা হচ্ছে এই ফ্রিজটি আর আমার বাড়িতেই নেই। যদি ধরা পড়ে অন্য কেউ ধরা পড়বে। আমি জানি ডিপফ্রিজটি কোথায়।
তিনি হাসিমাখা দাঁত ঘষটান। আহাম্মক এপিএস।
এপিএস তার বিনয় বর্জন করেনি।
বিড়বিড় করে বলে, ডিপফ্রিজে মুণ্ডুটা কার আপনিও জানেন। কিন্তু আরও নিরাপদ জায়গায় বেড়ে ওঠা শিশুটি যে আমার এটা সম্ভবত আপনার জানা নেই। – আবুল হুসসাম এতো আস্তে বিড়বিড় করে কথা বলল যে কিছুই শোনা যায় না, তবে তার ঠোঁটের কম্পন এবং চোখের হাসি স্পষ্টই দেখা যায়।
নূরে চেমন আরার প্রায় সাত মাস চলছে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.