ডিরোজিও ও আমাদের সময়

মানুষ চাঁদকে জয় করেছে বহু আগেই। 888sport apk-প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সাফল্য আর বিশ্বায়নের প্রত্র্কিয়ায় পৃথিবী ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। দূরত্ব বাড়ছে মানুষে মানুষে। মানুষের মনের গভীরে প্রবেশ করা, মননের গভীরে গিয়ে চিন্তা ও বুদ্ধিকে নাড়া দেওয়া চাঁদে পাড়ি দেবার চাইতেও অনেক বেশি দুরূহ এবং দুঃসাধ্য। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মধ্য দিয়ে এই কঠিন কাজটি সহজেই সম্ভব করেছিলেন ডিরোজিও। স্নেহ, ভালোবাসা আর মমতায় ছাত্রদের মন জয় করেছিলেন তিনি। সত্যের প্রতি অনুরাগ, নীতিবোধ, মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার আদর্শে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করার যে দৃষ্টান্ত ডিরোজিও রেখে গেছেন আজকের যুগে তা একান্তই দুর্লভ। সত্যের অনুসন্ধান এবং মানবিক বোধের উন্মেষ ঘটানোই যে প্রকৃত শিক্ষার উদ্দেশ্য-শিক্ষক হিসেবে একথা ডিরোজিওই সম্ভবত এদেশে প্রথম উপলব্ধি করেন।

ভাবতে অবাক লাগে আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে এই বাংলারই এক অবাঙালি তরুণ শিক্ষক তাঁর কিশোর ছাত্রদের মনে কী ভীষণ আলোড়ন তুলেছিলেন! হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো তাঁর ছাত্ররা তাঁকে অনুসরণ করত, মন্ত্রমুগ্ধের মতো তারা ক্লাসে, ক্লাসের বাইরে তাঁর কথা শুনত, চুম্বক যেমন লোহাকে আকর্ষণ করে ডিরোজিও তেমনি তাঁর কিশোর ও যুবক ছাত্রসমাজকে আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন। বাংলার সেই দুর্দিনে, প্রায় মধ্যযুগীয় সমাজব্যবস্থায় প্রচলিত যুক্তিহীন প্রথা এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদী করে তুলে ডিরোজিও প্রমাণ করেছিলেন শিক্ষকতা শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, অর্থ উপার্জনের উপায় নয়-এটি জীবনের একটি ব্রত, একটি মিশন।

শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক কত গভীর স্নেহ আর ভালোবাসার হতে পারে তার একটি দৃষ্টান্ত ডিরোজিওর একটি চতুর্দশপদী 888sport app download apk থেকে দেওয়া যেতে পারে। ছাত্রদের উদ্দেশে লেখা এই চতুর্দশপদীটিতে ছাত্রদের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা আর ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে। সারাক্ষণ ছাত্রদের মঙ্গলচিন্তায় বিভোর ডিরোজিও ভবিষ্যতের আয়নায় তাঁর ছাত্রদের উন্নত ও উচ্চজীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন এভাবে :

What joyance reigns upon me,

When I see

Fame in the mirror of futurity.

Weaving the chaplets you are yet to gain

And then I feel I have not lived in vain.

আমাদের ভেঙে-পড়া শিক্ষাব্যবস্থা, ভূ-লুণ্ঠিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী-সম্পর্ক আর এই ভ্রষ্ট সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে ভালো লাগে বাংলার দুর্দিনে কি প্রবল সততা আর সাহস, তারুণ্য আর প্রাণপ্রাচুর্য নিয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে সত্যকে যাচাই করে নেবার যে শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন সেই শিক্ষার আলোকে আলোকিত করে তুলতে চেয়েছিলেন তাঁর ছাত্রদের। তাঁর মৃত্যুর (মৃত্যু, ২৬ ডিসেম্বর, ১৮৩১) প্রায় দুশো বছর পর আজ যখন নতুন করে তাঁর মূল্যায়ন হচ্ছে, প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর রচনাসমগ্র, তাঁর নামে গড়ে উঠছে নতুন নতুন সংগঠন, তখন বর্তমানের আলোকে তাঁকে নতুন করে জানার একটা তাগিদ অনুভব করি।

সাধারণ ফিরিঙ্গি পরিবারের সন্তান ছিলেন ডিরোজিও। পুরো নাম হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তিনি ছিলেন পর্তুগিজ বংশোৎপন্ন এবং খ্রিষ্টান প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ভুক্ত। পিতা ফ্রান্সিস ডিরোজিও কলকাতার এক সওদাগরি অফিসে কাজ করতেন। তাঁর অবস্থা স্বচ্ছল ছিল। ডিরোজিও নিজের মাকে হারান শৈশবে। পিতা দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন এ্যানা মেরিয়া বিভার্স নামে বিদুষী এক ইংরেজ মহিলাকে। বিমাতা ডিরোজিওকে আপন সন্তানের সমান স্নেহ ও ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করেননি। কিন্ত্ত ডিরোজিওর মানসগঠনে পরিবারের প্রেরণার চাইতে বহির্নগরের প্রভাব ছিল বেশি। তাঁর শিক্ষা এবং মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিভূমি ছিল বিদ্যালয়।

ছয় বছর বয়সে ডিরোজিও ধর্মতলা অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। এখানে তাঁর শিক্ষক ছিলেন ডেভিড ড্রামন্ড। ডিরোজিও সম্পর্কিত আলোচনায় ডেভিড ড্রামন্ডের নাম প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে যায়। বলা যায় তাঁর উল্লেখ ছাড়া ডিরোজিও সম্পর্কিত আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। একজন আদর্শ নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক কীভাবে তাঁর ছাত্রকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন ডেভিড ড্রামন্ড এবং ডিরোজিও তেমনই শিক্ষক-ছাত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সুদূর স্কটল্যান্ড থেকে ড্রামন্ড এদেশে আসেন। ধর্মযাজক পিতা পুত্রকেও ধর্মযাজক বানাতে চেয়েছিলেন। ড্রামন্ডের মন চাইল না ধর্মযাজক হতে, শিক্ষকতার ব্রত নিয়ে তিনি নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। ইতিহাস, কাব্য আর দর্শনে ছিল তাঁর অনুরাগ। তিনি ছিলেন মানবতাবাদ আর নতুনের পূজারী। নিজে রোমান্টিক ছিলেন, স্বপ্ন দেখতে পারতেন, ছাত্রদেরও স্বপ্ন দেখার দৃষ্টি তৈরি করে দিয়েছিলেন। ডিরোজিওর সব শিক্ষার শিকড় এবং আত্মবিকাশের প্রেরণা ছিল এই স্কুল এবং প্রিয় শিক্ষক ডেভিড ড্রামন্ড। ছয় থেকে চৌদ্দ- এই আট বছর তিনি এখানে পড়াশোনা করেন।

চৌদ্দ বছর বয়স এখন নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ার বয়স। চৌদ্দ বছর বয়স এখন বন্দি থাকে অর্থ আর উপকরণের মধ্যে, প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনা আর পরীক্ষা, মুক্তবাজার-অর্থনীতির ভোগবিলাস আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাদকতাময় নেশার মধ্যে। চৌদ্দ বছর বয়স কোনো সুন্দরের স্বপ্ন দেখায় না, দেয় শুধু সুদূরের হাতছানি। সেই সুদূর তাদের কাছে সব-পেয়েছির দেশ, যেখানে চিত্তের উদ্বোধন নয়, বিত্ত অর্জনেই বেঁচে থাকার সার্থকতা।

ডিরোজিওর সময়কাল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকে তৃতীয় দশক অবধি। তাঁর জন্ম আঠারোশো নয় সালের আঠারোই এপ্রিল। এই সময়ে বাংলার শিক্ষার অবস্থা সাধারণভাবে একটু দেখে নেওয়া যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে ভারতবর্ষে, বিশেষ করে 888sport appsের শাসনব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন ঘটছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে ব্রিটিশরা এদেশে তাদের শাসনব্যবস্থা শক্ত করার জন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছিল। এর মধ্যে লর্ড কর্নওয়ালিশের সময়ে ভূমির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই ব্যবস্থার ফলে ব্রিটিশরা বিশেষভাবে উপকৃত হলেও এদেশের সাধারণ মানুষ নানাভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রচলিত প্রাচীন দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থায় আঘাত হানে। সাম্রাজ্য বিস্তার আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ছাড়া ব্রিটিশের অন্য কোনো দিকে মন ছিল না। বাংলা কিংবা ইংরেজি কোনো শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিই তাদের কোনো আগ্রহ ছিল না। সাধারণ শিক্ষার দেশীয় ব্যবস্থার মধ্যে চালু ছিল শুধু টোল চতুষ্পঠী আর মক্তব মাদ্রাসা। ব্রিটিশ চেয়েছিল এদেশে ধর্মীয় আইনের ব্যাখ্যা দেবার জন্যে একদল পণ্ডিত ও মৌলবি সৃষ্টি করতে। এদেশের মানুষকে আরো কূপমণ্ডূক, আরো অধঃপতিত, আধুনিক শিক্ষার সাথে সম্পর্কহীন করে রাখাই ছিল ব্রিটিশের অভিপ্রায়।

পরাধীন ভারতে ফিরিঙ্গি সম্প্রদায় ছিল মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। মাতৃভাষা ইংরেজি এবং ধর্মীয়ভাবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তারা ছিল ব্রিটিশের অনুগ্রহবঞ্চিত। ডিরোজিও সহজেই সহযোগিতা এবং সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিতে পারতেন শাসক ইংরেজের দিকে। শাসকশ্রেণির অনুগ্রহ ও অনুকম্পালাভে তিনি তোষামোদকারীর ভূমিকা নিতে পারতেন। নিজস্বার্থ-উদ্ধারে সুবিধাবাদী হতেও তাঁর কোনো বাধা ছিল না। পরবর্তীকালে তাঁর সম্প্রদায় তো তা-ই করেছিল। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে গ্রহণ না করে পিতার মতো সওদাগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান হতে পারতেন। সেসব কিছুই না করে তিনি হলেন হিন্দু কলেজের চতুর্থ শিক্ষক।

আঠারো বছর বয়সে চতুর্থ শিক্ষক হিসেবে হিন্দু কলেজে যোগদান করেন ডিরোজিও। তাঁর ছাত্রদের প্রত্যেকের বয়স তখন তেরো থেকে চৌদ্দ বছরের মধ্যে। প্রায় সমবয়সী হওয়াতে ধরে নেওয়া যায় বন্ধুর মতোই সম্পর্ক ছিল ডিরোজিওর সাথে তাঁর ছাত্রদের। হিন্দু কলেজে ডিরোজিওর চাইতেও অনেক বেশি জ্ঞানী, গুণী শিক্ষক ছিলেন। কিন্ত্ত ডিরোজিও ছিলেন ছাত্রদের সবচাইতে কাছের, সব চাইতে প্রিয় শিক্ষক। তাঁর মতো আকর্ষণ করার ক্ষমতা আর কারো ছিল না। যেখানে ডিরোজিও সেখানেই ভিড় করতো তাঁর ছাত্ররা। ক্লাসের সীমিত সময়ের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি ডিরোজিও। তাঁর বলার বিষয় এত বেশি ছিল যে স্কুলের বাঁধা সময় তাঁর কাছে অকিঞ্চিৎকর মনে হতো। ক্লাসে, ক্লাসশেষে, কলেজের ভেতরে-বাইরে ছাত্রদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করতেন। তাঁর নিজের স্কুলের ছাত্ররা তো ছিলই, অন্য স্কুলের ছাত্ররাও ভিড় করে আসত তাঁর বক্তৃতা শুনতে। বক্তৃতা-আসরে উপস্থিত ছাত্রের 888sport free bet ভাবলেও বিস্মিত হতে হয়। যোগেশ চন্দ্র বাগল তাঁর ডিরোজিও গ্রন্থে জানিয়েছেন প্রতিদিন দেড় শতাধিক ছাত্র তাঁর বক্তৃতা শুনতে আসত। আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে শিক্ষা যখন সীমাবদ্ধ ছিল শহরের গুটিকয়েক বনেদি পরিবারের মধ্যে তখন বক্তৃতা আসরে প্রতিদিন এই পরিমাণ ছাত্রের উপস্থিতি আমাদের সত্যিই বিস্মিত করে। হাজার হাজার ছাত্র888sport free betর কোনো কলেজেও কি এখন ক্লাশে দেড়শ ছাত্রের নিয়মিত উপস্থিতি আশা করা যায়। বক্তৃতার বিষয় জানার পর আরো চমকিত হতে হয়। যোগেশ চন্দ্র বাগল লিখেছেন, জ্ঞহিউমপন্থী হওয়ায় ধরে নেওয়া যায় ডিরোজিও তাঁর বক্তৃতায় যুক্তিবাদের ওপরই বেশি জোর দিতেন। যুক্তি দিয়ে কিভাবে সত্য নির্ণয় সম্ভব এবং সাথে সাথে ছাত্রসমাজের মধ্যে নীতিবোধ জাগ্রত করতেও তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। কৈশোর অনুত্তীর্ণ তেরো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী দেড়শ ছাত্র যুক্তিবাদের মতো দুরূহ বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে বক্তৃতা শুনছে একথা ভাবলে একালে আমাদের বিস্ময়ের অন্ত থাকে না।ঞ্চ

শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিষয়টি এখন তো একেবারেই গৌণ হয়ে গেছে। প্রধান হয়েছে প্রাইভেট কোচিং। সেখানেও কি কিছু পড়ানো হয়, শুধু সাপ্লাই দেয়া হয়। শিক্ষকরা নিরুৎসাহিত করেন ছাত্রদের ক্লাসে যেতে, নিশ্চিত পাশের আশ্বাস পেয়ে ছাত্ররাও উৎসাহ বোধ করে না ক্লাসে যাবার। শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক এখন শুধু অর্থ দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক। মুনাফালোভী, ছাত্রশিকারি শিক্ষকরা কত নির্লজ্জ, কত নিচে নামতে পারেন, প্রতিদিন তা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতাও তো কিছু দলছুট শিক্ষকের জন্য কম কষ্টকর নয়। অসহায় নিজেকে ধিক্কার দেওয়া ছাড়া তাদের আর কিছু করার থাকে না।

ডিরোজিওর ছাত্ররা শুধু মনোযোগী ছিল না, নিজেদের জীবনেও তাঁর শিক্ষাকে সত্য করে তুলেছিল তারা। ডিরোজিওর অন্যতম প্রখ্যাত ছাত্র রাধানাথ সিকদার ডিরোজিওর শিক্ষাদানরীতি তার উপরে কতটা প্রভাব ফেলেছিল সে-প্রসঙ্গে লিখেছেন, জ্ঞডিরোজিও প্রথমত জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাদিগকে উপদেশ দিতেন। এ শিক্ষা অমূল্য। … তাঁহার নিকট হইতে এরূপ কতকগুলো উদারনীতিমূলক ধারণা লাভ করিয়াছি, যাহা চিরকাল আমার কার্যকে প্রভাবিত করিবে।ঞ্চ চিরকালের জীবন ও কাজকে প্রভাবিত করার শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। নিজেকে নিঃস্বার্থভাবে দেবার সেই আদর্শ কবেই উধাও হয়েছে। আজ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগেও একজন শিক্ষককে তাঁর প্রজ্ঞা, পাঠস্পৃহা, পোশাক, মনন এবং চিন্তাশীলতা দিয়ে চিনে নেওয়া যেত। এখন সব একাকার।

কী সম্মোহন বলে ডিরোজিও বশ করেছিলেন তাঁর ছাত্রদের? কোন ম্যাজিকে তিনি তাঁদের এভাবে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন? শুধুমাত্র উৎকৃষ্ট আর অভিনব পাঠদান পদ্ধতির কারণে কি এভাবে ধরে রাখা যায়? তাঁকে কাছে পাওয়া, তাঁর সঙ্গ, সান্নিধ্য, তাঁর কথা শোনার জন্যে ছাত্ররা যে উন্মুখ হয়ে থাকত সেকি শুধুই তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতির অভিনবত্বের কারণে? উৎকৃষ্ট শিক্ষক এখনো তো কিছু আছেন। এত মধুর ছাত্র-শিক্ষক-সম্পর্ক কি হয়? ডিরোজিওর ছিল দেবার জন্য ব্যগ্রতা, নেবার জন্য ব্যাকুল ছিল তাঁর ছাত্ররা। মানুষকে ভালোবাসার যে পাঠ তিনি পেয়েছিলেন ডেভিড ড্রামন্ডের কাছ থেকে, সেই ভালোবাসা দিয়ে তিনি তাঁর ছাত্রদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী। ধর্মতলা অ্যাকাডেমিতে ডেভিড ড্রামন্ডের শিক্ষা তাঁকে মানবতাবাদী হতে প্রেরণা যুগিয়েছিল। মানুষের প্রতি তাঁর এই মমতা, তাঁর মানবপ্রেম- এর উৎস ছিল স্বদেশপ্রেমের মধ্যে। স্বদেশকে ভালোবেসেছিলেন বলেই এর মানুষকেও একান্ত আপন করে নিয়েছিলেন। হিন্দু কলেজে তাঁর ছাত্ররা প্রত্যেকেই বাঙালি বনেদি হিন্দু পরিবারের সন্তান ছিলো। নিজ সম্প্রদায়ের কোনো ছাত্র তাঁর ছিল এমন কোনো উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়নি। সকলের জন্য তাঁর ভালোবাসা ছিল অবারিত, বাঁধভাঙা বন্যার মতো, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদমুক্ত।

ডিরোজিও কোনো সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক সমাজ-সীমানায় নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। স্বদেশকে স্থান দিয়েছিলেন সবার ওপরে। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও এদেশকে তিনি শুধু নিজের দেশ হিসেবেই গ্রহণ করেননি, ভারতীয় বলে গর্বও অনুভব করতেন। জ্ঞঝষ ঐশধভত- খঁ গতঢ়ভৎন কতশধঞ্চ 888sport app download apkয় তিনি স্বদেশ-বন্দনা করেছেন এভাবে-

‘My country! in thy day of glory past

A beautious halo circled round thy brow

And worshipped as a deity thou wast.’

তাঁর সময়ে স্বদেশের সেই গৌরবের দিন শেষ হয়ে গেছে। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন-

‘Where is that glory, where that reverence now?

Thy eagle pinion is chained down at last

And grovelling in the lowly dust art thou.’

স্বল্পায়ু জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি ব্যয় করেছেন স্বদেশকে এই ধূলিধূসর মলিনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করার কাজে। দেশপ্রেম ব্যতীত দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা সম্ভব নয়। এখন আমরা সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি আর দলীয় রাজনীতিতে মত্ত থেকে দেশকে ভুলছি। তরুণ প্রজন্মের বোধে, অনুভবে দেশপ্রেমের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। বাড়ছে দেশের প্রতি বিতৃষ্ঞা, বাড়ছে অদৃষ্টনির্ভরতা, বাহারি বিনোদনের প্রতি আসক্তি। 888sport apk আর আধুনিক প্রযুক্তির সব সুবিধা ভোগ করেও আধুনিক প্রজন্ম যুক্তির ধার ধারছে না।

ডিরোজিওর শিষ্য, যাঁরা পরবর্তীকালে জ্ঞডিরোজিয়ানসঞ্চ নামে পরিচিত হয়েছিলেন তাঁরা তাঁদের মেধা আর কর্মকুশলতা দিয়ে দেশ ও সমাজকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে গেছেন। ডিরোজিওর শিক্ষা তাঁদের মধ্যে অপার আবিষ্কারের নেশা ধরিয়ে দিয়েছিল। আরো বেশি জানা, জ্ঞানের গভীরে যাবার আকাঙ্ক্ষা, যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে সত্যকে যাচাই করে নেওয়া- ডিরোজিওর শিষ্যদের কাছে প্রথম ও প্রধান হয়ে উঠেছিল। যুক্তি দিয়ে কিভাবে সত্য নির্ণয় করা যায় এ বিষয়ে ছাত্রদের সাথে আলোচনায় তাঁর কোনো ক্লান্তি ছিল না। ছাত্রদের ওপরে ডিরোজিওর শিক্ষার প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে ক্লাসের বাইরেও তাঁরা সত্যের পূজারী হিসেবে পরিচিত হতেন। ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের নবযুগের নির্মল যুক্তি আর শানিত বুদ্ধির আলোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।

মাত্র পাঁচ বছর হিন্দু কলেজে শিক্ষকতা করেন ডিরোজিও। আঠারশো ছাব্বিশ থেকে আঠারোশো একত্রিশ পর্যন্ত। তিনি ছিলেন হিন্দু কলেজের চতুর্থ শিক্ষক। চতুর্থ শ্রেণিতে ছাত্রদের ইতিহাস আর ইংরেজি 888sport live football পড়াতেন। কলেজের সময় ছিল সাত ঘণ্টা। নির্ধারিত পাঠ্যসূচি কিংবা সময়ের মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখেননি ডিরোজিও। কলেজশেষে, অবসরে, নিজ গৃহে অথবা নির্ধারিত কোনো স্থানে ছাত্রদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আলোচনা করতেন। বিদ্যার প্রতি অনুরাগ শুধু নয়, তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল ছাত্রদের মনুষ্যত্ব ও মানবতাবাদে দীক্ষিত করে তোলা। এজন্যে নিজের জীবনকে তিনি মেলে ধরেছিলেন ছাত্রদের সামনে। সহজ আন্তরিকভাবে তাদের সাথে মিশতেন, খোলামেলাভাবে সব বিষয়ে কথা বলতেন, সত্যের প্রতি তাঁর যে অপরিসীম নিষ্ঠা ব্যক্তিগত আচরণের মধ্য দিয়ে তা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেবার চেষ্টা করতেন। ছাত্রদের সাথে এমনি আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে গড়ে উঠেছিল পাঠচক্র। পাঠচক্র থেকে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনই এদেশে স্থাপিত প্রথম বিতর্ক সভা।

সমকালে নন্দিত, নিন্দিত এবং দণ্ডিত ডিরোজিও তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন উৎসর্গ করেছিলেন ছাত্র-হিতার্থে। সত্য-সন্ধানী হয়ে ডিরোজিও নিজেকে বিতর্কিত করে তুলেছিলেন। সমাজে অনড় অন্ধকার সরিয়ে পরিবর্তন-প্রয়াসী হওয়ায় তাঁর ওপরে নেমে এসেছিল শাস্তির উদ্যত খড়গ। তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতি কলেজের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রবল ঝড় তুলেছিল। তদানীন্তন বিশিষ্ট হিন্দু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব-সমন্বয়ে গঠিত হিন্দু কলেজ-কর্তৃপক্ষ ছিল ঐতিহ্য-অনুসারী শিক্ষা-পদ্ধতির পক্ষে। প্রগতি আর রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্ব চিরকালের। সেই ত্র্কিয়া-প্রতিত্র্কিয়ার বলি হতে হলো ডিরোজিওকে। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না দেখিয়েই কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। আপোস করেননি, ভেঙেও পড়েননি তিনি। সত্যের পথে হাঁটা কাঁটা বিছানো পথে হাঁটার মতোই কঠিন আর কষ্টকর। ডিরোজিও সেই কঠিন পথটিই বেছে নিয়েছিলেন।

একথা সত্য যে তাঁর ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাঁর আদর্শ। সমগ্র জনগোষ্ঠীর কাছে তিনি যেতে পারেননি। হয়তো যেতে চাননি। কারণ তিনি জানতেন শিক্ষিত সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে তারাই সমগ্র জনগোষ্ঠীকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারবে। যদিও তিনি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সংকীর্ণ কপটাচার এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি যে-যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন সে-যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিন্ত্ত ব্যভিচারী সমাজের বুকে এক বিরাট আঘাত হানতে সমর্থ হয়েছিল। সময় এবং সমাজের প্রয়োজনে তাঁরা যে সেদিন উপযুক্ত ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন এটা বাস্তব সত্য। এটা সম্ভব হয়েছিল এ-কারণেই যে ডিরোজিও সেদিন নিজেকে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িতকার বেড়াজালে বেঁধে ফেলেননি, সবার ওপরে স্থান দিয়েছিলেন নিজের দেশকে। যে-দেশপ্রেম ডিরোজিও এবং তাঁর ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেছিল, একালে সেই দেশপ্রেমের অভাবেই আমাদের তরুণদের শিকড়সংলগ্নতা নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে। দেশের প্রতি বিরূপ মনোভাব তাদের পলায়নমুখী করে তুলছে। দেশে সন্ত্রাস আছে, সমস্যা আছে, আছে বেকারত্ব আর অনিশ্চয়তা- সাহসের সাথে একে মোকাবিলা করার চাইতে সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা এই হতভাগ্য দেশ থেকে যত দ্রুত পালানো যায় ততই তারা মঙ্গল মনে করছে।

মনুষ্যত্বের অবমাননা থেকে মানুষকে মুক্ত করার যে শিক্ষা এবং সাধনা ডিরোজিও করেছিলেন আজ তার প্রয়োজন কি সব থেকে বেশি করে অনুভূত হচ্ছে না? 888sport apk-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি আধুনিক মানুষের জীবনে যে গতি এনে দিয়েছে তাতে উত্তেজনা আছে, প্রশান্তি নেই। এই গতি প্রকৃতিকে অস্বীকার করছে। প্রকৃতির বিনাশ হচ্ছে। বিশ্বায়ন, অবাধ পণ্যের প্রসার আমাদের ঠেলে দিচ্ছে শুধুমাত্র ভোগের দিকে। ফলে মানুষ স্বার্থপর হচ্ছে। এর থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো মানবতাবাদের উত্থান। সারা পৃথিবীজুড়ে ধর্মের নামে যে হানাহানি শুরু হয়েছে, উচ্চশিক্ষিত সম্প্রদায় অদৃষ্টের কাছে যেভাবে আত্মসমর্পণ করছে এবং পশ্চাদ্গামী চিন্তা-ভাবনার পুনরুজ্জীবন যেভাবে প্রকট হচ্ছে তাতে ডিরোজিওর মৃত্যুর (মৃত্যু: ১৮৩১) প্রায় দু শশ্ বছর পরেও যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী মানুষের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারেন। যে সমাজ-সভ্যতাকে এগিয়ে নেবার জন্য 888sport apk, বিচার-বিশ্লেষণ ও মানবতাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে না সে-সমাজে অচলায়তন নেমে আসতে বাধ্য।

এতদিন পর যখন আবার নতুন করে ডিরোজিও আলোচনায় উঠে আসেন, নতুন করে তাঁকে নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়, নতুন শতাব্দী, নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে তিনি নতুন করে আবিষ্কৃত হতে থাকেন, তখন চিরকালের আধুনিক আর প্রগতিশীল এই মানুষটিকে জানার প্রয়োজন যে শেষ হয়ে যায়নি তা বুঝতে পারি।

ডিরোজিওর বিরুদ্ধে রক্ষণশীল হিন্দুদের অভিযোগ ছিল তিনি ভারতীয় চিন্তার কোনো খোঁজই পাননি। সে-কারণে ্লইয়ংবেঙ্গলশ্ আন্দোলন বাংলায় দানা বেঁধে উঠতে পেরেছিল। হিন্দুধর্ম, ঐতিহ্য, প্রথা, প্রচলিত রীতিনীতি, লোকাচারের মধ্যে কোথাও তিনি কোনো মহত্ব খুঁজে পাননি। হিন্দু ধর্ম, দর্শনের গভীরে যাবারও কোনো চেষ্টা করেননি তিনি। হিন্দু ধর্মের শুধু নয়, ডিরোজিওর কাছে তাঁর নিজ ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাও যুক্তিহীন, আবেগসর্বস্ব, সময়ের অপচয় বলে মনে হয়েছিল। তিনি ছিলেন সত্যসন্ধানী। সেটাই ছিল তাঁর ধর্ম। এজন্য নিজ সম্প্রদায়ের কাছে তিনি বিধর্মী হিসেবে চিহ্কিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর পর ডেভিড হেয়ারের মতোই তাঁকে সমাধিস্থ করা নিয়ে তাঁর নিজ-সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল।

ডিরোজিওকে কেউ কেউ বিদ্রোহী বলেছেন। তিনি সর্বতোভাবেই ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। শিক্ষাদান আর 888sport live footballচর্চা- এই নিয়েই তাঁর জীবন কেটেছে। গতানুগতিকতার গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যেতে চাননি তিনি। সত্যের প্রতি অবিচলিত নিষ্ঠা আর অন্যায় ও অসত্যের প্রতি অপরিসীম ঘৃণা- মানুষের জীবনের সবচেয়ে মহৎ এই শিক্ষায় তিনি তাঁর ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি জানতেন শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা দিয়ে মনের অন্ধকার দূর করা সম্ভব নয়। ছাত্রদের মনে জ্ঞান-888sport apkের প্রতি অপরিসীম আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। অসীম জ্ঞান-সমুদ্রকে সীমার মধ্যে আনতে গিয়ে তাদের মনে অসংখ্য প্রশ্নের সৃষ্টি হবে। প্রশ্নহীন, সংশয়হীন মানুষ মৃত মানুষের সমান। ছাত্রদের মনে প্রশ্ন এবং তর্ক-বিতর্ক করার শক্তি বিকশিত করতে পাঠদান কিংবা আলোচনার সময় তিনি নিজে একপক্ষ অবলম্বন করে ছাত্রদের অন্যপক্ষ অবলম্বন করতে উৎসাহিত করতেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে গিয়ে তিনি পাঠ্যসূচির বাইরে ইতিহাস, দর্শন, 888sport live football প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করতেন। আলোচনা করতে করতে নিজেকে ছাপিয়ে যেতেন, দিশেহারা হয়ে পড়তেন। জ্ঞানের গভীরে যাবার এই আনন্দ অনায়াসে সংক্রামিত হতো তাঁর ছাত্রদের মধ্যে। তাঁর এই অভিনব, ব্যতিক্রমি পাঠদানপদ্ধতির উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের মনে বিদ্যার প্রতি অনুরাগ এবং স্বাধীন চিন্তা-ভাবনায় তাদের উদ্বুদ্ধ করা। তাঁর দেবার আনন্দ আর ছাত্রদের নেবার আনন্দ উভয়ের মধ্যে একটি সেতু রচনা করতো।

ডিরোজিওর যুগ কবেই অতিক্রান্ত হয়েছে। যুক্তিনির্ভর শিক্ষার অভাবে সমাজে জমে ওঠা অন্ধকার অপনোদনে যে সংগ্রামী ভূমিকা ডিরোজিও গ্রহণ করেছিলেন, বর্তমান সময়ে শিক্ষক সমাজের সেই ভূমিকা গ্রহণের প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে? অন্ধকার কি আরো সর্বব্যাপী, গাঢ় হচ্ছে না? সন্ত্রাস কি আরো শক্ত হাতে তার থাবা বিস্তার করছে না? শিক্ষিত সম্প্রদায় কি পেরেছে ধর্মীয় গোঁড়ামি আর কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে? ছাত্রসমাজের মধ্যে ন্যায়নীতি এবং সুস্থ জীবনবোধের সপক্ষে দাঁড়ানোর সততা ও সাহস জাগানোয় আমাদের শিক্ষক সমাজের ভূমিকা কি ফুরিয়ে গেছে?

সময় পালটেছে। সমাজ বদলে গেছে। কোনো শিক্ষকই এখন শিক্ষকতাকে জীবনের ব্রত হিসেবে ভাবেন না। তাদের একটাই হিসাব-কত সহজে, স্বল্প সময়ে প্রচুর বিত্তের অধিকারী হওয়া যায় এবং সেটি ছাত্রদের ব্যবহার করেই। অর্থ আর ক্ষমতা – সমাজে টিকে থাকার জন্যে দুই-ই দরকার। অর্থ এলেই ক্ষমতা আসে। মনুষ্যত্ব, মানবতা নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না। ছাত্রছাত্রীদেরও এখন একটাই গন্তব্য। প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে ছোটা। শিক্ষকরা এখন কেউ পড়েন না, পড়ানোরও প্রয়োজন হয় না। এখন কেউ কাউকে বই দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় না। বই দিলে বিরক্ত হয়, মানুষের মনের সূক্ষ্ম অনুভূতি মরচে পড়ে যাচ্ছে।

আমাদের নির্বিরোধী, আত্মসুখ-অন্বেষী শিক্ষকসমাজ মনে হয় সুখেই আছেন। তারা হয়তো ধরেই নিয়েছেন এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিংবা আন্দোলনে যাওয়া মানেই প্রশাসনের বিরাগভাজন হওয়া। অতএব আরাম-আয়েশের মধ্যে নিশ্চিন্ত জীবন-যাপনে বাধা সৃষ্টি করার মতো বোকামি করে কী লাভ! লাল দল, নীল দল, সাদা দলে বিভক্ত হয়ে দলাদলি করে যতটুকু সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় ততটুকুই লাভ।

সন্ত্রাস আর সাম্প্রদায়িকতার এই নিষ্ঠুর সময়ে মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধকরণ শিক্ষার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা পাঠ্যসূচিতে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। বাড়ছে অস্থিরতা আর উচ্ছৃঙ্খলতা। 888sport live chat, সংস্কৃতি, সৃষ্টিশীলতার ওপরে আসছে নির্বিচার হামলা। আমরা কি  আবার মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ফিরে যাবো, না-কি এই অন্ধকার থেকে মুক্তির পথ খুঁজব?