ফারুক আলমগীর
এক
ভারত বিভাগের পরে কলকাতা থেকে 888sport app এলে বাবা আমাদের বসত গড়েন গোপীবাগ এলাকায়। আমরা দু-ভাই তখন খুবই ছোট, স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। কিন্তু ’৫০ সালে পিতামহের লোকান্তরগমনে শোকাহত পিতা 888sport appর নিবাস উঠিয়ে আমাদের চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামে পাঠিয়ে দেন। বাহান্নতে 888sport appয় আবারো ফিরে আসি। মা এবং আমার তখন অনেকটা ভগ্ন-হৃদয়, কেননা সেবার দেশে মহামারি আকারে বসন্ত রোগ দেখা দিলে বড় ভাই গুটিবসমেত্ম আমাদের ছেড়ে চলে যায়। গ্রামে সুচিকিৎসা না হওয়ায় আত্মজের এই মৃত্যু বাবাকে সংগত কারণে অপরাধবোধে আক্রান্ত করলে মা ও আমাকে 888sport appয় নিয়ে আসা হয়। 888sport appয় এবার আমাদের নতুন করে বসত শুরু হয় পলাশী-আজিমপুর এলাকায়। আমার মধ্য-আশিতে লেখা ‘মা ও শিশুর গল্প’ শীর্ষক দীর্ঘ 888sport app download apkয়, যা ইত্তেফাকের বিশেষ 888sport free betয় প্রকাশিত হয়েছিল, আমি ওই সময়ের কথা বলতে চেয়েছি।
দুই
বাহান্নতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে আমাকে ভর্তি করা হয়, পলাশী প্রাইমারি স্কুলে। দেশের গ্রামের বাড়িতে আমাদের দূরসম্পর্কের মাস্টার দাদার পাঠশালায় বাংলা, ইংরেজি আর ধারাপাতের নামতা মুখস্থ করতে করতে 888sport appয় একেবারে ক্লাস-টুতে বিদ্যালয়জীবন শুরু করতেই ঘটল বিপত্তি। মনে পড়ে ২০ ফেব্রম্নয়ারি সকাল দশটায় আমরা কিছু বোঝার আগেই সলিমুলস্নাহ মুসলিম হল থেকে একদল ছাত্র এসে আমাদের বলল, ‘স্কুলে আজ কোনো ক্লাস হবে না, তোমরা বাড়ি চলে যাও।’ তারা আরো বলল, ‘দ্যাখো, আমরা কোনো ক্লাস করছি না, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোথাও কোনো ক্লাস হচ্ছে না; ক্লাস করার চাইতে আগে আমাদের মুখের ভাষার অধিকার চাই।’ সেইসঙ্গে তাদের একজন সজোরে চিৎকার করে উঠল, ‘রাষ্ট্রভাষা’ – অন্যরা আরো জোরে চিৎকার করে জবাব দিলো, ‘বাংলা চাই’। সেদিন থেকে জানলাম, এটাকে বলে সেস্নাগান। আমরা ছোটরা সেই সেস্নাগান শিখে হইহই করে বাড়ি ফিরলাম।
বাড়ি ফিরে মায়ের সামনেই সজোরে সেস্নাগান দিলাম, ‘রাষ্ট্রভাষা – বাংলা চাই’। মা এই সেস্নাগানের বিষয়, এর তাৎপর্য আগে থেকেই জানতেন কারণ তাঁর কলেজপড়ুয়া সেজ ভাই বছরচারেক আগে এরকম সেস্নাগান দিতে দিতে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেললাইনে শুয়ে পড়েছিলেন। সরকারের পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে কোর্টে চালান দিয়েছিল। আমার উকিল নানা অনেক কষ্টে তাঁকে জামিনে ছাড়িয়ে এনেছিলেন। মা-র সন্দিগ্ধ বুক কেঁপে উঠল। সেই আটচল্লিশের ভাষা-আন্দোলন আবার বুঝি ফিরে এলো।
তিন
পরদিন 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি। 888sport app শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আমাদের প্রাইমারি স্কুলটি সরকারি বলে স্যাররা চুপিচুপি আমাদের জানিয়ে দিলেন, তাঁরা ক্লাস নেবেন না, তবে স্কুল ছেড়েও যাবেন না। আমরা যেন স্কুলের মাঠে খেলতে থাকি। দপ্তরি তার নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের ঘণ্টা বাজাবে; কিন্তু আমরা ক্লাসে যাবো না। মাঠে খেলতেই থাকব।
আমার বাড়ি স্কুলের খুবই কাছে। বাবা নিয়মানুবর্তী মানুষ। সকালেই হাইকোর্টে গেছেন। মা সদ্যোজাত আমার ছোট্ট বোনটিকে নিয়ে বাসায় একাকী। স্কুলের মাঠে ছেলেরা গোলস্নাছুট, দাঁড়িয়াবান্দা নানা খেলায় মত্ত থাকলেও আমার কেন জানি দীর্ঘক্ষণ খেলতে ভালো লাগছিল না। তাই এক ফাঁকে খেলা ছেড়ে শ্রেণিকক্ষে বসে কলকাতার দেব 888sport live football কুটিরের ছোটদের গল্প কথা বইটি পড়ছিলাম। হঠাৎ শুনি পলাশী রেলগেট (এখন সেখানে চৌরাস্তার মোড়) থেকে শোরগোল ভেসে আসছে। আমরা কয়েকজন সেদিকে দৌড়ে গেলাম, যদিও শিক্ষকরা আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিষেধ করছিলেন এবং কয়েকজন শিক্ষকও দৌড়ে এলেন আমাদের সঙ্গে।
আমরা দেখলাম বকশীবাজার আর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (এখনকার বুয়েট) দিক থেকে অনেক ছাত্র রেললাইন ধরে এসএম হল ও পলাশীর দিকে ছুটে আসছে। তাদের চোখে রুমাল। চোখ দিয়ে অবিরত পানি পড়ছে। পলাশীর দোকানিরা বালতিভরা পানি এগিয়ে দিয়ে তাদের রুমাল ভেজাতে সাহায্য করছে। শুনলাম এরই নাম কাঁদানে গ্যাস। চোখের অসহ্য যন্ত্রণা লাঘবের জন্য ছাত্ররা দোকানের পানির কলে হুমড়ি খেয়ে চোখে-মুখে পানি দিচ্ছে। দোকানিরাও সাহায্য করছে বালতিভরা পানি জোগান দিয়ে।
এই প্রথম শুনলাম, শুধু কাঁদানে গ্যাস নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর, ছাত্রদের মিছিলে মেডিক্যাল হোস্টেলে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। অনেক ছাত্র নিহত হয়েছে। মারা গেছে সাধারণ মানুষ, রিকশাওয়ালা, পথচারী। মেডিক্যাল হোস্টেলের দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কাঁদানে গ্যাস থেকে, গুলি থেকে বাঁচতে ছুটতে ছুটতে এসএম হল ও পলাশীর দিকে আসছে। আমাদের স্যাররা ভয়ে প্রমাদ গুনলেন। অনেকটা ঘেরাও করে তাঁরা আমাদের পলাশী ও আজিমপুর কলোনির দিকে নিয়ে এসে যার যার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টায় ব্রতী হলেন।
পরদিন ২২ ফেব্রম্নয়ারি। পূর্ণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। আমরা কেউ স্কুলে গেলাম না। শহরে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। বাবা যথারীতি হাইকোর্টে চলে গেলেন। মাকে বলে গেলেন, আমি যেন বাড়ির চৌকাঠ না পেরোই। এরপর ছোট হিসেবে আমার আর কিছুই মনে পড়ে না। তবে বাড়ি ফিরে বাবাকে বলতে শুনেছি, এ-দিনও গুলি ছুঁড়েছে পুলিশ এবং হাইকোর্টের একজন সাইকেলে যাচ্ছিলেন, অতর্কিত গুলিতে মারা গেছেন। শুনে মা শিহরিত হলেন কেননা বাবাও বাইরে গেছেন এবং তাঁরও এমনি দুর্ভাগ্য হতে পারত। আমিও ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম। অস্পষ্ট 888sport sign up bonus হয়ে শুধু কাঁদানে গ্যাস ও অবিরল অশ্রম্নধারা নিয়ে দৌড়ানো সেই তরুণ সাহসী মুখগুলো মনের মুকুরে ভেসে রইল।
চার
আরো অনেক পরে একদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল গানের সুরে। সময় 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি ১৯৫৪ সাল। উষালগ্নে আমাদের বাসার কাছ দিয়ে সড়কপথে গান গাইতে গাইতে একদল তরুণ ছাত্র যাচ্ছে আজিমপুর কবরস্থানের দিকে। আমিও দৌড়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম ও গানটি ধরার চেষ্টা করলাম। সেদিনই জানলাম, এটা হচ্ছে 888sport cricket BPL rateের দিনে শহিদ আত্মাদের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানিয়ে নগ্নপদ শোকমিছিল, যার নাম ‘প্রভাতফেরি’। যে-গানটি গাইছিল তরুণরা তার প্রথম দুই ছত্র ছিল – ‘ভুলব না ভুলব না/ ভুলব না সেই 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি/ ভুলব না …’। মার্চপাস্টের সুরের মতো সেই সুর-মূর্ছনায় এগিয়ে যাচ্ছি আমি, এগিয়ে যাচ্ছে তরুণ ছাত্ররা। তাদের সেই শোকার্ত-মিছিলে পথে পথে যোগ দিচ্ছে 888sport promo code-পুরুষ উৎসুক মানুষেরা; আমার মতো ছোটরাও, যারা সেই গানের সুরে ঘুম ভেঙে বেরিয়ে এসেছে।
আমার মনে হয় এটাই 888sport cricket BPL rateের প্রথম প্রভাতফেরি। সেই যে গানের সুরে বেরিয়ে পড়ে শোকার্ত-মিছিলে একাত্ম হলাম, আর ঘরে না ফিরে প্রভাতফেরির সঙ্গে আজিমপুর কবরস্থান গেলাম এবং সেখান থেকে শহিদমিনারে। তখন চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছি সেই পলাশী প্রাইমারিতে, আগের চাইতে বড় হয়েছি, একা একা ধারেকাছে অনেক জায়গায় যেতে পারি।
আমাদের ছোটবেলার এই ‘ভুলব না’ গানটির রচয়িতা হলেন ভাষা-সংগ্রামী অ্যাডভোকেট গাজীউল হক, সুরও তাঁর দেওয়া যা অনেক পরে জেনেছি। এটাই আমাদের প্রথম 888sport cricket BPL rateের সংগীত। উষালগ্নে প্রভাতফেরিতে শহিদ 888sport sign up bonusতর্পণের প্রথম গান, যে-গান আমাদের শৈশবকে উদ্দীপ্ত করেছে বহুদিন। পলাশী, আজিমপুর, ঢাকেশ্বরী, লালবাগ, শেখ সাহেববাজার এলাকার হাজারো বালক-বালিকার অংশগ্রহণে মধ্য-পঞ্চাশের 888sport cricket BPL rateের প্রত্যুষ এমনি মুখর হয়ে উঠত। দলবেঁধে খালি পায়ে শোকার্ত-মিছিলে শামিল আমরা শহিদমিনারে ফুল দিয়ে ঘরে ফিরতাম।
পাঁচ
পরে অবশ্য প্রখ্যাত সাংবাদিক গল্পকার কবি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা 888sport cricket BPL rateের অমর সংগীতের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি’ 888sport app download apkটি নিয়ে প্রথম অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সুরকার ও গীতিকার আবদুল লতিফের কাছে যান। কিন্তু তাঁর সুরারোপিত গানটি তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি, যদিও তিনি তাঁর লেখা ও সুরে গাওয়া ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও করিলিরে বাঙ্গালী/ তোরা 888sport appর শহর রক্তে ভাসাইলি’ গানটির জন্য বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন, যা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিল তখন। দ্বিতীয়বার সম্ভবত ১৯৫৭-৫৮ সালের দিকে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আবারো তাঁকে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর 888sport app download apkটি নতুন করে সুর দানের অনুরোধ করেন। সেই সময় আইয়ুব খানের মার্শাল ল’র কারণে দেশ থরথর কাঁপছে। কাঁপছে দেশের মানুষ। সরকারি চাকরির কারণে সুরকার আবদুল লতিফ তখন অপারগতা প্রকাশ করলে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম গণসংগীতের অন্যতম বলিষ্ঠ কণ্ঠ ও সুরকার আলতাফ মাহমুদের শরণাপন্ন হন। বলা বাহুল্য, শহিদ আলতাফ মাহমুদের অনন্য সুরারোপে গানটি অমরতা লাভ করে। ষাটের দশকে 888sport cricket BPL rateের উষালগ্নে প্রভাতফেরিতে এ-গান সকলের মুখে মুখে ফিরেছে, যা এখন কোনো ভাষাভিত্তিক অনুষ্ঠানে, বাংলা একাডেমির মাসব্যাপী অনুষ্ঠানে সূচনা-সংগীত হিসেবে গীত হয়। r
তবে এ-কথাও অনস্বীকার্য, আমার সমান-বয়সী মানুষের কাছে আমাদের ছোটবেলায় দেখা ১৯৫৪ সালের 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারির প্রথম প্রভাতফেরিতে শ্রম্নত প্রথম গানের কলি অদ্যপি চিরজাগরূক অনেকের 888sport sign up bonusর মণিকোঠায়।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.