তাঁর রেনেসাঁস-সত্তা

আবুল মোমেন

সত্যিকারের বড় মানুষ সত্যিই দুর্লভ। কারণ বড় হওয়া মানেই খ্যাতিমান হওয়া, প্রতিষ্ঠিতজন হওয়া, 888sport app download bd-স্বীকৃতি-সম্মাননায় অভিষিক্ত হওয়া। গণমাধ্যমের নজরে থাকা, তাতে প্রায়ই হাজিরা দেওয়া। এতে গৌরব বাড়ে, গর্বিত হওয়ার অধিকার জন্মায়। এই অধিকারবোধ প্রায় সবার অগোচরে সন্তর্পণে দূরত্ব আর আড়ালগুলো তৈরি করতে থাকে। বড় মানুষ কখন যে চূড়ার ছোট্ট পরিসরে আটকে যান, হারিয়ে যান, তা তিনিও টের পান না। ভাবি, এটা কি তাঁদের পরাজয়? কাইয়ুমভাই কিন্তু প্রাপ্তির আড়ম্বরে  হারিয়ে যাননি, তাতে আটকা পড়েননি। না, খ্যাতি-প্রতিষ্ঠার কাছে তাঁর পরাজয় ঘটেনি।

তিনি সবসময় সবারই থাকলেন। পরিবারের, 888sport live chatী ও ছাত্রদের, সমাজের, দেশের এবং ইতিহাসের একজন হয়েই থাকলেন। কেবল থাকা নয়, সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে থাকা। বড় কথা, সে-ভূমিকা বৃহত্তর অর্থে কল্যাণকর, গঠনমূলক, যথাযথ।

বয়স, অভিজ্ঞতা, অর্জন তাঁকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি, মৌলিক মানুষটিকে বদলে দিতে পারেনি। তিনি থাকলেন বরাবরের কাইয়ুম চৌধুরী – স্বামী, পিতা, চাচা, ফুফা, খালু, ভাই, বন্ধু, শিক্ষক। তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক বৃহৎ পরিবার ও ক্রমসম্প্রসারমান সমাজের অভিভাবক। এই তিনি বয়স বা সম্পর্কের জোরে কাকতালীয়ভাবে পাননি, যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্বের ভার বহন করেই পেয়েছেন।

তাঁর কাছে সবাই চেয়েছেন, আর তাঁর মতো করেই তিনি দিয়ে গেছেন। পরিবারের বাইরে অধিকাংশের আবদার তো 888sport live chatীর কাছে – 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরীর কাছে। কিন্তু তাঁদের চাওয়া পেইন্টিং নয়, কেউ চান সংগঠনের লোগো, কারো দাবি সম্মেলনের পোস্টার, কেউ আর্জি জানান আমন্ত্রণপত্রের নকশার, আর বেশিরভাগের প্রত্যাশা নিজের বইয়ের জন্যে 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী-স্বাক্ষরিত একটি প্রচ্ছদচিত্র। বেশিরভাগ দাবিই পূরণ করতেন তিনি। অচেনা ব্যক্তি কৌশলের আশ্রয় নেন কাইয়ুমভাইয়ের কোনো প্রিয়জনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে সবসময় চাপে থাকতে হয়েছে তাঁকে।

কাইয়ুমভাই জীবনের প্রায় সবটা সময় চারুকলায় শিক্ষকতার বাইরে কোনো-না-কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। অনেক পত্রিকা ও সাময়িকীর অঙ্গসৌষ্ঠবের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি, শেষ দিন পর্যন্ত করে গেছেন। সংবাদ, চিত্রালী, ইংরেজি এক্সপ্রেস, সচিত্র সন্ধানী, টাপুরটুপুর, অন্তরঙ্গ এমনি আরো অনেক। সাম্প্রতিককালে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলো আর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সঙ্গে। ফাঁকে ফাঁকে 888sport app download apk লিখেছেন, ছোটদের জন্যে ছড়াও। চাপের মধ্যে থেকেও কখনো তাঁর প্রসন্নতা হারাননি, এমনকি প্রফুল্লতাও। কাজের চাপ কিংবা তাড়াহুড়ার ছাপ থাকত না তাঁর কোনো কাজে কিংবা আচরণে-ব্যবহারে। হয়তো সময় নিতেন তিনি; কিন্তু কাজের মানে আপস করতেন না, নিজের কাজটিই করতেন।

তাঁর আগ্রহের ক্ষেত্রও ছিল ছড়ানো – পেইন্টিং এবং গ্রাফিক্স, ড্রইং এবং স্কেচে সমান পারদর্শী; আগ্রহ ছিল সংগীতে –  উচ্চাঙ্গ, পুরনো বাংলাগান, রবীন্দ্র-নজরুলসহ পঞ্চভাস্কর, কী নয়; live chat 888sportের প্রতি কেবল আগ্রহ নয়, ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনে ছিলেন, ছিলেন আগ্রহী live chat 888sport তৈরিতেও; 888sport live footballপাঠের অভ্যাস শৈশব থেকেই, এবং তা কখনো ছাড়েননি; বিশুদ্ধ 888sport apkের প্রতিও কৌতূহলী ছিলেন। পছন্দের বই কেনা কখনো ছাড়েননি। রেখে গেছেন ঈর্ষণীয় গানের সংগ্রহ। বইয়ের সংগ্রহে আছে দুর্লভ অনেক বই। ভালো live chat 888sportের সংগ্রহও গড়ে উঠেছিল তাঁর।

কাইয়ুমভাইয়ের পক্ষে নিজের আঁকা প্রচ্ছদের বইগুলোর হদিস নেওয়া বা দেখে শেষ করা সম্ভব ছিল না – তা 888sport free betয় এত বেশি। আমন্ত্রণপত্র, পোস্টার, মোড়ক-নকশা, লোগোর ক্ষেত্রেও এ-কথা খাটে। এমন বিপুল কাজের মান বজায় রাখা কঠিন। কাইয়ুম চৌধুরী অনায়াসেই তা ধরে রেখেছিলেন।

এর মধ্যে পেইন্টিং, ড্রইং কম করেননি। তাতেও নিজের স্বাক্ষর রেখেছেন, উচ্চমান ধরে রেখেছেন। অন্য পরিচয়ের আড়ালে সমকালে তাঁর চিত্রকর পরিচয় তেমনভাবে আলোচিত হয়নি। এবার দিন যত গড়াবে ততই তা বাড়বে, কারণ চিত্রকর কাইয়ুম চৌধুরীকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। তাঁর 888sport app download apk কাব্যগুণ এবং বিশিষ্টতার কারণে পাঠকপ্রিয় হয়েছে, শিশুতোষ ছড়াও চমৎকার লিখেছেন। আজো অলংকরণে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তাঁর হাতের বর্ণবিন্যাসের অসাধারণত্ব হাতছাড়া হয়নি কখনো।

এতসব কেজো আর কালিক গন্ডিতে বাঁধা 888sport live chatকর্মে ব্যস্ত থেকেও তিনি আশ্চর্যরকম দক্ষতায় কাজোত্তীর্ণ ও কালোত্তীর্ণ চিরকালের ছোঁয়া দিতে পেরেছেন তাঁর অধিকাংশ সৃষ্টিতে। তাই মানুষটার মধ্যে প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, ক্ষণকাল-চিরকাল, কাজ-বিরাম, শ্রম-উপভোগ একাকার হয়ে গিয়েছিল। মানুষের মধ্যে থেকেও তিনি একা, আবার খ্যাতি-প্রতিষ্ঠার গন্ডিতে থেকেও বিচ্ছিন্ন বা একা হননি, থেকেছেন সবার।

বহুসত্তার এক রেনেসাঁসকালের মানুষ ছিলেন তিনি। জীবন কাটিয়েছেন জাতীয় ইতিহাসের নানা দুঃসময়ের ভাঙাগড়ার মধ্যে। কিন্তু তাতে তাঁর রেনেসাঁস-সত্তার বৈচিত্র্য ও বিশালতা ক্ষুণ্ণ হয়নি। কাল কিংবা দুঃসময় তাঁকে হজম করতে পারেনি, পরাভূত করতে পারেনি। কাইয়ুম চৌধুরী খ্যাতি-প্রতিষ্ঠার কাছে যেমন নিজেকে সঁপে দেননি, তেমনি ক্ষয়িষ্ণু কালের কাছেও হার মানেননি। এমন আলোকিত জীবনের যবনিকা তো আলোকিতমঞ্চে নায়কের ভূমিকায় সহস্র মানুষকে সাক্ষী রেখেই পড়বার কথা। তার অন্যথা হয়নি।