হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল সম্ভবত ১৯৯৫ সালের শেষে অথবা ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে। তখন তিনি দৈনিক সংবাদের 888sport live football সম্পাদক আর আমি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ লেখক। সংবাদের 888sport live football সাময়িকী তখন ভীষণ আলোচিত, আকর্ষণীয়, সুপরিকল্পিত, সুসম্পাদিত, অভিজাত 888sport live footballপাতা। সংবাদপত্র হিসেবে দৈনিকটির ততটা জনপ্রিয়তা না থাকলেও 888sport live footballামোদী পাঠকরা বৃহস্পতিবারের সাময়িকীর জন্য অপেক্ষা করতেন এবং অতি অবশ্যই সংগ্রহ করতেন। একটি দৈনিক পত্রিকার 888sport live footballপাতা কতখানি যত্ন ও ভালোবাসা নিয়ে সম্পাদনা করা যায়, সংবাদ-সাময়িকী না দেখলে তা আমার অজানাই থেকে যেত। শুনেছি কবি আহসান হাবীবও গভীর নিষ্ঠা ও ভালোবাসা নিয়ে দৈনিক বাংলার 888sport live footballপাতা সম্পাদনা করতেন, কিন্তু সেটি দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তিনি যখন প্রয়াত হন তখন আমি স্কুলপড়ুয়া বালক। যা হোক, তখনকার দিনে সংবাদ সাময়িকীতে লেখা ছাপা হওয়া একটা বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ব্যাপার ছিল। সারাদেশের 888sport live footballপ্রেমী পাঠকরা যেহেতু ওটা পড়তেন, তাই, ওখানে কোনো লেখার প্রকাশ মানেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অচেনা পাঠকদের কাছে পৌঁছে যাওয়া। ওরকম একটা সুযোগ কার না পেতে ইচ্ছে করে, বিশেষ করে তরুণ লেখকদের? কিন্তু যাওয়ার সাহস করে ওঠাই কঠিন। কীভাবে যাই এত বড় একজন সম্পাদকের কাছে? আমার লেখা কি ততটা যোগ্য হয়ে উঠেছে? তবু, তরুণ বয়সের দুর্বিনীত সাহসের জন্যই হয়তো একদিন তাঁর দফতরে গিয়ে হাজির হলাম। খালি হাতে যাইনি, বলাই বাহুল্য, সঙ্গে নিয়ে গিয়েছি প্রায় সাত হাজার শব্দের বিশাল এক লেখা। অত বড় লেখা যে দৈনিকের পাতায় ছাপানো কঠিন, স্থান-সংকুলানের একটা ব্যাপার যে থাকে, তাও তখন জানি না। তো, একে-ওকে জিজ্ঞেস করে যখন তাঁর সামনে গিয়ে পৌঁছলাম, দেখলাম, আমার কল্পনার সঙ্গে কিছুই মিলছে না। আমার ধারণা ছিল, অত বড় সম্পাদক, নিশ্চয়ই আলাদা কোনো কামরায় বসেন, বেশ বড়োসড়ো এক নিজস্ব কামরা আছে তাঁর। বিশাল এক টেবিলের ওপাশে বিরাট এক রিভলভিং চেয়ারে বসা গুরুগম্ভীর এক সম্পাদকের কল্পনা নিশ্চয়ই আমার ভেতরে ছিল। তার কারণও ছিল। হাসনাতভাইয়ের কাছে যাওয়ার আগে আমি আরো বেশ কিছু পত্রিকায় গিয়েছি, তখনকার দিনের নামকরা সব পত্রিকা, লেখা দিয়েছি, ছাপাও হয়েছে। সেইসব সম্পাদকের প্রায় সবাই আলাদা কামরায় বসতেন, তাঁদের সামনে ওরকম বিশাল টেবিল থাকত, বসার চেয়ারটিও ছিল বিরাট, ওপাশে সম্পাদক বসতেন, এপাশে সাজানো থাকত আরো কতগুলো চেয়ার, যেখানে সর্বদা কোনো-না-কোনো লেখক বসে আড্ডা দিতেন। কিন্তু এবার যে ভিন্ন ছবি দেখছি। একটা কামরার এক কোনায় ছোট্ট একটা টেবিল সামনে নিয়ে ছোট্ট একটা চেয়ারে বসে আপনমনে কাজ করছেন বিখ্যাত সম্পাদক আবুল হাসনাত, যেখানে আরো অনেকের চেয়ার-টেবিল। আগত অতিথিদের বসার জন্য তাঁর সামনে কোনো চেয়ার ছিল না বলে গিয়ে সামনে দাঁড়াতে হলো। তিনি চোখ তুলে গম্ভীর স্বরে জানতে চাইলেন – ‘আমার কাছে এসেছেন?’
‘জি।’
‘বলুন, কী বলবেন।’
‘একটা লেখা নিয়ে এসেছি।’
তিনি হাত বাড়িয়ে লেখা চাইলেন, আমিও ব্যাগ থেকে সেই সাত হাজার শব্দের লেখাটি বের করে তাঁর হাতে দিলাম। আগেই বলেছি, তাঁর সামনে বসার জন্য কোনো চেয়ার ছিল না, বসতে বলেনওনি, এমনকি একটু হাসেনওনি, লেখাটি হাতে নিয়ে শুধু বলেছিলেন – ‘লেখাটা থাকুক, আমি পড়ে দেখব।’ তারপর একটা বাড়তি কথাও না বলে মন দিয়েছিলেন নিজের কাজে। আমিও কিছু না বলেই বেরিয়ে এসেছিলাম। মন খারাপ হয়েছিল। চা খাওয়ানো দূরের কথা, বসতেও বললেন না, একটু আলাপও করলেন না! এ কেমন মানুষ! অভিমান করে আর খোঁজও নিতে যাইনি লেখাটার। ভেবেছি, ছাপা না হলেও ওই লেখা আর আনতে যাবো না। কিন্তু পরের 888sport free betতেই দুই পৃষ্ঠা জুড়ে সেই বিশাল লেখাটি ছেপে দিয়েছিলেন তিনি। সংবাদ সাময়িকীর মতো মর্যাদাপূর্ণ কাগজে অত গুরুত্ব দিয়ে লেখা প্রকাশিত হওয়া একজন তরুণ লেখকের জন্য ছিল শ্লাঘার বিষয়। আমি বোধহয় সেদিন মাটিতে হাঁটিনি, প্রায় উড়ে বেড়াচ্ছিলাম আনন্দে।
লেখাটি প্রকাশের কয়েকদিন পর ভাবলাম, তিনি কথা বলেননি বটে, কিন্তু লেখাটি তো যত্ন করে ছাপিয়েছেন। একটু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আসা যাক। তখন তো মোবাইল ফোনের যুগ নয় যে ফোনেই সব আলাপ হয়ে যাবে। ল্যান্ডফোনও সহজলভ্য ছিল না। সশরীরে গিয়ে দেখা করাই ছিল সাধারণ সৌজন্য-ভদ্রতা-রীতি। গেলাম আবার। গেলাম বটে, কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন নেই। চেয়ার তো নেই-ই, কাউকে বললেনও না একটা চেয়ার দিতে, আমি ধন্যবাদ জানাতে তিনি একটু স্মিত হেসে বললেন – ‘আপনার লেখাটা ভালো। অল্প কিছু বানান ভুল ছিল, কিছু শব্দ পরিবর্তনও করেছি, আশা করি কিছু মনে করেননি।’ সত্যি বলতে কি, তিনি বলার আগে আমি বুঝতেই পারিনি, তাঁর হাতে কী কী সম্পাদনা হয়েছে, মনে করার তো প্রশ্নই ওঠে না।
সেদিনও কথাবার্তা বিশেষ হলো না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায় নাকি? দ্রুতই বেরিয়ে এসেছিলাম। তার আগে অবশ্য তিনি মৃদুস্বরে বলেছিলেন, ‘লেখালেখিটা ছাড়বেন না।’ ব্যস, এটুকুই। তারপর মন দিয়েছিলেন নিজের কাজে। এই ধরনের মানুষের কাছে কোনো তরুণ নিশ্চয়ই বারবার যায় না! আমিও যাইনি। না, ভুল বললাম। আরো একবার গিয়েছিলাম। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের অকাল মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে ছোট্ট একটা 888sport sign up bonusগদ্য লিখে দিতে গিয়েছিলাম তাঁকে। সেদিনও দু-চার কথার পর চলে এসেছি। লেখাটি তিনি ছেপেছিলেন ইলিয়াসের জন্মদিনকে সামনে রেখে, ফেব্রুয়ারি মাসে।
ওটাই শেষ, আর কখনো যাইনি কোনোদিন তাঁর কাছে। কিন্তু না গেলে কী হবে, তিনি কখনোই ভোলেননি আমাকে। সংবাদ ছেড়ে তিনি যখন কালি ও কলমের সম্পাদক হিসেবে এলেন, সেখানেও আমার জন্য রইল অবারিত দ্বার। যে-কোনা সময় যে-কোনো লেখা লেখার আমন্ত্রণ তো জানিয়ে রাখলেনই, নিয়মিত লেখা চাইতেও লাগলেন। বিশেষ করে, বিশেষ 888sport free betগুলোতে (গল্প888sport free bet, বর্ষপূর্তি 888sport free bet ইত্যাদি) লেখার জন্য বারবার যোগাযোগ করতেন। তিনি সম্পাদক হিসেবে ওখানে যোগ দেওয়ার পর এমন কোনো বিশেষ 888sport free bet নেই যার জন্য আমার কাছে লেখা চাননি। সবসময় আমি লেখা দিতে পারিনি, কিন্তু তারপরও চেয়েছেন বারবার। কোনো অজ্ঞাত কারণে তিনি আমার গল্প পছন্দ করতেন খুব, সাধারণত গল্পই চাইতেন, আমি দিতামও। কেবল এবার, তাঁর সম্পাদিত শেষ গল্প888sport free betয় লেখা দিতে পারিনি। করোনা আমাদের সবাইকে এমনভাবে পর্যুদস্ত করে ফেলেছিল যে, গল্প লেখা তো দূরের কথা, লিখতে পারছি না – এই কথাটুকুও জানানোর মতো অবস্থায় ছিলাম না। এ-বছর তাঁর সঙ্গে আমার কথাই হয়নি। কে জানত, এমন হঠাৎ করে চলে যাবেন!
এই যে প্রায় দুই যুগ ধরে তাঁর সম্পাদনায় লিখেছি, কখনো কি মনোমালিন্য হয়নি? হ্যাঁ, তাও হয়েছে, একবার। আমার একটি গল্প তিনি ছাপতে রাজি হননি, বলেছিলেন – ‘এটি আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। মৌলবাদীরা ক্ষেপে যাবে। অন্য একটা গল্প দিন।’ খুব অভিমান হয়েছিল, আমি দিইনি। পরে যখন আরেক 888sport free betর জন্য গল্প চেয়েছেন, তখন রাগ করে বলেছি – ‘আপনি তো সাহসী গল্প ছাপতে পারেন না, আমি আর আপনার কাগজে লিখব না।’ তিনি কোমল স্বরে বলেছিলেন – ‘আপনার নিরাপত্তার কথা ভেবে ছাপিনি, কামাল। আপনি রাগ করবেন না প্লিজ। এবার গল্প দিন, আমি ছাপব।’ তাঁর স্নেহসিক্ত কণ্ঠস্বর শুনে রাগ পড়ে গেল আমার। একবার 888sport alternative linkও চাইলেন, আমি দিলাম, ছাপাও হলো কালি ও কলমে। পরে সেটিকেই বেঙ্গল প্রকাশনী থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশের অনুমতি চাইলেন। আমি নতুন করে পাণ্ডুলিপি গুছিয়ে দিলাম। এবার তিনি আগাগোড়া পাণ্ডুলিপিটি পড়ে কিছু কিছু অংশ আন্ডারলাইন করে পাঠালেন, ফোনে বললেন – ‘যদি সম্ভব হয়, ওই অংশগুলো আবার একটু দেখবেন। আমি ছাপতে পারব, কিন্তু আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। আপনি তো নানান পক্ষকে ক্ষেপিয়েই চলেছেন।’
শেষদিকে তিনি আমার নিরাপত্তা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকতেন। বিভিন্ন তরফ থেকে নানারকম হুমকি-ধমকি আমার লেখক-জীবনের নিত্যসঙ্গী, কিন্তু তাঁকে কখনো এ নিয়ে কোনো শংকা বা দুশ্চিন্তার কথা জানাইনি, তবু তিনি চিন্তিত থাকতেন।
তাঁর কাছে যে-কোনো আবদার করা যেত। সিলেটে বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব হবে। তিনি আমাকে নিমন্ত্রণের জন্য ফোন করলেন। যাওয়া-আসার ভাড়া, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, একটা সেমিনারে বক্তৃতা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত জানানোর পর জানতে চাইলেন, আমি যেতে পারব কি না! জিজ্ঞেস করলাম, ‘যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে, সেখানে কি কারো সঙ্গে রুম শেয়ার করতে হবে?’ হ্যাঁ, শেয়ার করতে হবে – তিনি জানালেন। আমি বললাম, ‘তাহলে যাবো না। আমি কারো সঙ্গে রুম শেয়ার করতে পারি না, অসুবিধা হয়।’ তাঁকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। একটু পরই আবার ফোন। বললেন, ‘আপনাকে রুম শেয়ার করতে হবে না, আলাদা রুমেই থাকবেন। যাবেন তো?’ এবার আর ‘না’ করা গেল না।
তিনি আড্ডাবাজ ছিলেন না, মন খুলে কথা বলা হয়নি কখনো, এমনকি খুব একটা হাসতেও দেখিনি তাঁকে। অথচ নিজেই ফোন করতেন, লেখালেখির খবর জানতে চাইতেন, নিয়মিত লিখতে বলতেন। খুব বিস্তারিত আলাপ নয়, টুকিটাকি কথাবার্তা। এখনো তাঁর সেই স্নেহসিক্ত কণ্ঠস্বর বাজছে আমার কানে। বুঝতে পারতাম, আমার জন্য তাঁর ভেতরে একটা অপ্রকাশিত অথচ গভীর স্নেহ ও মমতা আছে। কেন আছে তিনি কখনো বলেননি, আমিও জানতে চাইনি। তিনি ছিলেন সেই যুগের মানুষ যাঁরা স্নেহ প্রকাশে কুণ্ঠিত থাকতেন।
যাঁদের কাছে নিঃশর্ত স্নেহ-ভালোবাসা-আদর পেতাম, সেই মানুষগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন। আমার জগৎ ক্রমশ স্নেহশূন্য হয়ে যাচ্ছে। হাসনাতভাইও চলে গেলেন। আমার পৃথিবী আরো খানিকটা শূন্য হয়ে গেল। আপনার অনন্তজীবন মর্যাদাপূর্ণ হোক হাসনাতভাই। আপনাকে কোনোদিন ভুলব না আমি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.