সাপ্তাহিক বিচিত্রার শুরুর দিকে বিশ্ব live chat 888sportে সবচাইতে করুণ দৃশ্য নির্বাচনের ওপর মতামত চাওয়া হলে সর্বোচ্চসংখ্যক মতামত আসে সত্যজিৎ রায়-পরিচালিত পথের পাঁচালীতে হরিহর দীর্ঘকাল পর বাড়ি ফিরে দুর্গার মৃত্যুর খবর জানার প্রতিক্রিয়ার দৃশ্যের পক্ষে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক মতামত আসে ভিট্টোরিও ডি সিকা-পরিচালিত নায়ক মার্সেলো মাস্ত্রোইয়ানি (অ্যান্তোনিও), নায়িকা সোফিয়া লরেন (জিওভানা) অভিনীত ইতালীয় ছবি Sunflower-এর শেষ দৃশ্য, যখন নায়ক বিদায় নেয়। এটিই একমাত্র পাশ্চাত্য ছবি যেটি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে চিত্রায়িত হয়।
যুদ্ধে যাওয়া নিখোঁজ অ্যান্তোনিওকে অনেক চেষ্টার পর খুঁজে পায় স্ত্রী জিওভানা। অ্যান্তোনিও সেখানে 888sport sign up bonusভ্রংশ হয়ে তার জীবন রক্ষাকারী 888sport promo codeর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করেন। তাদের একটি মেয়ে ছিল। স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ততার কারণে তার নতুন জীবনকে ব্যাহত না করে ভগ্নহৃদয়ে নিঃসন্তান জিওভানা ইতালিতে ফিরে আসে। কিছুদিন পর অ্যান্তোনিও জিওভানার কাছে এসে যুদ্ধের কারণে তার পরিবর্তিত জীবনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে জিওভানাকে ফিরিয়ে নিতে চায়। জিওভানা তখন একটি কারখানায় কাজ করে এবং এক বন্ধুর সঙ্গে বাস করে, যার একটি ছেলে আছে। জিওভানা অ্যান্তোনিওকে কখনো তার মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি, সেজন্য ছেলেটিকে অ্যান্তোনিও বলে ডাকতো। জিওভানা ইতালি ছেড়ে যেতে রাজি হয় না। অ্যান্তোনিও তাকে পূর্বপ্রতিশ্রুত একটি পশম দেয়। রেলস্টেশনে ট্রেন অ্যান্তোনিওকে জিওভানা ও ইতালি থেকে চিরতরে দূরে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সোফিয়া লরেনের ক্রন্দনরত হৃদয়নিংড়ানো দৃশ্যে মনের অজান্তে চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে, আবহসংগীত পরিবেশকে আরো ভারী করে তোলে।
পথের পাঁচালীতে হরিহর যাত্রাপালা ও পুঁথি-লিখিয়ে এক স্বল্প আয়ের পুরোহিত ব্রাহ্মণ, যে ভবিষ্যতে বড় কবি, নাট্যকার ও যাত্রা-পালাকার হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করার স্বপ্ন দেখে। স্ত্রী সর্বজয়া, দুই সন্তান দুর্গা ও অপু এবং বৃদ্ধা খুড়তুতো বোন ইন্দির ঠাকরুনকে নিয়ে তার সংসার। অভাবের কারণে সর্বজয়া ইন্দির ঠাকরুনকে নিজ পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে অপারগ। ইন্দির ঠাকরুনের প্রতি সর্বজয়ার কটূক্তি ও বিরূপ মনোভাব তাকে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। দুর্গা ধনী প্রতিবেশীর বাগান থেকে ফল চুরি করে এনে পিসি ইন্দির ঠাকরুনকে দেয়। একদিন এক প্রতিবেশিনীর একটি পুতির মালা চুরির অভিযোগ দুর্গা অস্বীকার করলেও প্রতিবেশিনী চুরির প্রবণতাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সর্বজয়াকে অভিযুক্ত করে। ছোট ভাই অপুকে দুর্গা মাতৃস্নেহে আগলে রাখলেও তাকে উত্ত্যক্ত করার সুযোগকে হাতছাড়া করতো না। গাছের ছায়ায় বসে থাকা, বায়োস্কোপে ছবি দেখা, মিছরি বিক্রেতার পেছনে দৌড়ানো এবং যাত্রাপালা দেখা প্রভৃতি সহজ আনন্দ ভাইবোন দুজনে ভাগ করে নিত। গাড়ির হুইসেলের শব্দে তারা পুলকিত বোধ করত। তারপর একদিন তারা একঝলক ট্রেন দেখতে গিয়ে ফেরার পথে বাঁশঝাড়ের মধ্যে পিসি ইন্দির ঠাকরুনকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করে।
গ্রামে সচ্ছল জীবনের ব্যবস্থা করতে অক্ষম হরিহর শিগগির জীর্ণ বাড়ি মেরামতের টাকা নিয়ে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শহরে চলে যায়। এর মধ্যে পরিবারটি দারিদ্র্যের গভীরে নিমজ্জিত হওয়ায় সর্বজয়া ক্রমশ একাকী ও তিক্ত হয়ে ওঠে। বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে দুর্গা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অপ্রতুল চিকিৎসার কারণে মারা যায়। অনেকদিন পর হরিহর বাড়ি ফিরে মেলা থেকে দুর্গার জন্য আনা শাড়ি সর্বজয়াকে দিতে গেলে সর্বজয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে হরিহরের পায়ে লুটিয়ে পড়লে হরিহর বুঝতে পারে দুর্গা আর নেই।
পথের পাঁচালী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃতি ও মনের চরিত্রের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণাত্মক 888sport alternative link। একে এক প্রামাণ্য দৈর্ঘ্যরে ছবির পরিসরে এনে সেলুলয়েডে রূপ দেওয়া সহজ ছিল না। 888sport alternative linkটির হুবহু চিত্রায়ণও সহজ নয়। সত্যজিৎ রায় কিছু ঘটনার পুনর্বিন্যাস ও সংযোজন-বিয়োজন করে 888sport alternative linkের মূল গল্প থেকে বিচ্যুত না হয়ে একটি মৌলিক live chat 888sport নির্মাণ করেছেন।
ছবির পুরো চিত্রনাট্য একসঙ্গে তৈরি না করলেও ডি. জে.-এর করা বইয়ের সারাংশসহ মূল কাহিনি সত্যজিৎ রায়ের আত্মস্থ ছিল। কিছু কিছু ঘটনা 888sport alternative linkের বর্ণনার চেয়ে ভিন্নভাবে চিত্রায়িত করেও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন। যেমন ইন্দির ঠাকরুনকে আরো কিছুকাল বাঁচিয়ে রাখা। সর্বজয়া কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে বাঁশঝাড়ে মৃত অবস্থায় দেখানো। প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুর্গার মৃত্যু – মূল বইয়ে হুবহু এইভাবে নেই। সত্যজিৎ দৃশ্যগুলির পারম্পর্য রক্ষার খাতিরে তার স্কেচ করে ফেলতেন। ছবি তৈরিতে রায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা বলতে ছিল Film Society-এর সদস্য হিসেবে রেনোয়াঁর জরাবৎ ছবির বিভিন্ন লোকেশন নির্বাচনে সহায়তা করা। ১৯৫০ সালে ডি. জে কেমার অ্যান্ড কোং-এর লন্ডন সদর দফতরে রায়ের চাকরি ন্যস্ত হলে সেখানে তিনি বিশ্বের অনেক live chat 888sport দেখার সুযোগ লাভ করেন। বিশেষ করে ডি সিকার Bicycle Thieves, জাপানি live chat 888sportকার আকিরা কুরোসাওয়ার Rashomon এবং বিমল রায়ের দো বিঘা জমি দেখে ছবি তৈরিতে অনুপ্রাণিত হন। Rashomon ছবি দেখে তিনি লেখেন, ‘The effect of the film on me, personally, was electric. I saw Rashomon three times.’ বিশ্বের live chat 888sport 888sport live chatের ব্যাপারে পড়াশোনা এবং live chat 888sportগুলির খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ ও সার্থক রূপায়ণের ইতিহাস তাঁর জানা ছিল। পথের পাঁচালীতে তাঁর সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগান।
রায়ের মতে, ‘সিনেমার মতো একটি জনপ্রিয় মাধ্যমের ক্ষেত্রে, প্রকৃত অনুপ্রেরণা জীবন থেকে খুঁজে নিতে হবে, জীবনের মধ্যেই তার শিকড় থাকতে হবে। যতই কলাকৌশলগত চাকচিক্য থাকুক না কেন, থীমের অস্বাভাবিকতা ও প্রয়োগের কাপট্য তাতে দূর হওয়ার নয়, ভারতীয় পরিচালকদের জীবনের দিকে ফিরতে হবে, বাস্তবের দিকে ফিরতে হবে। তাদের আদর্শ হওয়া উচিত ডে সিকা, ডে মিলে নয়।’
পথের পাঁচালীতে সর্বজয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেন করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিউনিস্ট নেতা ও সাংবাদিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী। সুব্রত মুখোপাধ্যায় পরবর্তীকালে 888sport appsে ভারতীয় হাইকমিশনে অ্যাটাশে ছিলেন।
পৈতৃক বাড়ি খুলনা হলেও সাঁওতাল পরগনার মহেশপুরে করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। ভারতীয় গণনাট্য সংঘে তিনি প্রথম অভিনয় শুরু করেন। করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বজয়া চরিত্রের মাতৃত্ব, অভাবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, গ্রামীণ জনপদের মেঠোসুর ও সর্বোপরি এই চরিত্রের অন্তর্গত বেদনাকে ধরতে পেরেছিলেন। গ্রামীণ পটভূমিতে সর্বজয়া এক মা – যিনি শাসনে-স্নেহে সন্তানদ্বয়কে – অপু-দুর্গা – আগলে রাখেন।
২০১৯ সালে তাঁর জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে করুণা অনেকটা বি888sport sign up bonusর আড়ালে চলে গেছেন। সত্যজিৎ রায় একদল অপেশাদার 888sport live chatী এবং অন্যদের বাতিল হয়ে যাওয়া অপ্রতুল, অপ্রচলিত সরঞ্জাম নিয়ে তৈরি করলেন মানবিক আবেদনসম্পন্ন এক প্রামাণ্যচিত্র। এই ছবি করতে গিয়ে রায় যে-পরিমাণ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন – আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে এত বিপত্তি, কষ্ট ও বিড়ম্বনার শিকার তাঁর সময়কালে অন্য কোনো চিত্রপরিচালককে হতে হয়নি। এই ছবি করতে প্রায় আড়াই বছর সময় লেগেছিল। অর্থাভাবে ছবির কাজ ব্যাহত হয়।
এই live chat 888sport বাংলা ছবির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। অশীতিপর বৃদ্ধা চুনিবালার ইন্দির ঠাকরুন চরিত্রে অভিনয়, ছবিতে তাঁর স্বল্প উপস্থিতি সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ইন্দির ঠাকরুন চরিত্রে তাঁর নির্বাচন সম্পর্কে রায় বলেন, চুনিবালা দেবীকে না পাওয়া গেলে পথের পাঁচালী হতো না। ছবিতে প্রতিটি চরিত্র ও দৃশ্যে বাস্তবতার প্রতি পরিচালকের প্রবণতা লক্ষ করে চুনিবালা দেবী বলেছেন – ‘আপনারা যখন তরুণীকে মেক-আপ বুড়ি না সাজিয়ে আমাকে বেছে নিয়েছেন তখন বুঝেছি কোনদিকে আপনাদের ঝোঁক।’ ছবিতে তাঁর অবি888sport app download for androidীয় গান – ‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো/ পার করো আমারে’ – দর্শকদের অন্তিম গন্তব্যের কথা 888sport app download for android করিয়ে দেয়।
সর্বজয়া যখন ইন্দির ঠাকরুনের মুখের শেষ হাসির প্রতি তাকিয়ে দেখে না, এই ঘটনা খুব কষ্ট দেয়। ইন্দির ঠাকরুনের ক্ষুধাতৃষ্ণায় আশা-জাগানো হাসি যখন হতাশায় পর্যবসিত এবং বিদায়বেলায় আশাহত হয়ে পেছন ফিরে তাকানো, অতঃপর বাঁশঝাড়ে মৃত্যু – হৃদয়কে বিদীর্ণ করে দেয়।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ তবু কি হৃদয়গ্রাহী অভিব্যক্তি অভিনয়ের ক্ষেত্রে, বয়স্কতমার এই কীর্তি নিশ্চয়ই বিশ্বের অভিনয়জগতে এক অসাধারণ ঘটনা। পথের পাঁচালী দেশে-বিদেশে অসংখ্য 888sport app download bd পেয়েছে। রায় উল্লেখ করেছেন একটি মাত্র 888sport app download bdের কথা – ‘ম্যানিলা live chat 888sport উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে চুনিবালা দেবী একটি 888sport app download bd পেয়েছিলেন।’ ১৯৮২ সালে রায় তাঁর এক লেখায় উল্লেখ করেন, ‘পথের পাঁচালীই কি আর আজকের দিনে সম্ভব? তা নয় – কারণ চুনিবালার মতো অভিনেত্রীর আবির্ভাব তো আর দৈনন্দিন ঘটনা হতে পারে না।’
পৃথিবীর সব মায়া অপুর দু-চোখে, অপুর দুরন্তপনা দর্শককে দারুণভাবে বিমোহিত করে। অপুর কাছে দুর্গার মতো স্নেহভরা দিদি থাকা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার, সেই দিদি যখন ভাইয়ের জীবন থেকে অকস্মাৎ হারিয়ে যায়, তা মেনে নিতে কষ্ট হয়, অপুর যেমন তেমনি আমাদেরও। দিদি এইভাবে চলে যাওয়ায় অপু হতবিহ্বল হয়ে পড়ে, তার অপলক চোখের চাহনি খুব ক্ষিপ্রভাবে আঘাত করে দর্শককে। অনেকে ছেলেবেলায় ভাইবোনে ছোট ছোট ঝগড়াঝাটির অবি888sport app download for androidীয় 888sport sign up bonusর মিল খুঁজে ফেরে। দারিদ্র্য ভালোবাসাকে হার মানায়, ভাইবোনের অকৃত্রিম ভালোবাসা দারিদ্র্যের কারণে ছিন্ন হয়ে গেল। জীবনটাই দুঃখময়, ক্ষণিক সুখ যখন আসে তখন ভোগ করার লোক থাকে না।
সর্বজয়াকে দুর্গার মৃতদেহ কোলে নিয়ে বসে থাকতে দেখে অবুঝ অপু জিজ্ঞেস করে, ‘দিদি কি ঘুমুচ্ছে?’ তখন দর্শক বোবাকান্নায় অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। বোনের মৃত্যুর পরের দিন থেকে অপু খুব দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে, তাকে হাতে থলে ও ছাতা নিয়ে বাইরে যেতে দেখা যায়। বেনারস যাওয়ার প্রাক্কালে জিনিসপত্র বাঁধাছাঁদা করার সময় খুঁজে পাওয়া হারটি অপু পুকুরে ফেলে দেয় – দিদির চুরির অপবাদের কথা চিন্তা করে।
সর্বজয়ার জীবনে কোনো সাধই পূরণ হয়নি, কিন্তু এ নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ ছিল বলেও মনে হয় না। শত অভাবের মধ্যেও তার সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। নিরুপায় হয়ে সবার অগোচরে যা হলো – বাসন বন্ধক রেখে সন্তানদের মুখে দু-মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার কী আকুল চেষ্টা, মুখ ফুটে অভাবের কথা কাউকে না বলা। এটাই মানুষের দারিদ্র্যের চরম পর্যায়। সর্বজয়ার চরিত্রে করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় হৃদয়স্পর্শী। গল্পে অভাবের কাহিনি সবাই তিল তিল করে উপলব্ধি করেছে। সংসারে এই অভাবের বিরুদ্ধে সন্তান-সন্তানাদির জন্য পুরুষের জীবনযুদ্ধও এ-ছবিতে সুন্দরভাবে চিত্রিত। পানাপুকুরে ঝড়ো হাওয়ায় পদ্মপাতার জলের মধ্যে অঝোরধারার বৃষ্টির দৃশ্যে সেতারের সুর বুকে বাজে। দারুণ বৃষ্টির আরম্ভ বোঝাতে চকচকে টাকের ওপরে দেখানো ফোঁটা যথার্থই sense of humour বটে। হরিহরের চিঠি এলে পুরো পরিবারের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি, চারদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ।
রায়ের সৃষ্টিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো প্রকৃতি। প্রকৃতিকে নিজস্ব ভঙ্গিতে ও আঙ্গিকে দেখা এবং দেখানোর চোখ তিনি আয়ত্ত করেছিলেন শান্তিনিকেতনে শিক্ষানবিশী অবস্থানকালে। তাঁর ছবিতে প্রকৃতি সবসময় একটি চরিত্র। ‘লেবুপাতায় করমচা যা বৃষ্টি ধরে যা’ – বৃষ্টিভেজা উমার (দুর্গার) মুখের সেই অবি888sport app download for androidীয় ছড়া। উমা দাশগুপ্তের দুর্গা চরিত্রে বাস্তব অভিনয়ে মনে হয়, এ যেন অভিনয় নয়, হাজারো মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ গ্রামীণ জীবন। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ,
আশা-আকাঙ্ক্ষা, না-পাওয়ার বঞ্চনার ইতিহাস।
বিয়ের সাজে সইকে দেখে দুর্গার চোখের কোণে এক ফোঁটা অশ্রু কত স্বপ্ন ছবি আঁকে। অপুকে বলা দুর্গার সে-কথা – ‘এই অপু, এইবার জ¦র সারলে আমি আর তুই রেলগাড়ি দেখতে যাব।’ কিন্তু দুর্গার আর রেলগাড়ি দেখা হলো না। মৃত্যুদৃশ্যে ঝড়ো আবহাওয়ার রাতে অপ্রতুল চিকিৎসার কারণে দুর্গা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঝড়ের তাণ্ডবে দমকা হাওয়ায় ঘরের দরজার অর্গল খুলে পড়তে চায়, সঙ্গে জানালার চটও উড়ে যেতে চায়। দুর্গাকে শুশ্রূষারত সর্বজয়ার মনে প্রকৃতির প্রচণ্ড তাণ্ডবের মধ্যে শংকা ও উদ্বেগ, তবু প্রাণপণে দরজাকে ঠেলে রাখে – যেন খুলে না যায়। এ যেন মৃত্যুদূত যাতে ঘরে প্রবেশ করতে না পারে তাকে বাধা দেওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা। তবু দুর্গা বিদায় নেয়। অপু তখন গভীর ঘুমে অচেতন।
পরের দিন জলকাদায় মিশে একাকার দৃশ্য শংকার পরিবেশকে আরো বিকট করে তোলে। চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে যখন হরিহর দীর্ঘ প্রবাসজীবন থেকে ফিরে এসে দুর্গার জন্য আনা শাড়িখানা সর্বজয়ার হাতে তুলে দেয়। সর্বজয়ার রুদ্ধ শোক কান্নায় ভেঙে পড়ে হরিহরের পায়ের ওপর। হরিহর সর্বজয়ার কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে জানতে চায়, ‘দুর্গা নেই?’ দুর্গার মৃত্যুর পর থেকে হরিহরের ফেরা পর্যন্ত সর্বজয়ার কান্নাকে সামলে রাখার কৌশল এখানে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। সবচাইতে বেশি মনকে ছুঁয়ে যায় সর্বজয়ার কান্নার পরিবর্তে তারসানাইয়ের তীব্র আর্তনাদ, যা এক বিরল সংযোজন। হরিহরের উপস্থিতিতে সর্বজয়ার পিঠের কাঁপুনি দিয়ে ক্যামেরার দিকে পেছন ফিরে থাকার দৃশ্য অভূতপূর্ব। হরিহরের উঠে দাঁড়ানো এবং আবার ধীরে ধীরে নিচু হয়ে ধপ করে বসে পড়া, সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা – সবকিছুই মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
রায় ছবির সবচেয়ে 888sport app download for androidীয় মুহূর্তগুলিতে সংলাপ যথাসম্ভব কম ব্যবহার করার পক্ষপাতী ছিলেন, তাই ছবি সম্পাদনার সময় সর্বজয়ার বিলাপের পরিবর্তে তারসানাইয়ের আর্তনাদের সুর ব্যবহারের আগ্রহের কথা পণ্ডিত রবিশঙ্করকে জানান। পণ্ডিতজি একমত হয়ে ঠিক করে দেন রাগ ‘পদটীপ’। বাজিয়েছিলেন তারসানাইয়ের সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ 888sport live chatী দক্ষিণামোহন ঠাকুর, বাঁশিতে ছিলেন অলক সেন রায়। পণ্ডিতজিকে দিয়ে মেঘের আবির্ভাবের সময় রাগ ‘দেশ’, দুর্গার মৃত্যুর পরের দিন সকালের দৃশ্যে রাগ ‘টোড়ী’ ব্যবহার করেন সত্যজিৎ। সময়ের অভাবে পণ্ডিত রবিশঙ্কর মাত্র একদিনে আবহ সংগীতের কাজ সম্পন্ন করেন।
The Village Voyage-এর একটি 888sport free betয় এই live chat 888sportের সংগীত সম্পর্কে লেখা হয় – ‘একই সঙ্গে শোকপূর্ণ ও উল্লসিত’। The Guardian-এ ২০০৭ সালের ৫০টি live chat 888sportের সংগীত তালিকায় পথের পাঁচালীর সংগীত অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
পথের পাঁচালীতে মৃত্যুদৃশ্য দুটি। একটি ইন্দির ঠাকরুনের এবং অপরটি দুর্গার। রায়ের ভাষায় : ‘মৃত্যুদৃশ্য live chat 888sportকারদের চিরকালই টানে। এখানে তারা কল্পনাকে কাজে লাগানোর মতো একটি জায়গা পেয়ে যান। আমিও এর ব্যতিক্রম নই।’ ক্যামেরার মতো শব্দকেও একটি গৌণ ভূমিকায় ব্যবহার করা হয়েছে। দুর্গার মৃত্যুর দিন ঝড়ের গর্জন, কাশবনের শন্শনানি, টেলিগ্রাফ পোস্টের গুমগুমানি। সরকারি অনুদানের টাকার হিসাবপত্র সমন্বয় করতে সময় ক্ষেপণের কারণে অপু-দুর্গার বৃষ্টিভেজার দৃশ্য বাদ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল; কারণ বর্ষাকাল তখন শেষ পর্যায়ে। তবু যদি বৃষ্টি হয় – এই ভরসায় লোকেশনে রায়কে অনেকবার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। রায়ের ভাষায় : ‘বর্ষাকালে প্রকৃতির রূপের একটি বিরাট পরিবর্তন ঘটে যায়। আশেপাশে ঘুরে ঘুরে ছবি তুললাম। জলের মধ্যে পদ্ম আর শাপলা, তার ছবি। বাতাসে কাঁপছে পদ্মপাতা তার ছবি। 888sport alternative linkে নেই, এমনকি চিত্রনাট্যেও নেই, তা না-ই থাক।’ পথের পাঁচালীর বিভিন্ন দৃশ্যে এগুলি ছড়িয়ে আছে। অনেক দেন-দরবারের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ছবিতে অর্থায়নে সম্মত হয়। চুক্তিপত্র প্রসঙ্গে রায় লিখেছেন : ‘একমাত্র আমার জন্যেই সেখানে কোন বরাদ্দ নেই, এই পর্যায়ে একমাত্র আমিই কিছু পাব না।’ সুব্রত মিত্রের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ইউনিটের প্রায় সকলেই শেষ কয় মাস সরকারি সহায়তায় সাড়ে চারশো টাকা করে পেতেন। রায়ের একটা অনুরোধে বিদেশে এ-ছবি বিক্রি হলে রায় যেন এর একটা অংশ পান – রায়ের এই প্রস্তাবে সরকারি কর্তৃপক্ষ সম্মত হলেও চুক্তিপত্রে সরকারি কর্মকর্তাদ্বয় জনাব মাথুর ও নৃপেন্দ্র মিত্রের যোগসাজশের কারণে রায়ের কথা অনুল্লিখিত থাকে। সরকারি কর্মকর্তাদ্বয়ের মতে, পুরো টাকাই অপচয় হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডা. রায়ের খামখেয়ালির কারণে। ১৯৫৫ সালের ৩রা মে মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টে (এমওএম) সাবটাইটেল ছাড়া পথের পাঁচালীর আন্তর্জাতিক উদ্বোধনের তিন সপ্তাহ পর এমওএমের প্রদর্শনী ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান মনরো হুইলারের কাছ থেকে টেলিগ্রাম এলো – ‘A Trimmed of imaginative photography.’ ‘একটা বড় রকমের তৃপ্তিবোধ করেছিলাম এই চিঠি পেয়ে’ – সত্যজিৎ রায়। ১৯৫৪ সালে হুইলার তাঁর কলকাতায় অবস্থানকালে ছবিটি সমাপ্ত করতে রায়কে অনুপ্রাণিত করেন। ১৯৫৮ সালে নিউইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউ প্লে হাউজে live chat 888sportটি আট মাস ধরে চলে। ১৯৫৬ সালে কান live chat 888sport উৎসবে ছবিটি Best Human Document (শ্রেষ্ঠ মানবিক দলিল) হিসেবে বিশেষ জুরি 888sport app download bd পায়। এর আগে ১৯৫৫ সালের ভারতীয় ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ live chat 888sport নির্বাচিত হয়। ভারতে ছবিটি প্রদর্শিত হয় ১৯৫৬ সালের ২৬শে আগস্ট। মুক্তির ২০ বছর পর জাপানি
live chat 888sport-পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া বলেন, ‘এই live chat 888sportের প্রভাব সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে’ এবং এই live chat 888sportের গভীর অনুভূতিকে নাড়া দেওয়ার ক্ষমতার তিনি বিশেষ প্রশংসা করেন।
এই ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে রায়ের ওপর নিউ রিয়েলিজমের প্রভাব থাকলেও তিনি রিয়েলিজমের প্রবক্তাদের অতিক্রম করে অনন্য উচ্চতায় ছবিটিকে নিয়ে গেছেন। রায় লিখেছেন : ‘আমার জীবনের সব থেকে নাটকীয় ঘটনাগুলির একটি হলো রেনোয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ।’ চল্লিশ বছর পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মিতেরার হাত থেকে ‘লিজিয়ন অব অনার’ নেওয়ার সময়ে রেনোয়াকে Principal উল্লেখ করে তিনি তাঁর ঋণ স্বীকার করেছিলেন।
পুঁথি-লিখিয়ে হরিহরের প্রতি সম্মান জানিয়ে পথের পাঁচালী ছবির বিভিন্ন বিভাগের শিরোনামগুলি লেখা পুঁথির ঢংয়ে। শেষ দৃশ্যে ধনী প্রতিবেশী এক ঝুড়ি ফল নিয়ে আসে, যাকে বলা যায় Irony of fate – দুর্গা বেঁচে থাকতে তাকে এই ফল চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়েছে। যখন দুর্গা নেই তখন ফল নিয়ে এসে প্রতিবেশী বলে – ‘কোনোদিন তোমাদেরকে তেমন কিছু দিতে পারিনি।’
পথের পাঁচালীর অধিকাংশ দৃশ্যই লোকেশনে তোলা, অল্প কিছু অংশ তোলা হয় স্টুডিওতে। জীবনকে নিয়ে সিনেমা, নাকি সিনেমাকে নিয়ে জীবন? পথের পাঁচালীতে উঠে আসা ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ বা শ্রেণিবৈষম্যের কি কোনোদিন অবসান হবে? ভারতীয় live chat 888sportের বিষয়বস্তুর এমন রাজসিক মহিমা এর আগে পরিলক্ষিত হয়নি।
ব্যক্তি সত্যজিতের মূল্যায়ন, তাঁর কাজের নির্মোহ সমালোচনা এদেশে আজো হয়নি। অতিরিক্ত ভক্তি বা মাত্রাজ্ঞানের অভাব এর কারণ। এক্ষেত্রে তাঁর নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়নে বিদেশিরা এগিয়ে।
Ren Kingsley-র ভাষায়, সত্যজিৎ রায় হচ্ছেন ‘The greatest of our poets of the cinema.’
তথ্যসূত্র
১. চিত্র সমালোচনা-৪০, সম্পাদনা উত্তম চৌধুরী, প্রকাশক অবনীন্দ্রনাথ বেরা, বাণী888sport live chat, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৭।
২ সত্যজিৎ রায়, বাবলু ভট্টাচার্য, প্রকাশক কমল কান্তি দাস, জাতীয় 888sport live football প্রকাশ, 888sport app, প্রকাশকাল ২০১০।
৩, বিষয় live chat 888sport, সত্যজিৎ রায়, প্রকাশক সুবীর কুমার মিত্র, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম পেপারব্যাক সংস্করণ জানুয়ারি ১৯৮২।
৪. একেই বলে শুটিং, সত্যজিৎ রায়, সুবীর কুমার মিত্র, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম সংস্করণ ১৯৭৯।
৫. 888sport live chatরূপ, তানভীর মোকাম্মেল, প্রকাশক অনার্য, 888sport app, 888sport cricket BPL rateে বইমেলা ২০১৭।
৬. ডি. জে. : দিলীপ কুমার গুপ্ত ছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডি. জে. কেমার-এর কলকাতা শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। পরবর্তী সময়ে তিনি প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেন। ডি. জে সিগনেট প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। পথের পাঁচালী 888sport alternative linkের কিশোর সংস্করণ আম-আঁটির ভেঁপু ইলাসট্রেশন করেন সত্যজিৎ রায়। ডি. জে. এই কাহিনি থেকে একটি ভালো ছবি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বললে সত্যজিৎ রায় খুবই অনুপ্রাণিত হন।
৭। পথের পাঁচালী, সম্পাদনা ডা. গিয়াস শামীম।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.