তার তো সময় ছিল না সময় নষ্ট করবার

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আমার ছাত্র ছিল। সরাসরি, ক্লাসরুমের ছাত্র। ছাত্র হিসেবে সে যে ছিল অত্যন্ত মেধাবী সেটা বিভাগের সকল শিক্ষকই জানতেন, অজানা ছিল না আমারও। অনার্স ও এমএ-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া তার মেধার সাক্ষ্য বহন করে। আমি দেখতাম মনজুর অতিদ্রুত যে-কোনো বিষয় অনুধাবন করতে পারে, এবং সুশৃঙ্খল, সাবলীলভাবে, যুক্তিসহকারে তা প্রকাশ করতে দক্ষ। ছাত্রজীবন শেষ করেই সে চৌকাঠ পেরিয়ে শিক্ষকজীবনে প্রবেশ করে। সেটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। আমি তখন বিভাগের চেয়ারম্যান। সেটা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়, একাধারে বেদনার এবং আশার। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা এবং বিভাগের কার্যক্রম গড়ে তোলায় আমাদের প্রবল আগ্রহ ও প্রচুর উৎসাহ ছিল; এবং সে-কাজে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অংশগ্রহণ ও দায়িত্বপালন ছিল উল্লেখযোগ্য। তার পিতাও একজন যশস্বী শিক্ষক ছিলেন; ঘটনাক্রমে একবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা ও আলাপ হয়েছে, 888sport appতেই। পরে জেনেছি মনজুরের মাতাও শিক্ষক ছিলেন। মনজুর তার পারিবারিক উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্যকেই নিজের মধ্যে ধারণ করেছে। শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জনে তার মোটেই বিলম্ব ঘটেনি। আমরা জানতাম ও দেখতাম যে, ওই নবীন শিক্ষক ছাত্রদের প্রতি ছিল স্নেহশীল। তাদের সঙ্গে ক্লাসের বাইরেও তার যোগাযোগ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং একই সঙ্গে অভিভাবক ও বন্ধু সুলভ। ক্লাসে পড়াতো সে গভীর মনোযোগ দিয়ে। ক্লাসে তাকে কেউ কখনো অনুপস্থিত দেখেছে বলে শুনিনি; এবং শিক্ষার্থীরা তার ক্লাসে আসতো অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে, এবং ফিরতো তৃপ্তিসহকারে।

মেধাবান শিক্ষার্থীরা তার কাছ থেকে উৎসাহ পেত; যারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল, এবং এসেছে মফস্বল থেকে তারা পেত যত্ন, পেত এগিয়ে যাওয়ার প্রণোদনা।

তার অকালপ্রয়াণের পর বিভাগীয় 888sport app download for androidসভায় তার সাবেক ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী ও বন্ধুজনেরা একত্র হয়ে তাকে যেভাবে 888sport app download for android করেছেন তাতে বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, মানবিক সম্পর্কের ব্যাপারে তার সজাগতা কেমন গভীর ও আন্তরিক ছিল। বিভাগের একজন অধ্যাপক – তাহমিনা আহমেদ – শিক্ষার্থী হিসেবে তার কাছে ঋণের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছে, সামান্যকে তিনি অসামান্য করে তুলতেন। সে দক্ষতা ও গুণ মনজুরের ছিল।

শিক্ষকতা শুরু করার অল্প পরেই মনজুর কানাডা চলে যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য। এবং সেখান থেকে ফিরে এসে অভিজ্ঞতা ও অর্জনকে যত্নসহকারে প্রয়োগ করে। সে ছিল জন্ম-শিক্ষক। অন্য পেশায় এমনকি স্বল্পকালের জন্যও যোগদানের চিন্তাকে সে প্রশ্রয় দেয়নি। বাংলা একাডেমি এবং 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমি যে তাকে মহাপরিচালক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবেই জানি। ওই দুই পদের কোনোটাতেই সে যে বেমানান হতো এমন নয়। 888sport live footballের শিক্ষক, গবেষক ও লেখক হিসেবে বাংলা একাডেমিকে সহজেই সে প্রাণবন্ত করে তুলতে পারতো। 888sport live chatকলার চর্চাতেও তার জ্ঞান এবং ঔৎসুক্য দুটোই ছিল। কিন্তু শিক্ষকতার বাইরে যেতে সে সম্মত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ তো শিক্ষার সঙ্গেই জড়িত; ইচ্ছা করলেই ওই পদ সে পেতে পারতো, কিন্তু ইচ্ছা যে করেনি সেটা তো স্পষ্ট। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের লোভনীয় পদ পাওয়াও তার পক্ষে খুবই সম্ভব ছিল; সে-ই সম্ভাব্যতাকে মনজুর যে কাজে লাগাবে এমন চিন্তা সে কখনো করেছে বলে মনে হয় না। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা শেষ হলে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অধ্যাপক হিসেবে ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস-এ যোগ দেয়। এমনটাই ছিল স্বাভাবিক। পরে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় যে তাকে এমেরিটাস অধ্যাপকের পদ অর্পণ করে সেটা ছিল তার জন্য স্বাভাবিক প্রাপ্তি।

মনজুর যে কেবল 888sport live footballের শিক্ষক ছিল তা তো নয়, ছিল সে 888sport live footballের স্রষ্টাও। এই সংযোগটা 888sport live footballের সকল শিক্ষকের ক্ষেত্রে ঘটে না। 888sport live footballের সকল শিক্ষকই গবেষণা ও প্রকাশনায় আগ্রহী থাকেন, এবং সে-আগ্রহ কার্যকরও করে থাকেন; কিন্তু সৃষ্টিশীল 888sport live footballচর্চা, সেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। মনজুরুল ইসলাম সেটা করেছে। একাধারে সে ছিল 888sport live footballের শিক্ষক এবং 888sport live footballের স্রষ্টা। শুরু করেছিল শুনেছি 888sport app download apk দিয়েই, কিন্তু দ্রুতই অনুধাবন করেছে যে তার আসল কর্মক্ষেত্র হবে গদ্য-রচনা। মনজুর 888sport live লিখেছে। গুরুত্বপূর্ণ 888sport live। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা আগে ছিল না, প্রকাশনা শুরু হয় স্বাধীনতার পরে; সে-পত্রিকার প্রথম সম্পাদক হিসেবে আমি তার 888sport live প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি। নন্দনতত্ত্বের ওপর সে বই লিখেছে। বাংলা একাডেমি যার প্রকাশক। ওই বিষয়ে পূর্ববঙ্গে ওটিই হয়তো প্রথম প্রকাশনা। বইটিতে তার অভিনিবেশ ও জ্ঞান, দুটোরই প্রকাশ ঘটেছে। 888sport appsে চিত্রকলার প্রসার উল্লেখযোগ্য বটে, তবে সে-তুলনায় 888sport live chat-সমালোচনা অনগ্রসর। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম 888sport live chat-সমালোচনাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে।

888sport live chat-সমালোচনা লেখার আগে সে চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে 888sport live chatীদের কর্মধারা দেখেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে 888sport live chatীরা কীভাবে কাজ করেন সেটা লক্ষ করেছে, এমনকি ছাত্রাবস্থায় প্রখ্যাত 888sport live chatীদের দু-একটি ক্লাসেও উপস্থিত থেকেছে। সেই সঙ্গে ছিল তার নিজস্ব 888sport live chatবোধ ও মননশীলতা। সেজন্য তার 888sport live chat-সমালোচনা সমাদর পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি নিয়ে লেখাটা সহজ ব্যাপার নয়, সে-কাজও মনজুর করেছে। 888sport live football বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লিখেছে; 888sport live football সম্মেলন ও সেমিনারে যোগ দিয়েছে – দেশে এবং বিদেশে। 888sport app download apk latest version করেছে, যেমন ইংরেজি থেকে বাংলায়, তেমনি বাংলা থেকে ইংরেজিতে।

কিন্তু সৃষ্টিশীল 888sport live footballচর্চার ক্ষেত্রে তার মূল কাজটা ছিল কথা888sport live footballে। ঈদ 888sport free betর সম্পাদকেরা অপেক্ষা করতেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের লেখার জন্য। 888sport alternative link পেলে তো কথাই নেই, ছোটগল্পপ্রাপ্তিতেও তাঁরা খুশি হতেন।

না-পেলে কাতর হতেন। মনজুর একের পর এক গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করেছে। 888sport alternative linkও লিখেছে কয়েকটি। তার রচিত কথা888sport live footballে সৃষ্টিশীলতার সঙ্গে যুক্ত থাকতো মননশীলতা। মনজুর গল্প বলেছে। তার ভাষা চিন্তাসমৃদ্ধ, সহজ, সাবলীল, বাহুল্যবর্জিত, অথচ হৃদয়গ্রাহী। বাস্তবিক জীবনে আমরা দেখেছি কীভাবে, অনায়াসে সে তার কাজগুলো করে, তার 888sport live footballেও দেখি একই ঘটনা। কঠিন কাজ সে সহজে করেছে। তার সকল কাজের পেছনে শ্রম যে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু পরিশ্রমের কোনো চিহ্ন নেই।

মনজুরকে আমি কখনো অপ্রসন্নচিত্ত দেখিনি। তার যে অসুখ ছিল এ-খবর কেউ জানতো না, টেরও পায়নি; কারণ নিজের অসুবিধার কথা সে কখনো অন্যকে জানাতো না, অথচ অন্যের অসুবিধার খবর ঠিকই রাখতো। তার স্ত্রী – সানজিদা – আমাদের ছাত্রী ছিল। সানজিদা এক সময়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়; তার যত্ন ও চিকিৎসা মনজুর গভীর মনোযোগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে করতো; উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে সানজিদাকে যে একাধিকবার দেশের বাইরে নিয়ে গেছে সে-খবর পেয়েছি; কিন্তু কখনো এ-খবরটি পাইনি যে, মনজুর নিজেও অসুস্থ। মনে হতো সে সুস্বাস্থ্যের প্রতিভূ। অসুখের খবর পেলাম একবারই, যখন সে বিদায় নিল।

যা বলছিলাম, মনজুর গল্প বলতে ভালোবাসতো। সেটা আমরা যারা তাকে চিনতাম তারা জানতাম। বিশেষভাবেই জানতো তার বন্ধু ও আপনজনেরা। সেই দক্ষতা তার কথা888sport live footballে পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে মননশীলতাও ছিল। গল্পগুলো গল্প ঠিকই, কিন্তু গল্পের চরিত্রগুলো গল্পের চেয়েও কৌতূহলোদ্দীপক। তার গল্প গল্পের মানুষদেরকে ঘিরেই, কিন্তু মানুষই সেখানে প্রধান, গল্পকে ছাড়িয়ে। গল্পের মানুষদের অভিজ্ঞতা, চিন্তা, অনুভূতি, নিজস্বতা, বৈচিত্র্য, এসবকে নিয়ে এবং ঘিরেই তার গল্প। বাস্তবতা-বিবর্জিত অবশ্যই নয়, কিন্তু বাস্তবতার গভীরেও যে বাস্তবতা থাকে, থাকে অতিবাস্তবতা, তারও সন্ধান কথা888sport live footballিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম রাখতো, এবং সুন্দরভাবে নিয়ে আসতো তার কথকতাতে। পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন যে, তার ওই কথকতাতে স্বপ্নবাস্তবতা ও উত্তর-আধুনিকতার প্রভাব পড়েছিল; কিন্তু বাইরের প্রভাবের চাইতেও অধিক যা ছিল তা হলো বাংলার নিজস্ব গল্পবলার ঐতিহ্য। 888sport appsের বয়স্কজনেরা শিশু-কিশোরদের যেভাবে গল্প বলেন সেই ধারাটা মনজুর নিয়ে এসেছিল তার গল্পবলাতে। এবং সেই বিশেষ কারণেই সে অন্য গল্পলেখকদের থেকে স্বতন্ত্র।

মনজুরের সঙ্গে 888sport slot game করার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করতো আমাদের অকালপ্রয়াত ছাত্র, মনজুরের সহপাঠী, শান্তনু কায়সার; তার আমন্ত্রণে ওই শহরে আমরা গেছি, যোগ দিয়েছি 888sport live football-সমাবেশে। তখন দেখেছি 888sport slot gameের ব্যবস্থাপনায় তার দক্ষতা কেমন প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের পর্যায়ে পড়ে। আবার বিদেশেও গেছি আমরা একসঙ্গে। যেমন, লন্ডনে। সেখানে ইংল্যান্ডে কর্মরত 888sport appsি শিক্ষকরা একটি সংকলনের আয়োজন করেছিলেন। মনজুর এবং আমি উভয়েই ছিলাম নিমন্ত্রিত। মনজুর সঙ্গে ছিল বলে ওই 888sport slot game সহজ ও আনন্দদায়ক হয়েছিল। একই রকমের অভিজ্ঞতা ঘটেছে যখন আমরা কোপেনহেগেনে যাই। 888sport appsের মুক্তি সংগ্রামে সমর্থনদানকারী একটি সংগঠন স্বাধীনতার পরে 888sport appsের অবস্থা নিয়ে আলোচনা-সভার আয়োজন করেছিল। তাতে হায়দার আকবর খান রনো, খুশি কবীর, মনজুর এবং আমি যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে আমি বলেছি 888sport appsের অবস্থা বিষয়ে, মনজুর তাতে যোগ দিয়েছে; কিন্তু আবার ভিন্ন একটি অনুষ্ঠানে তার বক্তৃতার বিষয় ছিল 888sport appsের চিত্র888sport live chat। সেবার আরো যা দেখলাম সেটা হলো, মনজুরের শারীরিক সক্ষমতা। আয়োজকদের একজনের সঙ্গে তাৎক্ষণিক পরিচয়ের সূত্রে দুজনে মিলে সাইকেলে করে নগর-পরি888sport slot gameে বের হয়ে গেছে বলে শুনলাম। দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে যখন রওনা হয়েছি; দেখা গেল মনজুর তার নিজেরটা তো বটেই আমার লাগেজেরও একটা অংশ কাঁধে ঝুলিয়ে নিচ্ছে। বললো, কানাডায় থাকতে পর্বতারোহণের ওপর সে ঐচ্ছিক একটি কোর্স করেছে।

আমাদের এক ছাত্রের পিতা – লুৎফুল হায়দার চৌধুরী – হঠাৎ করে মারা যান। তিনি ছিলেন আমার বন্ধু ও সহপাঠী। নিজেও শিক্ষকতা করেছেন। আমি আগ্রহী ছিলাম তাঁর বাসায় যেতে, কিন্তু ঠিকানা জানতাম না, কীভাবে যাবো তাও ঠিক ছিল না। মনজুর বললো ঠিকানা সে জানে, ছাত্রটির কাছ থেকেই শুনে নিয়েছে টেলিফোনে, এবং বাসাটি সে খুঁজে বের করতে পারবে। মনজুরের তখন একটি গাড়ি ছিল, নিজেই চালাতো; তার ব্যবস্থাপনায় আমরা রাস্তা তো বটেই বাসাও সঠিকভাবে খুঁজে পেয়ে গেলাম। পথে যেতে যেতে মনজুর আমার প্রশ্নের জবাবে জানালো, মোটরগাড়ি চালানোর শিক্ষাটা সে নিয়েছিল সিলেটে থাকতে। তাদের বাড়ির কাছেই ছিল একটি মোটর মেরামতের কারখানা, তার পরিচালকের কাছেই সে ওই প্রশিক্ষণটি নেয়।

এই ছিল সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। শিক্ষক, 888sport live footballিক, সংবেদনশীল, নানান কাজে দক্ষ, শারীরিকভাবে সুস্থ। সেই সঙ্গে আরো একটি পরিচয় ছিল তার। সেটি সংস্কৃতিসেবীর। মনজুর মঞ্চনাটক রচনা করেছে, টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখেছে। টেলিভিশনের নানা ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিত, সাংস্কৃতিক আয়োজনে উপস্থিত থাকত। একবার সে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদনাতেও হাত দিয়েছিল, যেটিতে আমি একটি গল্প লিখেছিলাম, এবং সম্মানীও পেয়েছিলাম। আমাদের বন্ধু ও সহকর্মী অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রয়াণের পর মনজুর কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের সভাপতিত্বের দায়িত্ব নেয়। তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা ওই পত্রিকার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত তরুণ লেখকদের 888sport live football 888sport app download bd প্রদানের অনুষ্ঠানে। বলাই বাহুল্য আমি গিয়েছিলাম মনজুরের আহ্বানেই। আমার পাশে বসে জানালো সে যে, অনুষ্ঠানে যাঁদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন ছিল তাঁদের ভেতর দুজন উপস্থিত থাকতে পারছেন না, এবং তাঁদের কাজের দায়িত্বটাও তাকেই বহন করতে হবে। এ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ ছিল না; এবং তার সেদিনের কর্তব্যপালনে এবং কথাবার্তায় কোনোপ্রকার বিষণ্নতার চিহ্ন দেখিনি। অথচ পরে জেনেছি, সে-সময়ে মনজুর যে অত্যন্ত সুস্থ ছিল তা নয়। এর অল্পদিন পরেই তো পথচলতি অবস্থাতেই সে জ্ঞান হারায়, এবং পরবর্তীকালে চিকিৎসারত অবস্থাতেই তার অকালপ্রয়াণ ঘটে।

১৯৮৯ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর আমার স্ত্রী নাজমা জেসমিন চৌধুরী প্রয়াত হন। অপ্রস্তুত অবস্থায় শোকের ধাক্কা কোনোমতে কাটিয়ে উঠে কয়েকদিন পরে আমি যখন বিভাগে গেছি তখন দেখি নোটিশ বোর্ডে একটি বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। সেটি এই মর্মে যে, স্ত্রীর মৃত্যুর দরুন আমি কয়েকদিন ক্লাস নিতে পারবো না। বিজ্ঞপ্তিটি মনজুরের নিজের হাতে লেখা। তার দায়িত্ব ছিল না, কেউ তাকে অনুরোধও করেনি, স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই কাজটি সে করেছে। এই স্বতঃপ্রণোদিতটা ছিল তার চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে আমি কখনো কাজের বাইরে দেখেছি বলে মনে করতে পারি না। সে হাঁটতে ভালোবাসতো, এবং হাঁটতো যখন তখনো মনে হতো কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে। হতে পারে কোনো কাজে গিয়েছিল, বা কোনো কাজে যাচ্ছে। তার চলে-যাওয়ার পর তার বন্ধুরা জানিয়েছেন যে, তাদের সে সময় দিত – গল্প-গুজবে, আলোচনায়, হাসি-ঠাট্টায়। হাসি-ঠাট্টাটা তার জন্য স্বাভাবিক ছিল। মনজুর ছিল কৌতুকপ্রিয়, তার ছিল স্বাভাবিক বাগ্বৈদগ্ধ্য, এবং নানা বিষয়ে জ্ঞান। কিন্তু সে যখন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাত তখনো সেটা তার জন্য সময়ের অপচয় ছিল বলে মনে করি না। আমার ধারণা, সেটা ছিল তার অবকাশযাপন। অবকাশ জিনিসটা কিন্তু আলস্য নয়; অবকাশ বেরিয়ে আসে কাজের ভেতর থেকেই, নদীর ভেতরে যেমন দ্বীপ দেখা দেয়। কিন্তু দ্বীপের জেগে-ওঠা তো তখনই সম্ভব যখন নদী থাকে। নদী না থাকলে দ্বীপ থাকে না, কাজ না থাকলে অবকাশে যাওয়া যায় না, পাওয়া যায় আলস্য, এবং অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা। দৈনিক সংবাদ পত্রিকার মূলত 888sport live football বিষয়ে সে যে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক কলামটি লিখত, তার নাম দিয়েছিল ‘অলস দিনের হাওয়া’; কিন্তু ওই আলস্য অলসজনের নয়, ওটি ছিল কর্মমুখর একজন মানুষের চিন্তার এবং সে-চিন্তাকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অবকাশযাপন।

কাজের মানুষ মনজুরকে আমি কখনো হতাশ হতে দেখিনি। সে যখন বিদেশে তখন আমার সঙ্গে তার পত্রযোগাযোগ ছিল; নানা রকমের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে, কিন্তু কখনো হতাশার বিন্দুমাত্র চিহ্ন প্রকাশ করেনি। তার তো সময় ছিল না সময় নষ্ট করার, যেজন্য কর্মরত অবস্থাতেই সে চলে গেল। আমাদের জন্য সেটা যে কতবড় দুঃখের ও বেদনার সেটা আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের মতো করে অনুভব করছি। শিক্ষকতা, সংস্কৃতিচর্চা, সর্বোপরি 888sport live footballচর্চার ক্ষেত্রে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অবশ্যই জীবিত থাকবে। তার মতো মানুষদের ক্ষেত্রে প্রস্থানের তুলনায় অধিক সত্য তারা যে ছিলেন আনন্দদায়ক সেই ঘটনা।