তীর্থযাত্রী : জ্ঞানের পথে শাশ্বত যাত্রা

888sport live chat জীবনের প্রতিচ্ছবি নয়। জীবনের প্রতিরূপায়ণ। নাট্যতাত্ত্ব্কি স্তানিস্লাভস্কি নাট্যে সুপার অবজেক্টিভকে প্রধানরূপে দাবি করেন। তিনি মনে করেন, নাটক চূড়ান্ত একটি ভাববস্তু উপহার দেবে দর্শককে। সম্প্রতি 888sport appর মঞ্চে তীর্থযাত্রী নাটকটি দর্শন-গল্প-অভিনয়-দৃশ্য একীভূত হয়ে অখণ্ড এক জ্ঞানতাত্ত্বিক ভাষ্য তৈরি করেছে। এ-নাট্যের কাহিনি গ্রহণ করা হয়েছে হুমায়ুন কবির-রচিত তীর্থযাত্রী তিনজন তার্কিক গ্রন্থ থেকে। নির্দেশনা দিয়েছেন স্বনামধন্য অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। নাটকটি প্রযোজনা করেছে ‘নাট্যকেন্দ্র’। নৃত্য-গীত-বাদ্য-অভিনয়ের অদ্বৈত মাধুর্যে চিন্তনমূলক আখ্যানে নাটকটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।

শুধু বিনোদন নয়, জীবন-জগৎ দেখার নতুন দ্বান্দি¦ক ভাবনা হতে পারে এ-নাটক। নির্দেশক তৌকীর আহমেদ দার্শনিক জ্ঞানকাণ্ডের অ্যাপিস্টমোজিক্যাল জায়গা থেকে সত্তা, মানুষ, সমাজ ও রীতিনীতিকে দার্শনিক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছেন। দশ মিনিটের বিরতিসহ প্রায় পৌনে দু-ঘণ্টা পিনপতন নীরবতায় যেন দর্শক নিজেকেই খুঁজে ফেরেন। তৌকীর আহমেদ 888sport appsের

প্রথিতযশা নাট্যাভিনেতা ও নির্মাতা। ইতোপূর্বে তাঁর প্রতিসরণ মঞ্চে যেমন আলোচিত হয়ে উঠেছিল, তেমনি এ নতুন নাটকও নাট্যমহলে দার্শনিক দৃষ্টিকোণে গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। এ-নাটক প্রথম মঞ্চায়িত হয় নিউইয়র্কে। তারপর বিস্তৃত পরিসরে 888sport appর 888sport live chatকলা একাডেমির মূল মঞ্চে মঞ্চায়ন হয়। নির্দেশক স্থান-কালকে নির্দিষ্ট না রেখে মহাকালিক রেখায় বিভিন্ন সভ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। নাট্যকেন্দ্র বরাবরই প্রযোজনা দিয়ে 888sport appsের মঞ্চনাটকের দর্শকদের বিমোহিত করেছে। এ-নাটকও তার ব্যতিক্রম নয়। নাট্যকেন্দ্রের বিচ্ছু, আরজচরিতামৃত 888sport appsের নাট্যাঙ্গনে মাইলফলক। তাছাড়া তাদের প্রযোজনা তুঘলক, সুখ, জেরা, হয়বদন, ক্রসিবল, প্রজাপতি, ডালিমকুমার, বন্দুকযুদ্ধ, পুণ্যাহ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নাট্যকেন্দ্র বিশ্বাস করে, ‘888sport live chatের জন্য 888sport live chat, কী জীবনের জন্য 888sport live chat? – এই প্রশ্নে আমাদের কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। আমরা 888sport live chatে বিশ্বাসী, আমরা মানুষকে ভালোবাসি। মানুষের দ্বারা, মানুষের জন্য এ-বিশ্বের যা কিছু আয়োজন তার সমস্তই আমাদের নাটকের উপাদান। নাটকে আমরা মানুষ, তার ব্যক্তি আচরণ, সুখ-দুঃখ, স্বভাব-বৈশিষ্ট্য, সংকট-উত্তরণ তথা জীবনযাপনের কথা বলার চেষ্টা করব এবং অবশ্যই 888sport live chatিত সৌন্দর্যের আবরণে।’

তীর্থযাত্রী নাটকের আখ্যানভাগে রয়েছে তিনজন যাত্রীর জ্ঞানতীর্থের পথে যাত্রা। তারা জানে না তারা কোথায় যাবে। এ-নাটকে একক কোনো প্লট নেই। তিনজন তার্কিকের বিভিন্ন জনপদ-বিভিন্ন সভ্যতায় পরি888sport slot gameের মধ্য দিয়ে জ্ঞানের স্বরূপ অন্বেষণই নাটকটির মূল বিষয়। দর্শন জ্ঞানকাণ্ডে যেভাবে জ্ঞানের স্বরূপ ব্যাখ্যা হয়ে থাকে, অনেকটা সেরকমই জীবন-জগতের সত্যের অনুসন্ধান। ছোট ছোট কাহিনিকে ভিত্তি করে নাটকীয়তায় এ-নাট্যের বিস্তার। নাট্যটি প্রকৃত অর্থে সামগ্রিকতার সমন্বয়ে একটি পরিবেশনা।

শুরুতেই দেখা যায় মঞ্চের এক পাশে যন্ত্রীদল বসা। মঞ্চের মাঝখানে একটু উঁচু পাটাতন। বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। প্রসেনিয়াম মঞ্চের দর্শকসারির মাঝখান দিয়ে যোদ্ধারা মঞ্চে গিয়ে ওঠে। যোদ্ধাদের পোশাকে অতীত সময়ের একটা ইঙ্গিত আছে। যুদ্ধশেষে সেনাপতি সবাইকে ঘরে ফিরতে আদেশ করেন এবং ‘জীবনযুদ্ধে’ জয়ী হওয়ার নির্দেশ দেন; কিন্তু সব হারানো তিনজন যোদ্ধা কোথায় যাবে? তিন যোদ্ধা খুঁজতে থাকে জীবনের মানে। জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হলে জীবনের জ্ঞান থাকতে হবে। তিনজন হাঁটতে থাকে জীবনের পথে; জীবন-জ্ঞানের অন্বেষণে –

– জীবন না থাকলে জীবনযুদ্ধ কী?

– কিন্তু জীবনের সংজ্ঞা তো জানতে হবে আগে।

– জীবন তো নিজেই তার সংজ্ঞা তৈরি করে।…

– কেন? পথ ছাড়া কি হাঁটা অসম্ভব! যেখানে হাঁটবে সেটাই তো পথ। পথ চলাটাই অভিজ্ঞতা। আর অভিজ্ঞতা মানেই তো জ্ঞান।

– তাহলে জ্ঞানের সূত্রটা কোথায়? অভিজ্ঞতায় না অনুশীলনে?

তীর্থযাত্রীরা বিশ্বাস করে, অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে জ্ঞানের জন্ম হয়। তারা জ্ঞানের অন্বেষণে জ্ঞানের পথে হাঁটতে শুরু করে। পোশাকে স্থান-কালের কোনো ছাঁচ নেই। প্রত্যেকের গলায় উত্তরীয় ঝোলানো ও হাতে লাঠি। তারা জানে তাদের মৃত্যু নেই বলে তারা বেঁচে আছে। জ্ঞান ভয়ংকর এক অস্ত্র। জ্ঞান ব্যবহৃত হয় অন্যকে দমনের জন্য কিংবা অন্যকে নিয়ন্ত্রণের জন্য। হাঁটতে হাঁটতে পথে দেখা হয় এক বৃদ্ধের সঙ্গে। এ বৃদ্ধ যেন প্রাচীন গ্রিসের সক্রেটিস। তার চুল-দাঁড়ি পাকা। বৃদ্ধ জানান, জগতের সকল জয়ই শুধু জয় নয়, সকল পরাজয়ও শুধু পরাজয় নয়। তিন তার্কিক দেখতে পায় সামান্য এক কৃষকের ছেলে জ্ঞানের কারণে রাজ্যের খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছে। তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক কি শুধুই চুক্তি? নাকি অন্যকিছু? হাঁটতে হাঁটতে পথযাত্রায় দেখা হয় আরেক 888sport live chatীর সঙ্গে। যে-888sport live chatীর নির্মিত ভাস্কর্য জীবন্ত মানবী হয়ে ধরা দেয় হৃদয়ের গভীরে। কিন্তু দ্রোণাচার্যের মতো আচার্যের হাতে বারবারই নিহত হয় নতুন কোনো প্রতিভা। শিষ্য প্রশ্ন তুললে গুরু উত্তর দেন –

আমাকে প্রশ্ন করো তুমি কোন সাহসে? তোমাকে তৈরি করেছি আমি, তোমার জ্ঞান-প্রজ্ঞা-দক্ষতা আমার দান। সেটার বড়াই করছো আমার সামনে।

এ যেন চিরায়ত মহাভারতের একলব্যদের মতো নতুন আরেক একলব্য। এ যেন যুগে যুগে বয়ে চলা সত্য। আসলে মানুষের মধ্যে যখন যুক্তি কাজ করে না তখনই মানুষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। হাঁটতে হাঁটতে উপস্থিত প্রাচীন রোম সভ্যতার সেই গ্লাডিয়েটরদের মরণযুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয় তারা। জ্ঞানের অনুসন্ধানের চেয়ে খেলা-মারামারি আনন্দটাই কি মুখ্য? মঞ্চে নানা নাট্যীয় উপকরণ, প্রপস, চরিত্র, আলো ও অভিনয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে দৃশ্যগুলি। প্রশ্ন জাগে, অভিজাত কারা? গুণ, ক্ষমতা, শিক্ষা, অর্থ, নাকি যোগ্যতা – কোনটি বড়? দুজন গ্লাডিয়েটর পরস্পরকে হত্যা করলে জনতার আনন্দ বেড়ে যায়। তার্কিকদের মনে হয়, এ মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত, এ খেলা অনৈতিক। হাঁটতে হাঁটতে দুই পাখির সাক্ষাৎ পায়। বুঝতে পারে – মানুষ, পশু, জীবের পার্থক্য। মন ও গুণ অদৃশ্য জগতের সন্তান। এগুলিকে দৃশ্যমান জগতের দাস করা যাবে না। আবার দেখা হয় সেই  ছেলেটির সঙ্গে, যে এখন দরিদ্র কৃষক পিতার পরিচয় মুছে দিতে চাইছে। পিতৃপরিচয় এখন তার জন্য লজ্জার। হঠাৎ এক ফকিরের আস্তানায় এসে পড়লে ফকির প্রশ্ন করেন, ‘তোমরা কি পথ ভুলে এসেছো, নাকি পথের খোঁজে এসেছো?’

তিন তার্কিক হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছে খোরাসানে। খোরাসানের সৈন্যরা তাদের ঘিরে ফেলে –

– তোমরা কারা?

– আমরা তীর্থযাত্রী।

– বাড়ি কোথায়?

– আমাদের তো কোনো বাড়ি নেই!

– যাচ্ছো কোথায়?

– ওই যে তীর্থে যাচ্ছি।

– আরে বাবা সেটা কোথায়, কোন দেশ।

– সেটা জানতে পারলে তো আর যাত্রার প্রয়োজন

থাকতো না।

– তোমাদের কথা তো হেঁয়ালিতে ভরা, রহস্যজনক ও সন্দেহজনক।

– তোমরা কি শত্রুপক্ষ, না মিত্রপক্ষ।

– আমরা নিরপেক্ষ।

– অসম্ভব অসম্ভব। পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউই নিরপক্ষ নয়।

তার্কিকদের গৈরিক সাজেস্টিক পোশাক স্থান-কালকে নির্দিষ্ট না করলেও দৃশ্যান্তরের 888sport app চরিত্রের পোশাকগুলি চরিত্রনির্ভর। রাজা, সেনাপতি, কোতোয়াল, জল্লাদ, আচার্য, সৈনিক, সিপাহী, বৌদ্ধভিক্ষু প্রভৃতি চরিত্রের পোশাকগুলি চরিত্রের অন্তঃ ও বাহ্য বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে। হালকা গেরুয়া রঙের পোশাকপরিহিত তার্কিকরা। তারা জানতে পারে সৎ মানুষ সাধারণত সংঘবদ্ধ হতে পারে না। দুর্বৃত্ত সংঘবদ্ধ, সেটাই তার অস্তিত্ব। এটাই তার শক্তি। বন্দি হয় তিন তার্কিক। মুক্ত হয়ে পথে বেরুলেও আরেক সভ্যতায় ধৃত হয়। কারণ সেখানে জ্ঞানচর্চা পুরোপুরি নিষেধ। সেখানে দেখতে পায় রাতের আঁধারে জল্লাদ একজনকে ফাঁসি দিয়ে আবার অন্যজনের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছে। তার্কিকরা বুঝতে পারে – ভাগ্যের বিপরীত দুটি অবস্থান – ভাগ্যহীন ও ভাগ্যবান। মানবজীবন জলের মতো প্রবহমান এবং জীবনের অনিবার্য পরিণতি মৃত্যু। তিন তার্কিক হাঁটতে হাঁটতে এসে পড়ে এমন এক রাজ্যে যেখানে রাষ্ট্রই জনগণকে পরাধীন করে রেখেছে। বিভিন্ন অনুশাসনের অধীন করে রেখেছে। ঠিক যেন রুশোর সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট গ্রন্থে বর্ণিত মানুষের স্বাধীনতার স্বরূপ অন্বেষণের মতো –

– হে সেনাধিরাজ। মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন। আর এই স্বাধীনতার জন্যই আপনার সাহায্য চাইতে এসেছিলাম।

– সত্যি করে বলো তো তুমি কি আসলেই স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলে?

একসময় তীর্থযাত্রীদের মনে প্রশ্ন জাগে, তবে কি প্রজ্ঞাই জ্ঞানের মূল আধার? কান্টের সেই প্রজ্ঞার প্রশ্নের মতো। তাদের মাথার ভেতরে ঘুরপাক খায় স্বাধীনতা, অধিকার, আপেক্ষিকতা, মুক্তি, ন্যায়-অন্যায়, ন্যায়যুদ্ধ নানা কিছু। এবার দেখা হয় এক বৃদ্ধ ও এক বকের সঙ্গে। পৃথিবীর খাবারে কার অধিকার বেশি? মানুষের, নাকি অন্য প্রাণীর? কে কাকে খাবে? কিংবা কী খাওয়া অন্যায়? নানা প্রশ্নের বেড়াজালে আটকে পড়ে তিন তার্কিক। তারপর হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে পড়ে কনকনে ঠান্ডা এক পাহাড়ে। গুহার ভেতর ঠান্ডা ঢুকছে –

– প্রত্যেক মানুষের ভেতরই তার নিজস্ব এক বন্ধু আছে। অদৃশ্য বন্ধু।

– তিনি কি ঈশ্বর?

– না।

– তাহলে কি বিবেকের কথা বলছেন?

– না, তাও নয়।

– তাহলে কে সে?

– আমি আসলে জানি না কার কথা বলছি। তবে জানি সে আমার ছায়াবন্ধু …

ভালোবাসা শব্দটির মধ্যে নিঃস্বার্থের দ্রবীভূত গুণ নেই। হাঁটতে হাঁটতে আবার এসে পড়ে এক মূর্খ নিবাসে। সমস্ত মঞ্চটাকে নানা ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন দৃশ্য উপস্থাপন করেছেন নির্দেশক। আলোর নৈপুণ্য দৃশ্যের ভাবগত ইমেজকে উসকে দিয়েছে। আলো কখনো ঊর্ধ্ব, সামনে কিংবা পার্শ্ব থেকে প্রক্ষেপণের পাশাপাশি পেছন থেকেও এমনকি ছায়ার মতো প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। রং-আলোর খেলায় জীবনকে বোঝানোর কৌশল।

মূর্খ নিবাসে দুপুরের পর দলে দলে লোকেরা আসে উপদেশ নিতে। অপরাধীর কাছ থেকে উপদেশ, ব্যাপারটা নতুন লাগে তাদের কাছে। জানতে পারে, মানুষ জন্মগতভাবেই লোভী ও স্বার্থপর। তবে বেঁচে থাকাটাও কি স্বার্থের?

মূর্খ উপদেশ দেয় তার্কিকদের – ‘জ্ঞানের পথে হোঁচট খেতে খেতে এগোতে হয় সত্য ও সুন্দরের দিকে।’ তারপর জানতে পারে, ওই দূরে এক জ্ঞানের পাহাড় আছে সেখানে গেলেই জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া যাবে। এক ভিক্ষুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। ভিক্ষু জানান, জ্ঞান অন্বেষণ করতে হলে আগে নিজের আত্মার অহংকারকে দমাতে হবে। অহংকার থাকলে কখনো জ্ঞান আসবে না। নিরন্তর চলাই কি তবে জীবন? জীবন ও জগৎ কি প্রকৃতপক্ষে ভাব ও বস্তুর অপূর্ব সমন্বয়? এভাবেই একসময় তীর্থযাত্রী অনুভব করতে থাকে জীবন-জগতের জ্ঞানের স্বরূপ। এরই মধ্যে তিন তার্কিক শুনতে পায় আর্তনাদ, চিৎকার, উল্লাস।
যে-শব্দগুলি তাদের পথে নামিয়েছে। তিন তার্কিক দেখতে পায় শত শত মৃতদেহ, ধ্বংস আর মানুষের আর্তচিৎকার। এভাবেই তিন তীর্থযাত্রীর যাত্রা চলতে থাকে।

নাটকটি অভিনয়, নৃত্য, গীত ও ভাবের অদ্বৈতাবাদী উপস্থাপন। চরিত্রাভিনয়ের সঙ্গে বর্ণনা এবং ইংগিতধর্মী গতিশীল দৃশ্যরূপে নাটকটি অনবদ্য হয়ে উঠেছে। প্রায় চল্লিশাধিক সদস্যের দলগত ঐক্যে নাটকটি উপস্থাপিত। নাটকটিতে
সহ-অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যেমন অনবদ্য, ঠিক তেমনি দর্শকদের সঙ্গেও নাট্যীয় যোগাযোগ অনবদ্য।

নির্দেশক তৌকীর আহমেদ বলেন, ‘থিয়েটার দলগত ক্রিয়া এবং তা প্রাচীনতম 888sport live chatগুলির একটি। তিন হাজার বছর আগে গ্রিসে বা ভারতে নাট্যনির্মাণ সহজ ছিল না, আজো তা কঠিন। আলোকচিত্রের আগমনে অনেকেই চিত্র888sport live chatের মৃত্যু আশঙ্কা করেছিলেন – তা ঘটেনি, বরং চিত্র888sport live chat নতুন নতুন আঙ্গিকে এগিয়ে চলেছে আজো। একইভাবে live chat 888sport, টেলিভিশন বা ইন্টারনেটনির্ভর মাধ্যমগুলি থিয়েটারের প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠতে পারেনি। থিয়েটার তার নিজস্ব শক্তিতে নতুন নতুন উপস্থাপনায় আরো অগ্রগামী হয়েছে। তীর্থযাত্রী – থিয়েটারের সেই শক্তির ওপর নির্ভর করেই পরিকল্পিত। আঙ্গিকে বর্ণনাত্মক কিন্তু অভিনয় ও দৃশ্য888sport live chatে আধুনিক মিনিমালিস্টিক ও সহজিয়া ধারার অনুসারী, সৃজনশীল রূপক উপস্থাপনা এখানে গুরুত্ব¡ পেয়েছে। নাটকটির সময়কাল আপাত প্রাচীন হলেও তা সহজেই কালোত্তীর্ণ এবং আধুনিক সংঘাতময় পৃথিবীরই প্রতীক। এ-নাটকের চরিত্রগুলিও জীবনাচারে প্রাগৈতিহাসিক সময় ও বর্তমানের একটি সমন্বয়। এই প্রযোজনায় 888sport promo code এবং পুরুষ উভয়ই মানুষরূপে উপস্থাপিত, আমাদের তার্কিকরা কখনো 888sport promo code, কখনো পুরুষ। সৈনিক বা পেয়াদার ক্ষেত্রেও তাই। মানুষ সৃষ্টির মধ্যমণি, তার চিন্তাশক্তির কারণে সে প্রশ্ন করতে পারে – প্রশ্নই তো জ্ঞানের শুরু – হাঁটা যেমন যাত্রার। প্রশ্নই তো তৈরি করে সংশয়, প্রশ্নই তো খুঁজে দেয় উত্তর।’

তীর্থযাত্রী নাটকে অভিনয় করেছেন – ইকবাল বাবু, ইবতেসাম মাহমুদ শ্যামা, মো. কল্লোল চৌধুরী, সাইফ আহমেদ, সংগীতা চৌধুরী, সৈয়দ জিয়া উদ্দিন, আজগর রাব্বী, পিন্টু চন্দ্র দেব, নাদিয়া ইকবাল, রাজীব আহমেদ, আহমেদ জাহিদ, ওবিদ রেহান, নিয়াজ মোহাম্মাদ তারিক, খোন্দকার সাজিয়া আফরিন, রামকৃষ্ণ মিত্র হিমেল, নাজমুল আহসান তরুণ, ওয়াহিদ মুরাদ, বর্ষা আহমেদ, রিপা রঞ্জনা, এসআই রাজ, তন্ময় আশরাফ, প্রথন মোস্তফা, সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ও ফারজানা সুলতানা আমরিন।

তার্কিক চরিত্রে মোট নয়জন অভিনয় করেছেন। তিনজন তার্কিকের জোট মঞ্চে তিনবার করে চরিত্র পরিবর্তন

করেছেন। চরিত্র নির্মাণ অসাধারণ। প্রতিটি স্কেচে বা প্রতিটি দৃশ্যে অসংখ্য চরিত্রের সম্মিলন ঘটলেও চরিত্রায়নে বৈচিত্র্য দর্শককে মুগ্ধ না করে পারে না। একেক অভিনেতা ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের

ক্ষেত্রে বাস্তববাদী চরিত্রাভিনয় প্রাধান্য পেলেও গল্পবলার বর্ণনাত্মক রীতি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটি অভিনেতাই বিশ্বাসযোগ্য ও

প্রাণবন্ত অভিনয়ে জীবনের দ্বন্দ্বগুলিকে স্পষ্ট করে তুলেছেন।

নাটকে  888sport promo code-পুরুষ অভেদ ও শৈল্পিক নানা মেটাফোর বিদ্যমান। চরিত্রের সংলাপগুলির মডুলেশন ও প্রক্ষেপণ অত্যন্ত স্পষ্ট।

নাটকে নানা গান ব্যবহৃত হয়েছে – ‘মাটির পুতুল, মাটির ঘর, মাটিই ঠিকানা’, ‘সোনার পিঞ্ছিরাটা ভাঙবি বলেছিস/বাতাসের পিঞ্ছিরাটা ভাঙবি কেমনে’, ‘জয়-পরাজয় বলছো যারে/ জানো কি তার মর্ম’, ‘তোরা চোখটি খোলা রাখিস/কাজের আগে কাজের পরে কাজের ভেতর দেখ/ তিন তারের এই জলতরঙ্গ কেমনে বাজে দেখ’, ‘হে দয়াল প্রভু/ আমারে পাঠিয়েছো যার সন্তান করে’, ‘প্রভু যদি বন্ধু হও কী কারণে তবে প্রভু বলে ডাকি?/ বন্ধু যদি প্রভু হও, কি সাহসে তবে বন্ধু বলে ডাকি’, ‘অন্ধকারে হাঁটতে মানা আলোর জোগাড় রাখিস/ দিন দুপুরে হাঁটতে গেলেও চোখটি খোলা রাখিস’, ‘অজ্ঞানীরা গর্ব করে সজ্ঞানে/ জ্ঞানীরা গর্ব করে অজ্ঞানে’, ‘সমুখে শান্তি পারাবার, ভাসাও তরণী হে কর্ণধার।’ গানের কথা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন ফকির, হুমায়ুন কবির, তৌকীর আহমেদ। গানের সুর – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন ফকির, বিপাশা হায়াত, পিন্টু ঘোষ। আবহ ও গানে কণ্ঠ দিয়েছেন – নিয়াজ মোহাম্মাদ তারিক, সংগীতা চৌধুরী, প্রথম মোস্তফা, আফরোজা চৈতি, রামকৃষ্ণ হিমেল, বশির আহমেদ, শিমুল চন্দ্র মিস্ত্রি। ড্রামাটার্গ ও আলো পরিকল্পনা – পংকজ নিনাদ, মঞ্চ পরিকল্পনা – তৌকীর আহমেদ, পোশাক পরিকল্পনা – খোন্দকার সাজিয়া আফরিন, প্রপস পরিকল্পনা ও সেট নির্মাণ – পিন্টু চন্দ্র দেব, কোরিওগ্রাফি – সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী, পোস্টার ও স্যুভেনির ডিজাইন – পংকজ নিনাদ এবং পরিকল্পনা ও নির্দেশনা – তৌকীর আহমেদ।

নাটকটি মানুষকে জীবন-জগৎ নিয়ে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করবে। নাট্যকার হুমায়ুন কবির দীর্ঘদিন ধরে দর্শনচর্চা করেন। ইয়স্তেন গার্ডারের সোফিৎ জগৎ গ্রন্থে যেভাবে গল্পে গল্পে দার্শনিক চিন্তাগুলি তুলে ধরেছিলেন – এ নাটকেও তেমনি বিভিন্ন জনপদের নানা ঘটনার দৃশ্যরূপের মধ্য দিয়ে দার্শনিক চিন্তাগুলির নাট্যিক উপস্থাপন করেছেন। চিত্র888sport live chatী যেমন তুলির পরতে দৃশ্য আঁকেন, তেমনি নির্দেশক প্রসেনিয়াম মঞ্চে রং, পোশাক, চরিত্র, গল্প, অভিনয়, মিউজিক ও আলোর নিপুণতায় চলমান দৃশ্য-ইমেজের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। সবকিছুর মধ্যেই একটি ঐক্যকৃত গৈরিক রঙের ব্যবহার করেছেন। নাটকে আদি-মধ্য-অন্তের একক কোনো বৃত্ত নেই। ছোট ছোট ঘটনার সমষ্টি। ছোট ছোট ঘটনার নানা মুহূর্ত নির্মাণ করেছেন নির্দেশক।

নাটকটিকে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়কে ধরা হয়নি। প্লটে প্রাচীন পৃথিবীর জনপদগুলির রূপ বোঝালেও সমকালীন বৈশ্বিক জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রশ্নগুলি নাটকে গতিমান। পোশাক পরিকল্পনাতে প্রাচীন ক্লাসিক্যাল আবহ তুলে ধরলেও আজকের জীবনের আচরণগুলিই যেন ফুটে উঠেছে। সংগীতের ক্ষেত্রেও ধ্রুপদী রূপ থেকে বৈষ্ণবপদ-লালন কিংবা রবীন্দ্রনাথসংগীত এসেছে। মঞ্চে কয়েকটি পাতাটন ছাড়া একক কোনো সেট নেই। নির্দেশক বিভিন্ন দৃশ্যের ইমেজ তৈরিতে কোরিওগ্রাফি, প্রপস-ক্রাফট, আলোর আশ্রয় নিয়েছেন। নাটকের দৃশ্যগুলিকে বাস্তববাদী দৃশ্য না বলে ইঙ্গিতবাদী কিংবা প্রতীকবাদী দৃশ্য বলাই বেশি যৌক্তিক। সূর্য-চন্দ্রের গতি বোঝাতে যে রূপকল্প ব্যবহার করেছেন তা নাট্যনান্দনিকতায় উচ্চাঙ্গের রূপ প্রতিভাত করে। থিয়েটারের যে ক্রিয়া ও উপকরণবাদী ভাবনা তা এ-নাটককে অলংকৃত করে তুলেছে। প্রসেনিয়ামের খোলা মঞ্চ ব্যবহার হলেও পৃথিবী, পাখি, চাঁদ, কারাগার, পাটাতন, ফাঁসিতে ঝোলানো লাশ প্রভৃতি নানা নাট্য-উপকরণ সুখকর নাট্যদৃশ্য তুলে ধরেছে। তবে দৃশ্যগুলির অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি বা দীর্ঘসূত্রিতার মতো লয়গুলি ভাবনার গতিতে কিছুটা শ্লথ করে। পরিমিতি ও জীবন-জগতের জ্ঞানকাণ্ডীয় ভাবনার সঙ্গে বিনোদনের এক যুগপৎ শৈল্পিক ঐক্যবদ্ধতা নাটকটিকে অনন্য করে তুলেছে। নাটকটির নিয়মিত মঞ্চায়ন 888sport appsের নাট্যজগতে বুদ্ধিভিত্তিক-চিন্তাশীল নাট্যচর্চার গতিকে উদ্বুদ্ধ করবে।