আন্দালিব রাশদী
আমার মেয়ে নাতাশা ঠিক এই কথাটাই বলেছে।
কাঁদতে-কাঁদতে বলেছে, বাবা তোমার চরিত্র খারাপ।
স্বামীর চরিত্র নিয়ে স্ত্রী হাজার কথা বলতেই পারে; স্ত্রীরা বলেও থাকে। যা বলে তার পুরোটা না হোক আংশিক তো সত্য।
কিন্তু তাই বলে মেয়ে বাবার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবে?
নাতাশা যখন এই কথাটা বলে, তখন আমার সামনে নীতু, বিপাশা, সিনথিয়া, তন্ময় এবং মিতু। যেভাবে উচ্চৈঃস্বরে বলেছে নিহার বানুও জিহবায় কামড় দিয়েছে।
নীতু আমার স্ত্রী। নীতুকে আমি আপনি সম্বোধন করতাম। কখনো-কখনো ম্যাডামও বলতাম। সৈয়দ বোরহান উদ্দিন সাহেবের এটাই ছিল নির্দেশ। তার নির্দেশেই নীতু আর পাঁচজনের মতো আমাকেও তুমি বলত। কর্মচারীদের আপনি বলে বেশি সম্মান দেখিয়ে মাথায় তুলতে নেই। ছোটলোকেরা সম্মানের মর্যাদা বোঝে না। সম্মান করাকে দুর্বলতা ভাবে। তুই-তোকারি করতে পারলে সব ঠিক থাকে।
বিপাশা আমার মেয়ে। ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। খুব কম কথা বলে। কোনো কিছু ভালো লাগলে সেদিকে যেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, কোনো কারণে রেগে গেলেও তার একই অভিব্যক্তি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। নাতাশা যখন আমাকে এরকম একটা কথা বলল, একইভাবে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বাকি সময়টা আমার দিকে চেয়ে রইল। এই দৃষ্টির মানে আমি বুঝে উঠতে পারি না। নাতাশা যা বলেছে ঠিকই বলেছে নাকি বাবাকে এভাবে বলা নাতাশার ঠিক হয়নি। বিপাশা ব্রিটিশ কাউন্সিল রিডিং কনটেস্টে ক্লাস ইলেভেন-টোয়েলভ গ্রম্নপে ফার্স্ট হয়ে একটি ল্যাপটপ 888sport app download bd পেয়েছে। সে পছন্দ করেছিল ন্যাথানিয়েল হথর্নের লেখা দ্য স্কারলেট লেটার। সেখানে মন্দ চরিত্রের একজন 888sport promo codeর ওপর শাসিত্ম আরোপ করা হয়েছে। তার গলায় ইংরেজি ‘A’ অক্ষরটি ঝুলিয়ে দেওয়া
হয়েছে। এখানে A-তে apple নয়, A-তে adulteress, তার মানে ব্যভিচারিণী। বিপাশাও কি আমার জন্য এরকম একটা কিছু ভাবছে?
সিনথিয়া আমার মেয়ে। বিপাশা আর সিনথিয়ার বয়সের ব্যবধান বেশি নয়, এক বছর তিন মাস। সিনথিয়া যখন পেটে, নীতুর শারীরিক সমস্যা হচ্ছিল। নীতুর ডাক্তার প্রফেসার সুমাইয়া নবী নীতুর সামনেই আমাকে খুব অপমান করলেন। বললেন, হাতের কাছে বউ পেলেই স্পার্ম মাথায় উঠে যায় নাকি?
স্পার্ম মাথায় ওঠার কোনো সুযোগই নেই। তবু এটা গালাগালের মতোই। আমি মানেটা বুঝেছি।
তিনি বললেন, আপনারা পুরুষ মানুষেরা একটা বাচ্চা হওয়ার পরই কেন ভেসেকটমি করিয়ে নেন না বুঝি না। তাহলে মেয়েরা অন্তত কিছু শারীরিক ও মানসিক কষ্ট থেকে রেহাই পায়।
আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি। তিনি দাঁত কটমট করে এমনভাবে আমার ওপর দৃষ্টি ফেললেন, যেন হাতের কাছে একটা ভালো ছুরি পেলে ঘ্যাচাং করে আমার প্রজনন দ-টা কেটে ফেলবেন।
তিনি বললেন, ছ-মাস পেরিয়ে গেছে, নইলে অ্যাবর্ট করিয়ে নিতে বলতাম। কতগুলো ক্লিনিক অবশ্য করে কিন্তু আমি এটা প্রেসক্রাইব করি না। অবশ্য এটা আপনাদের ইচ্ছা।
আমি নীতুর দিকে তাকাই, নীতু আমার দিকে। নীতুর জরায়ুতে একটি বাচ্চা আছে জানি; কিন্তু বাচ্চাটির জন্য আমার ভালোবাসা তখনো তৈরি হয়নি, যেমনটা হয়েছিল নাতাশার বেলায়। নীতুকে নিয়ে সুমাইয়া নবীর চেম্বার থেকে যখন বের হচ্ছি, তিনি আবার ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আগের বাচ্চাটা ছেলে না মেয়ে?
নীতু বলল, মেয়ে।
আমি বললাম, আমাদের দুটি মেয়ে।
তিনি সম্ভবত আমাকে সহ্য করতে পারছেন না। বললেন, সব ঝামেলা তো আপনার জন্যই। আপনার ওয়াইফের কী দোষ? দেন, প্রেসক্রিপশনটা দেখি।
তিনি নিজের প্রেসক্রিপশনের নিচের দিকে লিখলেন : আলট্রাসনোগ্রাম ফর প্রেগন্যান্সি প্রোফাইল।
ফিসফিস করে বললেন, ডাক্তারকে রিকোয়েস্ট করে বাচ্চার সেক্স কী জেনে নিতে পারেন। ছেলে না মেয়ে জানলে ডিসিশন নিতে আপনাদের সুবিধা হবে।
আলট্রাসনোগ্রামের জন্য যেতেই ডাক্তার ইশরাত নীতুকে জিজ্ঞেস করলেন, প্রস্রাবের চাপ আছে? না থাকলে তিন গস্নাস পানি খেয়ে একঘণ্টা অপেক্ষা করুন। আমাদের দেড়ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো।
তিনি আমাকেও ভিতরে ডেকে নিয়ে গেলেন। বললেন, বাচ্চাটা পেটের ভেতর কেমন আছে আপনারা দুজনই দেখে নিন। নীতুর পেটে স্বচ্ছ জেল লাগিয়ে পেটের ওপর প্রব চালালেন আর মনিটরের দিকে তাকিয়ে বললেন, এই দেখুন মাথা, এই যে পা-হাত। মনিটরে মাপ দেখলেন। বললেন, ফ্লুইড ঠিক আছে; সব ঠিক আছে।
নীতু জিজ্ঞেস করল, ম্যাডাম, বাচ্চাটা ছেলে না মেয়ে?
ডাক্তার বললেন, বাচ্চা কমন জেন্ডার। ছেলেও হতে পারে, মেয়েও হতে পারে।
নীতু বলল, তবু ম্যাডাম।
ডাক্তার মেশিনের পয়েন্টার মনিটরে দু-পায়ের সন্ধিস্থলে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, এবার আপনারাই বলুন মেয়ে না ছেলে।
আমরা দুজন দুজনের দিকে তাকাই। মনিটর দেখে বোঝার সাধ্য আমাদের নেই।
তিনি বললেন, খুব সহজ। ছেলে হলে ঠিক এই জায়গাটাতে কালো একটা ছোট বলের মত কিছু দেখতে পেতেন। ওটাই স্ক্রোটাম – অ-কোষ।
আমি আবার নীতুর দিকে তাকাই। তিনি বললেন, কি দেখতে পেয়েছেন?
আমি বললাম, কিছু নেই।
তিনি মিষ্টি হেসে বললেন, তাই তো হওয়ার কথা। মেয়েদের তো অ-কোষ থাকে না। নাকি থাকে?
আমি বললাম, আমি তো মেয়েই চেয়েছি।
বেশ, তাহলে মিষ্টি নিয়ে বাড়ি চলে যান। কিন্তু নিজেরা মিষ্টি কম খাবেন।
সিনথিয়া তার মাকে আর ভোগায়নি।
সে-সময় অ্যাবর্ট করালে আমি এই অসাধারণ মেয়েটিকে কোথায় পেতাম!
সিনথিয়া ক্লাস টেনে। নতুন টেন। পুরনো টেন একমাসের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষায় বসছে। সিনথিয়া বিপাশার মতো ভালো ছাত্রী নয়, মাঝারি মানের। কিন্তু সে-ই স্কুল প্যারেডের কমান্ডার। বিজয় দিবসে সিনথিয়াই তার স্কুলের ট্রুপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্যালুট করেছে। সিনথিয়া 888sport app download apk লিখে, গান গায়, নাটক করে। স্কুলের সবাই তাকে চেনে। একই স্কুলে বিপাশা ও নাতাশা পড়লেও টিচাররা আমাকে চেনে সিনথিয়ার বাবা হিসেবে।
নাতাশার কথা শুনে সিনথিয়া কারো দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর এক পা-দুপা করে পেছনদিকে সরতে-সরতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। আমি দরজা খোলার শব্দ পেয়েছি। সিনথিয়া এই রাতের বেলা কোথায় যাবে? আমি জানি ছাদের ওপর। যখন মনে হবে পরিস্থিতি থিতিয়ে এসেছে আবার ফিরে আসবে। এমন ভাব করবে, যেন কিছুই হয়নি।
কিন্তু সিনথিয়া কী ভাবল? বাবার চরিত্র খারাপ!
তন্ময় আমার ছেলে। সিনথিয়ার চেয়ে প্রায় তিন বছরের ছোট। তন্ময় হাসে, শুধুই হাসে। বকা দিলেও হাসে। তন্ময় এখন পর্যন্ত বাবার নামটা ঠিকমতো লিখতে পারে না। সর্বশেষ লিখেছিল আরিকুশ হরমান।
তন্ময় অক্ষর ও 888sport free betর পর্যায়ক্রম মনে রাখতে পারে না।
তন্ময় যেভাবে আমার নাম লিখেছে তাতে নীতু খুশি। একটা অক্ষরও বাদ পড়েনি। অক্ষর ও যতিচিহ্নের সামান্য এদিক-ওদিক হয়েছে। আমার নাম আশিকুর রহমান। আমার ছেলে তন্ময়ের আসল নাম মুশফিকুর রহমান। আমার ছেলেটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
নাতাশা যে-কথাটা বলেছে পুরোটাই শুনেছে এবং একইভাবে হেসে উঠেছে। কোলাহল যখন মিটে গেল তন্ময় বলল, বাবা, তোমার চরিত্র খারাপ। তারপর তন্ময় ঘুরে-ঘুরে নাচতে-নাচতে বলতে লাগল, টেবিল তোমার চরিত্র খারাপ, তেলাপোকা তোমার চরিত্র খারাপ, মুরগি তোমার চরিত্র খারাপ, পুলিশ তোমার চরিত্র খারাপ – এরকম কিছুক্ষণ বলার পর বিষয়টা ভুলে যায়। জিজ্ঞেস করে, আমি কী বলেছি?
নীতুর মনে পুত্রবাসনা তীব্রই ছিল। আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনে এবার বাচ্চার অ-কোষ দেখতে চায়নি। তার ভয় ছিল, যদি আগের মতোই হয়! ছেলের জন্মের পর বাড়ি-বাড়ি মিষ্টি পাঠিয়েছে। নীতু এখন তাদের এড়িয়ে চলে, পাছে তাদের কেউ তন্ময়ের কথা জিজ্ঞেস করে।
মিতু আমার শ্যালিকা। যখন নীতুকে বিয়ে করি, মিতুর বয়স সাড়ে চার কি পাঁচ। মিতুর হাজব্যান্ড তৌহিদ টাউন পস্ন্যানার। রিয়াদ আরবান ডেভলপমেন্ট অথরিটির বড় কর্মকর্তা। মিতু সেখানেই থাকে। আজ সকালেই 888sport app এসেছে, রাতটা আমাদের সঙ্গে থেকে
কাল ভোরে মেহেরপুর চলে যাবে। শাশুড়ি অসুস্থ, সে-কারণেই আসা। তৌহিদ নেক্সট উইক আসছে।
মিতু নিঃসন্তান। তৌহিদ হুমকি দিয়েছে, আবার বিয়ে করবে। আমি বলেছি, সমস্যাটা হয়তো তৌহিদের। সে যে ক্যাপেবল তার মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেখাতে বলো।
নাতাশার কথাটা মিতু শোনাতে আমি একটু বিব্রত। নিহারবানু অনেক বছর ধরে এ-বাড়িতে। তন্ময়ের জন্মের তিনমাস আগে এসেছে। বেতন বাড়ানোর তেমন চাপ নেই। তবে পান আর শাদা পাতার সরবরাহ ঠিক রাখতে হয়। নতুবা অসন্তুষ্ট হয়। আমাদের পরিবারের গোপনীয় অনেক বিষয় নিহারবানু জানে। এসব নিয়ে অন্য কারো সঙ্গে গপশপ করে না। দরকার হলে নিহারবানু সাক্ষ্য দেবে তার গৃহকর্ত্রীর স্বামী তার দিকে হাত বাড়ায়নি।
অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর নাতাশা আবার চিৎকার করে বলল, বাবা, তোমার চরিত্র খারাপ। ছিঃ, তুমি অন্য মানুষের প্রেগন্যান্ট ওয়াইফের সঙ্গে সম্পর্ক করেছো। তুমি একটা আস্ত বেহায়া। তাও যদি সেই মহিলাকে তুমি প্রেগন্যান্ট করতে, একটা কথা ছিল।
ততক্ষণে সিনথিয়া ফিরে এসেছে।
নাতাশা আবারো চেঁচিয়ে উঠে আমার নাম ধরে শ্যালিকাকে শুনিয়ে বলে, আশিকুর রহমানের চরিত্র খারাপ। অন্য মানুষের প্রেগন্যান্ট ওয়াইফের সঙ্গে কুকাজ করেছে।
ছেলেমেয়েরা কে কী মনে করল তা নিয়ে আমি আর ভাবছি না। আমি নিজেই এবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকি। নাতাশা মিথ্যে বলেনি।
দুই
এক অর্থে আমার দাদা থেকে শুরু করে এ-পর্যন্ত আমরা প্রায় সবাই নবাব এস্টেটের আশ্রিত ও উচ্ছিষ্টভোগী। আমার দাদা এস্টেটের বড় শরিক নবাব সৈয়দ আমীর উদ্দিনের ঘোড়ার গাড়ির কোচোয়ান ছিলেন। ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন কমে আসায় আমার বাবা পেশা বদলে তার ছেলে নবাব সৈয়দ হাফিজ উদ্দিনের বাজার-সরকার হলেন। আর আমি হলাম তাঁর আয়েশি ছেলে নবাব সৈয়দ বোরহান উদ্দিনের অ্যাটেন্ডেন্ট। যখনই খবর পাঠান চলে আসি, যখনই বেল টেপেন আমিও বলে উঠি, ইয়েস স্যার।
নবাব এস্টেটের বাগানবাড়ির শেষ প্রামেত্ম হলুদরঙা নায়েব অফিস উঠে গেলে ঝাড়পোছ করে এটাকেই বানিয়ে নিয়েছি অ্যাটেন্ডেন্টস কোয়ার্টার। তরুণ সৈয়দ বোরহানের সান্ধ্য মাহফিলে যোগ দেন বিগতযৌবন দু-একজন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, তাদের বিদেশ জীবনের দু-একজন বন্ধু, সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন শৌখিন রাজনীতিবিদ এবং হেলেন, সুইট হেলেন – এই নামের একজন সচিবালয় সুন্দরী। ঘরোয়া কাজগুলোতে ঝামেলা কম – এগুলোর ফলো-আপসহ প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমার। দেশি ও আন্তর্জাতিক বিষয় দেখাশোনা করেন দ্বাদশ সচিবালয় সুন্দরীর একজন হেলেনা খান ওরফে সুইট হেলেন। তার নিত্য অতিথিদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী হেলেনও চলিস্নশোর্ধ্ব, সৈয়দ বোরহান পঁয়ত্রিশ ছাড়িয়েছেন কিনা সন্দেহ। আমার তখন সাতাশ কি আঠাশ।
আমার মতো আরো দু-একজন বিভিন্ন পরগনায় জমিদারপুত্রদের সেবক হিসেবে কাজ করছে। তাদের মূল কাজ মেয়ে সাপস্নাই দেওয়া। কিন্তু সৈয়দ সাহেবের সঙ্গে আমার সাত বছরের কর্মজীবনে তিনি ইশারা-ইঙ্গিতেও এই লোভনীয় বিষয়টির প্রতি কোনো ধরনের আসক্তি প্রকাশ করেননি।
সৈয়দ বোরহান মধ্যদুপুর পর্যন্ত ঘুমান। উঠে দু-একটি ইংরেজি খবরের কাগজ পড়েন, কয়েকটা ফোন করেন, কেনাকাটার কিছু থাকলে নির্দেশ দেন। এক গস্নাস কুসুম গরম ঘন দুধ খেয়ে বাথরুমে যান। নাস্তার টেবিলে যেতে-যেতে বিকেল চারটা। আমি সকালে অঢেল সময় পেয়ে যাওয়ায় আমার পড়াশোনাটা কমবেশি চালিয়ে যেতে পেরেছি। আমার খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ কিছু কিনতে হয়নি। সৈয়দ সাহেব দু-একবার ব্যবহারের পর যা রিজেক্ট করতেন, একটু অল্টার করিয়ে নিলে আমার বেশ চলে যেত। স্টকের পুরনো চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজও দিয়ে দিতেন। আমি একা নই, নবাব এস্টেটে চাকরিরত সুইপারও এই শুভেচ্ছার কিছু না কিছু ভাগ পেয়ে থাকে। জমিজমার কিছু আয়, সুগারমিল ও ইটভাটার লাভ, কিছু ফিক্সড ডিপোজিট – কাজকর্ম না করে তার ভালোই চলে যায়। নবাব সৈয়দ হাফিজ উদ্দিন ছেলেকে বিলেত পাঠিয়েছিলেন – পড়াশোনায় ভালো এই ছেলেটি লিঙ্কন’স ইন থেকে ব্যারিস্টার হয়ে আসবেন। জিন্নাহ সাহেবও লিঙ্কন’স ইন থেকে পড়াশোনা করা। পরে সময়-সুযোগ বুঝে বড় দলগুলোর সঙ্গে দর কষাকষি করে ইলেকশন করবেন, মন্ত্রী হবেন।
কিছুই হয়নি। বারেও নাম লেখাতে পারেননি। বিলেতে আত্মানুসন্ধান করেই নাকি দশ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। মাঝখানে বেশ পয়সাকড়ি খরচ করে একজন স্কটিশ নার্সকে বিয়ে করেছিলেন। মাসতিনেক পর ক্ষতিপূরণ দাবি করে এবং তার বিরুদ্ধে যৌন-শীতলতার অভিযোগ এনে বিচ্ছেদের মামলা করেন। তার সান্ধ্য আসরের নন-প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজার মধ্যস্থতায় র্যাচেল নামের সেই নার্সকে আশি হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ ও তালাক দিয়ে মামলাটি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি করেন। তিনি তার যৌন-শীতলতার বিষয়টি মেনে নিয়ে র্যাচেলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং বলেন, তার সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন সম্ভবত ভিন্ন, যা তিনি র্যাচেলকে বিয়ে করার আগে কখনো ভালোভাবে বুঝতে পারেননি।
সৈয়দ বোরহান সাহেবের বাসার মিনি বার রাত বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে। তিনি আশা করেন, তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী নয়নতারা বেগম তার অবগুণ্ঠন থেকে বেরিয়ে এসে বন্ধুদের সামনে হাজির হবেন। হাসিমুখে গস্নাসে হুইস্কি ঢেলে দেবেন।
নয়নতারা কখনো না বলেননি, কিন্তু তাঁর আড়ষ্টতা এবং সৈয়দ সাহেবের ভাষায় আনস্মার্টনেস কোনোভাবেই নবাববাড়ির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নয়নতারা কাঁদতে-কাঁদতে বলেছেন, তা হলে আমাকে ছেড়ে দিন, আমি ফিরে যাই। সৈয়দ বোরহান বলেন, তা হয় না। আমাদের ফ্যামিলিতে ডিভোর্সের নজির নেই। হিসাবে না মিললে ওয়াইফকে হয় খুন করা হয়, নতুবা ওয়াইফ সুইসাইড করে। সুইসাইডের ঘটনাই বেশি।
নয়নতারা সেদিনই মুখের ওপর বলে দেয়, আপনি যে-কাজের জন্য বিবাহ করেছেন, সে-কাজও তো ঠিকমতো করতে পারেন না।
তিনিও সেদিনই প্রথম গায়ে হাত তোলেন এবং বলেন, আমি কোনো কাজের জন্য বিবাহ করিনি। নবাববাড়িতে সৈয়দ বোরহানের একজন স্ত্রী থাকা দরকার, সেজন্য ঘরে স্ত্রী এনেছি। আর তুমি যে কাজের কথা বলছ তার জন্য যদি আমার আগ্রহ থাকত তাহলে এটাই হতো 888sport appsের শ্রেষ্ঠ বাইজিবাড়ি। আমি প্রথম দিনই স্বীকার করেছি, আমার সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন একটু ডিফারেন্ট, তুমি সম্ভবত আমার কথার মানে বুঝতে পারনি। প্রপার এডুকেশন না থাকলে যা হয়।
তারপর প্রতিদিন রাতেই নয়নতারা কমবেশি মার খেতে থাকেন। কোনো-কোনো দিন বেডরুম থেকে বের করে বলে দেন, গো টু হেল।
কোনোদিন বলেন, টেবিলে একটা সুইসাইড নোট রেখে যাও : আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।
কোনোদিন বলেন, যাও আমাদের বাগানবাড়িতে তোমার
পছন্দমতো একটা গাছে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ো।
আমার দায়িত্ব সৈয়দ সাহেবের মিনি বারের দরজা বন্ধ করা, গস্নাসগুলো ধুয়েমুছে আগামীকালের জন্য সাজিয়ে রাখা।
আমি আমার পড়াশোনার সময় বাড়িয়ে দিলাম। নিজের কাজের সময় নিজেই নির্ধারণ করি, সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত একটা।
সৈয়দ বোরহান সাহেবের স্ত্রীকে তাজিমের সঙ্গে সালাম দিই, ম্যাডাম সম্বোধন করি। তিনি আমার চেয়ে পাঁচ-ছ-বছরের ছোটই হবেন।
এক রাতে আমি বার বন্ধ করে বের হচ্ছি, তিনি বেডরুম থেকে বের হয়েছেন, তার নাকে-মুখে রক্ত। আমি দ্রুত মিনি বার খুলে বরফ নিয়ে আসি, বলি, নাকে চেপে ধরুন ম্যাডাম।
তিনি বলেন, না না, তুমি যাও। তিনি তোমাকেও গুলি করবেন।
এরকম চলতেই থাকে।
একদিন মধ্যরাতে তাকে পাই আমার বাসার কাছাকাছি একটা গাছের নিচে। তিনি ওপরের দিকে তাকিয়ে সুবিধাজনক ডাল খুঁজছেন।
আমাকে দেখে তিনি চিৎকার করে ওঠেন, আমাকে ধরবে না, সাবধান।
আমি বললাম, ম্যাডাম প্রাণের ভয়, চাকরির ভয় দুটোই আমার আছে। আপনাকে ধরার সাহস আমার নেই। কিন্তু আমার চোখের সামনে আপনাকে মরতেও দেব না।
তিনি ধীরে-ধীরে হেঁটে মূল ভবনের দিকে চলে যান। বেডরুমে ঢুকতে না পারলে সমস্যা – পাশাপাশি অন্তত চারটা গেস্টরুম। যে-কোনো একটাতে ঢুকলেই হলো।
নবাব সৈয়দ বোরহান উদ্দিনের উপেক্ষা ও অত্যাচার এবং নয়নতারাকে রক্ষা করার একান্ত ইচ্ছা আমার রাতের ঘুম হরণ করতে শুরু করল। আমি মধ্যরাতের পর নবাববাড়ির গাছের নিচে হেঁটে বেড়াই। নয়নতারা ম্যাডামকে আমি এভাবে মরতে দেব না।
নয়নতারা একদিন বললেন, তার পেটে বাচ্চা।
আমি বললাম, খুব ভালো হয়েছে। আপনি আর মরতে পারবেন না। পেটের বাচ্চা আপনার হলেও তাকে মারার অধিকার আপনার নেই।
তিনি বললেন, এত বড়-বড় কথা তুমি কোথায় শিখলে?
বললাম, পড়াশোনা করছি। ভালো একটা চাকরি পেতে হবে। আপনার পেটে যে বাচ্চা সৈয়দ সাহেব কি তা জানেন?
আমি বলেছি, তিনি মদের ঘোরে কতটা বুঝেছেন তিনিই জানেন।
মাফ করবেন ম্যাডাম নয়নতারা, তিনি নাকি 888sport promo codeসঙ্গ পছন্দ করেন না। এটা শোনা কথা, তিনি নাকি এসব ভালো করতে পারেন না।
এটাও সবাই জানে নাকি, আমি তো কাউকে বলিনি। বাচ্চা হওয়াবার জন্য ওসব ভালো করে করার দরকার হয় না, সময়মতো কোনোরকম একটু করতে পারলেই হয়।
আমার সঙ্গে রাত-বিরেতে তার দেখা হয়, কখনো নাকে রক্ত, ঘুষিতে কখনো চোখের তলাটা ফুলে আছে। আমি উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করি, বাচ্চাটার কোনো ক্ষতি হয়নি তো?
তিনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন।
আমি বলি, ম্যাডাম অনুগ্রহ করে আপনার পেটটা সৈয়দ সাহেবের কাছ থেকে আড়াল করে রাখবেন, যেন পেটে আঘাত করতে না পারেন। বাচ্চাটা যেন ব্যথা না পায়।
অন্য একদিন রাত দেড় কি দুটোর দিকে নয়নতারা ম্যাডামকে গাছের নিচে পেয়ে যাই। জিজ্ঞেস করি, সৈয়দ সাহেব আজ কোথায় আঘাত করেছেন? বাচ্চাটার লাগেনি তো?
তিনি বললেন, আজ তিনি পুরো মাতাল অবস্থায় বেডরুমে ঢুকে তখনই ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি বাইরে থেকে লক করে চলে এসেছি।
তিনি যদি উঠে পড়েন?
কাল দশটা পর্যন্ত ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই।
যুগপৎ আতঙ্ক ও আকাঙক্ষায় দোল খেতে-খেতে আমি বলি, ম্যাডাম যদি অনুমতি দেন বাচ্চাটাকে একটু আদর করি।
তিনি বললেন, করো।
আমি হাঁটু গেড়ে বসে আলতো করে তার পেট স্পর্শ করি। তিনি আমার হাতের ওপর হাত রেখে আমার হাতকে তার শাড়ি-888sport app পেটের ওপর সঞ্চালন করতে-করতে বললেন, বাবুটা এখানে, বাবুটা এই তো এখানে।
আমি তার ঈষৎ স্ফীত পেটের ওপর ঠোঁট রেখে বাবুটাকে, সম্ভবত বাবুটার মাকেও চুমো দিতে চেষ্টা করি।
সৈয়দ সাহেবের আচরণে সামান্য পরিবর্তনও ঘটেনি।
একরাতে তিনি বললেন, নবাবরা কখনো ওয়াইফকে ডিভোর্স করে না। হয় খুন করে নতুবা সুইসাইড করতে বাধ্য করে। শেষেরটাই বেশি হয়। কিন্তু তুমি তো আমাকে শেষেরটা করতে দিচ্ছো না। বাকি থাকল খুন হওয়া। যে-কোনোদিন ঘটনাটা ঘটে যেতে পারে।
এক রাতে আমি বললাম, ম্যাডাম আমি ব্যাংকে চাকরি পেয়ে গেছি। নবাবদের কাছে আমার পরিবারের অনেক ঋণ। কিন্তু আমি যে আর নবাবদের উচ্ছিষ্ট খেতে চাই না।
তিনি বললেন, এখনি এমন প্রতিজ্ঞা করো না।
তিনি আরো বললেন, বাচ্চাটা তোমার আদর পেয়ে খুশি হয়েছে। এই প্রথম একটুখানি আদর পেয়েছে।
আমি আবার হাঁটু গেড়ে কাপড়ের ওপর দিয়ে নয়নতারার পেট স্পর্শ করি। আমি তাঁর অনুমতি নিয়েই আমার খোলা হাতে তার ত্বক স্পর্শ করি, তার নাভি এবং চারপাশ।
তিনি বললেন, বাবুটা নড়ছে, তোমার হাতের ছোঁয়া বেশ বুঝতে পেরেছে।
তিনি বললেন, তোমাকে নবাবের উচ্ছিষ্ট আরো কিছু যে খেতে হবে।
আমি অতি সন্তর্পণে নয়নতারাকে আমার ছোট্ট ঘরে নিয়ে আসি। আমার আতঙ্ক হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। ঘরের ছিটকিনি লাগিয়ে আমার অগোছালো বিছানায় নয়নতারাকে শুইয়ে দিয়ে মৃদু আলোয় তাকে নির্বসন করতে-করতে বলি, আমি এই বাবুটার বাবা হতে চাইলে আপনি আপত্তি করবেন?
তার মুখে হাসি, চোখে অশ্রম্নবিন্দু। তিনি এক-এক করে আমার শার্টের বোতাম খুললেন। আমিও নির্বসন হয়ে গেলাম।
হিমযুগের দুজন নির্বসন মানব-মানবী উষ্ণতার খোঁজে পরস্পরের ভেতর সেধিয়ে দুজন মিলে এক হয়ে গেল।
আমি হাঁপাতে-হাঁপাতে বললাম, নয়নতারা।
তিনি বললেন, চলো এখনই পালাই।
আমি বলি, চিন্তা করবেন না। নবাবের শেষ উচ্ছিষ্ট আমি গ্রহণ করেছি। নবাবরা কখনো প্রজার উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করে না।
আমি আরো একবার হাঁপাতে-হাঁপাতে বললাম, নয়নতারা।
তিনি বললেন, তুমি আমাকে নীতু বলো। নীতু আমার ডাকনাম।
আমিও বললাম, তুমি নীতু?
হ্যাঁ।
আমি জিজ্ঞেস করি, আমি বাবুটাকে ব্যথা দিইনি তো?
নীতু বলল, না তো, একটুও না। তুমি না বাবুটার বাবা!
সেই বাবুটার জন্ম আমাদের বিয়ের ঠিক সাড়ে তিনমাস পর। বাবুটা দারুণ কিউট। মাথাভর্তি চুল, গাঢ় দুধের মতো গায়ের রং। এটিই আমাদের প্রথম সন্তান।
আমরা এই বাবুটার নাম রেখেছি নাতাশা। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.