আমার ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট – নামটা নাই বা বললাম, খবিশ লোকেরা তো জেনেরিক, আলাদা নামের মহিমা তাদের জন্য না – আমাকে যে সহ্য করে না, তার প্রমাণ দিলো 888sport app থেকে হঠাৎ আমাকে বরগুনা বদলি করে, তার আস্তিনের নিচে লুকিয়ে রাখা বিশেষ ক্ষমতা আইনে, যদিও তার ক্ষমতাটা যে বউ-বাহিত এবং চুরি-চামারিঘটিত তা আমি জানি। তবে থাক সে-কথা।
বরগুনা আসায় আমার দুইটা ক্ষতি হলো। প্রথমটা দীনার সঙ্গে টেম্পোরারি ছাড়াছাড়ি। দ্বিতীয়টাও সেই ছাড়াছাড়ি, ছেলে রাহাতের সঙ্গে। আমার প্রথম ক্ষতিটা অবশ্য দীনার লাভ, আমি ধারেকাছে না থাকলে সে শান্তি পায়। বদ ভিপিটার মতোই, দশমাত্রায় না হলেও, তিন-সাড়ে তিন মাত্রায় আমাকে দীনার অসহ্য, তাকে প্রাচুর্যে-বিলাসে জীবনের একটা দিনও রাখতে পারিনি বলে। রাহাত এখনো ছোট, ক্লাস সিক্সে পড়ে। সেও হয়তো একদিন দীনার মতোই ভাবতে শুরু করবে, আর আমাকেও তার এক মাত্রা অসহ্য লাগা শুরু হবে। তাতে আমার ক্ষতির ঘরটা লালে লাল হবে।
আপাতত থাক সে-চিন্তা।
বরগুনার এক্স-ম্যানেজার শরিফুদ্দিনকে ভিপিটা সরিয়ে নিচ্ছে 888sport appয়। ওই লোকের ব্যক্তিত্ব জেলির মতো। এরকম লোককে গাড়লরা পছন্দই করে। সে আমাকে বলল, ভাই, আপনার টেনশন কমিয়ে দিলাম। আমার ফ্ল্যাটটায় উঠে পড়েন। বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা হয়েছে।
শরিফুদ্দিনের সঙ্গে দু-বছর মিশে বাড়িওয়ালা তার ব্যক্তিত্বটাই যেন ধারণ করে ফেলেছেন। আমাকে জেলির মতো লুলা-পুলা ভাব দেখিয়ে বললেন, আপনাকে ভাড়াটে হিসেবে পেয়ে ধন্য মনে হচ্ছে।
একদিন বললেন, সন্ধ্যার পর চা খেতে আসেন। কিছু কথা আছে।
চারতলা দালানের দোতলায় বাড়িওয়ালা থাকেন। আমি থাকি তার মাথার ওপর, তিনতলায়।
আমি ভেবেছিলাম আমার বায়োডাটা, এটা-ওটা, স্ত্রী-সন্তান আসছে কবে – এসব নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু আমাকে অবাক করে তার প্রথম প্রশ্নটি করলেন, এই কদিনে কোনো কিছু অস্বাভাবিক কি আপনার চোখে পড়েছে?
আমি এই অবাক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলাম না। ব্যাখ্যার দরকার। অস্বাভাবিক বলতে আপনি ঠিক কী বোঝাচ্ছেন?
এই মানে মাঝরাত গাঢ় হলে কোনো শব্দ। কারো কান্না। কোনো নিশিপতঙ্গের গাছের পাতা খাওয়ার খসখস।
না তো। এরকম কিছুই আমার চোখে পড়েনি। আর এসব তো কানে শোনার কথা, চোখে পড়ার না।
বাড়িওয়ালা হাসলেন। মানুষের একটা তৃতীয় নয়ন আছে। তাতে শব্দও দৃশ্যের অবয়ব পায়, তিনি বললেন।
আমিও হাসলাম। তাহলে তৃতীয় একটা কর্ণও নিশ্চয় আছে, যাতে দৃশ্য শ্রবণগ্রাহ্য হয়।
বাড়িওয়ালার কলেজে পড়ুয়া মেয়ে আমার সামনে চা-বিস্কুট রেখে ফিরে গিয়েছিল। হয়তো নিজের ঘরে। কিন্তু না, সে আড়ালে ছিল। বাড়িওয়ালার প্রশ্ন তাকে দৃশ্যমান করেছে। তার পেছনে দাঁড়িয়ে হাতের দুই আঙুল ঘুরিয়ে একটা ইঙ্গিত সে দিলো – ইঙ্গিতটার মানে, বাবার মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে। এজন্য কি না, তার মুখে একটা বিষণ্ন হাসি।
বাড়িওয়ালার দিকে ঝুঁকে বললাম : একটু কি বুঝিয়ে বলবেন?
এসব বোঝার বিষয় নয়, ম্যানেজার সাহেব। এগুলো অনুভবের। এমপ্যাথির। যেমন ধরেন আপনি অধিক রাতে ঘন বন দিয়ে হাঁটছেন। আর দশটা মানুষ যেখানে হোঁচট খাবে, ঝোপঝাড় আর প্রাণী-পতঙ্গের আঁচড়ে-কামড়ে রক্ত ঝরাতে ঝরাতে ইমার্জেন্সির রোগী বনে যাবে, আপনি হয়তো দেখলেন, আপনার তৃতীয় নয়ন থেকে আলো পড়ছে নিচে, তাতে একটা আলপথ যেন বিছিয়ে আছে, ভিআইপিদের গালিচার মতো।
আপনার সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো কারণ দেখি না।
একদিন সকলের চর্মচক্ষে – নাকি চর্মকানে – এসব ধরা পড়বে। বলে দিলাম।
বাড়িওয়ালার মেয়ে এগিয়ে এলো। যথেষ্ট হয়েছে – এরকম একটা ভাব তার মুখে। বাবা, সে বলল, এবার বন থেকে বেরোয় তো।
আমার এই মেয়েটা, বাড়িওয়ালা বললেন – ও, একটাই মেয়ে আমার, এর নাম 888sport live chatা, নামটা ওর মা রেখেছিল, নাম রেখেই দেহরক্ষা করেছিল – আমার মেয়েটাও বলবে, বরগুনার রাত এখন কত ভয়ানক। আর বলবেন ফারুক সাহেব।
বাবা! মেয়ের গলায় এখন বিরক্তির সঙ্গে বিব্রতভাব।
888sport live chatা, একটা কাজ করো তো মা, ফারুক সাহেবের দিকের পর্দাটা সরিয়ে দাও।
888sport live chatা আপত্তি না করে দখিনের জানালায় গিয়ে পর্দা সরিয়ে দিলো।
সেদিকে না তাকিয়ে তিনি 888sport live chatাকে জিজ্ঞেস করলেন, জানালাতে সেই কড়া হলুদ আলো, তাই না?
হ্যাঁ বাবা।
এই আলোটা সারারাত থাকবে, তিনি আমাকে বললেন। আলোটা একটা জানালাঘেঁষা টেবিল ল্যাম্পের। তবে আলোটা নিশ্চয় ইলেকট্র্রিক সাপ্লাইয়ের নয়। বরগুনা তো আর বার্সেলোনা নয় যে এর বিদ্যুৎ হবে তাগড়া ষাঁড়ের মতো।
ফারুক সাহেব নামের লোকটার জানালার পর্দাটা সম্ভবত সোনালি রঙের। ঘরের একটা দেয়াল জুড়ে 888sport free bet login। আলোটা সত্যিই তীব্র হলুদ।
চোখটা সরু করে তাকালে একটা হেলান-চেয়ারে বসা লোকটাকে দেখতে পাবেন। তিনি মাঝরাত পর্যন্ত চেয়ারে বসে থাকেন, বাড়িওয়ালা বললেন।
আচ্ছা?
জি। তবে বাকিটা ওর কাছ থেকেই শুনবেন।
888sport live chatা এবার জানালা ছেড়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আপনাকে এক কাপ চা দেব?
না, আর চা খাব না। এখন উঠতে হবে।
মেয়েটি হাসল। আপনি শরিফুদ্দীন সাহেবের মতো ভাগ্যবান নন। বাবা তাকে দেখেই বলেছিলেন, এই লোকটাকে এইসব বলা যাবে না।
এইসব?
888sport live chatা এবার একটা হাসি দিলো, যাকে হাসি888sport apkীরা বলবেন ষড়যন্ত্রমূলক। এইসব যে কী, বলতে গেলে জট পাকিয়ে যাবে, সে বলল, আপনিই শিগগির বুঝে নেবেন। সময় লাগবে না।
বাড়িওয়ালা বললেন, ম্যানেজার সাহেব, আমি চাই না আমার কারণে আপনি অস্বস্তিতে পড়েন। যদি মনে করেন, আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা হবে স্ট্রিক্টলি ল্যান্ডলর্ড-রেন্টারের, আমার সায় থাকবে। আর যদি মনে করেন, মাঝে মধ্যে চা খেয়ে যাবেন, আমার বেখাপ্পা কথাবার্তা শুনবেন, অফেন্স নেবেন না। তাহলে তাও সই।
কী যে বলেন, আমার অথৈজলের উত্তর। ইটস এ প্লেজার টকিং টু ইউ।
888sport live chatা আমার দুর্দশা বুঝল। সে হাসল। এই হাসিটা অষড়যন্ত্রমূলক। সে বলল, কোনো সন্ধ্যায় চা খাওয়ার ইচ্ছা হলে চলে আসবেন।
অবশ্যই, আমি বললাম, এবং দরজা পেরিয়ে সিঁড়িতে পা রাখলাম। কতটা স্বস্তির এই চায়ের নিমন্ত্রণ!
দুই
888sport live chatার ডাকেই কি না কদিন পর বাড়িওয়ালাকে নিচে পেয়ে বললাম, আজ সন্ধ্যায় ফ্রি থাকলে আসব।
তিনি একটু হেসে উপরে উঠে গেলেন। তার জেলি চরিত্র কিঞ্চিৎ শক্ত হচ্ছে। যেন তিনি বুঝেছেন, এই লোক বড়শিতে যখন টোকর দিচ্ছে, একসময় একে গাঁথা যাবে। বাড়িওয়ালাকে নেহাৎ না ভুল পড়লে, আমাকে কি তিনি মাছ ভেবেছেন? তাহলে তার টোপটা কী?
বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে।
বাড়িওয়ালা আমাকে বললেন, ফারুক সাহেব এই পাড়ার আদি বাসিন্দা। আছেন তিন পুরুষ ধরে। আমি এই বাড়িটা কিনেছি বাইশ বছর আগে। আমার স্ত্রীর তাগিদে।
তো ফারুক সাহেবের সঙ্গে আপনার দেখা করাটা জরুরি। ওর থেকে জেনে নেবেন, হলুদ আলোটা কবে নিভবে। আলোটা রাতকে নির্ঘুম করে। রাতের পর রাতকে।
দেখা তাহলে করতেই হলো। বাড়িওয়ালা অবশ্য সঙ্গে গেলেন না। আমাদের মধ্যে ব্যাড কেমিস্ট্রি আছে, তিনি বললেন, আমরা যেহেতু সমমেরুর। সেজন্য বিকর্ষণ। তার হর্ষে আমার বিষাদ, তার বিষাদে আমার হর্ষ। তার হর্ষ অবশ্য অতি ক্ষণস্থায়ী, শর্ট লিভড। বিষাদটা চিরস্থায়ী।
তাতে আপনার হর্ষ নিশ্চয় চিরস্থায়ী? আমি রসিকের মতো প্রশ্ন করলাম।
ওখানেই তো ব্যাড কেমিস্ট্রির ক্যারিশমা। না, আমি না হর্ষ-না বিষাদের মাঝখানে নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকি। 888sport live chatাটা না থাকলে সেই ল্যান্ডটা হয়ে যেত কুইকস্যান্ডল্যান্ড। চোরাবালিভূমি।
888sport live chatাই আমাকে নিয়ে গেল। তাকে দেখলে নাকি ফারুক সাহেব একটুখানি জীবনে ফেরেন। তাকে বললাম, বিয়েশাদি করেননি, ছেলেমেয়ের অভাবটা হয়তো এই বয়সে তাকে উদাস করে। 888sport live chatা বলল, তার সামনে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। কঠিন লাগে।
তিনি যে অতিপ্রাকৃতিক সব চিন্তা করেন, ভয় দেখান, সেজন্য?
কিছুটা। কিন্তু কেন জানি তার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে একটা ফ্যাক্টর মনে হয়। অথচ আমি কোনো ফ্যাক্টর হতে চাই না। মূল কারণটা আরো গভীর। সেটা আপনি, বেশিদিন লাগবে না, বুঝবেন।
আচ্ছা?
আপনি এ পর্যন্ত আমাকে কোনো ফ্যাক্টর বানাননি। এজন্য ধন্যবাদ।
আমি বুঝে পেলাম না আমি কি না করায় 888sport live chatা ফ্যাক্টর হয়নি, কী করলে হতো। ফ্যাক্টর হওয়াটাই বা কী।
এটা নিয়েও ভাবতে হবে।
তিন
ফারুক সাহেবের ঘরের আলো তাজা হলুদ – মনে পড়ল বাড়িওয়ালার সেই বার্সেলোনার ষাঁড়ের তুলনা। এল তরো দে বরগুনা, একটু জোরেই যেন বললাম, কারণ আলোটা বরগুনার সাব-পার ইলেক্ট্রিক সাপ্লাইকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে।
আপনি স্প্যানিশ জানেন? ফারুক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা না করে বললেন, আমি জানি, আমি আড়াই বছর স্পেনের টেনেরিফে লা লাগুনা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স পড়েছি। মহাবিশ্বকে চিনেছি। মহাবিশ্বের ফাঁক-ফোকরগুলিকেও। কিন্তু যতই দিন গেল, তত মহাবিশ্ব নিয়ে সন্দেহ-রহস্য জন্মালো। এই মহাবিশ্বে আমাদের এই পৃথিবীটা যে একটা ছিঁড়ে পড়া বোতাম থেকেও তুচ্ছ সেই বিশ্বাস দৃঢ় হলো। দেশে ফিরলাম। তারপর থেকে আমিই ছেঁড়া বোতামের মতো একবার এদিকে যাই, একবার সেদিকে।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন?
আমার ফিল্ড ছিল জেনারেল রিলেটিভিটি। গবেষণা করেছি কসমোলজিতে, এখন বরগুনায় বসে পড়ছি কম্পিউটেশনাল অ্যাস্ট্রোফিজিক্স। কিছু বুঝলেন?
না।
আমি জানতাম, তবে মন খারাপ করবেন না। আমিও ব্যাংকিংয়ের কিছুই বুঝি না।
আমি ব্যাংকিং পড়িনি। পড়েছি ফিজিক্স, ফারুক সাহেবের ভুল ভাঙালাম, চাকরি না পেয়ে ঢুকেছি ব্যাংকে। বলতে পারেন আমি এখন বরগুনায় কম্পিউটেশনাল ব্যাংকিং চর্চা করছি।
ফারুক সাহেব হাসলেন। বললেন, কম্পিউটারটা ওই সময় থাকলে আমি কোথায় চলে যেতাম! অথচ এখন একটা অ্যাপেল ল্যাপটপে আমি কত মডেল তৈরি করছি – জটিল সব অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল ফেনোমেনার। একটা জিনিসে আমি এখন মজে আছি, এবং তা হলো গ্যালাক্টিক ডায়নামিক্স। বিষয়টা অবশ্য ব্যাখ্যা করতে পারব না। আমার ক্ষুদ্র ভাষাজ্ঞানে কুলাবে না। তাছাড়া, বিষয়টা একান্তই অনুভবের, এমপ্যাথির।
যেমন ঘন রাতের নানা অপার্থিব শব্দ আর কান্না? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
তিনি আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বললেন, আমি নিশ্চিত, আমার তৈরি একটি মডেল বলছে, পৃথিবীটা সৃষ্টি হয়েছিল এক গ্যালাক্টিক কলিশনের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে, যেমন একটা বুদ্বুদ উঠে ধোপারা কাপড়ে সাবান লাগিয়ে কাঠের পাটাতনে আছাড় মারলে। বুদ্বুদ কি দীর্ঘস্থাায়ী?
না।
আমরাও না। বুদ্বুদটা ফাটলো বলে। দি বাব্ল ইজ অ্যাবাউট টু বার্স্ট।
চার
888sport live chatার সঙ্গে আমার একটা হৃদ্যতা হয়েছে। সে আমাকে মামা বলে ডাকে – চাচা না, মামা। যে মাকে সে কখনো পায়নি, জীবনের প্রথম সাতদিনের আধা-ফোটা চোখে শুধু দেখেছে, তার সঙ্গে একটা বাঁধনে সে আমাকে বেঁধেছে। তাতে তার চায়ের আমন্ত্রণটা আবদারে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু 888sport live chatা তো 888sport live chatাই। সেই আবদার প্রতিদিন কেন, সপ্তাহে একদিনের বেশি আমার কাছে পৌঁছায় না। তাকে একদিন আমি প্রায় জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম, তোমার বাবার মাথাটা খুব আউলা, তাই না, কিন্তু কেন? কিন্তু চেপে গিয়ে বললাম, ফারুক সাহেব লোকটা উইয়ার্ড। তার ভাবভঙ্গিতে অহমিকা থাকলে বলতাম পা-ভারী। অহংকারী না যেহেতু – ভালোই – সেজন্য বলি ভজঘট। তিনি বলেন, দিন আসছে, পৃথিবীর মানুষ হঠাৎ একদিন পাঁচ বছর থাকার নোটিশ পাবে, ধরো কোনো এক আত্মঘাতী এক্সপেরিমেন্টেশনে দুনিয়ার সব মৌমাছি মরে গেলে। তারপর আকাশ-বাতাস জুড়ে বাজবে হাহাকার। কিন্তু মানুষ নিজের মৃত্যু ডেকে আনলে হাহাকার ছাড়া কি করতে পারে? 888sport live chatা চুপ করে শুনল। সব মানুষেরই একটা গল্প থাকে, সে বলল, যা নানাভাবে সে নিজেকেই বলে। এই গল্প তাকে উদ্ভট, উইয়ার্ড যা-ই করুক, গল্পটা থেকে সে বেরোয় না। আমি বললাম, ফারুক সাহেবের গল্পটা নিশ্চয় অনেক বড় পাতা জুড়ে লেখা। গল্পটা পড়তে আগ্রহ হচ্ছে।
888sport live chatা বলল, আপনার ফোন বাজছে। তা শার্টের পকেটে, হার্টের দিকে ফোন কেন রাখেন? এতে হার্টের ক্ষতি হয়। আচ্ছা ফোন ধরেন। আমি যাই।
দীনার ফোন। আমাকে বলল, বাড়িওয়ালার মেয়েটা নাকি তোমার ন্যাওটা হয়েছে? নাকি ভাইস ভার্সা?
এসব কী বলছ। ছোট মেয়ে, আমাকে মামা ডাকে।
ডাকাডাকিতে সম্পর্ক আটকে থাকে না, দীনা বলল। আজ ডাকবে বাপি, কাল ডাকবে হাবি। হা হা।
ছিঃ দীনা। তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?
দীনা তার হাসিতে ব্রেক কষলো। তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা করলেও এত ছিঃ ফিঃ শুনতে হয় কেন? তোমার কলিগ শরিফুদ্দিন তার কাজের মেয়েটা থেকে, যাকে তুমি ছাঁটাই করেছ, সব শুনেছে, তারপর বলেছে তোমার ভিপিকে।
আবর্জনা ঠিকই আবর্জনা চেনে। দে গ্রাভিটেট টুওয়ার্ডস ইচ আদার।
যাও, ইংরেজি ফুটায়ো না, দীনা বলল। যে-কারণে তোমাকে ফোন করেছি, স্কুলের কয়েক কলিগের সঙ্গে কক্সবাজার যাচ্ছি। রাহাতকেও সঙ্গে নিচ্ছি। এই শনিবার।
অবশ্যই, কেন যাবে না, যাও।
দীনার সঙ্গে কথা শেষ হলো। শেষ হলেও একটা তেতো স্বাদ মুখে ছড়িয়ে গেল। তেতো স্বাদটা অসহ্য করেছে শরিফুদ্দিনের ছোটলোকি। কিন্তু বরগুনায় এসে কেন জানি ভিপিটাকে শুধু না, তার বস এমডিকেও আর পরোয়া করি না। তারা নরকে যেতে পারে। দরকার হলে গাড়ি চালিয়ে তাদের পৌঁছে দেবো।
গাড়ি চালানোর কথাটা এমনি এমনি মনে আসেনি। রাহাতের জন্মের এক বছর আগে, বিয়ের দু-বছর পর এক বড়লোক বন্ধুর গাড়ি ধার করে 888sport app থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বাঁকে বাঁকে মরণের ফাঁদ পাতা পথে তা চালিয়ে দীনাকে নিয়ে তিনদিনের একটা 888sport slot gameে গিয়েছিলাম। গাড়ি চালানোটা শিখেছিলাম বাবার বন্ধু চামড়া ব্যবসায়ী আখলাক সাহেবের
কৃপায়। তিনি তার কলেজপড়ুয়া মেয়ের বর হিসেবে আমাকে নিশানা করার পর সেই পরিচয়ের একটা যোগ্যতা হিসেবে গাড়ি চালানোকে আবশ্যিক ভেবেছিলেন। কিন্তু অকৃতজ্ঞ মেয়ে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেল।
দীনা কক্সবাজার পৌঁছে আমার উচ্ছ্বাসে বরফজল ঢেলে বলেছিল, গাড়ি কেনার মুরদ তোমার কখন হবে? ধার করা গাড়ি চড়ে কি সুখ? আরো কিছু কথা দীনা বলেছিল, যেগুলি হজম করা কঠিন। নেহাৎ আমি মাইল্ড মেজাজের মানুষ। কোনো জবাব না পেয়ে দীনা যেন হতাশই হলো। তার ব্যবহার বাঁকা-তেড়া হলো। আমাদের কক্সবাজার 888sport slot game মাটি হলো।
সেই থেকে আমাদের সম্পর্ক মাটিমাখা।
পাঁচ
বাড়িওয়ালা এখন কথা বলা কমিয়ে দিয়েছেন, যদিও আমাকে ডাকেন আগ্রহ নিয়ে। একদিন বললেন, ফারুক সাহেব আমার একটা কথা নিজের বলে চালিয়ে দিলেন। কথাটা হলো, যা কিছু সৃষ্টি হয়, তার গাঁথুনি জুড়ে ধ্বংসের বীজ রেখেই হয়। এ যেন এক গামলা দুধ, এক চিমটি চুনা। চুনাটা থাকে দুধের বেশ ধরে, তাকে দুধই মনে হয়, এমনকি দুধও তাই বিশ^াস করে। কিন্তু একসময় চুনা ঠিকই চুনা হয়ে ফোটে। অথবা ঘুণপোকা। খাম্বার,
কড়ি-বর্গার কোথায় থাকে কেউ জানে না। কিন্তু একদিন হঠাৎ কোনো নোটিশ না দিয়ে সব খেতে শুরু করে। তখন তাকে আর থামানো যায় না।
আমি বললাম, কথাটা আমার মনে ধরেছে।
ধরবেই তো, তিনি বললেন, মানুষের সম্পর্ক নিয়ে নিশ্চয় ভেবেছেন। সবচেয়ে মধুর সম্পর্কের ভেতরই থাকে ছাড়াছাড়ির চিকন ফাটল। ফাটলটা রেশমি সুতা থেকেও চিকন। কিন্তু একদিন জাহাজের দড়িদড়ার মতো বিরাট হয়ে বেরোয়।
ঠিক, আমি মাথা নাড়ি। কিন্তু কেন হয়?
বাড়িওয়ালা চুপ করে গেলেন।
আজ 888sport live chatা নেই। সে তার এক খালার বাসায় গেছে। কার যেন জন্মদিন।
মানুষ যখন জন্মায়, তিনি বললেন, একটা অদৃশ্য পতাকা দোলাতে দোলাতে সে আসে। সেই পতাকায় মৃত্যুর
দিন-তারিখ লেখা থাকে। অথচ মানুষ তা দেখতে পায় না। জীবনের উদ্যাপন তাই মৃত্যুরও দৈনন্দিন উদ্যাপন।
কথাগুলি আমার শোনা। নানা মানুষ নানাভাবে এসব বলেছে, বইতে পড়েছি, যেমন সেদিন পড়লাম, সবচেয়ে শক্তপোক্ত ধাতুও নষ্ট হয় ক্লান্তিতে। মেটাল ফ্যাটিগে। কিন্তু বাড়িওয়ালা যখন বললেন, কেমন জানি ঘোর লাগল। এই ঘোর বিশ্বাস তৈরি করে, অবিশ্বাসও। এটা হলো, আমি বুঝলাম, আমার বিষণ্নতার জন্য। বিষণ্নতা আলোর শত্রু।
আমি সেই আলো হারাচ্ছি।
তবে এর জন্য বরগুনা দায়ী না। বরগুনা আমার ফ্যাটিগে তা দিয়েছে মাত্র। এই ফ্যাটিগ, এই ক্লান্তি, ভয়াবহ। এর পিচ্ছিল ঢালু পথে পা রাখলে ফেরা যায় না।
এর থেকে পরিত্রাণের আশায় কি না – ফারুক খান যেহেতু মহাকাশ 888sport apkী, চোখটা আকাশের দিকে থাকে, অথবা থাকা উচিত, সেই আকাশ দৃষ্টির কিছুটা পাওয়ার আশায় সম্ভবত – তার বাসায় গেলাম। তিনি আমাকে দেখে হাসলেন। বললেন, এই অ্যানথ্রোপোসিন যুগে পুরুষ আর প্রকৃতির দ্বন্দ্বে পুরুষ মরবে, প্রকৃতিও। দ্বিতীয়টাতে আমার দুঃখ বেশি।
ফারুক সাহেবের বাসায় গেলে এখন কিছুটা স্বস্তি পাই – তিনি যা বলেন, শুনে গেলেই হয়, প্রশ্ন করা না করা আমার ইচ্ছা। করলে উত্তর দেন কি দেন না, না করলেও আপত্তি নেই। তিনি থেমে থাকলে আমিও নিশ্চুপ থাকি। সে-সময় যে নীরবতাটা নামে, তা কোনো আঁচড় কাটে না, প্রশ্ন তোলে না। বরং পরের কথাগুলির জন্য প্রস্তুত করে।
একদিন তিনি আমাকে বললেন, পুরুষ – মেয়ে না, পুরুষ, জেন্ডারটা এখানে অবধারিত অ্যাটাভিস্টিক, মনে রাখবেন – এখন এক বিভ্রান্ত লজিকে দিশেহারা। প্রকৃতি ধ্বংসের ইঞ্জিনটা পূর্ণশক্তিতে চালিয়ে যাচ্ছে। একটু থেমে বললেন, আপনি কি শুনতে পান, রাত গভীর হলে প্রকৃতির পোকা-পতঙ্গ-পাখিরা পাতা খেতে থাকে? তাদের সর্বনাশী ডিনারের খসখস শব্দ শুনতে পান?
না।
প্রকৃতি যে নিঃস্ব হচ্ছে, নিশাচরাচরে ঘোষণা হতে থাকা সেই আওয়াজ, সেই হাহাকার, কান্না?
জি না।
অবাক! মানুষ যে নিঃস্ব হচ্ছে, তার চিহ্নগুলি নিশ্চয় টের পান?
তা কিছুটা পাই।
শুনুন, পশ্চিমের অনেক 888sport apkীও এখন ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ ডিনায়ার। প্রকৃতি, পরিবেশ সব যে বদলে যাচ্ছে, চুপসে যাওয়া বেলুন হয়ে যাচ্ছে, তা স্বীকার করে না। মানুষের মেজাজ-উগ্রতা-হিংসা – সব কিছুর পারদই তো চড়ছে। চড়ছে না? এখন মানুষ হাতে আয়না নিয়ে বসে থাকে, কেবল নিজেকে দেখার জন্য। শুধু দেখতে পায় না ঈশান কোণে জমতে থাকা ডুমস ডে’র কোকিল কালো মেঘকে।
ফারুক সাহেবের মনে বিষাদ। তার বিষাদ-ইতিহাসের ক্রনিকল যেদিন কিছুটা পড়া হলো বুঝলাম, বিষাদটা শুধু সবকিছু ভেঙে পড়ার জন্য না।
ফারুক সাহেবের বাসায় একটা ল্যান্ড টেলিফোন আছে। বরগুনার সপ্তম আশ্চর্য হলো, এই অ্যান্টিকটা এখনো সচল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মোবাইল ফোনের যুগে এই জাদুঘর সামগ্রীতে এখনো কেন নির্ভরতা।
তিনি কিছু না ভেবে বলেছিলেন, এই ফোনটা একদিন বাজবে। এই ফোনটাই। সেজন্য।
এটা তো আমার সামনেই দু-একদিন বেজেছে।
এই বাজা সেই বাজা না। ওই ফোন এলে আমি একটা
রিং-এর পরই বুঝব।
তিনিই জানালেন, বরগুনার প্রথম চার কি পাঁচ টেলিফোন মালিকের মধ্যে ছিলেন তার বাবা। অনেক পরে আমার বাড়িওয়ালা সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন।
আমার বাড়িওয়ালা তো বললেন, তার ল্যান্ডফোন কানেকশন অনেক আগেই তিনি রফা করেছেন।
লাইনম্যানদের বাড়াবাড়ির কারণে নিশ্চয়, তিনি বললেন। তাদের একসময় তোফা দিয়ে, তোয়াজ করে চলতে হতো। তবে তোয়াজ না করলেও তোফাটা এখনো দিই।
হ্যাঁ, লাইনটা তো সচল রাখতে হয়।
জি, তিনি বললেন, তবে সেই ফোনটা যেদিন আসবে, ফোনটা ধরব, তারপর কানেকশনটা আমিও রফা করে দেব। একটা অসম্ভব যদি সম্ভব হয়েই যায়, তারপর চাওয়ার তো কিছু থাকে না, পাওয়ারও।
ছয়
দীনা যেদিন কক্সবাজার থেকে ফেরে, তিনদিন না, চারদিন পর, সে বলেছিল, ফিরছে শহীদ খানের গাড়িতে।
শহীদ খানা আমার মাথাটাকে যেন এক গামলা বিষাদ জলে ডুবিয়ে দিলো।
দীনা যে স্কুলে পড়ায়, আমাদের বাসা থেকে অল্প দূরে, সেই স্কুলের মালিক শহীদ খান। স্কুলের উল্টো দিকের শহীদ প্লাজাটাও তার। প্লাজার পেছনে তার পাঁচতলা বাড়ি। দিয়াবাড়িতে দুইটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। কত কি! তার গাড়িটা ল্যান্ড রোভার এসইউভি। এসব দীনা আমাকে গল্প করতে করতে বলেছে, যেন সে ইউটিউবে শহীদ খানকে নিয়ে করা কোনো রিল থেকে এসব পেয়েছে। দীনা বিয়ের পরপরই বলেছিল, সে চাকরি করবে না। সংসার করবে। আর সন্তান মানুষ করবে। আমি বুঝেছিলাম তার এই ইচ্ছার উল্টো পিঠে হাতভর্তি টাকার স্বপ্ন।
সেই স্বপ্নের ফুল ফোটানো আমাকে দিয়ে যে হবে না, এই সত্যটা যেদিন তার কাছে পরিষ্কার হলো, সেদিন থেকেই আমাকে দীনার অসহ্য হওয়া শুরু।
বরগুনা আসার পর দীনার সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকল, তার অসহ্যতার মাত্রাও দশে পৌঁছে গেল।
ফোনে যে কয়েক মিনিট কথা বলল দীনা, তাতে একটা শূন্যতা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো, যার দিকে তাকাতেও এখন ভয়।
সাত
বাড়িওয়ালা আর ফারুক সাহেবের মতো আমারও যখন মনে হতে থাকল, সৃষ্টির নাভিমূলে থাকা ধ্বংসের বীজটা এক জটিল গাছের মতো ডালপালা মেলেছে, আমিও রাতের শব্দ, কান্নার আওয়াজ শুনতে থাকলাম। যদিও আমার দুর্বল অ্যাকুস্টিকস-জ্ঞান ধরতে পারে না কোন উৎস থেকে এদের বিস্তার। তারপরও কান্নাটা বুকে এসে লাগে। কিছুদিন আগে দীনা আমাকে জানিয়েছে, তার জীবন নিয়ে সে নতুন করে ভাবছে। আমি জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম, সেই ভাবনার কোথাও কি শহীদ খান আছে। কিন্তু উত্তরটা হ্যাঁ হলে সহ্য হবে না, সেজন্য জিজ্ঞেস করিনি। প্রশ্নটা এরপর আমার নিস্তার কেড়েছে।
শহীদ খান কি ঘূণপোকা?
একদিন 888sport live chatা এসে বলল, আমাকে রাস্তায় সে হাঁটতে দেখেছে, কিন্তু হাঁটাটা কেমন জানি। এই হাঁটা তার বাবা একসময় হাঁটতেন।
কখন?
আমার ছোটবেলায়। একদিন তার পেছন পেছন স্কুলে যাচ্ছি। তিনি হঠাৎ এরকম এক হাঁটা দিলেন, সেই কেমন জানি হাঁটা, আমি যে পেছনে পড়ে যাচ্ছি, সেদিকে তার খেয়াল নেই। আমি তার পাশে গিয়ে তার হাত ধরলে হঠাৎ যেন জাগলেন, আমার চুলে মাথায় আদর করে চুমু খেলেন। যেন মাফ চাইলেন। এখন বুঝি।
কী বোঝো?
অনেক কিছুই। আরেকদিন বলব, তবে আবারো বলি, রাতের কান্না আমিও শুনি। আপনিও নিশ্চয়।
আমি অবাক হলাম। আমার একদিনের কেমন জানি হাঁটা দেখেই এমন ধারণা হলো?
না, 888sport live chatা বলল, শরফুদ্দিন সাহেবের কাজের মেয়েটা সেদিন এসে তার পেট থেকে হড়হড় করে কিছু কথা বের করে শুনিয়ে গেল। ধারণাটা সেদিন থেকেই হলো।
কী কথা?
সেসব আপনাকে নাই-বা বলি।
কাজের মেয়েটা 888sport live chatাকে কী বলে গেছে আমি বুঝলাম।
দীনার, মানে আমার স্ত্রীর, সম্পর্কে নিশ্চয়? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
888sport live chatা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর নিচু গলায় বলল, আপনার স্ত্রীর গল্পটা আপনি পড়তে পারেননি, অথবা চাননি, কারণ সেই গল্পের উপর আপনার নিজের একটা গল্প আপনি সেঁটে দিয়েছেন। এজন্য হাহাকারগুলি শুনতে শুরু করেছেন।
দরজা খোলাই ছিল। আমাকে কিছু না বলতে দিয়ে সে বেরিয়ে গেল।
আট
ঘটনাটা শেষ পর্যন্ত ঘটেই গেল।
দীনা ফোনে আমাকে বলল, তার জীবন নিয়ে যে নতুন ভাবনা শুরু করেছে, তাতে আমি নেই। আমাকে সে রেহাই দিয়েছে। আমি চাইলে রাহাতকে নিতে পারি, না চাইলে সে নেবে। তবে পছন্দটা হবে রাহাতের। আশা করি তুমি বিষয়টা মেনে নেবে।
যেন সব কিছুর নিষ্পত্তি সে করে ফেলেছে, এমন ভাবে কথাগুলি দীনা বলল।
আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। আমি ঝিম মেরে একটা চেয়ারে বসে থাকলাম।
শুক্রবার বিকেল। বুঝলাম, দীনা একটু দয়া দেখিয়েছে, যাতে কথাটা হজম করতে শনিবারটা নিতে পারি। তাহলে রবিবার অফিস কামাই করতে হবে না।
সন্ধ্যার আগে আগে 888sport live chatা এলো। হাতে কিছু ব্রাউনি। মুখে হাসি। ইউটিউব দেখে বানিয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে তার হাসি উবে গেল। ব্রাউনিগুলি খাবার টেবিলে রেখে সে বলল, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে শক্ত অসুখ হয়েছে। আমি যাই, আপনি বরং বিশ্রাম নিন। আমি বিষাদ আড়ালে ফেলে বললাম, না অসুখ-টসুখ হয়নি। তোমাকে ধন্যবাদ। একটা ব্রাউনি খেয়ে ফারুক সাহেবের বাসায় যাব। তিনি ডেকেছেন।
কিছু একটা হয়েছে আপনার, 888sport live chatা বলল। সামথিং সিরিয়াস?
আমার স্ত্রী শহীদ খানের সঙ্গে তার জীবনটা বেঁধে নিয়েছে। আজ আমাকে সে তা জানিয়েছে। এই কথাই শরিফুদ্দিনের কাজের মেয়েটা তোমাকে বলেছিল।
শহীদ খান নিশ্চয় মূল্যবান মানুষ।
মূল্যবান কি অর্থে, জানি না। কিন্তু উঁচু মাত্রার ধনী। রিখটার স্কেলে ৭। আমার সংসার অবশ্য ৫ মাত্রাতেই ভেঙে পড়ত।
না, তিনি মূল্যবান কারণ তিনি আপনার চাপা দেওয়া গল্পটা উদ্ধার করে পড়েছেন। তার টাকা হয়তো তাকে সেই সুযোগটা দিয়েছে।
888sport live chatা আর কিছু বললে আমার কষ্ট বাড়ত, কিন্তু সে চুপ করে রইল।
একসময় সে নীরবতা ভাঙল। আমার মা-ও আমার বাবার জীবন থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। পার্থক্য এই, তিনি আরেকজনের সঙ্গে জীবনটা বাঁধতে পারেননি। কিন্তু এমন একটি জটিল বন্ধনে জড়িয়ে গেলেন যে, বেঁচে থাকার তার কোনো উপায় তিনি রাখলেন না।
888sport live chatার গল্পটা আমি কিছুটা ধরতে পেরেছি, গল্পটা যেহেতু পুরনো।
তারপর থেকে বাবা তার জীবনটাই শুধু ধরে রেখেছেন, 888sport live chatা বলল। জীবনযাপন আসলেই একটা ভয়াবহ অভ্যাসের নাম, যা মানুষকে চাকর করে ফেলে। এই কথাগুলি আপনাকে বলতে চাইনি, কেন জানি বলে ফেললাম। এতদিন নানা কথায়, যার কিছুটা বানানো, কিছুটা রাখঢাকের, আপনার থেকে সত্যটা আড়াল করে রেখেছি। বকুল খালা ছাড়া সবার কাছ থেকেই। আপনাকেও এখন তাই করতে হবে, যদি না দারুণ সাহসী হন।
আমি সাহসী না, 888sport live chatা, সাহসী তুমি। আমার সাহস থাকলে আঙুলটা নিজের দিকেও তুলতাম। যাই হোক, তোমার সাহসটা এখন আমাকেও দেখাতে হবে। তা না হলে পোকা-পতঙ্গরা নিশিরাতে আমাকে ঠুকরে খাবে।
নয়
দুদিন পর বাড়িওয়ালা ডেকে পাঠালেন। তার জেলি চরিত্রের সমাপ্তি ঘটেছে। তবে এখন তিনি চুপচাপ। নিজের ভেতরেই সেঁধিয়ে থাকেন। আমাকে বসতে বলে উঠে ভেতরে গেলেন। একটা পুরনো অ্যালবাম হাতে ফিরলেন। রং হালকা হয়ে যাওয়া কিছু ছবি সাঁটা কয়েকটা পৃষ্ঠা তিনি মেলে ধরলেন। তারপর কাঁপতে থাকা আঙুলে ছবিগুলি ছুঁয়ে ছুঁয়ে বললেন, নিশ্চয় ধারণা করতে পেরেছেন?
জি, আমি বললাম।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বললেন, চলে গেল, কিন্তু আমাকে নিয়েই তো গেল। আমার ছায়াটা শুধু পড়ে আছে, আমি নেই।
আমি আর কী বলি। কথাটা তো আমারও।
অ্যালবামের শেষ দুই পৃষ্ঠা মেলে তিনি বললেন, ছবিগুলি 888sport live chatার। শেষ ছবিটাতে আঙুল রেখে বললেন, এসএসসি পাশ করার দিন। হাসিটা কী সুন্দর, তাই না? তারপর হঠাৎ অ্যালবাম বন্ধ করে তিনি সরাসরি আমার দিকে তাকালেন। বললেন, 888sport live chatার সঙ্গে তার মায়ের চেহারার মিলটা খুব বোঝা যায়, তাই না?
জি।
কিন্তু আমার সঙ্গে?
আছে তো, আমি বললাম।
না নেই, তিনি বললেন। নেই। মোটেও নেই। কিছু বুঝলেন?
যা বোঝার আমি বুঝলাম। কিন্তু এ নিয়ে কথা বলা যায় না।
আজ একটু বাজারে যাব, আমি বললাম।
দশ
888sport live chatা বলল, ফারুক সাহেব কার ফোনের আশায় থাকেন, আপনি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। সেই ফোন যে কোনোদিন আসবে না, তা তিনি জানেন। তারপরও। বাবাকে অনেক বলেকয়ে মা একটা ল্যান্ডফোনের সংযোগ নিয়েছিলেন বাসায়। সেই ফোনটা না থাকলে আমার কি জন্ম হতো? আমি কি অজন্মা থাকতাম? বলে সে একটু হাসল, যেন সে আমোদ পাচ্ছে বিষয়টা ভেবে।
আমি চুপ করে থাকি।
ফারুক সাহেব এক হলুদ বিকেলে তার মনের মানুষকে আবিষ্কার করেছিলেন, 888sport live chatা বলল। সেজন্য হলুদ আলো তার এত পছন্দ। চীনে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে অনেক বাল্ব এনেছিলেন। তার বিশ্বাস হলুদ আলো নিভে গেলে টেলিফোনটা বিকল হয়ে যাবে।
যেতেই পারে, মনে মনে বললাম। আমার নিজের টেলিফোনটা আমি হাতুড়িপেটা করে মেরে ফেলেছি। নতুন একটা ফোন নিয়েছি, সেখানে শুধু অফিসের লোকজনের নাম্বার আছে। শুনেছি আমাকে এখন রাহাতেরও ছয় মাত্রার অসহ্য। শহীদ খানের চার্মটা সেও আবিষ্কার করে ফেলেছে। তা ফেলুক। রাহাতের এখনো নিজের ফোন নেই। একদিন হবে নিশ্চয়। ততদিনে আমাকে তার নাম্বার দেওয়ার ইচ্ছাটা থাকবে কি না, জানি না।
আমার মা এতগুলি ভয়ানক সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলেন, আমি ভাবি, 888sport live chatা বলল। আমার অনেক রাত এই ভাবনায় কাটে। এরকম ভাবনাও ভয়ানক, তাই না? ভয়ানকটাও অবশ্য একসময় অভ্যাসের দাস হয়ে যায়। আপনি সেই রাস্তাতে হাঁটুন। হাঁটা নাকি মাথা পরিষ্কার করে। তাহলে নন্দ ঘোষের দলে সবাইকে না ফেলে নিজের দায়টাও দেখবেন। তা না হলে বাবার মতো, ফারুক সাহেবের মতো শেষ ট্রেনের যাত্রী হয়ে শুধু সময় গুনবেন।
888sport live chatার কথাগুলি অস্বস্তির। আমাকে আড়ালে নিতে তাই তাকে বললাম, পুরো ছবিটা আমার কাছে মোটামুটি পরিষ্কার, তারপরও কিছু খটকা। তুমি যা বললে সেসব তো নাও হতে পারে। তোমার অনুমান …
আমাকে থামিয়ে দিয়ে সে বলল, না, শুরুতে আপনাকে কিছু বানিয়ে বলেছি, কিন্তু এখন যা বলছি, তার সবই ঘটেছে। বকুল খালা থেকে জেনেই বলছি। তিনি সবই জানেন। মা চলে গেলে তিনিই আমাকে আগলে রেখেছেন। তাকে আপনার কথা বলেছি। আপনাকে আমার কথাগুলি বলা যায় কি না, জানতে চেয়েছি। বকুল খালা জানেন, কথা বুকে চেপে আমি বেশিদিন আস্ত থাকতে পারব না। তিনি এটাও বলেছেন, লোকজন ভেঙে পড়ার সময় কিছু একটা ধরতে চায়। তুমি যেন সেই অবলম্বন না হও।
চোখে প্রশ্ন তুলে 888sport live chatার দিকে তাকালাম।
888sport live chatা হাসল। না, আমি আপনার সেই অবলম্বন না। আমিও বকুল খালাকে অবলম্বন করিনি। সেজন্য বেঁচে আছি। তবে বুকে জমা কথা পাহাড়ের সমান হলে সামলানো মুশকিল। সেই মুশকিল বাবার আর ফারুক সাহেবের হয়েছে। সৃষ্টি ধ্বংস হবে, প্রকৃতি নিঃস্ব হবে – এসব বাজে কথা। কষ্ট ভোলার অপযুক্তি। বাজে কথা দিয়ে মানুষ বুকে জমা কথার ক্ষয় রোধ করে।
কথা তো আমারও জমা শুরু হয়েছে, আমি ভাবলাম।
ও, আরেকটা কথা, 888sport live chatা বলল, আমি কিছুদিন বকুল খালার সঙ্গে থাকব। তারপর যখন ফিরব, আমাকে খুব একটা দেখবেন না।
অবশ্যই, আমি বললাম। ব্রাউনি বানানোটা এবার শিখে ফেলব।
888sport live chatা হাসল। হাসিটা ধরে রেখেই বলল, আপনি শুধু রাতটাই ভয়াবহতার হাতে দিন। দিনটা ধরে রাখেন। দিনটা গেল, তো আপনিও গেলেন। পারবেন?
চেষ্টা করে দেখব।
আমি তাহলে যাই, 888sport live chatা বলল। তারপর হাঁটা দিলো।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.