মূল : অমৃতা প্রীতম
888sport app download apk latest version : সম্পদ বড়ুয়া
কারমোর কলস ঘোলে ভরে উঠছে। অর্ধেক ভরতে না ভরতেই সে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন করে – ‘আজ তো বড় সর্দারনিকে দেখলাম না। সে ভালো আছে তো?’
সর্দারনি নিহাল কাউর কিছুক্ষণ আগে রান্নাঘরে এসেছে। চুলার ওপরে একটা বড় পাত্রে ক্ষীর তৈরি হচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি চুলা থেকে কিছু কাঠ বের করে আনলো। দাউদাউ করে আগুনের হলকা ঘন মিষ্টি দুধকে পুড়িয়ে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে।
‘ভিরো, সোনা আমার। তুমি কি কখনো এরকম আগুনের শিখায় ক্ষীর রেঁধেছো? এ-কাজে ধৈর্য লাগে আর দরকার আগুনের হালকা আঁচ।’ চুলার পাশে একটা নিচু কাঠের চৌকিতে নিহাল বসে পড়ে আর ধীরে-ধীরে পাত্রটা নাড়তে থাকে। সকালবেলায় সে দইকে মন্থন করেছে আর এখন লাচ্ছি টান-টান করতে-করতে ভিরোকে শ্রমিকদের প্রত্যেককে এক কলস করে দেওয়ার জন্য বলে। এবার নিজের একটু বিশ্রাম দরকার।
শ্রমিকরা ঘোল পাওয়ার পর অবশ্যই জিজ্ঞেস করে, ‘বড় সর্দারনি, তুমি সুস্থ আছো তো?’ রান্নাঘরে নিহাল কাউর তাদের কথা শুনতে পায়নি। তবে কারমোর কথা সে পরিষ্কার শুনেছে।
‘আমি ভালো আছি কারমো। তুমি ভালো তো?’ রান্নাঘর থেকেই নিহাল উচ্চস্বরে বলে। রান্নাঘরের দরজা দিয়ে কারমো উঁকি দেয়। ডান হাতে নিহালের কপাল স্পর্শ করে সে বলে ওঠে, ‘সর্দারনি, সকল সপ্ত-আশীর্বাদ তোমার ওপর বর্ষিত হোক। আজ তোমাকে দেখিনি। আমার সর্দারনির স্বাস্থ্যের জন্য প্রার্থনা করছি।’
যেসব আশীর্বাদ সে ঢেলে দিয়েছে তাতে নতুন কিছু নেই। এ-বাড়ির এই দিলখোলা মহিলার কাছে সব কর্মী, শ্রমিক একামত্মভাবে অনুরক্ত। কিন্তু নিহাল কাউরের সন্দেহ হলো, কারমো যখন লাচ্ছি নিচ্ছিল তখন এ-প্রশ্ন করায় ভাবলো, এর পেছনে কোনো বিশেষ কারণ আছে। সে তার দিকে তাকালো। কারমো তার প্রায় অল্প ভরা কলসটা কাত করে ঠেলে দিলো। নিহাল বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। ভিরোকে বললো, ‘কারমোকে সব সময় একটা ভরা কলস দিও সোনা। তার ছোট-ছোট বাচ্চা আছে, তারা লাচ্ছি পছন্দ করে।’
‘তোমাকে ভগবান আরো দিক। তোমার হাতের আশীর্বাদের ছোঁয়ায় যেন দ্বিগুণেরও বেশি লাচ্ছি নেমে আসে’ – কলস
কানায়-কানায় ভরে উঠলে কারমো বলে। আসলে ভিরোর হাতই লাচ্ছি ঢেলে দেয়, তবে সকল প্রশংসা আর আশীর্বাদ জমা হয় নিহাল কাউরের নামে।
কারমো বিদায় নিলে নিহালও একসময় ভুলে যায় সে এতো ভালোবাসা আশীর্বাদে সিক্ত হয়েছে। তার কেবল মনে বাজে দুটো শব্দ ‘বড় সর্দারনি’।
একদিনেই নিহাল সর্দারনি থেকে বড় সর্দারনি উপাধি পেল। কে জানতো, কেউ ভাবতে পেরেছে তার এ নতুন পরিচয়? সম্ভবত তারা তাদের মগজে মাত্রাতিরিক্ত চাপ দিয়েছিল আর রাতারাতি কাজের লোক, হিসাবরক্ষক, শ্রমিকরা তাকে এ-নামে ডাকার সিদ্ধামত্ম নিল। গতকাল বাড়ির বড়কর্তাও তাকে বড় সর্দারনি বলে ডেকেছে। সেদিন সে নিজে তার পরিচারিকাকেও ভিরোকে ছোট সর্দারনি বলে ডাকার জন্য বলেছিল। ছোট সর্দারনি থাকলে সেখানে অবশ্যই একজন বড় সর্দারনি থাকবে – নিহাল ভাবলো। ধূলিকণার মতো ছোট চিমত্মা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, যেভাবে অল্প আগুনে গরম দুধের মধ্যে চালের দানা বুদ্বুদ করে ওঠে।
একই রকম চিমত্মা আসে যেদিন ছোট সর্দারনি হয়ে ভিরো এ-বাড়িতে এসেছিল। প্রতিরাতে বিছানায় যাওয়ার আগে সে নিহালের কক্ষে আসতো। খাটের প্রামেত্ম বসে সে এ বয়স্ক মহিলার পা টিপে দিতো। নিহালের ভাগ্যটাই এমন যে, সে যেমন মেয়ে বিয়ে দিতে পারবে না, আবার ঘরে ছেলের বউও আনতে পারবে না। তবে তার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে এ-মেয়েটির মধ্যে সে নিজের মেয়ে আর বউয়ের প্রতিরূপ দেখতে পায়। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিহাল কাউর নিজেকে সামত্মবনা দেয় এই ভেবে যে, ভিরোর মাঝে সে দুটো সত্তাই খুঁজে পেয়েছে।
স্বামীর জন্য নিহাল নিজেই এই দ্বিতীয় স্ত্রীকে খুঁজে বের করেছিল। বড় প্রতিষ্ঠিত পরিবার থেকে প্রস্তাব এসেছিল, কিন্তু ওসব সম্পর্ক বড় ধরনের স্বার্থের জন্য প্রতারণার আশ্রয় নেয়। সর্দারের বয়স বিবেচনা করে এ-ধরনের প্রার্থীরা চায় যেন বাড়িটা তাদের মেয়ের নামে হস্তামত্মর হয়ে যায়। সর্দার তার বিশাল বিষয়-সম্পত্তির জন্য একজন উত্তরাধিকার খুঁজছে। তবে গর্ভে সমত্মান আসুক না-আসুক, কোনো মহিলাকে সে তা একেবারে দিতে রাজি নয়। তার দ্বিতীয় স্ত্রী একজন ছেলেসমত্মানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসতে পারে… আর কিছু নয়।
সর্দার প্রথমে দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি ছিল না। তবে তার নিমরাজির মধ্যে একটা দীর্ঘশ্বাস যেন মিশে ছিল। নিহাল কাউর সেই দীর্ঘশ্বাস ঠিকই শুনতে পেয়েছে আর তাই গরিব পিতা-মাতার কন্যা ভিরোকে খুঁজে বের করে এনে সর্দারের হাতে সঁপে দিলো। স্বামীর কাছ থেকে দীর্ঘশ্বাস তুলে নিয়ে সে তা নিজের বুকে সযত্নে লুকিয়ে রাখলো।
একদিন সর্দার তার স্টিলের আলমারি খুলে সামনে দাঁড়িয়ে হতবাক হয়ে যায়, ‘বড় সর্দারনি কোথায়?’ রাগতস্বরে ছোট সর্দারনি ভিরোকে জিজ্ঞেস করে। বড় সর্দারনি তখন বাড়িতে ছিল না। সর্দার
আলমারি বন্ধ করে কারখানায় যাওয়ার আগে ভিরোকে বললো, বড় সর্দারনি ফেরার সঙ্গে-সঙ্গে যেন হিসাবরক্ষককে তার কাছে পাঠিয়ে দেয়। এরই মধ্যে বড় সর্দারনি ফিরে আসে। ভিরো বাড়ির বাইরে কালভার্টের পাশে বসে থাকে, ভয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বমিও করেছে।
নিহাল কাউর ভিরোকে হাত ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে আসে। তার কাঁধে ভালো করে ম্যাসাজ করে দিলো এবং নিচে শুইয়ে দিলো। কিন্তু ভিরো তার কম্পমান পা-দুটো মাটিতে নামিয়ে এনে উঠে দাঁড়ালো। শেষে নিহালের পায়ে লুটিয়ে পড়লো।
‘সর্দারনি, তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে আমি তোমার মেয়ে আবার পুত্রবধূও’, এ বলে ভিরো কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে বলে, তার ভাই বড় বিপদে পড়ে তার কাছে এসেছিল। তার কিছু টাকা দরকার। ভিরোর নিজের কাছে যা আছে তা যৎসামান্য। এজন্যে সে সর্দারের পকেট থেকে চাবি চুরি করে স্টিলের আলমারি খুলে কিছু রুপার বাসন সরিয়ে ভাইকে দিয়েছিল।
‘এটা তোমার নিজের বাড়ি ভিরো। তোমার হাতে যদি চুরি করো…’
‘এটাকে আমি কখনো নিজের বাড়ি মনে করিনি’, কিছুটা উত্তেজিত হয়ে সর্দারনিকে মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে ভিরো বলে, ‘ভবিষ্যতেও মনে করবো না। তবে তোমার কাছে হলফ করে বলতে পারি, আগামীতে আর কাউকে কিছু দেবো না। ওইদিন এ-কাজটি আমার করা ঠিক হয়নি। করার পর থেকেই অনুশোচনায় মরছি। তুমি জানো, যখন আমার বিয়ে ঠিক হলো বাবা আমার ভাইকে ব্যবসায় লাগিয়ে দেবে বলে তোমার কাছ থেকে দু-হাজার টাকা নিয়েছিল, তুমি সে-টাকা দিয়েছিলে আর আমারও বিয়ে হয়ে যায়। প্রকারামত্মরে ওই টাকার বিনিময়ে আমাকে বিক্রি করা হলো। দুই হাজার টাকার জন্যে আমি একজন বৃদ্ধ সর্দারের জীবনের সঙ্গে চিরদিনের মতো যুক্ত হলাম। বাবা বলো, ভাই বলো তারা আমার জন্যে কী করতে পারবে। তাদের সুবিধার জন্যে আমি কেন অন্যের বাড়িতে চুরি করতে যাবো…।’
‘ভিরো…’
একটু থেমে নিহাল তার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে ভিরোকে সামত্মবনা দিতে থাকে। আলমারির বাসনপত্র অনেকটা পুরনো ধাঁচের। সে নিজে এসব জিনিস স্যাকরার কাছে দিয়ে নতুন বাসন নিয়েছে। সর্দারও তাকে বিশ্বাস করেছে। তবে ভিরোর মুখের দিকে নিহাল যতবার তাকায়, ততবারই তার ভেতর উৎকণ্ঠা জাগ্রত হয়। ভিরোর চোখদুটো কালো, কেবল নাচছে। সে অনেকটা শ্যামলা তবে তার শরীর মসৃণ আর ঋজু। অনেকটা মাখা ময়দার তালের মতো। বাহুগুলো পাতলা, সুচারুভাবে গোলাকার। পেশিগুলো ঠাসা। যে-গভীর দীর্ঘশ্বাস সর্দারের কাছ থেকে নিয়ে সে আবিষ্ট ছিল আজ তা ভিরোর কাছে চলে গেছে। দুঃখ হয়ে এখন তা তার বুকে বাসা বেঁধেছে।
এ-পরিবারের কাজকর্মে ভিরো প্রোথিত হয়ে আছে। বাড়িটা বিশাল, তারপরও পরবর্তীকালে যে-অভিনন্দনের বন্যা বয়ে গেছে তা ধরে রাখার মতো স্থান এখানে নেই। সর্দার আনন্দের আতিশয্যে নিজের মধ্যে নিবিষ্ট হয়ে আছে। ভিরোর দেখাশুনায় ব্যস্ত নিহাল সকল অবস্থাতেই তাকে প্রশ্রয় জুগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লোকজন সর্দার বা ভিরোকে নয়, নিহালকেই সবকিছুর জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছে।
‘ছেলে জন্মানোর সঙ্গে-সঙ্গে আমি তাকে কোলে তুলে নেবো। এর জন্য প্রস্ত্তত থাকো। আমি হচ্ছি বড় সর্দারনি। তুমি ছোট সর্দারনি। প্রথমে ছেলে হলে সেটা পাবে বড় সর্দারনি। পরের ছেলেরা তোমার হবে।’ এটুকু বলে হেসে নিহাল তার দাবি নিয়ে বাজি ধরে।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসব কাজে এতটুকু ঈর্ষা তার মধ্যে নেই। নিজের হাতেই স্বামীকে অন্য 888sport promo codeর কাছে সমর্পণ করে দিলো। এখন অন্য 888sport promo codeর ছেলেকে সকল জমিজমা-সম্পত্তি দেওয়ার জন্যও প্রস্ত্তত। ‘ডাকিনী! তোমার মায়ার জাল কীভাবে বিস্তার করেছো? আমি বলেছি, তুমি আমার মেয়ে ভিরো কিংবা পুত্রবধূ। আমি এখন মা আর শাশুড়ি ভেবে খুব খুশি আছি। আমি কখনো মনে করি না তুমি আমার…।’
ভিরো নিহাল কাউরকে থামিয়ে দেয়, ‘সর্দারনি, জানি না আমি তোমার সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা, তবে আমি নিশ্চিত আমি তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী নই। আমি তোমার সতিনও না।’
নিহালের কাছে একজন কার্পেন্টার এলো রুপার ঘণ্টায় সুশোভিত একটা ছোট শিশুর খাট বানাবে বলে। হাতে বোনা রেশম থেকে একটা ছোট কাঁথা তৈরি করা হলো। শহরের একজন ব্রিটিশ অফিসার ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলেন। নিহাল বললো, ‘বিদেশি সোয়েটার এতো নরম।’ সে ওই অফিসারকে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার সময় দুটো ছোটদের সোয়েটার আনতে অনুরোধ করলো।
নিহাল কাউর তার সময়ে সবচেয়ে ভালো ধাত্রীর মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়েছিল। শহরে অনেক ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল, কিন্তু তার আশা কখনো পূর্ণ হয়নি। কিন্তু তিনদিন ধরে ভিরোর পেছনে শরীরে ব্যথা শুরু হলো এবং সেখানে কিছু দাগ পড়তে দেখে নিহাল প্রার্থনা জানায়। জীবনে এই প্রথমবারের মতো সে প্রার্থনা করে কিছু চাইলো।
সে-সময় ভিরো পৃথিবীর যে-কোনো কিছু দাবি করতে পারতো। সে সবাইকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারতো কিংবা অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তারের জন্য ভান করে বলতে পারতো, সে এটা চায়, ওটা চায়। সর্দার তো তাকে খুশি করার জন্য একপায়ে খাড়া। কিন্তু ভিরো এর কোনো সুযোগ গ্রহণ করেনি। নিহালও জানে, ভিরোর একটু আচারের প্রয়োজন হলেও সে তার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করবে। তাই ভিরোর চাহিদা কী নিহাল আগে থেকেই আঁচ করতে পারে এবং সে চাহিদা পূর্ণও করতে পারে। ভিরো কোনো কিছুই চায়নি। আকারে-ইঙ্গিতেও কোনো কিছু কামনা করেনি। কেবল একবার বলেছিল, যখন বাড়ির উঠানে শালগম শুকানোর জন্য দড়ি দিয়ে ঝোলানো হয়েছিল তখন সে সেগুলো সরাতে বলেছিল। ‘ওসবের দৃশ্য দেখলে আমার মাথা ঝিমঝিম করে। শালগমের টুকরো আমাকে ঢিলে মাংসের কথা মনে করিয়ে দেয়’ – ভিরো বলে। শাক-সবজিকে শুকনো করার দৃশ্য দেখলেই তার বমি আসে।
তারপর থেকেই ভিরোর আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন এলো। গর্ভের নয় মাসের মাথায় সে গোঁ ধরলো সমত্মান প্রসবের জন্যে সে তার মা-বাবার কাছে চলে যাবে। সর্দার এতে আপত্তি তুললো। নিহাল ভিরোকে বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু সে জানাল, তাদের গ্রামের বৃদ্ধ ধাত্রীর ওপরেই সে শুধু ভরসা রাখতে পারে। আর এখানে শহরের 888sport promo code ডাক্তাররা তাকে নিশ্চয়ই মেরে ফেলবে। এ-ধরনের ভীতি প্রসূতির জন্য মারাত্মক হতে পারে, ডাক্তাররা অভিমত জানালেন আর সর্দারকে উপদেশ দিলেন, স্ত্রী যেভাবে চাচ্ছে তাতে যেন বাধা না দেয়।
কিন্তু সর্দারের মনে একটা ভয় আছে। ভিরো যদি কন্যাসমত্মানের জন্ম দেয় তাহলে তার পরিবারের লোকজন তাকে অন্য কারো ছেলেসমত্মানের সঙ্গে বদল করে ফেলবে। তাদের একমাত্র কামনা কন্যার ছেলেসমত্মান হবে, সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার…।
‘এক্ষেত্রে একটাই পথ খোলা আছে, আমি তার সঙ্গে যাবো। আমি সেখানে থাকলে তারা এ-ধরনের কাজ করতে পারবে না’ – অনেক চিমত্মা করে নিহাল কাউর বলে। সর্দার এতে রাজি হলো। ভিরো, নিহাল আর তার দাসী ভিরোর গ্রামের পথে রওনা হলো।
সমত্মান জন্ম দেওয়া ভিরোর জন্যে খুব একটা কঠিন ব্যাপার ছিল না। সে বয়সে নবীন, স্বাস্থ্যবতী। তার মা-বউদি ঠাট্টা করে বলে, ‘ভিরো কোনো কিছুকে তোয়াক্কা করে না, একটা ছেলেসমত্মানের জন্ম দেওয়া বড় কোনো ব্যাপার নয়। একটা জোরে চিৎকার দিয়ে চাপ দিলো আর একটা ছেলেসমত্মান প্রসব হয়ে গেলো…।’
নিহাল নিশ্চিত হলো, তার এভাবে হঠাৎ চলে আসায় ভিরোর মা-বাবা অস্বসিত্মতে পড়েনি। সময় ভালোই কাটছে আর সবাই তাকে সমীহও করছে। হাসির ছলে নিহাল বলে, ‘একটা জোরে চিৎকার দিয়ে চাপ দাও আর একটা ছেলেসমত্মান প্রসব হয়ে যাবে। কিন্তু কন্যাসমত্মান জন্ম নিলে কী হবে?’
হেসে গড়াগড়ি খেতে-খেতে ভিরোর বউদি বলে, ‘তাহলে দুটো জোরে চিৎকার দাও আর একটা কন্যাশিশু জন্ম নেবে।’
‘কন্যাশিশুর জন্যে দুটো চিৎকার কেন?’ নিহাল হাসতে-হাসতে জিজ্ঞেস করে।
‘একটা চিৎকার ব্যথার, অন্যটি দুঃখের।’ ভিরোর বউদি উত্তর দেয় – ‘ছেলেসমত্মানের সঙ্গে আসে আনন্দ। কন্যাশিশুরা আনে দুঃখ।’ নিহাল কাউরের জন্য এটা ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা, ‘আমার জীবনে আমি একটি আনন্দের চিৎকার যেমন নিতে পারিনি, ব্যথার দুটো আর্তনাদও…।’ তবে তার হাসিমুখের ঠোঁট দুটো তার সকল দুঃখকে এত দ্রম্নত চুষে নিলো যে, অন্যরা ভাবতেই পারলো না তার মনে এতো কষ্ট আছে।
এক রাতে ভিরো আঁতুড়ঘরে ঢুকল। ঠোঁটে কামড় দিয়ে সকল যন্ত্রণা এত সাহসের সঙ্গে সহ্য করলো যে, অন্য রুমের কেউ তার কণ্ঠ শুনতে পায়নি। একটি মাত্র আর্তনাদ করলো সে আর ভিরোর বালিশের পাশে বসে থাকা নিহাল কাউরের দিকে তাকিয়ে ধাত্রী বলল, ‘অভিনন্দন সর্দারনি। আসুন, আপনার কোলে পুত্রসমত্মান তুলে দিচ্ছি।’ নিহাল নবজাত ছেলেকে তার কোলে তুলে নিল, সঙ্গে অভিনন্দনও।
পরদিন সকালে নিহাল সর্দারকে একটা টেলিগ্রাম করার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলো। ভিরো তাকে ডেকে বয়স্ক এ-মহিলার পা স্পর্শ করলো – ‘সর্দারনি সারা পৃথিবীকে আমি মিথ্যে বলতে পারি, কিন্তু তোমাকে তা পারবো না। তোমার সর্দার এ সমত্মানের পিতা নয়।’
‘ভিরো…!’ নিহালের কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।
‘সর্দারের কাছে আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তবে তোমার কাছে আমি অনেকভাবে ঋণী। সর্দারের বাড়ির আঙিনায় কেবল এ-সমত্মানটির খেলাধুলা করার কথা থাকলে আমার অস্বসিত্মর কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু আমি তাকে তোমার কোলে দিতে পারি না। সে তোমার স্নেহ আর যত্নের উপযুক্ত নয়…।’
‘তুমি কী বলছো, ভিরো?’
‘রসিকতা দিয়েই শুরু মনে হচ্ছে। আমি জানি না, এ-রসিকতা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, এজন্যে আমার নিজের মধ্যে কোনো অনুতাপ হচ্ছে না। তোমার জন্যেই আমার দুঃখ হচ্ছে।’
‘ভি… রো!’
‘মনে আছে? গত বছর আমি বাড়িতে এসেছিলাম। তোমার হিসাবরক্ষকই রক্ষীরূপে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিল… গ্রামে এক গল্প ছড়িয়ে গেছে যে, আমার মা-বাবা একজন বয়স্ক সর্দারের কাছে আমাকে বিয়ে দিয়েছে। সর্দার কখনো আমাদের বাড়িতে আসেননি।
বাবা আমাকে তোমাদের শহরে নিয়ে গেলেন। গুরুদুয়ারায় বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আমাকে তোমার বাড়িতেই নেওয়া হলো… যখন আমি এখানে গ্রামে এলাম, অন্য 888sport promo codeরা জানতে চাইলো আমার বর দেখতে কেমন বৃদ্ধ আর ক্লিষ্ট। আমি জানি না কেন, সম্ভবত তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য বললাম, বৃদ্ধ লোকের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়নি। তোমাদের হিসাবরক্ষক বয়সে যুবক এবং দেখতে সুদর্শনও বটে। আমি বললাম, ওই আমার বর। তারা অবাক হলো, কিছুটা ঈর্ষাও জাগলো মনে। হিসাবরক্ষককে আমি এ-রসিকতার কথা জানিয়েছি। পুরো খেলায় সেও অংশীদার হয়ে পড়লো। যখন আমার বন্ধুরা রুপার আংটি চাইলো, সে সোনার মণিকার থেকে তাদের কিনে দিলো, যা ভগ্নিপতি দিতেই পারে। এক সপ্তাহ আমি এখানে ছিলাম। হাসিখুশির মাঝে আমিও ভাবতে শুরু করি তার সঙ্গেই আমার বিয়ে হয়েছে। আর কারো সঙ্গে নয়।’
‘আমাদের হিসাবরক্ষক মানে মদন সিং…’
‘হ্যাঁ, তবে আমি এখন আর সর্দারের বাড়িতে ফিরে যেতে চাই না। ছেলেটাকে সেখানে পাঠাব কেন? এজন্যেই আমি এখানে আসার জন্যে গোঁ ধরেছিলাম। আমার কর্মফল নিয়েই আমাকে বাঁচতে দাও। সর্দারনি, তোমার কাছে আমার কোনো আর্জি নেই, তবে সর্দারকে হিসাবরক্ষকের কথাটা বলো না। তিনি জানতে পারলে তাকে ছুড়ে ফেলে দেবেন।’
‘কিন্তু মদন সিং বিবাহিত, তার বাড়ি আছে, দুটো সমত্মান আছে।’
‘আমি জানি, এজন্যেই আমি চাই না তার চাকরিটা চলে যাক। তার তো কোনো দোষ নেই, সে কষ্ট পাবে কেন? তার ওপর আমার কোনো দাবিও নেই। সে যেখানে আছে সেখানে সুখে থাকুক এ-আমি চাই… তার জন্যেই শুধু, নাহলে একজন যুবকের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা আমার কখনো জানা হতো না।’
নিহাল কাউর একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। চোখ দুটো বন্ধ করলো। যখন চোখ খুললো, তখন দেখে ভিরোর ছেলেটা তার বুক থেকে চুকচুক করে দুধ খাচ্ছে। এবার নিহাল ধীরে-ধীরে দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার পথ অনুসরণ করলো, যা সর্দারের কাছ থেকে তার কাছে এবং পরে ভিরোর কাছে যাত্রা করেছে। এতদিন পরে এ-দীর্ঘশ্বাস শোকার্ত হয়ে ভিরোর দিকে এসে বাসা বেঁধেছে আর এখন ছেলেসমত্মান তা বুক থেকে চুষে নিচ্ছে।
অমৃতা প্রীতম : পাঞ্জাবি 888sport live footballের অন্যতম বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর অমৃতা প্রীতম ১৯১৯ সালের ৩১ আগস্ট বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালায় জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলশিক্ষকের একমাত্র সমত্মান ছিলেন। অল্প বয়সে মা হারানোর একাকিত্ব কাটানোর জন্য লেখালেখি শুরু করেন। সমসাময়িক ভারতের একজন প্রতিনিধিত্বশীল লেখক। ভারত বিভাগ, 888sport promo codeবিষয়ক রচনা তাঁর লেখায় স্থান পেয়েছে। প্রথম 888sport app download apkর বই Important Waves ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৬ সালে দীর্ঘ 888sport app download apk Magnum Opu’s-এর জন্য তিনি 888sport live football অ্যাকাডেমি 888sport app download bd পেয়েছেন। 888sport live football রচনার স্বীকৃতি হিসেবে জ্ঞানপীঠ 888sport app download bd পান। ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ পদক পেয়েছেন। উলেস্নখযোগ্য 888sport alternative link পিঞ্জর (১৯৫০), Rang Ka Patta। পাঞ্জাবি 888sport live football-পত্রিকা নাগমনি সম্পাদনা করেছেন। ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর ৮৬ বছর বয়সে দিলিস্নতে মৃত্যুবরণ করেন। ‘দীর্ঘশ্বাস’ গল্পটি নিরুপমা দত্ত ও প্রতীক কানজিলাল কর্তৃক অনূদিত অমৃতা প্রীতমের পাঞ্জাবি গল্প ‘Hauka’ (১৯৬২)-র বাংলা 888sport app download apk latest version।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.