দু ডলার দামের পানি

888sport app download apk latest version : মেহবুব আহমেদ

ঘোড়ার পিঠে চড়ানো গদি চেপে ধরে ছোট তুলে রেমিজিয়া বলল, ‘পারগেটরির আত্মাদের জন্যে এই নিকেলটা রাখ, ফিলিপা। বৃষ্টি হোক।”

খরায় জ্বলে যাচ্ছে এ অঞ্চল, তাতেই রেমিজিয়ার এই বিলাপ। সিগারেট টেনে চলল ফিলিপা, কোনো উত্তর দিল না। শেষে চোখ তুলে আকাশটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। নিঃসীম পরিষ্কার আকাশ, সামান্য ছায়া পর্যন্ত নেই। অসহ্য রাগ হয় এমন ঝকঝকে উজ্জ্বল। ‘মেঘের কোনো চিহ্ন নেই’, বলে চোখ নামিয়ে নিল ফিলিপা। পোড়া ফসলের ক্ষেতে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের নিচে রয়েছে একটি কুঁড়েঘর, কাছাকাছি আরো কিছু ঘর আছে, আরো দূরে এবং দূরান্তরে রয়েছে আরো ঘর-গৃহস্থালি। ঘরে ঘরে লোকজনের একই চিন্তা, একই হাহাকার। মাসের পর মাস কেটে যাচ্ছে, এক ফোঁটা বৃষ্টি নেই। পুরুষেরা পাহাড়ের ঢালের পাইনবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই আগুনের উত্তাপে জলে গেছে শস্যমঞ্জরীর নরম পাতা, জলজলে আলোর রেখা পেছনে নিয়ে পাখির মতো উড়ে গেছে স্ফুলিঙ্গ, ফেটে পড়েছে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডে। একটিমাত্র উদ্দেশ্যে এসব করা। ধোঁয়া উড়ে যাবে আকাশে আর তাতেই বৃষ্টি হবে। কিন্তু কিচ্ছু হলো না, কিচ্ছু না।

‘এই খরা শেষ করে দেবে, রেমিজিয়া; বাকি যে কটা বছর ছিল আমাদের একেবারে শেষ’, বলল ফিলিপা।

খরার শুরুতেই প্রথম ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মাটির আর্দ্রতা শুষে নেবার পর স্রোতস্বিনীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। একটু একটু করে প্রশস্ত হচ্ছে নদীখাত; মাটির পাতলা আবরণ নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে পাথরের অগ্রভাগ, ভাটির টানে ভেসে যাচ্ছে মাছ। মাসের পর মাস শুকিয়ে ছোট ছোট নদীগুলি হয় জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে, না হয় তাতে কেবল কাদা পানিটুকু অবশিষ্ট রয়েছে। পানির অভাবে, হতাশায় ছোট ছোট ক্ষেত খামার ফেলে ঘোড়ার পিঠে মালপত্র বেঁধে চলে যেতে লাগল বহু পরিবার। কোনো এক খরাবিহীন অঞ্চলের খোঁজে।

কিন্তু রেমিজিয়া গেল না। বৃষ্টি একদিন হবেই। কোনো এক বিকেলে মেঘ জমবে আকাশে, রাতে রিমঝিম সুরে বৃষ্টি নামবে রোদে জ্বলা তালপাতার ছাদে।

সেই যে ছেলেকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে গেল তারপর থেকে নাতিটাকে নিয়ে একা হয়ে গেছে রেমিজিয়া। চুপচাপও হয়ে গেছে সেই থেকে আর সঞ্চয়ী হয়েছে। একটা লাউয়ের খোলে কিছুটা ছাই বরে তাতে একটি একটি করে পেনি জমায়। ঘরের পেছনের জমিটুকুতে ভুট্টা আর মটর বোনে। ঘরে মুরগি আছে, শুয়োর আছে, ওদের জন্যে ভুট্টা আর বিনটা ওরা নিজেরা খায়। দু তিনমাস পর বেছে বেছে মোটা-তাজা মুরগিগুলো শহরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে আসে। একটা শুয়োর গোলগাল হলে সবাই জবাই করে নিজেই মাংস বিক্রি করে। তারপর চামড়া থেকে তেল ছাড়িয়ে তেল আর চামড়া দুটোই শহরে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। ঘরের দরজা বন্ধ করে, প্রতিবেশীকে নজর রাখতে বলে, নাতিটাকে লালচে-বাদামি ঘোড়ায় বসিয়ে নিজে পেছন পেছন হেঁটে যায়। ফিরতে রাত হয়ে যায় সেদিন।

নাতিটাকে বুকে আঁকড়ে এভাবেই চলে যাচ্ছিল ওর জীবন। বলত, ‘তোর জন্যেই আমি কাজ করি, খেতে-পরতে কষ্ট না হোক তোর। বয়স হলো না, মরে গেল তোর বাপটা; ওসব আর না।’

বাচ্চাটা তাকিয়ে থাকে দাদির দিকে। ও কতা তেমন বলে না আর। লম্বায় তিন ফুট হয়েছে। কী হয়নি ভোর হবার আগেই বগলে দা নিয়ে বেরিয়ে পড়বে। যখন সূর্য ওঠে, তখন ও ঝুঁকে পড়ে ক্ষেতে কাজ করছে।

স্বপ্নগুলোকে বুকের গভীরে লালন করে রেমিজিয়া। ভুট্টা গাছ বাড়তে দেখে, বিন পাকতে দেখে, খোঁয়াড়ে শুকর ছানার ডাক শোনে, সন্ধেবেলা মুরগির বাচ্চাগুলো যখন উড়ে গিয়ে ঘরে বসে তখন ও গুনে গুনে রাখে। এরই মধ্যে মাঝেমাঝে লাউটা নামিয়ে তামার পয়সাগুলো গুনে দেখে। তামার পয়সা অনেক হয়েছে, শেষে রুপোর পয়সাও। সব আকারের।

পয়সাগুলোর ওপর শিহরিত হাত বুলোয় রেমিজিয়া আর স্বপ্ন দেখে। ওর চোখে ভাসতে থাকে ওর ওর নাতির বিয়ের বয়স হয়েছে, সুন্দর একটা ঘোড়ায় চড়েছে বা হয়তো কাউন্টারের পেছনে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে রামের বোতল, কাপড়, চিনি। আপন মনে হাসে ও, টাকা ভরে লাউটা ঝুলিয়ে রাখে। তারপর বাচ্চাটার ওপর ঝুঁকে পড়ে দেখতে থাকে। ততক্ষণে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে সে।

সবই ভালো চলছিল। একেবারে ঠিকঠাক। তারপর কী জানি কেন এই খরা শুরু হলো। এক মাস কেটে গেল, কোনো বৃষ্টি নেই, তারপর দু মাস গেল, তিনমাসও গেল। যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছে কথা একটিই, ‘কী ভয়ানক অবস্থা’!

নিঃশব্দে মাথা নাড়ে রেমিজিয়া। মাঝে মাঝে বলে, ‘পারগেটরির আত্মাগুলোর জন্যে আমাদের কিছু মোমবাতি জ্বালানো দরকার।’ কিন্তু তবু বৃষ্টি হলো না। পাতার ভেতর শস্যমঞ্জরি শুকিয়ে গেল; শুকিয়ে গেল শূকরদের গড়াগড়ি দেবার জলাভূমিগুলো। মাঝে মাঝে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়, দিগন্তরেখায় ঘন ধূসর মেঘ জমে, পাহাড়ের গা বেয়ে বইতে থাকে ধুলো ওড়ানো ভেজা বাতাস। পথ চলতি মানুষ বলতে বলতে যায়, ‘আজ রাতে বৃষ্টি হবে’। কেউ বলে, ‘শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি হবে তাহলে।’ গভীর আস্থায় এক এক নিগ্রো বলে, ‘বৃষ্টিতো এসেই গেল।’

বিছানায় শুতে গিয়ে প্রার্থনা করে রেমিজিয়া। পারগেটরির আত্মাদের উদ্দেশে আরো মোমবাতি দেবার শপথ নিয়ে অপেক্ষা করে মাঝেমাঝে দূর থেকে যেন বৃষ্টির গর্জন শুনতে পায়। আশা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু সকালে দেখে আকাশ ঝকঝকে কাপড়ের মতো পরিষ্কার।

মানুষের মন ভেঙে যেতে লাগল। চেহারা ভেঙে গেল সবার। মাটি তেতে আগুন হয়ে গেছে। এলাকার স্রোতস্বিনীগুলো সব শুকিয়ে গেছে। পাহাড়ের গায়ে গাছপালা জ্বলে গেছে। শূকরের খাবার বলে কিছু থাকল না। গাধাগুলো পোকামাকড়ের আশায় ঘুরে ঘুরে মরতে লাগল। গবাদিপশুগুলো জলাশয়ের খোঁজে ঘুরে ঘুরে পথ হারিয়ে গাছের মূল চিবিয়ে খেতে শুরু করল। একটিন পানির জন্য আধাবেলা হাঁটতে হয় বাচ্চাদের। বীজ আর পোকামাকড় খুঁজতে খুঁজতে হারিয়ে যাচ্ছে মুরগিগুলো। বিলাপ করতে লাগল চারদিকে সবাই, ‘এইবার শেষ, রেমিজিয়া, এইবার শেষ।’

একদিন সকালে ঠাণ্ডা থাকতে থাকতে রোজেন্দো ওর বৌ, দুই বাচ্চা, গরু এবং একটা কুকুর নিয়ে ঘোড়ার পিঠে মালপত্র বোঝাই করে রেমিজিয়ার ঘরের সামনে দিয়েই চলে যাচ্ছিল, বলল, ‘আর সহ্য হয় না রেমিজিয়া; কার যে কুনজর পড়ল জায়গাটার ওপর! রেমিজিয়া ঘরে গিয়ে দুটো তামার পয়সা নিয়ে ফিরে এল, বলল, ‘পারগেটরির আত্মাদের উদ্দেশে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিও আমার নামে।’

পয়সা হাতে নিয়ে দেখে নিল রোজেন্দো, তারপর মাথা তুলে বহুক্ষণ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। ‘যখনই ইচ্ছে হবে চলে এস তাবেরায়। ওখানেই দেখি একটা জায়গা যদি পাই। তোমার জন্যে দরজা সবসময় খোলা।’

‘আমি এখানেই থাকব, রোজেন্দো। এরকম আর কতদিন! রোজেন্দো চলে গেল। দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাচ্ছিল ওর পরিবার। রোদে ঝলসে যাচ্ছে দূরের পাহাড়গুলো।

ছেলেটা পুড়ে নিগ্রোদের মতো হয়ে গেল। একদিন এসে বলল, ‘দাদি, একটা শুয়োর মনে হয় মরে গেছে।’

দ্রুত খোঁয়াড়ে গেল রেমিজিয়া। শুকিয়ে দড়ি দড়ি শুয়োরগুলো সব এক জায়গায় বিড় করে কখনো হাঁপাচ্ছে, কখনো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করছে, কখনো চিৎকার করছে রেমিজিয়া সবাইকে সরিয়ে দিয়ে দেখতে পেল, ওদেরই একজনের হাড়গোড়ের অবশিষ্ট পড়ে রয়েছে। ব্যাপারটা ও বুঝতে পারলো। মৃতের মাংস খেয়েছে জীবিতরা। এবার ও স্থির করলÑ ওদের পানিটা নিজে এনে দেবে, যাতে এই দুঃসময়ে ওরা অন্তত বেঁচে থাকতে পারে।

ভোরবেলা লালচে-বাদামি ঘোড়াটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ত রেমিজিয়া। ফিরত দুপুরে। নির্বাক, অক্লান্ত মানুষটা জিদ করে চারিয়ে যেতে লাগল। এতটুকু অভিযোগ কখনো করেনি। ওর পয়সার লাউ হালকা হয়েছে। কিন্তু পারগেটরির আত্মাদের দয়া পেতে হলে কিছুটা সঞ্চয় তো উৎসর্গ করতেই হবে। সবচেয়ে কাছের নদীটিতে যেতেই বড় দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়। ঘোড়াটা ক্লান্ত হয়ে যাবে তাই ও হেঁটেই যায়। ছুরির মতো তীক্ষ্ম হয়ে বেরিয়ে পড়েছে ঘোড়ার পেছনের হাড় আর গলাটা এত শুকিয়ে গেছে যে মাথাটাই ওর সোজা রাখা দায় হয়েছে। মাঝে মাঝে ওর হাড়ে হাড়ে বেজে শব্দ হয়।

 লোকজন অবিরত চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন পরিত্যক্ত হচ্ছে আরো একটি ঘর। মাটি ফেটে চৌচির। সবুজ বলতে আছে কেবল কাঁটাঝোপগুলো। প্রতিবার ও নদীতে গিয়ে দেখছে, পানি আরো নেমে গেছে। সপ্তাহের শেষে দেখা গেল, যতটুকু পানি ততটুকু কাদা। দুসপ্তাহ পর সেই নদীখাত পুরোনো পাথুরে রাস্তার মতো হয়ে গেল। নুড়িগুলো থেকে সূর্যের আলো ঠিকরোতে লাগল। ঘোড়াটা সামান্য একটু খাবারের খোঁজে পাগলের মতো ঘোরে আর লেজের বাড়িতে মাছি তাড়াবার চেষ্টা করে।

তবু রেমিজিয়া বিশ্বাস হারাল না। আকাশে ও তন্নতন্ন করে বৃষ্টির চিহ্ন খোঁজে।

নতজানু হয়ে ও প্রার্থনা করে, ‘পারগেটরির পুণ্যাত্মারা। তোমাদের দয়া না হলে আমরা যে জ্বলে পুড়ে মরে যাব।’ 

ক দিন পর এক সকালে দেখা গেল ঘোড়াটা দাঁড়াতে পারছে না। ওইদিনই বিকেলে নাতিটা বিছানায় এলিয়ে পড়ল। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল ওর গা। তখন রেমিজিয়া ঘরে ঘরে হাতজোড় করে ফিরতে লাগল, দূরের ঘরগুলিও বাদ দিল না, ওর একটিই অনুরোধ, চল, আমরা সেন্ট ইসিডোরের নামে প্রার্থনা করি।”

এক রবিবারের ভোরেই তারা যাত্রা শুরু করল। নাতিটাকে কোলে তুলে নিল রেমিজিয়া। জ্বরে ভারি মাথাটা নেতিয়ে পড়েছে দাদির কাঁধের ওপর। পনেরো-বিশজন 888sport promo code, পুরুষ আর ছেঁড়াখোড়া কাপড় পরা রোদে জ্বলা বাচ্চারা নিষ্ফলা পথে যেতে যেতে শোক-কথা আউড়াতে লাগল। ওদের হাতে ছিল কুমারী মেরীর ছবি, ওরা মোমবাতি জ্বালাল, নতজানু হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল। মিছিলের অগ্রভাগে ছিল কঠোর চেহারার এক জায়গাটা হাতের ইশারায় দেখিয়ে দাড়িওয়ালা বুড়ো মানুষ। সে তার ইস্পাতকঠিন জ্বলন্ত চোখ বলল, ‘সব ভেসে যাচ্ছে, সকালে রওয়ানা দিয়েছি, তিন ঘণ্টা হয়ে গেল, সবখানে খচ্চরটার পেট পর্যন্ত পানি।’ অন্ধকার হয়ে আসছিল, লোকটা তাই উঠে পড়ল। চারদিক কালো দেখে রেমিজিয়া অনুরোধ করেছিল না যাবার জন্যে। কিন্তু লোকটি বলল, ‘অবস্থা আরো খারাপ হবে, যত আছে সব নদীনালা আজ কূল ছাপিয়ে যাবে।’ আকাশে তুলে হাড় বার করা হাতে খোলা বুকের পাঁজর চাপড়ে প্রার্থনা করল, ‘সেন্ট ইসিডোরো, মেঘ দাও, পানি দাও; সেন্ট ইসিডোরো…।’

ওরা সবাই চলে গেছে। রোজেন্দো গেল, দুর্বল-মতি মেয়েটাকে নিয়ে তরিবিও গেল, ফিলিপা গেল; গেল আরো অনেকে এবং 888sport appরা। সবাইকে ও মোমবাতির জন্যে পয়সা দিয়েছে। শেষ যে ক জনা গেল তাদের ও চিনত না, ওদের সঙ্গে অসুস্থ এক বুড়ো মানুষ ছিল, দুঃখের ভারে পিষ্ট হয়ে গিয়েছিল ওরা। তাদের কাছেও ও মোমবাতির পয়সা দিয়েছিল।

ওর ঘর থেকে কঠিন পাহাড় পর্যন্ত কোথাও কিছু ছিল না। যে দৃষ্টির গতিরোধ করবে। কিছু নেই, কেবল ধু-ধু করছে রোদে ঝলসানো মাঠপ্রান্তর। নদীখাতগুলো পর্যন্ত দেখা যায়।

বৃষ্টির আশা ছেড়ে দিল সবাই। যাবার আগে বৃদ্ধেরা বলে গেল ঈশ্বরের অভিশাপ, যুবকরা বলল কারো কুনজর। রেমিজিয়া কিন্তু আশা ছাড়েনি। কয়েক ফোঁটা পানি ও কোনোমতে যোগাড় করছিল। আবার সব যে প্রথম থেকে শুরু করতে হবে তা ও বুঝতে পারছিল। প্রায় শূন্য হয়ে গেছে পয়সার লাউটা। আর ওই ছোট এক ফালি বাগান খটখটে হয়ে রয়েছে, রাস্তার মতো। আছে কেবল ধুলো আর রোদ, রোদ আর ধুলো। মানুষের পাপে ঈশ্বরের অভিশাপ পড়েছে জায়গাটার ওপর কিন্তু রেমিজিয়ার বিশ্বাসের কাছে ঈশ্বরের অভিশাপ কি দাঁড়াতে পারে ?

পারগেটরির এক কোণায় কোমর সমান আগুনে দাঁড়িয়ে পুণ্যাত্মারা তাদের হিসাবের খাতা দেখছিল। আগুনে পুড়ে পবিত্র হবার জন্যে এখানে রয়েছে তারা, কিন্তু নিষ্ঠুর পরিহাসে পৃথিবীতে বৃষ্টি দেবার, পানি দেবার ক্ষমতা তাদেরই হাতে। এক বুড়ি বলে উঠল, “পাসো হোন্দোর রেমিজিয়া-দু’ডলারের মোমবাতি দিয়েছে, সুতরাং ওখানে বৃষ্টি দিতেই হবে।’ শুনে চমকে উঠল তার সঙ্গীসাথিরা। ‘দু ডলার! কী আশ্চর্য!’

একজন জানতে চাইল, ‘এতদিন তার জন্যে কিছু করা হয়নি কেন? মানুষের সঙ্গে এরকমই ব্যবহার করতে হয় নাকি?’

‘পানি তাকে দিতেই হবে’, গর্জে উঠল একজন। এ আদেশ মুখে মুখে পৌঁছে গেল সবার কাছে। কথাটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

‘পাসো হোন্দোতে দু ডলারের পানি।’

পাসো হোন্দোতে দু ডলার দামের পানি।’ পুণ্যাত্মারা সকলে খুব বিস্মিত হয়েছে, কিছুটা সন্ত্রস্তও। কারণ এতটা পানির ফরমাশ তারা আগে কখনো পায়নি,

এমনকি এর অর্ধেকেরও না, এক-তৃতীয়াংশেরও না। দু সেন্ট দামের মোমবাতির জন্যে তারা এক রাতের বৃষ্টি দিয়েছে এবং একবার বিশ সেন্টের মোমবাতির জন্যে ছোটখাট এক বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। তারা হুঙ্কার দিয়ে বলল, ‘পাসো হোন্দোর জন্যে দু ডলার দামের পানি।’ দু ডলারের জন্যে যে পরিমাণ পানি ঢালতে হবে তা ভেবে রীতিমতো চমকে গেল পারগেটরির পুণ্যাত্মারা, এদিকে ঈশ্বর তাঁর অপরিসীম দয়ায় যতদিন না এদের নিজের কাছে ডেকে নেবেন ততদিন এই অনন্ত আগুনে পুড়েই যেতে হবে। পাসো হোন্দোর আকাশে মেঘ জমতে লাগল। একদিন ভোরে রেমিজিয়া পুবদিকে তাকিয়ে এককালি সরু কালো মেঘ দেখতে পেল। চাবুকের মতো সরু, শোকচিহ্নধারী ফিতের মতো কালো। এক ঘন্টা পর দেখা গেল রাশি রাশি মেঘের স্তূপ ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে চলেছে। দু ঘণ্টা পর পাসো হোন্দোর ওপর রাত্রির অন্ধকার নেমে এল। প্রচণ্ড আশঙ্কায়, এই আনন্দ মিথ্যে হয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কায় রেমিজিয়া নিঃশব্দে কেবল দেখে গেল। নাতিটা এখনো বিছানায়, এখনো তার জ্বর। হাড় ক খানাই আছে এমন রোগা হয়েছে। চোখ দুটো কোটরে ঢুকে গেছে। মাথার ওপর বজ্রনির্ঘোষ হলো। রেমিজিয়া ছুটে দরজার কাছে গেল। পাহাড় থেকে এক ঝাপটা বৃষ্টি পলায়নপর ঘোড়ার মতো এগিয়ে আসছিল ওর ঘরের দিকে। দু হাতে নিজের গাল চেপে ধরে চোখ দুটো বিস্ফারিত করে ও দেখল বৃষ্টি নামছে শেষ পর্যন্ত। ঝমঝম শব্দে, বড় বড় ফোঁটায় সেই প্রবল বর্ষণ রাস্তায় এসে পৌঁছাল, তালপাতার ছাদে আঘাত করল, ঘরের ওপর লাফিয়ে পড়তে লাগল এবং শেষে মাঠে-প্রান্তরে নামতে শুরু করলো। রেমিজিয়ার গায়ে যেন আগুন লেগেছে এমনভাবে ও দৌড়ে গিয়ে পেছনের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখল, মোটা ধারায় নেমে আসছে পানি আর তাপিত মাটি ঘন বাষ্প ছেড়ে দিতে দিতে গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে। আনন্দে ও ছুটে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘আমি জানতাম, আমি জানতাম, জানতাম।’

বৃষ্টির ফোটা ওর মাথায় বাড়ি খেয়ে কপালের দু পাশ বেয়ে গড়িয়ে যেতে লাগল। ওর চুল ভিজে গেল।

বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টি, বৃষ্টি’, দু’হাত আকাশে তুলে মন্ত্রের মতো বলতে লাগল রেমিজিয়া। ‘আমি জানতাম’।

ছুটে ঘরে গিয়ে নাতিটাকে তুলে বুকে চেপে ধরল তারপর ওকে ওপরে উঠিয়ে পানি দেখাতে লাগল, ‘দ্যাখ, দেখেছিস পানি, খেয়ে দ্যাখ পানিটা’। ও আদরে, আদরে বাচ্চাটাকে যেন পানির শীতল, প্রশান্ত, আনন্দোচ্ছল প্রাণ দিয়ে ভরিয়ে দিতে চাইল। বাইরে যখন ঝড়ের প্রবল গর্জন রেমিজিয়া ঘরে বসে তখন স্বপ্ন দেখছে। আপন মনে বলতে লাগল, ‘জমিটা তৈরি হয়ে গেলেই আমি মিষ্টি আলু, ধান, মটর আর ভুট্টা বুনব। বীজ কেনা যাবে, কিছু পয়সা তো আছে। বাচ্চাটা ভালো হয়ে যাবে। কেন যে লোকজন সব চলে গেল। বৃষ্টি হচ্ছে শুনে তরিবিওর চেহারাটা কেমন হয় দেখতে পেলে হতো। সবাই মিলে কত প্রার্থনা করল, কেউ তো থাকল না, সুবিধেটা কেবল আমিই পাব। লোকজন ফিরে আসবে হয়তো বৃষ্টির কথা শুনলে।’ শান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে নাতিটা। পাসো হোন্দোর ছোট বড় নদীগুলোর শুষ্ক খাতে কাদাপানি বইতে শুরু করল, ঘুরপাক খেতে লাগল পাথরগুলোর চারপাশ দিয়ে। পাহাড়ের গা বেয়ে নামল কাদা মেশানো লাল পানি। অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষণাঘাতে ভেঙে ভেঙে পড়ছে তালপাতার ছাদ। রেমিজিয়ার ঝিমুনি ধরা চোখে ভেসে উঠলো ভুট্টা, ধান আর মটর চারার সতেজ, সুপুষ্ট ক্ষেত। দোল খাচ্ছে বাতাসে। তারপর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল ও।

বাইরে অবিরাম বৃষ্টির গর্জন চলতে লাগল। এভাবে এক সপ্তাহ গেল, দশ দিন গেল, দু সপ্তাহও গেল। বৃষ্টি হয়েই চলেছে। এক ঘণ্টার বিরতিও হলো না। চাল, তেল আর লবণ যেটুকু ছিল ফুরিয়ে গেল সব। বৃষ্টির মধ্যেই রেমিজিয়া খাবার কিনতে বেরোল। সকালে বেরিয়ে ফিরে এল মধ্যরাতে। নদীনালা, জলাভূমি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না, ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। ডুবতে শুরু করলো মাঠ-প্রান্তর।

একদিন বিকেলে বড় এক খচ্চরের পিঠে চড়ে এক লোক যাচ্ছিল। রেমিজিয়া তাকে ডেকে থামাল। লোকটি দরজার কাছে আসতে তাকে কিছুক্ষণ ঘরে বসে বিশ্রাম নিয়ে যাবার আমন্ত্রণ জানাল। খচ্চরটা দরজার ভেতর মাথা ঢুকিয়ে বৃষ্টিতে বাইরে দাঁড়িয়ে রইল।

একটু চুপ করে থেকে লোকটি বলল, ‘আকাশে কেবল পানি আর পানি। এই নিচু জায়গাটায় আমি কিন্তু থাকতাম না এখানে পাহাড়ের ওপর চলে যেতাম।’

‘আমি যাব এখান থেকে? না, না, এরকম আর কতদিন থাকবে।’

‘কিন্তু বন্যা হচ্ছে তো। আমি ভয়ানক কিছু বন্যা দেখেছি, ঘরবাড়ি, মানুষজন, পশুপাখি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আজ ছোটখাট যতগুলো নদী পার হয়ে এলাম- সবকটার পানি বাড়ছে দেখলাম। পাহাড়ের গা বেয়েই পানিটা বেশি আসছে, প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে ওসব জায়গায়।’

‘খরায় আরো কত কষ্ট পেয়েছি। সবাই পালিয়ে গেল, আমি একাই সহ্য করে আছি।’

‘খরার মানুষ মরে না, কিন্তু পানি ডুবিয়ে মারে।’ পেছনে ফেলে আসা জায়গাটা হাতের ইশারায় দেখিয়ে বলল, ‘সব ভেসে যাচ্ছে, সকালে রওয়ানা দিয়েছি, তিন ঘণ্টা হয়ে গেল, সবখানে খচ্চরটার পেট পর্যন্ত পানি।’ অন্ধকার হয়ে  আসছিল, লোকটা তাই উঠে পড়ল। চারদিক কালো দেখে রেমিজিয়া অনুরোধ করেছিল না যাবার জন্যে। কিন্তু লোকটি বলল, ‘অবস্থা আরো খারাপ হবে, নদীনালা যত আছে সব আজ কূল ছাপিয়ে যাবে।’

নাতিটা ঘ্যানঘ্যান করছিল, ওকে দেখতে চলে গেল রেমিজিয়া। লোকটা ঠিকই বলেছিল। ঈশ্বর, কী যে একটা রাত! বিদ্যুৎ ঝলকানি আর বজ্রপাতসহ সারারাত একভাবে ভয়াবহ গর্জন চলতে লাগল। দরজার নিচের ফাটল দিয়ে পাক খেয়ে খেয়ে নোংরা পানি ঢুকে মেঝেতে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। দূরে গর্জন করছিল বাতাস আর মাঝে-মাঝে গাছ ভেঙে পড়ার শব্দ হচ্ছিল। দরজাটা খুলে দিল রেমিজিয়া। দূর আকাশের এক বিদ্যুৎ ঝলকে পাসো হোন্দোর রূপ দেখতে পেল ও। কেবল পানি আর পানি। পাহাড়ের গা বেয়ে ছুটে নামছে পানির ঢল আর কোথায় সেই বড় রাস্তা! সেখানে এক গর্জনশীল নদী।

‘তাহলে কি বন্যাই’? এই প্রথম সন্দেহ হলো রেমিজিয়ার এবং আপন মনে প্রশ্নটা করল ও।

দরজা বন্ধ করে দিয়ে গরের ভেতর গেল রেমিজিয়া। ওর বিশ্বাস ছিল, অপরিসীম বিশ্বাস। সে বিশ্বাস খরা যা হয়েছিল তারও চেয়ে কঠিন, বৃষ্টি যা হতে পারে তারও চেয়ে প্রবল। ঘরের বাইরেটা যেমন ভেজা,  ভেতরটা ঠিক তেমনই। চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ছে, গা বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে কোনোরকমে গুটিসুটি মেরে বিছানায় পড়ে রয়েছে বাচ্চাটা।

মধ্যরাতে গরের পাশে ধূপধাপ শব্দে রেমিজিয়ার ঘুম ভেঙে গেল। বিছানা চেড়ে উঠতেই বুঝতে পারল ঘরের ভেতর হাঁটুপানি।

কী রাত! কী যে একটা রাত! দমকে দমকে পানি আসছে, চারদিক ভেসে যাচ্ছে, সবকিছু ডুবিয়ে দিচ্ছে। আর প্রচণ্ডভাবে বিদ্যুৎ ঝলকে উঠল, ছেঁঢ়াখোড়া কালো আকাশটাকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বজ্রপাত হলো। ভয় পেয়ে গেল রেমিজিয়া, প্রাণপণে বলে উঠল, ‘মা মেরী, দয়া করো, মা মেরী!’

কিন্তু এখানে তো মেরী বা ঈশ্বরের কিছু করার নেই, বিষয়টা সম্পূর্ণই পারগেটরির আত্মাদের হাতে। তারা ওদিকে চিৎকার করে বলে যাচ্ছে, ‘এতক্ষণে আধ ডলারের পানি হয়েছে। মাত্র আধ ডলারের পানি।’ পানির তোড়ে ঘর যকন ভেসে যাবে মনে হলো তখন আশা ছেড়ে দিয়ে রেমিজিয়া নাতিটাকে কোলে তুলে নিল। ওকে যথাসম্ভব শক্ত করে বুকের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে পানির ভেতর দিয়ে হেঁটে গিয়ে কোনোরকমে দরজাটা টান দিয়ে খুলে বেরিয়ে পড়ল। কী যে কষ্টে ও থপথপ করে এগিয়ে চলল তা ওই জানে। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে কিছুই জানে না। বাতাসে ওর চুল খুলে গেছে। দূরে ঝলকাচ্ছে বিদ্যুতের সবুজ আলো। পানি বাড়ছে তো বাড়ছেই। নাতিটাকে ও আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। হোঁচট খেতে খেতে কোনোরকমে ও পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল আর মুখে কেবল বলছে, ‘মা মেরী!

মা মেরী!’ বাতাস ওর গলার স্বর ছিনিয়ে নিয়ে ছড়িয়ে দিতে লাগল সেই বৃক্ষহীন জলনিমগ্ন প্রান্তরে।

‘দয়া করো মাগো! দয়া করো মা মেরী!’

অবিরাম গর্জন করছে বাতাস। বজ্রপাতে ছিঁড়েখুড়ে যাচ্ছে আকাশ। ওর চুল আটকে গিয়েছিল এক কাঁটা গাছের গুঁড়িতে। পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, গাছপালা। উন্মত্ত চিৎকারে পারগেটরির আত্মারা বলে যাচ্ছে, ‘যথেষ্ট৫ হয়নি, এখনও যথেষ্ট হয়নি। দুডলার দামের পানি দিতে হবে, দুডলার, দুডলার।’

১. নিকেল : আমেরিকা ও কানাডার পাঁচ সেন্ট মূল্যমানের মুদ্রা।

২. পারগেটরি : ক্যাথলিক মতে স্বর্গলাভের প্রস্তুতি হিসেবে আত্মাকে ছোটখাট পাপমুক্তির জন্য এই স্থানটিতে আগুনে রেখে প্রায়শ্চিত্ত করানো হয়। এখানে আত্মার অগ্নিশুগ্ধি হয়।

লেখক-পরিচিতি হুয়ান বস : ডমিনিকান রিপাবলিকের লা-ভেগা শহরে  ১৯০৯ সালে হুয়ান বসের জন্ম। চারপাশের দারিদ্র্য তাঁকে গভীরভাবে বিচলিত করে। মূলত স্বশিক্ষিত বস সান্তো দমিনিগোর একটি কলেজে 888sport live football পড়েন এবং ১৯৩৩ সালে তার গল্প সংকলন দ্য রয়েল হাইওয়ে (ক্যামিনো বিয়েল) প্রকাশিত হয়। এরপর আসে ইন্ডিয়ান লেজেন্ডস নামে আরেকটি গল্পসংগ্রহ এবং একটি 888sport alternative link। ১৯৩৭ সালে ভিকটেটর ক্রুজিলো হাইতির পনোরো হাজার অনুপ্রবেশকারীকে হত্যা করার পর বস দেশত্যাগী হন। চব্বিশ বছরের পরবাসে তিনি ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় গেছেন; কিউবা, চিলি ও ভেনিজুয়েলায় কেটেছে তার বেশ কিছু বছর। এ সময়ে তিনি শিক্ষকতা করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন এবং প্রচুর লিখেছেন। ১৯৬১ সালে ক্রজিলো নিহত হবার পর ১৯৬২ সালে বস প্রেসিন্টে নির্বাচিত হন। কিন্তু সাত মাস পরই তাঁকে উৎখাত করা হয়। আবার তিনি পুয়ের্টোরিকো ও ইউরোপে দেশানত্রী হন এবং পরে তাঁর দেশের রাজনীতিতে আমেরিকার হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। অশান্ত রাজনৈতিক জীবন সত্ত্বেও তিনি প্রচুর লিখেছেন এবং অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে দেশের বাইরে। তবে তিনি ছোটগল্পের জন্যৌই পরিচিত হয়েছেন বেশি এবং এর অনেকগুলিই জাদুবাস্তবতার চমৎকার উদাহরণ। তাঁর কৌতুকবোদের স্পর্শও রয়েছে প্রতিটি রচনায়। এখানে অনূদিত গল্পটি ১৯৪১ সালে লেখা। ২০০১ সালের ১ নভেম্বর হুয়ান বসের মৃত্যু হয়।