‘নির্বাসন’ বলতে আসলে কী বোঝায়! নিজের ‘ঘর’ থেকে দূরে চলে যাওয়া, নাকি দূরে থেকেও সারাক্ষণ/ কখনো ঘরকে এড়াতে না পারা? নির্বাসন মানুষের জীবনে কীভাবে ঘটে, কেমন করে ঘটে, নির্বাসন মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন নিয়ে আসে, নির্বাসন কি কখনো এড়ানো যায়, নিজের ঘরে থেকেও কি কখনো নির্বাসিত হতে হয়, হওয়া যায়! নির্বাসন কতোটা শারীরিক, কতোটা মনোজাগতিক! যারা নিজেরা নিজেদেরকে ‘প্রবাসী’ করেছেন, বা যারা শেকড় থেকে উৎপাটিত অথবা শেকড় ছিন্ন করেছেন তাদের সঙ্গে কী তফাৎ, যাদের নেই কোনো শেকড়!
প্রতিটি নির্বাসিত মানুষের ‘নির্বাসনে’র ধরন, প্রকৃতি অন্যের থেকে আলাদা; কারণও। এর পেছনে যেমন সামাজিক-রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, তেমনি রয়েছে মানসিক কারণ। এছাড়া নির্বাসিত সাধারণ মানুষ থেকে নির্বাসিত লেখক বা রাজনীতিকের হাহাকার, বেদনা বা দীর্ঘশ্বাসের ধরন একেবারেই ভিন্ন। কেউ কেউ ‘অন্ধকারে’ নিজের শেকড় খোঁজেন, কেউ খোঁজেন 888sport sign up bonusতে। নির্বাসিত সকল মানুষই বেদনাক্রান্ত। তাদের কাছে শেকড় বা ঘর থেকে দূরে থাকার বেদনার চেয়ে ‘দূরে’ থাকতে না পারার বেদনা অনেক বেশি। বাহ্যিকভাবে তারা স্বদেশ থেকে দূরে, কিন্তু ঘুমে, জাগরণে, চিন্তায়, কর্মে, স্বপ্নে ও স্বপ্নহীনতায়, এমনকি জিহবার আড়ষ্টতায়ও তাদের জুড়ে থাকে স্বদেশ-চেতনা।
যদি নির্বাসিত ব্যক্তিটি লেখক বা 888sport live chatী হন, তাহলে তার ভেতরে উন্মুলতা, মূলোৎপাটন বা নির্বাসন কী ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে! কেন সেটা অন্যদের থেকে আলাদা! প্রাথমিকভাবে বলতে গেলে, তারা সবাই ঘরহীনতায় বা ঘর-বিচ্ছেদে বিরহী, কাতর। 888sport sign up bonusর রক্তক্ষরণ, হারানোর যন্ত্রণা, শঙ্কা, ক্রোধ, নিজেকে নিজের মতো করে সৃষ্টি করতে না পারার হতাশা, আত্ম-প্রহারে জর্জরিত, দীর্ণ হওয়ার চাপ এবং সর্বোপরি, ভিন্ন ‘গ্রহে’ সারাক্ষণ অচেনা বা পরবাসী হওয়ার গ্লানি, নিয়ত আচ্ছন্ন করে রাখে। কিন্তু লেখকের বেদনা কিছুটা ভিন্নতর। কাগজের ওপর যখন তিনি কালির আঁচড় দিতে যান, তখন ভিন্ন গোলার্ধের কোনো স্থলখণ্ডের সীমানাতে
তার ‘ঘর’ বানাতে হয়, তার ওপর হয়তো নিজের ফেলে আসা শেকড়কে জড়াতে হয়, কল্পনায় সেখানে ফিরে যেতে হয়, বারবার, প্রতিদিন জীবনের দিনানুদৈনিকতার ওপর পুনর্স্থাপন করতে হয় 888sport sign up bonusতে ধরে রাখা আরেক জীবন, জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুমূহূর্তরাজিকে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ফেলে আসা জীবনকে আরেক অর্থে ঝেড়েও ফেলতে হয়, যেমন করে পুরনো ‘ঋণ’কে পরিশোধের মাধ্যমে ঝেড়ে ফেলতে হয়। খুঁজতে হয় নিজের ফেলে আসা জীবনকে নতুন জীবনের মাঝে, সে-খোঁজাতে বিড়ম্বনাও রয়েছে। প্রত্যেকটি নির্বাসিত মানুষের যন্ত্রণার একটি বড় প্রকাশ ঘটে তার এই নিয়ত নিজেকে খোঁজার মাঝেই, যার ফলে তাকে নিজের পোশাক, খাদ্য, ভাষা, 888sport live chatকলা ও পুরনো প্রেমের নতুন নির্মাণে ডুবে থাকতে হয়। যখনই সেই পুনর্নির্মাণে সে কিছুটা সফল হয়, তখনই তাকে আরেক গভীরতর বেদনা আচ্ছন্ন করে, যে-বেদনা অন্য আরেক বিহ্বলতা ও অন্তর্গত ‘দূরত্বে’র জন্ম দেয়। এই নির্মাণ ও হারানোর বৃত্তে ফিরে ফিরে আসে নির্বাসিত মানুষটির ফেলে আসা 888sport sign up bonus এবং অস্পর্শিত এক সত্তা। পাওয়া এবং হারানো – হয়তো পুরোপুরি পাওয়াও নয়, হারানোও নয় একেবারে। এই ঘূর্ণন তাকে ভিন্ন এক মত্ততায় পৌঁছে দেয়। যন্ত্রণার উৎসারণও হয়তো সেখান থেকেই – যাকে বলা যায় দূরে নির্বাসিত নয়, বরং ‘দূরে যেতে না পারার যন্ত্রণা’। নির্বাসিত মানুষটি শুধু দৈহিকভাবেই ছিটকে পড়েছে নিজের শেকড় থেকে, কিন্তু দূরে বহুদূরে এসেছে সেই ‘শেকড়কেই’ আরো শক্ত করে আঁকড়ে থাকার জন্যে। মূলত আত্মার নির্বাসন অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় তার নিজের কাছেই।
888sport live chatী তার নিজের ছবি, লেখা বা সুর চারিদিকে খুঁজে বেড়ান, সর্বত্র একই ঘোষণা শুনতে পান হয়তো, আর তাহলো নির্বাসিত ‘সৃষ্টির’ অকাল মৃত্যু-সংবাদ। তার রং, তার শব্দাবলি বা তার ধ্বনি-হিল্লোল, সবই আছড়ে পড়ে ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে, যেখানে ছড়ানো থাকে তার ফেলে-আসা 888sport sign up bonus-চিহ্নগুলো।
নির্বাসিত মানুষের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণে ভিয়েনা কংগ্রেসে ১৮১৫ সালে যে-নীতি নির্ধারিত হয়েছিল, তা দিয়ে রাজনৈতিকভাবে নির্বাসিত জীবনকে খানিকটা নিরাপত্তা দেওয়া গেলেও 888sport live chatীর রক্তক্ষরণকে তা দিয়ে নির্বাপিত করা অসম্ভব।
মিলেন কুন্ডেরা, চেশোয়াভ মিলোজ, সালমান রুশদী, আঁন্দ্রে অ্যাসিম্যান, সদ্য পরলোকগত এডওয়ার্ড সাঈদ – এঁরা প্রত্যেকেই নির্বাসিত 888sport live chatী। কিন্তু তবুও এঁদের বেদনার ভার, ভেতরে রক্তক্ষরণের প্রকৃতি আলাদা। এঁরা সবাই ভিন্ন ভূতিতে উপ্ত, তাঁদের পরিপার্শ্ব অচেনা, তাঁরা ‘আগন্তুক’ সেখানে। যে-জীবন তাঁরা যাপন করেন, তা তাঁদের নয়, ভিন্ন মানুষের জীবনে তাঁদের নিজেদের জীবন প্রতিস্থাপিত, কিছুটা বা শৃঙ্খলিত।
888sport live chatীরা নির্বাসিত অবস্থায় যে-হাজারো প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন, তার মধ্যে তাঁদেরকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলো কোন ভাষায় তিনি লিখবেন? নির্বাসিত 888sport live chatী যদি হন চিত্র888sport live chatী, কণ্ঠ888sport live chatী বা নির্মাতা, তাহলে ভাষার প্রশ্নটি তাঁর কাছে অপেক্ষাকৃত কম জটিল। যদিও স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে 888sport live chatী তার ফেলে-আসা ভাষায় লিখবেন, কিন্তু কখনো যদি এর ব্যতিক্রম হয়, সেটা যে হয় না তা নয়, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ‘দ্বিতীয়’ এই ভিনদেশী ভাষাতেও তিনি প্রায় একই বুৎপত্তি দেখাতে সক্ষম। এটা দেখা গেছে কনরাড, সাঈদ, অ্যাসিম্যান, ইভা হফম্যান, ভারতী মুখার্জি, চার্লস সিমিক, মিলেন কুন্ডেরা এবং স্যামুয়েল বেকেটের ক্ষেত্রে। প্রত্যেক নির্বাসিত 888sport live chatীর কণ্ঠস্বর আলাদা, কল্পনা ও বেঁচে থাকার জগৎ আলাদা, নিজের আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখার ভাষা আলাদা। তবুও একটি জায়গায় তাঁদের সাদৃশ্য রয়েছে, তাহলো যে-শেকলে তাঁদের অন্তর বাঁধা তার স্বরূপ অনেকটা একই রকম। ইউরোপ বা আফ্রিকা ও এশিয়ার অধিকাংশ নির্বাসিত লেখকই যে-ভূমিতে শরণ নেন, সেখানকার ভাষা প্রায়শই ইংরেজি। এবং আজকের বিশ্বে যেসব উল্লেখযোগ্য নির্বাসিত লেখক বিদেশী ভাষায় 888sport live chatচর্চা করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই ইংরেজিকে লেখার ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ইভা হফম্যান থেকে ভারতী মুখার্জি পর্যন্ত প্রায় সকলেই, নিজেদের আনন্দের বাইরে, ইচ্ছের বাইরে, নিজের ভেতরেই এই ভাষা থেকে একটা দূরত্ব সৃষ্টি করে নিয়েছেন। যদিও মনে করা যেতে পারে তাদের সৃষ্ট সেই ‘দূরত্বের’ মাঝেই নির্বাসিত আত্মার বিরামহীন ঘূর্ণন।
সারাক্ষণ বৃত্তাবর্তে ঘুরেও ঘূর্ণনের ধ্বনির সাথে, স্রোতের সাথে একাত্ম হতে ব্যর্থ, যখন আসে ভাষার বিষয়। কয়েক দশক ইংরেজি ভাষাভাষি যুক্তরাজ্যে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াতে কাটিয়েও সে-দেশের মৃত্তিকা থেকে দূরে থাকেন, যাকে পোশাকিভাবে ভাষার অ্যাকসেন্ট বলে, তা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেন না। আপাতভাবে মনে হতে পারে যে নাসিকা বা কণ্ঠধ্বনি-যন্ত্র যে এ বিষয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করছে তা-ই নয় শুধু, ভাষার সঙ্গে নির্বাসিত আত্মার প্রাকৃতিকীকরণের (ন্যাচারালাইজেশন) মাঝে বিরাট এক প্রতিবন্ধকতা বা বাধা দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। ফলে আড়াআড়িভাবে জীবন ও মননের সামনে দাঁড়াচ্ছে ভিন্ন এক ‘ভাষা’ যা তাঁর নয়, কিন্তু দূরে ঠেলে ফেলতেও পারছেন না সেটাকে। নির্বাসিতের কাছে সেটাই কালহীন, কালোত্তীর্ণ, একান্ত ও ব্যক্তিগত আরেক ভিন্ন সত্তা। 888sport live chatী যেভাবে অনুভব করে থাকেন তাঁর ছেলেবেলা, জন্মগত আচার ও 888sport sign up bonus – ঠিক তেমনি স্বকীয়তা নিয়েও তাঁর ভেতরে উৎসারিত হতে থাকে কালোত্তীর্ণ এই নির্বাসিত সত্তা, শেকড় থেকে দূরে থাকার এবং দূরে থাকতে না পারার বেদনা থেকে উৎসারিত সত্তা।
নির্বাসিত জীবনে কোনো কোনো লেখক তাঁর গ্রহণ করা ভাষা-ব্যবহারে জড়তা বা উচ্চারণ-ত্রুটি খুঁজে পান, যাকে কেউ কেউ আবার লেখকের আয়ত্তাধীন ভাষা-সৌকর্য হিসেবে বর্ণনা করেন, যা নির্ভুল ভাষাও নয়, আবার তাঁকে ঐ ভাষা ছাড়া অন্য কিছুতেও শনাক্ত করা সম্ভব নয়। উচ্চারণ-ত্রুটি বা অ্যাকসেন্টকে পরিহার করাকে বলা যায় নির্বাসন – জীবনের ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জনে নিরন্তর সংগ্রাম, যে-সংগ্রাম সেই লেখকের জীবনেরই অংশ হয়ে দাঁড়ায়, কখনোই সমাপ্ত হয় না। কিন্তু ভিন্নার্থে তা জীবন-সংগ্রামের চাইতেও অধিক কিছু। নিজের ভূমির, নিজের জগতের বাইরে অন্য আরেক জগতের প্রতিকূলতার সঙ্গে আপোস করার এক ধরনের পদ্ধতি এটা, যে-জগৎ এবং আপোসের জন্যে লেখক কখনোই আগে প্রস্তুত থাকেন না। নিজের অতীত ও বর্তমানের মাঝখানে রক্তাক্ত ও ছিন্নভিন্ন হতে থাকেন তিনি, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে অক্ষম তাঁর লেখকসত্তা ব্যথিত হতে থাকে। লেখকের মাঝে তার নিজের অতীত ও বর্তমান প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিযোগী হয়ে দাঁড়ায়। উচ্চারণ-ত্রুটি লেখকের দুই ভাষার মাঝে সীমারেখা টেনে দেয়, যা দিয়ে দুটো ভিন্ন চারিত্রের ‘সময়’কে নিরূপণ করেন লেখক নিজে – একটি তার জন্ম ও বড় হয়ে ওঠার সময়, অন্যটি নির্বাসনকাল। দুটো ভিন্ন ভাষা, দুটো ভিন্ন সংস্কৃতি, দুটোর মাঝের সীমারেখায় একটি পরিচয় বিলীয়মান, অন্যটি জায়মান। লেখক হয়ে ওঠেন একের অধিক সত্তার মানুষ, কিন্তু পুরোপুরি দুটি সত্তার মানুষও নন কখনো। আজকের 888sport live footballের জগতে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাজ্যে কয়েকজন নির্বাসিত লেখক ইংরেজি ভাষাকে এতো নিখুঁত ও 888sport live chatিতভাবে আয়ত্ত করেছেন, বলা যায় এই ভাষার গভীরে তাঁদের শেকড় উপ্ত হয়েছে যেভাবে, এটা ভাবতে বিস্মিত হতে হয়, তাঁরা ভিন্ন গোলার্ধ বা ভিন্ন ভাষার মানুষ ছিলেন (আছেন!) কখনো। তাদের ‘ঘরের’ ভাষা, গেরস্থালির ভাষা হয়ে গেছে ইংরেজি- তাঁরা ভাবেন, স্বপ্ন দেখেন, গান করেন, প্রণয় ও হৃদয়হরণ এবং রক্তাক্তও করেন ইংরেজিতে। এঁদের মধ্যে যাঁদের সন্তান রয়েছে, তাঁদের লেখায় জানা যায়, তাঁদেরকে নিজের ভাষায় কিছুটা কাকলি উপহার দিতে চান কালের সাক্ষী হিসেবে, কিন্তু যখন সন্তান ও নির্বাসিত বাবা-মার মাঝে ঘনবদ্ধ আবেগাশ্রিত বিষয় নিয়ে কথা হয়, যেমন সন্তানের স্কুল, পেশা, ক্রীড়া ও 888sport live chatজগৎ, তখন তারা দুজনেই হয়তো আশ্রয় নেন অধিকৃত ভাষা ইংরেজিতে। তাদের প্রতিদিনের কেজো-ভাষা ইংরেজি হলেও অন্তরের গভীর কোনো প্রদেশে তার স্থান একেবারেই নাজুক, অস্থিতিশীল ও কম্পমান। হৃদয়জাত বিষয়ে চিত্রায়নে এ-ভাষা পারদর্শিতার চূড়া স্পর্শ করে কি-না সেটা বিবেচ্য নয়, হয়তো শোক প্রকাশের ভাষা নয় এটা, নয় পরচর্চার, এমনকি বিদায়-চুম্বন-বেলায়ও এ-ভাষা ততোটা বাক্সময় নয়। কিন্তু নির্বাসিত লেখক যখন হৃদয়ের গভীর থেকে কোনো কিছুর উৎসারণ ঘটাতে চান তখন এ-ভাষাতেই শরণ নেন।
প্রতিটি ‘অসাধারণ’ বাক্য লিখে ফেলেই নির্বাসিত লেখক ভাবেন তিনি হয়তো এটা নিরাপত্তাহীনতার কারণে, ‘নিরাপত্তার’ জন্যে লিখতে সক্ষম হয়েছেন- হয়তো তিনি এর ফলে এটা ভেবে আনন্দ লাভ করে থাকেন যে পাঠক তাকে এ-ভাষারই একজন ভাবছেন। কে না জানেন যে বিদেশীরাই পারেন, পেরে থাকেন, কোনো ভাষার ব্যাকরণে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে, সে-ভাষা যার মাতৃভাষা, তার চাইতেও অনেক বেশি নিখুঁতভাবে। আর সেটা তারা করেন তাদের দুর্বলতাকে আড়াল করার জন্যে, লাজুকতা বা বিহ্বলতাকে গোপন করার জন্যে। এর ফলে এটাও বোঝা যায় যে ‘নির্বাসন’ তাদেরকে যেমন ভঙ্গুর করেছে তেমনি চতুরও করেছে। তাঁরা চতুর, সতত-সতর্ক যখন সে-ভাষায় জটিল বাক্যবিন্যাস আয়ত্ত করেন, সর্বক্ষণ সতর্ক থাকেন যেন ব্যবহৃত শব্দাবলিতে ভাষার লাবণ্য নষ্ট হয়, এমন কোনো স্ল্যাং তাতে না থাকে। যদি কোনো লঘু শব্দ ব্যবহার করেনও তা যেন কিছুটা সাবলীলতা এবং স্বতঃস্ফূর্ততা হারায়, বরং এক ধরনের কাঠিন্য এনে দেয়, ফলে স্ল্যাং-ব্যবহারের কৌতুকটুকু একেবারেই মিলিয়ে যায় অচেনা গাম্ভীর্যে।
সবশেষে, এক সময়ে, সবাই হয়তো নির্বাসিত হওয়ার বিষয়টি ভুলে যান, ভুলে যেতে ভালোবাসেন অন্তত। কিন্তু ‘বিস্মৃত’ নির্বাসিত মনও একটি বিষয় ভুলতে পারে না এবং সেটা প্রায় অধিকাংশ দ্বীপান্তরিতের জীবনেরই অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়- তাহলো 888sport sign up bonus-তর্পণ। 888sport sign up bonusচারণে 888sport sign up bonusভারাতুর, এই বিবাগী মানুষগুলো নিজেদেরকে দেখেন দ্বিত্য, ভাবেন দ্বিখণ্ডিত এবং শেষ অবধি হয়েও দাঁড়ান দুজন মানুষ, দুটো সত্তা। বিভুঁইয়ে যখন তারা কোনো স্থান অবলোকন করেন, নিজেরই অজান্তে তার আড়ালে আরেকটি স্থানের ছবি এঁকে নেন, অথবা খুঁজতে থাকেন সে-ছবিটির অস্তিত্ব। প্রত্যেকে, প্রত্যেকটি বস্তু, তাদের কাছে দুটো আদল নিয়ে ধরা দেয়, সবকিছুই চলমান, সবকিছুই সঞ্চরণশীল। আর সেখানেই অনুভূত হয়, জীবন, বিশেষত নির্বাসিত জীবন, কোনো বেদনার আকর নয়, শুধু গভীর এক ঘূর্ণন, অপ্রতিরোধ্য পরিবর্তনশীলতা এবং কিছুটা প্রেমের মতোই হয়তো, প্রতারণারও আকর।
অন্যভাবে বলা যেতে পারে ‘নির্বাসন’ হতে পারে চিন্তার অতীত সঞ্চরণশীল, নিজের অক্ষরেখা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হতে পারে চকিতে, কিন্তু আরেক অর্থে একেবারে স্তব্ধ অনড় গতিহীন। এই গতিহীনতার কথা ভাবলে মনে পড়তে পারে কতোগুলো বেদনার্ত, প্রকটভাবে অসহায় মুখের ছবি। ‘ক্যাসাব্লাংকা’ ছবিতে ইউরোপ থেকে ছিটকে পড়া কিছু মানুষ জীবনের অনিশ্চিত পথে অসহায় অনড়, প্রতিদিন অপেক্ষা করে বসে থাকেন কখন ‘চিঠি’ আসবে 888sport slot gameের। তারা সত্যিকার অর্থে কখনোই ক্যাসাব্লাংকায় নেই, ছিলেন না কখনো, যেখানে আটকা পড়েছেন, সেখানে তাদের অস্তিত্ব নেই, কিন্তু তারা কোথাও যানওনি। সম্ভবত, তারা এক বিরামহীন অনন্ত ‘যাত্রাপথে’ আটকা পড়েছেন, শৃঙ্খলিত পায়ে বেড়ি।
নির্বাসিতরা যে একই সঙ্গে একের মাঝে একাধিক ‘সময়’ ও ‘স্থান’কে দেখতে পান তার কারণ যে তারা 888sport sign up bonusর মত্ততায় তাড়িত সেজন্যে নয়, এর চেয়েও বাস্তব এবং বেদনাসিক্ত আরেকটি কারণ হয়তো এর পেছনে রয়েছে, তাহলো তারা সারা জীবনই ঘরের অন্বেষণে ঘুরে বেড়ান। সে-ঘর তার ভবিষ্যতের ঘর, যে-অচেনা পরিমণ্ডলে তিনি নির্বাসিত, সেটাকে নিজের ঘর বানানোর প্রাণান্তকর এক প্রয়াস তার মাঝে বাসা বাঁধে। কখনো যদি পেয়েও যান কোথাও, তবুও তার মাঝে অন্বেষণ থামে না। এই ‘অন্বেষণ’ প্রক্রিয়াই তাকে নির্বাসিত হিসেবে বাঁচিয়ে রাখে, তার এই সত্তাকে ঘুচতে দেয় না। তার মাঝে ‘অন্বেষণ’ জীবন্ত থাকার কারণ বিচিত্র; যে-ঘর থেকে তিনি বিতাড়িত, যে-ঘরের ছবি তার 888sport sign up bonusতে ভাস্বর, সেটা তিনি খুঁজে পেতে অক্ষম। যেটা তার পাওয়ার মাঝে দৃশ্যমান, আয়ত্তের অধীন, তার সাথে নিজের ‘ঘরের’ কোনো সাদৃশ্যই খুঁজে পান না তিনি। বারে বারে, ফিরে ফিরে, ঘর থেকেই তার সমস্যা সৃষ্টি, ঘরকে নিয়েই তার আজীবনের দ্বন্দ্বদীর্ণ মনের বেদনা ও রক্তপাত। হয়তো এ-ও সত্যি, নির্বাসিত জীবনে কখনো ঘর খুঁজে পাওয়া যায় না, ঘর থাকেও না। কখনো ছিল কি-না, তা-ও সর্বত্র সন্দেহমুক্ত নয়।
সংবেদনশীল নির্বাসিত মন সর্বদাই প্রশ্ন করে, কীভাবে পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব তার আবাস! নতুন ‘পরিচয়’ নতুন ‘ভাষা’ আয়ত্তকরণে কোন ধরনের প্রতিকূলতা পেরোতে হয় তাদের! উত্তর হতে পারে বিচিত্র, বিভিন্ন ধরনের – এ কারণে নয় যে তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের মুখের ও হৃদয়ের আদল ভিন্ন ভিন্ন – এ কারণে যে, তারা সবাই ভিন্ন ভিন্ন রকম মনস্তাত্ত্বিক কাঁচামাল দিয়ে তৈরি। নিজেদের লেখায়, গানে, ছবিতে জীবনের বেদনায় ও প্রণয়ে, ভিন্ন ভিন্ন উপাদান হাজির করেন। শেষ অবধি, অভিন্ন তারা একটি বিষয়ে হয়তো, তাহলো প্রায় সকল নির্বাসিতই নিজের হারিয়ে যাওয়া ‘জীবন’কে খুঁজে ফেরেন, পুনর্নির্মাণ করতে চান। সে-উদ্দেশ্যেই নিজের এবং পরভূমির পরভাষার শব্দরাজি সাজাতে থাকেন, নিজেকে উন্মোচন করেন, ঠিক যেন পরক্ষণেই আবার দ্রুত আড়াল করেন, গুটিয়ে নেন। ব্যবহৃত শব্দরা তখন তার না-বলা কথার বাহন নয়, হয়ে ওঠে গভীর ঊর্মিমুখর উত্তাল জীবন-সমুদ্রে সামান্য ভেলা, যাতে ভর দিয়ে নির্বাসিত মন শুধু ভেসে থাকতে চায়, বেঁচে থাকতে চায় আরো কিছু অজানা মুহূর্ত।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.