একটু আগেও রুহি আর অর্পিতার উপস্থিতি ছিল এ-ফ্ল্যাটে।
নেহালের বিয়ে করা বউ এই রুহি, আর অর্পিতা ওদের একমাত্র সন্তান। একজন চাকরি রক্ষা করতে গেছে ব্যাংকে আর অন্যজন ছুটছে বিশ^বিদ্যালয়ের অনার্স ক্লাস করতে।
নেহাল কবীর, একদা আইবিএর এমবিএ, দেখতে-শুনতে রূপবান ও স্বভাবে রোমান্টিক ঘরানার এক পুরুষ, এখন নিরিবিলি-নির্জন হাজার-বারোশো স্কয়ার ফিটের কেনা এ-ফ্ল্যাটে একাকী নিজের সঙ্গে – দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এভাবেই বাস করছে। হয়তো এ-বসবাস দীর্ঘ হতে হতে মৃত্যু পর্যন্ত গড়াবে। হয়তো কোনো একসময়ে একাকিত্বের তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারলে ইচ্ছামৃত্যু ঘটবে ওর। ফাঙ্গাসের মতন, পরগাছার মতন কতদিন আর ওর আয়ু দীর্ঘ হবে? কতদিন? ভেবে-ভেবে ক্লান্ত-অবসন্ন নেহাল।
অথচ কী আর এমন বয়স হলো নেহালের?
গত বছর বাহান্ন নীরবে ঢুঁস মারল তেপ্পান্নর পৃষ্ঠদেশে। কই, কেউ তো আগের মতন কেক হাতে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ বলতে এলো না! না রুহি, না অর্পিতা। হোক না অভিনয়, সংসারের পুরোটাই তো তা-ই; তবু তো একটুখানি ছেঁদো হাসি দিয়ে ওদের কেউ জানান দিতে পারতো, নেহাল কবীর এখনো বহাল তবিয়তে বেঁচে রয়েছে, আমরা রয়েছি ওরই পাশে। এটুকু আশাও শেষ পর্যন্ত দুরাশায় পরিণত হলো। কিছুই করার নেই!
এসব দেখে-শুনে আজকাল কেন যেন বারবার করে মনে হয়, সবাই মিলেমিশে একত্র হয়ে ওর সমস্ত সাধ-আহ্লাদ আর যৌবনকে হামাম দিস্তায় ফেলে পিষে ফেলতে চাইছে। কোরাস গেয়ে বলতে চাইছে, তুমি নেই, তুমি বিগত, তুমি থাকবে না। কী নিদারুণ, কী নির্মম কাণ্ড! বুকের ভেতরটা তছনছ হয়ে যায় এ-ভাবনায়।
বছর-দুই আগেও অফিসের কথা বলে থাইল্যান্ড ঘুরে এসেছে নেহাল। কত মন-ভুলানো দ্বীপ, নিত্যনতুন কত খানাপিনার বাহার, কত রকমের শরীর মর্দন, কত মোলায়েম সাহচর্যের উষ্ণতা – মনে হলে শরীর চনমন করে ওঠে। চোখ বুজলে সেসব সংগোপন 888sport sign up bonus উথলে ওঠে মনের ভেতর। কে যেন ফিসফিস করে কানে কানে বলে, ‘যাইবানি আরো একবার? যন্ত্রপাতি সবই তো ঠিকঠাক, হুদা হেডলাইট জ¦লে না। যাইবানি? শখ জাগেনি মিঞা?’
আপনমনে হেসে ওঠে নেহাল। শরীর জুড়ে এক অপার্থিব তারুণ্যসিক্ত উষ্ণ শিহরণ খেলে যায়; পরক্ষণে জিহ্বায় নিমতিতা চিবানোর স্বাদ। সেই স্বাদ নিমেষে ছড়িয়ে যায় শরীর-যন্ত্রের পরতে পরতে। বুকভরা একরাশ বিতৃষ্ণা আর অভিমান গ্রাস করে নেয় পুরো সত্তা। তবু ভেতরে ভেতরে আগ্রাসী ইচ্ছেটা ঠিকই রয়ে যায়। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যেন বলতে চায়, ‘আমি আছি। এখনো মরিনি!’ নেহালের নিষ্প্রাণ চোখ দুটো চকচক করে ওঠে অজানা আনন্দে। এই কি জীবন?
চোখের সামনে ভাসে অপরিচিত-অজানা, গা-ছমছম করা এক পরিবেশ, নির্জন-নিরিবিলি রাস্তাঘাট, ঘন অন্ধকার ছাওয়া গভীর সব বনজঙ্গল, কারুকাজময় ভিনদেশি বাড়িঘর, পাথর-ধোয়া স্বচ্ছ ফল্গুধারা আর শুকনো তেজপাতা রঙের নদীনালা আর রংবেরঙের বাহারি আকাশ। ভাবলেই সবকিছু ফেলে গায়ে হাওয়াই শার্ট জড়িয়ে সমুদ্রসৈকতের নীল জলে দুই স্ট্র-ওলা একখানা ডাব হাতের তালুতে বসিয়ে হারিয়ে যেতে বড় খায়েস জাগে। স্কুবা-ডাইভিং, স্কি, প্যারাগ্লাইডিংয়ের উত্তেজনাগুলো পকেটে পুরে ফড়িং হয়ে বাঁচার বড় শখ ওর। সারাক্ষণ নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এরকম নিস্তেজ নিরীহ জীবনের কাঁদুনি গাইতে আর মন চায় না। মরে যেতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে। ইচ্ছামৃত্যুর অধিকার কেন থাকবে না সবার?
এরকম সময়ে রুহি মাঝে মাঝে এসে দাঁড়ায় ওর সামনে। ঝাঁঝালো গলায় বলে ওঠে, ‘এখনো খাও নাই?’
‘পারতেছি না। প্লিজ হেল্প করো।’ কাতর গলায় অনুরোধ জানায় নেহাল।
‘সম্ভব না। আমার কাজ আছে নেহাল। অফিসে লেট হচ্ছে ঘনঘন। রোজ রোজ ওজর-আপত্তি মানতে চায় না অফিস। সেটা তুমি ভালোই জানো। অফিসের বস ছিলে একসময়। অর্পিতাও বেরুবে। জ্যাম ঠেলে ওকেও পৌঁছুতে হবে বিশ^বিদ্যালয়ে। নিজের কাজ নিজে করতে শেখো। সরি।’ কাটা-কাটা কটি কথা বলে চলে যায় রুহি। এতটুকু মায়া-মমতার ছোঁয়া নেই। অগত্যা ভাঙা বাসনের মতন সে যেখানে ছিল, সেখানেই পড়ে থাকে।
এই অবহেলাগুলো ওর এখন গা-সওয়া। রুহির একক রোজগারে চলা সংসার এখন। তাকে তো সমীহ করে চলতেই হবে। দুঃখ শুধু একটাই। একমাত্র কন্যা অর্পিতাও এখন আর কাছে ঘেঁষতে চায় না। বারবার ডেকে কাছে এনে বসালেও ‘আমার টিউটরিয়ালের পড়া আছে আব্বু’ বলে চটজলদি ওর সামনে থেকে উঠে পড়ে। তখন খুব বাজে লাগে। মেঘের মতন অব্যক্ত কষ্টে ভারি হয়ে ওঠে মন, গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে বড়। মাত্র বাহান্ন বছর বয়সের এ-জীবনটা যে এমন অর্থহীন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে কে জানতো?
অফিস বললো, ‘আমরা এ-অবস্থায় আপনার ভার বহন করতে পারবো না, মিস্টার কবীর। গুডবাই।’
খবর শুনে বেশ কিছুদিন ফ্ল্যাশ-ফ্লাডের মতন বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-পরিজনের আহা-উহুতে ভরে উঠলো ওর চারপাশ। এখন অযাচিতভাবেও কেউ আর আসে না ওর কাছে।
রুহি-অর্পিতাদের আবেগেও শীতের টান।
রুহিকে একসময় মনে হতো ওর জীবনের সেরা 888sport promo code। কোনো সন্দেহবাতিক নেই। ওর জন্যে অবাধ বিচরণের দেদার জায়গা খোলা ছেড়ে দিয়েছে উদার মনের এ-মেয়েটি। নেহাল যেভাবে বলে সেভাবেই মেনে নেয় সব, সেভাবেই নিজের পথ চলতে ভালোবাসে যে-কন্যা, তাকে কি না ভালো লেগে পারে কোনো পুরুষের?
অথচ ইদানীং সেই রুহিকে চেনা দায়। যখন-তখন ওকে শোনায়, ‘তোমার সঙ্গে ফাইট করে চাকরিতে জয়েন করেছিলাম বলে রক্ষা। নইলে সংসারটা এদ্দিনে সমুদ্রের তলায় ডুবে যেতো। অর্পি আর তোমাকে নিয়ে যে কোথায় দাঁড়াতাম আজ?’ আপন আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচ্ছন্ন চেষ্টা রুহির, যা এককালে ওরই ছিল।
‘আমি কি তোমাকে কখনো চাকরি করতে বারণ করেছিলাম রুহি?’ মিনমিন করে কিছু একটা বলতে চাইতো নেহাল।
ফুঁসে উঠে রুহি উত্তর দিত, ‘এত তাড়াতাড়ি সব ভুলে গেলে নেহাল? উঠতে-বসতে জুনিয়র অফিসারের ছোট চাকরি বলে কত ঠাট্টা করেছো আমায়, ভুলে গেলে সব? তুমি ভুলে গেলেও আমি কীভাবে ভুলে যাবো, বলো?’
নেহাল মাথা নুয়ে ফেলে। রুহির এ অন্য রূপ। না দেখলে বোঝা মুশকিল। আসলে আধিপত্য হচ্ছে জাদুর কাঠির মতন। যখন কাজ করে, তখন মন বুঁদ হয়ে অবাস্তব সুন্দরের স্বাদ নিতে থাকে। আর যখন এ-কাঠির কারসাজি হারিয়ে যায়, তখন বাস্তবের রূঢ়তা সব মূঢ়তাকে আঙুল দিয়ে ধরে ধরে বলে ওঠে, এই হলে তুমি। কিছুই করার থাকে না তখন।
কদিন আগেও একজন বাঁধা লোক ওর সেবা-শুশ্রূষায় নিয়োজিত ছিল। সীমিত আয়ের সংসারে মাসে কয়েক হাজার টাকা বের হয়ে যাওয়ায় রুহি ওর সুন্দর মুখের একটা ঝামটা দিয়ে বলে দিলো, ‘লোক রেখে সেবা দেওয়া সম্ভব নয় নেহাল। অনেকদিন হয়ে গেল। এখন নিজের কাজ নিজে করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠো।’
সব কথার মতো এ নির্দেশও মেনে নিল সে। এখন খাওয়া-দাওয়া, ফ্ল্যাটে হাঁটাচলা সব নিজে নিজেই করে নেয় সে। শুধু সমস্যা হয় শেভ করতে গেলে। চেষ্টা করেও দেখেছে কবার। প্রতিবারই রক্তাক্ত হতে হয়েছে ওকে। তাই দাড়ি রেখে দিয়েছে। এখন আর সমস্যা হয় না।
খাওয়ার সময় মাঝে মাঝে নিশানা দিকভ্রষ্ট হলে ঝামেলায় পড়তে হয়। মুখের খাবার জামায় গড়ায় কিংবা থালায় রাখার ডালভাত টেবিলের ওপর ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই রুহির মেজাজ চড়ে, ‘তুমি একটা কি, এ্যাঁ? এখনো ঠিকঠাক খেতে পারো না?’
‘ইচ্ছে করে করি?’
‘ইচ্ছে করেই করো। তোমাকে আমার চেনা আছে।’
নেহালের শরীর রিরি করে রাগে। মনে হয় মুখের ওপর বলে দেয়, ‘হ্যাঁ, ইচ্ছা অইছে করছি। কী করবা তুমি?’
কিন্তু বলতে পারে না। এ-সংসারে যার উপস্থিতি মাটির ঢেলার মতন, তার কি পুরনো মেজাজে কথা বলা সাজে? বন্দি মানুষের আবার কিসের মর্জি?
তবু রাগ হয়। রাগ হলে সে টেবিলের ওপর জোরে একটা ঘুসি দিয়ে উঠে পড়তে চায়। কিন্তু তাও ওর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পেটের নিচে ডাইনিং-টেবিলের কাচের আচমকা ধাক্কা লাগে। সঙ্গে সঙ্গে কঁকিয়ে ওঠে। ছুটে এসে রুহি ওকে উদ্ধার করে। মুখে বলে, ‘এখনো মেজাজ ফলাও?’
মনে মনে নেহাল উত্তর দেয়, ‘ফলাই তো। কী করবা?’ এ-সময় নীরবে একবার দাঁতে দাঁত পিষে নেয় সে।
রুহি ওকে বারান্দায় নিয়ে বসিয়ে দেয় মুড ভালো থাকলে। একফালি বারান্দা ওদের। তাতে প্লাস্টিকের একখানা সস্তা চেয়ার পাতা। সেখানে বসে তিরিশ দিন কাটে ওর।
একফালি এ-জায়গাটুকু ঘিরেই নেহালের একমাত্র বিনোদন-আসর জমে ওঠে। গ্রিলের ফাঁক গলিয়ে তাকিয়ে থাকে বাইরে। কিছুই চোখে পড়ে না। সবকিছু ঝাপসা। তবু বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে উঠে আসা বাতাসে ভেসে বেড়ানো নানা পদের রান্নার গন্ধ ওকে বেশ খানিকটা আনন্দ জোগায়। সে ঘ্রাণ শুঁকে বোঝার চেষ্টা করে কোনটা কী। আরে এটা তো গরুর ভুনা, রেডি মশলায় রান্না নয়, অবশ্যই বাটা মশলা। কেউ কি পোলাও রাঁধছে ধারেকাছে? এ তো দেখছি চ্যাপা শুঁটকি। আহা! চিংড়িমাছের গন্ধ, মালাইকারি নাকি? আরে হাওয়ায় এ কিসের গন্ধ? ইলিশমাছটা নিশ্চয়ই পদ্মার, নইলে এমন মন-উদাসী ইলিশ-গন্ধ বাতাসে ভাসে?
রান্নার গন্ধের মতন মজার সব 888sport sign up bonusও ওকে নাম ধরে ডাকে এখানে। মাঝে মাঝে তাড়া করে বেড়ায় ওকে। ঊর্মি খানকে বিয়ে করলে কি নেহাল ওর এই অসহায় সময়ে বেশি আদর আর যত্ন পেত? হাজারটা অর্থহীন জিজ্ঞাসার মতন এটাও মগজে ঘোরাফেরা করে।
ঊর্মি ওর অফিসের জুনিয়র কলিগ ছিল এককালে, বয়সের ব্যবধান প্রায় বারো বছর। চাইলেই সে বিয়ে করতে পারতো। কেন করেনি ভেবে এখন আফসোস হচ্ছে। আব্বা-আম্মার পছন্দের মফস্বল-কন্যা রুহিকে বিয়ে করে সে কি পেল? সেই তো আদি-অকৃত্রিম অনাদর-অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অসম্মান আর অনর্গল বকবকানি – আগের মতন মুঠোবন্দি সুসময় থাকলে চারতলার গ্রিল গলিয়ে মাটিতে ফেলে দিত পচা-বাসি খাবারের পুঁটলির মতন, একটুও অপরাধবোধ হতো না ওর। অকৃতজ্ঞ, বিশ^াসহন্তা, দুর্বিনীত 888sport promo codeর এটাই যথার্থ শাস্তি। এ-সময় থরথর করে রাগে-ক্ষোভে শরীর কাঁপে ওর।
নেহাল ইদানীং গন্ধ শুঁকে শাকও চিনে নিতে পারে। কোনটা ডাঁটা, কোনটা পুঁই আর কোনটা পাহাড়ি ঢেঁকি দিব্যি বলে দিতে পারে। পাটশাক, লালশাক, লাউ আর ভুতুয়া তো পান্তাভাত ওর কাছে।
এত কিছু না দেখে, না শুনেও যে শুধু ইন্দ্রিয়শক্তির ওপর ভর দিয়ে বলতে জানে, সে কেন নিজের দৃষ্টির এতবড় পরিবর্তনের কথাটা যথাসময়ে বুঝতে পারেনি, তা বড় বিস্ময় হয়ে ওর বুকে বাজে আজকাল।
ব্যাংককের মঙ্গোলীয় চেহারার চোখের ডাক্তার সুমসারা উত্তিথাম বলে উঠলেন, ‘কিছুই টের পাননি মিস্টার?’
‘সেরকম কিছু না।’
‘চোখে ঘোলা দেখা, চুলকানি, জল পড়া, ব্যথা, বমিভাব। কিছুই টের পেলেন না?’
‘ওগুলো স্বাভাবিক ভেবে আই-ড্রপ ব্যবহার করেছি। ভেবেছি ভালো হয়ে যাবো। ডাক্তাররাও তো পাত্তা দেননি। এখন তো কিছুই স্পষ্ট দেখতে পাই না। কী হয়েছে ডাক্তার?’
‘আপনি একিউট গ্লুকোমা পেশেন্ট। ধীরে ধীরে পুরোপুরি অন্ধত্বের দিকে এগিয়ে চলেছেন।’ মহিলা তাঁর খনখনে ভাবলেশহীন গলায় ঘোষণা দিয়ে দিলো ওর ভবিতব্য-বার্তা।
সেই শুরু। তারপর ধীরে ধীরে বাতিল মানুষ হয়ে গেল নেহাল কবীর। অফিস জানালো, ‘আপনার নিয়মিত ট্রিটমেন্ট দরকার। হিসাব করে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ যে টাকা অফিস থেকে ধার করেছেন, তাতে অফিস আপনার কাছে উল্টো টাকা পায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আপনার কর্মনিষ্ঠা, সততা ও অবদানের কথা বিবেচনা করে সব মাফ করে দিয়েছে। আপনি ভালো থাকুন। এই দোয়া রইলো। খোদা হাফেজ।’ এসব বলে একখানা চিঠি গ্যাসভরা বেলুনের মতন ওর উদ্দেশে শূন্যে উড়িয়ে দিলো কর্তৃপক্ষ। তা-ই মেনে নিতে হলো আইবিএর এমবিএ নিরুপায় নেহাল কবীরকে।
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি সেদিন; বাসায় ফিরে রুহির কোলে মুখ রেখে খুব কেঁদেছিল সে। মেয়ে অর্পিতা এসে পাশে দাঁড়াল। রুহি মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনাভরা গলায় বললো, ‘চিন্তা করো না নেহাল। আমি আর আমার এ ছোট চাকরিটা তো আছে। দিন ঠিকই চলে যাবে। তুমি আরাম করো।’
কিন্তু মাসখানেক বাদে নেহাল ঠিক বুঝতে পারে, বৈচিত্র্যহীন প্রাত্যহিকতা কিংবা দৈনন্দিনতা কত সহজে সম্পর্কগুলোকে ধ্বংসের শেষ সীমানায় দাঁড় করিয়ে ছাড়ে। মনে হয় দিন দিন মাটির তলার কালো কুঠুরির ভেতর বন্দি হয়ে পড়ছে সে। যেখানে নিশ্বাস ফেলতেও কষ্ট হয়; অথচ মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
নেহাল তাকিয়ে থাকে বাইরে। আই-ড্রপের জল কান্না হয়ে গাল বেয়ে গড়াচ্ছে। শুনেছে আমেরিকায় গিয়ে কী একটা ইনজেকশন নিলে নাকি চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া সম্ভব। চোখের মৃত কোষগুলোর জায়গায় নাকি নতুন কোষেরা বাড়িঘর বেঁধে থাকতে শুরু করবে। ফলে ঘন অন্ধকারের ভেতর অপহৃত টর্চলাইট ফিরে পাওয়ার মতন চোখের পুরনো জ্যোতি ফিরে আসবে। ভাবতেই সবুজ ধানের ক্ষেতে হাওয়াময় মায়াবী বিকেলবেলা অবিরাম ঢেউয়ের পর ঢেউ হয়ে যেন খেলা করতে শুরু করল। কিন্তু কে নেহালকে ওখানে নিয়ে যাবে? এ তো স্বপ্নের চাইতেও দূরের কোনো আকাশ!
এভাবে কত রকমের না-পাওয়াগুলো যে একসঙ্গে জড়ো হয় মনের ভেতর। সে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। জীবনের নানারকম রহস্যঘন অসমাপ্ত সংগোপন গল্পগুলো বড় টানে, শুধরে নেওয়ার সাধ জাগে বড়ো।
আচ্ছা, গোয়া বিচের সেই গাইড মেয়েটা – কী যেন নাম – কোঁকড়া চুলের হাসিখুশি উচ্ছল রুচি চাড্ডা – টিম থেকে আলাদা করে কোথায় যেন ওকে নিতে চেয়েছিল – কী একটা বিশেষ জায়গা আলাদা করে শুধুই ওকে দেখাতে চেয়েছিল বিশ-পঁচিশ বছরের মেয়েটা। তখন বুঝতে পারেনি। এখন খুব আফসোস হয়। কাউকে কিছু না জানিয়ে গায়েব হয়ে গেলে কী এমন হতো? আফসোস হচ্ছে এখন।
পারমিতা বউদির কথা মনে পড়ে। বউদির গানের গলা ওকে খুব টানতো। ওদের মফস্বল শহরের দামি এক গায়িকা এ বউদি, রেডিও-টিভির নিয়মিত 888sport live chatী তিনি।
রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের মতন বড় বড় অনুষ্ঠান ছাড়াও শহরে বিশেষ কোনো অতিথি এলে ডিসি-এসপি সাহেব বউদিকে ডেকে নিয়ে তাঁদের ঘরোয়া আসরে গান শোনাতে বলেন, মুখে বলেন, উনি এ-শহরের গর্ব। এমনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি পারমিতা বউদি।
বউদিদের পরগাছায় ভরা পলেস্তারা খসা চুনসুরকির বাড়িটা ওদের পাড়ার শেষ মাথায়। সুযোগ পেলেই নেহাল গিয়ে বসে থাকতো তার কাছে। গান শুনতে ঘনঘন বায়না ধরতো। কিন্তু গলা নিয়ে বউদির ছিল নানা আদিখ্যেতা। তাই গান আর শোনা হতো না ওর। বিফল মনোরথ নিয়ে ফিরে আসতে হতো প্রতিবার।
সেই পারমিতা বউদি, যখন ওর এমএ হয়ে গেছে, একদিন বলে উঠলেন, ‘তুই তো খুব জ্বালিয়ে মারিস আমায়। একদিন তোর দাদা যখন ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম যাবে তখন আসিস। সারাদিন গান শোনাব।’ বলে সাপের মতন জিহ্বার লকলকে ডগা বের করে ঠোঁট ছুঁইয়ে কীরকম যেন একটা ইশারা করল।
সঙ্গে সঙ্গে শিরশির করা এক অনুভূতি নেহালের শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। হাত-পাগুলো নিজের অজান্তে কাঁপতে থাকে এবং অজানা এক ভয় সহসা ওকে গ্রাস করে ফেলে।
সেই থেকে আর কোনোদিন পারমিতা বউদির বাড়ি বয়ে গান শুনতে যাওয়া হয়নি নেহালের। এমনকি, ছোট এ-শহরে কখনো মুখোমুখি হলে পর্যন্ত একধরনের কুণ্ঠা আর লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে সে। সেই পারমিতা বউদি গত বছর মারা গেছেন। এখন মনে হয়, বউদির কথামতো কোনো একদিন নিরিবিলি নিদাঘ দুপুরে তার সঙ্গে দেখা করে গান শুনলে কী এমন যায়-আসতো জীবনে? এরকম ভয় পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয়?
বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। প্রথমদিকে ওর অসহায়তার খবর জেনে অনেকেই দেখা করে গেছে নিজে থেকে। মিলন, আক্কাস, সৌদ, জায়ান, হরিপদ, বাশার, সাইফুল – কজনের কথা বলবে সে? কদিন টেলিফোন ধরে ধরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে। হা-হুতাশের ঘন নিশ্বাসে কান ভারি হয়ে যেত ওর। এখন তাদেরই টেলিফোন করে আর পাওয়া যায় না। ‘মিটিংয়ে আছি দোস্ত। ফ্রি হয়ে রিং দেবো।’ বলে টেলিফোন ছেড়ে দেয়। ওদের আর টেলিফোন করার সময় হয় না কখনো।
ওরা সাত ভাইবোন। এদের ভেতর ওপরের দিকে দুজন মৃত, আব্বা-আম্মা তো বছর পাঁচেক আগে ছ-মাসের ব্যবধানে নেই হয়ে গেলেন।
ভাইবোনদের ভেতর যারা 888sport appয় রয়েছে এরা সবাই এসে ওকে দেখে গেছে। উজাড় করে আদেশ-উপদেশ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে, এটা কোনো রোগই নয়। এর চাইতেও কঠিন সব রোগ ভালো হয় সুচিকিৎসা পেলে। নারিন্দার অমুক হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের বটিকা, পুরনো 888sport appর অমুক পীরসাহেবের ফুঁ-দেওয়া পানি আর চট্টগ্রামের উপেন ডাক্তারের ওষুধে এমন কত রোগী ভালো হয়ে এখন দৌড়াদৌড়ি করছে রমনায়। সব শুনে নেহাল কখনো বিরক্ত হয়েছে, কখনো পেয়েছে হাসি। তবু ভালো লেগেছে। সে এ-জীবনে কখনো ভালো হবে না জেনেও ওদের ভালোবাসা, মমতা, স্নেহের স্পর্শ নতুন করে ওর জন্যে এক ভাবার্থ তৈরি করছে।
ইদানীং প্রায়ই পুরনো সব বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়পরিজনের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে ইচ্ছে করে। সম্পর্কের খাতাটা হাতে পেলে সে হয়তো শুরু থেকে প্রত্যেক মানুষকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারতো; শুদ্ধ করে যত্ন দিয়ে তাদের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিত; রুহি-অর্পিতার কাছ থেকে আদায় করে নিত নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কিংবা কোনোরূপ প্রত্যাশা ছাড়াই নিজেকে ওদের কাছে সমর্পণ করে দিত। তারপরও কি সবার কাছ থেকে একইরকম অবহেলা-অনীহা-অপারগতার বদ খুশবু মাখতে হতো শরীরে?
গ্রিলের ওপর থুঁতনি দিয়ে নেহাল তাকিয়ে থাকে নিচের দিকে। রাস্তার ওপাশে বিশাল দশতলা এক বাড়ি। কুয়াশায় 888sport app আবছা পাহাড়ের মতন মনে হয় স্থাপনাটিকে। গাড়ির হর্ন, মানুষের ছিন্ন কথা কানে ধাক্কা দেয়। দূরে একটা ফার্নিচারের
কারখানা। হাতুড়ি-বাটাল-করাতের শব্দ লেগেই থাকে। সেইসঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ঘোঁত-ঘোঁত ইঞ্জিনধ্বনি বা প্যাডেল মারা রিকশার টুং-টাং তো আছেই।
তবে সবার ওপর হকারদের মাথা গরম করা একটানা হাঁকডাক। চারতলায় বসেও এর থেকে নিস্তার নেই যেন। পুরনো পত্রিকা, বই-খাতা, নষ্ট মোবাইল-কম্পিউটার, সবজি, মুরগি, আপেল-নাশপাতি কী নেই সেখানে? সব উচিত দামে বিকিকিনির আশ্বাস দিয়ে চেঁচিয়ে চলেছে তারা।
এদের ভেতর কেউ ব্যাটারিচালিত মাইকে নিজেদের পণ্যের গুণগান করে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছে বারবার। ন্যায্যমূল্যে লুঙ্গি নিবেন? ভৈরবের খাঁটি লুঙ্গি, দেখে টেনে ঘষে নিবেন।
আবার কখনো ইঁদুর-ছারপোকা মারার অব্যর্থ ওষুধের বিজ্ঞাপন। চায়না তেলাপোকা নিয়ে দুশ্চিন্তা, খাওয়া নষ্ট হয়, শরীর ঘিন ঘিন করে? শুধু এক প্যাকেট, জাদুর মতন কাজ করবে, দুশ্চিন্তা চিরদিনের জন্য খতম।
যখন ওর দৃষ্টিশক্তি অটুট ছিল, তখন এসবের ধার ধারেনি কখনো। এখন এগুলোই ওর নিঃসঙ্গ সময়ের অংশীদার বনে গেছে।
হকারগুলো মাথা উঁচিয়ে বেঢপ গলায় ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘স্যার কিছু কি আছে? ভাঙা মোবাইল? নষ্ট ব্যাটারি? আছে? পুরান যা কিছু সব কিনি, আছে?’
ওর বড় বড় চোখ যে কিছুই দেখে না, ওরা নিচ থেকে মোটেই আন্দাজ করতে পারে না। অনেকক্ষণ ধরে ওরা ওকে ঘাড় উঁচিয়ে পরখ করার পর একসময় ক্লান্ত হয়ে অন্য বাড়ির দিকে ছুটে যায়। নেহাল আবার ভিখিরির মতন নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকে।
একসময় নিজেকে মৌমাছি ভাবতো নেহাল। এ-কথা ভেবে খুব গর্ব বোধ হতো তখন। যা কিছু সুন্দর তা-ই চেখে দেখার ইচ্ছে জাগতো মনে। তীব্র রূপের মোহে জরজর নেহালের কেবলই পৃথিবীর ফুলবাগানে উড়ে বেড়াতে মন চাইতো। সেই তাগিদ থেকে সে ছলে-বলে-কৌশলে রুহিকে ফাঁকি দিয়ে এখানে-সেখানে আনন্দ খুঁজে ফিরত।
চোখের আলো নিভে যাওয়ার পর এখন আর নিজেকে মৌমাছি মনে হয় না। বরং ক্ষুধার্ত একটা মাছির মতন লাগে নিজের অস্তিত্ব। নিজের ওপর তীব্র জিদ, ক্ষোভ, অভিমান, রাগ, উষ্মা, ঘৃণা আর বিতৃষ্ণা ওকে সত্যি সত্যি একটা মাছি বানিয়ে দিয়েছে। সে চারতলার ওপর থেকে একটা ভাগাড় খুঁজে চলেছে। কিন্তু ভুল করে সে চলে এসেছে এক ফুল-বাগানে। যেখানে শুধুই মৌমাছিদের উড়ে বেড়ানোর কিংবা ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ হুল ফুটিয়ে মধু আহরণের কথা। সে তাই মন মরা, হতাশাগ্রস্ত। এত বড় পৃথিবী আর একটা ভাগাড় নেই ধারেকাছে কোথাও! ওর দৃষ্টি চলে যাওয়ার পর কি এ পৃথিবী আরো সুন্দর আর মোহনীয় হয়েছে? এতই সুন্দর যে পুরো শরীর জোছনার পবিত্র চাদরে ঢেকে রয়েছে?
এ-সময় সহসা নেহালের মনে হলো সুতার মতন সাদা-সফেদ কিছু একটা নড়েচড়ে উঠছে ওর দৃষ্টিসীমানায়। সে একাগ্র হয়ে নিচে তাকায়। পেঁজা তুলোর মতন দেখতে সাদা অংশটুকু স্ফীত হতে থাকে ধীরে ধীরে। চমকে উঠে নেহাল। এ তো ওর পোষা বেড়ালটার ছায়া, বড় আদরের অরণী ওর!
একটা ধারালো ছুরি বসানো ওর পিঠে; এফোঁড়-ওফোঁড় করা ছুরিটায় রক্তের নির্মম কালো দাগ। অরণীর কচি নিষ্কলঙ্ক মুখখানা খোলা, দাঁত আর জিহ্বা বেরোনো, একসঙ্গে বিদ্ধ হয়ে জুড়ে রয়েছে মুখের সঙ্গে। বড় কষ্টে প্রাণটা গেছে অরণীর! টানটান নিষ্প্রাণ শরীরের ওপর কটি মাছি ভনভন করে উড়ছে।
নেহাল কেঁদে ফেলে, ‘অরণী, আমার অরণী।’ কিছু দেখতে না পারার, চলতে না পারার অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে একদিন যে নেহাল নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্যে রীতিমতো তৈরি ছিল, সেই মানুষটি, একদা অসম্ভব প্রাণবন্ত আর সপ্রতিভ নেহাল, নিজ হাতে ছুরি দিয়ে ওর পোষা বিড়াল অরণীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
তখনো খানিকটা দেখতে পেত সে। মৃত্যুর আগে অরণী পিছন ফিরে চকিতে যে মায়া আর অবিশ্বাস নিয়ে একবার ওর দিকে তাকিয়েছিল, তা কখনো ওর পিছু ছাড়েনি। কাতর সেই চোখ প্রায়ই ওকে তাড়া করে বেড়ায়।
‘কেন মেরেছিলে অরণীকে?’
‘কানের কাছে মিঁউ মিঁউ করছিল অবিরাম। অন্ধত্বের তীব্র জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ভাবলাম, নিজেকেই শেষ করে দেবো। ঘুমের ভান করে ছুরিটা লুকিয়ে রেখেছিলাম বালিশের তলায়। সহসা কী যে হলো, অরণীর সোহাগমাখা মিঁউ মিঁউ আমার ভেতরকার পশুটাকে জাগিয়ে দিলো সহসা। মনে হলো আমার এ অবস্থার জন্য অবোধ এ-পশুটাই দায়ী। তীব্র ক্রোধ আর আক্রোশে ছুরির পুরোটাই গেঁথে দিলাম অরণীর পিঠে। লাফ দিয়ে ছুরিবিদ্ধ যন্ত্রণাকাতর বিড়ালটা বিছানা থেকে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে পুরো মেঝেটা ভাসিয়ে দিলো। তারপর কাতরাতে কাতরাতে চোখের সামনে মরে গেল। আমি বেঁচে গেলাম! আমি বেঁচে রইলাম!!’
‘আর কিছু?’
‘সেদিন থেকে রুহি আর অর্পিতা আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। ওরা আর আমার রইল না, চিরদিনের জন্য অরণীর হয়ে গেল।’ নেহালের বুক চিরে এ-সময় বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
পোষা সেই বিড়ালটিকেই এখন দেখতে পাচ্ছে সে। স্পষ্ট, আরো স্পষ্ট, একদম স্বচ্ছ কাচের মতন।
নেহালের হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। সে মৃদু স্বরে রুহিকে ডাকে, ‘রুহি, রুহি। অরণী আবার ফিরে এসেছে। কিছু একটা করো।’
কিন্তু ওরা সবাই এখন বাইরে। হাজার ডাকেও ওদের কেউ এই অসময়ে সাড়া দেবে না।
তবু ভেতর থেকে রুহি উত্তর দেয়, ‘মাছি হয়ে যাও। তুমি মাছি ছাড়া এ-জীবনে আর কিছু হতে পারবে না নেহাল। জেনে নাও, ফুলবন তোমার জন্য নয়।’ শ্লেষ ঝরে স্ত্রীর কথায়। এর সঙ্গে মিশে থাকে রাগ আর একরাশ ঘৃণা।
ঝড়ো হাওয়ার বেগে সে ‘কেন’ প্রশ্নটা করতে চাইল রুহিকে। কিন্তু অজ্ঞাত কে যেন ওর মুখ চেপে ধরে রাখে। ওর জীবনের শেষ-প্রশ্নটা নষ্ট হৃদপিণ্ডের মতন শুধুই ধকধক করে লাফাতে থাকে বুকের ভেতর।
গ্রিলে মাথা রেখে হু-হু করে কেঁদে ওঠে নেহাল। সে একা, ভীষণ একা!


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.