দেশচ্যুত মানুষের জীবনাখ্যান

অর্পিত জীবন l চন্দন আনোয়ার l ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ l 888sport app, ২০২০ l ৩২০ টাকা

সাতচল্লিশের দেশভাগ, বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন ও সত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের যুদ্ধ-স্বাধীনতা নিয়ে রচিত 888sport live football অকিঞ্চিতকর নয়। আবুবকর সিদ্দিকের ভূমিহীন দেশ কিংবা হাসান আজিজুল হকের নামহীন গোত্রহীন গ্রন্থের শিরোনাম ও গ্রন্থভুক্ত গল্পসমূহ পাঠককে চকিত ও মোহিত করে। এ এক চরম বাস্তবতার 888sport live chatরূপ। ভারতভাগের পাকিস্তানের একাংশ পূর্ব পাকিস্তান। এখানে মুসলমান প্রধান, হিন্দু 888sport free betলঘু। হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পাড়ি জমায় ভারতে, কেউ যেতে বাধ্য হয়, কেউ বা মাটি কামড়ে পড়ে থাকে নিজস্ব ভিটেয় – দৃশ্য-অদৃশ্য নির্যাতন ভোগ ও অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও। ১৯৬৫-র পাক-ভারত যুদ্ধের পর পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। সরকারপক্ষ সরব হয়। আইন প্রণয়ন করে, ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’, পরিবর্তিত নাম ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন-২০০১’। এসব আইনের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ নিয়ে গবেষণাধর্মী কিছু কাজ হয়েছে। তাতে আছে ইতিহাসনির্ভর সমাজবাস্তবতার কথা। নেই বাস্তুহারা ব্যক্তিমানুষের করুণ মর্মন্তুদ চালচিত্র আর আপন ভিটেয় টিকে থাকার নিরন্তর নীরব সংগ্রামচিত্র। তসলিমা নাসরিনের লজ্জা 888sport alternative linkে মুসলমান কর্তৃক হিন্দুদের নির্মম নির্যাতন-পীড়ন বিধৃত হয়েছে। সেখানে অতিরঞ্জন আছে। চন্দন আনোয়ার সে-পথ মাড়াননি। আইন-ইতিহাসের পূর্ণ প্রেক্ষাপটে না গিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে, 888sport live chatসম্মতরূপে দু-চারটি চরিত্রের অন্তর্দাহ স্পর্শ করেছেন তাঁর অর্পিত জীবন 888sport alternative linkে। চরিত্রের বাহুল্য নেই, আবেগের প্রাবল্য নেই, আছে খানিকটা রহস্যময়তার মধ্য দিয়ে চরিত্রবিস্তার, উপমা-প্রতীক নির্ভর ভাষায় ঘটনাধারাকে অগ্রসর করার প্রকৌশল-দক্ষতা। 

অর্পিত জীবন 888sport alternative linkের মূল চরিত্র সাকিব, সুশান্ত, শ্যামলি এবং চন্দনা। তবে সাকিব সুশান্তের মতো রহস্যঘেরা বৃদ্ধা ভিখারিণীর অবস্থানও 888sport alternative linkের কেন্দ্রবিন্দুতে। ঘটনার উৎস ভূমিতে অধিকার-প্রত্যাশী ভিখারিণী ও সুশান্ত। বিরোধীপক্ষ কাছের মানুষ হয়েও অনেক দূরের – পৈতৃকসূত্রে বিশাল গৃহভূমির দখলদার সাকিব। গ্রামের স্কুলমাস্টারের মেয়ে শ্যামলির বিয়ে হয় রাজনৈতিক নেতা সাকিবের সঙ্গে। তিন পঙ্গু সন্তান নিয়ে শ্যামলি বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সতীর্থ চন্দনা, অরুণ মাস্টার প্রমুখের বসতবাড়ি তথা অস্তিত্ব সংক্রান্ত করুণচিত্র দর্শনে মর্মাহত হয়। তখন থেকেই ঔপন্যাসিক সুকৌশলে শ্যামলির বিদ্রোহের বীজ রোপণ করেন এবং অবৈধ দখলদার অপরাজনীতির নেতা সাকিবের শক্ত ভিতে আঘাত হানে, ফলে শুদ্ধ মানবতার বিজয়পথরেখা সূচিত হয়।

বর্তমান 888sport appsের রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সাকিব চরিত্রটি নির্মিত। পিতা ও প্রপিতা দুজনেই পাকিস্তানপন্থী ছিলেন। পিতামহ ছিলেন মুসলিম লীগের বড় নেতা। সাকিব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলেরই উদীয়মান নেতা। বিশাল সশস্ত্র ক্যাডারবাহিনী, মাঠের রাজনীতি তার নিয়স্ত্রণে। বাড়ির নিচতলাটা রাজনীতির রঙ্গশালা, বিচিত্র মানুষের আসা-যাওয়া, শহরের অস্ত্রধারী টপ টেরর থেকে মসজিদের ইমাম পর্যন্ত এখানে আসে। চিৎকার, হট্টগোল, হাতাহাতি লেগেই আছে। একদিন তো ঘরের ভেতরেই গুলির শব্দ। ত্রাসে-আতঙ্কে শ্যামলি ছুটে গিয়েছিল নিচে। দেখে, সাকিব সোফার ওপর বসে প্রশান্ত মনে আয়েশ করে সিগারেট টানছে। শ্যামলিকে দেখে সাকিব মুচকি হাসে, বাচ্চা রেখে তুমি আবার নিচে নামলে কেন? ছেলেরা পিস্তল নিয়ে লুফালুফি খেলছে। বেয়াড়া একটা গুলি বেরিয়ে পড়েছে আর কি। (পৃ ৬০)

ভোটের রাজনীতিতে এখন সাকিবের মতো অস্ত্রবাজ নেতারাই ক্ষমতাশীল। শক্তি, অর্থ ও কৌশলের কাছে রাজনীতির শুদ্ধচর্চার কোনো মূল্য নেই। ভেতরে পাকিস্তানি ঐতিহ্য লালন করলেও সাকিব ও তার দল প্রকাশ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে কথা বলে। ভোটে জেতার জন্য 888sport free betলঘুদের প্রতি মেকি ভালোবাসা প্রকাশ করলেও প্রকৃত সময়ে ঠিকই সত্যটি বেরিয়ে আসে। পাকিস্তান আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল দলিল করে বনেদি এক হিন্দু পরিবারকে বিতাড়িত করে মহানগরের মধ্যে বিশাল এক বাড়ি দখল করে সাকিবের বাবা-দাদারা। দীর্ঘকাল তারা ভোগ করে আসছে বাড়িটি। সাকিব অবশ্য নিজেও বিষয়টি জানে না। হঠাৎ সুশান্ত নামে এক যুবক, যে কি না লাহিড়ী বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী, কৌশলে প্রবেশ করে কাজের ছেলে হিসেবে। ধীরে ধীরে সবকিছু বুঝে ওঠার পরে সুশান্ত বাড়িটার অধিকার দাবি করে বসে। তখনি শুরু হয় সংঘাত। সামনে মেয়র নির্বাচন, এর মধ্যে সাকিবের মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর দিন আরেকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এক ভিখারিণী, দিবসান্তে বাতরসে ফুলে ওঠা পা টেনেহিঁচড়ে সূর্যাস্তের ঠিক পূর্বমুহূর্তে বাড়িটির সম্মুখে এসে রোজ বসবে, ক্ষুধার্ত চোখে বাড়িটির দিকে দু-দণ্ড তাকিয়ে থেকে চলে যাবে। সাকিবের মায়ের মৃত্যুর দিন সূর্যাস্তপ্রেমী বুড়ির মৃত্যু ঘটে সাকিবের বাড়ির গেটে। জটিল এক সমীকরণ তৈরি হয়। সামনে মেয়র নির্বাচন, শহরের ৭০-৮০ হাজার 888sport free betলঘু ভোটার। মায়ের মৃত্যুর চেয়ে ভিখারিণীর মৃত্যুই সাকিবের জন্য বড় অশনিসংকেত। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সুবর্ণ মুহূর্তে এই বিপদ তীরে এসে তরী ডোবার মতো ঘটনা। সংকট আরো জটিল হয় যখন সুশান্ত বুড়ির লাশ বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে এবং বাড়িতেই লাশ দাহের দাবি তোলে। কারণ বুড়ি সুশান্তকে অনুরোধ করে গেছে, মৃত্যুর পরে তার দাহ যেন এই বাড়িতেই হয়। মুসলমানের বাড়িতের হিন্দুর মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় সাকিবের ক্যাডার বাহিনী ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের মধ্যে তুমুল দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। একসময় সাকিবের স্ত্রী শ্যামলির হস্তক্ষেপে বিষয়টির সুরাহা হয়, এই বাড়িতেই হয় লাশের দাহ। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সাকিবের প্রথম পরাজয় ঘটে। এবং খুব দ্রুততার সঙ্গে আখ্যান এগিয়ে যায়। স্পষ্ট হয়, এই বাড়ির প্রকৃত  মালিক সাকিব নয়, সুশান্ত। সাকিবের রাজনৈতিক শক্তি ও ক্যাডারবাহিনী দিয়ে সুশান্তকে নিশ্চিহ্ন করা মামুলি ব্যাপার। কিন্তু সামনে মেয়র নির্বাচন এবং সুশান্ত নেহায়েত একা নয়, তার পেছনে রয়েছে শহরের গণ্যমান্য হিন্দুরা। তারপরেও সুশান্তকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে। কারণ, সাকিবের বাড়িটির মতো শহরের প্রচুর অর্পিত জমি ও বাড়ি দখল করে আছে সব দলের নেতারাই। বিপরীতে, সুশান্তও যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও কৌশলী। শ্যামলির ভাষ্যে, ‘দেবতার মতো কথা বলে সুশান্ত। ওর সব কথাতেই রহস্য, সব কথাই বিশ্বাস্য, আবার সব কথাই অনির্দেশ্য ভয়ের তীরবিদ্ধ।’ (পৃ ৬৩) 

তিনটি পঙ্গু শিশু এবং গর্ভে আরেকটি শিশু শ্যামলির। সাধারণ স্কুলমাস্টারের উচ্চমাধ্যমিক পাশ মেয়ে শ্যামলি জীবনবাস্তবতার কঠিন এক ফঁদে পড়ে। রাজনৈতিক নেতা স্বামী সংসারের অতিথির মতো গভীর রাতে আসে সকালে বেরিয়ে পড়ে। পঙ্গু শিশু ও অসুস্থ শাশুড়িকে টানার দায়, তার ওপর পেটে নতুন আরেকজনের উপস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে শ্যামলি। 888sport alternative linkের শুরু হয় এই আতঙ্কবার্তা দিয়ে :

শ্যামলি এবার চতুর্থ সন্তানের অস্তিত্ব টের পেল আপন রক্তমাংসে। একটি সুস্থ সবল শিশুর মা হবার লোভের ফাঁদে পা দিয়ে পরপর তিনটি পঙ্গু শিশুর মা এখন। আমি আর একটি প্রতিবন্ধী সন্তানের মা হতে যাচ্ছি! এ ভাবনায় ভয়-আতঙ্কের প্রলয়ঙ্করী ঝড় ওঠে শ্যামলির অন্তর্রাজ্যে। মাত্র দুই সপ্তাহ – চাইলে জ্যান্ত ভ্রূণটিকে হত্যা করা যায়, কিন্তু 888sport promo codeজীবনে মাতৃত্বের স্বাদ এখনো সম্পূর্ণই অপূর্ণ। শস্যহীন বিরান মাঠের মতো হা হা করা শূন্যতা বুকের জমিনে – তিনটি সন্তানের একটিও মুখ ফুটে মা বলে ডাকতে পারে না। (পৃ ৭)

সাকিবের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ নেই তার। কিন্তু একেবারে চোখ-কান বুঁজে থাকে না। বাড়িটাই যেহেতু রাজনীতির অফিস, সবকিছু শ্যামলির জ্ঞাতেই ঘটেছে। সূর্যাস্তপ্রেমীর মৃত্যুকে ঘিরে যখন সংকট ঘনীভূত হয়ে আসে, তখন শ্যামলিই নিজের সাহস ও প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যার সমাধান করে। এভাবে যোগ্য জীবনসঙ্গী হিসেবে সাকিবের দুঃসময়ে পাশে থাকার প্রত্যয়ও ঘোষণা করে – ‘মনোবল শক্ত করো, যে ঝড়ের ভয় তুমি পাচ্ছো, সাহস নিয়ে বুক চেতিয়ে দাঁড়াও, সাথে আমি আছি। আমরা খড়কুটো নই, এই সামান্য ঝড়ে উড়ে যাবো।’ (পৃ ৭২) 

অর্পিত সম্পত্তি দখলের রাজনীতি শুধু মহানগর বা শহরে নয়, গ্রামেও একই চিত্র। শ্যামলি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে। শ্যামলি আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনার মুখোমুখি হয়। স্কুলবান্ধবী চন্দনা ও তার পরিবারে নেমে আসা ট্র্যাজেডি শ্যামলিকে নতুন জিজ্ঞাসার মুখে ফেলে দেয়। দশ গ্রামের বিখ্যাত সেন বাড়ি, সেই ক্ষয়িষ্ণু সেন বাড়ির ও বিশাল পুকুরের দখলদারিত্ব নিয়েছে বাড়িরই কাজের লোক গফুর। অবশ্য গফুর নিমিত্তি মাত্র, তার পেছনে রয়েছে বিশাল চক্র, এই চক্রের মধ্যে পড়ে চন্দনারা অসহায়। কিন্তু চন্দনা কিছুতেই দেশ ছাড়বে না, শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে। কেন যাবে এবং কোথায় যাবে – এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফেরে চন্দনা।

চন্দনার প্রতিবাদ, ক্রোধ, অসহায়ত্ব সবকিছুই শ্যামলিকে যন্ত্রণাদগ্ধ করে। নিরন্তর প্রশ্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোয় শ্যামলি। শ্যামলি বুঝতে পারে না, হাজার বছর ধরে যে-মানুষগুলো একসঙ্গে চলল, এক মাঠে ফসল ফলালো, এক হাটে লেনদেন, কেনাকাটা করল, এক পুকুরের মাছ এক দোকানের মিষ্টি খায় এখনো, সুখে-দুঃখে একসাথে লড়েছে, থেকেছে, যাদের শরীরের রক্ত-মাংস-চামড়া অভিন্ন, ভাষা অভিন্ন, সংস্কৃতি-জীবনাচরণ অভিন্ন, তারা কি করে পরস্পরের শত্রু হয়? 

শ্যামলির সামনে ক্রমশ সত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে জেনে যায়, অরুণ স্যার বা চন্দনাদের ভাগ্যের লিখন কখন কীভাবে পালটে গেল। কখন থেকে কিভাবে নিজ দেশে পরবাসী হয়ে গেল। ধর্মের নামে দেশভাগের পরেই চন্দনারা নিজ জন্মভূমিতে 888sport free betলঘু মানুষে পরিণত হয়েছে। তার ধর্ম সংস্কৃতি ঐতিহ্য সম্পদ বাস্তুভিটা – এমনি জীবনযাপনের সব সূত্র 888sport free betগুরু মানুষের মর্জিমাফিক চলবে। তারা স্বপ্ন দেখেছিল, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলে তাদের মাতৃভূমিতে সাতচল্লিশপূর্বের সেই বাস্তবতা ফিরে আসবে, যেখানে হাজার বছর ধরে হিন্দু-মুসলমান এক হয়ে বসবাস করছে। বাস্তবে দেখা গেল, স্বাধীন 888sport appsে পাকিস্তানি আদর্শের রাজনীতিই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। চন্দনাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়।

অরুণ স্যার বা চন্দনার পক্ষ নিয়ে শ্যামলির যে-লড়াই, সেই লড়াই জটিল এবং অলঙ্ঘনীয় হয়ে ওঠে যখন সে জানতে পারে, স্বামী সাকিবের বাড়িটি তার নিজের নয়। একটি অবস্থাবান হিন্দু পরিবারকে ক্ষমতার জোরে রাতের অন্ধকারে বের করে দিয়ে দখল করে নিয়েছিল সাকিবের পিতা-প্রপিতা। এবং এই বাড়িটির একমাত্র উত্তরাধিকারী সুশান্ত, যাকে ভ্রাতৃস্নেহে কাছে টেনে নিয়েছে। এবং সূর্যাস্তপ্রেমী বুড়ি, যে কি না বাড়ির গেটেই মারা গেছে এবং এই বাড়িতে দাহ হয়েছে, সে ছিল শ্যামলির মতো এই লাহিড়ী বাড়ির বউ। এবার শ্যামলির লড়াই শুধু বাইরের নয়, ভেতরেরও। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী পরিবারের মেয়ে শ্যামলি এবার কার পক্ষে যাবে, নিজেকেই প্রশ্ন করে,

যদি সুশান্তের দাবি ন্যায্য হয়, তবে কোন সত্যের পক্ষে দাঁড়াব আমি? এক সত্যের পক্ষ নিয়ে অন্য সত্যকে অস্বীকার করার শক্তি কী আমার আছে? (পৃ ১৬৯-৭০)

লড়াই শ্যামলির নিজের সঙ্গে-ই বেঁধেছে। প্রথমে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিল এই ভেবে যে, পিতা-প্রপিতার মতো সাকিব পাকিস্তানি আদর্শের রাজনীতি তথা ধর্মান্ধ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। জোড়াতালি দেওয়া একটি জাতীয়তাবাদী দলের অংশ হয়ে নিজেকে মোটামুটি সংশোধন করে নিয়েছে। এই যুক্তিই এখন একমাত্র ভরসা। সাকিব ন্যায়ের পক্ষে নেবে, বাপ-দাদার দখল করা বাড়িটা ফিরিয়ে দেবে প্রকৃত মালিককে। এই যুক্তির সুতো ছিঁড়ে গেলে সাকিব নয়, শ্যামলি নিজেও ফাঁদে পড়বে, বড় কঠিন ফাঁদে পড়বে পঙ্গু শিশুগুলো। এই যুক্তি নিয়ে সাকিবের মুখোমুখি হওয়ার পূর্বে শ্যামলি সুশান্তের মুখোমুখি হয়। কোন যুক্তিতে এই বাড়ি দাবি করেছে? এছাড়া বাড়ির প্রকৃত মালিক রাধানাথ লাহিড়ী রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে এবং সাকিবের প্রপিতা বৈধভাবে জমির দলিল-খারিজ করে নিজের মালিকানায় নিয়েছে। শ্যামলির এই জানা সব মিথ্যা ও বানানো, সুশান্তের বয়ানে স্পষ্ট হয়। (দ্রষ্টব্য পৃ ১৭৫)

তারপর শ্যামলি সাকিবের মুখোমুখি দাঁড়ায় এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যে, সাকিব নিশ্চয় পূর্বপুরুষের পাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ লাহিড়ী বাড়ির দখলদারিত্ব ত্যাগ করবে। কিন্তু বাস্তবতা দেখা গেল উলটো। এবার শ্যামলির নির্বিকার নিষ্ঠুর আক্রমণের মুখে সাকিবের অসহায়ত্বও ফুটে ওঠে।

শেষ পর্যন্ত শ্যামলি অনুরোধ করেছিল সাকিবকে বাড়িটা ছেড়ে দিতে, কিন্তু সাকিব তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে। আর এই প্রত্যাখ্যানের মধ্যে দিয়ে সাকিবের সঙ্গে শ্যামলির সম্পর্কের শেষ সুতোটি ছিঁড়ে যায়। সাকিবের স্ত্রী, সন্তানদের মা, সবকিছুর ঊর্ধ্বে শ্যামলি নিজের অস্তিত্বের স্বাতন্ত্র্যকে মর্যাদা দেয়। এবং শ্যামলির মধ্যে এই দৃঢ় বিশ্বাসও প্রতিষ্ঠিত হয়, বাড়িটি ফেরত দেওয়ার মধ্য দিয়ে সাকিবের পূর্বপুরুষের পাপমোচন হবে, এবং পঙ্গু শিশুগুলো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। কিন্তু সাকিবের কঠোর অবস্থানের কারণে শ্যামলি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, ‘এই মুহূর্ত থেকে আমাদের দুজনের পথ আলাদা হয়ে গেল। পথ যদি এক হয় কোনোদিন, সেদিনই ফিরব।’ (পৃ ১৮৪) এই পথ আর কোনোদিনই এক হবার নয়। শ্যামলির রক্তে-মাংসে-আত্মায় বাঙালি জাতীয়তবাদী চেতনা তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বিপরীতে সাকিবের রক্তে-মাংসে-আত্মায় আছে পাকিস্তানি ঐতিহ্যের চেতনা। এই দুই পথ কোনোদিনই এক হবে না। ‘মানবমুক্তির সুপ্রাচীন বাসনা বুকে নিয়ে রক্তে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে’ শ্যামলি বাড়ির বাইরে পা ফেলেছে।  শ্যামলি তার জায়গায় থেকে সর্বোচ্চ প্রতিবাদ করেছে। পেছন থেকে সুশান্তের ডাকে দাঁড়িয়েছে এবং এখানেই 888sport alternative linkের শেষ। 888sport alternative linkের শেষ বাক্যটি বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ঔপন্যাসিক কোনো উপসংহার টানেননি। মহৎ 888sport alternative link888sport live chatের ধরনই এরকম। এক্ষেত্রে চন্দন আনোয়ার সম্পূর্ণ সফল একজন ঔপন্যাসিক। 888sport alternative linkের শুরু থেকেই তিনি চরিত্র ও ঘটনাধারার মধ্যে এক অদম্য কৌতূহল তৈরি করেন।    চন্দন আনোয়ারের অর্পিত জীবন 888sport alternative linkের ভাষার লালিত্য, আখ্যানের নিরেট বুনন, চিত্রকল্প নির্মাণ, উপমা-উৎপ্রেক্ষার বিস্ময়কর ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখ্য। অসংখ্য উপমা-প্রয়োগ 888sport alternative linkের ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। বৃদ্ধি করেছে 888sport alternative linkের 888sport live chatমান।