দেশবিভাগের 888sport live football

হিন্দু মুসলমানের মধ্যে মিলন না হলে দেশ দু’টুকরো হবে।

– রবীন্দ্রনাথ

আমার বাবা-মা জন্মেছিলেন ব্রিটিশ উপনিবেশিত ভারতবর্ষের পূর্ববঙ্গে। আমার জন্ম দেশভাগের বছর দার্জিলিংয়ে। আমি তাই দুই বঙ্গের ধারায় স্নাত। আমি পাহাড় ও সমতলের সন্তান। শীত ও গ্রীষ্মের সন্তান। পদ্মা ও তিস্তার ধারা। আমার কোনো মেরু নেই। বর্ণ ও গোত্র নেই। আমার ভজন-সৃজন সব মানুষের জন্য। স্বধর্মই আমার ধর্ম। এই চেতনালোক তৈরি হওয়ার আগেই রক্তস্রোতে ভেলায় ভাসতে ভাসতে  উন্মূল-উদ্বাস্তুর মতো বাবা-মায়ের হাত ধরে পাহাড় থেকে নেমে নতুন এক সমতলের 888sport appয় আমার আগমন। এ আমার নতুন দেশ। মনে করা যাক ‘তেজগাঁও থেকে ময়মনসিংহ রোড দিয়ে যাচ্ছেন এবং আশেপাশে ঘরবাড়ি তেমন নেই, নেই গাড়িঘোড়া। আছে কিছু গাছগাছালি আর রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত। রীতিমতো রূপকথার মতো শোনায়।’১ সদ্যোজাত পাকিস্তানের সেই ভিরমি-খাওয়া দিনগুলি ছিল কঠিন, সমস্যাসংকুল, দুঃসময় কণ্টকিত। স্বাধীন অথচ শূন্য দিয়ে শুরু। ঘাড়ের ওপর মোজাহের সমস্যা, খাদ্য সংকট, আস্তিনের নিচে ছুরি, জীবনাতঙ্ক প্রতিমুহূর্তে, জিন্দাবাদ ছাড়া ভাগ্যের আর কোনো পরিবর্তন নেই, সন্দেহ – কে কার দোসর। দেশভাগ ছিল সেই শারীরিক-মানসিক পীড়নের কাল। উগ্র সাম্প্রদায়িক দেশপ্রেম, তার মধ্যে ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রোশ।

অশুভ ধর্মভাবে দ্বিজাতিতত্ত্বের সূত্রে দেশভাগ, ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ারের চৌচির রোমের মতো ভারতবর্ষও হলো বিচূর্ণ। এই বিভঙ্গের পেছনে রাজনীতি, অর্থনীতি-সংস্কৃতি, আত্মস্বার্থ, গোত্রস্বার্থ যা-ই থাক না কেন এর মূল শক্তি ছিল ধর্ম, সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি। ‘সেই ধর্মের নাম সনাতন ও ইসলাম, হিন্দু এবং মুসলমান।’২ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দুশো বছরের ইংরেজ-দুঃশাসন – শাসন করো ভাগ করো নীতি। অভিজাত হিন্দু ও মুসলমানের ক্ষমতালিপ্সা এবং বিদেশে পড়া ইংরেজি জানা দাপুটে কিছু ভারতীয়র তীব্র চাওয়া।

ভারতে দীর্ঘ মুসলমান শাসন ও আধিপত্যের অবসান হোক – এটা সকল হিন্দুর চাওয়া ছিল। কিন্তু বিভেদ, অক্ষমতা, হীনস্বার্থ ভারতে হিন্দুর দুরবস্থাকে প্রলম্বিত করে প্রায় সাতশো বছর। এই বিদেশিদের শাসনে হিন্দুরা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছায়। সেই ক্ষোভ ও ঘৃণা থেকে তারা মন্দের ভালো হিসেবে মেনে নেয় আরেক বিদেশি শাসক ইংরেজের শাসন। তাদের কাছে-পাশে থেকে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে একশ বছরের মধ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে ধনে-মানে-শিক্ষা-সংস্কৃতিতে। আর পরাজিত মুসলমান সমাজ নেমে যেতে থাকে তলানিতে। 888sport free betলঘু মুসলমান দিন দিন হতে থাকে দীন-হীন-দুর্বল-অশক্ত। ততদিনে শিক্ষাদীক্ষায়-শক্তিতে এগিয়ে ঘটে গেছে হিন্দুর নবজাগরণ। পাশ্চাত্য সভ্যতার শিক্ষাদর্শ গ্রহণ করেও তারা প্রাচ্যবিদ্যা, দর্শন, ধর্ম ও মানসিকতা লালন করে ‘নবজাগৃতি শেষ পর্যন্ত হিন্দু জাগৃতি ও হিন্দুধর্মের পুনরুত্থানের রূপ গ্রহণ’৩ করে অগ্রসর হয়। তখন ভারত মানে ঔপনিবেশিক দুর্বৃত্ত ইংরেজ আর ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুর আধিপত্যবাদ। লঘিষ্ঠ মুসলমানসহ 888sport app ধর্মসম্প্রদায় ছিল সেখানে অধমর্ণ বা অধমাধম বিশেষ।

মুসলমান শাসন-শোষণের অবসান হলেও বর্তমান রইলো পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজের শাসন-শোষণ-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার, লুটপাট ও ভেদনীতি। অন্যদিকে জিইয়ে রইলো হিন্দু-মুসলমান-শিখ দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ। তাতে ভারতভূমি হয়ে উঠলো অবলা 888sport promo codeর মতো অসহায়। কিন্তু আকর্ষণ হারালো না কৃষ্ণকান্তের উইলের রোহিনী ও চোখের বালির বিনোদিনীর মতো। তখন চলছে মানবসভ্যতার বসন্তখ্যাত বঙ্গীয় রেনেসাঁস। মানুষের সার্বিক মুক্তির বাণী নিয়ে তা এসেছিল বঙ্গ উপকূলে। ‘Modern India evolved out of the awakening of nineteenth century is a historic truth and it was Bengal which was the centre of this awakening’৪ পরাধীনতা, উপনিবেশিতা ও শোষণ-বঞ্চনার মধ্যেও যে নবজাগরণের যুগান্তর সম্ভব রাজা রামমোহন রায়, ঈশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম তার উজ্জ্বল উদাহরণ। অথচ তাঁরা আসার পরও স্বাধীন হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান হেঁটেছে রেনেসাঁসের উল্টো পথে। বঙ্গীয় রেনেসাঁসের শ্রেষ্ঠ ফসল যে বাংলা 888sport live football সে তো পরাধীন যুগেরই ফসল। দেশভাগ বা স্বাধীন দেশের 888sport live football সে তুলনায় আজো অনুজ্জ্বল, অকিঞ্চিৎকর।

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু, নজরুল-সুকান্ত-পঞ্চপাণ্ডবের আগমন, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, ১৯১৭-এর রুশ বিপ্লব, প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, আগস্ট আন্দোলন, স্বরাজ ও স্বদেশি আন্দোলন, অহিংস আন্দোলন, সহিংস আন্দোলন, কুইট ইন্ডিয়া আন্দোলন, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, মার্কসীয় দর্শনের আবির্ভাব, দেশভাগের হীন রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবল সবই সংঘটিত হয় বিভাগপূর্ব বঙ্গে। এই সকল আন্দোলনের মধ্যে ধর্মের বিভাজন পালন করে মুখ্য ভূমিকা। ধর্মকে বগলে রেখে কোনো আন্দোলনই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারল না বিরোধের রাজনীতি ছাড়া। এই ভেদনীতির দায় চাপানো হলো ইংরেজের ওপর। সবাই ‘ব্রিটিশ বিভেদনীতির উপর সবটুকু চাপিয়ে ভাবছে ব্রিটিশ বিদায় নিলে সাম্প্রদায়িকতাও বিদায় নেবে। কিন্তু ব্রিটিশের যখন যাবার সময় হলো, ততদিনে সাম্প্রদায়িকতার ক্ষীণ ঝর্ণাধারা বেগবতী নদীতে পরিণত হয়ে দু’তীরে ভারত ও পাকিস্তানের নিম্ন সীমানাকে চিহ্নিত করেছে।’৫ যার ফল ১৯৪৬-এর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।

সম্প্রদায়গত ভেদবুদ্ধি থেকে সাম্প্রদায়িকতার উৎপত্তি। সম্প্রদায়ের শ্রেণি আছে কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার কোনো শ্রেণি নেই, বর্ণ নেই, গোত্র নেই। এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভিন্ন সম্প্রদায়ের যুদ্ধ, দাঙ্গা, সংঘর্ষ, রক্তপাত, মৃত্যু, জ্বালাও-পোড়াও নীতি সম্প্রদায়ের চরিত্র করে তোলে বর্বর, পাশবিক, কদর্য ও সভ্যতা-ভব্যতার পরিপন্থী। সম্প্রদায় অহম বা কৌলীন্য, ঘৃণা বা বিদ্বেষ যদি একবার মস্তিষ্কে ঘণ্টা নাড়ে তাহলে সকল ভিন্নধর্মী সম্প্রদায়ের ব্যক্তি-গোষ্ঠী যে-কোনো সময় তার আক্রমণের শিকার হতে পারে। এই অশুভ বোধকে উৎসাহিত করে তার ধর্মবুদ্ধি, ধর্মান্ধতা ও ধর্মবড়াই। বঙ্গে এই ধর্মবড়াই বা ধর্মদ্বেষ নতুন নয়, বেশ পুরনো। আশা করা গিয়েছিল বঙ্গীয় রেনেসাঁস এসব দুষ্ট পন্থা, পাপ, পরন্তপকে ধুয়ে-মুছে বাংলার সমাজ ও মানুষকে অহিংস মানবতাবাদী শুভবুদ্ধিবাদী ও সর্বজনমঙ্গলপন্থী করে তুলবে। বিশেষত বিশ শতকের স্বর্ণযুগে, আধুনিকতা ও প্রগতির যুগে, যুক্তি ও 888sport apkের যুগে বাঙালি আলোড়িত হবে বুদ্ধির মুক্তি চেতনায়, স্বদেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনায়, সেক্যুলার চেতনায় ও সাম্য-মৈত্রী-ভালোবাসার চেতনায়। কিন্তু সকল আকাক্সক্ষা যেন ‘সকলি গরল ভেল’। বাঙালি ভেদবুদ্ধি, ধর্মবুদ্ধি, শাস্ত্রবুদ্ধির ওপরে উঠতে পারল না। শুধু বেড়ে গেল সাম্প্রদায়িক বুদ্ধি। ইউরোপেও এ-সময় খ্রিষ্টান ও প্রোটেস্টান মৌলবাদের বিকাশ ঘটে।  বহু জায়গায় সংঘটিত হয় সংঘর্ষ। আমেরিকাতেও এসময় গড়ে তোলা হয় প্রচুর মৌলবাদী স্কুল-কলেজ। রমা রোঁলা, রাসেল, রবীন্দ্রনাথ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন। উনিশ ও বিশ শতকের বঙ্গে এর সূচনা করে ইংরেজ। আর তাকে প্রলম্বিত করে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ, যার বিস্তার এখন ঘটছে জ্যামিতিক হারে। বঙ্গীয় রেনেসাঁসের অন্যতম অবদান হলো ‘Social reform, rationalism, secular humanismÕ।৬ আজাদির পূর্বেই এসব শুভ চেতনা মুখ থুবড়ে পড়লো বঙ্গের পাটাতনে। 

হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব, সংঘাত, শত্রুতার কারণে প্রলম্বিত হচ্ছিল ভারতের আজাদি সংগ্রাম। ইংরেজও কৌশলে জিইয়ে  রাখছিল সেই বৈরিতা। তাদের বুকে-পিঠে নীতি শেষ পর্যন্ত রুখতে ব্যর্থ হয় ভারতের আজাদিকে। ভারত ভাগ ও স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয় ইংরেজ। কিন্তু বাংলার ভাগ চেয়েছিল ইংরেজ, হিন্দু-মুসলমান ও অবাঙালি সকলে। কারণ বাংলায় আছে সুভাষ বসু, শরৎ বসু, অরবিন্দ ঘোষ, শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, সরোজিনী নাইডুর মতো ভারত-কাঁপানো রাজনীতিক, সংগ্রামী ও দেশপ্রেমী। সুতরাং বৃহত্তর বঙ্গ থাকলে ভারতের রাজনীতির ক্ষমতা চলে যাবে বঙ্গদেশে। তাই সবার ষড়যন্ত্রে বাংলা ভাগ হলো। যেন সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা ‘বিভক্ত বাংলা হয় ভারতের 888sport app অঞ্চলের লোকদের শোষণ ও মুনাফা শিকারের অবারিত মৃগয়াক্ষেত্র। … বঙ্গ ভাগের দাবি আসলে কলকাতাকে কুক্ষিগত করার অপপ্রয়াস বৈ আর কিছু নয় এবং এইভাবে তারা মুসলমানদেরকে ব্যবসা ও বাণিজ্য থেকে বঞ্চিত করবে।’৭ বাংলা ভাগ হবেই জেনেও শরৎ বসু, সোহরাওয়ার্দীরা চেয়েছিলেন বাংলার মানুষ যেন দ্বেষ-হিংসা ভ্রাতৃঘাতী আত্মঘাতীর শিকার না হয়, সোনার বাংলাকে ধ্বংস না করে, হিন্দু-মুসলমান মৈত্রীভাব বজায় রেখে রবীন্দ্র-নজরুলের অব্যয়-অক্ষয় উন্নত স্বর্গাদপি বাংলা আপন মর্যাদায় আসীন থাকে। কিন্তু কোনো আশাই পূরণ হলো না। পাঞ্জাবের মতো বাংলাও হয়ে উঠলো ঘৃণা ও দাঙ্গার দূষিত নরকাবাস।

‘পঞ্চাশ দশকে বঙ্গদেশ ও বঙ্গসমাজে গুরুতর আলোড়ন ঘটেছিল। দশ বছরের (১৯৪১-১৯৫০) দেশকাল-জীবন ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে দ্রুত আবর্তিত হচ্ছিল। জাপানি আক্রমণ (১৯৪১), আগস্ট আন্দোলন ও মেদিনীপুরে বিধ্বংসী বন্যা (১৯৪২), পঞ্চাশের মন্বন্তর (১৯৪৩), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া রণাঙ্গনে সমরায়োজনের মঞ্চরূপে কলকাতা ও বঙ্গদেশকে ব্যবহার (১৯৪১-৪৫), রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা (১৯৪৬), দেশ বিভাগ, স্বাধীনতা, উদ্বাস্তুস্রোত (১৯৪৭-৫০) – এক রুধির স্রোতের মধ্য দিয়ে বাঙালিকে পা ফেলে চলতে হয়েছে।’৮ এই সমূহ সামাজিক-রাষ্ট্রিক ওলোটপালটের উত্তেজনা ও অভাবিত বিষয়সমূহের বিপর্যয়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় দেশভাগ, যে ভাগে বাঙালি হিন্দু-মুসলমান কেউ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। ভাগ, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, সন্ত্রাস, উদ্বাসনের ভেলায় চেপে ‘হৃতসর্বস্ব, বুভুক্ষু আপামর মানুষের জীবনে তবু এল স্বাধীনতা।’৯ অনাকাক্সিক্ষত স্বাধীনতার ফলেই দুটো দেশ জড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধে। সাম্প্রদায়িকতার মতো বর্বরতম অমানবিক একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে চলে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, খুন, দখলবাজি। চলে সভ্রমহানির উৎসব। চারদিকে রক্ত আর অশ্রুর সম্পাতে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। জন্মভূমি হয়ে ওঠে জ্বালাভূমি। শুভ মানুষের সেক্যুলারিজম, সোশ্যালিজম, মডার্নিজমের চেতনা কোনো কাজে লাগলো না দানবীয় চেতনার সমুচ্চারে।

‘ভারত ভাগ অনিবার্য ছিল কারণ বিভাজনের বীজ বহু শতাব্দী আগেই বপন করা হয়েছে এবং ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ব্রিটিশ আমলে বিভাজন বৃক্ষটি পরিচর্যা করেছেন’১০ তাঁদের স্বার্থকে নিষ্কণ্টক করতে। তাছাড়া ভাগকে ষোলোকলায় পূর্ণ করতে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈনরাও কম দায়ী নয়। এর অন্যতম কুশীলব হিন্দু ও মুসলমান। ইংরেজের বিভাজননীতির বিষ খেয়ে এরা অনুমান করতে পারেনি কোন দুর্ভাগ্য তাদের জন্য প্রতীক্ষা করে আছে আগামীতে।

গান্ধী ও জিন্নাহ মূলত একই মনোভাব পোষণ করতেন যে, স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানে সকল নাগরিক তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ করবে জাত, ধর্ম, বর্ণকে প্রাধান্য না দিয়ে। ‘আমি মনে করি এটাই হবে আমাদের আদর্শ। হিন্দুর হিন্দুত্ব এবং মুসলমানের মুসলমানিত্ব ধর্মীয় অর্থে বিলোপ না পেলেও রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক অর্থে বিলুপ্ত হবে।’১১ ভারত ও পাকিস্তান, সুইডেন ও ডেনমার্কের মতো হবে দুটি সুন্দর দেশ – এ-আশাও ছিল নেতাদ্বয়ের; কিন্তু সে-চাওয়া ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ ভারত ছিল পশ্চাৎপদ বহু জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মসম্প্রদায়ের দেশ। তাই বিভেদ-বিসম্বাদও ছিল বহুমাত্রিক। ১৯৪৭-এ সে বিভেদ কাটানো সহজ ছিল না। তাই তো দ্বিজাতিতত্ত্বের জয় জয়কার। সেই জয়ের মালা পরে ১৯৪৭-এ যে গণঅভিক্রমণ ঘটেছিল দু-দেশের মধ্যে তা হয়ে আছে মানব জাতির ইতিহাসে এক ভয়ংকর অভিক্রম-ট্র্যাজেডি। ওই সহিংসতার বলি হয় দশ লাখ মানুষ আর বাস্তুচ্যুত হয় দশ কোটি মানুষ।

এ-সময় আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে ধ্বনিত হয় পরস্পরবিরোধী দুটি সেøাগান – ‘হর হর মহাদেব’ – ‘আল্লাহ আকবর’। দ্বিজাতিতত্ত্বই এই সেøাগানের উৎস। ধর্মীয় সেøাগানই খাপ থেকে বের করে আনে তরবারি, ঘর থেকে দা, লাঠি, বল্লম, বর্শা, বন্দুক, নিভিয়ে দেয় আলো, ঘটায় অশনি সম্পাত। মানব জাতির এত বড় বিপর্যয়ে আমাদের 888sport live footballের ভূমিকা খুব আশাপ্রদ নয়। অথচ উচিত ছিল এপিক, মর্সিয়া, মহাভারত রচনার। কিন্তু অনীহা বা অবহেলায় তা সম্ভব হয়নি। অথবা সক্ষমতা ছিল না একজন টলস্টয়, হেমিংওয়ে বা এরিক মারিয়া রেমার্কের শক্তি ও সৃজনের। এই অভাব পূরণের কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, দেবেশ দাস, সরোজকুমার রায় চৌধুরী, মনোজ বসু, রমাপদ চৌধুরীরা।

দুই

উনিশ শতকের নবজাগরণকালে ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নেতা-পণ্ডিত, সুশীল ব্যক্তিবর্গ ভারতকে একটা সেক্যুলার স্টেট, রিলিজিয়ন নিউট্রালিটি বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে বা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন পাশ্চাত্য ভাবনা থেকে। তার মানে, ভারত এমন সেক্যুলার ছিল না। থাকলে সে-সময় কলকাতা মাদ্রাসা (১৭৮১), সংস্কৃত কলেজ (১৭৯১) বা হিন্দু কলেজ (১৮১৭) প্রতিষ্ঠিত হতো না। প্রতিষ্ঠিত হতো না আলিগড় মহমেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ (১৮৭৫)। শিক্ষা  ক্ষেত্রে এই ধর্মীয় বিভাজন কিছুটা কমিয়ে ইংরেজ সরকার ১৮৫৪ সালে হিন্দু কলেজকে প্রেসিডেন্সি কলেজে রূপান্তরিত করে। তারপরও মনে পুষে রাখা ধর্মীয় বিভাজনসূত্রে নবাব আব্দুল লতিফ (১৯২৯-৯৩), সৈয়দ আমীর আলী (১৮৪৯-১৯২৯), নবাব সলিমুল্লাহ (১৮৬৬-১৯১৫), সুরেন ব্যানার্জী (১৮৪৮-১৯২৫) বা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়দের (১৯০১-১৯৫৩) ধর্ম ও সম্প্রদায়গত নীতির কারণে দ্বিজাতিতত্ত্বের বিজয় সম্পন্ন হয়। ‘দ্বিজাতিতত্ত্বের বিজয় লাভের পর নেতৃবৃন্দ লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্ত আর অশ্রুর কথা বিস্মৃত হয়ে স্বাধীন ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন।’১২ একই কথা প্রযোজ্য পাকিস্তানি শাসকদের ক্ষেত্রে। দু-দেশের ধর্মীয় পরিচয় বড় হয়ে দেখা দিলো মানুষের পরিচয়কে ছাপিয়ে। মসজিদ-মন্দির, কোরআন-পুরাণ, হিন্দু-যবন, রাম-রহিম, টুপিদাড়ি-টিকি, ধুতি-লুঙ্গি, নামাজ-পূজা, গজল-কীর্তন – যা চলছিল শত শত বৎসর ধরে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে তা আরো প্রবল হয়ে উঠলো স্বাধীন পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানের ভূলোকে। হিন্দুরা যখন বললো – ‘গরব সে কহো হাম হিন্দু হ্যায়’, তখন মুসলমানরা বললো – ‘ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ’। হিন্দু কলেজকেন্দ্রিক 888sport live footballচর্চার ধুম পড়লো তো তৈরি হলো ‘মহমেডান লিটারারি সোসাইটি’ (১৮৬৩)। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে মৌলানা আজাদ বলেছিলেন, ভবিষ্যৎ সংবিধানে মানুষ তার সম্প্রদায়গত পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে পরিচিত হবেন কৃষক, জমিদার, শ্রমিক বা পুঁজিপতি হিসেবে।’ কিন্তু তা হয়নি। হিন্দু-মুসলমান-শিখদের যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেশভাগকে শুধু রক্তাক্ত করেছে তাদের ধর্মীয় আইডেনটিটি ও অহং রক্ষার্থে। ভারতের একমাত্র বঙ্গদেশে এর কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। কারণ এটা ছিল সমন্বয়বাদী, সেক্যুলার ভাবাপন্ন চৈতন্য, চণ্ডীদাস, শাহজালাল, লালন, হাছন রাজা, মজনু শাহ, ভবানী পাঠক, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুভাষ বসু, শেখ মুজিবের 888sport apps। যার বন্দনা আমরা শুনি হেম-নবীন-রঙ্গলাল, দীনবন্ধু, রবীন্দ্র-নজরুল-কায়কোবাদ-মোজাম্মেল হকে। এরা কেউ হিন্দুর জন্য মুসলমানি, মুসলমানের অবনতির জন্য হিন্দুকে দায়ী না করে প্রশ্ন করেছেন –

এক দেশে বাস হিন্দু-মুসলমান

শিরে বহে এক রাজার বিধান

হিন্দুরা উন্নত তোরা অবনত

কেন হলি তাহা ভাব কি কখন?১৩

দিল্লি-লাহোরের মতো দেশভাগ বাঙালির সবকিছুকে ভাগ করতে পারেনি। দেশভাগ বাঙালির অন্তরকে ব্যথিত, বিষিত করেছে সত্য, কিন্তু বৈরী শত্রু ও বিদলিত করেনি। শুধু একটা জ্বালায় জ্বলা –

নিরুদ্দেশ নৌকা হয়ে কত ঘাট পার করে

শেষ হাত স্বর্গ পায় কত

উচ্ছ্বসিত, ফেনপূর্ণ, সে স্বর্গ পেয়েছ তুমি

হে ক্ষত বিক্ষত।১৪

কিংবা – 

আমরা সবাই কাঁটাতার পেরোলাম

আমরা সবাই, ঘাড় নীচু, মাথা নীচু।১৫

একালে দেশ ছেড়ে কোনো দেশে যাওয়া আছে, দুঃখ-দারিদ্র্য-দহন আছে; কিন্তু পাঞ্জাব-লাহোরের মতো রাতের ট্রেনে যাওয়া উদ্বাস্তুদের ওপর বিজাতীয়দের ধর্ষণ নেই, খুন নেই, লুটপাট নেই। যেখানে হিন্দু মুসলমানকে, মুসলমান হিন্দুকে  বা শিখকে বা ইন্ডিয়ান আর্মি ইংরেজকে খুন-ধর্ষণ করছে। আর পার্সিরা ভয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে লুকোচ্ছে স্বগৃহে। দেয়ালে ঘোষণা করা হয়েছে ধর্মীয় পরিচয়। ‘একটা বড় আকারের ক্রসচিহ্ন যাতে বোঝা যায় তারা খ্রিস্টান। অন্যটিতে উর্দু হরফে লিখা ‘পারসি বা মাকান’।’১৬ বাঙালির দেশভাগ এমন নিষ্ঠুর নয়। হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে পালাচ্ছে, এক গাছের তলায় বা স্টেশনে খাচ্ছে, কোনো পরিত্যক্ত ভবনে ঘুমোচ্ছে। শুধু দুঃখ ফেলে আসা তুলসীতলা, কারো পুুঁইমাচা, কারো আম-জামের বাগান, কারো বা পুন্নি পুকুর। এমন চিত্র আমরা পাই ঋত্বিক ঘটক, গৌতম ঘোষ বা সৃজিত মুখার্জির live chat 888sportে। পাই অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, শঙ্খ ঘোষ বা জয় গোস্বামীর 888sport app download apk ও কথা888sport live footballে।

দেশভাগ যে মুসলমান চায়নি ১৯২১ সালে অল ইন্ডিয়া আহমদাবাদ মুসলিম লিগ অধিবেশনের সভাপতি মাওলানা হসরৎ সোহানী প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব করে তা প্রমাণ করেন। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলান বাংলার চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষ বসু, কাজী নজরুল ইসলাম বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু সমর্থন মেলেনি গান্ধী, জিন্নাহ, নেহেরু, প্যাটেল বা গোখলের চাওয়ায়। ‘১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব ছিল ভারতবর্ষের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের প্রদেশের সার্বভৌম স্বাধীনতার প্রস্তাব। এরই পক্ষ ধরে বাংলা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোওরাওয়ার্দী অবিভক্ত 888sport appsের স্বাধীনতা দাবি করেছিলেন। … শরৎ বসু এবং প্রাদেশিক মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিমসহ অনেকেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রস্তাব সমর্থন করেন। কারণ তাঁরা জানতেন, ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার অর্থই হবে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক ভাবনার উৎকট উদ্ঘাটন।’১৭ শহীদ সোহরাওয়ার্দী (১৯৪৬) দেশ ভাগের শেষ সময় পর্যন্ত চেয়েছিলেন 888sport apps অবিভক্ত থাক। কিন্তু জিন্নাহ-প্যাটেলদের কারণে তা সম্ভব হয়নি, কারণ তাঁরা সবার আগে ছিলেন হিন্দু ও মুসলমান। তাঁরা ছিলেন ‘ইংরেজ সৃষ্ট ফ্রাংকেনস্টাইন দানব’ (যশোবন্ত সিংহ, পৃ ৩)।

পলাশির যুদ্ধ ও জয়-পরাজয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিশেষ কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া হয়নি। অনেকটা প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তারও একশ বছর পর সংঘটিত ১৮৫৭ সালে সিপাহী যুদ্ধ মহাবিদ্রোহকালে। বেঙ্গল আর্মি এই বিদ্রোহে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। জনগণ এই বিদ্রোহ থেকে ছিল অনেক দূরে। এ বিদ্রোহ ছিল ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সৈনিকদের যুদ্ধ। বিশেষত তাদের বৈষম্যনীতি, লুটপাট, বিশ্বাসঘাতকতা, চতুরতা ও অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে এই দ্রোহ ছিল একটা অভিঘাত। মার্কসও তাই মনে করতেন, বললেন – ‘ধর্ম রক্ষার জন্য যে লড়াই আরম্ভ হয় স্বাধীনতা যুদ্ধে এসে তা শেষ হয়। এই বিদ্রোহ ও ট্র্যাজেডি নিয়ে রাহমান চৌধুরী একটি নাটক লেখেন। লেখার প্রেরণা ও উৎস ছিল প্রমোদ সেনগুপ্তের ‘ভারতীয় মহাবিদ্রোহ’ গ্রন্থটি (১৯৮৫)।’১৮ এ নিয়েও বাঙালির আর বিশেষ কোনো লেখা নেই। অতঃপর প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ নিয়েও বঙ্গের লেখকরা খুব আলোড়িত হননি বা লেখালেখিতে বিশেষ মনোনিবেশ করেননি। আলোড়িত হলেন সেদিন যেদিন ১৯৪১ সালে জাপানিদের বোমা পড়লো কলকাতায়। ‘আর অস্বীকার করা গেল না। মন্বন্তর, দুর্ভিক্ষ, বন্যার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ংকর যুদ্ধ ভারতে বিশেষ করে আসাম ও বঙ্গদেশের ঘাড়ে এসে পড়ল।’১৯ বাংলার কবি-লেখক এবার নড়েচড়ে বসলেন ভেতর ও বাইরে থেকে।

যুদ্ধ, বন্যা, দুর্ভিক্ষে গেল গেল রব উঠলো বঙ্গদেশে। পণ্যের দাম বাড়লো। সুদ-ঘুষ-কালোবাজারি বাড়লো। ঘরের বউ-মেয়েদের অনেকের ঠাঁই হলো পতিতালয়ে। দেশবিভাগ ডেকে আনলো আরো মানবিক বিপর্যয়। দেশত্যাগের যন্ত্রণায় পুড়লো কোটি মানুষের অন্তর। রক্ত ঝরলো অনেকের। সন্ধান  মিললো না অনেকের। কালো রাত্রির কালো বন্যা বয়ে গেল বঙ্গদেশের ওপর দিয়ে। ছেচল্লিশের দাঙ্গা ধারণ করলো সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক মহামারি। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলির ইতিহাস যেন অনেকটাই পাথরে চাপা পড়ে থাকলো আমাদের 888sport live footballে। অথচ এই সময়টা নিয়ে অমৃতা প্রীতম, ভীষ্ম সাহানি, কুররাতুলাইন হায়দার, আতিয়া হোসেন, নয়নতারা সেহগল, খুশবন্ত সিং বা খাজা আহমদ আব্বাস যে-ধরনের সমৃদ্ধ, উন্নত 888sport live football নির্মাণ করেছেন তার তুলনা বাংলা 888sport live footballে মেলে না। যা মেলে তাকে মহৎ 888sport live football বলা মুশকিল। সেগুলিকে বড়জোর বলা যায় তৎকালীন ‘ইতিহাসের বহুবর্ণময় ভাষ্য’ সম।২০

তিন

বৃহৎ বঙ্গ, সমৃদ্ধ বঙ্গ, সুজলা-সুফলা বঙ্গ, নবজাগরণের বঙ্গ, 888sport live chat-888sport live footballের খনিস্বরূপ আধুনিক বঙ্গকে ভাগ করার যথেষ্ট কারণ ছিল স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর। ১. ইংরেজ চায়নি বাংলা অখণ্ড থাক। ২. বাংলার শহরের জাতি-সম্প্রদায়গুলিও চায়নি বাংলা অবিভক্ত থাক। ৩. বাংলার আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দী যদি চাইলেন বাংলা অখণ্ড থাক তো খাজা নাজিমউদ্দীন-আকরম খাঁ’রা চাইলেন বাংলা ভাগ হোক। ৪. শরৎ বসু, সুভাষ বসু চাইলেন বাংলা ভাগ হবে না তো শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় চাইলেন ভাগ হবে। ৫. রবীন্দ্র-নজরুল চাইলেন বাংলা অভিন্ন থাকবে তো ভগ্নের পক্ষে দাঁড়ালেন ইসমাইল হোসেন শিরাজী। ৬. দুই বিপরীতমুখী সেøাগান ‘বন্দেমাতরম’, ‘নারায়ে তাকবির’ বাংলা ভাগে ইন্ধন জোগালো। ৭. দ্বিজাতিতত্ত্বের ধর্মতত্ত্ব-জাতিতত্ত্বের বেগবান গতি বাংলা ভাগকে তীরে পৌঁছে দিলো। ৮. হিন্দু মহাসভার উগ্রতা ও মুসলিম লীগের ডাইরেক্ট অ্যাকশন নীতি বাংলা ভাগে ঘৃতাহুতি দিলো। ৯. ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, ‘ভারত মাতা কী জয়’ বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করেই ছাড়লো। এছাড়া হিন্দু লীগ, মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, ‘মুসলিম 888sport live football সমাজ’ (১৯২৬-৩৬) প্রতিষ্ঠা বা স্বদেশি সমাজ প্রতিষ্ঠা দেশ বিভাগকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু দ্রুত সাতচল্লিশেই তা সম্পন্ন হবে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ভেবে কূল পায়নি বঙ্গবাসী। অথচ ‘দেশ বিভাগের মতো বিধ্বংসী একটা কিছু ঘটতে পারলো, যা চল্লিশ দশকের গোড়াতেও দেখা যেত না, ১৯৪২ সালের আগে যে বিষয়ে কোনো বুদ্ধিগ্রাহ্য ধারণাও জন্মায়নি’২১ – সাতচল্লিশের মধ্যেই তা হয়ে উঠলো অনিবার্য সত্য – তার তা সত্য করে তুললেন (৭ই মে ১৯৪৭) কলকাতায় যদুনাথ সরকার ও মুসলিম লীগপন্থীরা।

উনিশ শতকের আধুনিক সেক্যুলার নবজাগরণের 888sport live footballধারার সঙ্গে আরো দুটো 888sport live footballধারা – হিন্দুয়ানি 888sport live football ও মুসলমানি 888sport live footballধারা গড়ে ওঠে। এই ভাগ নীতির ফলে বিশ শতকের বিশ-ত্রিশ দশক থেকে বাঙালির 888sport live football-সংস্কৃতি সাম্প্রদায়িকভাবে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়। ‘একটির নাম হিন্দু সংস্কৃতি এবং অপরটির নাম হয় মুসলিম সংস্কৃতি। এইভাবে জাতীয়তাও দুটি সম্প্রদায়ের লেবাসে পরিণত হয়।’২২ আর রাজনীতিবিদরা এই সুযোগে ধর্মীয়ভাবে ভাগটা পাকাপোক্ত করে ফেলেন। বঙ্কিম যখন মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ‘যবন’, ‘মেøচ্ছ’ বা ‘নেড়ে’ বলে আখ্যায়িত করে অপমান করলেন তখন মশাররফ বললেন, ‘বিশ্বাসঘাতক হিন্দু দুষ্ট প্রবঞ্চক/ যেই পাতে খায় ফোঁড়ে এমনি পাতক।’ ফলে জাতভাগ থেকে দেশভাগ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

বিশ শতকের চল্লিশ দশক থেকে ভাগের রাজনীতি এত প্রবল হয়ে ওঠে যে, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের মিলনের

সংস্কৃতি চাপা পড়ে যায়। এ সময় ভারতবাসীর সুমতি ও প্রগতির জন্য, ঐক্য ও সমন্বয়ের সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য ‘অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯৩৬), ‘ইয়ুথ কালচারাল ইনস্টিটিউট’ (১৯৪০), ‘অ্যান্টি ফ্যাসিজম রাইটার্স অ্যান্ড আর্টিস্টস ইউনিয়ন’ (১৯৪২) এবং পরিশেষে ‘ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন’ বা আইপিটিএ (১৯৫৩)-এর২৪ শত সম্প্রীতির উদ্যোগ কার্যত ব্যর্থ হয় সংঘাত ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে। কাজে লাগলো না মিলনের গান ‘মোরা একটি বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।/ মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ ॥/ এক সে আকাশ মায়ের কোলে/ যেন রবি শশী দোলে,/ এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান ॥’২৫ এমন সম্প্রীতির গানকে পদদলিত করে ভাগই হয়ে উঠলো বঙ্গজননীর ভাগ্যলিখন। হিন্দু-মুসলমানের রশি টানাটানিতে কেউ জিতলো না, জিতলো ইংরেজ আর ধুলায় লুটোপুটি খেল দুটি পরাধীন জাতি। স্বাধীনতার নাম হলো রক্তপাত, ঘৃণা, হিংসা, বিদ্বেষ, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ ও দুঃখার্ত। সেই ট্র্যাজিক সময়টা ও বাঙালির মধ্যে বিপর্যয়ের দিনগুলি কেন জানি আমাদের লেখক সম্প্রদায়ের মনে খুব গভীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষত সৃষ্টি করতে পারেনি। নাড়িয়ে দিতে পারেনি তাঁদের ক্ষুব্ধ চৈতন্যকে ও হৃদয়সংবেদী ভাবনাকে। বরং ‘কলকাতায় ‘পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি’ (১৯৪২) ও পরে 888sport appয় পূর্ব পাকিস্তান 888sport live football সংসদ’ দ্বিজাতিতত্ত্বের সঙ্গে ভাগভিত্তিক দেশভাগ সমর্থন করেছে। আবুল কালাম শামসুদ্দীনের মতো অনেকের মনে হয়েছে পাকিস্তান শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, 888sport live football ক্ষেত্রেও রেনেসাঁ’২৬ বয়ে আনবে। আর সৈয়দ আলী আহসান তো এই স্বাতন্ত্র্যের জন্য রবীন্দ্রনাথকে বর্জনের ডাক দিতে প্রস্তুত ছিলেন এবং গোলাম মোস্তফা তো উর্দু জবান জিন্দাবাদ দিয়েছিলেন সংকীর্ণ স্বার্থে। ঝগড়াটা গঙ্গাতীরের ভাষা, পদ্মা তীরের ভাষা পর্যন্ত গড়ালো। অথচ এই বিশাল বঙ্গকে আমাদের কবি-888sport live footballিকরা কতই না ভালোবাসেন যুগ যুগ ধরে। সেই ভালোবাসা দেশবিভাগের ডামাডোলে ধূলিসাৎ হয়ে গেল? যে দেশভাগের দুঃখে কাতর হয়েছিল বার্লিনবাসী, কোরিয়াবাসী, ভিয়েতনামবাসী বা সোভিয়েতবাসী এবং তাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল কত না মহৎ 888sport live football, সেই একই বিষয় নিয়ে বাঙালি 888sport live footballিকজনেরা রইলেন অনেকটা উদাসীন ও অনাসক্ত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, দেশবিভাগ, রক্তগঙ্গা বয়ে যাওয়া, উদ্বাস্তু সমস্যা, অমানবিক জীবনযাপন, অশ্রুপাত ও উন্মূল জীবন নিয়ে দেশভাগের পূর্বাপর দশ বছরের যে নৈরাজ্য ও নিস্যন্দ তা নিয়ে গড়ে উঠতে পারতো একটা কালো রাত্রি কালো বন্যা অধ্যায়। রচিত হতে পারতো হিন্দি ভাষায় ভীষ্ম সাহানির মতো তামস 888sport alternative link বা উর্দু লেখিকা কুররাতুলাইন হায়দারের মতো আগ কা দরিয়া বা আতিয়া হোসেইনের মতো Sunlight on a broken column (১৯৬১)-এর মতো দেশভাগকেন্দ্রিক হৃদয়বিদারক সব 888sport alternative link। কিন্তু বাংলা ভাষার কোনো লেখক তেমন উঁচু মাত্রার কোনো 888sport alternative link লিখতে পারেননি। ‘‘জয়া চ্যাটার্জীর বাংলা ভাগ হলো’ … ঋত্বিক ঘটকের ছবির মূল বিষয় দেশভাগের যন্ত্রণা … হাসান আজিজুল হকের আত্মা জুড়ে দেশভাগের কষ্ট … হাসান হাফিজুর রহমানের গল্প ‘আরো দুটি মৃত্যু”২৭ কি বহন করে সেই ভয়াবহ দিনগুলির দিনপঞ্জি? কিংবা হিরণ¥য় বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বাস্তু’ প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তীর প্রান্তিক মানব, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের উপনগর, সমরেশ বসুর সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা, বনফুলের বিবর্ণ, জরাসন্ধের উত্তরাধিকার বা সুভাষ সমাজদারের আবার জীবনও কি বহন করে সেই সময়ের সন্দর্ভ? এছাড়া অমিয়ভূষণ মজুমদারের গড় শ্রীখণ্ড, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব-পশ্চিম বা অসীম রায়ের আবহমানও নয় সবখানি।

প্রমথনাথ বিশীর পনেরই আগস্ট (১৯৭৮) ও বঙ্গভঙ্গ (১৯৭৭) দ্বিতীয় বঙ্গভঙ্গ নিয়ে রচিত বাঙালির ট্র্যাজেডি বিভাসিত। অতঃপর ‘১৯৪৭-এর ১৫ আগস্টে তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্নদাশংকর রায় ছাড়া আর কোনো প্রধান 888sport alternative linkিক স্বাধীনতার আগমন ও তার তাৎপর্য নিয়ে মাথা ঘামাননি। তার একটা কারণ, অভীপ্সিত স্বাধীনতা আসেনি। স্বাধীনতা এলো দেশ বিভাগের পথ ধরে। যে পথে রক্তের শেষ নেই, মানুষের কান্নার বিরাম নেই।’২৮

ভারতের হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, শিখ-জৈনের মধ্যে যে জাতিভেদ-কুসংস্কৃতি তারই চূড়ান্ত পরিণতি দেশভাগ। বহু শতকের দাদু-কবির, রজ্জব-চৈতন্য, নানক-দারা শিকোহ, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, সুভাষ-শেখ মুজিবের জাতিধর্ম মিলন চেষ্টা ও সাধনা কি একেবারেই বিফল? একেবারেই যে বিফলে যায়নি কায়কোবাদ, এস ওয়াজেদ আলী, কাজী ওদুদ, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, রেজাউল করিমের লেখায় তার স্বাক্ষর আছে। তাই লেখা ‘পৃথিবীর কোনো শক্তি এই সমন্বয়ের গতি রোধ করিতে পারিবে না – সমন্বয়ের কাজ অনন্তকালব্যাপী চলিতে থাকিবে। ইহাতে কাহারও কোন বাধা টিকিবে না।’২৯ একইভাবে এই অ-ভেদবুদ্ধি স্থান পায়নি জীবনানন্দ দাশ, সত্যজিৎ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ, অমিয়ভূষণ বা সন্তোষকুমার ঘোষের লেখায়। ‘আর সেই রাশি রাশি উন্মূল জীবন। তাড়িত প্রতারিত ওপারের মানবতা, এপারে শরণার্থী জনতা – তাদের কথা না লিখলে এই পটভূমি রচনা সম্পূর্ণ হবে না। আপনাকে হঠাৎ পর করে দেওয়ার যে অপরাধ, এই শিকি শতকেও তার প্রায়শ্চিত্ত সম্পূর্ণ হয়নি।’৩০ এমনসব যন্ত্রণা, কষ্ট, বিনষ্টি নিয়ে দেশবিভাগের যে হালচাল তার বেদনা ও সংবেদন নিয়ে বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের বাংলা প্রবেশ করে এক অমানবিক রক্তাক্ত বাংলায়।

চার

বঙ্গভঙ্গ থেকে হিন্দু-মুসলমান ভেদনীতি, আন্দোলন-সংগ্রামের বিভেদ-মহাযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, জাতীয়তা এই বিভেদকে তীব্রতর করে তোলে। আজাদীর সংগ্রামটা যেন ছিল হিন্দুর। মুসলমান ছিল এর অনিচ্ছুক দাস। ফলে ইংরেজের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে এসময় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দেখা দেয় তীব্র অসন্তোষ ও বিভেদ-বিষের বিষাক্ত দহন, যা মাঝে মাঝে সংঘর্ষে রূপ নেয়, বিদ্বেষ-বিষ ছড়ায়। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, তারাশংকর-অন্নদাশংকর, কাজী ওদুদের লেখনী সে-বিপর্যয়কে রুখতে পারলো না, দেশ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়েই গেল। বাঙালি হারালো তার ঐক্যতন্ত্র, মানবতন্ত্র, সেক্যুলারতন্ত্র। যে বিষয়ে আকরগ্রস্থ লিখেছেন জয়া চ্যাটার্জী (বাংলা ভাগ হল), যশোবন্ত সিংহ (জিন্নাহ ভারত দেশভাগ স্বাধীনতা, ২০০৯), ভবানী চট্টোপাধ্যায় (দেশভাগ – পশ্চাৎ ও নেপথ্য কাহিনী, ১৯৯৩), সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (দেশভাগ, 888sport sign up bonus আর সত্তা, ১৯৯১), সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (দ্বিজাতিতত্ত্বের সত্য-মিথ্যা, ১৯৯২), যতীন সরকার (পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন, ২০০৫) বা সুমন শিকদার-সম্পাদিত গ্রন্থ (দেশ ভাগের অন্তরদহন, ২০১৯)। কিন্তু দেশভাগের যথার্থ ইতিহাস ও বিশ্লেষণ এতে পূর্ণতা পায়নি। কেন যেন লেখা গেল না হেমিংওয়ের For Whom the Bell Tols-এর মতো কোনো মহৎ গ্রন্থ।

‘দ্বিজাতিতত্ত্বের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি যখন ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে কলঙ্কচিহ্নিত করেছিল তখন নজরুল ইসলাম বলিষ্ঠ কণ্ঠে তার বিরুদ্ধে অন্তরের প্রবল ঘৃণা ও ধিক্কার জানিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন : ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?/ কাণ্ডারী বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।’৩১ একইভাবে আহ্বান জানালেন গানে : ‘হিন্দু মুসলিম দুই সোদর/ তাদের মিলন-সূত্র ডোর রে।’৩২ কিন্তু ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, আত্মস্বার্থ, অপরিণামদর্শিতার কাছে ব্যর্থ হয়ে গেল কবির বাণী, কবির গান, কবির মানবিকতা।

ইংরেজ, জিন্নাহ ও গান্ধীর ভাগ-নীতি যখন চরমে, তখন শরৎ বসুর বাড়িতে একটা ঐক্যের বৈঠক ডাকা হলো ১৯৪৭-এর ২০শে মে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শরৎ, কিরণশঙ্কর, আবুল হাশিম ও সোহরাওয়ার্দী। তাঁরা গান্ধীকে একটা চিঠি লিখলেন বঙ্গ ভাগ না করতে। গান্ধীর উত্তর মনঃপুত হলো না। ‘গান্ধী 888sport free betগুরু মুসলমানদের 888sport appsে 888sport free betলঘু হিন্দুর সাম্প্রদায়িক স্বার্থ সংরক্ষণে যে রক্ষাকবচের কথা বললেন তার সঙ্গে জিন্নাহর 888sport free betগুরু হিন্দুর ভারতে 888sport free betলঘু মুসলমানের স্বার্থ সংরক্ষণের রক্ষাকবচ দাবি – প্রকৃতপক্ষে একই জিনিস।’৩৩ ফলে স্বার্থান্বেষীর দেশভাগ ঠেকানোর আর কোনো উপায় রইলো না। সব শুভশক্তি ও বিজ্ঞজনকে হতাশ করে, হাহাকারের মধ্যে নিপতিত করে, সংঘর্ষ, রক্তপাত অনিবার্য করে বঙ্গ জরাসন্ধের মতো দ্বিখণ্ডিত হলো। দীর্ঘ যুগের অখণ্ড বাংলা, বাঙালির সম্প্রীতির বাংলা, রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা পরাজিত হলো অশুভ শক্তি মৌলবাদের হাতে। বাঙালিকে এই অভিশাপ  বহন করতে হচ্ছে আজো।

আমাদের এই 888sport live football-888sport live chatে এই দুর্ঘটনাটি বা দুর্দৈবটি নানা মাত্রিকতায় উপস্থিত হয়েছে সত্য, কিন্তু মহাকাব্যিকতা লাভ করেনি।

দেশবিভাগজনিত যে বর্বরতা-অসত্যতা-আমানবিকতা তার সঙ্গে আউস্ভিৎজ-হিরোশিমা তুলনীয়। কিন্তু তা নিয়ে আমাদের যে 888sport live footballকর্ম তা অনেকটা মোটা দাগে লিখিত। অথচ এই বিভাগের নির্মম শিকার হয়েছিলেন আমাদের প্রখ্যাত লেখক শওকত আলী, হাসান আজিজুল হক, কায়েস আহমেদ, জীবনানন্দ দাশ, বিজন ভট্টাচার্য, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, মুজফ্ফর আহমদ (১৮৮৯-১৯৭৩) প্রমুখ। তাঁদের লেখায় উচ্ছ্বাস আছে, কষ্ট আছে, আকালের আকুতি আছে, কিন্তু নেই মানবিক মূল্যবোধের মহাবিপর্যয়ের কথা বা এই মহাদুর্যোগ পেরুনোর রেমার্কের All Quiet on the Western Front-এর নিস্তব্ধ বেদনা ও কারুণ্যের অন্তরদহন। ‘দেশ বিভক্তির অনুষঙ্গে যে বিষয়গুলো জড়িয়ে আছে, তা সংশ্লিষ্ট মানুষের সুকুমার চৈতন্যকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। … প্রাণঘাতী দাঙ্গা, নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাস, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, আজন্মের দেশ বাড়ি থেকে উৎখাত, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ – এক কথায় মানবাত্মাবিনাশী তামসিক ভাবের চূড়ান্ত নিদর্শনসমূহ’৩৪ যথাযথভাবে আঁকতে ব্যর্থ হয়েছেন আমাদের 888sport live footballিকেরা। এর কারণ দেশবিভাগ নিয়ে তর্কবিতর্ক, অসমর্থনে দোদুল্যমানতা বা স্বার্থচিন্তায় দেশ বিভাগ তেমন গুরুত্ব লাভ করেনি।

দেশবিভাগে কিছু হিন্দু ও মুসলমান ভিটেমাটি কামড়ে পড়ে রইলো শত বিপদ জেনেও। এরা প্রতিমুহূর্তে সাম্প্রদায়িকতার আঘাত মাথায় নিয়ে পড়ে আছে নিজ জন্মভূমিতে পরবাসীর মতো। এ এক যন্ত্রণাক্ত জীবন। তবু এরা পিতৃভূমির মায়ায় মেনে নেয় সব অপমান, লজ্জা, ক্ষয়ক্ষতি ও সর্বনাশ। মাঝে মাঝে আক্রোশে ফণা তোলে কিন্তু থেঁতলে যায় ফণা। সেই জীবনের চিত্র আমরা দেখি সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্পে, হাসান আজিজুল হকের ‘পরবাসী’ গল্পে, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ গল্পে, হাসান হাফিজুর রহমানের ‘আরও দুটি মৃত্যু’ গল্পে বা শওকত আলীল একাধিক 888sport alternative linkসহ ‘রঙ্গিনী’, ‘ভগবানের ডাক’, ‘ফেরতা’ বা ‘বিকলাঙ্গ পিপাসা’ গল্পসমূহে। এতে উঠে এসেছে ‘দেশ বিভাগের হতাশা, ক্রন্দন, গ্লানি, যন্ত্রণা, ক্ষোভ মানব-সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিত।’৩৫ সব মিলে দেশভাগের কাহিনি আমাদের 888sport live footballে অনেকটা অংশ আলোকিত করে আছে; কিন্তু সে-আলো দেশভাগের জ্বালা, যাতনা, জখম তাড়াতে অসমর্থ এবং তা অন্ধকারে এক বিন্দু আলো মাত্র।

তথ্যসূত্র

১.        আবুল হোসেন, অন্য এক ভুবন, অবসর প্রকাশন, 888sport app, ২০০৫, পৃ ১২।

২.       সুমন শিকদার-সম্পাদিত দেশভাগের অন্তরদহন, বেগবতী প্রকাশ, ২০১৯, পৃ ৬।

৩.       সুশীলকুমার গুপ্ত, ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালার নবজাগরণ, বর্ণ, ১৯৫৯, কলকতা, পৃ ২৫৫।

৪.       N.C Bose, Indian Awakening and Bengal, 1969, Preface, 5th edition.

৫.       B. N. Pandey, The Break-up of British India, London, 1969, p 119.

৬.       S. Sarkar, On the Bangal Renaissance, 1979 edition, p 73.

৭.       হোসেনউদ্দীন হোসেন, ‘স্বাধীন বাংলা আন্দোলন’, দেশভাগের অন্তরদহন, পূর্বোক্ত, পৃ ৭৮।

৮.       অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, বাংলা কথা888sport live football জিজ্ঞাসা, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৪, পৃ ১১৩।

৯.       সানজিদা আখতার, বাংলা ছোটগল্পে দেশ বিভাগ, বাংলা একাডেমি, ২০০২  পৃ ৩৯।

১০.      খুশবন্ত সিং-২, কথাপ্রকাশ, ২০১৭, পৃ ২০।

১১.      ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান কনস্টিটিউয়েট অ্যাসেম্বলিতে জিন্নাহর ভাষণ।

১২.      শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায়, সেকুলার ভারতে ধর্ম ও রাজনীতি, উবু দশ প্রকাশ, কলকাতা, ২০০৩, পৃ ১৬৫।

১৩.      মোজাম্মেল হকের কাব্য ‘স্বজাতি প্রেম’, পূবালী, বৈশাখ ১৩৭১, পৃ ৭৮০।

১৪.      জয় গোস্বামী, 888sport app download apk সংগ্রহ, আনন্দ পাবলিশার্স, ২০১০, পৃ ৬৩।

১৫.      ওই, ‘নন্দর মা’, দেশ বিভাগের 888sport app download apk, ড. শংকর প্রসাদ চক্রবর্তী-সম্পাদিত, কলকাতা, ২০১০, পৃ ১০১।

১৬.      খুশবন্ত সিং, রচনা সংগ্রহ-২, 888sport app download apk latest version আন্দালিব রাশদী, কাব্যপ্রকাশ, ২০১৭, পৃ ৬০।

১৭.      ড. আনোয়ারুল করিম, ‘দেশ বিভাগের দুঃখ-শোক এবং অতঃপর’, অন্তরদহন, পূর্বোক্ত, পৃ ১৫।

১৮.      রাহমান চৌধুরী, মহাবিদ্রোহ ও সম্রাট বাহাদুর শাহ, বাংলা একাডেমি, ১৯৯৫, পৃ ১৯।

১৯.      তরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, পূর্বোক্ত, পৃ ৮৪।

২০.      উজ্জ্বলকুমার মুখোপাধ্যায়, 888sport alternative link পাঠকের ডায়েরি, বঙ্গীয় 888sport live football প্রকাশ, ২০০৯, পৃ ১৪৫।

২১.      যশোবন্ত সিংহ, জিন্নাহ ভারত দেশভাগ স্বাধীনতা, পৃ ৩।

২২.      হোসেনউদ্দীন হোসেন, পূর্বোক্ত, পৃ ৪৯।

২৩.      মীর মশাররফ হোসেন, ‘বাজীমাত কাব্য’, ১৯০৮।

২৪.      কাজী নজরুল ইসলাম, সঞ্চিতা।

২৬.      অলোক রায়, ‘বাঙালি মুসলমানের সত্তাসন্ধান’, কোরক 888sport live football পত্রিকা, কলকাতা, ২০১১, পৃ ১৬-১৭।

২৭.      শহীদ ইকবাল, ‘বিস্তীর্ণ দুপারের হাহাকার শুনে’, অন্তরদহন, পূর্বোক্ত, পৃ ১১৭।

২৮.      অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, পূর্বোক্ত, পৃ ১১৮।

২৯.      রেজাউল করীম, দারা শিকোহ।

৩০.      সন্তোষকুমার ঘোষ, ‘এই বাংলা’, দেশ 888sport live football 888sport free bet, ১৯৮১, পৃ ১৫৭।

৩১.      মাহবুবুল হক, বাংলা 888sport live football : নানা নিবন্ধ, নবযুগ প্রকাশ, 888sport app ২০০৯, পৃ ৭৪।

৩২.      কাজী নজরুল ইসলাম, ‘চরকার গান’।

৩৩.     বদরুদ্দীন উমর, ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন, নওরোজ কিতাবিস্তান, ১৯৮৭, পৃ ১৫৯।

৩৪.      সানজিদা আখতার, পূর্বোক্ত, পৃ ২০০৪।

৩৫.     ড. তপন কুমার রায়, ‘শওকত আলীর কথা888sport live footballে প্রসঙ্গ দেশভাগ’, দেশভাগের অন্তরদহন, পূর্বোক্ত, পৃ ১২১।