খালেদ হোসাইন
বাংলা ভাষা ও 888sport live football বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যে-সম্মানের জায়গাটি এখন দখল করে নিয়েছে, এতে সমস্ত বাঙালি জাতির অংশগ্রহণ ও অবদান রয়েছে। তবে সংস্কৃতির মুখাবয়বের সঙ্গে তুলনীয় বলে 888sport live footballিকদের অবদান বিশেষভাবেই অগ্রগণ্য। লোক888sport live football-স্রষ্টাদের কথা মাথায় রেখেও চর্যাপদ থেকে বাংলা 888sport live footballের যে-পর্যাবৃত্ত তাতে মুখ্য হয়ে ওঠে অনেক মুখ। তাঁদের মধ্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রতিনিধিত্বশীল। বহুমাত্রিক 888sport live footballকেন্দ্রিক রচনাপুঞ্জের জন্য তো বটেই, এমনকি তাঁর জীবনচর্যা আর জীবনাদর্শের স্বকীয়তার জন্যও বটে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সার্ধশত জন্মবর্ষে তাঁকে 888sport app download for android করে, তাঁর প্রতি 888sport apk download apk latest version নিবেদন করে আমরা কেবল আমাদের মনুষ্যত্বের দায়টাই মেটাতে পারি, ততোধিক কিছু নয়। প্রথমেই আমি একটি প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই, কেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়? এর উত্তরের জন্য কয়েকটি বিষয় আমাদের পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার।
এক. রবীন্দ্র-সমকালীন 888sport live football বিবেচনার ক্ষেত্রে অবচেতনগতভাবেই যেন আমরা ধরে নিই যে, ঈশ্বরগুপ্ত-মধুসূদন-বিহারীলাল অতিক্রম করে বাংলা 888sport live football কেবলই রবীন্দ্রমন্দিরে পৌঁছেছে; রবীন্দ্র-সমকালীন সৃজনশীল প্রতিভারা রবীন্দ্রনাথের আড়ালে পড়ে যান। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, রবীন্দ্রনাথের সমবয়সী বা বয়সের কাছাকাছি কবি বা লেখক কারা – অনেক ক্ষেত্রেই এ-প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব পাওয়া যায় না। অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তা-ই। দ্বিজেন্দ্রলাল রবীন্দ্র-সমকালীন মহৎ 888sport live footballিক-প্রতিভা।
দুই. রবীন্দ্রনাথের মতো দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ও ছিলেন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও চর্চা সংবলিত একটি পরিবারের সন্তান। তখনকার অর্থে বিত্ত-সম্পদ-প্রতিপত্তিসহই কোনো কোনো পরিবার বিদ্যা, সংগীত, নাট্য, সাময়িকপত্র ইত্যাদির চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। উনিশ শতকের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এই প্রবণতা থেকে যেমন মুক্ত নয় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, তেমনি মুক্ত নয় দ্বিজেন্দ্রলালের পরিবার। উনিশ শতকের প্রবল প্রতিভাবানদের গমনাগমন ঘটেছে এই পরিবারে। কৃষ্ণনগরের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার একটি কেন্দ্র ছিল রায় পরিবার। ফলে দ্বিজেন্দ্রলালের লেখায় উনিশ শতকীয় মননের বা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের নিশানা মুদ্রিত থাকাটাই স্বাভাবিক।
তিন. ঔপনিবেশিক বাংলা 888sport live footballে 888sport app download apk ও গান দুই বিচ্ছিন্ন সত্তায় রূপান্তরিত হয়েছে। কবি ও গীতিকার আলাদা পরিচিতির অধীন। অথচ প্রাক্-ঔপনিবেশিক বাংলা 888sport live footballে 888sport app download apk ও গানের ভেদরেখা প্রায় অনুপস্থিত। 888sport app download apk ও গান রচয়িতা হিসেবে দ্বিজেন্দ্রলাল কবির সেই সামগ্রিক পরিচয়টি ধারণ করেছেন।
চার. বাঙালির লেখা ইংরেজি 888sport live footballের ইতিহাস পর্যালোচনা করতে গেলেও আমাদের দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 888sport live footballে উঁকি দিতে হবে। বিলেত-প্রবাসের সময় তিনি প্রকাশ করেছিলেন Lyrics of Ind। নজর এড়ানো এই 888sport live footballের বিশ্লেষণ জরুরি তিন দিক থেকে : ১. বাঙালির ইংরেজি চর্চা, ২. ইংরেজিচর্চার মনস্তাত্ত্বিক দিক, ৩. ঔপনিবেশিক নন্দনতত্ত্ব ও কাব্যতাত্ত্বিক মূল্য।
পাঁচ. নাটক বিষয়ে তাঁর অবদানের নির্মোহ বিচার হওয়া প্রয়োজন। বিলেতে থাকা অবস্থায় তিনি নিয়মিত নাটক দেখেছেন, থিয়েটারের কলাপ্রকৌশল সম্পর্কে জেনেছেন। এগুলোর প্রয়োগে কতটুকু মৌলিকত্ব প্রদর্শন করেছেন সেটি বিচার্য বিষয়। নাকি শেক্সপিয়রীয় ঘেরাটোপে আটকে গেছেন।
ছয়. সর্বোপরি, আমাদের জেনে নেওয়া প্রয়োজন, দ্বিজেন্দ্রলাল
রায়ের তাঁর 888sport live football থেকে উৎপাদিত মতাদর্শ কী।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 888sport app download apkর উপজীব্যতার দিকে মনোযোগ দিলে কয়েকটি দিক স্পষ্ট হয়ে ওঠে :
ইতিহাস ও পুরাণ-প্রসঙ্গ : ইতিহাস ও পুরাণানুষঙ্গের প্রাচুর্য লক্ষ করা যায় তাঁর 888sport app download apk ও নাটকে। কেবল ঐতিহ্যানুরাগের পরিচয়বহই নয় এ প্রবণতা, এসব উপাদানকে তিনি সমসাময়িক জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছেন অসাধারণ নৈপুণ্যে।
সামাজিক অসংগতি : ক. ইংয়বেঙ্গল ঘরানার কর্মকান্ডের বিরোধী, খ. বিলেতি কায়দাকেতা শিখে আসা ব্যক্তিবর্গের নিরর্থক বাগাড়ম্বর ও লোকদেখানো প্রগতিশীলতা, গ. সারবত্তাহীন অভিনবত্বের প্রতি ব্যঙ্গ, ঘ. ঘরকন্নার দায়িত্ব এড়িয়ে চলা ‘নববিবি’দের প্রতি ব্যঙ্গ (এই ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলালকে রক্ষণশীল মনে হতে পারে, তবে বুঝতে হবে যে, পুরুষদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণেরও তিনি তীব্র সমালোচক), ঙ. ভারতীয় ধর্ম ও জীবনদর্শনের ওপর ইউরোপীয় 888sport live football, দর্শন ও চিন্তার প্রভাব, চ. স্ববিরোধী আচরণ এবং ছ. নাস্তিকতা।
প্রকৃতির যেসব উপকরণ বেশ রোমান্টিক হিসেবে স্বীকৃত ও বহুল ব্যবহৃত, সেগুলোর ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপন; যেমন : কোকিল বা বর্ষার বৃষ্টি।
তাঁর কাব্যভাষা পর্যবেক্ষণ করলে কয়েকটি বিশেষত্ব চোখে পড়ে :
এক. কোড-মিশ্রণ : বিলেতফেরত বা অনুকারী ইংরেজিয়ানার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ করার ক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলাল কোড মিশ্রণের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন;
দুই. অনেক 888sport app download apkয় কথ্য বাগভঙ্গি ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর 888sport app download apkকে অনেক বেশি লোকচিত্তগ্রাহ্য করে তুলেছিল,
তিন. নানা রকম সংলাপনির্ভর 888sport app download apk রচনা করেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। কাব্য ও নাট্যপ্রতিভার সংশ্লেষণ হয়েছে হয়তো এক্ষেত্রে, কিন্তু তা 888sport app download apkর শরীরে ও অন্তরে স্বতন্ত্র এক স্বাদ সঞ্চার করেছে। এই সংলাপের ধরনও বিচিত্র। কারণ, আমরা বাংলা সংলাপের বিপরীতে ইংরেজি সংলাপ যেমন ব্যবহৃত হতে দেখি, তেমনই চমৎকৃত হই বাংলা শব্দের সঙ্গে ইংরেজি শব্দের অন্ত্যমিল ব্যবহারের নিপুণতায়।
এবার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জীবন-পরিধির ওপর একটু চোখ বোলাতে চাই। তাঁর জন্ম ১৯ জুলাই, ১৮৬৩। তাঁর পিতা শিক্ষা-888sport live football-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য উনিশ শতকের কীর্তিমান পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র ও দীনবন্ধু মিত্রের অতিঘনিষ্ঠ কার্তিকেয়চন্দ্র রায়। কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ও ছিলেন বহুগুণান্বিত – 888sport live footballিক, সংগীতবিশারদ, গীতরচয়িতা ও বহুভাষাবিদ। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হরলাল রায়ও সুগায়ক ছিলেন। কনিষ্ঠ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ও। সংগত কারণেই নানাভাবে কৃষ্ণনগরের এই পরিবার একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। কবিশেখর কালিদাস রায় দ্বিজেন্দ্রলালের হাস্য-রসিকতার প্রসঙ্গে তাই বলেছিলেন, ‘ঐ প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণনগরের রাজসভার কবি ভারতচন্দ্রের রসিকতার ঐতিহ্যই দ্বিজেন্দ্রলালে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।’
কৃতী ছাত্র ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। এমএ পাশ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। কৃষিবিদ্যা বিষয়ে শিক্ষা অর্জনের জন্য সরকারি বৃত্তি নিয়ে গিয়েছিলেন বিলেতও। 888sport live footballচর্চাও শুরু তখন।
Lyrics of Ind নামে গ্রন্থটি প্রকাশ করেন আর ইংরেজি সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষাও অর্জন করেন। দেশে ফিরে সরকারি চাকরিতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের গ্রেড লাভ করেন এবং বিভিন্ন বিভাগে রাজপুরুষের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। স্বদেশাত্মক ও স্বাধীনচেতা মনোভঙ্গির কারণে চাকরি-জীবন তাঁর সুখকর হয়ে ওঠেনি। বর্ধমানরাজের সুজামাটা পরগনায় তাঁকে একবার পাঠানো হয়েছিল সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে, যেখানে প্রজারা নানাভাবে সরকারি লোকজনের দ্বারা নিপীড়িত হচ্ছিল। সংগত কারণেই তিনি অত্যাচারিতের পাশে দাঁড়ালেন। এর ফল কী হয়েছিল, তা জানা যায় দ্বিজেন্দ্রলালের লেখায় :
এই সময় স্যার চার্লস এলিয়ট্ বঙ্গদেশে লেপ্টেনেন্ট গভর্নর ছিলেন। তিনি উক্তরূপ বিভ্রাট দেখিয়া, উক্ত বিষয়ে তদন্ত করিতে স্বয়ং মেদিনীপুরে আসেন ও কাগজপত্র দেখিয়া আমাকে অযথা ভৎর্সনা করেন। আমি আমার মত সমর্থন করিয়া বঙ্গদেশীয় সেটেলমেন্ট আইন বিষয়ে তাঁহার অনভিজ্ঞতা বুঝাইয়া দিই।… এই উত্তর শুনিয়া ছোটলাট আমার পূর্ব ইতিহাস জানিতে চাহেন ও অবগত হইয়া কলিকাতায় গিয়া ভবিষ্যতে সেটেলমেন্ট অফিসারদিগের কর্তব্য বিষয়ে এক দীর্ঘ মন্তব্য লেখেন এবং তাহাই আইনে ‘সেটেলমেন্ট ম্যানুয়েলে’র নোটের ভিতর ঢুকাইয়া দেন।
কবিশেখর কালিদাস রায় তাই মন্তব্য করেছিলেন, ‘স্বভাবসিদ্ধ তেজস্বিতা, সত্যনিষ্ঠা ও আত্মমর্যাদাবোধের জন্য তাঁকে কর্মক্ষেত্রে অনেক অশান্তি ভোগ করতে হয়েছিল।’
১৮৮৭ সালে বিয়ে হয় সুরবালা দেবীর সঙ্গে। বিলেত যাওয়া আর ব্রাহ্মকন্যা বিয়ের জন্য সামাজিক অসহযোগিতার শিকারও হতে হয় তাঁকে। বাঙালি সমাজের কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতা তাঁকে বিব্রত করে। কারণ, তিনি মনেপ্রাণে বাঙালি ছিলেন এবং সাহেবিয়ানার প্রতি তাঁর কোনো আকর্ষণ ছিল না। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কর্মজীবন মসৃণ ছিল না।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দাম্পত্য জীবনের দৈর্ঘ্যও ছিল স্বল্প পরিসরের। ১৯০৩ সালে একটি পুত্র ও একটি কন্যা রেখে মারা যান। সেই পুত্রই খ্যাতকীর্তি দিলীপকুমার রায়।
স্ত্রীর মৃত্যু তাঁকে বেশ শোকগ্রস্ত করে রেখেছিল। এই শোকব্যুহ ছিন্ন করার জন্য তিনি ‘পুনর্মিলন’ নামে একটি ভ্রাম্যমাণ মাসিক ইষ্টগোষ্ঠী সভা চালু করেন। এখানে তিনি নিয়মিত 888sport app download apk পাঠ করতেন, হাসির গান পরিবেশন করতেন। জীবনের তিনটি দশক তিনি মানুষকে হাসিয়ে ৫০ বছর বয়সে, ১৯১৩ সালের ১৭ মে, সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে যান।
আগেই বলেছি, রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমবয়স্ক কবিদের মধ্যে দ্বিজেন্দ্রলালই একমাত্র কবি যিনি পূর্বাপর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল থাকতে পেরেছেন। অন্যরা 888sport app download apk ছাড়া অন্য কোনো আঙ্গিকের চর্চায় মনোযোগীও ছিলেন না, উদ্যম বা উদ্যোগের অভাবে তাঁদের গ্রন্থও তেমন প্রকাশিত হয়নি। তিনি শুধু 888sport app download apk যেমন লিখেছেন, তেমনই গান, নাটক, প্রহসন, 888sport live – 888sport live footballের নানা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর গানও গণমানুষের চিত্তের চিত্রায়ণ হয়ে উঠেছিল। কৌতুকরসের গীত-রচনায় সমকালে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। দেশাত্মবোধ জাগরণে তাঁর সংগীতের ভূমিকা ছিল অসাধারণ। তাঁর নাটকগুলি 888sport live chatোত্তীর্ণ, 888sport live football হিসেবে পাঠযোগ্যতা উন্নতমানের। রবীন্দ্র-সমকালে রবীন্দ্রনাথের পরেই তাঁর অবিসংবাদিত স্থান।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক কবি হলেও কাব্যরুচিতে রবীন্দ্রানুগত ছিলেন না, অন্তমুর্খিতা নয়, দেশপ্রেমানুভূতির মতো বহির্মুখীনতা ছিল তাঁর কাব্যচৈতন্যের প্রধান প্রবণতা। কাব্য-রচনার শুরু থেকেই তিনি অবস্থান নিয়েছেন গতানুগতিকতার বাইরে। সামাজিক অনাচার ও অসংগতি, স্বার্থপরতা ও কূপমন্ডূকতার বিরুদ্ধে কলম চালনা করে গেছেন। 888sport live footballের বিবিধ শাখায় বিচরণ করেছেন, 888sport app download apkয়ও অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। 888sport app download apkয় নতুন ধারা, ছন্দ, ভাষা ও রীতি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। হাস্য-পরিহাস-রঙ্গব্যঙ্গময় 888sport app download apk রচনায় ঝোঁক ছিল। গভীর দক্ষতা নিয়ে 888sport app download apkয় ছন্দ ব্যবহার করেছেন :
কাব্য নয়কো ছন্দোবদ্ধ মিষ্ট শব্দের কথার হার
কাব্যে কবির হৃদয় নেই যার তাহার কাব্য শব্দসার।
প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত ছন্দে 888sport app download apk রচনা করে, পরে ছন্দে নতুন কিছু সংযোজনের চেষ্টা করেছেন :
কিন্তু কবিবর বিনা অনুপ্রাসে
বিনা ছন্দের কোন দায়িত্বে,
যে কাব্য করেছ রচনা নাহি তা
সমগ্র বঙ্গ888sport live footballে।
888sport app download apkয় তিনি তরঙ্গোচ্ছল একটা গতি সঞ্চারিত করতে চেয়েছেন। তবু প্রচলিত ছন্দেই বেশিরভাগ 888sport app download apk রচিত। অমিত্রাক্ষর ছন্দেও 888sport app download apk লিখেছেন :
পিতা অতীতের বস্ত্ত। ভগ্নী কিংবা ভ্রাতা
সে আবার কারে বলে? সে ত প্রকৃতির
খেয়াল। পুত্র ও কন্যা নিত্যই অস্থির
তাদের বিবর্ধমান 888sport free betয় স্বীকার্য
[‘আগন্তুক’]
সমকালীন সামাজিক অসংগতি তাঁকে বেদনাবিধুর করে তুললেও সেই অনুভূতি উপস্থাপন করতেন সরস ও হাস্যোদ্দীপকভাবে। নিজস্ব সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে যারা চিন্তাশূন্য পরানুকরণে মত্ত হয়ে উঠত, তারা হয়ে উঠত তাঁর বিদ্রূপের পাত্র :
আমরা বিলিতি ধরনে হাসি
আমরা ফরাসি ধরনে কাশি
আমরা পা ফাঁক করিয়া
সিগারেট খেতে বড্ডই ভালোবাসি।
যে কোনো কবিই প্রকৃতিনিষ্ঠ। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ও তাই :
প্রকৃতি জননী যার কিসের অভাব তার
রেখেছেন শত পরিজন
আমার সন্তোষ তরে সবে প্রাণপণ করে
আমারই এ নিখিল ভুবন।
‘ফুলের হাসি’ 888sport app download apkয় তাঁর উপলব্ধির রূপায়ণ :
যেন কাঁদি ঘনরাশি হাসে ইন্দ্রধনু হাসি
নবীন মাধুর্যে তার হাসায় সংসার।
888sport app download apk বা গীত রচনা ছাড়াও নাটক-প্রহসন রচনার মধ্য দিয়ে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রতিভার যে-পরিচয় পাওয়া যায়, তা কেবল প্রশংসনীয়ই নয়, তা সময়োপযোগী এবং তাৎপর্যমন্ডিত। বিলেতে যাওয়ার আগে তিনি হেমলতা ও নীলদর্পণ নাটক আর সধবার একাদশী ও গ্রন্থকার প্রহসন দুটি দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। এছাড়া Shakespeare-এর Julius Caesar-এর আংশিক অভিনয় দেখেছিলেন। এ থেকেই নাটক ও অভিনয় সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। দ্বিজেন্দ্রলাল লিখেছেন,
বিলাতে যাইয়া বহু রঙ্গমঞ্চে অভিনয় দেখি… বিলাত হইতে ফিরিয়া আসিয়া আমি কলকাতার রঙ্গমঞ্চসমূহে অভিনয় দেখি এবং সেই সময়েই বঙ্গভাষার লিখিত নাটকগুলির সহিত আমার পরিচয় হয়।
এ পরিচয় খুব সুখকর মনে হয়নি, মধুসূদন যেমন ‘অলীক কুনাট্য’ দেখে নাট্য-রচনায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন, দ্বিজেন্দ্রলালের ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রায় অনুরূপ হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, ‘প্রথমত, প্রহসনগুলির অভিনয় দেখিয়া সেগুলির স্বাভাবিকতায় ও সৌন্দর্যে মোহিত হইতাম বটে, কিন্তু সেগুলির অশ্লীলতা ও কুরুচি দেখিয়া ব্যথিত হই।’ এরপর তিনি নাটক-প্রহসন রচনায় ব্রতী হন। নাট্যকর্ম সৃষ্টিতে উন্নত রুচির পরিমন্ডল রচনায় দ্বিজেন্দ্রলালের কৃতিত্ব পর্যালোচনা করতে গিয়ে মোহিতলাল মজুমদার লিখেছেন, ‘দ্বিজেন্দ্রলাল ভাবকে কেবল রসচর্চার বিষয় না করিয়া – ভাবের জীবনোদ্যম-সুলভ রূপ দেখাইবার জন্য, অতঃপর নাটক-রচনায় মনোনিবেশ করিলেন এবং তাহার দ্বারা রঙ্গমঞ্চের নাট্যাদর্শ – তাহার একদিকের দুর্নীতি-মধুর লঘু-লাস্যের স্রোত এবং অপরদিকে সেই জীবনাবেগবর্জিত মধ্যযুগীয় ভক্তিবিহবলতা ও পাপপুণ্য-সংস্কারের তামসিক আদর্শ – সংশোধন করিতে অগ্রসর হইলেন। নাট্য888sport live chatের আদর্শ উন্নত ও রুচি মার্জিত করিয়া এবং নাটক রচনায় কাব্যসংগত কারুকলার দ্বারা শিক্ষিত-সমাজকে নাট্যানুরাগী করিয়া, তিনি সেই যুগের অবোধ ভাবাতিককে পৌরুষ ও মনুষ্যত্বসাধনার পথে প্রেরিত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন – জাতির প্রাণে উৎসাহ সঞ্চার করিয়াছিলেন।’
রবীন্দ্র-পরবর্তী গীতরচয়িতা হিসেবে বাংলা কাব্যসংগীতের ইতিহাসে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের আগ্নেয় প্রতিভা স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি রাখে। উনিশ শতকে কাব্য-সংগীতসম্পদের একটি বিশিষ্ট শাখা নাট্যসংগীতরূপে বিকশিত হয়েছিল। দ্বিজেন্দ্রলালই মঞ্চনাটকের সংগীতের বিশিষ্টতাকে আশ্চর্যভাবে বদলে দিয়েছিলেন, যদিও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-রবীন্দ্রনাথের নাট্যসংগীত এক্ষেত্রে দ্বিজেন্দ্রলালের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। আবার, দ্বিজেন্দ্রলালের নাট্যসংগীতের প্রভাব তাঁর সমকালীন সমস্ত নাট্যসংগীতের ওপর অল্পবিস্তর লক্ষ করা যায়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটকে প্রেমবিষয়ক, দেশপ্রীতিমূলক এবং পরিহাসভাবমূলক – মূলত এই তিন ধরনের গানই আমরা লক্ষ করি। এর মধ্যে, প্রেমসংগীতের তুলনায় দেশাত্মবোধক ও জাতীয়তাবাদমূলক গানগুলির ভাষা-ছন্দ-সুরে দ্বিজেন্দ্রলাল এমন একটি মৌলিকতা প্রকাশ করেছেন যা দুর্লভ। প্রতাপ সিংহ (দ্বিজেন্দ্র-রচনাসংগ্রহে রাণা প্রতাপ সিংহ, স্টারে রাণা প্রতাপ নামে প্রথম অভিনীত) নাটকের এই গানটি দ্বিজেন্দ্রলালের বিখ্যাত ‘হাস্য শুধু আমার সখা’ 888sport app download apkটিকে মনে করিয়ে দেয় –
সুখের কথা বোল না আর বুঝেছি সুখ কেবল ফাঁকি।
দুঃখে আছি, আছি ভালো দুঃখেই আমি ভালো থাকি।
দুঃখ আমার প্রাণের সখা, সুখ দিয়ে যান চোখের দেখা
দুদন্ডের হাসি হেসে, মৌখিক ভদ্রতা রাখি।
দয়া করে মোর ঘরে সুখ পায়ের ধুলা ঝাড়েন যবে
চোখের বারি চেপে রেখে মুখর হাসি হাসতে হবে;
চোখে বারি দেখলে পরে, সুখ চলে যান বিরাগভরে
দুঃখ তখন কোলে ধরে আদর করে মুছায় অাঁখি।
প্রতাপ সিংহ নাটকেই দ্বিজেন্দ্রলালের বিখ্যাত ‘এ কি দীপমালা পরি হাসিছ রূপসী এ মহানগরী সাজি’ এবং ‘ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে গাও উচ্চে রণজয় গাথা’ গান দুটি রয়েছে। এই জাতীয় ভাবোদ্দীপক গান নাটকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ই প্রথম ব্যবহার করেন।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত গানে আমাদের তৎকালীন স্বদেশপ্রেমে ও জাতীয় ভাবোদ্দীপনার শোণিতকম্পনের ইতিহাস নিহিত রয়েছে। সেই সংগীতের মধ্যবর্তী প্রেরণা ছিল রবীন্দ্রনাথের গান, তাছাড়া বাংলার দুই শ্রেষ্ঠ সংগীতরচয়িতা দ্বিজেন্দ্রলাল ও অতুলপ্রসাদের গানগুলিও এই সময়েই সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সংগীত যেমন বঙ্গচ্ছেদ আন্দোলনকে গতি দান করেছিল, তেমনি এই আন্দোলনও বাংলার কাব্যসংগীতকে দিয়েছিল অসীম উদ্দীপনা, দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তা, বৃহৎ বঙ্গব্যপ্ত প্রচার ও বঙ্গভাষীমাত্রের মনে সংগীতের প্রতি অপার আগ্রহ। দ্বিজেন্দ্রলাল দেশাত্মবোধক গানের পরবর্তী অধ্যায়ে ১৯২১-২২ সালে রচনা করেন ‘বঙ্গ আমার জননী আমারে’র মতো আশ্চর্য গান, যা বাঙালির চেতনাকে আজও দেশপ্রেমে আপ্লুত করে রেখেছে।
উনিশ শতকের সংগীতকারগণ কথা ও সুরের অপূর্ব এক সমবায়ে বাংলা গানকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত প্রভাবিত বাংলা গানের ঐতিহ্যে যেখানে বাণীর প্রাধান্য ছিল না, সেখানে কথা ও সুরের অপূর্ব এক মেলবন্ধ ঘটানোর সাধনা করেছিলেন সেই সকল সংগীতকার। শাস্ত্রীয় সংগীতকে আত্মীকৃত করে, এমনকি পাশ্চাত্য সংগীতকে মেনেও বাংলা গানের মহিমাকে তারা নির্ণয় করে গেছেন। সংগীতকে কাব্যের মহিমা দান করাও ছিল তাঁদের সাধনা। বাণী রচনা এবং সুরযোজনা করার যৌথ প্রতিভা তাঁদের ছিল। তাঁদের আমরা পঞ্চকবি হিসেবে চিহ্নিত করি : রবীন্দ্রনাথ, রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, কাজী নজরুল ইসলাম সেই পাঁচ কবি, যাঁদের প্রাতিস্বিক ও সমবায়ী প্রতিভায় বাংলা গান মহিমাময় হয়ে উঠেছে।
বলাই বাহুল্য, বাংলা কাব্যসংগীতের ঐতিহ্য ও ধারা অনুসরণ করেই রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব ঘটেছিল, উনিশ শতকীয় কাব্যসংগীতের ইতিহাস অস্বীকার করে নয়। তবু, রবীন্দ্রনাথের প্রেমসংগীতগুলি 888sport appsে একদা অমসৃণ প্রতিকূলতা লাভ করেছিল, এবং ডিএল রায় ছিলেন তাদের সর্বাধিক বিরুদ্ধাচারী –
888sport app download apk লিখতে গেলেই নব্য কবিগণ প্রেম লইয়া বসেন।… তাও যদি কবিরা দাম্পত্য প্রেম লইয়া কাব্য লেখেন, তাহাও সহ্য হয়। ইহাদের চাই – হয় বিলাতি courtship, নয়তো টপ্পার প্রেম। নহিলে প্রেম হয় না।…
ইংরাজিতে courtship অবস্থার গান অনেক আছে বটে, কিন্তু ‘দাম্পত্য প্রেমের’ গানেরও অভাব নাই। কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে ‘দাম্পত্য প্রেম’ ভিন্ন অন্যরূপ বিশুদ্ধ প্রেম নাই, সেখানে ‘দাম্পত্য প্রেমের’ গান নাই বলিলেই হয়। হা অদৃষ্ট!
উদাহরণ দিতে হইবে? রবিবাবুর প্রেমের গানগুলি নিন। ‘সে আসে ধীরে’, ‘সে কেন চুরি করে যায়’, ‘দুজনে দেখা হল’ ইত্যাদি বহুতর খ্যাত গান – সবই ইংরেজি courtship-এর গান। তাঁহার ‘তুমি যেও না এখনি’, ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না’ ইত্যাদি গান লম্পট বা অভিসারিকার গান। তাঁহার যে কয়টি গানকে ‘দাম্পত্য প্রেমে’র গান নামে অভিহিত করা যাইতে পারে – তাহারা সেইরূপ খ্যাতি লাভ করে নাই।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এরূপ গানে মৌলিকতাও নাই। শয়ন রচনা করা, মালা গাঁথা, দীপ জ্বালা এ সকল ব্যাপার বৈষ্ণব কবিগণের 888sport app download apk হইতে অপহরণ। [তথ্যসূত্র : ‘কাব্যে নীতি’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়; 888sport live football, ২০শ বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ ১৩১৬, পৃ ১১৪]
ব্যক্তিগত জীবনের অনুভূতিকে কাব্যসংগীতে হৃদ্য করে তোলা, এবং সংগীত-রচনার কাব্যমূল্যের নিঃসন্দিগ্ধ প্রতিষ্ঠা রবীন্দ্রনাথ ঘটিয়েছিলেন, যা পূর্বতন নিধুবাবু, হরুঠাকুর, রামবসু, শ্রীধর কথকের প্রেমের গানগুলির বাণী ও সুরের প্রথাকে লঙ্ঘন করেছিল, যা দ্বিজেন্দ্রলালের বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়ে বলে ধারণা করা যায়।
দ্বিজেন্দ্রলালের প্রতিভা বহুমুখী। তাঁর 888sport live chatসৃষ্টিতে ঐতিহ্যকে রূপায়িত হতে দেখেছি আমরা আর এখন তিনি নিজেই পরিণত হয়েছেন আমাদের ঐতিহ্যে। বাঙালি সংস্কৃতির মর্মে মিশে আছে দ্বিজেন্দ্র-প্রতিভা। তাঁকে অস্বীকার করা মানে আত্মহত্যার নামান্তর। সংক্ষিপ্ত পরিসরে তাঁর সুবিশাল সৃষ্টিকর্ম বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, কিন্তু সার্ধশতজন্মবর্ষে তাঁর প্রতি 888sport apk download apk latest version নিবেদন আমাদের কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার নজির। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.