মোকারম হোসেন
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে জীবনকে কীভাবে অর্থবহ করতে হয়, কীভাবে একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করে সমকালীন সমাজব্যবস্থাকে বদলে দিতে হয়, এমন বিরল দৃষ্টান্তই আমাদের সামনে রেখে গেলেন বৃক্ষাচার্য দ্বিজেন শর্মা। অসংখ্য বিশেষণে বিভূষিত এই মহীরুহসম সরল মানুষটি কখনো বুঝতেই পারেননি নিজের অলক্ষ্যে কতটা বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি। তিনি আমাদের প্রকৃতিচর্চার মহান সাধক, যাঁর সুললিত বাঁশির সুর দেশের অজস্র মানুষকে বিমোহিত করতে পেরেছে। তিনি এদেশের প্রকৃতিবিমুখ মানুষকে নতুন করে উজ্জীবিত করতে পেরেছেন। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা এমন একজন মানুষ যাঁর জন্ম না হলে আমাদের পরিবেশ, প্রকৃতি ও উদ্ভিদজগতের অজানা অধ্যায়গুলো কখনোই হয়তো আমাদের সামনে এভাবে উন্মোচিত হতো না।
শৈশব শিক্ষা ও মানসগঠন
দ্বিজেন শর্মার জন্ম ১৯২৯ সালের ২৯ মে। বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। পাথারিয়া পাহাড়ের অনিন্দ্য নিসর্গের কোলে বেড়ে ওঠা দ্বিজেন শর্মা শৈশবেই তাঁর গন্তব্য ঠিক করতে পেরেছিলেন। পাথারিয়ার ভূপ্রকৃতি একদা তাঁর কৈশোর-তারুণ্যের চোখে যে-দুর্বার স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিল, সে-স্বপ্নই তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিল জীবনের অমিত্মম মুহূর্ত পর্যন্ত।
প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের পাঠশালায়, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন চার মাইল দূরের পিসি হাইস্কুলে। তারপর আসামের করিমগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুলে। আইএসসি আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম কলেজে। করিমগঞ্জ স্কুলে জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময় কাটিয়েছেন। চারপাশের প্রকৃতি ছিল অসাধারণ সুন্দর। অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুও জুটেছিল। শিক্ষকরা ছিলেন বন্ধুসম। কিন্তু আগরতলার পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ পৃথক। ছাত্র পড়িয়ে এক বাড়িতে থাকতেন। তারাও ছিলেন দরিদ্র, খাওয়া-দাওয়ায় বেশ অসুবিধা হতো। তাই মাঝে মাঝে বাড়ি চলে যেতেন। বাড়ি এলে আর ফিরতে ইচ্ছে করত না। সেখানে দুবছর পড়াশোনা করেন। ১৯৫০ সালে কলকাতা সিটি কলেজে বিএসসিতে ভর্তি হন। সেখানে এক বন্ধুর প্রভাবে মার্কসবাদে আকৃষ্ট হয়ে পাঠ্যবই ফেলে মার্কসীয় 888sport live football নিয়ে মেতে ওঠেন।
কর্মজীবন, শিক্ষকের আদর্শ
আমার লেখায় যতবারই তাঁকে বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষায়িত করার চেষ্টা করেছি, তিনি সেসব অগ্রাহ্য করে শুধু অধ্যাপক শব্দটি লিখে দিতেন। অর্থাৎ তিনি নিজেকে শিক্ষক ভাবতেই বেশি পছন্দ করতেন। ১৯৫৪ সালে তিনি বরিশালের বিএম কলেজে যোগ দেন। কীভাবে তিনি সিলেট থেকে বরিশাল গেলেন – এ-গল্প তাঁর মুখে অনেকবার শুনেছি। একদিন হঠাৎ করেই পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হন। বরিশাল বিএম কলেজে শিক্ষক পদে লোক নিয়োগ করা হবে। মানচিত্র খুলে দেখেন সেটা সাগরপাড়ের একটি জেলা। তাঁর ইচ্ছা, সেখান থেকে খুব সহজেই সাগর দেখা যাবে। কোনো কিছু চিন্তা না করেই চলে যান সেখানে। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কলেজে। কিন্তু কিছুদিন পর ভুল ভাঙে। তাঁর স্বপ্নের বঙ্গোপসাগর বরিশাল থেকে অনেক দূরে। ততদিনে কলেজ আর শিক্ষার্থীদের প্রতি মায়া জন্মেছে। ফেলে আসা যায় কি! থাকলেন অনেক দিন। সেখানেও গড়ে তুললেন বিচিত্র গাছপালার পরিকল্পিত এক উদ্যান।
১৯৬২ পর্যন্ত কাটে সেখানেই, তারপর চলে আসেন 888sport appর নটর ডেম কলেজে। তখন (১৯৬৫) অধ্যাপক একেএম নুরুল ইসলামের প্রেরণায় শৈবাল গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। নমুনা সংগ্রহে ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন জলাভূমি, হাওর-বিল ও নদী-নালায়। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত প্রকাশনা সংস্থা প্রগতি প্রকাশনে 888sport app download apk latest versionকের কাজ নিয়ে মস্কো যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। 888sport app download apk latest version করেন চলিস্নশটিরও বেশি গ্রন্থ। তাঁর 888sport app download apk latest versionের সুবাদে রাশিয়ার সমৃদ্ধ শিশু888sport live football বাংলা ভাষাভাষীদের নাগালে চলে আসে। শিশুরা সেইসব বই পড়ে অন্যরকম স্বাদ পেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত ননী ভৌমিক ও ড. হায়াৎ মামুদও 888sport app download for androidীয়। সমসাময়িককালে তাঁদের 888sport app download apk latest versionও আমাদের শিশু888sport live footballকে নানাভাবে অলংকৃত করেছে।
তৎকালীন রাশিয়ার সাম্যবাদী চেতনার মোহই তাঁকে টেনে নিয়ে যায় রাশিয়ায়। নিজেও একজন সমতাবাদী, শামিত্মপ্রিয় মানুষ। ১৯৭৪ সালে প্রথম পা রেখেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন যে-দেশটিকে সেই স্বপ্নের দেশটি আজ আর নেই, ভেঙে ছড়িয়ে পড়েছে পনেরো টুকরো হয়ে। ১৯৯১ সালে প্রগতি প্রকাশনের কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও ১৮ বছরের শিকড়টা একেবারেই উপড়ে ফেলতে পারেননি। বারবারই ফিরে গেছেন সেখানে। দেশে ফিরে এসে এশিয়াটিক সোসাইটিতে বাংলাপিডিয়ার সম্পাদনা কাজে যোগ দেন। বলা বাহুল্য, পরম একাগ্রতা দিয়ে তা শেষও করেন।
প্রবাসে তিনি প্রায়শ 888sport sign up bonusকাতরতায় ভুগতেন। শৈশব তাঁকে অনুক্ষণ মাতিয়ে রাখতো। ১৯৯৩ সালে মস্কোয় বসে লেখা ছোটদের একটি বইয়ের মুখবন্ধে সেই আকুতিই ফুটে ওঠে, – ‘আমি এই সুদূর প্রবাসে আমার মেয়েকে কখনো কখনো নিজের ছেলেবেলার কথা শোনাই। গ্রামে বড় হয়েছি। প্রকৃতির প্রতিটি ঋতুর
বর্ণ-গন্ধ-স্পন্দন আমার রক্তকণায়। এ কাহিনী তাই ফুরোতে চায় না। এ গল্প শেষ হয় না। ফাল্গুনে অশোকমঞ্জরি সুবাসিত সকালে ফুলের সাজি হাতে বাড়ি বাড়ি ঘোরা, প্রথম বৃষ্টির পর মাটির সোঁদা গন্ধ, বৈশাখের ছায়াঘন দিন, রাতভর হাওয়ার মাতলামি, ভোরে আম কুড়োনোর ধুম, বর্ষার এগিয়ে আসা ঘোলা জলে অবিরাম সাঁতার, রথের মেলার সেই আশ্চর্য বাঁশির সুর, বাদল বাউলের অবিশ্রান্ত একতারা শুনে শুনে কাঁথার ওমে ঘুমিয়ে পড়া, শরতের কাকচক্ষু বিল থেকে শাপলা তোলা…।’
উপমহাদেশের উদ্যান888sport live chatের সূত্রধর
উদ্ভিদ888sport apkে অ্যাকাডেমিক পাঠের বাইরে যে আরেকটি বিশাল জগৎ আছে তা আমরা কেবল দ্বিজেন শর্মার লেখা থেকেই জানতে পেরেছি। তাঁর এই ভাবনা সত্যিকার অর্থেই বিচিত্র ও বহুমুখী। তিনি ছিলেন অনুসন্ধানী লেখক। অন্তর্দৃষ্টি, দূরদর্শিতা ও ভাবনার গভীরতার দিক থেকে তিনি দার্শনিক পর্যায়ের একজন। এ-কারণেই তাঁর লেখায় আমরা খুঁজে পাই উপমহাদেশের ঐতিহাসিক উদ্যানচর্চার সূত্র। একই সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতের অরণ্যতরু সন্ধানীদের অজানা অধ্যায়।
রমনা নিসর্গের স্থপতি বিস্মৃতপ্রায় আরএল প্রাউডলক তাঁর লেখাতেই আবার নতুন করে ফিরে আসেন। ১৯০৮ সালের দিকে রমনাসহ 888sport app শহরের নিসর্গ পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছিলেন লন্ডনের কিউ বোটানিক গার্ডেনের অন্যতম এই কর্মী রবার্ট লুইস প্রাউডলক। তাঁর তত্ত্বাবধানেই গড়ে ওঠে রমনাকেন্দ্রিক নিসর্গশোভা, রমনাগ্রিন। তিনি বিশ্বের 888sport app উষ্ণম-লীয় অঞ্চলের সুদর্শন বৃক্ষগুলো 888sport appয় এনে রোপণের ব্যবস্থা করেন। বর্তমান রমনাপার্ক অবশ্য অনেক পরের সৃষ্টি।
ব্রিটিশ অরণ্যতরু সন্ধানীদের স্বরূপ উন্মোচন
দ্বিজেন শর্মা তাঁর নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা গ্রন্থে একঝাঁক ব্রিটিশ উদ্ভিদ888sport apkীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছেন। যাঁরা ব্রিটিশ ভারতের অরণ্যতরু সন্ধানী হিসেবে সুপরিচিত। গেরহার্ড কোয়নিগ, সিপি থানবার্গ, উইলিয়াম রক্সবার্গ, উইলিয়াম কেরি, বেঞ্জামিন হাইনে, ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন, রবার্ট উইট, ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ, ভিক্তর জাকমঁ, জন ফর্বস রয়েল, উইলিয়াম গ্রিফিথ, জোসেফ ডাল্টন হুকার, টমাস টমসন, চার্লস ব্যারন ক্লার্কস, ডেভিড প্রেইন, জর্জ কিং প্রমুখের হাত ধরেই মূলত আমাদের উদ্ভিদবিদ্যার গোড়াপত্তন। আমাদের উদ্ভিদ888sport apk চর্চায় তাঁরা কতটা সম্পৃক্ত ছিলেন সেসব তথ্যই এখানে বিবৃত হয়েছে। কিন্তু প্রায় বিশ বছর আগে যখন বইটির পাণ্ডুলিপি তৈরি হয় তখন আমাদের চারপাশে এমন অবাধ তথ্যপ্রবাহ ছিল না। সেই অর্থে অসাধ্য সাধন করেছিলেন তিনি। আমাদের সামনে হাজির করলেন সম্পূর্ণ অজানা একটি অধ্যায়। বইয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় সংযোজন করে তিনি আমাদের আক্ষরিক অর্থেই সমৃদ্ধ করেছেন।
ব্রিটিশ ভারতের উদ্ভিদ888sport apkীদের মধ্যে যোসেফ ডাল্টন হুকার অগ্রগণ্য। তিনি বৃক্ষানুরাগীদের জন্য শুধু সাত খণ্ডর দ্য ফ্লোরা অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়াই রচনা করেননি, লিখেছেন দ্য হিমালয়ান জার্নালের মতো অসাধারণ একটি গ্রন্থ। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ বইটি দীর্ঘদিন আমাদের অগোচরেই ছিল। দ্বিজেন শর্মা বিচ্ছিন্ন কিছু সূত্র থেকে বইটি সম্পর্কে জানতে পারেন। তারপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সংগ্রহ করেন বইয়ের একটি কপি। ১৮৯১ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত এই সুবিশাল ও দুর্লভ 888sport slot gameবৃত্তান্ত মাধুর্যমণ্ডত ভাষায় তিনি আমাদের জন্য পুনর্কথন করেন। ২০০৪ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। উদ্ভিদপ্রেমীদের জন্য এটি একটি বিস্ময়কর গ্রন্থ। ভাষা এবং বর্ণনাশৈলীর চমৎকারিত্বে দীর্ঘ পটভূমিতে রচিত একটি উদ্ভিদতত্ত্বীয় গ্রন্থকে তিনি সুখপাঠ্য করে তুলেছেন। পড়তে গিয়ে আরেকটি কথাও মনে হয়েছে, গ্রন্থের প্রায় প্রতিটি কথাই অত্যন্ত দরকারি। আদতেও তাই। হুকারের হিমালয়ান জার্নাল উদ্ভিদ888sport apkের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। যে কজন ব্রিটিশ অরণ্যতরু সন্ধানী আমাদের উদ্ভিদবিদ্যার ভিত রচনা করেছিলেন হুকার তাঁদের অন্যতম।
ডারউইনবাদ, রবীন্দ্রনাথ ও সমাজতন্ত্র
দ্বিজেন শর্মা ছাত্রজীবনেই ডারউইনের বিবর্তনবাদ কর্তৃক প্ররোচিত এবং ডারউইনের তত্ত্ব ও মতবাদে প্রভাবিত হন। দেখে আসেন ‘ডারউন-তীর্থ’ শ্রম্নসবারি ও ডাউনগাঁ। ডারউইন মুগ্ধতার ফলেই রচিত হয় ‘সতীর্থ বলয়ে ডারউইন’, ‘ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি’ এবং ‘বিগল যাত্রীর 888sport slot game কথা’।
একসময় নিজের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মার্কসবাদের সাদৃশ্য খুঁজে পান। এই পাওয়াটাই তাঁকে শেষতক পুরোদস্ত্তর মার্কসবাদী হিসেবে গড়ে তোলে। কিন্তু মার্কসবাদ নিয়ে যে পরিমাণ আশাবাদী হন ততটাই আশাহত হন। কারণ সমাজতন্ত্র খোদ রাশিয়াতেই ব্যর্থ হয়। কী কারণে সমাজতন্ত্র দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, দীর্ঘ ৩৪ বছরের অভিজ্ঞতায়ও বিষয়টি তাঁর কাছে অমীমাংসিত। মস্কোয় বসবাসকালে তিনি সমাজতন্ত্রকে শুধু লালনই করেননি, নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ব্যাখ্যাও দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর এসব মতামত পুঁজিবাদী বিশ্বের সোভিয়েত গবেষক পণ্ডতদের চেয়ে অবশ্যই আলাদা ছিল। তাঁর সমাজতন্ত্র প্রভাবিত এসব লেখা একত্রিত করে পরবর্তীকালে সমাজতন্ত্রে বসবাস নামে একটি গ্রন্থে সংকলিত হয়।
তাঁর উদ্ভিদ ও প্রকৃতি বিষয়ক অসংখ্য লেখায় রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ এসেছে গভীরভাবে। আমাদের দেশে তিনিই প্রথম রবীন্দ্রনাথের বৃক্ষবিষয়ক পঙ্ক্তিগুলো ব্যাপক আঙ্গিকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে সমর্থ হন। কাজটি নিঃসন্দেহে শ্রম ও সময়সাধ্য। একাগ্রতা ও নিষ্ঠা ছাড়া এমন কাজ অসম্ভব।
একটি সফল ধারার প্রবর্তক
888sport apk এবং 888sport live footballের সম্পর্ক কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পরিপূরক হতে পারে, দ্বিজেন শর্মার রচনা-নিচয়ে তা নানাভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি নির্মাণ করেছেন জনবোধ্য এক আশ্চর্য ভাষাশৈলী। কিন্তু আজীবন নিসর্গী এই বৃক্ষাচার্য লেখালেখির শুরুতে হতে চেয়েছিলেন ভিন্ন কিছু!
মূলত গল্পের মাধ্যমেই লেখালেখিতে তাঁর হাতেখড়ি। তখন বয়স খুবই কম, আইএসসিতে পড়েন। ১৯৪৯ সালে প্রথম গল্পটি ছাপা হয় কলেজ বার্ষিকীতে। এরপর আরো কয়েকটি গল্প ছাপা হয় বিভিন্ন দৈনিকের সাময়িকীতে। বরাবরই গল্পের বিষয়বস্ত্ত ছিল মানবতাবাদ, জীবন সংগ্রাম এবং সাম্যবাদী চেতনা। পরে প্রকৃতির প্রতি ভালোলাগার বোধ থেকে এ-বিষয়ে লেখালেখি শুরু। রমনাগ্রিনের সৌন্দর্য তাঁকে 888sport appর গাছ নিয়ে বই লিখতে উদ্বুদ্ধ করে। মোটরসাইকেল চালিয়ে সারা 888sport app শহর ঘুরে বেড়াতেন। কোথায় কী গাছ আছে, কোন গাছ লাগানো হচ্ছে সেই সন্ধান করতেন। এসব নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি বই লেখাও শুরু করেন। বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৮১ সালে শ্যামলী নিসর্গ নামে এটি প্রকাশিত হয়। বলতে দ্বিধা নেই, শ্যামলী নিসর্গ অদ্যাবধি বৃক্ষানুরাগীদের প্রকৃতি সমীক্ষা ও লেখালেখিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রতিটি বৃক্ষের আলোচনায় তিনি তুলে ধরেছেন প্রাসঙ্গিক 888sport app download apkর উদ্ধৃতি, গাছপালার আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তিগত অনুভূতি ও উপযোগিতা। বৃক্ষ পরিচিতিমূলক গ্রন্থের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন ধারা – যার প্রবর্তক স্বয়ং দ্বিজেন শর্মা।
শ্যামলী নিসর্গের রচনাকাল ১৯৬২-৬৫। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানাবিধ কারণে গ্রন্থটি দীর্ঘ সময় প্রকাশিত হতে পারেনি। দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয় ১৯৯৭ সালে। গ্রন্থটি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বৃক্ষানুরাগীসহ অসংখ্য নিবিষ্ট পাঠকের কাছে। গ্রন্থে সংযুক্ত ২৫ পৃষ্ঠার দীর্ঘ ভূমিকা আমাদের উদ্ভিদ-ঐতিহ্যের একটি মূল্যবান দলিল। মনে পড়ে, নটর ডেম কলেজের বাগান নিয়ে লিখতে গিয়ে সেখানকার ইংরেজির শিক্ষক ফাদার বেনাসের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। আলাপচারিতার সময় তাঁর ব্রিফকেস থেকে শ্যামলী নিসর্গ বের করলে আমি অবাক হই। একজন ভিনভাষী লোকের কাছেও আছে শ্যামলী নিসর্গ! সেই অর্থে পাঠকপ্রিয়তা ও নির্ভরযোগ্যতার বিচারে শ্যামলী নিসর্গ সার্থক।
নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা তাঁর সুদীর্ঘ সময়ের উদ্ভিদ ও পরিবেশ চর্চার অনবদ্য দলিল। অনুসন্ধানী পাঠক কিংবা নবীন নিসর্গীদের জন্য আকরগ্রন্থসম। আলোচ্য গ্রন্থে তিনি আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে সম্পূর্ণ কিছু প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। বন উজাড় ও পরিবেশ ধ্বংসের মতো অপকর্মের প্রতিবাদ আছে অনেক লেখায়। তুলে এনেছেন আদিবাসী অসহায় মানুষের মুখ, নীড়হারা পাখি কিংবা গৃহহারা প্রাণিদের গল্পগাথা। নিজের একান্ত ভালোলাগা বিষয়গুলোও এখানে আছে নানা আঙ্গিকে। পরিশিষ্টাংশে আছে শ্যামলী রমনার ইতিহাস যা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের অজানা ছিল। সবকিছু মিলিয়ে এটি উদ্ভিদ888sport apkের প্রতিনিধিত্বশীল ও নির্দেশনামূলক গ্রন্থ।
দ্বিজেন শর্মা শুধু ডারউইনবাদে বিশ্বাসীই নন, ডারউইনের ভাবশিষ্যও। এই অনুরক্তি থেকেই বিবর্তনবাদ ও 888sport app আবিষ্কারে তাঁর আগ্রহ ও বিশ্লেষণ প্রশংসনীয়। ডারউইনকে আমাদের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে তিনি এই প্রসঙ্গে তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। যার অন্যতম চার্লস্ ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি। এটি মূলত ডারউইনের বিখ্যাত Origion of Species গ্রন্থের সংক্ষিপণ। বিশাল কলেবরের মূলগ্রন্থ থেকে চমৎকারভাবে প্রকৃত বিষয় ছেঁকে আনা জটিল ও দুঃসাধ্য। এক্ষেত্রে অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকলেও এখানে তা হয়নি। ডারউইন : বিগল্-যাত্রীর 888sport slot gameকথা গ্রন্থত্রয়ীর মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় একটি বই। এখানেও অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি। ৪৮৯ পৃষ্ঠার বৃহৎ কলেবরের Voyage of the Beagle গ্রন্থের সারসংক্ষিপ তুলে এনেছেন মাত্র ৮৮ পৃষ্ঠায়। এ-গ্রন্থের মাধ্যমে সবাই ডারউইনের 888sport slot gameবৃত্তান্ত সম্পর্কে জানতে পারবেন। শুধু 888sport slot gameই নয়, বৈচিত্র্যময় ভূদৃশ্যের অনবদ্য বর্ণনা এবং নানা দেশের তৎকালীন সামাজিক অবস্থার আকৃষ্টকর উপস্থাপনও বইটির একটি বিশেষ দিক। ডারউইন ভাবনা নিয়ে আরেকটি গ্রন্থ হলো সতীর্থ বলয়ে ডারউইন।
উদ্যান রচনা
বাগান করার শখ ছিল তাঁর। কিন্তু এর মধ্যে এক ধরনের এক্সপেরিমেন্টও ছিল। ছিল এক ধরনের হাহাকার। শৈশবে দেখা পাথারিয়া পাহাড়ের নান্দনিক বিন্যাস অনুক্ষণ তাঁর সঙ্গী ছিল। পৃথিবীর কোথাও তিনি এমন সাদৃশ্য খুঁজে পাননি। উদ্যান রচনায় এমন হাহাকার খোদ মোঘল সম্রাটদেরই ছিল। নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা গ্রন্থে দ্বিজেন শর্মা লিখেছেন, ‘এজন্যই হিন্দুস্থানের অঢেল সোনারুপায় সম্রাট বাবর তৃপ্ত হননি, অনুক্ষণ মনে পড়ত কাবুলে তাঁর বাগান কখন বসন্তে লাল-হলুদ অর্গানে ঢেকে গেছে, ডালিম দুলছে ডালে ডালে। তিনি এর তুলনা খুঁজে পাননি পৃথিবীর আর কোন দেশে।’ কিন্তু এক্ষেত্রে নিজের অতৃপ্তিও কম নয়। দেবী শর্মার লেখায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে – ‘… সুতরাং আমাদের বাড়ি এলো হাজার রকমের গাছপালা; কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্যত্র। গাছগুলো থিতু হওয়ার সুযোগ পেত না – আজ এখানে তো কাল ওখানে। তুঘলকি কা-। … আসলে দ্বিজেন শর্মা বড় হয়েছেন পাহাড়ি এলাকায়, ওখানকার নিসর্গ তাঁর অস্থিমজ্জায়, তেমন একটি শোভা সৃষ্টি করতে চাইতেন আমাদের সমতল বাংলায়, সেটা হয়ে উঠতো না, যে জন্য এই উচাটন।’
তিনি প্রথম বাগান করেছেন বাড়িতে। অগ্রজের সবজি আর ফুলের বাগান করার শখ ছিল। তবে সত্যিকারে প্রথম বাগান ১৯৫৮ সালে বরিশাল বিএম কলেজে। বর্তমানে অল্প কয়েকটি বড় গাছ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাঁর ইনফরমাল বাগান তৈরির হাতেখড়ি নটর ডেম কলেজে ফাদার ভেনাসের কাছে। এখনো বাগানটি বেশ ভালোই আছে। সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজেও বাগান করেছেন। কিন্তু তা এখন লুপ্তপ্রায়। এসব ছাড়াও মহানগর পাঠাগার, রমনা পার্ক, শিশু একাডেমি, চারুকলা অনুষদ ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিপন্ন ও দুর্লভ প্রজাতির অসংখ্য গাছ লাগিয়েছেন। জীবনের সর্বশেষ গাছগুলো লাগিয়েছেন বাংলা একাডেমিতে।
উত্তরসূরি তৈরি
নির্মোহ, নিরহংকার জীবনযাপন করতেন তিনি। জাগতিক কোনো জটিলতা তাঁকে কখনো স্পর্শ করেনি। অল্পতেই তুষ্ট থাকা এই মানুষটি আমাদের দেখিয়েছেন এভাবেও মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা যায়। চাওয়া-পাওয়ার কোনো হিসাব কখনো করতে দেখিনি। ছিল না কোনো হাহাকার। উদার এবং মানবিক হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। ছোট-বড় সবার সঙ্গেই সমভাবে মিশতে পারতেন। সম্ভাবনাময় তরুণদের লেখা পড়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতেন। তাদের উৎসাহ দিতেন। তাঁর মতো এতো উদারতা নিয়ে অনুজপ্রতিমদের শেখাতে কাউকে দেখিনি। তরুণদের ভেতর আলোর কণা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। জীবনে অসংখ্য অনুসারী তৈরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠরা এখন নিজেই একেকটি প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে ড. আইনুন নিশাত এবং ড. রেজা খান উলেস্নখযোগ্য। এনএসএসবির প্রতিষ্ঠাতা নটর ডেম কলেজের শিক্ষক মিজানুর রহমান অসংখ্য তরুণের চোখে প্রকৃতিপ্রেমের আলো জ্বালাতে সমর্থ হয়েছেন। ছাত্রদের মধ্যে মুকিত মজুমদার বাবু প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের কাছে প্রকৃতি প্রেমের বারতা পৌঁছে দিতে সমর্থ হয়েছেন। এছাড়া বরিশাল বিএম কলেজ এবং 888sport appর নটর ডেম কলেজে দীর্ঘ সময় অধ্যাপনাকালে তৈরি করেছেন অনেক সফল ছাত্র। r


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.