যুদ্ধ মানেই ভয়ংকর মানবিক বিপন্নতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ফ্যাসিবাদী ন্যাৎসি বাহিনীর পরাজয়ের পর জার্মানিতে উদ্ভূত সামাজিক সংকটের কথা কতজনই বা জানে। যুদ্ধফেরত সৈনিকদের মনোবৈকল্য ও বিপন্নতা ইতিহাসে খুব উল্লেখ নেই। 888sport live footballধারাতেও খুব পাওয়া যায় না। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন জার্মান নাট্যকার উলফগ্যাং বোর্চার্ট-রচিত দ্য ম্যান আউটসাইড নাটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানির বিধ্বস্ত জীবন-বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। 888sport appয় সম্প্রতি এই নাটকটি মঞ্চে এনেছে অ্যাক্টোম্যানিয়া নামের নাট্যদল। মামুন হকের 888sport app download apk latest versionে এ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন তরুণ অভিনেতা-নির্দেশক তালহা জুবায়ের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাওয়া একটি সৈনিকের প্রতীকী চরিত্রে নাটকটি আবর্তিত। সৈনিকের মনোবাস্ততা নিঃসঙ্গতাসহ সে-সময়ের সমস্যাগুলি এতে চিত্রিত। নাটকটি যুদ্ধের ভয়াবহতার বিপরীতে সুন্দরের স্বপ্নকে জাগিয়ে তোলে।
আঠারো শতকের জার্মানির নাট্যচর্চায় চিন্তাবোধ বেশি আশ্রয় করেছে। গ্যোটে, শিলার, হাইনার ম্যুলার, বেখ্ট প্রমুখের নাট্যভাবনায় চিন্তার নানা মাত্রা যোগ হয়েছে। উলফগ্যাং বোর্চার্ট (১৯২১-১৯৪৭) জার্মানির ক্ষণজন্মা একজন লেখক। তিনি একাধারে কবি, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তিনিও বাংলার কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো ফ্যাসিবাদ বা একনায়কতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন। তাঁর লেখায় মানবতাবাদী সুর প্রতিধ্বনিত। তার ম্যান আউটসাইড নাটকটি ১৯৪৬ সালে রচনা করেন। নাটকটিতে যুদ্ধোত্তর ট্রাজিক পরিণতির কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে বহুল মঞ্চায়িত। নাটকটির বাংলা 888sport app download apk latest version করেছেন বিশিষ্ট 888sport app download apk latest versionক মামুন হক। জার্মান ভাষা থেকে মামুন হকের 888sport app download apk latest versionের নাম ‘দরজার বাইরে’। যিনি প্রায় একযুগের কাছাকাছি সময় জার্মানিতে কাটিয়েছেন। জার্মান ভাষাতেও তার বেশ ব্যুৎপত্তি আছে। বোর্চার্ট ছাড়াও মামুন হক বেখ্ট নিয়ে বেশ কিছু গবেষণার কাজ করেছেন। অ্যাক্টোম্যানিয়া তাঁদের নাটকের শিরোনামে ইংরেজি নাম The Man Outside ব্যবহার করেছে।
অ্যাক্টোম্যানিয়া নাট্যদলটি জার্মান নাট্যকার হাইনার ম্যূলারের ‘হ্যামলেট মেশিন’ প্রযোজনার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। কবির চৌধুরী-অনূদিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন নওরীন সাজ্জাদ। তার পরিবেশনায় তিনি সামগ্রিকতার মধ্য দিয়ে নৈরাজ্যবাদী বিক্ষুব্ধ জীবন-বাস্তবতার নতুন উপলব্ধির ইঙ্গিতমুখী বয়ান তৈরি করেছিলেন। উত্তরাধুনিক উপস্থাপন নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা দলটির পূর্বেই ছিল। ফলে দ্য ম্যান আউটসাইড নাটকের তরুণ নির্দেশক তালহা জুবায়ের এ-নাটকে একটি চরিত্রকে ভিত্তি করে নির্মাণ করতে পেরেছেন যুদ্ধবিরোধী মানবতাবাদী নাট্যবয়ান। সুনির্দিষ্ট চরিত্র-ঘটনার বেড়াজাল থেকে বের হয়ে বিধ্বস্ত মানবিক অভিব্যক্তির দৃশ্যকল্পতে তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
উলফগ্যাং বোর্চার্ট-এর রচনায় যুদ্ধবিধ্বস্ততার ট্রমা নাটকের অন্তঃসুর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনীর হেরে যাওয়া এক সৈনিকের মনোবৈকল্যকে তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন, অভিব্যক্তিবাদী প্রকাশপ্রক্রিয়ায় মানবিক অবক্ষয় ও আত্মঘাতী মানসিকতার বিপরীতে জীবন-সৌন্দর্যের জয়গান গেয়েছেন। নাট্য ভাষায় কখনো তিনি বিমূর্ত, কখনো প্রতীক কিংবা পরাবাস্তববাদী অবয়বে সৈনিকের বিধ্বস্ত জীবনের উপলব্ধি, সর্বহারার বেদনা ও মনোজাগতিক অস্থিরতার চিত্র এঁকেছেন। বোর্চার্ট মাত্র পাঁচটি দৃশ্য বিভাজনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানির সমাজবাস্তবতাকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। নাৎসি বাহিনীর ফ্যাসিবাদী চেতনাকে ঘিরে যে বিশ্ববিপ্লব তার ধ্বজাধারী যখন পরাজিত হয় তখন তার মানসিক রূপরেখা কেমন হয় নাট্যকার বোর্চার্ট প্রতিটি দৃশ্যে যেন সে ছবিই এঁকেছেন।
নাটকটি অ্যাক্টোম্যানিয়া নাট্যদলের দ্বিতীয় প্রযোজনা। নাটকের গল্পগাথা সরলরৈখিক। অ্যাক্টোম্যানিয়া পরিবেশনা শুরু করে একটি কবরস্থানের দৃশ্যকল্পের মধ্য দিয়ে। বিমূর্ত এ দৃশ্য-স্থাপত্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশকে বাস্তবসত্যে রূপান্তর করে। তারপর মঞ্চে আলো জ¦লে উঠলে ভেসে ওঠে এলবে নদী, যেখানে যুদ্ধফেরত এক সৈনিক আত্মহত্যা করতে এসেছে। সৈনিকটির নাম বেকমান।
বেকমান : আমি এখন কোথায়? আমি কোথায় আছি।
এলবে নদী : তুমি আমার কাছে আছো।
বেকমান : তাহলে তুমি কে? তোমার আসল পরিচয় দাও।
এলবে নদী : আমি সেন্ট পাওলি থেকে ভেসে আসা একটি স্রোত।
বেকমান : আমি এক হাজার রাত্রি ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনি। আমাকে চিরনিদ্রার একটি ব্যবস্থা করে দাও। … আমার বয়স ২৫, আমার একটা পা ইনজুর্ড। আমার চলার পথ অনেক কঠিন এবং আমার ঘুমানের জন্য একটা বিছানাও নেই। তুমি কি রাশিয়ার স্টালিনগ্রাদে আমার মতো যুদ্ধে গিয়েছিলে?
এলবে নদী যেন সৈনিক বেকমানের ভাঙা মানসিকতাকে বোঝে। নদী মানুষের মতো কথা বলে। আত্মহত্যার বিপরীতে জীবনের স্বপ্নের দিকে বেকমানকে ঠেলে দিতে চায়। শো-শো করে বাতাসের শব্দের মতো এলবে নদী হাজারো অভিজ্ঞতা ঘাত প্রতিঘাতেও যেন বহমান। জীবনযুদ্ধে পরাজিত বলে অন্ধকারে নেমেছে বেকমান। কিন্তু রাতের অন্ধকারে উঠে আসা অন্য চরিত্রটি বেকমানকে পরাজিত জীবনের বিপরীতে উঠে দাঁড়ানোর কথা বলে। কিন্তু স্বপ্ন কী দেখতে পারবে বেকমান? সে শক্তি কী তার মনে আছে? আজ তার হাঁটু ভেঙে গেছে। স্ত্রী চলে গেছে। সন্তান মারা গেছে। নিজে দাঁড়ানোর মতো, নিজের ঘরে ঘুমানোর মতো অবশিষ্ট স্থান তার নেই। আশাহীন সৈনিক বেকমান তাই অজানার পথে হাঁটে। প্রতীকী নানা ব্যঞ্জনায় যুদ্ধের বীভৎসতা মঞ্চে দৃশ্যমান হতে থাকে। বেকমান যেন ভূত, অতীতকে নিয়ে পড়ে আছে। বর্তমান পৃথিবীকে দেখতে পায় না। সে যেন ছিটকে পড়া এক অস্বাভাবিক মানুষ। শুধু বেকমান নয়। জার্মানিতে এ-সময় হাজার হাজার মানুষ এরকম। একটি মেয়ের সঙ্গে বেকমানের পরিচয় হয়। তার স্বামী ক্ষুধার্ত ও শীতে কাতর হয়ে রাশিয়ার স্টালিনগ্রাদে ৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছে। বেকমান নিজেও স্ত্রীহারা, সহায়-সম্বলহীন। এখন সে নিজের নামটাকেই পরিবর্তন করে ফেলতে চায়। ঘৃণা লাগে নিজের নামে। তবে কী নিজের প্রতি, সমাজের প্রতি বেকমানের কোনো দায়িত্ব নাই? মঞ্চে উঠে আসে জেনারেল। উঠে আসে বিষাক্ত গ্যাসের কথা। ফুটে ওঠে মানব জীবনের বিপন্নতা। গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ১৯৩৪ সাল। প্রতীকী অর্থে ইহুদি নিধনের নানা দৃশ্যকল্প। সৈনিকরা কী থেমেছিল? প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও তারা যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিল। সমাজে বেকমান আজ অসহায়। সবার কটাক্ষ যেন বেকমানের প্রতি।
– আমার ভয় হচ্ছে এ লোকটাকে দেখে আমি ভয় পাচ্ছি।
– এই লোকটার মনে হয় মাথায় সমস্যা আছে বা পাগল হয়ে গেছে।
– মনে হচ্ছে লোকটা অতি চালাক, সবকিছু বেশি বোঝে।
– এই লোকটাকে আমি সামলাবো, তোমরা কিছু চিন্তা করো না।
– আরে লোকটা মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।
প্রত্যেক সৈনিকই একেকটা বেকমান। বীভৎসতায় আতঙ্কিত বেকমান প্রতিদিন স্বপ্নে দেখে। স্বপ্নে ভয়ংকর চিৎকার শোনে। এটা যেন কেউ তাকে চাপিয়ে দিয়েছে। পরের দৃশ্যে দেখা যায় নাট্যনির্মাণ। শিলার, রবার্টস, হাইনার ম্যূলারের মতো নির্মিত হবে প্রতিবাদী নাটক, যাতে ভাববাদী দর্শন ও বস্তবাদী দর্শনকে এক করে চমক দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সত্য, 888sport live chat ও সভ্যতা কি একসুরে গাথা? বেকমান খুঁজতে থাকে পথ। এভাবে নাট্য কাহিনি এগিয়ে যেতে থাকে। এক সময় বাড়ির দরজা দেখতে পায়। ৩০ বছর যেখানে কেটেছে আজ সে গৃহ শূন্য। নিজের বাবা-মারও সন্ধান পায় না বেকমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল বেকমানের বাবা। ইহুদিদের ওপর অত্যাচারের কাহিনি তার জানা। কিন্তু সে বাদামি রঙের মিলিটারি পোশাকের দিন এখন শেষ। বেকমান খুঁজতে থাকে জীবনের মানে। নাটকের শেষে বেকম্যান যেন নিজেই নিজেকে দেখে চমকে ওঠে –
আমি কোথায়? আমি কি স্বপ্ন দেখছি? নাকি আমি মৃত ব্যক্তি। না না আমি এখনো মৃত না। আমার এখনো মৃত্যু হয়নি। প্রতি রাতে আমি জেগে উঠবো এবং শুনতে পাবো টিকটিক, টিকটিক। জীবন এ রকমই। একজন মানুষ ফিরে এলো জার্মানিতে অথচ শীতে কাঁপছে, পেটে ক্ষুধা। একটা পা নেই। আর মানুষের হাসাহাসি। আমি খুনি না, কীভাবে প্রমাণ করবো আমি খুনি না। মৃত্যু ও খুনের সাথে আমাদের জীবন জড়িয়ে থাকে।
দ্য ম্যান আউটসাইড নাটকের চরিত্রগুলো ইতিহাস নির্ভর নয়। কিন্তু চরিত্র সৃষ্টি এত ইতিহাসঘনিষ্ঠ যে
ইতিহাস-সত্যের মতো 888sport live chatসত্য নির্মাণ করে। নাটকের প্রধান চরিত্র বেকমান ও বিকারগ্রস্ত এক চরিত্র। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সায়েম সিজান। সাত্ত্বিক ভাব-ভাষা ও সংলাপে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত মানসিক বাস্তবতার আবেগকেই স্পর্শ করতে চেয়েছেন। চরিত্রের পোশাক, চলন, বচন, হাব-ভাব সে সময়ের জার্মানির পরাজিত বিক্ষুব্ধতার বিপরীতে মানবিক জাগরণকে উসকে দেয়। অত্যন্ত প্রাণস্পর্শী মেধাদীপ্ত অভিনয়। সংলাপের ঝোঁক, প্রক্ষেপণেও সিজানের দক্ষতা লক্ষ্যণীয়। নাটকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র জেনারেল, যে চরিত্রে কামরুজ্জামান তাপুর বিশ^াসযোগ্য অভিনয় নাট্যীয় বাস্তবতাকে তুলে ধরে। জেনারেল চরিত্রটি নানা ইঙ্গিতমুখী। ডিরেক্টর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফকির বিপ্লব। তিনি ইউরোপীয় বাস্তববাদী অভিনয়রীতিতে চরিত্র নির্মাণ করেছেন। উদাহরণ : ডিরেক্টর : যুদ্ধ তো শেষ হয়ে গেছে। তাহলে সৈনিকের পোশাক পরে আপনি কেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন?
বেকমান : আমি কিন্তু গত পরশু সাইবেরিয়া থেকে ফিরে এসেছি।
ডিরেক্টর : ও সাইবেরিয়া! সেখানকার যুদ্ধ। কিন্তু আমার এই চশমা ছাড়া কি আর কোনো চশমা নেই?
বেকমান : আমি ভাগ্যবান। কারণ আমার একটা চশমা আছে। এই চশমাই তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ফ্রু ক্রেমার চরিত্রে নওরিন সাজ্জাদের সংলাপ প্রক্ষেপণে কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামা বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তার অভিনয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বতঃস্ফূর্ত চলন নাট্যবাস্তবতাকে যেন জীবন্ত করে তুলেছে। 888sport app চরিত্রে যারা অভিনয় করেছেন, তারা হলেন : মারিয়া-মার্শিয়া সাওন, অন্য ব্যক্তি-সাগর বড়ুয়া শান, জেনারেলের
স্ত্রী-নাবিলা আশেক, স্নাইডা-মারজুক আল হাসান। কোরাসে ছিলেন পারিশা মেহজাবিন, জেরিন স্বপ্না, আসিল আমিন, মইনুল হাসান বাপ্পি।
চরিত্রের সংলাপগুলো প্রতীকবাহী। আলংকারিক ব্যঞ্জনায় ঠাসা। মামুন হকের 888sport app download apk latest versionের ভাষা অত্যন্ত জীবনঘনিষ্ঠ। নাট্যবস্তুগত আদর্শে সংলাপের পরম্পরাহীনতার সম্ভাবনা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে নাটকের সংলাপগুলো অত্যন্ত যোগাযোগীয়। যেমন, বেকমান : তাহলে মৃত মানুষের কাফেলা কী বেড়েই চলেছে।
ঈশ্বর : আপনি তলিয়ে যাচ্ছেন, আপনার মৃত্যুতে কেউ কোনো ভাষণও দেবে না। যুদ্ধে কোনো স্তম্ভও থাকবে না।
বেকমান : আমাকে সাথে নিয়ে চলো হে মৃত্যু। আমাকে ভুলে যেও না।
ঈশ্বর : আমি কাউকে ভুলবো না। আমার সেস্কোফোন বেজে উঠবে। আমি আমার কাজ করে যাবো।
বেকমান : মৃত্যু তুমি তোমার দরজাটা খোলা রেখো। দয়া করে দরজা বন্ধ করো না।
নাটকের নাট্যিক গতি বহুমাত্রিক। গল্প, বর্ণনা, অভিনয়-সংলাপ, আলো-ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে ঘণ্টাধিক সময়ের টান টান মনোমুগ্ধকর আবেগিক পরিবেশনা। প্রযুক্তিগত নানা মাত্রার সংশ্লেষ নাট্য উপস্থাপনাকে অনবদ্য করে তুলেছে। নাটকের আখ্যানভাগ বিমূর্তবাদী হলেও ইতিহাস ও জীবনের গভীর বাস্তবতা অন্তঃসুরে জ্বলজ্বলে। নাটকের প্রতিটি দৃশ্যেই নাটকীয় উপাদান রয়েছে। নাট্য উপস্থাপনায় আলোর সোর্স অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। আলো পরিকল্পনা করছেন মোখলেসুর রহমান। প্রজেক্টটর ও প্রক্ষেপিত আলোয় মায়ায় জীবনের নৈরাজ্যমুখী ঘোর দৃশ্য লাভ করেছে। কাহিনির সেট নির্মাণ করেছেন নির্দেশক তালহা জুবায়ের নিজেই। ড্রামাটার্গ ও বাস্তববাদী পোশাক পরিকল্পনা করেছেন নওরিন সাজ্জাদ। মিউজিকে সারাক্ষণই থিয়েট্রিক্যাল আবহে রেখেছে। মিউজিক ডিজাইন করেছেন জাফরি আবেদিন। প্রপস রাফি ইফার ও কোরিওগ্রাফি করেছেন পারিশা মেহজাবিন। সেট-পোশাক, প্রপস, অভিনয়-চলনে-অনবদ্য নাট্য গাঁথুনি।
নির্দেশক তালহা জুবায়ের বয়সে অত্যন্ত তরুণ। তালহা দ্য ম্যান আউটসাইড নাটকটিতে উপস্থাপনায় একক সুনির্দিষ্ট রীতির আশ্রয় স্পষ্ট না করলেও একধরনের অভিব্যক্তিমুখী উপস্থাপনরূপ লক্ষ্যণীয়। তিনি সরাসরি বাস্তবতার উপস্থাপন করেননি। নানা নৈর্ব্যক্তিক বা প্রতীকী উপকরণে সমাজবাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
প্লট-সেটিং-এর নান্দনিক গাঁথুনিতে পোস্টমডার্ন প্রেজেন্টেশন। গল্পগাঁথুনির টানটান উত্তেজনাকর পরিবেশনা। থ্রুু লাইনের গতি নিয়েও নানা ভাবনামুখর উপস্থাপন। ত্রিমাত্রিক আয়তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ভিডিওগ্রাফিও নাটকটির ব্যঞ্জনা প্রকাশে সার্বজনীন 888sport live chatমাত্রা দিয়েছে। দর্শকের সঙ্গে এমপ্যাথিক্যাল যোগাযোগ এতো চমৎকার যে প্রতি মুহূর্তে দর্শকও যেন অভিনয় করেছে। প্রযুক্তি-888sport live chat-বাস্তবাস্তবতায় সুররিয়ালিস্টিক কৌশলের পরিশ্রমী নাট্যনির্মাণ।
নাট্য নির্মাণ সম্পর্কে নিদের্শক তালহা জুবায়ের বলেন – ‘‘বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি প্রায়শই জার্মান 888sport live footballের জন্য ‘জিরো আওয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পুরাতন ব্যবস্থার পতন, সেইসাথে ধ্বংসপ্রাপ্ত জার্মান শহরগুলি 888sport live football প্রকাশের ধরনগুলিকে আমূল পরিবর্তন করে। এটিকে পরবর্তী সময়ে Kahlschlagliteratur নামে অভিহিত করা হয়। যার উদাহরণ উলফগ্যাং বোর্চার্টের নাটক দ্য ম্যান আউটসাইড। আমরা কেউই যুদ্ধ চাই না তা সত্ত্বেও যুদ্ধ আমাদের উপর চেপে বসে। কিন্তু যুদ্ধ যে শেষ পর্যন্ত মানবতাকে নিষ্পেষণ করে, সভ্যতার গতি প্রবাহকে ব্যহত করে, মনুষ্যত্বকে অবরুদ্ধ করে সেটা যেমন দেখা এবং দেখানো আমার ইচ্ছা ছিলো, পাশাপাশি যুদ্ধমুক্ত একটি ধরিত্রী গড়ে তোলার প্রত্যাশায় আমাদের এই নাটকের নির্মাণ। যদিও যুদ্ধ পরবর্তী এই টেক্টট 888sport live footballের আলাদা কোনো ইজমে ধরা হয় না, এইটাকে বলা হয় ‘ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে সাহিতচর্চা’। এই ধরনের টেক্টট লস্ট জেনারেশনকে প্রতিনিধিত্ব করে বলে নির্মাণের ক্ষেত্রে গল্পটাকে সমসাময়িক করতে পরাবাস্তববাদকে বেছে নিয়েছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মৃত্যের 888sport free bet প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। আমাদের 888sport appsে মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ। এছাড়াও গত ৫০ বছরে সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেবাবন, লিবিয়া, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরবর্তী
যে-ভয়াবহতা, এতে করে ক্ষমতা ও স্বার্থের রাজনীতির স্বীকার হয় প্রাণপ্রকৃতি। এছাড়াও আমাদের জীবনে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই বেশি যে কারুর মৃত্যু আর এখন আমাদের ছুঁয়ে দেয় না কেমন ভোতা হয়ে যাচ্ছি আমরা। সেই জায়গা থেকে আমরা যুদ্ধবিরোধী একটা বার্তা দিতে চেয়েছি।’’
অ্যাক্টোম্যানিয়ার নাট্যভাষা ফ্যাসিবাদ, বুর্জোয়া সভ্যতা ও যুদ্ধ-বিরোধী। যুদ্ধ কতটুকু মানবিক বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসে দলটি তাই যেন দেখাতে চেয়েছে। নাটকের কথন সহজ, সরল ও অলংকার সমৃদ্ধ। বর্ণনা-সংলাপে 888sport live football নানা গুণ লক্ষ্যণীয়। নির্দেশক নাট্যবাস্তবতায় সময়কালের রূপরেখাকে ধরতে চেয়েছেন। আহার্যাভিনয়ে খুব বেশি জৌলুস করতে চাননি। কিন্তু নাট্য পরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট ছিলেন। সহজ-সরল নিরাবরণ মঞ্চকৌশলে প্রযুক্তি ও অভিনয়ের সম্মিলন ঘটাতে চেয়েছেন। নাটকটি অত্যন্ত গতিশীল, যে-গতি অনুধাবনকে সহজ করে, আবেগকে স্পর্শ করে। তবে, কাহিনিতে অস্থিরতা থাকলেও পরিবেশনায় কিছুটা স্থিরতাও প্রয়োজন।
নাটকটির প্রচার-প্রকাশনায় সর্বত্র ইংরেজি ভাষার ব্যবহার করতে দেখা গেছে। স্যুভেনির লেখা ইংরেজি ভাষায়। 888sport appsের মঞ্চে 888sport appsি দর্শকের কাছে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। স্যুভেনির বাংলায় হওয়া আবশ্যক। নব্য কলোনি তৈরি না করে আমাদের 888sport live chatচর্চা যেন আমাদেরকে সমৃদ্ধ করে সে বিষয়ে সজাগ থাকা উচিত। সারাবিশ্বে সমাজ জীবনকে গঠনমূলক দৃষ্টিকোণ থেকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু আবহমান বাংলার সমাজ জীবনকে ব্যাখ্যা করার মতো ভালো কোনো নাটক আজো হয়নি। অথচ নিন্দা করার মতো অসংখ্য নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে। ইতিহাসের কত ঘটনা, কত যুদ্ধ আছে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী মানসিক অবক্ষয়গুলোও নাটকে ঠিক উঠে আসেনি। আমরা আশা রাখবো ভবিষ্যতে 888sport appsের নাট্যচর্চায় স্বদেশীয় বুদ্ধিভিত্তিক ব্যাখ্যা চিন্তা উঠে আসবে, যাতে আমাদের দেশ-সমাজ-সভ্যতা এগিয়ে যেতে পারে। যা হোক, বৈশ্বিক 888sport live chat পর্যালোচনা করে 888sport apps হাজার বছরের আবহমান ঐতিহ্যের চেতনায় বিশ্বজনীন বিকশিত হোক – সে-প্রত্যাশা আমাদের সবার।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.