নক্ষত্রের সন্তান

মানুষের শরীরের বেশির ভাগই পানি, যদি পানিটুকু আলাদা করা যেত তাহলে দেখা যেত পায়ের তলা থেকে বুক পর্যন্ত পুরোটুকুই পানি। পানিকে আমরা পানি হিসেবেই দেখে অভ্যস্ত, যদিও আসলে সেটি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে তৈরি। পরমাণুর 888sport free bet দিয়ে হিসাব করলে মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি রয়েছে হাইড্রোজেনের পরমাণু, কিন্তু হাইড্রোজেন যেহেতু সবচেয়ে হালকা পরমাণু তাই 888sport free betয় বেশি থেকেও তার ওজন বেশি নয়, মানুষের শরীরে ওজন হিসেবে হাইড্রোজেন হচ্ছে শতকরা দশভাগ। সেই হিসাবে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে অক্সিজেন Ñ শতকরা পঁয়ষট্টি ভাগ। এরপর হচ্ছে কার্বন – শতকরা আঠারো ভাগ। এই বড় তিনটি পরমাণুর পরেই হচ্ছে নাইট্রোজেন Ñ শতকরা তিন ভাগ। বাকি চার ভাগ তৈরি হয় ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরিন, ফ্লোরিন – এই ধরনের আরো নানা পরমাণু দিয়ে। পরিমাণে তুলনামূলকভাবে কম হলেও এদের গুরুত্ব কিন্তু মোটেও কম নয়। যেমন – লোহার পরিমাণ শতকরা অর্ধ-শতাংশের কম হলেও আমাদের রক্তে অক্সিজেন নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে লোহা। কাজেই হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন ও 888sport app পরমাণু ছাড়া মানবদেহ সম্পূর্ণ হতে পারে না।

এবারে একটি সহজ প্রশ্ন করা যাক, আমাদের শরীরে এগুলো এসেছে কোথা থেকে? একটি ছোট শিশু মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে, সেগুলো পেয়েছে মায়ের শরীর থেকে। মা তার সারা জীবনে বড় হওয়ার সময়ে নানারকম খাবার থেকে পেয়েছেন। কিন্তু আমরা আসলে প্রশ্নটি আরো গভীরভাবে করতে চাই। আমাদের শরীরে এই যে বিভিন্ন পরমাণু এসেছে সেগুলো তৈরি হয়েছে কোথায়?

প্রশ্নটি ঠিকভাবে অনুভব করার জন্যে আমাদের হঠাৎ করে একটু পরমাণু888sport apk জানা দরকার। সবচেয়ে সহজ পরমাণু হচ্ছে হাইড্রোজেন, যার কেন্দ্রে একটি প্রোটন এবং সেই প্রোটনকে ঘিরে ঘুরছে একটি ইলেকট্রন। প্রোটনের চার্জ পজিটিভ, ইলেকট্রনের নেগেটিভ তাই দুইয়ে মিলে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু চার্জবিহীন। হাইড্রোজেনের পরের পরমাণু হিলিয়াম। হিলিয়াম পরমাণুতে দুটি ইলেকট্রন। কাজেই আমরা অনুমান করতে পারি, তার কেন্দ্রে নিউক্লিয়াসে দুটি প্রোটন থাকবে। নিউক্লিয়াস হয় খুবই ছোট। যদি একটি মানুষকে চাপ দিয়ে তার পরমাণুগুলো ভেঙে নিউক্লিয়াসের ভেতর ঠেসে রাখা যেত তাহলে মানুষটিকে মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা যেত না! এত ছোট জায়গায় পাশাপাশি দুটি প্রোটন থাকতে পারে না, একই চার্জ হওয়ার কারণে একটি আরেকটিকে ঠেলে বের করে দিতে চায়। ব্যাপারটি নিরুপদ্রব করার জন্যে সেখানে প্রোটনের সমান ভর কিন্তু চার্জহীন নিউট্রন থাকে। একটি পরমাণুকে তার ইলেকট্রন (এবং প্রোটনের) 888sport free bet দিয়ে নির্দিষ্ট করা হয় Ñ কিন্তু নিউট্রন কতগুলো হবে সেটি এরকম জোর দিয়ে বলা যায় না। নিউট্রনের 888sport free bet প্রোটনের 888sport free betর সমান কিংবা বেশি হতে পারে। এবং এ-ধরনের নিউক্লিয়াসকে আইসোটপ বলে। নিউক্লিয়াস যত বড় হয় নিউট্রনের 888sport free bet তত বেশি হয়। মানুষের শরীরে যেসব পরমাণু পাওয়া যায় তার ইলেকট্রন এবং প্রোটনের 888sport free bet ১নং তালিকায় দেওয়া হলো। বিভিন্ন আইসোটপের গড় করে পারমাণবিক ভর বের করা হয়েছে। তালিকাটি এক নজর দেখে আমরা আমাদের আগের প্রশ্নে ফিরে যাই, মানুষের শরীরে পাওয়া যায় বলে যে-পরমাণুগুলোর নাম লিখেছি, সেগুলো কোথা থেকে এসেছে? যে-পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হয়েছে সেখানেই এই পরমাণুগুলো ছিল, কিন্তু পৃথিবীতে এগুলো কোথা থেকে এসেছে? প্রশ্নটি সহজ, কিন্তু উত্তরটি সহজ নয়!

সৃষ্টিজগতে এই পৃথিবী বা সৌরজগৎ আসার অনেক আগে নক্ষত্রগুলোর জন্ম হতে শুরু করে। 888sport apkীরা হিসাব করে বের করেছেন সৃষ্টিজগতে প্রথম নক্ষত্রগুলোর জন্ম হয়েছিল ১৩ থেকে ১৪ বিলিয়ন (১৩ থেকে ১৪ শত কোটি) বছর আগে। সৃষ্টির আদিমুহূর্তে সবকিছু ছিল সহজ-সরল তাই শুরু হয়েছিল সবচেয়ে সহজ পরমাণু হাইড্রোজেন দিয়ে। মানুষ হত্যা করার জন্যে এখন যে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করা হয় নক্ষত্রের শক্তি তৈরি করার প্রক্রিয়াটি আসলে সেই একই প্রক্রিয়া। নক্ষত্রের ভেতরে হাইড্রোজেন অন্য হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে হিলিয়াম তৈরি করে এবং সেই হিলিয়াম তৈরি করার প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন করে। সেই শক্তি নক্ষত্রকে ঔজ্জ্বল্য দেয়, তাপ দেয়। একটি নক্ষত্র যে কী পরিমাণ তাপ, আলো বা অন্য শক্তি  দিতে পারে সেটি বোঝার জন্যে আমাদের সূর্যকে এক নজর দেখলেই হয়। ঘরের এত কাছে এরকম একটি নক্ষত্র আছে বলেই  পৃথিবীর 888sport apkীরা এত সহজে নক্ষত্র-সম্পর্কে এত কিছু জানতে পেরেছেন।

নক্ষত্রের ভেতরে হাইড্রোজেন এক ধরনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। হাইড্রোজেন ফুরিয়ে গিয়ে হিলিয়াম তৈরি হয় (হিলিয়ামের ইলেকট্রন বা প্রোটন-888sport free bet ২, পারমাণবিক ভর ৪, সেই হিলিয়াম থেকে তৈরি হয় কার্বন আর এভাবে নক্ষত্রের ভেতরে বিভিন্ন নিউক্লিয়াস তৈরি হতে থাকে। আমাদের পৃথিবীতে আমরা এখন যে-পরমাণুগুলো দেখি তার সবগুলো এভাবে কোনো-না-কোনো নক্ষত্রের ভেতরে তৈরি হয়েছে। আজকাল 888sport apkীরা বিশাল কোনো গবেষণাগারে এক্সেলেরেটর ব্যবহার করে এক-দুটি নিউক্লিয়াস তৈরি করতে পারেন, কিন্তু আমাদের পৃথিবীর বা সৌরজগতের জটিল পরমাণুর সবগুলোই তৈরি হয়েছে কোনো-না-কোনো নক্ষত্রের ভেতরে। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা সবাই আসলে কোনো-না-কোনো নক্ষত্রের অংশ।

স্বাভাবিক ভাবেই পরের প্রশ্নটি চলে আসে, যদি সত্যি সত্যি আমাদের শরীরের জটিল পরমাণুগুলো কোনো-না-কোনো নক্ষত্রের ভেতর তৈরি হয়ে থাকে তাহলে সেগুলো সেখান থেকে এই পৃথিবীতে এল কেমন করে?

১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি যুক্তরাষ্ট্রের উহসকনসিন স্টেটে একটি কনফারেন্সে গিয়েছি। সারা পৃথিবী থেকে ছোট-বড় অনেক পদার্থ888sport apkী এসেছেন, তাঁদেরকে আনন্দ দেওয়ার জন্যেই কী-না জানি না, ঠিক তখন সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে স¥রণীয় ঘটনাটি ঘটে গেল। সকালে কনফারেন্সে এসে শুনতে পেলাম আগের দিন একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর আগে সুপারনোভা বিস্ফোরণ শুধুমাত্র তার আলো থেকে দেখা যেত, এই প্রথমবার 888sport apkীরা আলো ছাড়াও অদৃশ্য নিউট্রিনো ডিটেক্টর তৈরি করেছেন এবং প্রথমবার সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে বের হওয়া নিউট্রিনোকে 888sport apkীরা দেখতে পেলেন, সারা পৃথিবীতে বিশাল হৈচৈ!

সুপারনোভা-বিষয়টি বোঝা খুব কঠিন নয়। মানুষের যে-রকম জন্ম-মৃত্যু হয় নক্ষত্রেরও সে-রকম জন্ম-মৃত্যু হয়। অপঘাতে মৃত্যু বা খুন- জখমকে যদি বাদ দিই তাহলে মানুষের জন্ম-মৃত্যুর একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। নক্ষত্রের সেই প্রক্রিয়াটি নির্ভর করে তার ভরের ওপর। নক্ষত্রের ভর যদি সূর্যের ভরের কাছাকাছি হয় তাহলে তার মৃত্যু হয় মোটামুটি বৈচিত্র্যহীন। নক্ষত্র তার জ্বালানি নিউক্লিয়ার-বিক্রিয়া করে শেষ করে ফেলে। মহাকর্ষের আকর্ষণে গ্রহটি সংকুচিত হয়ে ছোট হয়ে পৃথিবীর আকারের কাছাকাছি হয়ে থাকে। কিন্তু নক্ষত্রের ভর যদি সূর্যের ভর থেকে ১.৪ গুণ বা তার বেশি হয় তাহলে তার মৃত্যুটি হয় চমকপ্রদ! নক্ষত্রটি তার জ্বালানি শেষ করে ফেলতে থাকে এবং নক্ষত্রের কেন্দ্রটি সংকুচিত হতে থাকে। জ্বালানি যেহেতু শেষ হয়ে আসছে নক্ষত্রকে ধরে রাখার কিছু নেই। কেন্দ্রটি হঠাৎ করে তখন সংকুচিত হয়ে অত্যন্ত ক্ষুদ্র আকার নিয়ে নেয়। বলা যেতে পারে, পরমাণুগুলো ভেঙে তার নিউক্লিয়াসটিতে সমস্ত ভর এসে জমা হয়। কেন্দ্রে যেটি তৈরি হয় তার নাম নিউট্রন স্টার। পুরো ব্যাপারটি ঘটে মাত্র সেকেন্ড দশেকের মধ্যে। নিউক্লিয়াসটির ভরের শতকরা দশ ভাগ তখন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ভয়ংকর একটি বিস্ফোরণের জন্ম দেয়, সেই বিস্ফোরণে পুরো নক্ষত্রটি ছিন্নভিন্ন হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে (ছবি নং ১)। ১৯৮৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঠিক এরকম একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটতে দেখেছিল পৃথিবীর মানুষ।

এই বিস্ফোরণে নক্ষত্রের ভেতরে তৈরি হওয়া জটিল পরমাণুগুলো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সেগুলো লক্ষ-কোটি বছর পর মহাজাগতিক ধূলিকণা এবং অন্য সবকিছুর সাথে মিলে হয়তো কোথাও   সৌরজগতের জন্ম দেয়। সেই সৌরজগতে সূর্য থাকে, পৃথিবীর মতো গ্রহ থাকে। পৃথিবীতে থাকে মানুষ জন্ম দেওয়ার প্রয়োজনীয় অণু-পরমাণু, যার জন্ম হয়েছে নক্ষত্রে এবং সুপারনোভা বিস্ফোরণে ছড়িয়ে পড়েছিল মহাবিশ্বে।

তাই পৃথিবীর মানুষ যখন কখনো নিজের দিকে তাকায় তার বিস¥য়ে অভিভূত হয়ে যাবার কথা, তার রক্তের ভেতরকার লৌহ পরমাণু, দাঁতের ক্যালসিয়াম, মস্তিষ্কের পটাসিয়াম Ñ সবগুলোর জন্ম হয়েছিল মহাজগতের কোনো এক নক্ষত্রে। অলৌকিক উজ্জ্বল আলোর ছটা ছড়িয়ে সেগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল মহাজগতে। সেই হিসেবে আমরা সবাই কোনো-না-কোনো নক্ষত্রের অংশ।

যে-মানুষ নক্ষত্রের অংশ সে কি কখনো কোনো ছোট কাজ করতে পারে? করা কি উচিত?