নজরুলে সর্বেশ্বরবাদী ও বাস্তববাদী চেতনার দ্বৈধ এবং অতঃপর

হাবিব আর রহমান

সাধারণভাবে আমাদের জানা আছে যে, নজরুল ইসলামের জীবন-দর্শনে সর্বধর্মের এক বিস্ময়কর সমন্বয় ঘটেছিল, যার বহিঃপ্রকাশ তাঁর গদ্যে-পদ্যে-গানে স্বতোৎসারিত। জানামতে, পৃথিবীর আর কোনো কবি-888sport live footballিকের সৃজনকর্মে এমনটি ঘটেনি। একই সঙ্গে সেমেটিক ঈশ্বর-ধারণা, সর্বেশ্বরবাদ ও প্যাগানতত্ত্ব নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো কবি 888sport app download apk বা গান লিখেছেন? সুতরাং প্রশ্ন না উঠে পারে না যে, নজরুলের ক্ষেত্রে এই অনন্য ঘটনাটি কেন ঘটল? এই জিজ্ঞাসার উত্তরসন্ধান তেমনভাবে কেউ করেছেন বলে চোখে পড়ে না। তার কারণ সম্ভবত এই যে, ওই জিজ্ঞাসার উত্তর কেবল বহির্মহলের জীবন ও জগতের তথ্য ও ঘটনাবলি দিয়ে পাওয়া যাবে না, যেতে হবে তত্ত্বের নিগূঢ় ভাবলোকে। সেদিনটা হয়তো তেমন কেউ ভাবেননি। একেবারেই ভাবেননি বলা ভুল হবে। কাজী আবদুল ওদুদের শীর্ণকায় বই নজরুল-প্রতিভায় অন্তত তার ইঙ্গিত আছে। তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে আমরা এগোতে চাই। সেজন্য ওদুদের বক্তব্যটুকু বলে নেওয়া দরকার। তিনি লিখেছেন,

অন্তরের গোপনতম প্রদেশে তিনি তাত্ত্বিক – আর সেই তাত্ত্বিকতা তাঁর যেন জন্মগত। তাঁর এই পরমপ্রিয় তত্ত্বের নাম দেওয়া যেতে পারে লীলাবাদ – ইংরেজিতে যা সাধারণত Pantheism নামে পরিচিত। এই দৃষ্টিতে ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য, জন্ম-মৃত্যু, উত্থান-পতন সবকিছুই ভগবানের লীলা। এই তত্ত্বকে বলা যায় একই সঙ্গে অদ্বৈতবাদ ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ। হিন্দু চিন্তার এটি যে মর্মকথা তা না বললেও চলে, সুফী-চিন্তারও এটি মর্মকথা – এক হিসাবে প্রাচীনকালের ভাবুকদের এটি পরম আশ্রয়। এই হিন্দু-মুসলমানের মাথা ভাঙাভাঙির দিনেও নজরুল যে অবলীলাক্রমে শ্যামাসংগীত ও বৃন্দাবনগাথা রচনা করে চলেছেন, তৌহিদেরও (একেশ্বরতন্ত্রের) শক্তিশালী ব্যাখ্যা দিতে পারছেন তার রহস্য নিহিত রয়েছে তাঁর এই মূল বিশ্বাসের ভিতরে।

ওদুদের এই অবলোকন যে কতটা গভীরভাবে সত্য তার স্বাক্ষর মেলে নজরুলের কবিজীবনের একেবারে প্রাথমিক পর্বেই। – আদালতে দাখিলের জন্য লেখা রাজবন্দীর জবানবন্দীতে। এটি লেখার সময় তাঁর বয়স মাত্র ২৪ বছর। কবি-কর্তৃক সম্পাদিত অর্ধসাপ্তাহিক ধূমকেতু (প্রথম প্রকাশ ১১ আগস্ট ১৯২২) পত্রিকার ১২শ 888sport free betয় (২৬ সেপ্টেম্বর) তাঁর ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ 888sport app download apkটি ছাপা হয়। পুনর্মুদ্রিত হয় ‘আগমনী’। এছাড়া জনৈক লীলা মিত্রের ‘বিদ্রোহীর কৈফিয়ত’ নামের 888sport live, বিপস্নবী যতীন মুখার্জি, ক্ষুদিরাম ও কানাইলালের ছবি ওই একই 888sport free betয় ছাপা হয়। পরের 888sport free betয় নজরুল ‘স্বরাজ টরাজ’ নয়, ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেন। সারাভারতে সেই প্রথম লিখিতভাবে স্বাধীনতার দাবি তোলা। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ ও ‘বিদ্রোহীর কৈফিয়ত’ লেখাদুটির জন্য লেখক ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে ১২৪-ক ও ১৫৩-ক ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। আগেই খবর পেয়ে নজরুল কলকাতা ছাড়েন, কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করেননি। ফলে ২৩ নভেম্বর কুমিলস্নায় গ্রেফতার হন। বিচারে তাঁর এক বছর কারাদ- হয়। বিচার উপলক্ষে তিনি যে-কৈফিয়ত রচনা করেন (৭ জানুয়ারি ১৯২৩) সেটিই রাজবন্দীর জবানবন্দী নামে ধূমকেতুতে ছাপা হয়।

জবানবন্দিতে পরপর দুটি অংশে বিস্ময়করভাবে সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী মত নজরুল প্রকাশ করেছেন। পুরো অংশটি আগে বলে নিচ্ছি :

সুর আমার বাঁশির নয়, সুর আমার মনে এবং আমার বাঁশি সৃষ্টির কৌশলে। অতএব দোষ বাঁশিরও নয়, সুরেরও নয়; দোষ আমার যে বাজায়। তেমনি যে বাণী আমার কণ্ঠ দিয়ে নির্গত হয়েছে, তার জন্য দায়ী আমি নই। দোষ আমারও নয়, আমার বীণারও নয়, দোষ তাঁর যিনি আমার কণ্ঠে তাঁর বীণা বাজান। সুতরাং রাজদ্রোহী আমি নই; প্রধান রাজদ্রোহী সেই বীণাবাদক ভগবান।

উদ্ধৃতির প্রথম অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাঁশ থেকে বাঁশি বানানো এবং তা থেকে সুর সৃষ্টি, এ তো 888sport live chat রচনার গোড়াকার তাত্ত্বিক ভাষ্য। তাছাড়া এও তো সরল সত্য যে, বাঁশিতে যে-সুর বাজে, তার দায় বাদকেরই। এখানে যুক্তির বিন্দুমাত্র ছিদ্র নেই। নজরুল যে-মৌল লক্ষ্যে তাঁর নির্মিত বাঁশি বাজাচ্ছেন তা ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিতে রাজদ্রোহ। সেজন্য তিনিই রাজবন্দি, অন্য কেউ নয়। পুরো ব্যাপারটি জাগতিক, প্রত্যক্ষ জীবনের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট। অথচ এর পরই বলছেন, দায়ী তিনি নন, দায়ী ভগবান। কেননা যে-বাণী তাঁর কণ্ঠ দিয়ে নির্গত হয়েছে তা তাঁর নয়, ভগবানের। তিনিই কবির কণ্ঠে তাঁর বীণা বাজান। লক্ষণীয় যে, নজরুলের বক্তব্য অনুযায়ী বাঁশি আর বীণার বাদক দুই ভিন্ন সত্তা – প্রথম সত্তা কবি স্বয়ং, আর দ্বিতীয় সত্তা ভগবান। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কবি কর্তা নন, মাধ্যম। সুতরাং ‘প্রধান রাজদ্রোহী’ সেই ভগবান। তাঁকে বিচার করার কোনো আদালত পৃথিবীর কোথাও নেই। উদ্ধৃতির পরের অংশে নজরুল এ-কথাই বলেছেন। তাঁর মর্মধৃত দর্শন অনুযায়ী এ-বক্তব্য অস্বাভাবিক নয়।

অভিনিবেশ দিয়ে পাঠ করলে উদ্ধৃতির দ্বিতীয় অংশের ‘তেমনি’ ও ‘সুতরাং’ এই যুক্তি প্রয়োগী শব্দদুটির আগের অংশের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা সুতরাং যুক্তির মেকিত্ব চোখে না পড়ে পারে না। তর্কশাস্ত্রে একেই বোধহয় হেত্বাভাস (Fallacy) বলে। এই জাগতিক-অজাগতিক ব্যাপারের বিরোধী সহাবস্থান নজরুলে কেন ঘটেছে তার কারণ সন্ধানে ওদুদ-কথিত ওই তাত্ত্বিকতায় না গিয়ে উপায় নেই। বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর আরো একাধিক রচনায় এর প্রকাশ দেখা যায়। একটি গানে লিখেছেন –

খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে

প্রলয়-সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে প্রভু নিরজনে।

শূন্য মহা আকাশে মগ্ন লীলা-বিলাসে

ভাঙিছ গড়িছ নিতি ক্ষণে ক্ষণে।

ভাব-সাধনার দেশ বাংলায় এই দর্শন-ধারক বক্তব্য নতুন নয়। বিখ্যাত গায়ক আবদুল আলীমের কণ্ঠে গীত একটি লোকগানেও ওই সুর শোনা যায় –

এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া এত যত্নে গড়াইয়াছেন সাঁই।

তুমি হাকিম হইয়া হুকুম করো পুলিশ হইয়া ধরো

সর্প হইয়া দংশন করো ওঝা হইয়া ঝাড়ো

আমার মনের এই আনন্দ তুমি খাওয়াইলে আমি খাই।

এর সঙ্গে বিস্ময়কর মিল লক্ষ করা যায় অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর প্রকাশিত নজরুলের নতুন চাঁদ কাব্যের ‘অভেদম’ 888sport app download apkর বক্তব্যের সঙ্গে। কবি লিখেছেন :

রুদ্রের রূপে সংহার করি, প্রেমময় রূপে কাঁদি

যারে ‘তুমি’ বলো সেই ‘আমি’ খুঁজি নিজের অন্ত আদি।…

সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার – এই তিন রূপই যার লীলা

সেই সাগরের আমি যে উর্মি বিরহিনী উর্মিলা।

দুখ শোক ব্যাধি নিজে লই সাধি – কখনো অত্যাচারী –

অসুর সাজিয়া কেড়ে খাই – পুনঃ দেবতা সাজিয়া মারি।…

এই ভাবনা-দর্শনের কারণেই নজরুলের জীবনে ও সৃজনকর্মে সর্বধর্মের যে-সমন্বয় ঘটেছে, তা সম্ভব হতে পেরেছে বলে মনে হয়। ধর্মের রয়েছে দুটি দিক। একটি আচারগত দিক, অন্যটি তার আন্তর সত্য। আচারের দিকটি কোনো-না-কোনো শাস্ত্রকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে। অন্য দিকটির নির্দিষ্ট কোনো শাস্ত্র নেই। যদি থেকেও থাকে তবে তার নাম বাউল-ফকিরের ভাষায় ‘দেল-কেতাব’। লালনের গানে আছে ‘দেল-কেতাব খুঁজে দেখ রে মমিন চাঁদ/ তাতে আছে রে সকল বয়ান।’ এই ভাব-দর্শনটি সর্বাধিক প্রাবল্য পেয়েছে নজরুলের ‘সাম্যবাদী’ 888sport app download apkয়। কবি প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেছেন – তুমি কে? –  পার্সি, জৈন, ইহুদি, কনফুসিয়াস? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যে-ই হও আর ‘পেটে-পিঠে’ কাঁধে-মগজে’ যে-পুথি-কেতাবি বও না কেন, এ সবই ‘প-শ্রম’। এ নিয়ে অহংকার-অহমিকা কবির কাছে দোকানে ‘দর-কষাকষি’ ছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই তাঁর আবেদন :

তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,

সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা খুলে দেখ নিজ প্রাণ।

কেবল এ-ই নয়, মন্দির-মসজিদ-গির্জা কিংবা মক্কা-মদিনা-বুদ্ধগয়া-বৃন্দাবন সবকিছুরই অধিষ্ঠান এই হৃদভূমিতে। মহামানবেরা সত্যের আহবান শুনেছেন এখানে বসেই। অন্তরের গভীরতম এই বিশ্বাস থেকেই নজরুল তাই অক্লেশে বলতে পারেন : ‘এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির-কাবা নাই।’

সুফি-বৈষ্ণব-বাউল-ফকিরদের বক্তব্যও তা-ই। নজরুলের কবিসত্তার এই দিকটির সঙ্গে তাদের ভাবনার গভীর মিল। তাই বাউল-ফকিরদের লেখায়, বিশেষ করে লালনের গানে একই সঙ্গে যেমন শরিয়ত, মারফাত, খোদাতত্ত্ব, নবীতত্ত্ব, কৃষ্ণতত্ত্ব, গৌরতত্ত্বের সাক্ষ্য পাওয়া যায়, ওদুদ-কথিত ‘হিন্দু-মুসলমানের মাথা ভাঙাভাঙির দিনে’ নজরুলে তেমনি ইসলামি ও হিন্দুবিষয়ক সাধারণ, রূপক ও তত্ত্বাশ্রিত গান-888sport app download apk-গদ্য ইত্যাদি নানা আঙ্গিকের রচনার দেখা মেলে।

যে-তত্ত্বের ব্যাখ্যা আমরা করতে চাইছি, তাতে যে-নামে বা যে-রূপেই হোক না কেন, ঈশ্বর-প্রসঙ্গ আছেই। তা সত্ত্বেও এর কেন্দ্রে রয়েছে মানুষ – তার মোহনীয়তা। বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাসের পক্ষে সেই মধ্যযুগেই তাই বলা সম্ভব হয়েছিল : ‘শুনহ মানুষ ভাই/ সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’ এ-কালের নজরুলের মুখে একটু ভিন্ন রূপে অনুরূপ কথাই শুনি আমরা –

গাহি সাম্যের গান –

মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।

নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,

সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।

এবার একটা প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। বা বলা যায়, এইখানটায় এসে একটা প্রশ্ন অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেই সূত্রে আরো একাধিক প্রশ্ন। নজরুল-মানসের এই বিশেষ দিকটিতে, যার প্রভাব নেহাত কম নয়, স্বাতন্ত্র্য বা নতুনত্ব কোথায়? তাছাড়া পরিবর্তিত বিশ্বে, বিশেষত ত্রিখ–ত ভারতবর্ষের – যা ছিল তাঁর স্বদেশ – ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে এই নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? থাকলে কতটুকু? এছাড়া আরেকটি গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। সুর-অসুর এই দুই সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী সত্তা যদি একই ঈশ্বরে ক্রিয়াশীল থাকে তাহলে জীবন-জগতের অনাচারসমূহ কীভাবে দূর করা সম্ভব? ঈশ্বরের অনাচারী সত্তায় বিশ্বাস করলে পরিস্থিতি পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকা তো অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। মানব-জীবন তাহলে পুতুলনাচের ইতিকথা ছাড়া আর কিছু হয় না। সন্দেহ নেই, বিষয়টি যথেষ্ট জটিল। অথচ আমাদের কালে নজরুলচর্চার প্রাসঙ্গিকতা আলোচনায় এই জটিলতা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এড়িয়ে যাওয়া উচিতও নয়।

স্রষ্টা আর সৃষ্টির অভেদত্ব তত্ত্বে সুফি-বৈষ্ণব-বাউল-ফকিরদের বক্তব্যের সঙ্গে নজরুলের এই বিষয়ক বক্তব্যের মৌল কোনো তফাৎ নেই। কিন্তু তফাৎ আছে অন্য জায়গায়। দুপক্ষই প্রজাতিগত দিক থেকে মানুষে-মানুষে সমতা সম্পর্কে সোচ্চার হয়েছেন বটে, কিন্তু দুপক্ষের সাধনা এক নয়। এখানে দেহকেন্দ্রিক সাধনার কথা বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে জীবন-সাধনার কথা। দেহবাদী সাধনা নজরুলের নয়। প্রথম পক্ষ যেখানে মানুষে-মানুষে কেবল সমতা বাঞ্ছা করেছেন, নজরুল সেখানে সেই বাঞ্ছা বাস্তবায়নের জন্য কর্মের পথে অর্থাৎ আন্দোলন-সংগ্রাম-বিপস্নব-বিদ্রোহে কল্যাণার্থীদের ডাক দিয়েছেন। এ-কথাটা বলা খুবই দরকার যে, নজরুলের চেতনায় সমতা-ভাবনা বা সাম্যবাদের অর্থ ব্যাপক, বহুস্তরীয়। সেগুলো প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রামের বিকল্প নেই।

এবার নজরুলের চিন্তার ক্ষেত্রে সেই প্রবল স্ববিরোধের প্রসঙ্গ তোলা যাক। বিরোধ জগৎ-ব্যাপারের সঙ্গে জগদাতিরিক্ত একটি বিশেষ বিশ্বাসের, যাকে বলেছি অভেদ তত্ত্ব। এই দুটি ব্যাপারকে মেলানো সম্ভব নয়। তাই বলতেই হয় যে, এই দ্বৈধ দুদিক থেকে ক্ষতিকর হয়েছে – জীবন-দর্শনে ও 888sport live chat-সৃষ্টিতে। নজরুলের জীবন-দর্শনে স্থৈর্যের অভাব ছিল এবং তা তাঁর 888sport live chatসৃষ্টিকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষুণ্ণ করেছে। আবদুল ওদুদ সংক্ষেপে, কিন্তু খুবই দক্ষতার সঙ্গে এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছেন নজরুল-প্রতিভা পুসিত্মকায়, যেখান থেকে তাঁর উদ্ধৃতি আগে আমরা ব্যবহার করেছি।

এই সীমাবদ্ধতাটুকু বাদ দিয়ে শুধু যদি নজরুলের বহুস্তরীয়  সাম্য-ভাবনার 888sport app download apk ও গানের কথা ধরা হয়, তাহলেও তিনি আজকের দিনেও প্রবলভাবে প্রাসঙ্গিক। বলেছি যে, নজরুলের সমকালীন বিশ্ব ও দেশীয় পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু তা কতটা গুণগত? আঠারো থেকে বিশ শতকের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত  এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার বহু দেশে যে-সাম্রাজ্যবাদ শাসন-শোষণ করেছে সে আজ প্রত্যক্ষে নেই বটে, কিন্তু পরোক্ষে আছে। তার এখন অন্য রূপ অথবা রূপাবলি। উত্তর উপনিবেশবাদী তত্ত্ব এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বছর বিশেকের মধ্যে উপনিবেশগুলো স্বাধীনতা পেলেও তা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা নয়। আজকে তৃতীয় বিশ্ব নামে চিহ্নিত ওইসব দেশ প্রথম বিশ্ব অর্থাৎ ভিন্নরূপী সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা কোনো-না-কোনোভাবে নিয়ন্ত্রিত। পুঁজিতন্ত্রেরও নতুন আদল। তাছাড়া সাদা-কালো আর ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের নামে ভ-ামি, 888sport promo codeর প্রতি অবজ্ঞা – এক কথায় নানা কিসিমের শাসন-শোষণ-পীড়ন বহাল তবিয়তেই আছে। বিদ্রোহ-বিপস্নবের মাধ্যমে এই সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছিলেন নজরুল। সুতরাং যেখানে অন্যায়-অনাচার সেখানেই তিনি আমাদের প্রেরণাদায়ী শক্তি।

এই আলোচনায় নজরুল-মানসের দুটি বিশেষ দিক ধরতে চাওয়া হয়েছে যা স্বরূপত পরস্পরবিরোধী। তবে বিসত্মারে যাওয়া হয়নি, যদিও সে-সুযোগ যথেষ্ট আছে বলে ধারণা করি। তাছাড়া এই দুই বিরোধী চিন্তা তাঁর 888sport live footballসৃষ্টির 888sport live chatমান কোথায় কীভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে সে-বিষয়েও আলোকপাত করা হয়নি, কেবল মন্তব্য করা হয়েছে। নজরুল সম্পর্কে আলোচনা বা গবেষণায় এই সম্পূর্ণ বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য। r