নজরুল জিজ্ঞাসুর তদবির

কবির দায়বদ্ধতা ও নজরুল

কবির দায়, 888sport app download apkর দায় 888sport live chatের শর্তকে যদি এতটুকু মোচড় না দেয়, প্রচলিত সমাজব্যবস্থার শাসন ও শোষণের কেন্দ্রীভূত নিয়মতান্ত্রিক নিগড়কে যদি ভেতর থেকে আলোড়িত না করে, তাহলে নজরুল-পাঠ একপ্রকার অনৈতিক ও অমূলক। অ্যারিস্টটল একবার বলেছিলেন, কবিকে রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করাই শ্রেয়। কেননা 888sport live football ও 888sport live chatচর্চার 888sport app মাধ্যমের থেকে 888sport app download apk ও সংগীতের প্রভাব ও উত্তেজ অনেক বেশি জনমুখী। তাই তাকে নিয়ে রাষ্ট্রের মাথাব্যথার হাজারো অবকাশ রয়েছে। নজরুল-আলোচনায় পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশ জানা ও বোঝা জরুরি ঠিক এই কারণেই যে, একজন 888sport live chatী কতখানি সামাজিক দায় ও তাগিদ থেকে 888sport live chatচর্চার অনুষঙ্গকে ফিরে ফিরে দেখেছেন। সে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলবার ক্ষেত্রেই হোক, কিংবা হিন্দু-মুসলমান সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেই হোক।

আজকের আলোচনায় আমরা নজরুলের সৃষ্টিকর্মের অনুষঙ্গে বেশকিছু প্রশ্ন ও প্রতিপ্রশ্ন নিয়ে এখানে কথা বলবো।

নজরুল-পূর্ববর্তী বাংলা 888sport live footballে মানবপ্রত্যয় ও সাম্যবাদের কথা এমন দ্বিধাহীনভাবে ও উচ্চকণ্ঠে সম্ভবত উচ্চারিত হয়নি, অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ও সত্যেন্দ্রনাথের চিন্তনবিশ্বে কল্পনামূলক সাম্যবাদের প্রকাশ ঘটলেও সোভিয়েত বিপ্লবের পূর্বে সাম্যবাদী চিন্তার প্রকাশ সেইভাবে দেখা যায়নি। নজরুলের 888sport app download apkতেই সাম্যবাদের প্রবল আবেদন সংলক্ষ্য। অন্নবস্ত্রের অধিকার তাঁর কাছে স্বাধীনতার অন্যতম রূপ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছিল –

ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত,

                                          একটু নুন

…        …     ….

কেন ওঠে না ক’ তাহাদের গালে, যারা খায় এই

                                        শিশুর খুন?

১৯২৫ সালের শেষদিকে নজরুল ইসলাম, হেমন্তকুমার সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমদদের উদ্যোগে মজুর স্বরাজ পার্টি গঠিত হলে তার মুখপত্র রূপে লাঙল পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ওই পত্রিকার প্রথম 888sport free betয় তিনি ঘোষণা করেন –

গাহি সাম্যের গান

 যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা – ব্যবধান

যেখানে মিশিছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম ক্রীশ্চান

গাহি সাম্যের গান

আসলে নজরুলের কবিমানসে ধর্ম এক উদারতার ব্যাখ্যার আসনে প্রতিষ্ঠিত। তিনি বহু ধর্মসম্প্রদায়ে বিভক্ত মানুষকে একসূত্রে বাঁধতে চেয়েছিলেন। তিনি কৃষ্ণ-বুদ্ধ-খ্রিষ্ট-মহম্মদকে একাসনে বসিয়েছেন। তাঁর  কাব্যে  ধর্মীয়  ঐতিহ্য  বিপ্লবী  তাৎপর্য  লাভ  করেছে।

পুঁথি-রচয়িতাদের   অন্ধবিশ্বাস,   ভক্তি-কপটতাকে   অতিক্রম   করে  হিন্দু-মুসলিমের ঐতিহ্যে তিনি আধুনিক সমাজসচেতনতা আরোপ করে সত্যিকারের বৈপ্লবিক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন।

জাতীয়তাবাদ ও নজরুল

নজরুল ইসলাম শুধু ধর্মীয় নয়, ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদকে স্বীকার করেননি, তাঁর কথায় – ‘আমি এ দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশেরই এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের সকল মানুষের। যে কুলে, যে সমাজে, যে বংশে, যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। আমি তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই কবি।’

সমাজ ও জাতীয় জীবনে সাম্য-উদারতা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠাই ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য এবং এই প্রসঙ্গে তাঁর পূর্ণসচেতনতা ব্যক্ত হয়েছে তাঁর শেষ অভিভাষণে।

একালে অনেকে নজরুলের মানবপ্রত্যয় ও সাম্যবাদ সম্পর্কিত চিন্তায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের সাদৃশ্য খুঁজে না পেয়ে সমালোচনা করতে পারেন; কিন্তু মনে রাখতে হবে, একালের মতো বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র 888sport appsে তখন সুপ্রচলিত ছিল না। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ কতটা নিরপেক্ষভাবে সমাজ ও সামাজিক মানুষকে বিচার করে তা যথেষ্ট বিতর্কমূলক। তবে নজরুল সমস্ত প্রচারমূলক বাদাবাদীর ঊর্ধ্বে নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়নে সমর্থ হয়েছেন – এটুকুই বলা যায়।

তাঁর সাম্যবাদী ভাবনা নির্দিষ্টভাবে কোনো মতবাদ আবর্তিত করে তাঁর চিন্তাভাবনা বিবৃত হয়নি। তাই এর মধ্যে অদ্ভুত এক মিলনমূলক গ্রহণী শক্তি ছিল।

মানবপ্রত্যয় ও সাম্যভাবনার অন্যতম দিক হলো অসাম্প্রদায়িকতার চিন্তা। এ-ব্যাপারে প্রথম রবীন্দ্রনাথই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকে উন্মোচন করতে পেরেছিলেন। সামাজিক মূল্যবোধের কাঠামোর মধ্যে উভয় সম্প্রদায়ের ব্যবধানের কারণগুলো যে নিহিত তিনি তা লক্ষ করেছিলেন।

কাজী নজরুল ইসলামকে তাঁর সমসাময়িকেরা আখ্যায়িত করেছেন ‘যুগের কবি’ বলে। এই অভিধা অযৌক্তিক ও অসংগত ছিল না। কিন্তু কাকে যুগের কবি বলা যায়? যিনি যুগের দাবি পূরণ করেন, তিনিই যুগের কবি। তবে নজরুল সেই কবি যিনি তাঁর যুগের দাবিও পূরণ করেছেন, চিরকালের মানুষের জন্যও রেখে গেছেন তাঁর শাশ্বত বাণী। সুতরাং তিনি কালের কবি, একই সঙ্গে কালোত্তীর্ণ। যেসব সমস্যা তাঁর কালে ছিল এবং যতদিন তা পৃথিবীতে থাকবে, ততদিন তিনি প্রাসঙ্গিক, ততদিন তাঁর প্রয়োজন ফুরোবে না।

সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পতাকা উড়িয়ে ধূমকেতুর মতো আকস্মিকভাবে নজরুলের আবির্ভাব। তিনি ‘অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ’ স্তব্ধ না হওয়া পর্যন্ত শান্ত না হওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি উপলব্ধি করেন, উপনিবেশবাদীদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করলেই উপমহাদেশে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। আর তা না হওয়ার পথে প্রধান শত্রু সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ। এই শত্রুর শেকড় সমাজে সর্বত্র বিস্তারিত। তা যদি সমূলে নির্মূল করা না যায়, উপমহাদেশের মানুষের মুক্তি সুদূরপরাহত। এবং তাঁর সেই আকাক্সক্ষা যে অমূলক ছিল না, তা একশ বছর পরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেকালে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রকৃতি ছিল একরকম, একালে তাতে যোগ হয়েছে নতুন উপাদান – জঙ্গিবাদ।

সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা ছাড়া আর যে-বিষয়টির নজরুল ছিলেন সাবলীল প্রবক্তা তা হলো 888sport promo codeমুক্তি। সমাজের অর্ধেক মানুষ 888sport promo code। ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে 888sport promo codeকে বন্দি করে রেখে সামাজিক অগ্রগতি অর্জন অসম্ভব – এই প্রত্যয়ে তিনি ছিলেন অবিচল। 888sport promo codeমুক্তি প্রশ্নে তাঁর সময়ে নজরুলের চেয়ে বেশি আর কেউ কঠোর অবস্থান নেননি। প্রায় একশ বছর আগে নজরুল যে-ভাষায় সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় মৌলবাদকে আঘাত করেছেন, আজ উপমহাদেশের পরিস্থিতির এতোটাই অবনতি ঘটেছে যে, সে-ভাষায় কথা বলা সম্ভব হবে না আমাদের। সেদিনের চেয়ে ধর্মীয় উগ্রতা আজ বহুগুণ বেশি। সাম্প্রদায়িক হিংসা-বিদ্বেষ যারা সমাজে ছড়ায় এবং তা নিয়ে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে, তারা যে-ধর্মাবলম্বীই হোক, তাদের নজরুল বলেছেন পশু এবং নিরীহ পশু নয়, সেই শ্রেণির হিংস্র দাঁত-নখ-শিংঅলা পশু যে অন্যকে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। নজরুল সমাজের পশুশক্তিকে আঘাত করেছেন সরাসরি সোজা ভাষায় এবং তাদের বোধগম্য ভাষায়।

অসাম্প্রদায়িক নজরুল

বিশের দশকে যখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তুঙ্গে, তখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িকতার সমস্যাটি ছিল নজরুলের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। ভারতবর্ষ যদি স্বাধীন হয় এবং তা যে হবেই সে-প্রত্যয়ে নজরুলের ছিল পূর্ণ আস্থা, তারপর হিন্দু-মুসলমানের সমস্যা থেকে গেলে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা বিঘ্নিত হবে। সুতরাং সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার মতো সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধিতাও হয় নজরুলের প্রধান কাজ। হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা নিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও আলোচনা করেন। তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু বিস্তারিত জানা না গেলেও তার সারমর্ম জানিয়েছেন নজরুল তাঁর এক লেখায়। তাঁর ভাষায় :

একদিন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছিল আমার, হিন্দু-মুসলমান সমস্যা নিয়ে। গুরুদেব বললেন : দেখ, যে ন্যাজ বাইরের, তাকে কাটা যায়, কিন্তু ভিতরের ন্যাজকে কাটবে কে?

হিন্দু-মসলমানের কথা মনে উঠলে আমার বারে বারে গুরুদেবের ঐ কথাটাই মনে হয়। সঙ্গে সঙ্গে এ প্রশ্নও উদয় হয় মনে  যে,  এ  ন্যাজ  গজালো  কি  করে?  এর  আদি  উদ্ভব কোথায়? ঐ সঙ্গে এটাও মনে হয়, ন্যাজ যাদেরই গজায় – তা ভিতরেই হোক আর বাইরেই হোক – তারাই হয়ে ওঠে পশু। যে সব ন্যাজওয়ালা পশুর হিংস্রতা সরল হয়ে বেরিয়ে আসে বাইরে – শৃঙ্গরূপে, তাদের ততো ভয়ের কারণ নেই, যত ভয় হয় সেই সব পশুদের দেখে – যাদের হিংস্রতা ভিতরে, যাদের শিং মাথা ফুটে বেরোয়নি। শিংওয়ালা গরু-মহিষের চেয়ে শৃঙ্গবিহীন ব্যাঘ্র-ভালুকের দলে। কিন্তু বাঘ-ভালুকের তবু ন্যাজটা বাইরে, তাই হয়ত রক্ষে। কেননা, ন্যাজ আর শিং দুইই ভিতরে থাকলে কী রকম হিংস্র হয়ে উঠতে হয়, তা হিন্দু-মুসলমানের ছোরা-মারা না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। 

                                                      (‘হিন্দু-মুসলমান’)

বিশের দশকে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা যখন রক্তাক্ত দাঙ্গা পর্যন্ত গড়ায়, নজরুল তখন 888sport app download apk ও গদ্য রচনায় তার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘হিন্দু মুসলমানী কাণ্ড’ বেধে যাওয়ার পর দুই সম্প্রদায়ের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় পরস্পরের মার খেয়ে ‘হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি পড়িয়া থাকিয়া এক ভাষায় আর্তনাদ করিতেছে, ‘বাবাগো, মাগো’ – মাতৃপরিত্যক্ত দুটি বিভিন্ন ধর্মের শিশু যেমন করিয়া  এক স্বরে কাঁদিয়া তাহাদের মাকে ডাকে।’ (‘মন্দির ও মসজিদ’) তিনি লিখেছেন, ‘দেখিলাম, হত-আহতদের ক্রন্দনে মসজিদ টলিল না, মন্দিরের পাষাণ দেবতা সাড়া দিল না। শুধু নির্বোধ মানুষের রক্তে তাহাদের বেদী

চির-কলঙ্কিত হইয়া রহিল।’

সাম্প্রদায়িক হানাহানিকারীদের নজরুল বলেছেন ‘ধর্ম-মাতাল’। তাঁর ভাষায়, ‘ইহারা ধর্ম-মাতাল। ইহারা সত্যের আলো পান করে নাই, শাস্ত্রের এলকোহল পান করিয়াছে।’ মাত্রার বেশি অ্যালকোহল বা মদ পান করলে যেমন মাতালের পরিণতি অবধারিত মৃত্যু, তেমনি ধর্ম নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে সেই সব ‘ধর্ম-মাতাল’ – এরও করুণ পরিণতির কথা বলেছেন নজরুল।

নজরুলের ভাষায়, ‘অবতার-পয়গম্বর কেউ বলেননি, আমি হিন্দুর জন্য এসেছি, আমি মুসলমানের জন্য এসেছি, আমি ক্রীশ্চানের জন্য এসেছি। তাঁরা বলেছেন, আমরা মানুষের জন্য এসেছি – আলোর মত, সকলের জন্য।’ ধর্মের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিবাদ প্রসঙ্গে নজরুল বলেন, ‘আলো নিয়ে কখনও ঝগড়া করে না মানুষে, কিন্তু গরু-ছাগল নিয়ে করে।’

নজরুল শুধু সমালোচনা নয়, পরিস্থিতির পরিবর্তন চেয়েছেন। জগতে পরিবর্তন আনে কারা? নেতারা। তিনি সেই নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, তাঁরা কাণ্ডারি। তাঁর ভাষায় :

হিন্দু না ওরা মুসলিম?

ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন?

কাণ্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ,

সন্তান মোর মা’র

মুসলমান সমাজে নজরুলের চেয়ে বেশি হিতার্থী আর কেউ ছিলেন না; কিন্তু সেই মুসলমান সমাজের প্রতিক্রিয়াশীল নেতারা তাঁর সমালোচনাকে সহজভাবে গ্রহণ করেননি। আত্মসংশোধনের কথা না ভেবে তাঁরা বরং আক্রমণ করেছেন নজরুলকেই। এই প্রসঙ্গে মুসলিম 888sport live football সমাজের আনোয়ার হোসেন নামে এক কর্মীকে নজরুল লিখেছিলেন :

মুসলমান সমাজ আমাকে আঘাতের পর আঘাত দিয়েছে নির্মমভাবে। তবুও আমি দুঃখ করিনি বা নিরাশ হইনি। তার কারণ বাংলার অশিক্ষিত মুসলমানরা গোঁড়া এবং শিক্ষিত মুসলমানরা ঈর্ষাপরায়ণ।

শুধু বিদেশি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে নয়, ধর্মীয় ও সামাজিক অন্যায়-অবিচার-অনাচারের বিরুদ্ধেও ছিল নজরুলের বিদ্রোহ। তাঁর ভাষায়, ‘পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে, সকল-কিছু নিয়ম-কানুন বাঁধন-শৃঙ্খল মানা নিষেধের বিরুদ্ধে।’

রক্ষণশীল মুসলমান সমাজের নেতারা তাঁকে বুঝতে পারেননি। তাঁকে কাফের পর্যন্ত আখ্যা দিয়েছেন। তাতে তিনি কষ্ট পেয়েছেন। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁকে লিখেছিলেন :

বাংলার মুসলমান সমাজ ধনে কাঙ্গাল কি না জানিনে, কিন্তু মনে যে কাঙ্গাল এবং অতিমাত্রায় কাঙ্গাল, তা আমি বেদনার সঙ্গে অনুভব করে আসছি বহুদিন হতে। আমায় মুসলমান সমাজ ‘কাফের’ খেতাবের যে শিরোপা দিয়েছে, তা আমি মাথা পেতে গ্রহণ করেছি। একে আমি অবিচার বলে কোনদিন অভিযোগ করেছি বলে ত মনে পড়ে না। তবে আমার লজ্জা হয়েছে এই ভেবে, কাফের-আখ্যায় বিভূষিত হবার মত বড় ত আমি হইনি। অথচ হাফেজ-খৈয়াম-মনসুর প্রভৃতি মহাপুরুষদের সাথে কাফেরের পংক্তিতে উঠে গেলাম।

নজরুলের ভাষায়, ‘ইসলামের সত্যকার প্রাণশক্তি; গণশক্তি, গণতন্ত্রবাদ, সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ও সমানাধিকারবাদ। ইসলামের এই অভিনবত্বও শ্রেষ্ঠত্ব আমি ত স্বীকার করিই, যাঁরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী নন, তাঁরাও স্বীকার করেন।’

একশ্রেণির মুসলমান নেতা আশা করতেন, তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে আরো বেশি লিখবেন। কিন্তু ধর্ম নিয়ে 888sport app download apkচর্চা করলে 888sport live chat থাকে না, তাই তিনি সেদিকে যাননি। ইব্রাহীম খাঁকে তিনি লিখেছিলেন :

হিন্দু-মুসলমানের পরস্পরের অ888sport apk download apk latest version দূর করতে না পারলে যে এ পোড়া দেশের কিছু হবে না; এ আমিও মানি। এবং আমিও জানি যে, একমাত্র 888sport live footballের ভিতর দিয়েই এ-অ888sport apk download apk latest version দূর হতে পারে। কিন্তু ইসলামের ‘সভ্যতা-শাস্ত্র-ইতিহাস’ এ সমস্তকে কাব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা দুরূহ ব্যাপার নয় কি? … সত্য সত্যই আমার লেখা দিয়ে যদি আমার মুমূর্ষু সমাজে চেতনার সঞ্চার হয়, তাহলে তার মঙ্গলের জন্য আমি আমার কাব্যের আদর্শকেও না হয় খাটো করতে রাজি আছি। কিন্তু আমার

এ ভালোবাসার আঘাতকে এরা সহ্য করবে কি না সেটাই

বড় প্রশ্ন।

888sport promo code স্বাধীনতা ও নজরুল

888sport promo code-সম্পর্কে নজরুলের বিশ্বাস ঘোষিত হয়েছে এ-ভাষায় :

বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি

চির-কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে 888sport promo code,

                           অর্ধেক তার নর।                   (‘888sport promo code’)

বহু মেয়েকে তিনি বাইরে বেরিয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে আসতে উৎসাহ দিয়েছেন। পরে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁদের একজন শামসুন্নাহার মাহমুদ। তাঁকে তিনি লিখেছিলেন :

আমাদের দেশের মেয়েরা বড় হতভাগিনী। কত মেয়েকে দেখলাম কত প্রতিভা নিয়ে জন্মাতে; কিন্তু সব সম্ভাবনা তাদের শুকিয়ে গেল সমাজের প্রয়োজনের দাবিতে। ঘরের প্রয়োজন তাদের বন্দিনী করে রেখেছে। এত বিপুল বাহির যাদের চায়, তাদের ঘিরে রেখেছে বারো হাত লম্বা আট হাত চওড়া দেওয়াল। বাহিরের আঘাত এ দেওয়ালে বারে বারে প্রতিহত হয়ে ফিরল। এর বুঝি ভাঙ্গন নেই অন্তর হতে মার না খেলে। তাই 888sport promo codeদের বিদ্রোহিনী হতে বলি। তারা ভেতর হতে দ্বার চেপে ধরে বলছে আমরা বন্দিনী। দ্বার খোলার দুঃসাহসিকা আজ কোথায়? তাকেই চাইছেন যুগদেবতা।

বাস্তব কারণেই বাংলা ভাষায় সব কবি-888sport live footballিক তাঁদের নিজ নিজ ধর্ম-সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, অন্য সম্প্রদায় নিয়ে সমালোচনামূলক কথা বলার ঝুঁকি নেননি কেউ। নজরুল নিজেকে মনে করেছেন দেশের সব মানুষের কবি। তিনি মুসলমানেরও কবি, হিন্দুরও কবি, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান – সবারই কবি। তাই হিন্দু সম্প্রদায়কেও তিনি আঘাত করেছেন ততটাই কঠোরভাবে, যতটা কঠোরতায় আঘাত করেছেন মুসলমান সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের। আজো উপমহাদেশের এমনই পরিবেশ সেটা কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। অন্য ধর্ম-সম্প্রদায় নিয়ে তো নয়ই, নিজের ধর্মের উগ্রবাদীদের সম্পর্কেও সমালোচনা করা অসম্ভব। তিনি সাম্যের কবি, তাই বলেছেন, ‘আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।’

আজ আমাদের সমাজ, আমাদের রাষ্ট্র ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও সন্ত্রাসবাদ দ্বারা আক্রান্ত। সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংগ্রামে নজরুল হতে পারেন প্রধান সহায়ক। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মসূচি পালন করছে। নজরুলের রচনা তরুণ সমাজ যত বেশি চর্চা করবে, তত দ্রুত সমাজ থেকে দূর হবে অন্ধকার। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক 888sport apps প্রতিষ্ঠায় নজরুলচর্চার বিকল্প নেই।

888sport appsে বা ভারতবর্ষে কয়েকজন দুর্লভ ব্যক্তিত্বকে বাদ দিলে স্বসম্প্রদায়ের সীমাতিক্রম্য ব্যক্তিত্ব দুর্লভ বললে অত্যুক্তি হয় না। রামমোহনের জীবনসাধনায় যে-উদার মানবতার আলোক বিচ্ছুরিত হয়েছিল, পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াসে অসহযোগ আন্দোলন হিন্দু-মুসলমানের মিলিত প্রয়াসে তা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। উদার মানবতার সহজাতবৃত্তি নিয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর অসাম্প্রদায়িক হওয়ার পেছনে কোনো সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আকাক্সক্ষা ছিল না, সমাজের গভীর জীবনাভিজ্ঞতা তাঁকে এনে দিয়েছিল সহজাত অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, যার পরিপ্রেক্ষিত ছিল একধরনের অননুমোদিত পরমুখাপেক্ষিতার আবরণহীন হাতিয়ার। অনেকেই এই ধর্মবোধকে সুফি ও ভারতীয় ঋষিদের প্রভাবজাত বলে মনে করেছেন; কিন্তু তা ঠিক নয়, কারণ ভারতীয় ঋষিরা বা মধ্যযুগের সুফিসাধকরা সংসারবিরাগী ছিলেন, তাঁদের সাধনা পারলৌকিক অদৃষ্টমূলক ছিল। এমনকি উনিশ শতকের নবজাগরণ ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ও রাজনীতির কথা চিন্তা করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে নজরুল প্রতিস্পর্শী ভাষায় আক্রমণ করতে পেরেছেন। একথা ঠিক যে, ধর্ম ও জাতীয় সংস্কারের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালালেও তিনি ধর্ম ও যুক্তির মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন এবং ধর্মকে সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজাল-মুক্ত করে উদার পটভূমিকায় আনতে চেয়েছিলেন। তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে কৃষ্ণ-বুদ্ধ-খ্রিষ্ট-মহম্মদকে একাসনে বসাতে পেরেছেন। তিনি ধর্ম ও জাতীয়তার উপরে উঠে মানুষকে স্থান দিয়েছেন। তাঁর নিজের জীবনেও এই মানসিকতার প্রকাশ দুর্লক্ষ্য নয়, একজন হিন্দু 888sport promo codeকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

রাজনৈতিক অনুষঙ্গ ও নজরুল ইসলাম

নজরুল কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে একাগ্রচিত্তে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তবে 888sport appsে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার পক্ষে আদিপর্বে তাঁর সক্রিয় অবদান ছিল। অন্যদিকে প্রধান কমিউনিস্ট নেতা মুজাফ্ফর আহমেদ ছিলেন কবির যৌবনকালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ১৯২০ সাল থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।

888sport appsে কমিউনিস্ট আন্দোলনের উদ্যোগ পর্বে জড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই নজরুল প্রথমে রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং সেই সূত্রে ক্রমে ক্রমে সাম্রাজ্যবাদীবিরোধী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও মানসিকভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। এই বিবর্তনের মুখেই তাঁর কলমে নানা রকমের দেশাত্মবোধক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উদ্দীপনামূলক 888sport app download apk, গান ও 888sport liveাদি বেরিয়ে এসেছিল। যুদ্ধে যোগদানের পেছনে জীবিকা অর্জনের চেয়ে রাজনীতির তাগিদটাই ছিল বেশি। দেশপ্রেমের প্রেরণায় যুদ্ধের অভিঘাতকে স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কাজে লাগানোর ইচ্ছা তাঁর মনে এমনভাবে চেপে বসেছিল যে, তিনি আর অপেক্ষা করতে পারছিলেন না। তিনি জানাচ্ছেন – ‘রাজনীতিই যদি না করব তাহলে যুদ্ধে গিয়েছিলাম কেন?’

রুশ বিপ্লবের নূতন চিন্তাধারা ভারতীয় স্বাধীনতাসংগ্রামীদের নতুন পথে আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, শ্রমিক-কৃষকদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ গণবিপ্লবই ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের একমাত্র পথ।

যুদ্ধে যোগদানের পর নজরুলের যে এক্সপোজার হয়েছিল, তারই ফলে চুরুলিয়ার এক অখ্যাত গ্রামে আবদ্ধ যুবক আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি নিয়ে স্বদেশকে চিনতে শিখল। ‘হেনা’ ও ‘ব্যথার দান’ গল্পে এই সময়ের অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছে।

নজরুল ও উপনিবেশের আধুনিকতা

কাজী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নালিশ ছিল যে, তাঁর 888sport app download apkয় চিরকেলে বাণী পাওয়া যায় না। মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে তিনি এর জবাবে লিখেছিলেন, তিনি ‘বর্তমানের কবি’, মরণোত্তর খ্যাতি নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা নেই। এ-কৈফিয়তের মধ্যে বয়সোচিত অভিমান হয়তো আছে, কিন্তু তাই বলে উত্তরটা উপেক্ষণীয় নয়। পৃথিবীর নানা দেশে নানা সময়ে কিছু কিছু কবি বা কবিগোষ্ঠী এই দাবি করেছেন যে, তাঁরা ভবিষ্যতের মুখ চেয়ে লেখেন না।

বর্তমানের কবি হওয়ার এই অভীপ্সায় কোনো গুপ্ত বিদ্বেষ, লুকানো অভিমান কাজ করে যাচ্ছে – এমনটা ভাবার কোনো যুক্তি নেই। নজরুল আদৌ সে-কথা বলেননি, বরং তাঁর মনে হয়েছে যে, বর্তমানের দুঃখ-বঞ্চনার মধ্যে বসে অমর কাব্য লেখার স্বপ্ন এরকমই দায়হীন বিলাসিতা। গোর্খা সেপাইদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে মহল্লায়; ঘরে ঘরে হাহাকার, এই অবস্থায় মোহিতলালের 888sport live chat নিয়ে শুচিবায় অনৈতিক ঠেকেছে নজরুলের।

তোমার আর্টের বাঁশরির সুরে মুগ্ধ হবে না এরা

প্রয়োজন বাঁশে তোমার আর্টের আটচালা হবে নেড়া

এই ভাবনা কেবল বৌদ্ধিকতাবিরোধী নাটকীয়তা ভেবে তাচ্ছিল্য করলে ভুল হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে যখন ইহুদি নিধনের তথ্য প্রকাশ্যে আসে, তখনো পর্যন্ত জার্মানিতে লিরিক রচনার কোনো মানে আছে কি না – এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ-প্রসঙ্গে থিওডোর অর্নেডো পরে লিখেছিলেন যে, কেবল 888sport live chatই পারে সেই দুঃসহ বাস্তবকে মনে রাখতে ও মনে করাতে, ঠেকাতে পারে নান্দনিক রূপান্তরের নামে ইতিহাস বি888sport sign up bonusর চতুর মন্ত্রণাকে। তার জন্য 888sport live chatিত প্রকাশের চালু ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করাই যথেষ্ট ছিল না, দায়বদ্ধ 888sport live chatের চলতি রীতির আড়ালে 888sport live chatী ও 888sport live chatগ্রহীতার মধ্যে যে-সহজ ইচ্ছে পূরণের তাগিদ রয়েছে, তার ফাঁকিকেও ফাঁস করে দেওয়া জরুরি।

উত্তরসূরির অপলাপ – একটি ঐতিহাসিক ভ্রান্তি

কবির দায় কার কাছে? স্বয়ং 888sport app download apkর কাছে, নাকি আবহমান পাঠকের কাছে? আমরা মনে করি, চর্যাপদ থেকে বর্তমান সময় অবধি বাংলা 888sport app download apkচর্চা যেভাবে এগিয়েছে, তাতে ক্রমবর্ধমান 888sport app download apkলক্ষ্মীর অন্তর্গত সাধনায় ঐক্য ও সম্প্রসারণের কেন্দ্রবিন্দুকে স্পর্শ করে প্রতিমুহূর্তে। পূর্বসূরির মূল্যায়ন সেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের অঙ্গীভূত হয়ে উঠতে চেয়ে কতখানি অবমূল্যায়ন হয়, তার হিসাব নেওয়া জরুরি। 888sport live footballচর্চা গ্রন্থে বুদ্ধদেব বসু ‘রবীন্দ্রনাথ ও উত্তরসাধক’ 888sport liveে নজরুলের 888sport app download apkচর্চা নিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন তা পর্যায়ক্রমে প্রথমে দেখিয়ে দেওয়া যাক –

১. নজরুল ইসলামকেও ঐতিহাসিক অর্থে স্বভাবকবি বলেছি; সে-কথা নির্ভুল। পূর্বোক্ত প্রকরণগত ছেলেমানুষি তাঁর লেখায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।

প্রতি-উত্তর

বুদ্ধদেব বসু নজরুল সম্পর্কে যে-মন্তব্য করেছেন তা ঐতিহাসিক ভ্রান্তিরই প্রতিচ্ছবি, কেননা নজরুলের যে-সত্তাকে বুদ্ধদেব বসু এক এবং অদ্বিতীয় বলে দেগে দিচ্ছেন, বিপরীতে তাঁকেও তো তাঁর 888sport app download apkচর্চায় সারাজীবনের এক অভিশপ্ত যৌবনের 888sport app download apk লিখে গেছেন বলে বলা যায়। 888sport app download apkর মর্মে মর্মে কামনা-বাসনার থেকে অচরিতার্থ এক ক্ষুধিত যৌবন-ব্যক্তিত্বকে বারেবারে 888sport app download apkয় ফিরিয়ে এনেছেন। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায় –

আমি শুষ্ক নিশাচর, অন্ধকারে মোর সিংহাসন,

আমি হিংস্র, দুরন্ত, পাশব।

সুন্দর, ফিরিয়া যায় অপমানে, অসহ্য লজ্জায়

 হেরি’ মোর রুদ্ধ দ্বার, অন্ধকার মন্দির-প্রাঙ্গণ

 যৌবন আমার অভিশাপ

                                               (‘শাপভ্রষ্ট’, বন্দীর বন্দনা)

নিজেকে শাপভ্রষ্ট বলে অভিহিত করেছেন, আসলে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের অভিশাপ তিনি মেনে নিতে পারেননি, ক্ষুধিত আত্মার অনুসন্ধানে তিনি যেন সারা কবিত্বময় অনুষঙ্গেই ঘুরে বেড়িয়েছেন –

বাসনার বক্ষোমাঝে কেঁদে মরে ক্ষুধিত যৌবন,

দুর্দম বেদনা তা’র স্ফূটনের আগ্রহে অধীর!

রক্তের আরক্ত লাজে লক্ষবর্ষ-উপবাসী শৃঙ্গার-কামনা

রমণী-রমণ-রণে পরাজয়-ভিক্ষা মাগে নিতি; –

তাঁদের মেটাতে হয় আত্মবঞ্চনার নিত্য-ক্ষোভ।

(‘বন্দীর বন্দনা’, বন্দীর বন্দনা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া) আসলে বুদ্ধদেব বসুর 888sport app download apkয় বারেবারে হুইটম্যান ও লরেন্সের কথা ফিরে ফিরে আসে, তার অন্যতম কারণও বোধহয় নিজের অভিজ্ঞতার ভেতরেই তিনি যে জীবন-অনুষঙ্গ ও উপলব্ধির ক্ষেত্র আয়ত্ত করেছিলেন, তা-ই তাঁকে 888sport app download apkচর্চার আলাদা ঘরানা তৈরিতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু তিনি নজরুলের ক্ষেত্রেও এই কথাটি বুঝেও যেন বুঝতে চাননি। বন্দীর বন্দনা কাব্যগ্রন্থের 888sport app download apkয় প্রেমহীন প্রবঞ্চনার প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন –

নির্বোধ 888sport promo codeর পাল, স্থূল মাংস স্তূপ,

শরীর সর্বস্ব, মূঢ়। চর্ম-সাথে চর্মের ঘর্ষণ

একমাত্র সুখ যাহাদের, সন্তানের, স্তন্যদান

উচ্চতর স্বর্গলাভ – তাহারা কী বুঝিবে প্রেমের?

(‘কোনো বন্ধু’র প্রতি’, বন্দীর বন্দনা)

২. নজরুলের 888sport app download apkও অসংযত, অসংবৃত, প্রগলভ; তাতে পরিণতির দিকে প্রবণতা নেই; আগাগোড়াই তিনি প্রতিভাবান বালকের মতো লিখে গেছেন, তাঁর নিজের মধ্যে কোনো বদল ঘটেনি কখনো, তাঁর কুড়ি বছর আর চল্লিশ বছরের লেখায় কোনোরকম প্রভেদ বোঝা যায় না।

প্রতি-উত্তর

বুদ্ধদেব বসু নজরুলের 888sport app download apkয় কোনো রকম পরিবর্তন ও পরিণতির ছাপ লক্ষ করেননি। নজরুলের একটি 888sport app download apkর কয়েকটি লাইন এখানে উদ্ধৃত করছি –

হেমন্তের এমনি সন্ধ্যায় যুগ যুগ ধরি বুঝি হারায় চেতনা

উপুড় হইয়া সেই স্তূপীকৃত বেদনার ভার

মুখ গুঁজে পড়ে থাকে; ব্যথা গন্ধ তার

গুমারিয়া গুমারিয়া কেঁদে কেঁদে যায়

এমনি নীরবে শান্ত এমনি সন্ধ্যায়…

(‘বেলাশেষে)

এই ধরনের গভীরতর অনুভবের 888sport app download apk বুদ্ধদেব বসুর চোখে পড়ল না, তিনি নজরুলের 888sport app download apkয় কোনো পরিণতি লক্ষ করলেন না। বিস্ময় জাগে।

আচ্ছা এবার দেখে নেওয়া যাক বুদ্ধদেব বসুর শেষদিকের কাব্যগ্রন্থে তাঁর কাব্যভাবনা। কিছু আগে দেখেছি তার প্রবণতা – 888sport promo code শরীর, শারীরিক প্রেম ও দেহজ কামনা-বাসনার উগ্রতা। মরচে পড়া পেরেকের গান কাব্যগ্রন্থের (১৯৬৬) 888sport app download apkয় জানাচ্ছেন প্রথম 888sport promo codeদেহ স্পর্শের অভিজ্ঞতা –

যেখানে ত্রিলোক এক অখণ্ড স্থির বিন্দুর মধ্যে সংহত,

ত্রিকাল এক সমতল ও নিরঞ্জন বিস্তার,

লুপ্ত সব দ্বৈত, তুমি আর আমি অনন্য –

আমি সেই ব্রহ্মলোকে স্থান পেলাম, আর আলিঙ্গনে

(মরচে পড়া পেরেকের গান)

১৯৩০-এ প্রকাশিত বন্দীর বন্দনা এবং ১৯৬৬-তে প্রকাশিত মরচে পড়া পেরেকের গান কাব্যগ্রন্থের স্বাদ কি পাল্টেছে, নজরুলের 888sport app download apkয় যে পরিণতি ও পরিবর্তন খুঁজে বেড়াচ্ছেন বুদ্ধদেব বসু, প্রশ্ন ঘুরে আমরাও তাঁকে জিজ্ঞেস করতেই পারি।

৩. কোনা রকম 888sport live footballিক প্রস্তুতি না-নিয়েও শুধু আপন স্বভাবের জোরেই রবীন্দ্রনাথ থেকে পালাতে পারলেন তিনি, বাংলা 888sport app download apkয় নতুন রক্ত আনতে পারলেন।

প্রতি-উত্তর

বুদ্ধদেব বসু কীভাবে যে এমন কথা বলেন, একটু স্তম্ভিত হতে হয়। তিনি নিজেই তাঁর 888sport liveে স্বীকার করেছেন – … ‘কিন্তু নজরুল বৈশিষ্ট্য পেয়েছিলেন তাঁর জীবনের পটভূমিকার ভিন্নতায়। মুসলমান তিনি, ভিন্ন একটা ঐতিহ্যের মধ্যে জন্মেছিলেন, আবার সেইসঙ্গে হিন্দু মানসও আপন ক’রে নিয়েছিলেন – চেষ্টার দ্বারা নয়, স্বভাবতই। তাঁর বাল্য-কৈশোর কেটেছে – শহরে নয়, মফঃস্বলে; স্কুল-কলেজে ‘ভদ্রলোক’ হবার চেষ্টা নয়, যাত্রাগান লেটো গানের আসরে; বাড়ি থেকে পালিয়ে রুটির দোকানে; তারপর সৈনিক হ’য়ে। এই যেগুলো সামাজিক দিক থেকে তাঁর অসুবিধে ছিল, এগুলোই সুবিধে হ’য়ে উঠল যখন 888sport app download apk লেখায় হাত দিলেন। যেহেতু তাঁর পরিবেশ ছিল ভিন্ন, এবং একটু বন্য ধরনের, আর যেহেতু সেই পরিবেশ তাঁকে পীড়িত না ক’রে উলটে আরো সবল করেছিল তাঁর সহজাত বৃত্তিগুলোকে, সেই জন্য কোনোরকম 888sport live footballিক প্রস্তুতি না-নিয়েও শুধু আপন স্বভাবের জোরেই রবীন্দ্রনাথ থেকে পালাতে পারলেন তিনি, বাংলা 888sport app download apkয় নতুন রক্ত আনতে পারলেন।’

৪. নজরুল ইসলাম নিজে জানেননি যে, তিনি নতুন যুগ এগিয়ে আনছেন; তাঁর রচনায় সামাজিক রাজনৈতিক বিদ্রোহ আছে, কিন্তু 888sport live footballিক বিরহ নেই। যদি তিনি ভাগ্যগুণে গীতিকার এবং সুরকার না-হতেন, এবং যদি পারস্য গজলের অভিনবত্বে তাঁর অবলম্বন না-থাকত, তাহলে রবীন্দ্রনাথ-সত্যেন্দ্রনাথেরই আদর্শ মেনে নিয়ে তৃপ্ত থাকতেন তিনি।

প্রতি-উত্তর

নজরুলগীতি বা নজরুলসংগীত বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম-লিখিত গান। তাঁর সীমিত কর্মজীবনে তিনি তিন হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন। পৃথিবীর কোনো ভাষায় একক হাতে এতো বেশিসংখ্যক গান রচনার উদাহরণ নেই। এসব গানের বড় একটি অংশ তাঁরই সুরারোপিত। তাঁর রচিত ‘চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল’ 888sport appsের রণসংগীত। তাঁর কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থকারে সংকলিত হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে গানের মালা, গুল বাগিচা, গীতি শতদল, বুলবুল ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আরো গান সংগ্রন্থিত হয়েছে। তবে তিনি প্রায়শ তাৎক্ষণিকভাবে লিখতেন; এ-কারণে অনুমান করা হয়, প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বহু গান হারিয়ে গেছে। নজরুলের সমগ্র গানকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায় – ভক্তিমূলক গান, প্রণয়গীতি, প্রকৃতি বন্দনা, দেশাত্মবোধক গান, রাগপ্রধান গান, হাসির গান, ব্যঙ্গাত্মক গান, সমবেত সংগীত, রণসংগীত, বিদেশি সুরাশ্রিত গান।

নজরুলগীতির বিষয় ও সুরগত বৈচিত্র্য বর্ণনা করতে গিয়ে নজরুল-বিশেষজ্ঞ আবদুল আজীজ আল্-আমান লিখেছেন, ‘… গানগুলি এক গোত্রের নয়, বিভিন্ন শ্রেণীর। তিনি একাধারে রচনা করেছেন গজল গান, কাব্য সংগীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সংগীত, খেয়াল, রামপ্রধান, হাসির গান, কোরাস গান, দেশাত্মবোধক গান, গণসংগীত – শ্রমিক-কৃষকের গান, ধীবরের গান, ছাদপেটার গান, তরুণ বা ছাত্রদলের গান, মার্চ-সংগীত বা কুচকাওয়াজের গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, 888sport promo code জাগরণের গান, মুসলিম জাতির জাগরণের গান, শ্যামাসংগীত, কীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলী, 888sport app ভক্তিগীতি, ইসলামী সংগীত, শিশু সংগীত, নৃত্য-সংগীত, লোকগীতি – ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, সাম্পানের গান, ঝুমুর, সাঁওতালী, লাউনী, কাজরী, বাউল, মুর্শেদী এবং আরও নানা বর্ণের গান। বিভিন্ন বিদেশী সুরের আদলে রচিত গানের 888sport free betও কম নয়। এছাড়া লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় রাগ-রাগিণীকে অবলম্বন করে ‘হারামণি’ পর্যায়ের গান এবং নতুন সৃষ্ট রাগ-রাগিণীর ওপর ভিত্তি করে লেখা ‘নবরাগ’ পর্যায়ের গানগুলি নজরুলের সাংগীতিক প্রতিভার অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে।’

গ্রন্থপঞ্জি

১. নজরুল ইসলাম ও কবি ও 888sport app download apk, আবদুল মান্নান সৈয়দ।

২. রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল, গোপালচন্দ্র রায়।

৩. নজরুল জীবন, শাহীনুর রেজা।

৪. কবিতীর্থ, কাজী নজরুল ইসলাম 888sport free bet।  ছবি : ইন্টারনেট