নতুন হস্তিনাপুর আর কত দূর

কাজল রশীদ শাহীন

হস্তিনাপুর একটা রিয়েলিস্টিক ব্যাপার আর নতুন হস্তিনাপুর পুরোপুরি হাইপোথিসিস। মানুষের চেষ্টা থাকে হাইপোথিসিসে পৌঁছানোর। এজন্যেই তার এতো এতো লড়াই-সংগ্রাম আর সভ্য হয়ে ওঠার অনুশীলন। কিন্তু সেখানে মানুষের প্রাপ্তি আশাব্যঞ্জক নয়। ইতিহাসের অমোঘ বাস্তবতা যে ঘুরে ঘুরে আসে। আমরা যতই বলি, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। কেন জানি ধরা শুচি হয় না। আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগের হস্তিনাপুরের যে-চিত্র, বর্তমানের একবিংশ শতাব্দীর চিত্র তার থেকে ভিন্ন কিছু নয়। কুরবংশের দুই ভ্রাতার সন্তানদের মধ্যে যে-লড়াই  সে-লড়াই নানারূপে, নানাভাবে বর্তমানেও বিরাজিত। মগধ রাজ্য, গান্ধার রাজ্যের করুণ বাস্তবতা এখনো বিদ্যমান। অশ্বমেধের যজ্ঞ এখনো রয়েছে, পালটেছে তার রং। কিন্তু তার লুণ্ঠন প্রক্রিয়া এখনো বন্ধ হয়নি। এমনকি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসরাও রয়ে গেছে। আশাবাদ আর সান্ত্বনার জায়গা হলো সভ্য মানুষেরা নতুন হস্তিনাপুরের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। আর এটাই বোধ করি মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান। কণ্ঠশীলনের নতুন নাটক যা নেই ভারতের দর্শন অভিজ্ঞতা এসব রূঢ় সত্যকেই মেলে ধরেছে। যা দেখার পর প্রশ্ন উত্থিত হওয়া স্বাভাবিক ও সংগত যে, নতুন হস্তিনাপুর আর কত দূর? নাকি তা শুধু হাইপোথিসিস হিসেবেই থেকে যাবে?

মহাভারতের গল্পকে হঠাৎ এই সময়ে উপস্থাপন করার দরকার পড়ল কেন? এরকম প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন নির্দেশক স্বয়ং। কার্যকারণ হিসেবে তিনি যে-যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তা শতভাগ সত্য। নাটক জীবনের দর্পণ। আর এ-কথাও বহু আগেই উচ্চারিত হয়েছে – ‘এ নেশন নোন বাই ইটস থিয়েটার’। সুতরাং সেখানে সময় ও সমাজের দালিলিক উপস্থাপনই কাম্য। আলোচ্য নাটকে তা-ই রূপায়িত হয়েছে। নাট্যকার ও নির্দেশকের মুনশিয়ানা এখানেই, যাতে সমসাময়িক সময়, সমাজ ও নানা সামাজিক সমস্যা ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে উপস্থাপনভঙ্গিতে। মহাভারত অবলম্বন করেই উনারা পরপর বলে গেছেন – 888sport promo code-স্বাধীনতা, কন্যাসন্তানের প্রতি অবজ্ঞা, ধর্মের ধ্বজাধারী সমাজপতি অথবা শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর তৃতীয় বিশ্বের প্রতি চাপ সৃষ্টি ও বিদেশনীতি স্বাক্ষরের গল্প। বিদ্রূপ করেছেন সমাজের উন্নাসিকতা ও ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে লক্ষ করে। এ-কারণে পাশ্চাত্য মঞ্চরীতির আদলের ছোট আয়তনে রূপক মঞ্চসজ্জা মহাভারতের অংশবিশেষের উপস্থাপনা থেকেও আমরা অবগত হই মহাভারতের সারকথা, যা একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটের আধাররূপেও বিবেচ্য।

নির্দেশক ঈষৎ কথায় তাঁর মঞ্চবিহারের কথাও জানিয়েছেন। অভিজ্ঞতার ঝুড়ি ভরিয়েছেন বুদ্ধদেব বসুর মহাভারতাশ্রয়ী নাটক তপস্বী ও তরঙ্গিনী এবং অনাম্নী অঙ্গনার শ্রুতিরূপ নির্দেশনা দিয়ে। এবারো মহাভারত তবে কেবল শ্রুতিরূপ নয়, মঞ্চনাটক নিয়েই হয়েছেন হাজির। প্রসঙ্গত, প্রখ্যাত নাট্যকার ও অভিনেতা মনোজ মিত্রের নাট্যদল সুন্দরম কলকাতার পাদপ্রদীপে এ-নাটক নিয়ে এসেছে বেশ আগেই। সেখানে নাট্যকার স্বয়ং নির্দেশনা ও অভিনয়ে সম্পৃক্ত ছিলেন। নাটকটিকে মঞ্চোপযোগী করার জন্য তিনি কিছুটা যোজন-বিয়োজন করেছেন। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রাঘববোয়ালদের ক্ষমতার দাপট, যুদ্ধোন্মাদনা, 888sport promo codeর অবমাননা ইত্যাকার সমসাময়িক বিষয়াবলি প্রযুক্ত হয়েছে মূল নাটকের কিঞ্চিৎ সম্পাদনায়। নবীন আবৃত্তিকর্মীদের জীবনে প্রথমবারের মতো এমন একটি মঞ্চনাটকে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে যা মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে হলেও ব্যাখ্যা ভিন্নতর আধুনিক। নির্দেশকের জ্ঞাতার্থে বলা প্রয়োজন, নবীনদের নিয়ে হলেও তিনি এই উষ্ণীষপ্রাপ্তির দাবি রেখেছেন তাঁর নির্দেশনা প্রয়াসে।

‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান’। যদিও কাশীরাম মূল রচয়িতা নন, 888sport app download apk latest versionকমাত্র। অবশ্য মূল রচয়িতা নিয়ে বিতর্ক আছে। মহাভারতকে সমষ্টির রচনা হিসেবেই মনে করা হয়। তবে বিশ্ব-ইতিহাসে যে গুটিকয় 888sport live football বিশ্ব888sport slot gameের গৌরব অর্জন করেছে মহাভারত তার অন্যতম। আয়তনিকভাবে এই মহাকাব্য ইলিয়াড, ওডেসি ও রামায়ণের চেয়ে কয়েকগুণ বড়। পিটার ব্রুক থেকে শুরু করে অনেকেই একে নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন। মহাভারতের শুরুতেই আছে ‘যা নেই ভারতে তা নেই ‘ভারতে’। অর্থাৎ মহাভারতে যা নেই, ভারতে তার অস্তিত্ব নেই। মহাভারত ভারতীয় 888sport live footballের এক অনন্য মহাকাব্য যা অবচেতনে রোপণ করে অর্থ, কাম, ধর্মের ধারণা। সেই মহাভারতের পটভূমিকায় নাটক যা নেই ভারতে।

নাট্যকাহিনি এরকম – কুরবংশের রানি তথা হস্তিনাপুরের রাজবাড়ির বধূদের কথাই ধরা যাক… তারা কেউ স্বেচ্ছায় মাল্যদান করেনি। ভীষ্ম যুদ্ধ করে তাঁর ভাই বিচিত্রবীর্যের হাতে তুলে দেন দুই 888sport promo code অম্বিকা ও অম্বালিকাকে। কারণ তিনি বিবাহ করবেন না। কিন্তু ভাই তরুণ বয়সে মারা যান। দেখা দেয় অস্তিত্বের সংকট বংশরক্ষায়। ভীষ্ম অম্বিকাকে অনুরোধ করেন পুত্রসন্তান ধারণ করতে। অম্বিকার আকাঙ্ক্ষা তিনি ভীষ্মের সন্তানের মা হতে চান। ভীষ্মের বক্তব্য, তিনি প্রতিজ্ঞাভ্রষ্ট হবেন না।

888sport promo codeকে সেই পুরুষের ইচ্ছার কাছে নতজানু হতে হয়। পুরুষের আদেশে, তার বিছানায় যাকে পাঠানো হবে তাকেই গ্রহণ করতে হবে। ব্যাসদেবের সঙ্গে অম্বিকার বলপূর্বক মিলন হয়। সে-মিলনে ব্যাসদেবের প্রতি তাকানোয় জন্ম হয় অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের। অম্বালিকার সঙ্গে জন্ম হয় পান্ডুর। দাসীর গর্ভে জন্মান বিদুর। ব্যাসদেব এদের সবার পিতা। গল্প এগিয়েছে এভাবেই মহাভারতের মূল কাহিনির শরীর ছুঁয়ে। পরবর্তীকালে পান্ডুর পুরুষত্বহীনতা ও বনবাসের সিদ্ধান্ত, গান্ধারির জরায়ু বিনষ্টকরণ, এসবের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় আবির্ভূত হন ঘোর তমসাবৃত জন্মকথার পঞ্চপান্ডব। এসব মাতা, পুত্রদেরই আশা-আকাঙ্ক্ষা, জয়-পরাজয়, দর্শনের বিরোধ ও বৈপরীত্য নিয়েই যা নেই ভারতে।

মহাভারত এক বিশেষ কালখন্ড। তারা বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়। কুরুক্ষেত্র মহাসমরে। তারপর একদিন দাবানল ছড়াল বনে। হাজার হাজার দামাল শিশুর মতো আগুন দোল খাচ্ছিল গাছের মাথায়। ধৃতরাষ্ট্র সেই অগ্নিশিশুদের আলিঙ্গন করতে দুবাহু বাড়িয়ে ছুটেছিলেন – এসব নাটকের বাইরের কথা। সবটাই রহস্যাবৃত। এবং পরতে পরতে রয়েছে বাঁক-বদলের ঘটনা। তবে মহাভারতের দর্শন এক কথায় পৃথিবীর চিরন্তন দর্শনের আধার। যেখানে ঈশ্বরের নামে, ক্ষমতাধরের নামে সব অন্যায়কে ন্যায় করা হয়েছে আর ন্যায়কে করা হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ ও পঙ্কিলতায় আকীর্ণ। ফলে, ন্যায়-অন্যায়ের লড়াইয়ে এর পুরো কাহিনি আবর্তিত হয়েছে, যা চেতনায় বিস্ময় উদ্রেক করার পাশাপাশি শুভবোধেরও জন্ম দেয়। এ-কারণে শুধু কণ্ঠশীলন নয়, অন্যরাও মহাভারত উপজীব্য করে নাট্য-প্রযোজনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। কারণ এরকম নাটক যত বেশি মঞ্চায়িত হবে, সুন্দরের প্রতি মানুষের আকর্ষণ তত দুর্নিবার হয়ে উঠবে।

নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভীষ্ম – একেএম শহীদুল্লাহ কায়সার, কঞ্চুকী – সোহেল রানা, অম্বিকা – অনন্যা গোস্বামী, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস – তাসাউফ এ বাকি বিল্লাহ রিবিন, পাতকিনী – তৃপ্তি রাণী মন্ডল, ধৃতরাষ্ট্র – জেএম মারুফ সিদ্দিকী, ইরা – নাজনীন আক্তার শীলা, পান্ডু – নিবিড় রহমান, বিদুর – আবদুর রাজ্জাক, গান্ধারি – তনুশ্রী গোস্বামী, সুবলরাজ্য – সালাম খোকন, শকুনি – সুমন কুমার দে। এছাড়া কোরিওগ্রাফিসহ মঞ্চের নেপথ্যে রয়েছে কণ্ঠশীলন দল।

যা নেই ভারতে নাটকের মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন জুনায়েদ ইউসুফ, সংগীত-পরিকল্পনায় অসীম কুমার নট্ট, কোরিওগ্রাফি লিনা দিলরুবা শারমিন, পোশাক-পরিকল্পনা, আইরিন পারভিন লোপা ও রূপসজ্জায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময়।

কণ্ঠশীলনের অন্যতম পরিচয় তারা আবৃত্তি সংগঠন। এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান শীর্ষে তো বটেই ঈর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আবৃত্তির নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কৃতিত্ব তাদের। ওয়াহিদুল হকের পৌরোহিত্যে ও প্রযত্নে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি আবৃত্তিতে একটা নিজস্ব ঘরানা সৃষ্টি করেছে। বাচিক 888sport live chatের এই নবতরঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তাদের মেধা ও পরিশ্রমের মুনশিয়ানায় সেই তরঙ্গ স্থায়িত্ব ও স্বীকৃতি দুটোই অর্জন করেছে। আবৃত্তির একটা সংগঠন হয়েও নাট্যচর্চায়ও তারা প্রতিভা প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখেছে। বিরতি দিয়ে হলেও তাদের মঞ্চপ্রণয় ক্রমশ উজ্জ্বলতর হচ্ছে, যা এদেশের নাট্যান্দোলন ও নাট্যচর্চার জন্য ইতিবাচক ও অনুকরণীয় বার্তা। যখন দেশের প্রধান সারির নাট্যদলগুলোর মঞ্চ-উপস্থিতি প্রায় শূন্যের পর্যায়ে, কিংবা কোনোরকমে, তখন এঁদের উপস্থিতি ধন্যবাদার্হ।

নাটক নির্বাচনে কণ্ঠশীলন ও নির্দেশক মীর বরকত প্রজ্ঞার দ্যুতি ছড়িয়েছেন। কেননা, আর দশটা নাটকের মতো এর কাহিনি গতানুগতিক নয়। মহাভারতকে আশ্রয় করে 888sport appর মঞ্চে নাটকের 888sport free bet একবারে অপ্রতুল নয়। তবে এই নাটকের কাহিনি ব্যতিক্রম। এর জন্য প্রধানত সাধুবাদ নাট্যকার মনোজ মিত্রের প্রাপ্য হলেও নির্বাচন একটি গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার। একটি নাট্য-প্রযোজনার মান অনেকখানি নির্ভর করে নাটকের কাহিনির ওপর। সেক্ষেত্রে আলোচ্য নাটকের কাহিনি চিরন্তন আবেদনে সমুজ্জ্বল। মহাভারত যেমন হাজার-হাজার বছর পরেও যে-কারণে তার আবেদন অক্ষুণ্ণ রাখতে সমর্থ হয়েছে, এই নাটকে তার সারবস্ত্ত মিলেছে। কাহিনি নানা ধারা-উপধারায় বিভক্ত হলেও এর মূল  কাহিনি হলো ধর্মের সঙ্গে অধর্মের লড়াই। বিপরীতমুখী দুটি দর্শনকে উপজীব্য করে নাটকের কাহিনি নির্মিত হয়েছে। এই কাহিনি হস্তিনাপুরের হলেও সেই বৃত্তে সীমাবদ্ধ থাকেনি, হস্তিনাপুর হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্বের প্রতিচ্ছবি। আর এর চরিত্ররাও হয়ে উঠেছে বিশ্ব-চরিত্রের প্রতিভূ। এরকম একটি নাটক মঞ্চে এনে দর্শকের কাছে তার গতি-প্রকৃতি উপস্থাপনসহ প্রকৃত বার্তাটা তুলে ধরা বেশ পরিশ্রম ও নিষ্ঠাসাপেক্ষ। সে-কাজটি কণ্ঠশীলন বেশ সাফল্যের সঙ্গেই করেছে। তবে নাটকে যে-নাটকীয়তা, ক্ষণে ক্ষণে যেসব নাট্যমুহূর্ত তৈরি হয়েছে তা কখনো কখনো দর্শকের অনুভূতিকে ছুঁতে পারেনি। এ-ধরনের নাটক দর্শনের যে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিতৃপ্তি তা কখনো কখনো অস্পষ্ট থেকেছে। এই প্রযোজনা বাচিকভাবে যতটা উচ্চকিত, অভিনয়ের 888sport app অনুষঙ্গের মানদন্ডে ঠিক ততটা নয়। এই নাটক ভালো লাগাকে ছুঁতে গেলেও আলোড়িত-বিলোড়িত করার ক্ষেত্রে দূরত্ব রেখে দেয়। অভিনয়ে রসের যে বহুমাত্রিক প্রয়োগ ও ব্যবহার রয়েছে, এই নাটকের পাত্র-পাত্রীরা তা ব্যবহারে কার্পণ্য করেছেন। ভীষ্ম, অম্বিকা থেকে শুরু করে প্রায় সকলেই একই রসে নিজেদেরকে আবদ্ধ রেখেছে এবং সেই রসও স্পষ্ট নয়। ভীষ্ম চরিত্রাভিনেতা তার কণ্ঠসৌকর্যে যতটা পারঙ্গম অন্যগুলোতে ঠিক ততটা নয়। পুরো নাটকে তিনি একই মাত্রায় অভিনয় করে গেছেন, ব্যক্তি মানুষের যে উত্থান-পতন তার প্রয়োগ ভীষ্ম চরিত্রের সংলাপে থাকলেও অভিনয়ে নেই। অম্বিকা যখন প্রেম নিবেদন করে ভীষ্মের প্রতি, তখনো তাতে চিরন্তন 888sport promo codeর যে বৈশিষ্ট্য ও বিশিষ্টতা তার অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। এভাবে প্রতিটি চরিত্র ঠিক তার নাটকীয়তার জায়গাকে যতটা উপস্থাপন করার দরকার ঠিক ততোটা করে না। চরিত্রাভিনেতারা একে অপরের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণে কেন জানি আগ্রহী নন বলে মনে হয়েছে। ফলে সংলাপ গ্রহণ করার পর উচ্চারিত সংলাপে শরীর ও মনের যে-ছাপ থাকা দরকার তা অনেকাংশেই মৃদু মনে হয়েছে। কোনো কোনো অভিনেতা সারাক্ষণ চরিত্রের ভেতরে নিজেকে ধরে রাখতেও অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ধৃতরাষ্ট্রের কোনো কার্যকারণ ছাড়াই (ফলস লুক) তাকানোও দৃশ্যমান হয়। শেষ দৃশ্যে সে অম্বালিকার প্রতি অন্ধের দৃষ্টিতে নয়, চক্ষুষ্মানের দৃষ্টিতেও তাকিয়েছে, চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে খর্ব করে। এই নাটকে গতির উপস্থিতি একেবারেই গৌণ। যে-নাটকে গতির ব্যবহার যত বেশি সেই নাটক তত বেশি বিশ্ব্সযোগ্য (মেক বিলিভ) হওয়ার দাবি রাখে। জাদুকরের জাদুতে আমরা যে মুগ্ধ হই, তার নেপথ্যে জাদুকর কিন্তু গতি আর কৌশলের সমন্বয় ঘটান। কয়েকটি দৃশ্যে কোরিওগ্রাফির ব্যবহার নাটকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে সেটা আরো একটু বেশিই প্রত্যাশিত ছিল, যা নাটকে নান্দনিকতাকে আরো আবেদনময় করতো। কোরিওগ্রাফির সঙ্গে শারীরিক ক্রীড়া-কৌশল যুক্ত করার সুযোগও ছিল। বিশেষ  করে নাটকের উপজীব্য বিষয় যখন মহাভারত। আলোর ব্যবহার ও পরিকল্পনা নাটকে নতুন কোনো মাত্রা যুক্ত করেনি। তবে পাত্র-পাত্রীরা প্রত্যেকেই আলোর সঙ্গে নিজেদের বোঝাপড়ার জায়গাটায় অনেকখানি উতরে গেছে। পুরো নাটকে শুধুমাত্র ভীষ্মের রূপসজ্জা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রেও মনোযোগ প্রত্যাশিত ছিল। ভীষ্মের বয়সের সঙ্গে যদি রূপসজ্জায় পরিবর্তন আসে, অন্যদের কেন নয়? বিশেষ করে অম্বিকার ক্ষেত্রে এমন না হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় কি?

নাটকে গানের ব্যবহার রয়েছে, তবে তা ঘটনাকে কিংবা উদ্দিষ্ট বক্তব্যর প্রতি বিশেষভাবে কোনো আলো ফেলে না। যা দর্শক-অভিনেতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারী কোনো ভূমিকা পালন করে না। এ ব্যাপারে নির্দেশক নতুন করে ভেবে দেখতে পারেন। তবে সার্বিক বিচারে এই নাটক মঞ্চপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়তে সমর্থ হয়েছে। এই কৃতিত্ব সকল কুশীলবের প্রাপ্য হলেও বিশেষভাবে প্রাপ্তির দাবি রাখেন নির্দেশক মীর বরকত। তাঁর সৃজনভাবনায় মঞ্চে নতুন সম্ভাবনা উদিত হয়েছে। তিনি যদি এক্ষেত্রে নিয়মিত হন, তাহলে হয়তো মঞ্চনাটকের ক্ষেত্রে যুক্ত হবে ঋদ্ধ এক ব্যঞ্জনা। কেননা, মঞ্চে তুলনামূলক অনভিজ্ঞ এবং একেবারে নতুন কুশীলবদের নিয়ে তিনি যে প্রযোজনা উপহার দিয়েছেন, তাতে নিয়মিতরাও কিছুটা হলেও ভিমড়ি খেয়েছেন। মঞ্চনাটকের খরাপীড়িত সময়ে কণ্ঠশীলনের যা নেই ভারতে মঞ্চের জন্য নিঃসন্দেহে আশাবাদ-জাগানিয়া এক প্রযোজনা। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন, ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে, এ আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে।’ আমরা কণ্ঠশীলনকে বলতে চাই, তোমাদের মধ্যে নাট্য-প্রযোজনার যে সুরের আগুন রয়েছে, সেই আগুন ছড়িয়ে দাও 888sport appsের মঞ্চালোকে।