সৈয়দ শামসুল হক
\ ৩৯ \
মকবুল হোসেনের এই পর্যবেক্ষণ বা একে তার মর্মান্তিক দুঃখই বলি না কেন, এসব নিয়ে পরে কথা বলা যাবে। আমরা একসময়ে তাকে দেখতে পাবো জলেশ^রীর উদীয়মান লেখকদের সঙ্গে টাউন হলে বসতে। 888sport appsের এতবড় এত বিখ্যাত এক ঔপন্যাসিক শহরে এসেছে এবং এই শহরেই তার জন্ম, জলেশ^রীর তরুণ ও 888sport live football যশোপ্রার্থীদের ভেতরে কদিন থেকেই সাড়া পড়ে যায়। তারা উঁকিঝুঁকি মারে কন্ট্রাক্টরের বাংলাবাড়িতে মকবুল যেখানে উঠেছে। ভালো করে কেউ সাহস পায় না উজিয়ে উঠে কথা বলে। অবশেষে
শহিদ মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র ছেলে শামসুদ্দিনকে গিয়ে তারা ধরে এবং সে তাদের নিয়ে একদিন বাংলাবাড়িতে আসে, আলাপ-পরিচয় করিয়ে দেয়।
মকবুলের মনটা অশান্ত হয়ে ছিলো তার মেয়ে প্রিয়লির জন্যে। প্রিয়লি তার স্বামীর হাতে এক প্রকার বন্দি। সে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এ কদিনে হয়তো পালাতেও পেরেছে। প্রিয়লিকে মোবাইলে ফোন করার উপায় নাই, কেননা শেষ মোবাইলটি করবার সময় তার হাত থেকে ফোনটি ছিনিয়ে নেয় স্বামীটি। তখন সেই ধস্তাধস্তি ও প্রিয়লির আর্তচিৎকারটি মকবুল ফোনেই শুনতে পেয়েছিলো। প্রতি মুহূর্তে তার ভেতরে প্রিয়লির সেই চিৎকারটি আছড়ে পড়ছে। এই অবস্থার ভেতরেও মকবুল জলেশ^রীর তরুণ লেখকদের সঙ্গে কথা বলে। বস্ত্তত মকবুল বহুদিন থেকেই পারে – ব্যক্তিগত জীবন ও 888sport live footballিক জীবনকে আলাদা করে দেখতে ও রাখতে।
তরুণেরা মকবুলকে সংবর্ধনা দিতে চায়। মকবুল হাসতে হাসতে 888sport app download for android করিয়ে দেয় সেই প্রবচনটি – গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না! এবং হাসতে হাসতেই বলে, তা সত্ত্বেও তার জন্মশহরের ছেলেমেয়েরা তাকে যে সমাদরে গ্রহণ করতে চাইছে অনুষ্ঠান করে, এতেই প্রমাণিত হয় সব প্রবচনই সত্য নয়! যা হোক, শামসুদ্দিনের উদ্যোগে টাউন হলে সংবর্ধনার আয়োজন হয় মকবুলকে ঘিরে। মানপত্র একটা পড়া হলো, গায়ে একটা উত্তরীয়ও তাকে পরিয়ে দেওয়া হলো, এখন তরুণদের ইচ্ছা তারা তাদের লেখা পাঠ করবে এবং মকবুল শুনবে। এ ইচ্ছাটিকে নিষেধে ফেলা যায় না। অতএব মকবুল বলে, পরে একদিন 888sport live football পাঠের আসর হোক, আজ সে শুধু নিজের কথা বলবে। এর বিবরণ যদি প্রাসঙ্গিক মনে হয় তবে আমরা পরে সেসব উপস্থিত করবো, আপাতত এই যে – মকবুল 888sport live football নিয়ে কথা বলতে শুরু করে, সেই সূত্রে 888sport appsের গল্প-888sport alternative link পাঠে পশ্চিম বাংলার তথা হিন্দু-পাঠকদের উৎসাহের অভাব নিয়েও দু-কথা সে বলে। সেই তখন তাকে আমরা হিন্দু-মুসলমানের মানসিক দূরত্ব, সামাজিক অপরিচয়, অ888sport apk download apk latest version – হিন্দুর প্রতি মুসলমানের নয়, মুসলমানের প্রতি হিন্দু উচ্চবর্ণ এবং শিক্ষিত সমাজের, এসব নিয়ে কথা বলতে শুনবো।
মকবুল খুব জোর দিয়েই বলবে, বাঙালি মুসলমান কখনোই হিন্দু ও হিন্দুর জীবনকে অ888sport apk download apk latest versionর চোখে দেখে নাই; কিন্তু হিন্দুরা দেখেছে, সেই হিন্দুরা যারা বর্ণ এবং ধনসম্পদে উচ্চশ্রেণির, যারা মতামতের নেতৃত্বে। তবে হ্যাঁ, মকবুল এটাও বলবে যে, গরিব ও খেটে-খাওয়া মানুষের স্তরে বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভেতরে হিন্দু-মুসলিম নিয়ে কোনো বিরোধ বা অ888sport apk download apk latest version ছিলো না। মকবুল বলবে, পৃথিবীতে খেটে খাওয়া মানুষের 888sport free bet অধিক, গরিবের 888sport free bet ততোধিক, বলতে গেলে তারাই 888sport free betগরিষ্ঠ এবং এরাই মানবের আসল রূপনির্মাতা এবং শেষ পর্যন্ত এই প্রলেতারিয়েতরাই সভ্যতার ভাগ্যনিয়ন্তা।
মকবুল পারে একটি বিষয়ে কথা বলতে এবং একই সঙ্গে অন্য একটি বিষয়ে ভাবতে; জলেশ^রীর তরুণদের দেওয়া 888sport live footballিক এই সংবর্ধনা সভায় সে যখন সভ্যতা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রলেতারিয়েতদের ভূমিকার কথা বলছিলো, 888sport live footballের কথা বলছিলো, একই বাংলা ভাষায় লেখা পশ্চিম বাংলা ও 888sport appsের 888sport live footballের কথা বলছিলো, পশ্চিম বাংলার পাঠকেরা যে 888sport appsের গল্প-888sport alternative link পড়ে না, সে-কথাও সে বিস্তৃত করে বলছিলো, তখন তার মনের ভেতরে সে তার বাবা মইনুল হোসেন মোক্তারের মৃত্যুর কথাও ভাবছিলো।
মনের মধ্যে সে শুনতে পাচ্ছিলো নদীর গর্জন। তরঙ্গের আঘাত সে অনুভব করছিলো আত্মার ওপরে। পরে আষাঢ় শ্রাবণে সে ফুলে রুষে উঠতে দেখছিলো আধকোশা নদীটিকে। এবং একটি শব্দ। জগতের সমস্ত শব্দকে মুষ্টাঘাত করে প্রচন্ড একটি শব্দ। সে শুনতে পায় – ঝপাং! সে দেখতে পায় একটি তলিয়ে যাওয়া। একটি মানুষ উন্মত্ত আধকোশার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তার বাবা! তার জন্মদাতা! মইনুল হোসেন মোক্তারের লাশ আধকোশার পানিতে। কোন আধকোশা? সেই আধকোশা যেটি সাতচল্লিশের চোদ্দোই আগস্ট হিন্দুস্থানের ভাগে পড়েছিলো মান্যবর সিরিল র্যাডক্লিফের লাল পেনসিলের দাগে, আবার কয়েকদিন পরেই ফিরে এসেছিলো পাকিস্তানের ভাগে!
সেই আধকোশা, যার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবার জন্যে ইংরেজের লাটসাহেব বাংলার ছোটলাট লর্ড কেসি পর্যন্ত দৌড়েছে মইনুল হোসেন? নিজের জীবিকা আহার নিদ্রা ভুলে মুখে ফেনা তুলে শহরবাসীকে সংগঠিত করবার চেষ্টা করেছে তিন তিনটি বছর। কিন্তু শহরের কারো মন নাই আধকোশার উন্মত্ত ভাঙনের ব্যাপারে। শহর যে ভাঙনে ভাঙনে ক্রমেই লুপ্ত হতে চলেছে, কারো কাছেই যেন তা কোনো বিষয় নয়। একমাত্র বিষয় এখন পাকিস্তান! লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান! জিন্দাবাদ পাকিস্তান! কায়েদে আজম জিন্দাবাদ! কে ভাবে আধকোশার কথা!
মইনুল ভাবে। মইনুল ক্লান্ত পা টেনে চলে মধ্যরাতের জলেশ^রীতে। নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। কলকল-চ্ছলচ্ছল শব্দ। তরল। জ্যোৎস্না। নির্জন একটি নৌকো। জ্যোৎস্নায় রুপালি নদীর বুকে মইনুল। ছবিটি কী সুন্দর এবং বিষাদমাখা! মকবুল হোসেনকে কেউ এই রাত্রিযাত্রার কথা, জ্যোৎস্নার আধকোশা বুকে নৌকোয় মইনুল হোসেনের কথা কি বলেছিলো? না এটি তার 888sport live footballিক কল্পনা? কল্পনা হলেও বাস্তবেরই অধিক বাস্তব এটি। 888sport live football তো তাই-ই যা হলেও হতে পারতো, এবং হলে এই রকমটিই হতো, আর অন্য কোনো রকম নয়! মইনুল হোসেন হতবাক হয়ে গিয়েছিলো আধকোশাকে হিন্দুস্থানে চলে যেতে দেখে। ততোধিক হতবাক সে যখন পাকিস্তানে ফিরে আসে নদীটি।
মইনুল হোসেনের কাছে কি তখন মনে হয়েছিলো, নদী নয় একটি 888sport promo codeই যেন ধর্ষিতা হয়ে ফিরে আসে! সে তো সেই কালের সেই পুরুষ সমাজের – এবং এখনো এই ধারা তো আছেই আছে – যে, ফিরে আসা ধর্ষিতা 888sport promo codeকে গ্রহণ করা নয়! কেননা সে নষ্ট ও পতিত। এই সুকুমারত্বই কি পুরুষের চাওয়া? এই চাওয়াটি আছেই বলে, প্রিয়লিও যখন ফিরে আসবে, মকবুল তার পিতা তাকে গ্রহণ করতে পারবে অমলিন হৃদয়ে? ক্রমে এক হয় আসে মুখের কথা মনের ভাবনাটি। হিন্দু-মুসলমান, পশ্চিম বাংলা-888sport apps, পাঠক-অপাঠক, আধকোশা কি প্রিয়লি – এক বিন্দুতে এসে মিশে যায়।
মকবুল হোসেনকে আমরা দেখতে পাবো সাতচল্লিশে ভারত-ভাগ নিয়ে কথা বলতে ও শোক করতে। জলেশ^রীর তরুণ লেখকেরা তার কাছেই এই প্রথম শুনবে যে, দেশভাগের আগে সোহরাওয়ার্দী, শরৎ বসু, আবুল হাশিম মেতে উঠেছিলেন ভারত-পাকিস্তান অতিরেকে আসামকে নিয়ে স্বতন্ত্র এক রাষ্ট্র যদি গঠন করা যায়, যদি যেতো তবে তার নেতৃত্বে থাকতো হিন্দু নয় মুসলমান নয় – বাঙালি!। হ্যাঁ, অগ্রজদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ভারত হয়, পাকিস্তান হয়, স্বাধীন বাংলা হয় না। ভারত ভাগের তেইশ বছরের মাথায়, সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন 888sport apps অর্জিত হয় জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, এবং আমরা জলেশ^রীর এই সংবর্ধনা সভায় দেখবো, সংকেতে ইঙ্গিতে আমাদের এই ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেন এতদূর পর্যন্ত বলবে যে, রাষ্ট্রসীমান্ত সব সময়ই পরিবর্তনশীল, এমনকি সম্প্রসারণশীল, ইতিহাসে এটা কতবারই না দেখা গেছে। সে আরো বলবে, এখন যে একটা চালু কথা আছে, অনেকেরই লেখায় বা বক্তৃতায় শোনা যায় – এপার বাংলা ওপার বাংলা, আসলে এটি ভুল। মকবুল খুব আবেগ নিয়েই উচ্চারণ করবে, বাংলা এক – দেশ দুটো।
আমরা কিন্তু মন্মথ দারোগার কথা ভুলি নাই, তাকে আমরা তার এক ঘোর বিস্ময়াপন্ন অবস্থায় বাবা কুতুবুদ্দিনের মাজারে ছেড়ে এসেছিলাম। তার বিস্ময়, ওই অনিন্দ্যসুন্দরী যুবতী হিন্দু-বিধবাটি মুসলমানের মাজারে কেন? 888sport promo codeটি যে কবরের দক্ষিণপ্রান্তে মাথা ঠেকিয়ে প্রণামরত, প্রথমে সে তাকে হিন্দু বলে ঠাহর করেনি। আসলে এ-কথা তার মনে ওঠেই নাই। দারোগা ধরেই নিয়েছিলো কোনো মুসলমান 888sport promo codeই মাটিতে অমন মাথা ঠেকিয়ে। তারপর নালটি যখন মাথা তোলে বিদ্যুৎ-চমকিত হয়ে মন্মথ দারোগা দেখতে পায় এই সেই হিন্দু-বিধবা যার খোঁজে মাত্রই সেদিন সে নদীপাড়ে গিয়েছিলো আর সেখানে তাকে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে অকস্মাৎ পেয়েছিলো এক মুসলমান গেরস্তবাড়িতে। 888sport promo codeটিকে ঘিরে মুসলমান যুবকেরা বসে ছিলো, তাকে ডাবের জল খাওয়াচ্ছিলো, অধিকন্তু ওই মুসলমান যুবকেরা 888sport promo codeটিকে ভাবিজান বলে ডাকছিলো। 888sport promo codeটিকে দারোগাবাবু যে খুঁজতে বেরিয়েছিলো, আমাদের মনে পড়বে সেটি এক খবর পেয়ে, যে, নদীর পাড়ে ব্যাপারীদের গুদামঘরে হিন্দু এক 888sport promo code মুসলমানদের ভোগের শিকার হচ্ছে। যান, যায়া উয়াকে উদ্ধার করেন!
আর, আজ যে-দারোগাবাবুটি বাবা কুতুবুদ্দিনর মাজারে এসেছে সেও এক সংবাদের কারণে। মহকুমা হাকিম নেয়ামতউল্লাহ তাকে জরুরি তলব করে জানিয়েছে, শহরে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা লাগবার সমূহ সম্ভাবনা এবং হয়তো এই মাজারেই মুসলিম যুবকেরা এখন শলা করছে কি তলোয়ারেই শান দিচ্ছে। কিন্তু কোথায় কী! মাজার সেই বরাবরের মতোই ধূপ ও লোবানগন্ধী, শান্ত, স্থির ও নিবিড়, কেবল এখন ভোর বলেই ভক্তিমানদের সমাগম এখনো শুরু হয় নাই। শুধু ওই 888sport promo codeটি। ওই হিন্দু-বিধবাটি! মাথা ঠেকিয়ে! কবরের পায়ে মাথা কুটে পড়ে ছিলো, এখন উঠে দাঁড়িয়েছে। আর, একজন ফুলের ঝাড়ু দিয়ে মাজারের চারপাশ থেকে বাসি ফুল আর আগরবাতির ঠোঙাগুলো সরিয়ে চলেছে, আরেকজন ভেজা ন্যাতা দিয়ে মুছে চলেছে মেঝে। মন্মথ দারোগাকে দেখেও সে ন্যাতা মোছা থামায় না, বস্ত্তত তাকে গ্রাহ্যই করে না সে, কিন্তু ঝাড়ুদারটি ঝটিতি ঝাড়ু থামিয়ে দারোগার কাছে আসে ও ছমছমে গলায় বলে, দারোগাবাবু যে! এই সম্বোধনটি করেই সে নীরব হয় ও তীব্র প্রশ্নাতুর চোখে তাকিয়ে থাকে, কেননা সে এর আগে কখনোই লোকটিকে মাজারে আসতে দেখে নাই এবং আজ এক হিন্দু-888sport promo code যখন মাজারে প্রণত তখন তার পাছে পাছে এক হিন্দু-দারোগার আগমন তাকে সন্দিহান করে তোলে। সে বিপদ আশঙ্কা করে। সে দারোগাকে ঠেলে মাজার ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। আসেন, কোনো কথা থাকিলে বাইরে আসি কন!
একে তো মন্মথ দারোগা হিন্দু-বিধবাটিকে এখানে পাবে, এটা তার পক্ষে চমকাবার মতো, তার ওপরে দ্যাখো, ঝাড়ুদারের মতো সামান্য এক ব্যাটা তাকে গায়ে হাত দিয়ে ঠেলে একেবারে বাইরে এনে ফেললো। পাকিস্তান হয়েছে বলেই কি শালারা এত নাই পেয়ে গেছে! দারোগাকেও গায়ে ঠেলা! হলেও সে হিন্দু, দারোগা তো বটে! থানার দারোগা! পরণে উর্দি বুট হাতে হান্টার, তবু লোকটার পরোয়া নাই! দারোগা এসব কথা ভাবে বটে, কিন্তু শরীরে সে ভীষণ বলহারা বোধ করে, মনে দাপট জাগলেও তার হাত ওঠে না, পা চলে না। এদিকে ঠিক সেই মুহূর্তে 888sport promo codeটি মাজার ঘর থেকে বেরিয়ে দারোগার পাশ দিয়ে দ্রুত নিষ্ক্রান্ত হয়ে যায়, প্রাঙ্গণের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে সড়কের দিকে 888sport promo codeটি তলিয়ে যায়, চোখে পড়ে মন্মথ দারোগার, স্পষ্টই চোখে পড়ে সব, কিন্তু ঘোর অবাস্তব বলে বোধ হয়, যেন এসবই মায়া ও ছায়া মাত্র।
ঝাড়ুদারটি বিরস কণ্ঠে তিরস্কার করে মন্মথকে বলে, বাবার মাজারে চড়াও হয়া আসিছেন কী! থানার ড্রেস পরিয়া! হাতোতে ফির হান্টার! – নারে বাপু, না! বলতে বলতে মন্মথ দারোগা হাতের হান্টারটিকে পিঠের পেছনে সরিয়ে নেয়, মুখেও একটা পোশাকি আপোস হাসি রচনা করে, কিন্তু লোকটির চোখ থেকে তিরস্কার বা সন্দেহ কোনোটিই মিলিয়ে যায় না। লোকটিকে তুমি না আপনি বলে কথা বলবে, সেটাও মুশকিলের হয়ে পড়ে দারোগার। সদ্য পাকিস্তানটি না হলে দারোগা অক্লেশে তাকে তুমি তুই বলেই কথা বলতো, এখন তো-তো-তো করে সে বলে, আপনি কে? – মুই মঞ্জুর, বাবার থানে পড়ি আছোঁ।
মঞ্জুর কি লোকটির নাম? নাকি মঞ্জুরের শাদা অর্থ যে অনুমোদন, তাহলে মুই মঞ্জুর মানে আমি অনুমোদিত! ব্যাপারটি কী দাঁড়ালো ঠাহর পায় না মন্মথ। বেভোল চোখে তাকিয়ে থাকে সে। অতঃপর লোকটি যেন চোখ দিয়ে ঠেলতে ঠেলতেই দারোগাকে এবার চত্বরে এনে ফেলে। মন্মথ যে বলহারা বোধ করে তার প্রধান কারণ মাজারে ওই হিন্দু-888sport promo codeটির উপস্থিতি। জলেশ^রী থানায় এসে পর্যন্ত সে শুনেছে বাবা কুতুবুদ্দিনকে মুসলমানরা তো মান্য করেই, হিন্দুরাও তাঁকে মানে-গনে, শিন্নি চড়ায় তারাও, তবে সেসব হিন্দু গাঁও-গেরামের, নিম্নবর্গের, মাঝি নিকারী মুচি আর বুনো জাতের। অতএব, এটা ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। জলেশ^রী শহরের গণ্যমান্য কোনো হিন্দু মাজারে শিন্নি চড়ায় কি ফুল দিতে আসে, তেমন সংবাদ মন্মথ পায় নাই বা স্বপ্নেও সে কখনো ভাবে নাই। আজ সে বড় একটা ধাক্কা খায় মুকুলের মাকে দেখে। হ্যাঁ, সেই মুসলমান যুবকদের মধ্যে জাঁকিয়ে বসা 888sport promo codeটিকে দারোগা সেদিন কুমুদিনী নামে প্রথম জানে, অচির পরে দেখতে পায় মুকুলের মা নামেই তার অধিক পরিচিতি। কুমুদিনী যে শুধু হিন্দু তাই নয়, চক্রবর্তী ব্রাহ্মণ ঘরের বিধবা সে, তদুপরি যুবতী ও সুন্দরী। সে এই মাজারে? একেবারে মুসলমানের মতো সেজদায়!
এর মধ্যে ন্যাতা দিয়ে মেঝে মোছার সেই লোকটি বালতি হাতে বেরিয়ে এসে বলে, হারে মঞ্জুর, আরেক বালতি পানি আনিয়া দে, এলাও বিস্তর মোছা পড়ি আছে। দারোগার তখন বোধে আসে যে মঞ্জুর মানে কোনো অনুমোদন নয়, মঞ্জুর এই লোকটিরই নাম! সঙ্গে সঙ্গে এটিও তার মনে পড়ে, মোছলমানের নাম আগাগোড়াই কী হাস্যকর! দালালমিয়া! নজিরমিয়া! শোভনমিয়া! দালাল তো হয় যেমন পাটের দালাল, দালালি একটা বদমায়েশি পেশা, অথচ দ্যাখো সেই দালালমিয়ার কতটাই না খাতির ভক্তি শহরের মানুষের কাছে। তারপরে নজিরমিয়া, মুসলিম লীগের, আরে! নজির মানে তো দৃষ্টান্ত, সেটা আবার নাম হয় নাকি! হয় মানে খুব হয়, পাকিস্তান আনা মুসলিম লীগের নেতার নাম পর্যন্ত হয়। শোভানমিয়া! সোবহান শব্দটা যে মানুষের মুখে শোভান হয়েছে, মন্মথ জানবে কী করে! সে দ্যাখে – শোভা শব্দটাই শোভান হয়েছে, অথবা লোকটি আসলেই হিন্দুনামধারী শোভন, কলমা পড়ে মুসলমান! r (চলবে)

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.