সৈয়দ শামসুল হক
\ ৪২ \
রাত গভীর অন্ধকারে চারদিকের সত্মব্ধতা হঠাৎ আরো একবার ভেঙে যায়, আবার সেই ধড়াসধস শব্দ ওঠে। পাড় ভাঙনেরই শব্দ কি? ঠাহর হয় না। কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের সমুখে সুন্দরী যুবতী হিন্দু বিধবা, কুসমি! মন তাঁর বশে নাই। চোখে তাঁর বিশে^র আর কিছু নাই। কিন্তু ওই যে শব্দটা শোনা গেলো, ওতেই ভেতরটা চমকে উঠলো সাইদুর রহমানের, যেন আর কারো কাছে না হোক এই কিম্ভূত নিশীথের কাছে ধরা পড়ে গেছে তার মনোগত মতলবটি – নদীপাড়ের এই বিশাল সম্পত্তি দখল করা। না, অনেকদিন সে অপেক্ষ করেছে, অনেক ভয়ভীতি কুসমিকে দেখিয়েছে। কাজ হয় নাই। না, আর নয়! আজ রাতেই সে কুসমিকে কলমা পরিয়ে মুসলমান বানিয়ে নিকা করবে, তারপর দলিলে একটা দসত্মখৎ, সমুদয় সম্পত্তি হসত্মগত! ভেতরে আরো এক নষ্টামিও তার ছিলো – কুসমির শরীর! শুধু তো সম্পত্তি নয়, তহবন্দের ভিতরেও চাহিদা আছে। তাপ ছড়ায়। আধকোশার বুক থেকে উঠে আসা শব্দটাকে তিনি নিজেরই বুকের ধক ধক বলে নির্ণয় করেন। কেননা বর্ষায় ঘোর পাটল ও ক্রুদ্ধ ঘূর্ণিবহুল আধকোশা এখন শামত্ম, গর্ভ অবসানে 888sport promo codeর মতো নিসেত্মজ; মৃত মহিষের ছাড়ানো চামড়ার তলভাগের মতো নীল। এখন তার ÿুধা নাই মাটি গ্রাসের। সাইদুর রহমান কুসমির অপেক্ষ করতে থাকেন। কুসমিকে চায়ের আদেশ করে এখন নিরালায় মোবাইল করেন সোলেমানকে। – কী রে, সম্বাদ কী? – আর সম্বাদ! যা কইছেন তাই। বলরামপুরী হাজির। জিপে বসি আছে।
আমরা এই বসে থাকা থেকে আরেক বসে থাকার ছবি কতক দেখে লই। কেয়ারটেকার সোলেমান তার মনিবের ফোন পাবার পর সেই যে তড়িঘড়ি করে উঠে যায়, সেই থেকে মকবুল নদীমুখো বসে আছে তো বসেই আছে। হুইস্কির বোতলটা খালি হয়ে গেছে, নইলে আরো কিছু পান করতো সে। এই নদী! এই নদীতেই তো তার বাবা প্রাণ হারিয়েছেন। আর এই নদীই তো একবার ইন্ডিয়ার ভাগে পড়েছিলো, আরেকবার পাকিসত্মানের ভাগে, শেষে পাকিসত্মানেই, তারপর এই 888sport appsে। এই নদীর ভাঙন রোখার জন্যেই তো তার বাবা কীই না পাগলের মতো কাজ করেছেন।
রাত-গভীরে আধকোশার দিকে সুরাচ্ছন্ন চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মকবুলের মনে পড়ে তার ভালোবাসার প্রথম মেয়েটির কথা – সহেলি। আমাদের মনের মধ্যে এক জাদুকর বাস করে। সেই জাদুকর অপ্রত্যাশিত সব বস্ত্তর আবির্ভাব ঘটিয়ে চলে রম্নমালের সামান্য নাড়ায়। লাল রম্নমালটি ঝাড়া দিয়ে উঠতেই সহেলি মঞ্চে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সহেলির একটা প্রিয় গল্প ছিলো – সাঁতার প্রথম শেখা। সে কপোতাÿ নদীতে, সাগরদাঁড়িতে। নাকি সে কবতÿ এবং নদী নয় – নদ! সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে! মাইকেল! মাইকেল মধুসূদন দত্ত। যশোরে সাগরদাঁড়ি কবতÿতীরে জন্ম তাঁর! পঙ্ক্তিটি কি ঠিক ঠিক মনে করতে পারছিলো, মকবুল হোসেন যখন সহেলি তার জন্মগ্রামের নদীটির কথা বলছিলো? এখনো সে ভুলতে পারেনি সহেলির কথা। না, প্রেম নয়, প্রেমের সেই প্রত্যাখ্যান নয় – এ সকল কিছুই সে মনে রাখেনি স্পষ্ট করে। কিংবা রাখলেও তার মনে হয়েছে, ও সকলই অন্য কারো কথা কিংবা অন্য জীবনের। অন্য জীবনেরই! কেননা ততদিনে সে বিয়ে করেছে নাসরিনকে। সংসার আমাদের ভুলিয়ে দেয় পেছনের দিনগুলো, কেননা সংসার বড় বাসত্মব, আর 888sport sign up bonus হচ্ছে সাবান-ফেনায় গড়া রঙিন বল মাত্র। সামান্য ফুঁয়েই ভেঙে ভেসে যায়। যা ছিলো বিশাল গোলক, একটা ফুঁ পেলেই তা দু-এক বিন্দু সামান্য পানি হয়ে ঝরে পড়ে যায়।
নদীর পাড়ে কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের এই বাংলাবাড়িতে এসে অবধি মকবুলের মনে পড়ে গিয়েছিলো তার একটি স্বপ্ন – বিয়ে হবার পর সে সহেলিকে নিয়ে এই রকম একটা টিনের বাড়িতে থাকবে। বাড়িটি হবে নদীর পাড়ে। নদীর যে-নামই থাক, মনে মনে তাকে সে কপোতাÿ বলে জানবে। আর সেই নদীতে ক্রমাগত ঝাঁপ দিয়ে পড়বে এক বালিকা। নতুন সাঁতার শিখেছে সে। নতুন সাঁতারম্নর কি বিরাম আছে নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার। সহেলি এখন নেই। সহেলি এখনো তার দুই বেণী দুলিয়ে ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে। তার মনের ভেতরে নদীটিতে। এই নদীটি তার ব্যক্তিগত। এই নদীটি পৃথিবীর প্রতিটি নদীকে টেনে নিয়েছে নিজের ভেতরে, তাদের সকল উন্মত্ত বা শামত্ম, স্বচ্ছ বা ঘোলাটে পানিসুদ্ধ, এমনকি নামটিও গ্রাস করে। কপোতাÿ!
কিন্তু এখানে কপোতাÿ নয়, আধকোশা নদী। জলেশ্বরীর প্রামত্ম ঘেঁষে বয়ে যাওয়া আধকোশা। কপোতাÿকে সে ভুলে গেলেও আধকোশাকে সে ভুলবে না। কিংবা নিজেকে সে ভুলতে দেবে না। অমিত্মমকালে তার মা তাকে বলেছেন, ভুলিস না! তখন যদিও সে মায়ের আদেশটিতে বিভ্রামত্ম বা চমকিত বোধ করেছিলো, সাইদুর রহমান মিয়ার জামাই গফুরের কথার পর মনে হয়, ধাঁধার জট খোলা তার পÿÿ হয়তো সম্ভবই হবে। যেন সে গেরো খুলবার সুতোর প্রামত্মটি প্রায় দেখেই ফেলেছে। এখন শুধু টান দেবার অপেক্ষা মাত্র।
কিন্তু মনের মধ্যে জাদুকরটি রম্নমালে আবার এক ঝটকা তোলে, একটি পাখিকে দেখে ওঠে মকবুল। তার মনে হয় পাখিটির গলা খুব সুরেলা হবে। ঝোপের ভেতরে ডালে বসে আছে পাখিটি। লাল পাখি। কী সুন্দর পাখি। মকবুল জানে সুন্দর বললে কিছুই বোঝায় না। তাই সে নিরিখ করে দেখে নেয় পাখিটিকে। এইবার সে লাল রংটিকে যেন ঠিকমতো শনাক্ত করতে পারে। তার মনে হয় আলতার জলে সিঁদুর গুলিয়ে পাখিটির বুকে বিধাতা মাখিয়ে দিয়েছেন। পাখিটির কপাল, কাঁধ ও গলা কুচকুচে কালো। ডানা গুটিয়ে আছে। ডানায় কালো রং। মকবুলের দেখাকালেই পাখিটি ডানা বিসত্মার করে ঈষৎ। ডানার কয়েকটিতে তখন সিঁদুরের টকটকে লাল ম্যাজিকের মতো ফুটে ওঠে। এই নেই, এই আছে। টকটকে লাল বুকটা কী এক আবেগে ওঠানামা করছে। গলা ফুলিয়েছে, অথচ কোনো শব্দ করছে না। যেন এক গায়ক। গানের স্বরগ্রাম মনে মনে শানিয়ে নিচ্ছে। এইসব এক মুহূর্তের জন্যে। তারপর অজিতের কথা হঠাৎ মনে পড়ে যায়, পাখিটির কথা সে ভুলেই যায়। তার চোখের সমুখে পাখিটি থেকেও নেই হয়ে যায়। মন যা জানতে চায় না, চোখ তা দেখেও দেখে না। দেখা-না-দেখার এই রহস্যের দাঁতেই তো কত সংসার চিবিয়ে চূর্ণ হয়, কত না প্রশসত্ম নদী মরম্নপথে যায়। ভালোবাসাও নদীর মতো। বইছে তো বইছেই। ঢল নামছে তো ফুলে উঠছে। কূল ছাপিয়ে কলকল করে ছুটছে। আবার গগন ধাওয়ানো তাপ রোদ্দুর বিমৌসুম তো নদী শুকিয়ে নালাটি তখন। ছাগলেও খুরখুরে পায়ে পার হয়ে যাচ্ছে অক্লেশে। এ ছাড়া ভালোবাসার আর কী জানে মকবুল, মকবুল জানে না। কেবল জানে প্রতারিত সে। আবার সর্বাংশে পেয়েও প্রতারণার ভয় তার যায়নি। যদি প্রতারণাই ভেতর-কথা, তাহলে! এই করতে করতেই পাবার আনন্দটি তার নীল বিষ হয়ে রইলো জীবনের এতদূর। ভালোবাসার গল্প
বানিয়ে ছাপিয়ে পাঠক মজিয়ে লেখক হিসেবে মকবুল বেশ নাম করলেও, তার নিজের জীবনে আর্তনাদ সর্বস্বই হয়ে রইলো ভালোবাসা, বাজে নকশায় তৈরি বাড়ির মতো। এমনকি তার মেয়ের জীবনেও।
আধকোশার রাত গভীর জলের দিকে, বহমান নয়, শামত্ম জলরাশির দিকে তাকিয়ে সহেলিকে মনের মধ্যে রক্তে-মাংসে তৈরি করতে চেয়েছিলো সে। সেই ভাবনাতেই সে ফিরে যায়। কিন্তু হঠাৎ নদীর বুকে-ধড়াসধস শব্দ ওঠে। চমকে ওঠে মকবুল। যে-শব্দটা হয় তার সঙ্গে পাড় ভেঙে মাটির ধস নামার কোনো তফাৎ নেই। মকবুলের বুকের ভেতরটা ধড়াস করে ওঠে। কেননা তার ভেতরেই লীন হয়ে আছে এই ইতিহাসটি যে একদিন আধকোশা ছিলো উন্মত্ত নদী। বর্ষাকালে বিসত্মার হতো তার আধক্রোশ। নদীর পাড় গিলে খেতো, পাড়ের বাড়িঘর তার স্রোতোদীর্ঘ জিহবার টানে তরল জঠরে টেনে নিতো আধকোশা। অন্ধকারেও মকবুলের চোখে পড়ে দূরে একটি নৌকো বাঁধা। নৌকোটি বাতাসের মন্দটানে একবার ডানে একবার বামে সরে সরে যাচ্ছে। গলুইটি পোঁতা বাঁশের সঙ্গে বাঁধা বলে, নৌকোর পেছনটাই এপাশ-ওপাশ করছে। যেন নদীর বুকে লম্বমান কেউ। হাতজোড় করে শুয়ে পড়েছে। তীরের কাছে মাফ চাইছে, প্রার্থনার ঘোর কাতরতায় অস্থির শরীর নিয়ে।
কিন্তু এ সকল কে দেখে? আমরা যা দেখার দেখি। মকবুল সহেলিকে নির্মাণ করতে থাকে, পটের বুকে তুলির অাঁচড় ফেলে যেমত চিত্রকর। সে এতটাই গভীর করে ভাবতে থাকে যেন সহেলিকে সে প্রত্যÿ পায় নৌকোয় ওই উঠছে। ছবি, ছবি। মন একদিকে জানবে এ মিথ্যে। কিন্তু চোখ দেখবে – সত্য! ম্যাজিকের কালো মঞ্চে, কামনার অন্ধকারে, শূন্যে ভাসতে ভাসতে চলে আসছে সহেলি, যেন শোলার তৈরি, যেন বায়বীয়, যেন সাবান পানির বুদ্বুদ, ভেঙে যাবে, ফেটে যাবে – নাহ্, সে আসেনি, সে শরীর ধরে হয়ে ওঠেনি। ভেঙে ভেসে গেছে। কবেই তো মকবুলের চোখজোড়া পুড়িয়ে দিয়ে চলে গেছে সহেলি পৃথিবীর তলপ্রামেত্মর কোন দেশে না কোথায় – নিউজিল্যান্ডে! নামটা থেকে থেকেই তার মনে পড়ে। দেশে বোধহয় তার মতো আর কারো নিউজিল্যান্ডকে এত বেশি মনে পড়ে না। তার মনের পটে সহেলি আর ফোটে না। মুছেই হয়তো গিয়েছে একদিন সেই যে ছিলো সেই মেয়েটির মুখের মানচিত্র। বি888sport sign up bonusর বন্যা যখন থইথই, গ্রামরেখা বৃÿবিতান শস্যÿÿত তখন সকলই তলায়। তখন শুধু দিগমত্মবিসত্মৃত ধুধু জলরাশি, তার নাকচোখমুখ নাই।
ঠিক তখনই জাদুকর তার রম্নমাল হাতে নিয়ে আবার ঝটিতি নাড়া দেয়। এবার ছবি নয়, শব্দ জেগে ওঠে। স্বর্গীয় একটি সুর, অমৃতের সূচিমুখ একটি রেখা, প্রবাহিত হতে থাকে। যেন উজ্জ্বল সোনালি রঙের চিকন একটি রেখা, জীবমত্ম, চঞ্চল, ভোরের ধূসরতার বুক চিরে এগিয়ে চলেছে।… ইউটি টিট্ টিট্… হু হু পিইট্… পিট্ পিট্ সিউটি… গিইএ… পিট্!… তারপর ছোট্ট একটা শিস, আবার প্রথম থেকে… ইউটি টিট্ টিট্। মকবুলের মনে পড়ে কেয়ারটেকার সোলেমান কী খুশিতেই না বলে উঠেছিলো, আরে! আরে! কতদিন বাদে! হিমালয়ের জঙ্গল থেকি! সেথাকার জঙ্গলে থাকে। দ্যাখেন তার কেমন ধারা! মানুষে না পারে পাসপোট ছাড়া বডার পার হইতে। বডারে গেইলেই চÿু রাঙা করি বন্দুক তুলি ধরি কয় বোলে তফাৎ! নিজ নিজ জাগায় থাকেন! আর এই পাখি দ্যাখেন পাখায় উড়িয়া বডার পার হয়া হামার মুলুকে! – আর ঠিক তখন মনের মধ্যে সেই জাদুকরের রম্নমাল চালনায় একটি হলুদ পাখিকে দেখা যায় উড়ে আসতে।
হলুদ পাখিটি উড়ে এসে লাল পাখিটির পাশে বসে। কামরাঙার ডালে ভোরের প্রথম রোদ, রোদের ফালি, যেন সোনার তক্তা সটান বিছিয়ে আছে। পাখিটি যে উড়ে এসে বসে, কয়েকটি মুহূর্ত মাত্র, ওর ভেতরেই তার উড়মত্ম তলভাগের চকচকে হলুদ রংটি চোখে পড়ে। বুকে, পেটে, গলায়, লেজে। এমন সে থুপথুপে রং, স্পর্শ করলেই আঙুলের ডগায় হলুদ লেগে যাবে। কেয়ারটেকার বিস্ময়াপন্ন চোখে তাকিয়ে থাকে। মুখে তার বাক্য নেই। তার ঠোঁট একবার শব্দের ভেতর-চাপে খুলে যায়, কিন্তু কোনো শব্দ ফোটে না, ঠোঁট ফাঁক হয়েই থাকে, মুখের ভেতর থেকে লালা এসে ঠোঁট ভিজিয়ে দেয়। তারপর ধীরে বুজে যায়। এরকম কয়েকবার চেষ্টার পরে শব্দ ফোটে, তাজ্জব! দ্যাখেন, দ্যাখেন, সচরাচর না দেখা যায়, ওই দ্যাখেন তার মাদিও আসি গেইছে। জোড়ার টানে জোড়া গঠন হয়। আর মানুষের বেলায় কী হয়? জোড়া ভাঙিয়া পড়ে।
এই পর্যবেÿণটি মকবুলকে ÿণকালের জন্যে চিরে যায়। ছুরির ধারে ত্বক চিরে দিলেই চেরা জায়গাটা চোখের পলকে রক্তলাল রেখায় পরিণত হয়। মকবুলের চেতনা-ত্বকে কেয়ারটেকারের পর্যবেÿণটি – মানুষের জোড়া ভেঙে যায় – রক্তলাল রেখার জন্ম দিতে না দিতেই মিলিয়ে যায়। কারণ, সে নিজের বিষয়ে এত অধিক ভাবিত হবার অবকাশ এখন চায় না। সে বলে, তাহলে মাদির রংটা হয় হলুদ। লাল পাখির জোড়া! – হয়, হয়, লালের জোড়া হলুদ, হলুদের জোড়া লাল, দুয়ে মিলি স্বামী-ইস্ত্রি। পাশাপাশি বসিলে য্যান তারা লালহলুদ ফুল ঝলমল ঝলমল করে। – হাঁ, কেয়ারটেকার সাহেব, এ-পাখি আমি আগে কখনো দেখি নাই। কী যেন নাম বললেন? – সাতসয়ালি! – মানে, এরা সওয়াল করে? সাতটা সওয়াল? তাই সাতওয়ালি? – কেয়ারটেকার থতমত খেয়ে বলে, হাঁ, হবার পারে! এত মুঁই ভাবিয়া দ্যাঁখো নাই। – মকবুল পাখিদুটির দিকে চোখ ফেরায়। মকবুল বলে, সাত সওয়ালি! যে-পাখি সাতটা সওয়াল করে! সাতটি প্রশ্ন! কেয়ারটেকার তখন বলে, কী জানি! এ ত হামার জানা নাই। তবে সাতসওয়ালিও ঠিক ইয়ার নাম নয়, সাধারণভাবে মানুষজনে এই পাখিকে সহেলি পাখি কয়।
সহেলি! আকস্মিক এই বিদ্যুৎস্পর্শের জন্যে তৈরি ছিলো না মকবুল। সে একটা প্রবল ধাক্কায় গড়িয়ে পড়ে যায়। কেয়ারটেকার সোলেমান হঠাৎ হইহই করে ওঠে, দ্যাখেন, দ্যাখেন, ছার! ইন্ডিয়ার পাখি উড়ি আসি হামার দ্যাশে হামার মুলুকে। মুলুকে তো মুলুকে, হামার নিজবাড়ির কামরাঙা গাছে! পাখির কোনা পাসপোট ভিসা নাই, 888sport apps ভারত বলিয়া কথা নাই।
মকবুল তার মায়ের কণ্ঠস্ব^র শুনে ওঠে তখন, তোর বাবা এই বর্ডার কখনোই মেনে নিতে পারেন নাই। একই ধুলোমাটি। একই ঘাস। ঘাস চিরে দাগ পড়ে গেছে। মানুষের পায়ে পায়ে। ফিতের মতো বিছিয়ে আছে। কোথায় এর ছিন্নতা! ওই! ওই তো! হাঁটুসমান উঁচু পিলার। ছোট্ট পিরামিড যেন। খেলনার পিরামিড। মাথাটা ভোঁতা। ওপরে লোহার চাকতি বসানো। চাকতির ওপরটা যোগচিহ্নের মতো অগভীর রেখায় খোদিত। যোগচিহ্নের খাড়া মাথায় লেখা ইন্ডিয়া, নিচের দিকে পাক – অর্থাৎ পাকিসত্মান। আর যোগচিহ্নটার ভূমি-সমামত্মরাল খাদে সুতো ধরে পরের পিলারে টেনে ধরলেই হয়ে গেলো সীমামত্মরেখা। নিষেধের অদৃশ্য বেড়া। নিষেধ! অপর দেশ!
মায়ের সেই আর্ত উচ্চারণ, কুচবিহারের শিবিরে! – একদিন তোকে বলবো। সব বলবো। বলা হয় নাই। তার আগেই মা চলে গেলেন। মকবুলের চোখে অশ্রম্ন। সীমামেত্মর ওই পিলারটির জন্যে? বাবার জন্যে? নাকি মৃত্যুপথযাত্রী মা তার কোলের ওপরে, তার শেষনিঃশ্বাসটির জন্যে।
আমরা মকবুলের এই বসে থাকার ছবিটি ঘুরিয়ে কুসমির বাড়ির দাওয়ায় কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের কাছে যাই। কুসমির কাছে তিনি চা চেয়েছিলেন, কুসমি এখনো রান্নাঘরে। তার বুকের ভেতরে ঢেঁকির পাড়। 888sport promo code কীই না টের পায়। বড় অসীম তাদের টের পাবার ÿমতা। আজ রাতেই কন্ট্রাক্টর যে তার জাতিনাশ করবে, সম্পত্তিনাশ করবে, কোনো ভুল নাই। ভগবান! রক্ষা কর ভগবান! আমার ব্যাটা ছিরিচরণকে না পথের ভিখারি করো ভগবান! আহ, শ্রীচরণ। বুকের ভেতরে টনটন করে ওঠে কুসমির। আহা, শ্রীচরণ তো একবেলা না খেয়ে থাকতে পারে না। আহা রে। কুসমির চোখ বেয়ে ঝরঝর করে জল পড়ে। মাসতুতোভাই কমলদাস, সে এসে নিয়ে যায় শ্রীচরণকে। কুচবিহারে নিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে বর্ডার পাড়ি দিয়ে তার ছেলে চলে যায় মামার কোলে কোলে। – হেথায় থাকিলে মোছলমানে উয়ার বুকে চাক্কু বিন্ধাইবে, খুন করি ফেলাইবে। অক্তের ধারা ছুটিবে। সম্পত্তির জইন্যে খুন হইবে ছিরিচরণ, সে-কথা পাকিসত্মানে হিন্দু হয়া না বুঝিস কেনে দিদি?
হ্যাঁ, সম্পত্তি। তারপর মা। পাকিসত্মান হিন্দুস্থান হবার কত পরের কথা, কী একটা হুজ্জত হলো হিন্দু-মুসলমান নিয়ে 888sport appয়। কত হিন্দু কাটা গেলো। এ সব শোনা কথা কুসমির। তখন শমশের ব্যাপারীর খুব দাপট ছিলো জলেশ্বরীতে। কুসমি ঠাকুরদার কাছে শুনেছে। – সেই যে কী কাল আসি পড়িলো রে কুসমি, আচানক সব ব্যবস্থা হয়া গেইলো। শমশের ব্যাপারী আসি কয়, এই জমি সমুদয় হামাকে লিখি দ্যাও। নদীর পাড়ে মায়া বসি গেইছে? ঘর হতে তোমাকে না উৎখাত করিমো। ব্যাটার মতো ভাইয়ের মতো তোমাকে দেখি রাখিমো। ঝতদিন আছেন হামার ছায়ায় থাকিবেন। হরিচরণ হাসে আর বলে, হিন্দু-মোছলমানে ভাই-ভাই? সে-পাট তো উঠি গেইছে যবে হতে হিন্দুস্থান পাকিসত্মান হইছে। শমশের ব্যাপারী বলে, আরে কাকা, সে সগল কথা আঝধানীতে 888sport app শহরে, করাচি শহরে, হামার এঠায় নয়। হামার জলেশ্বরীতে হামরা ঝ্যামন ভাই আছিলোম তেমনে আছি। – তবে হামার জমির দিকে চোখ পাড়েন কেনে? দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে শমশের বলে, মানুষখান মুই মন্দ নয়। ইচ্ছা করিলে কাড়ি নিতে পারিতাম। ভালোবাসিয়া শলস্না দিলোম, তোমার আসল জাগা তো এলা বডারের ওপার কুচবিহার। জমি বেচিয়া নগদ টাকা ধরি বডার পার হয়া যাও। নিজে তোমাকে পার করি দেমো। লাগিলে মুঁই নিজে তোমাকে ইন্ডিয়ার টাকা করি দেমো পাকিসত্মানের টাকাকে। সে-টাকা নিজে মুই কুচবিহারে তোমার নামে পোস্টাপিসে কি ব্যাংকে জমা করি দেমো। পায়ের উপর পা তুলি বাকি দিন গুজরান করেন সেথায়। সেই শমশের ব্যাপারী একরাতে ধর্ষণ করে কুসমির মাকে। হরিচরণের সামনেই। শ্যামাচরণ তখন সাপে কাটা। বেঁচে থাকলেও কি রক্ষা করতে পারতো সে স্ত্রীকে? তবু তারই বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে, মৃত তবু তারই প্রতিরÿা পেতে, শমশেরের নিচে পড়ে উথালপাথাল ছটফট করতে থাকে কুসুমকুমারী – বাঁচাও, বাঁচাও গো, কোন্ঠে তুমি, কই! ভগবানের বিচার আছে তবে। সেই শমশের খুন হয় একদিন। কার হাতে খুন হয়, নির্ণয় নাই। নিঃস্ব নির্বংশ হয়ে যায় চোখের পলকে। জলেশ্বরীতে দাপট নিয়ে দেখা দেন সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টর। তারও চোখ পড়ে হরিচরণের সম্পত্তির দিকে, ঠিক শমশেরের মতোই। ততদিনে জেদ চেপে গেছে কুসমির। এ-সম্পত্তি সে রক্ষা করবেই। তার জন্যে যা তাকে করতে হয় করবে।
দেশভাগের উন্মত্তকালে মকবুলের বাবা মইনুল হোসেন মোক্তার আধকোশার ঘূর্ণিজলে প্রাণ দেয় – আত্মহত্যা কিংবা দুর্ঘটনা, এখনো তার নির্ণয় নাই মকবুলের কাছে। সাইদুর রহমানের অতিথি হয়ে আধকোশার পাড়ে এই বাংলাবাড়িতে মকবুল যতই গল্পের আসরে জমিয়ে বসুক কি সন্ধ্যাকালে হুইস্কির গেলাশ হাতে তলিয়ে যাক সময়-বিভ্রমে, তার মনের মধ্যে সারাÿণ আধকোশার বুকে ঘূর্ণি ওঠে আর একটি লাশ ভেসে যায় – তার বাবার লাশ! কিন্তু এ সকল আবার আমার বলবো। আপাতত থাক। আরো একজন এই শেষ নিশীথে থুমো হয়ে বসে থাকুক রেললাইনের পাড়ে কন্ট্রাক্টরের জিপের ভেতরে। হাফেজ আবুল কাশেম বলরামপুরী! গভীর নিশীথে কন্ট্রাক্টর সাহেবের জরম্নরি ফোন পেয়ে সোলেমান তাকে এনে জিপে মৌজুদ করে রেখেছে। এখনো অর্ডার হয় নাই হুজুরে তাকে হাজির করার। সোলেমান অনুমান করে, এত রাতে হাফেজকে তলব করার একটাই কারণ – কুসমির ব্যাপারে কিছু একটা আজ রাতেই ঘটাবেন তার মনিব সাইদুর রহমান। চাইকি, এই নিশীথে নিকাও হয়ে যেতে পারে হিন্দুর বিধবা যুবতী কুসমির। কার সঙ্গে? আর কার? সাইদুর রহমান কন্ট্রাক্টর ছাড়া পাত্র আর কাউকে তো চোখে পড়ে না সোলেমানের। কিন্তু এ-কথা ভাবতেও তার শরীর শিউরে ওঠে আতঙ্কে কি কুসমির শরীর-কল্পনায়, কোনটা যে সোলেমান ঠাহর পায় না। কিন্তু ঘড়িয়াল সে। পুরম্নষ তো বটেই। কুসমির কল্পনায় শরীর তারও গরম হয়। কিন্তু মনিবের চোখ সেখানে! অতএব, নিজের ভেতরটাকে কবজায় রাখতে সে বাংলাবাড়িতে এসে গল্প জুড়ে দিয়েছে। হাতের মুঠোয় মোবাইল। কখন যে মনিবের ডাক ঝনাৎ করে বেজে ওঠে, ঠিক কী! কিন্তু এ-সকল বহু পরের কথা।
সকালবেলা কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমানের কেয়ারটেকার সোলেমান মিয়া এসেছিলো কুসমির কাছে। পরনে পাঞ্জাবি পাজামা, মাথায় টুপি, মুখে ভদ্রমতো ভাব। তাকে দেখেই কুসমির 888sport app download for android হয় আজ নামাজের দিন শুক্রবার। নদীর ওপারে সোলেমানের বাড়ি। সপ্তাহের এই দিনটিতে সে গাঁয়ে যায়। গাঁয়ের মসজিদে নামাজ পড়ে সন্ধ্যার মুখে-মুখে ফেরে। ফেরার পথে গাছের দু-একটা ফল কি খেতের কোনো শবজি নিয়ে ফেরে। নদীর এ-ঘাটে এসে কুসমির বাড়িতে হাঁক পাড়ে – দিদি, অ দিদি, দ্যাখেন কেনে তোমার জইন্যে কী আনিছি। তখনো তার মাথায় থাকে টুপি। আলস্নার এই দিনে সোলেমান মাথা থেকে টুপি নামায় না। কিন্তু সে তো সেই সন্ধ্যাকালে আসে, আজ সকালবেলাতেই তাকে আসতে দেখে কুসমি অবাক হয়। মুখের দিকে তাকিয়ে আগমনের হেতু-আভাস পাওয়া যায় না। কুসমি মুখটিকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে রাখে বটে, কিন্তু মনে মনে ভয়ও করে ওঠে। আবার কোনো দুঃসংবাদ কি? সোলেমান অচিরে কোনো কথা ভাঙে না। বলে, ভোরবিয়ানেই মোর আসা পড়িলো, দিদি। এক কাপ চা হইলে খানু হয়। বিয়ান হতে শরীল মোর ম্যাজ ম্যাজ। জ্বরবোখারই কি আসি পড়ে। কপালে হাত দিয়া দ্যাখেন তো! এ আবার কি কথা। কপালে হাত দিতে বলে! কুসমির ভেতরে ঝঞ্ঝা বয়। সে যে খারাপ মেয়েমানুষ, পুরম্নষের বিছানায় গেছে, এ-খবর তো খুব একটা গোপন নয়। কন্ট্রাক্টর সাহেবের বাবুর্চি আলাউদ্দিনের মুখ পাতলা। কর্মচারী মহলে নিশ্চয় রটিয়ে বেড়িয়েছে। আর, সেই সাহসে মনিবের খাস কর্মচারী সোলেমানেরও হাউস হয়েছে, আর কিছু না হোক হাতের ছোঁয়া নেয়। কুসমির শরীরটা ঘিনঘিন করে ওঠে। টুপি-পাঞ্জাবিতেও লোকটিকে ভদ্রমতো মনে হয় না আর। সোলেমান আবারও চায়ের শখ 888sport app download for android করিয়ে দেয়। – চা কি হবার নয়? চা-পাতা না থাকে তো কন, দোকান হতে আনি দেই। – তো বইসেন। চায়ের জোগাড় আছে। দুধ নাই। অঙ চা। – তায়ে হামার কত! মোড়া এগিয়ে দেয় কুসমি। – বইসেন। কিন্তু চা করবার কোনো লÿণ দেখা যায় না। সোলেমানের সমুখে সে দাঁড়িয়েই থাকে মুখে ছায়া নিয়ে। ছনমনে গলায় প্রশ্ন করে, কী কামে বা অসময়ে আসা হইলো তোমার। – তোমার কাছে আসিমো, দিদি, তার আর সময় অসময় বলি কথা কী! লোকটির মতলব তো বোঝা যাচ্ছে না। লোকটি বোকা না খল, আজ পর্যমত্ম নির্ণয় করে উঠতে পারে নাই কুসমি। মুখে সারাÿণ হাসি লেগেই আছে। আর গলার মধুর স্বর তো কোকিলকেও হার মানায়। কিন্তু সে-কোকিলের আড়ালে কাকের কু-ডাক। দিদি-দিদি বলে ডাক ভাঙে। পারলে যেন চরণে লুটিয়ে পড়ে। অথচ গলায় পা দিয়ে দাঁড়াতে এক মুহূর্ত বিলম্ব হয় না। – কন্ট্রাক্টর সাবে কইলে, বাড়ি যাবার পাকে তোমার কাছে ঝ্যান ঘুরি যাই।
এ-কথা শুনেই কুসমির বুক থরথর করে ওঠে। এই লোকটিই তো একদিন এক ভোরবেলায় এসে কুসমিকে ডাক পেড়ে বলেছিলো, সে কত আগের কথা, কুসমি এখনো ভোলে নাই – দিদি, বাড়ি আছেন কি? – কে? কাঁই গো? কুসমি বেরিয়ে এসে দ্যাখে অচেনা এক মানুষ। তার মুখে দিদি ডাক! কুসমির মনে হয়েছিলো, হয়তো পথিক মানুষ কোনো বিপদে পড়ে ডাকছে কি জলতেষ্টাই পেয়েছে। কিন্তু না। তাকে দেখেই, যেন কতকালের চেনা, সারাÿণই দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে, যেন আগের দিনের কোনো কথা, তারই জের ধরে এখন উঠানে পাড়া দিয়ে বলে, তোমার বাড়ির সামোনে যে দোকানঘর উঠিবে, তায় বাঁশ টিন আসিবে, বাজার হতে ঠ্যালা রওনা করি আসিলোম, খনেকে আসি পঁহুছিবে, সব যত্ন করি বারান্দার পরে ঢের দিয়া রাখিবেন, দিদি। কী ঘোর আতামত্মরে পড়ে গিয়েছিলো কুসমি। কার দোকানঘর, কার বাঁশ টিন, নির্ণয় নাই, ব্যাখ্যা নাই। – এগুলা কী কন তোমরা? কোথা হতে আসিচ্ছেন? তোমরা কাঁই? সোলেমান এক গাল হেসে বলে, হামাক বুঝি চিনিবার পারেন নাই, মুঁই কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমান সায়েবের কেয়ারটেকার। চেনেন তো তাকে, চেনেন না? এই যে নদীর পাড়ে হাওয়া খাইতে যান, শানবান্ধান বেঞ্চির পরে বইসেন, এ সমুদয় কন্ট্রাক্টর সায়েবে করিছে। জিপগাড়ি করি আসিতো মাঝে মাঝে, দ্যাখেন নাই? নাম শোনেন নাই?
হ্যাঁ, কুসমি তার নাম শুনেছে। নদীতে যখন বাঁধ দেবার কাজ চলছে তখন তাঁকে দেখেছেও বটে। লম্বা চওড়া মানুষটা। ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটে। হাঁ, কুসমির 888sport app download for android হয়, সোলেমান নামে এই লোকটিকেও সে দেখেছে কন্ট্রাক্টরের পায়ে পায়ে হাঁটতে। আনমনা হয়ে গিয়েছিলো কুসমি। বুকের ভেতর নদীর পাড় ভাঙছিলো। শিশুকালে সে তো দেখেছে আধকোশা নদীর বুকে বান। ঘোলা লাল। ঘূর্ণি। পাড়ের গায়ে ঢেউয়ের আছাড়। ধসধস করে বাড়িঘরের তলিয়ে যাওয়া। এখন সেই নদীতে বাঁধ পড়েছে। নদী শামত্ম হয়েছে। কিন্তু ভাঙন থামে নাই। এ ভাঙন নদীর নয়, কুসমির। মুহূর্তের মধ্যে কুসমি সেদিন বুঝে গিয়েছিলো যে তার সম্পত্তি জমিজমা বেদখল হতে চলেছে। (চলবে)

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.