নাট্য সমালোচনার কথকতা বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়া

সমালোচনা শব্দটির ভেতর তদন্ত করলে পাওয়া যায় ‘সম + আলোচনা’। যেখানে সমানভাবে দোষালোচনা বা গুণালোচনা দুটোই হতে পারে; কিন্তু লক্ষণীয় যে, 888sport appsে

সমালোচনা শব্দটি নেতিবাচকভাবেই বহুল ব্যবহৃত এবং প্রচলিত। ফলে নাট্য সমালোচনার ক্ষেত্রটি যেন আরো কণ্টকাকীর্ণ। এ-বিষয়টিকে উপজীব্য করেই আবু সাঈদ তুলু নাট্য সমালোচনার কথকতা শীর্ষক গ্রন্থটি রচনা করেছেন। একই সঙ্গে সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন সমালোচনার প্রকরণ বা পদ্ধতি, কেন প্রয়োজন এবং এর সুফলসমূহ।

আবু সাঈদ তুলু মনে করেন, সমালোচনা হচ্ছে 888sport live chatের অভ্যন্তরীণ সত্যকে আবিষ্কার করে তা বিচার করা ও উপলব্ধিতে সাহায্য করা। নাট্য সমালোচনার কথকতা গ্রন্থে নাম888sport liveটি ছাড়াও আরো নয়টি 888sport live রয়েছে। প্রারম্ভের 888sport liveটির নাম ‘888sport app download apkর পাঠক, পাঠকের 888sport app download apk’। 888sport live footballের অনন্য শক্তিশালী শাখা 888sport app download apk সম্পর্কিত নাতিদীর্ঘ এই আলোচনাটি গভীর নিরীক্ষাধর্মী। ‘888sport app download apk কীভাবে পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা রহস্যের ব্যাপার’ – লাইনটি দিয়ে শুরু হওয়া 888sport liveটি ক্রমশ তথ্য ও তত্ত্বের হাত ধরে 888sport app download apkর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। বর্ণিত হয়, কীভাবে এর ঐন্দ্রজালিক শক্তি আবহমানকাল ধরে পাঠক-হৃদয়কে তৃপ্ত করে ও নাড়া দেয়। এর পর্যবেক্ষণজাত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় বাল্মীকির কাব্য-পঙ্ক্তি থেকে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর 888sport app download apkর উপমা ধরে এগিয়ে আসার মধ্য দিয়ে। 888sport app download apkর মুখ্য উপাদান কি রস, ছন্দ, অলংকার না রীতি – এই দ্বন্দ্ব পরিক্রমা দীর্ঘক্ষণ বয়ে চলে। চলে প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে দার্শনিকদের স্বতন্ত্র মতবাদ বর্ণনাও। একবার লেখক বলেন, ‘888sport app download apk একাধারে ভাবের বিষয়ও নয়। আবার আন্দোলনের বিষয় নয়। 888sport app download apk অনুভব-অনুভূতির বিষয়। যার অতল স্পর্শ হৃদয়কে আন্দোলিত করে।’ গবেষণা চূড়ান্ত ফল লাভ করে তখন, যখন লেখক বলেন, ‘কবি নিজের সঙ্গেই কথা বলেন 888sport app download apkয়, পাঠক আড়াল থেকেও শুনে ফেলেন মাত্র।’ 888sport live footballের বাজারে এই বক্তব্যটিও উল্লেখ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ যে, ‘বাক্যগুলো শুধু একটি কথা বলে না। বাক্যটি যখন অতিরিক্ত কথা বলে তখনই হয়ে ওঠে 888sport app download apk।’

গ্রন্থের তৃতীয় 888sport liveে লেখক বাংলা নাট্যের তথ্য ও রীতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এতে বাংলার অতীত নাট্যচর্চার নানা তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতে আজকের নাটক কীভাবে পাওয়া যায়, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কীভাবে কাহিনি বা বিষয় উপস্থাপন করতেন, তার সম্যক আলোচনা সমৃদ্ধ হওয়ার মতো। আমাদের নিজস্ব ধারা বা শৈলী পাঁচালি, কীর্তন, কথা, কথকতা, পালা, লীলাবিষয়ক অনবদ্য আলোচনাও রয়েছে। এ-অঞ্চলের রয়েছে হাজার বছরের নাট্য-ঐতিহ্য। কাঁসর, করতাল, ঢাক, বীণা, বাঁশি, মৃদঙ্গ, মৃৎভাণ্ড প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নৃত্যের সমন্বয়ে একসময় নাট্যাভিনয় হতো। পালযুগ থেকে মধ্যযুগেও এই বৈচিত্র্য ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, এ-অঞ্চল মহুয়া-মলুয়ার অঞ্চল। এ-অঞ্চল কাজল রেখার অঞ্চল। কেদারনাথ মজুমদার-সম্পাদিত সৌরভ পত্রিকায় ময়মনসিংহের চন্দ্রাবতীকে নিয়ে লেখা আলোচনা পড়ে দীনেশচন্দ্র সেন চন্দ্র কুমার দে-র মাধ্যমে যে পালাসমূহ সংগ্রহ করেন, সেখান থেকে বাছাইকৃত দশটি পালা দিয়ে সংকলিত মৈমনসিং গীতিকা
ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাড়া ফেলেছিল। সেটি পড়ে ফরাসি পণ্ডিত হগম্যান বলেছিলেন, ‘ফরাসি 888sport live footballের তুলনায় বাংলার পল্লীগাথার সৌন্দর্য সর্বকাল স্থায়ী।’ ওই মৈমনসিং গীতিকা নেত্রকোনা ও এর আশপাশের অঞ্চলের বয়াতি, মাঝিমাল্লা ও লোকশ্রুত। নদের চাঁদ এবং মহুয়ার করুণ প্রেম ও পরিণতি রবীন্দ্রনাথের হৃদয়েও দাগ কেটেছিল। এসব পালার মধ্যে আধুনিক নাট্যতত্ত্বের সমস্ত গুণ রয়েছে। এমনসব বিস্তৃত তথ্য ও তত্ত্বনির্ভর আলোচনার নিবন্ধই ‘পালা : বাংলার নিজস্ব নাট্য ঐতিহ্য।’

মানুষ তার সুখানুভূতি বা আনন্দানুভূতি বা সৃষ্টিকর্মকে সবার কাছে জানাতে চায়। থিয়েটারের মতো 888sport live chatমাধ্যমটিও এর ব্যতিক্রম নয়। কাজেই থিয়েটারে দর্শকের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এ-প্রসঙ্গেও লেখক বিস্তর আলোকপাত করেছেন। লেখক মনে করেন, নাটক প্রদর্শনী ও দর্শকের উপভোগ – এর যুগপৎ মিলনেই থিয়েটারের সৃষ্টি। তিনি অ্যারিস্টটল, হোরেস, ভরত মুনি, স্তানিস্লাভস্কি, মেয়রহোল্ড, গোস্টস্কি প্রমুখের ব্যাখ্যাও সন্নিবেশনপূর্বক পর্যালোচনা করেছেন। প্রতিবার এর বাঁকবদল বা বিভিন্ন মোড় স্বচ্ছভাবে তিনি তুলে ধরেছেন। সময় ও প্রেক্ষাপট পরিক্রমার দরুন বুর্জোয়া থেকে মার্কসীয় দর্শনের প্রভাবে থিয়েটার 888sport live chatের জন্য 888sport live chat থেকে মানুষের জন্য 888sport live chat হিসেবে আবির্ভূত হয়। নাট্যচিন্তক ব্রেখটের এলিয়েশনতত্ত্ব নিয়ে বিশদ যুক্তিনির্ভর বর্ণনা অত্যন্ত নান্দনিক ও বস্তুনিষ্ঠ। ধর্মীয় কারণে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নাটককে এখনো অশ্লীল মনে করে এবং এর প্রভাব এ-জগৎকে সংকুচিত করে রাখছে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করা, মন-মনন, ঐতিহ্যবাদিতা ও পেশাদারিত্বের স্থানটি উন্নত হলেই মঞ্চনাটকে দর্শক বৃদ্ধি পাবে – এ-অংশে এমনটিই লেখকের নিরীক্ষা।

মানবসভ্যতার এক যুগান্তকারী আবিষ্কার বর্ণমালা তৈরি। আমরা যে এত সহজে লিখে মনের ভাব প্রকাশ করছি, এর পেছনে যে কত দুর্গম পথ অতিক্রম করতে হয়েছে তা ‘বর্ণমালা কীভাবে তৈরি হলো’ পড়লে অনুধাবন করা যায়। পাথর যুগ থেকে পুরান পাথর যুগ ও ক্রমশ সাংকেতিক যুগে মানুষ পৌঁছে যায়। সুমেরীয়, মেসোপটেমীয়, ব্যাবিলনীয়, এসেরীয়, ক্যালেডিও প্রভৃতি সভ্যতার সময়কার সংগ্রামী গল্প পড়ার মতো। চিত্র আঁকা থেকে বর্ণ তৈরির প্রক্রিয়ার গল্প সত্যিই অপূর্ব। অত্যন্ত সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এক জাতি বাঙালি। আজো এর গৌরবের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়ে চলছে। সংগ্রামী এ-জাতি বহুবার অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কারো কারো মতে, পাঁচ হাজার বছরের বাংলা সংস্কৃতি ও সভ্যতার ইতিহাস রয়েছে। গীতপ্রবল এর প্রাচীন পর্বের উপস্থাপনশৈলী নান্দনিক। এর গানও সহজিয়া, নাথযোগী, বাউল, ভাটিয়ালি মুরশিদীসহ বিচিত্রসব ধারার। অনন্যসুন্দর এই অঞ্চল নৃত্যগীতের ক্ষেত্রেও জুড়িহীন। এই বিষয়কে উপজীব্য করে ‘প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতি’ শীর্ষক 888sport liveটি রচিত হয়েছে। বাংলার অতীত 888sport live footballরীতি বৈচিত্র্যময়। সে-সময় বঙ্গ-গৌড় অঞ্চলে অলংকার, অনুপ্রাস, রচনার গাঢ়তানির্ভর কাব্যরীতি ছিল। পাল বংশ ও পাল বংশের নানা সাম্রাজ্যের শাসনের সময়কার নানা চিত্র সম্পর্কে বৈচিত্র্যের দিকটি লেখক তুলে ধরেছেন। প্রাচীন ভারতীয় নাট্যশাস্ত্রের মূল ভাবরস নিয়েও ঈষৎ আলোচনার পাশাপাশি পুনরায় 888sport live footballে রস, অলংকার, গুণসহ বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে মুখ্য কোনটি তার আলোকপাত ‘বাংলার ঐতিহ্যবাহী 888sport live footballরীতি’ নামক 888sport liveের আলোচ্য বিষয়। পরবর্তী 888sport liveটি 888sport appsের প্রথম দশকের (১৯৭১-১৯৮০) নাট্যচর্চা বিষয়ক। এতে উঠে এসেছে এক দশকের অসংখ্য নাটকের দৃষ্টান্তসহ বার্তা। এ-সময়কার বিভিন্ন নাট্যদল ও নাট্যজনের অবদানও 888sport liveটিতে আলোচিত।

গ্রন্থের সর্বশেষ নাতিদীর্ঘ তথ্য ও তত্ত্ববহুল 888sport liveটির নাম ‘888sport live chat-888sport live footballে নন্দনভাবনা’। এতে নন্দনতত্ত্বের আভিধানিক ব্যাখ্যা থেকে অভ্যন্তরীণ উপাদানসমূহ নিয়ে পর্যালোচনা রয়েছে। এ অংশে অলংকারবাদী, রীতিবাদী, ধ্বনিবাদীসহ বিভিন্ন মত পোষণকারীদের কথা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখান থেকে জানা যায়, ভরত মুনির নাট্যশাস্ত্র দ্বারা নাট্যক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল পঞ্চম বেদ হিসেবে। রবীন্দ্রনাথের ভাবনাও এতে সমুজ্জ্বল।

গ্রন্থটিতে কিছু শব্দ এবং শুরুতেই ‘কী’ ও ‘কি’-এর ভুল ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। বিরামচিহ্নজনিত কিছু ভুলও লক্ষণীয়। ‘পালার মধ্যেই আধুনিক নাট্যতত্ত্বের সমস্ত গুণই রয়েছে’ – এখানে মধ্যেই ও গুণই শব্দদ্বয়ের কোনো একটিতে হ্রস ই-কার ব্যবহার করলেই বাক্যের নিরেট সৌন্দর্য বজায় থাকত। বইটিতে প্রায়ই এমন ত্রুটি আলোচনার পদের সুষম সৌন্দর্যকে মøান করে দিয়েছে। তবে লেখকের আলোচনার তুলনায় এই ভুলগুলো খুবই গৌণ। বইটির প্রচ্ছদ আরেকটু সুন্দর হতেই পারত।

পরিশেষে এটা অনস্বীকার্য যে, লেখক আবু সাঈদ তুলুর নাট্য সমালোচনার কথকতা বইটি নাট্যামোদী ছাড়াও যে-কোনো রসপিপাসু পাঠকের মনোযোগ দাবি করতে পারে।