একটা ছোট তেলাপোকাকে হত্যা করে – এই রাজধানীর বা দেশের বিচিত্ররকমের তথাকথিত আধুনিক + পশ্চিমা ধাঁচের কাছাকাছি যাওয়ার সম-অসম প্রতিযোগিতায় রত আপাত শিক্ষিত কিছু নাগরিক, যারা কেবল ছায়ার ফিতে + লুঙ্গির গিট দেওয়ার পর্ব থেকে ট্রাউজারে বেল্ট লাগানো বা চেইন টানা শিখছে + প্রায়শই অমার্জিত মেজাজমর্জিতে সিদ্ধ হওয়া নানান সমাজ + ২২-২৩ রকম শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ভালোমন্দ ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর – ভেতর শব্দটাকে নিম্নরেখায় চিহ্নিত করার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য তো আছেই – বিচার-বিবেচনায় নিজের ওপর মোটামুটি আস্থাশীল ও শান্ত স্বরে কথা বলা, এবং এক সাধারণ জীবনের সংস্কৃতিতে সহজ অভ্যাস অর্জন করা নাদিয়ার সকাল শুরু হলো।
ঘুম থেকে উঠে – ঘরের মধ্যে তখন আলো বেশ স্বচ্ছ, খাটের পাশে থাকা দুই ফিতেঅলা চামড়ার স্যান্ডেলে, স্পঞ্জ পরতে পারে না, অ্যালার্জি হয় – নাদিয়া ডান পা ঢোকাতে গিয়ে, পায়ের ও স্যান্ডেল নড়ে ওঠার শব্দতে তেলাপোকাটা দৌড়ে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
নাদিয়ার তেলাপোকাভীতি নেই। তার ও পোকাটার মাঝখানে দূরত্ব পাঁচ-ছয় ফুটের বেশি হবে না।
পা টিপে টিপে নাদিয়া দুই-তিন ফুট সামনে গেল। পোকাটা, নাদিয়ার মনে হলো, তাকে দেখছে ও অবহেলা করছে এবং মানুষ হিসেবে গণ্য করছে না। শুঁড় দুটি ডানে-বাঁয়ে, ওপরে-নিচে, এক সতর্কতা, সাবধান হওয়ার আচরণ, করছে নড়াচড়া। সে পা ঘষলো, খসখস শব্দে পোকাটা পালায়নি, নিজের জায়গায় নিশ্চুপ। এবং তার মনে হয়, তেলাপোকার চলাফেরা করা জায়গায় বিষমাখা চক ঘষে দিতে হবে।
কার্যকারণ নেই অথবা ছোট্ট পোকাটার চলে না যাওয়া, হয়তো পরজীবী পোকার অবহেলায় নাদিয়া অপমান বোধ করে। তার ভেতর জেগে ওঠে হত্যাবোধ।
সাবধানে, শব্দ যেন না হয়, হাতে নিল স্যান্ডেল। ছুড়ে মারে তেলাপোকার ওপর। লক্ষ্য ব্যর্থ হয়নি। দু-তিনবার কাতরে উল্টে গেল। পাগুলি ঊর্ধ্বমুখী। ছটফট করছে। শুঁড় দুটি শূন্যতার মধ্যে কোনো বস্তুর স্পর্শ খুঁজছে।
নাদিয়া ঘরে আলো জ্বালে। আরো স্পষ্টভাবে দেখতে চায় মরতে যাওয়া পোকাটার দশা। কাছে গিয়ে বসে। মাঝারি আকারের চোখের দৃষ্টি স্থির।
মৃত্যুর যন্ত্রণায় পোকাটা কাতরাচ্ছে। নিজের আচরণের জন্যে তার খারাপ লাগে। এবং প্রশ্ন করে, ‘হত্যা করার চিন্তাটা এলো কেন?’ বন্ধু হতে চাওয়া ডাক্তারকে কি জিজ্ঞেস করবে কারণ কী? পুরো ঘটনাটা শুনে ডাক্তার যদি হাসেন, নাদিয়ার খারাপ লাগবে।
পোকাটার পেট থেকে কালচে নীল পানি, হতে পারে অন্ত্র বা গু, বের হয়ে গেছে। নাকে আসে পচা পেশাবের গন্ধ।
রান্নাঘর থেকে প্লাস্টিকের হলুদ বেলচা এনে তেলাপোকাকে তুললো। ফেলে দিতে হবে। পেট, মাথা ও শরীর ফেটে বের হওয়া গু ও পানি মোছা দরকার। দরজা জানালা মোছার একটা কাপড় আনলো রান্নাঘর থেকে। পরিষ্কার করার সময় নাদিয়ার গা ঘিনঘিন করছিল।
দুই
ফাল্গুনের শেষ। সকালে বাতাসের তাপ সহনীয়।
পাশের তিনতলা ফ্ল্যাটের বারান্দায় খাঁচাবন্দি ময়না, তিন শব্দের একটা কথা শিখেছে, ‘আমার নাম মনিরা।’ প্রায় প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে ওই কথা বলে। সম্ভবত মনিরা তখন সামনে আসে। নাদিয়া যখন শোনে, ‘মনিরা’র জায়গায় নিজের নাম শ্রবণে বসিয়ে দেয়।
দ্রুত নাস্তা খেয়ে নিল। ৯টার মধ্যে নাদিয়াকে হাসপাতালে পৌঁছাতে হবে।
তখনই, রেকর্ড করা, হ্যান্ডমাইকে বাজতে থাকা একটা মরমি সংগীত, সুর ও গলা ভালো, হতে পারে কিছু টাকা খরচ করে কোনো কণ্ঠ দিয়ে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছে, তার কানে আসে : ‘ডানে মাটি, বামে মাটি, মাটি হবে ঠিকানা/ কবরেতে যাইতে হবে আসল মাটির ঠিকানা/ টাকা পয়সা কিছুই রবে না …।’ শেষ হতেই করুণ কণ্ঠে বেজে ওঠে আবেদন, ‘মা বোন সাহায্য করেন। আমি অসহায়। আমি প্রতিবন্ধী।’
নাদিয়া জানালার সামনে যায়। গলির রাস্তায় ভিখারি, কাঁধে ময়লা ঝোলা, দুই বগলের নিচে দুটি ক্র্যাচ, ডান পা ভালো। প্রায় সারাদিন হাঁটে। হাঁটু ও পেশিতে বল আছে। বাঁ পা ঝুলন্ত, শুকনো, পোলিও-আক্রান্ত হতে পারে, হাঁটুর ওপর পর্যন্ত পাঞ্জাবির ঝুল, ঝুল বড় হলে করুণা জাগানো শুকনো পা-টা দেখা যেত না, তাকাচ্ছে বিভিন্ন বাড়ির বারান্দা ও জানালার দিকে। আবার বেজে ওঠে ওই সংগীত এবং আবেদন।
কোনো বাড়ির বারান্দা থেকে, সংগীতের প্রভাবে, মৃত্যুর ভয়ে, সোওয়াব পাবার আশায় তার দিকে জিন্স ও গেঞ্জি পরা তরুণী, বাম হাতে স্মার্টফোন, টাকা ছুড়ে দিয়েই ফোনে কথা বলা শুরু করলো।
‘নিশ্চয়ই ওই ভিখারি প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে এবং লোকজনকে শুনতে হচ্ছে ওই মরমি সংগীত; কিন্তু হ্যান্ডমাইকের ব্যাটারিতে খরচ তো কম নয়।’ চিন্তাটা মাথার কোষে কোষে যখন ঘুরছিল, নাদিয়া দেখলো, ভিখারি পকেট থেকে বের করল স্মার্টফোন। কল এসেছে। মুখে হাসি।
রিংটোন নয়। টেলিকম কোম্পানি থেকে নাদিয়ার ফোনে অফার এসেছে, সারা দিন আসছে। তার শব্দ।
নাদিয়া কখনো কখনো ইউটিউবে রবীন্দ্রসংগীত শোনে। হয়তো বাজছে : ‘অকালে অকারণে পড়লো যখন যাক/ আমি তখন ছিলেম আসনপাতি/ বিশ্ব তখন তারার আলোয়’ পর্যন্ত আসতেই প্রায় হইচই করে, কারো আয়োজনের ভেতর জবরদখল নিতে হবে তো, ঢুকে গেল ফ্রিজের বিজ্ঞাপন ‘বাজারের সেরা, বিদ্যুৎ খরচ অল্প, সবকিছু ফ্রেশ রাখে।’ বিজ্ঞাপনটা শেষ হতেই বাজলো ‘দাঁড়ায়ে নির্বাক/ ধরায় তখন তিমির গহন রাতি’। পরের গান, ‘ও জোনাকী কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ/ আঁধার সাঁঝে বনের মাঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছ’ পর্যন্ত আসতেই আবার বিজ্ঞাপন, ‘লিচুর মধু, কালি জিরার খাঁটি মধু, ডিসকাউন্ট দিচ্ছি।’ নাদিয়া স্কিপ করে, শুরু হয়, ‘তুমি নও তো সূর্য, নও তো চন্দ্র …।’
নাদিয়ার মনে পড়ে, ওর এক বান্ধবী বলেছিল, তার বাসায় একজন ভিক্ষে নিতে আসে, ‘মা সাহায্য করেন’, শুনে দোতলার বারান্দায়, হাতে দশ টাকা, সে যায়। নিচে দাঁড়ানো লোকটা বান্ধবীর গ্রামের বদি চাচা। বান্ধবীকে বদি চাচা দেখেননি। বান্ধবী নিচে আসে। দাঁড়ায় চাচার সামনে। মাথা নিচু করে বলেছিলেন, ‘গিরামের কাউরে কইয়ো না। সব্বাই জানে আমি 888sport appয় চাকরি করি।’ বান্ধবী গ্রামের কাউকে বলেনি, বদি চাচার চাকরির নাম ভিক্ষা।
তিন
অভিজ্ঞতার চড়াই-উতরাই নাদিয়াকে শিখিয়েছে, সহজ, সরল, কারো সাতে-পাঁচে না-থাকা জীবনে মাঝে মধ্যে, কোনো পূর্ব আলামত ছাড়াই, মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে, কখনো-বা না দেখা ঘটনার কথা শোনার ইচ্ছে না হলেও, অন্যের মুখে শুনতে হয়।
যেমন, কদিন আগে ছুটির দিনে, নাদিয়া ছোট্ট বারান্দায় কাপড় মেলে দিচ্ছিল, তখন সকাল, সামনের রাস্তায় যাতায়াত করছিল মানুষ, সবার সামনে একজন তরুণ একজন তরুণকে চাপাতি দিয়ে কোপালো। রাস্তার ধুলো আর কালো পিচ ভিজে গেল রক্তে। মানুষেরা তাকিয়ে, যেন দেখেনি, ভাব নির্বিকার, ধীরে ধীরে হেঁটে চলে গেল। চোখেমুখে নিশ্চয়ই ছিল আতঙ্ক।
নাদিয়া হতভম্ব। শরীর, দৃষ্টি, দুটো পা এক অচেনা ঘোরের মধ্যে পড়ে হয়ে যায় স্থবির। বাতাস এলো। ভেজা কাপড়ের ঝাপটা লাগলো মুখে।
সম্বিত ফিরে আসার পর টয়লেটে গিয়ে চোখেমুখে পানি দিলো নাদিয়া। তখন মনে পড়ে, গত বছরের মধ্য আগস্টে সন্ধ্যার দিকে যাত্রাবাড়ীতে এক তরুণ আর একজনকে সবার সামনে চাপাতি দিয়ে কোপানোর দৃশ্য। নাদিয়াকে এক বন্ধু ওই ভিডিও পাঠিয়ে লিখেছিল, ‘দেখেই মুছে দিবি।’ ‘প্রতিহিংসা কতদিন চলবে?’ নাদিয়ার উত্তর। ‘মানুষ যতদিন সভ্য না হবে ততদিন’, বান্ধবীর টেক্সট।
চার
কোনো এক বেসরকারি হাসপাতালের – নামের সঙ্গে আশাসঞ্চারী ‘লাইফ’ও আছে, আমরা জানি অসুস্থ জীবনকে সুস্থ জীবন দেওয়ার একটা আশা হাসপাতালের নীতিচেষ্টার মধ্যে পড়ে – গাইনি বিভাগের নার্স নাদিয়া। বয়স চব্বিশ-পঁচিশ হবে। উচ্চতা পাঁচ ফুটের মতো। গায়ের রং উজ্জ¦ল শ্যামলা। এই দেশের বেশিরভাগ মানুষের গায়ের রং তামাটে। বেড়াতে যাওয়ার সময় নাদিয়া শাড়ি ও টিপ পরতো।
হাসপাতালের একজন বিবাহিত ডাক্তার নাদিয়ার সঙ্গ পেতে আগ্রহী। তার আগ্রহকে নাদিয়ার ভালো লাগে। কিন্তু নিজের ভব্যতার মাত্রা ঠিক রাখা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ডাক্তার ভদ্র এবং রুচিবান। কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে কথা বলা এক প্রেম-না-পাওয়া মানুষ। বউয়ের চাহিদার অত্যাচারে তার জীবন থেকে সহজ যাপন চলে গেছে। 888sport promo codeর অধিকারে বিশ^াসী। তার দুঃখের ও কষ্টের কথা নাদিয়া নিজের অর্জিত ধৈর্যকে ব্যবহার করে শোনে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী যখন নাদিয়া, একজন বুড়ো শিক্ষক তাদের বলতেন, ‘ধৈরযো ধইরা শিখবি, ধৈরযো নিয়া শুনবি, ধৈরযো নিয়া কাজ করবি। ধৈরযো খুব দামি স্বভাব।’
নাদিয়ার জন্য প্রেমের ভারবহ দায়িত্ব বহন করা একটা কঠিন কাজ। সারা দিন মরুভূমির রৌদ্রে বসে বালি খোঁড়া, একসময় তল থেকে পানি উঠবে, এইরকম আর কি! প্রেম শরীর ও মনকে এলোমেলো করে দেয়। যাপনের স্থিতিতে অনেক রকম আঁকাবাঁকা বিচিত্র রঙের আঁচড় পড়ে।
ডাক্তারকে তার চিন্তার ও আগামী জীবনের অবস্থান বারবার বুঝিয়ে দেওয়ার পরও ডাক্তার বারবার তাকে বলেন, ‘অন্য কোনো ইলিসিট সম্পর্ক নয়, আমরা খুব ভালো বন্ধু হবো। শুধু বন্ধুত্ব। হাসপাতাল থেকে কোনো কোনোদিন ছায়ানটে যাবো রবীন্দ্রসংগীত শুনতে। অথবা বলধা গার্ডেনে অনেক রকম গাছ দেখতে। চারদিকে মানবিক মানুষ কমে যাচ্ছে। আপনি খুব মানবিক।’
নাদিয়া বলেনি, ‘আপনার কথার মধ্যে একটা ফাঁদ আছে।’
প্রেম করে বিয়ে করা আশপাশের আত্মীয়, আত্মীয়া ও বান্ধবীদের দুর্দশা দেখে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রেম তার জন্যে হবে একটা আত্মঘাতী কাজ। প্রেমের গল্প শুনতে বা পড়তে তার ভালো লাগে। একটা বিশেষ রঙের, যে-রং তৈরি হয় অনেক রঙের মিশ্রণে, যা প্রায় সবকিছুকে সুন্দর দেখাতে চেষ্টা করে – তাকে সঙ্গ দেয়। ‘কিছু ব্যক্তিগত রোমান্টিকতা কারো সঙ্গে ভাগ করা যায় না।’
নাদিয়া জানে : মন ও শরীরের চাহিদাকে অতিক্রম করার জন্য জীবনের চারপাশে উপভোগ করার মতো – এই দেশে বছর বিশেক আগেও ছিল পরিমাণে সামান্য – এখন অনেক কিছু আছে। স্মার্টফোন হাতে থাকা মানে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া, বা ঘটতে যাবে বা একদা ঘটেছিল – স্ক্রিনে তর্জনী স্পর্শ করা মাত্র সব জানা যাবে, দেখাও যাবে। ‘তিন কোটি বছর আগেকার ফসিল’, এরকম তথ্যে নাদিয়ার সন্দেহ হয়।
নাদিয়া রাতে স্মার্টফোন খুলে সময়কে তার সঙ্গী করে। বিভিন্ন রকম রিল দেখে। তার সবচেয়ে ভালো লাগে, পাখিদের জীবনযাপন এবং সমুদ্রের তলদেশে শত শত রকমের রঙিন মাছের সাঁতার। নাদিয়া সাঁতার জানে।
এক গবেষণা রিপোর্টে পড়া জরিপ-তথ্যকে নাদিয়া সত্য মনে করে। মানুষের জীবনযাপনের মধ্যে জৈবিক চাহিদার অংশ মাত্র ১৯ ভাগ। বাকি ৮১ ভাগের মধ্যে আছে অনেক রকম আনন্দদায়ী কাজকর্ম। ভালো কিছুর সঙ্গে সঙ্গ দেওয়া, সৌন্দর্যকে উপভোগ করা, বই পড়া, ভালো ছবি দেখা, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, কারো ক্ষতি না করা ইত্যাদি। শরীর পুরনো হয় কিন্তু ওইসব কাজ বেঁচে থাকাকে পুরনো হতে দেয় না।
পাঁচ
যত ঘটনা, দুর্ঘটনা, অত্যাচার বিশেষ করে মেয়েরা যখন ডাক্তারকে বলে, তার হিস্যা করতে গিয়ে 888sport appর নয়াটোলার মেয়ে নাদিয়া বুঝে গেছে, নিজের জীবনকে পুরুষের ডমিনেশনের কাছে বিসর্জন দিয়ে, যে বাঁচাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিশ্রম করতে হয়, তার নাম দাসত্ব। মেয়েদের নিজস্ব অর্জনের যুদ্ধ পুরুষরা কখনো করে দিতে পারে না, কোনো একটা কমপ্লেক্সের কারণে দিতেও চায় না।
নাদিয়া কলেজের লাইব্রেরি থেকে রোকেয়া রচনাবলী নিয়ে পড়েছিল। 888sport promo code স্বাধীনতা বা অধিকারের চিন্তা-চেতনা এবং নিজের অস্তিÍত্ব নিয়ে কতখানি পূর্ণ মানুষ থাকা যায় – তার হিসাবনিকাশ তাকে শিখিয়েছিলেন রোকেয়া। রোকেয়ার একটা ছবি, চোখ দুটো সামনে সবকিছু দেখছে, তার ঘরের দেয়ালে স্বচ্ছ কাচের ভেতর।
চেম্বারে আসা 888sport promo codeদের কাছে নাদিয়া যখন শোনে একটা মেয়ে, বা বোন, বা বান্ধবী তাদের স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে, যাকে বলে ঘর ভাঙা, যা ইচ্ছে তাই করে, করার পেছনে যতটা না মানসিক প্রেম, শারীরিক চাওয়া তার থেকে অনেক বেশি, তখন তার মনে হয়, পুরুষরাও একইরকম।
একটা ঘটনা নাদিয়া শুনেছিল, বিশ্বাস করতে পারেনি। মনে হয়েছিল, হতেও পারে। মা মেয়ের স্তন বড় করার জন্যে মেয়ের বয়স যখন সাত-আট বছর, দুই স্তনে মাসাজ করতো। কারণ, নিজের স্তন ছোট ছিল বলে তাকে মাঝেমধ্যেই স্বামী অপমান করতো। ‘888sport promo codeর মুক্তি কোথায়?’
কখনো কখনো কোনো কোনো 888sport promo codeকে নাদিয়া বলেছে, ‘আপনি কেন আপনার স্বামীর ব্যক্তিত্ব আর নিজেদের ব্যক্তিগত কথা হাসতে হাসতে বোন, আত্মীয় ও বান্ধবীকে বলেছেন?’ ‘জানতে চেয়েছিল তো?’ ‘সব ব্যক্তিগত কথা সবাইকে বলতে নেই।’
বাপ-মা অনেকবার ‘বিয়ে করবি না?’ জানতে চাইলে নাদিয়া তাদের বুঝিয়েছে, ‘আমি খুব ভালো আছি। একজন মানুষকে বাড়িতে এনে নতুন আনন্দ হবে? সুখ হবে?’,
বাপ-মা তার উত্তর শুনে, দুটি মানুষ তো গত শতাব্দীর, পরস্পরের মুখ দেখেছেন, চোখমুখে ছিল অবাকের ধাক্কা। এই সময়ের ছেলেমেয়েদের মতিগতি, মতি মানে মত, গতি মানে চলাফেরা – বোঝা মুশকিল।
মাঝেমধ্যে কিছু কিছু কথা কানে আসে, ‘ছেলেটি ও মেয়েটি খুব ভালো বন্ধু। মাঝেমধ্যেই বিছানায় সময় কাটায়’, ‘888sport appতে লিভ টুগেদার বাড়ছে’, ‘পশ্চিমা দেশে লিভ অ্যাপার্ট টুগেদার শুরু হয়েছে।’
ছয়
অন্ধকার মানুষের মনের ওপর কী প্রভাব ফেলে এবং রাত কত রহস্য ধারণ করে – এই বিষয়ের ওপর ইউটিউবে একাধিক ব্যাখ্যা শুনে ও ছবি দেখে নাদিয়ার একটা রাত ভোর হয়েছিল। এবং পরপর কয়েকটা রাত ঘর অন্ধকার করে উপভোগ করেছিল অন্ধকারের সৌন্দর্য। একটা ব্যাখ্যা তাকে কয়েকদিন তাড়াতে থাকে, অন্ধকার মানুষের মনে হত্যা করার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
চেম্বারের সামনে বসে রোগীর সঙ্গে আসা লোকদের অনেক কথাবার্তা নাদিয়ার এবং তার সহকর্মীদের কানে আসে। ইচ্ছে হলেও তার ও তার সহকর্মীরা কথায় যোগ দিতে পারে না। যদিও তাদের ইচ্ছে করে দু-একটা মতামত দিতে।
‘দেশে খুনখারাবি বেড়ে যাচ্ছে’,
‘বাড়ছে ধর্ষণ’,
‘যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় নির্বিকারভাবে শিশু হত্যা চলছে’,
‘ইসরায়েলকে বিশ্বাস করা মানে শয়তানকে বিশ্বাস করা।’
‘গাজায় ধ্বংসের মধ্যে একজন করুণ স্বরে আজান দিচ্ছে।’
কথাগুলো ভেতরে যাওয়ার কল পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকা অন্তঃসত্ত্বা 888sport promo code, অথবা নিয়মিত মাসিক না হওয়া তরুণীর অথবা 888sport app অসুখে আক্রান্ত 888sport promo codeদের, যে-অসুখগুলি কেবল 888sport promo codeদেরই হয়, – কানে আসতে থাকে। এবং একসময় কথার কোনো সমাধান খুঁজে না পেয়ে তাদের সঙ্গী ডেস্কে গিয়ে খোঁজ নেয়, ‘সিরিয়াল কত যাচ্ছে?’
নাদিয়ার চিন্তার ভেতর ‘ধর্ষণ’ ও ‘হত্যা’ কথা দুটি ছবি হয়ে ঘুরতে থাকে।
সাত
হাসপাতালে ডিউটি শেষ হওয়ার আগে, কাজও কম ছিল, ডাক্তার আপাকে বলে, বিকালের দিকে নয়াটোলায় ভাড়া করা তিনতলার উত্তরমুখী ৭০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে আসার আগে – ডিম, আলু, কাঁচামরিচ, সাবান, স্যানিটারি ন্যাপকিন, সাবান ও মধু, মধু বুড়ো বাবার জন্য, তার ডায়াবেটিস নেই, মায়ের জন্য কিছু দেশি ফল, তিনি বিদেশি ফল পছন্দ করেন না – কিনে বাসার কাছে এসে গেটের ডানদিকে একটা ফাঁকা জায়গায়, যেখানে আশপাশের বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট থেকে সবরকমের আবর্জনা (কিছু কিছু আবর্জনার নাম লেখাই যাবে না) প্রতিদিন ভদ্রলোক (?), ভদ্রমহিলা (?) ও বাসায় কাজ করা মানুষটা জানালা বা বারান্দা থেকে নির্বিকার ঢঙে ফেলছেন, – নাদিয়ার চোখের সামনে পড়লো একটা মৃত বেড়ালকে নিয়ে ব্যস্ত দুটো কাক। একটু দূরে বসে দুটো কুকুর, একটার চামড়ার রং সাদাকালো, অন্যটার খয়েরি ও সাদা, তখন ডান পা দিয়ে সাদাকালো কুকুরটা গলা চুলকাচ্ছিল এবং দেখছিল – দৃষ্টি নির্বিকার – কাকের ব্যস্ততা। খয়েরি কুকুরটা আশপাশে তাকাচ্ছিল। হতে পারে, তখন কুকুর দুটোর খিদে ছিল না। হতে পারে, পথের বেড়ালটা ছিল তাদের চেনা। হতে পারে, বেড়ালের মাংস তাদের অপছন্দ।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে কজন তরুণ, হতে পারে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, কাপড়চোপর ফ্যাশনসম্মত, প্রত্যেকের চোখ নিজ নিজ মোবাইলে, কেউ কেউ টেক্সট বা কোনো ছবি দেখে হাসছে, হাসি শুনে পাশের বন্ধু ‘হাসলি ক্যান? কার ছবি?’ প্রশ্নে মুদ্রণ-অযোগ্য ভাষায় বন্ধুকে গালি দিলো। নাদিয়ার মনে হয়, ‘কুকুর দুটি তরুণদের থেকে সভ্য। বেড়ালটাকে কেউ মেরে এখানে ফেললো নাকি?’
বাসায় এসে সদাইগুলি, কিছু সদাই ছিল পলিব্যাগে, কিছু কাগজের ঠোঙায়। একটা ঠোঙার যেখানে জোড়া লাগোনো সেখানে ছাপানো একটা বাক্যে চোখ পড়ে নাদিয়ার : ‘অন্তরে আলো কমিয়া আসিতেছে।’ জোড়া খুললে ‘অন্তরে আলো’ এবং ‘কমিয়া আসিতেছে’ আলাদা হয়ে যাবে। নাদিয়া খুব যত্নে জোড়া খুললো, আশা এই যে, দেখবে ঠোঙার ভেতরে আরো কথা লেখা আছে কি না। নেই। কী ভেবে নাদিয়া খোলা জোড়া আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখে।
আট
তিনদিন আগে নাদিয়ার হাতে, একটা কাপ, একটা গ্লাস ও একটা থালা ভেঙে গেছে। সন্ধ্যায় যখন চিনামাটির থালাটা ভেঙে গেল, থালার ওপর মুদ্রিত লাল-হলুদ-খয়েরি ফুল ভেঙে, টুকরো হয়ে ছিটকে পড়লো মেঝেতে, নাদিয়া তখন নিজেকে প্রশ্ন করে, ‘আমার হাতে এত জিনিস ভাঙছে কেন? মনোযোগে ঝামেলা হচ্ছে কেন? ইমব্যালান্সড্ হয়ে যাচ্ছি নাকি? বুড়ো শিক্ষকের শেখানো ধৈর্য কমে যাচ্ছে?’
এবং চতুর্থ দিন সকালে চায়ের কাপের হাতল বেশ জোরে ধরলো, যেন হাত থেকে পড়ে না যায়, কিন্তু কাপে কোনো আঘাত লাগা ছাড়াই হাতল থেকে আলগা হয়ে কাপটা পড়ে গেল মেঝেতে। ‘ফাটল কি আগেই ধরেছিল, আমি দেখিনি।’
এবং অর্ধচন্দ্রাকৃতি নীল হাতলটা হাতের মাঝখানে রেখে তার মনে হলো বাঁকা চাঁদ। অনেকদিন আগে গ্রামে, তখন বয়স হবে নয় বা দশ, এক ভোরে দেখেছিল বাঁকা চাঁদ। এবং কোনো চিন্তা না করে, হয়তো 888sport sign up bonus তখন তাকে আনন্দের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে, মুঠো শক্ত করে ধরলো চাঁদকে, ফল : করতল হলো রক্তাক্ত।
হাতে রক্ত দেখে সম্বিত কেঁপে উঠতেই টেবিল থেকে কাচের একটা গ্লাস নিয়ে ছুড়ে মারলো মেঝের ওপর। ‘কি ভাঙলি?’, পাশের ঘর থেকে গলায় কাশি জমা বাপের ঘড়ঘড় প্রশ্ন। ‘না গ্লাসটা ভেঙে গেল।’ মা এসে মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে ঝাড়ু আর বেলচা আনতে গেলেন। কেন যে মেয়েটা খিটখিটে আর অস্থির হয়ে যাচ্ছে, মা তার হিসাব পাচ্ছেন না।
পঞ্চম দিন সকালে ওয়াশরুমে ঢোকার আগে ডান দিকের দেয়ালে চোখ পড়ে। ‘ফাটলো কখন? রাতে ভূমিকম্প হলো নাকি?’ বলে দুই চোখ ডলে। বিভ্রম। দেয়ালের ফাটল দেখা জায়গায় হাত বোলায়। এবং হাসে। নিজেকে সন্দেহ করে। ‘চিন্তার মধ্যে এসব কী হচ্ছে?’
‘বেড়ালের মৃত্যু কি স্বাভাবিক ছিল? নাকি কেউ মেরেছে? আমি কেন তেলাপোকাকে মারলাম? হত্যা করা কি প্রতিদিনের রুটিন হয়ে যাচ্ছে?’ চারটি প্রশ্নের সঙ্গে আরো একটা হত্যা : দুদিন আগে এক অর্ধধনীর মেয়ের গোপনে সিজারিয়ান হলো। লাভ চাইল্ড। শিশুটাকে কোনো একটা বিনে ফেলে দেবে নিশ্চয়ই। ফেলার আগে মুখে দেওয়া হবে বিষ।
নয়
গত কয়েক মাস থেকে ক্রমাগত তাকে শুনতে হচ্ছে, কেবল তাকেই কেন? এই দেশের সব মানুষকে শুনতে হচ্ছে – খুন বা হত্যা যা-ই বলা হোক না কেন – খবর। পলিটিক্যাল খুন ছাড়াও নানা রকম কারণে, কখনো-বা তুচ্ছ হিসাবে-নিকাশে এবং অকারণে মানুষ মানুষকে খুন করছে। মনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো কাজ করেই। ফলে নাদিয়া কি ওই তেলাপোকাটাকে হত্যা করলো?
গত সপ্তাহে মাগুরায় ঘটে যাওয়া একটা ধর্ষণ, শিশুর নাম আসিয়া, সে বেড়াতে গিয়েছিল বোনের বাড়িতে। রাতে দুলাভাই, বোনের শ্বশুর ও ভাসুর তার নিম্নাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে ধর্ষণ করে। ‘ওকে তো পশুরা হত্যা করেছে, যদি বাঁচে, ওই বাঁচা মৃত্যুর থেকে কষ্টকর। মেয়েটা পাগল হয়ে যেতে পারে। আর যদি না হয়, এক ট্রমা তাকে মৃত্যু পর্যন্ত তাড়া করবে। আচ্ছা বনের পশুরা কি ধর্ষণ করে?’
দশ
নাদিয়ার মামাতো বোন শায়লা 888sport appর আলিয়ঁসে ফরাসি শেখে। একদিন গল্প করতে করতে নাদিয়াকে শায়লা বলেছিল, ‘ফরাসি দুটো শব্দ দেজা ভু ইন্টারেস্টিং। ইংরেজিতে অর্থটা এমন, অলরেডি সিন। সাইক্লিক অর্ডার কি জানিস – এ প্লাস বি, বি প্লাস সি, সি প্লাস ডি, ডি প্লাস ই, এরকম আর কি, তার অর্থ হচ্ছে, সবকিছু একটা সময়ের ব্যবধানে ঘুরে ঘুরে আমাদের সামনে আসছে, অর্থাৎ নতুন বলতে কিছু নেই।’
নাদিয়ার চোখে প্রতিদিন আশপাশে যা যা পড়ছে, ঘটছে, সবই কি ‘অলরেডি সিন?’ সব দৃশ্য যা সবাই প্রতিনিয়ত দেখছে তা কি শুধুই অন্য ফর্মে, সামান্য বদলে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে? পুনরাবৃত্তির হত্যাও আছে।
‘আমাকে আমার প্রতিপক্ষ এবং অন্যদের শত্রু মনে হচ্ছে কেন?’
এগারো
দুজনের সামনে ছিল চা। ডাক্তার বললেন, ‘কিছু হয়েছে? আপনাকে অন্যমনস্ক লাগছে। চিনি নিলেন না।’
‘না আমি ঠিক আছি। বাবার কাশিটা বেড়েছে। হালকা জ¦র। ছাড়ছে না।’ চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, ‘ক’দিন থেকে ভাবছি একটা কথা আপনাকে বলা দরকার।’
ডাক্তারের চোখেমুখে প্রসন্ন আলো পড়ে। ভাবনা আনন্দে বিলাসপূর্ণ : ও কি সিদ্ধান্তে এসেছে? আমার বন্ধু হবে?
‘বলুন। কি বলবেন?’ ডাক্তারের আশাভরা দৃষ্টি নাদিয়ার মুখের ওপর।
কিছুদিন থেকে একটা অস্থিরতা, ভয়, যখনই সে একা থাকছে, তাড়াচ্ছে তাকে। কোনো কোনো রাতে স্বপ্নেও দেখছে কয়টা হাত মানুষকে কোপাচ্ছে। একটা নিরীহ তেলাপোকাকে কেন হত্যা করলো? হাত থেকে জিনিস পড়ে যাচ্ছে। একটা গ্লাস ভাঙলো। ছুরি বা রিভলভারের ছবি মনে এলে ইচ্ছে করে তার কাছে থাকা দরকার। হত্যা করতে ইচ্ছে করে।
সব জেনে ডাক্তার হতাশ হলেন। নিজেকে সংযত করে, একটা স্বাভাবিক ভাব এনে বললেন, ‘সিরিয়াসলি বলছেন?’
নাদিয়া মাথা নাড়ে।
‘আপনাকে 888sport appর বেস্ট সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যাবো।’
দুজনের চা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।
সিদ্ধান্ত হলো, নিজেদের হাসপাতালের সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে যাবে না।
বারো
সাইক্রিয়াটিস্টের বুকের ওপর ঝুলছে, একটু মোটা নীলচে সুতোতে বাঁধা কালো ফ্রেমের পুরু কাচের চশমা। চোখ হলুদ হলুদ। জন্ডিস হলে যেমন হয়। চোখে তার পেশার অভিজ্ঞতার ছাপ। দুই চোয়ালের হাড় উঁচু। ভদ্রলোকের বয়স হয়েছে। চুলে কলপ দেন।
নাদিয়া ও ডাক্তার চেম্বারে ঢুকতেই, ‘আসুন। ভালো?’ মুখে ছিল হাসি। হাসি শেষ হওয়ার আগেই চশমা নাকের সামান্য উঁচু হাড়ের ওপর যত্নে বসিয়ে দিলেন। তিনজনই পরস্পরের পরিচিত।
ডান দেয়ালে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ছবি। দুই পাশে তাঁর উক্তি, ‘অব্যক্ত আবেগ কখনোই শেষ হয়ে যায় না। সেগুলিকে জীবন্ত কবর দেওয়া যায় মাত্র এবং সময়ের সঙ্গে সেগুলি আরো ভয়ঙ্কররূপে প্রকাশ পায়।’ এবং ‘প্রত্যেক স্বাভাবিক মানুষই আসলে আংশিক ভাবে স্বাভাবিক।’
‘জি¦ ভালো আছি, আপনি?’
মাথা দুলিয়ে বোঝালেন তিনিও ভালো আছেন।
নাদিয়া ফ্রয়েডের দুটি উক্তি পড়লো। সাইক্রিয়াটিস্টের চোখ এড়ায়নি।
‘তুমি তো নাদিয়ার কথাই বলেছিলে?’
‘জি স্যার।’
‘নাদিয়া তুমি কি ওর সামনে বলবে, নাকি ও বাইরে যাবে।’
‘অসুবিধে নেই।’
কিছুদিন থেকে একটা ভয় নাদিয়াকে তাড়া করছে। হত্যা করার প্রবণতা তাকে ছাড় দিচ্ছে না। এবং কখনো কখনো সে মনে করছে, তার হাতে একটা ছুরি অথবা ধারালো একটা কিছু। আসলে হাতে কিছু নেই। নিজের চিন্তার সিকোয়েন্স ইমব্যালান্সড হয়ে যাচ্ছে।
‘ছোটকালে, বয়স মনে করো তিন বা চারের মতো, তোমার সামনে কাউকে হত্যা করতে দেখেছিলে?’ সাইক্রিয়াটিস্টের প্রশ্ন।
নাদিয়া গ্রামের বাড়ির পাশে জমি নিয়ে মারামারি দেখেছিল। একজন দা দিয়ে গলার ওপর কোপ মেরেছিল একজনকে। মাথাটা ধানকাটা জমির ওপর ছিটকে পড়ে।
‘আরো কোনো হত্যা?’
ক’দিন আগে নয়াটোলার বাসার সামনে দেখেছিল একজন তরুণ একজন তরুণকে চাপাতি দিয়ে কোপাচ্ছিল। এবং দেখেছিল বান্ধবীর পাঠানো যাত্রাবাড়ীতে একজনকে কোপানোর ভিডিও।
সাইক্রিয়াটিস্টের কণ্ঠস্বর অমায়িক। এক বিশেষ আস্থাশীল বন্ধু যেন। আরো কয়েকটা বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। প্রতিটি প্রশ্ন করার সময় নাদিয়া খেয়াল করেছিল, সাইক্রিয়াটিস্টের চোখ এমনভাবে তার চোখ ও মুখ দেখছিল যেন চোখের ভেতরে না-বলা সব কথা এবং মুখের এক্সপ্রেশনের এক চুলও প্রশ্নকর্তার চোখ না এড়ায়।
ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে কি না, অন্য কোনো দুশ্চিন্তা আছে কি না, কী কী করতে ভালো লাগে, নার্সের চাকরি কতদিন হলো, কারো সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল কি না, থাকলেও বিট্রে করেছে কি?
প্রেসক্রিপশনে লিখলেন : হোমিসাইডাল ইনটেনশন। এবং কয়েকটা ওষুধের নাম : Tab, Zolium 0.5mg; (1 + 0 + 0); Tab. Aripra 10-15mg (0 + 1 + 0); Tab. Filfresh 3mg (0 + 0 + 1); Cap. Diliner DR 20-60mg (0 + 0 + 1)।
মেনে চলতে হবে যেসব পরামর্শ, কথাটির ওপর হলুদ মার্কার দিয়ে মার্ক করলেন : তিন মাস খবরের কাগজ পড়া চলবে না। টিভিতে কোনো খবর দেখা চলবে না। আনন্দের ছবি দেখতে হবে। খুনখারাবির ছবি নয়। শুনতে হবে ভালো গান। দুঃখ ও কষ্টের গান নয়। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে রূপকথার বই পড়া যেতে পারে। অফিসে বা বাসায় হত্যা, ধর্ষণ নিয়ে আলোচনা করা এবং শোনাও যাবে না। যেমন গাজায় শিশু, 888sport promo code এবং সাধারণ জনগণকে হত্যাকাণ্ড, অ্যাভোয়েড করতে হবে।
সাইক্রিয়াটিস্ট বললেন, ‘নাদিয়া তুমি বাইরে গিয়ে একটু বসো।’
নাদিয়া ফ্রয়েডের দুটো উক্তির দিকে একবার তাকিয়ে, চেম্বারে ঢুকেই তো পড়ে ছিল, চেয়ার থেকে ওঠে, চেয়ার ঠিক করে রাখার শব্দ হলো, হেঁটে যাওয়ার শব্দ হলো না, বাইরে গেল।
‘ডাক্তার, বুঝেছো নাদিয়ার কী হয়েছে?’
‘বুঝেছি। তবে যখন গাইনিতে অপারেশন হবে তখন তো ছুরি থাকবে।’
‘তুমি ওর জন্য দুই সপ্তাহের ছুটির ব্যবস্থা করবে। হাসপাতালে হামিদার সঙ্গে কাজ করে তো। ও আমার ক্লাসমেট ছিল। আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম। ওকে আমার কথা বলবে।’
‘আচ্ছা।’
তেরো
সাইক্রিয়াটিস্ট, কণ্ঠে ভীতি, স্বর নিচু, যেন এক গোপন কথা, বললেন, ‘গত এক সপ্তাহে এইরকম রোগী, একই প্রবণতা, নানা বয়সী, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছে ৪০ জন। প্রতিদিনই 888sport free bet বাড়ছে। একটা বিপরীত অবস্থার অবস্থান আমাদের অজান্তে আমাদের মধ্যে ভিত গাড়ছে।’
চৌদ্দ
রাত ৯টা। নাদিয়া ও ডাক্তার কিছুক্ষণ আগে সাইক্রিয়াটিস্টের ওখান থেকে বের হয়ে এসে মগবাজারের জ্যামে আধ ঘণ্টা, চাকাগুলির অবস্থা অচল, গাড়ির ভেতর বসে আছে। ডাক্তার নাদিয়াকে নয়াটোলায় পৌঁছে দেবেন।
আসার সময় নাদিয়া জানতে চেয়েছিল, ‘আমার কী হয়েছে? আপনাকে সাইক্রিয়াটিস্ট কী বললেন?’
‘কিছুই হয়নি। বললেন এক ধরনের থিংকিং ডিজঅর্ডার (বললেন না, ডিলিনার ডিআর ট্যাবলেট সাধারণত দেওয়া হয় মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার হলে), কখনো কখনো এরকম হয়, আমারও হয়, চিন্তা বিভিন্ন কারণে বা ঘটনায় বাধা পায়, ওষুধ দিয়েছেন, খাবেন, বিশ্রাম নিতে হবে, চারদিকে যা ঘটছে তা নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো। সব ঠিক হয়ে যাবে।’ নাদিয়ার বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, ‘আমি তো চারদিকের ভেতরে একজন। চারদিকের মধ্যে থেকে পালাবো কীভাবে?’
নাদিয়া বাসায় গিয়ে গুগলে দেখবে ওষুধগুলি কেন খেতে হয়।
‘দেখে আসি জ্যাম কেন?’ বলে, নাদিয়াকে ‘না যাওয়ার দরকার কী?’ বলার সুযোগ না দিয়ে ডাক্তার গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাতে এসে, সেখানেও বাস ও রিকশা থেকে নেমে হাঁটতে থাকা মানুষের ভিড়, সামনে গেলেন।
একটা পাজেরো গাড়ি রাস্তার মাঝখানে। গাড়ির চারপাশে র্যাব ও পুলিশ। সিটের ওপর লাশ। ডাক্তার পাজেরো পর্যন্ত যেতে পারেননি। কানে এলো অনেক কথা। ‘ফকিরের ভাব ধইরা ছিল। কাচে টোকা দিয়া ভিক্ষে চায়, আর কাচ নামাতেই মাথায় গুলি করে চলে গেছে।’
ডাক্তারের চোখেমুখে ভয়। যতটা সম্ভব, ভিড়ের ভেতর কিছুটা ধাক্কাধাক্কি করে, অনেকরকম সন্দেহ ও সিদ্ধান্তমূলক কথা শুনতে শুনতে এসে গাড়িতে উঠে বসলেন নাদিয়ার পাশে।
‘কী হয়েছে?’
‘না কিছু না। একটা পাজেরো গাড়ির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে আটকে গেছে। সরাতে পারছে না’, উত্তর ডাক্তারের।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.