আমার এই ছোট ভুবন :
আবুল হোসেন
প্রকাশক: অবসর প্রকাশনা সংস্থা
প্রকাশকাল ॥ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩
মূল্য ॥ ১৫০ টাকা মাত্র।
বার্ট্রান্ড রাসেলের আত্মজীবনীর ভূমিকায় গরপযধবষ ঋড়ড়ঃ মন্তব্য করছেন, ‘অঁঃড়নরড়মৎধঢ়যু রং ঃযব সড়ংঃ ৎরংশু ধহফ ধৎফঁড়ঁং ড়ভ ধষষ ৎিরঃবৎ’ং ধৎঃ.’ এই ‘ৎরংশু’ এবং ‘ধৎফঁড়ঁং’-এর ব্যাপারটি বুঝে নিতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না যখন রবীন্দ্রনাথের এই কথাগুলো মিলিয়ে পাঠ করি : ‘বাইরের জগতে মানুষের যে পরিচয় সেইটাতেই তার প্রতিষ্ঠা। বাইরের এই পরিচয়টি যদি তার ভেতরের সত্যের সঙ্গে কোনো অংশে না মেলে তাহলে তার অস্তিত্বের মধ্যে একটা আত্মবিচ্ছেদ ঘটে।’ কেন এই আত্মবিচ্ছেদ? আত্মবিচ্ছেদ এই কারণে, ‘মানুষ যে কেবল নিজের মধ্যে আছে তা নয়, সকলে তাকে যা জানে সেই জানার মধ্যেও সে অনেকখানি আছে। আপনাকে জানো- এই কথাটাই শেষ কথা নয়, ‘আপনাকে জানাও’ এটাও খুব বড় কথা।’ আর সেই সূত্র ধরেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতে চেয়েছেন, ‘এই জানিয়ে চলার কোনোদিন শেষ নেই।’
জানিয়ে চলার শেষ নেই- একথা সত্যি। তাই বলে যে এই জানানোর প্রক্রিয়া থেমে রয়েছে, তা কিন্তু নয়। বলা হচ্ছে, ‘আপনাকে জানাও’। কীভাবে জানানো যেতে পারা যায়? উত্তরটা যদি এরকম হয় তাহলে কেউ কি আপত্তি করবেন- কবি জানাবেন তাঁর 888sport app download apkর মধ্য দিয়ে, 888sport live chatী জানাবেন তাঁর 888sport live chatকর্মের মধ্য দিয়ে। তাহলে আত্মজীবনী রচনার প্রয়োজনটা কোথায়-এমন প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আত্মপরিচয়ে’ বলেছেন, ‘জগতের মধ্যে যাহা অনির্বচনীয় তাহা কবির হৃদয়দ্বারে প্রত্যহ
বারংবার আঘাত করিয়াছে, সেই অনির্বচনীয় যদি কবির কাব্যে বচন লাভ করিয়া থাকে…তবেই কাব্য সফল হইয়াছে।’ এই সফল কাব্যকেই রবীন্দ্রনাথ ‘কবির প্রকৃত জীবনী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এবং তিনি মনে করতেন, ‘সেই জীবনীর বিষয়ীভূত ব্যক্তিটিকে কাব্যরচয়িতার জীবনের সাধারণ ঘটনাবলির মধ্যে ধরিবার চেষ্টা করা বিড়ম্বনা।’ কবি অমিয় চক্রবর্তী এই বিষয়টি একটু ভিন্নভাবেই দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি বলছেন, ‘নিজেকে জড়িয়ে থাকা 888sport live chatীর পক্ষে শাস্তি; ছড়িয়া যাওয়া, ছাড়িয়ে চলাই তার ধর্ম। মাঠের পথে, জাহাজ নৌকোর ঘাটে, প্লেনের উচ্চ হাওয়ায় ঘুরেছি, বাড়ি ফিরেছি। স্তরে-স্তরে লোকালয়ের দান অন্তরজীবনে পূর্ণ হলো। আজ বেলাশেষে সেই পরিক্রমা একটিমাত্র মৃত্যুরেখায় পরিণত। উপরে আকাশ, পাশে দিগন্ত, মাটি, ধরণি, বসুন্ধরা যে-নামেই হোক ভূমিস্পর্শ অভিযানই আমার স্বপ্রকাশ, তার জন্য ভাষা নেই, ভাষ্য নেই।’ বোধ করি রবীন্দ্রনাথ কথিত বিড়ম্বনা কথাটির মর্মার্থ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই অমিয় চক্রবর্তী ভূমিস্পর্শ অভিযানকে তাঁর স্বপ্রকাশ হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথের বিড়ম্বনা কিংবা অমিয় চক্রবর্তীর ভূমিস্পর্শ স্বপ্রকাশকে মাথায় রেখেও কবি আবুল হোসেনের আত্মজীবনী ‘আমার এই ছোট ভুবন’ পাঠ করতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। বরং বইটি হাতে আসার পর বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছি। বিস্ময় এই কারণে যে, অত্যন্ত বড়ো মাপের একজন কবি হওয়া সত্ত্বেও যিনি খুব বেশি 888sport app download apk লিখলেন না; সেই কবিই লিখলেন 888sport sign up bonusকথা। আর আনন্দের কারণ, যারা তাঁর 888sport app download apkর অনুরক্ত পাঠক, তারা কিছুটা হলেও এই কবির ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। এতে অবশ্য আবুল হোসেনের 888sport app download apk বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতি-বৃদ্ধি হয়তো তেমন কিছুই ঘটবে না, কিন্তু কবির দিক থেকে রবীন্দ্রনাথকথিত আপনাকে জানানোর ব্যাপারটি তো ঘটবে। সে-দিক থেকেও তো একজন কবির আত্মজীবনীর একটি বিশেষ মূল্য আছে। তবে কি ধরে নিতে হবে এই কারণেই আবুল হোসেনের 888sport sign up bonusকথা আমাদের কাছে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
আবুল হোসেনের 888sport sign up bonusকথার গুরুত্ব শুধু এ-কারণে নয় যে, তিনিএকজন বড়ো মাপের কবি; বরং সেই সঙ্গে এইটিও মনে রাখা জরুরি, তিনি চল্লিশের দশকের কবি। বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশক পৃথিবীর 888sport app ভূখ-ের মানুষের কাছে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলা কঠিন; কিন্তু আমাদের এই ভূখ-ের মানুষের কাছে, বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানের কাছে চল্লিশের দশক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি সময়। কেননা, সেই সময়কাল ছিল বাঙালি মুসলমানের বিকশিত হবার সময়, আত্মসচেতন হবার সময়। বলা যায়, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সবদিক থেকেই এ কথা প্রযোজ্য। 888sport live footballের ব্যাপারটিও এসব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। ‘আহসান হাবীব’ শীর্ষক এক নিবন্ধে আবুল হোসেন অনেক দিন আগেই বলেছিলেন, ‘চল্লিশের দশকে আমাদের সমাজে 888sport app download apkর যে-রূপান্তর তা সম্ভব হয়েছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির গড়ে ওঠার আশা-আকাক্সক্ষা, আবেগ-অনুভূতিকে অবলম্বন করে। সমসাময়িক বর্ধিষ্ণু হিন্দু সমাজের মানসিক, শৈল্পিক, সামাজিক অভিযানের আদর্শ তো তার সম্মুখে ছিলই, সেই প্রেরণার দোসর হয়ে এলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপ্লবাত্মক প্রতিক্রিয়া। চল্লিশের তরুণ মুসলমান লেখকেরা সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিল। আর তার ফলে আমাদের সমাজে, 888sport live footballে ও 888sport live chatে আধুনিকতার সূচনা। সেই সূচনার সূত্র ধরেই কবি আবুল হোসেনের কাব্যে 888sport live chatিত উন্মেষ ঘটেছিল। সে-কারণে আবুল হোসেনের বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে বাঙালি মুসলমানের বেড়ে ওঠার তাৎপর্যটুকুও যেন আমরা বুঝে নিতে পারি।
দুই
আবুল হোসেনের জন্ম খুলনা জেলার দেয়াড়া গ্রামে। কবির পিতা-মাতা কেউ-ই তাঁকে জানাতে পারেননি তাঁর জন্মের সঠিক ‘সন-তারিখ’। তাঁর পিতা অবশ্য বলেছিলেন আগস্ট ১৯২২, আর মা বলেছিলেন, ‘ঝড়ের বছর ১৫ই শ্রাবণ’। আর এই দুটো মিলিয়ে কবির জন্মতারিখ শেষ পর্যন্ত দাঁড়ালো ১৫ই আগস্ট, ১৯২২। ঘটনাটি সামান্য, কিন্তু এর মধ্যে তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মুসলমান সমাজের একটি পুরো চিত্র পাওয়া যায়। আবুল হোসেনের শিক্ষাজীবন-কর্মজীবন-888sport live football-জীবনের পুরোটাই কেটেছে শহরে। গ্রামে কেটেছে জীবনের প্রথম পাঁচ-ছয় বছর। তারপর দীর্ঘজীবনে বারদুয়েক গ্রামে ফেরা। সব মিলিয়ে তাঁর বয়সের হিসাব অনুযায়ী গ্রামে বসবাসের সময়কাল খুবই কম। কিন্তু তারপরও কবির সরল স্বীকারোক্তি, ‘ছেলেবেলা আর সেই গ্রাম কখনো আমার মন থেকে মুছে যায়নি। অবাধ প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠার সেই দুর্লভ 888sport sign up bonus ফিরে ফিরে আসে। নইলে কি লিখতে পারতাম চল্লিশ দশকে আমার সোনার দেশ। মধ্য-পঞ্চাশে দেয়াড়ায়, আর একটা উপকথা নিরানব্বই-এ’ (পৃ. ১৯)। তাঁদের গ্রাম সম্পর্কে আবুল হোসেন লিখেছেন, ‘গ্রামে ঘরবাড়ি ছিল খুব কম। গাছগাছালি ঝোপঝাড়ই বেশি। যেদিকে চাই জঙ্গল।… মাঝে মাঝে দু’একটা বাড়ি।… সিকি মাইল পরে ছিল নিকিরী পাড়া। নিকিরীরা ধর্মে মুসলমান। তবু মুসলমান পাড়ায় তারা ছিল অপাঙ্ক্তেয়। তাদের সঙ্গে মুসলমানদের বিয়ে-শাদি, খাওয়া-দাওয়ার মতো সামাজিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ’ (পৃ. ১০)। তার মানে, জাত-পাতের ভেদাভেদ শুধু একচেটিয়া হিন্দুদের মধ্যেই নয়, সেকালের মুসলমানদের মধ্যেও ছিল। গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে আবুল হোসেন জানাচ্ছেন, ‘গ্রামে হিন্দু-মুসলমানরা পাশাপাশি বাস করে, এরকম একটা কথা বহুল প্রচলিত। আমাদের ছেলেবেলাতেও পাশাপাশি হিন্দু ও মুসলমান বাড়ি দেখিনি। একই গ্রামে হিন্দু ও মুসলমান পাড়া ছিল ভিন্ন। আমাদের গ্রামের নিকটতম হিন্দু বাড়িটিও ছিল প্রায় সিকি মাইল দূরে,… তবে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির অভাব ছিল না এবং সে সম্পর্ক ছিল সত্যই আন্তরিক’ (পৃ. ১০-১১)।
আবুল হোসেনের লেখাপড়া শুরু হয় কৃষ্ণনগরে, তাঁর পিতার কর্মস্থল ছিল ওটা। আবুল হোসেন জানাচ্ছেন, ‘আমি যখন স্কুলে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হই, আমাদের ক্লাসে আমি ছাড়া আর কোনো মুসলমান ছাত্র ছিল না। স্কুলে বোধ হয় সব মিলিয়ে ২০-২৫ জন মুসলমান ছেলে ছিল’ (পৃ. ২০)। তবে মাস্টার মশায়দের ব্যবহারে তিনি কোনো তারতম্য দেখতে পাননি। বাংলার শিক্ষক চারুবাবু সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘তাঁর গায়ের রং ছিল মিশমিশে কালো, শরীর দশাসই, হেঁড়ে গলা, মেজাজ কড়া, তার ক্লাসে টুঁ-শব্দটি করার উপায় ছিল না। কে জানত তার ভেতরেই ছিল স্নেহের, সহৃদয়তার এক ফল্গুধারা। আমার বড় বোনের বিয়েতে উপহার হিসেবে আমি একটা 888sport app download apk লিখেছিলাম। বাহাদুরি করে বন্ধুদের সেটা দেখালে কে একজন ক্লাসে সেটা চারুবাবুর হাতে দিয়ে এলো। প্রায় দম বন্ধ করে আমরা দেখলাম চারুবাবু 888sport app download apkটি পড়ছেন গম্ভীর হয়ে। তারপর আঙুলের ইশারায় আমাকে ডাকলেন। আমি ভয়ে ভয়ে তাঁর টেবিলের সম্মুখে গিয়ে হাজির হলাম। তিনি বললেন, ‘আয়, কাছে আয়… এটা তুই লিখেছিস? এসব তুই কোথায় পেলি?’… চারুবাবু আমাকে আরো কাছে টেনে তার ডান হাত আমার মাথায় রেখে বললেন, ‘যা তুই লিখে যা। আমি আশীর্বাদ করছি তুই পারবি। তুই খুব ভাল করবি।’… সেদিন থেকে চারুবাবুকে আমরা নতুন করে চিনলাম’ (পৃ. ২৫)। আবুল হোসেন নিজেও ব্যক্তিগতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেলামেশায় কখনো অসুবিধে বোধ করেননি। 888sport sign up bonusকথাতেও তিনি লিখেছেন, ‘মুসলমান বলে কেউ আমাকে ভিন্ন চোখে দেখছে অথবা ওদের ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা ভাবছে, তা আমার মনে হয়নি। এখন সেই সময়ের কথা মনে করলে অবাক হতেই হয়’ (পৃ. ২১)। শুধুই কি অবাক হই, সেইসঙ্গে বেদনাবোধও করি, যখন আজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যাপারটি ক্রমশই কুটিলতার দিকে ভয়াবহভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
আবুল হোসেন অবশ্য অকপটেই স্বীকার করেছেন হিন্দুদের তুলনায় ব্রাহ্মদেরই তাঁর বেশি ভালো লাগত। অবশ্য এই ভালো লাগার একটি কারণও তিনি দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘ওরা (ব্রাহ্ম) বড়লোক ছিলেন না। ছিলেন উদার, সহিষ্ণু মানুষ।’
তিন
ব্যক্তিগতভাবে এই গ্রন্থ পাঠ করে আমাদের অন্তত, আবুল হোসেনকে একজন উদার, সহিষ্ণু মানুষই মনেহয়েছে। তাঁর 888sport sign up bonusকথায় সেই উদারতার, সহিষ্ণুতার নানা নজির রয়েছে। সে-কারণেই এখানে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, সৈয়দ মুজতবা আলী, আবু সয়ীদ আইয়ুবের পাশাপাশি স্থান পেয়েছেন শওকত ওসমান, আবু রূশদ, গোলাম কুদ্দুস, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আহসান হাবীব প্রমুখ। অধ্যাপক বিনয় সরকারের প্রসঙ্গ যেমন তিনি উল্লেখ করেছেন 888sport apk download apk latest versionভরে, তেমনি অধ্যাপক সুশোভন সরকার, সোমনাথ মৈত্র, পিসি ঘোষ, গোরীনাথ ভট্টাচার্যের কথাও বলেছেন। গান্ধী, নেহেরু, জিন্নাহর পাশাপাশি বলেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথা, হবীবুল্লাহ বাহারের কথা। অত্যন্ত মমতা নিয়ে বলেছেন কুষ্টিয়ার মুজিবুর রহমান ফড়িংয়ের কথা, যশোরের রওশন আলির কথা। বলা হয়, দল-মত-সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে রেখে নিজের ভালো-লাগা মানুষগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছেন আবুল হোসেন এবং এটা করতে গিয়ে অত্যন্ত মাত্রাবোধের পরিচয় দিয়েছেন। কাউকেই অতি-নিন্দা বা অতি-প্রশংসা করেননি। রাজনীতিবিদ শামসুল হুদা চৌধুরীকে আজ হয়তো তাঁর নিজের দলের লোকেরাই ভুলে গিয়েছেন, অথচ সেই হুদা সম্পর্কে আবুল হোসেন লিখেছেন, ‘সে যেদিন চলে গেল জীবনের একটা চিরসবুজ পাতা খসে পড়ল’ (পৃ. ৫০)।
তাঁর নিজের রাজনৈতিক চেতনা সম্পর্কে আবুল হোসেন জানাচ্ছেন, ‘আমি চিরকাল রাজনীতিকে এড়িয়েই চলেছি, কোনো দলে নাম লেখাইনি, কারো কাজ করে দিইনি, কারো প্রতি সমর্থনও জানাইনি। দূর থেকে দেখেছি এবং মনে মনে নিজের অবস্থান ঠিক করেছি, কেউ জানতে চাইলে এড়িয়ে যাইনি, যার যেটুকু ভাল লেগেছে, অসংকোচে বলেছি, কিন্তু কাউকে স্বমতে আনার চেষ্টা করিনি’ (পৃ. ৭৬)।
চার
আবুল হোসেনের 888sport app download apkয় যেমন তাঁর পরিমিতিবোধের 888sport live chatিত উদাহরণ দেখা যায়, তেমনি এই 888sport sign up bonusকথায়ও সেই পরিমিতিবোধের অসংখ্য নমুনা রয়েছে। কবির মাতার মৃত্যুর বছর দেড়েকের মধ্যেই তাঁর পিতা আবার বিয়ে করেন। এটিও তৎকালীন মুসলমান সমাজের সাধারণ চালচিত্র। আবুল হোসেন স্বাভাবিকভাবেই এ-ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু পিতার সমালোচনা যখন করেছেন, তখনো তিনি পুত্র হিসেবে নিজের সংযম-বোধ পুরোপুরি বজায় রেখেই সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন – ‘আব্বা অবশ্য প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। যে বয়সে করেছিলেন, সে বয়সে হয়তো তাঁর একজন সঙ্গিনী প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যেই যে তার একটা বড় সংসার আছে, তার অনেক ছেলেমেয়ে, তিনি আবার বিয়ে করলে তার ফল কী হতে পারে, ছেলেমেয়েদের ওপর তার কী প্রভাব পড়তে পারে, সেটা ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি। শুধু নিজের দিকটাই দেখেছিলেন। অনুরূপ অবস্থায় স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীরা কি নতুন স্বামী খোঁজেন? তাদের কি সঙ্গীর প্রয়োজন হয় না? আমাদের সমাজটা পুরুষশাসিত বলেই তো পুরুষদের আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার’ (পৃ. ১০২)।
এছাড়া ১৯৪৩-এর মন্বন্তর, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা আবুল হোসেনকে যে নানাভাবে পীড়িত করেছে, এই গ্রন্থে তিনি সেসব অকপটে ব্যক্ত করেছেন। আমাদের তৎকালীন রাজনীতিবিদদের দায়িত্বজ্ঞান-হীনতারও সমালোচনা করেছেন
নানাভাবে।
আত্মজীবনী প্রসঙ্গে বলা হয়ে থাকে, ‘অষষ ঃযব মৎবধঃবংঃ ধঁঃড় নরড়মৎধঢ়যবৎং যধাব নববহ বমড়ঃরংঃং’। কথাটি অনেকটাই সত্যি। কারণ আত্মজীবনীর মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রচয়িতার অহংবোধ নানাভাবে প্রকাশ পায়। সেজন্যেই অনেক সাধারণ মানের আত্মজীবনীর মধ্যেও ভারসাম্যের অভাব আমাদের চোখে পড়ে। এর মূল কারণ ওই অহংবোধের বিশৃঙ্খল প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘অহংটাই পৃথিবীর মধ্যে সকলের চেয়ে বড়ো চোর। সে স্বয়ং ভগবানের সামগ্রীও নিজের বলিয়া দাবি করিতে কুণ্ঠিত হয় না।’ কিন্তু আবুল হোসেনের এই 888sport sign up bonusকথায় আর যা-ই থাকুক, অহংবোধের প্রাবল্য নেই। প্রত্যেক লেখকের ভাষারীতির একটি নিজস্ব ধরন রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে ওই অহংবোধ পরিষ্কারভাবে দেখতে পারা যায়। আবুল হোসেনের গদ্যভঙ্গিতে একজন বিনয়ী, সংযমী আধুনিক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করি, যিনি আত্মসমালোচনাতেও দ্বিধান্বিত নন। দুটি উদাহরণ দিই :
ক. ‘আমাদের এই উপমহাদেশে সরকারি চাকুরেরা চিরকালই একটা সুবিধাভোগী শ্রেণি। তারা ভারত ও ভারতের দুই প্রদেশ, বাংলা ও পাঞ্জাব বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে তল্পিতল্পা গুটিয়ে রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা অটুট রেখে নির্বিঘেœ (অন্তত বঙ্গদেশে) নিজেদের পছন্দের রাষ্ট্রে চলে যেতে পারল’ (পৃ. ১৫০)।
খ. ‘আমি লোকটা মনের দিক থেকে হয়তো তেমন নাজুক নই। কিন্তু আমার শরীরের হাড়গুলো তেমন মজবুত নয়। সারাজীবন হাড়ের সমস্যায় ভুগেছি। নিচু হয়ে বসতে পারি না। শিরদাঁড়া, ঘাড় সোজা হয়ে আছে, বাঁকাতে পারি না’ (পৃ. ১০৮)।
আবুল হোসেন পেশায় ছিলেন সরকারি চাকুরে। তারপরও তিনি এই পেশার লোকদের সুবিধাবাদিতাকে সমালোচনা করেছেন। কিংবা নিজের সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি লোকটা…’, এটিই তাঁর বিনয় ও নম্রতার প্রকাশ। তার এই নম্রতার কাছে পাঠক সহজেই প্রণত হতে পারেন। লেখক হিসেবে (সেইসঙ্গে মানুষ হিসেবেও) এখানেই আবুল হোসেনের বিজয়।
পাঁচ
এই গ্রন্থে আবুল হোসেন তাঁর জীবনবোধের পাশাপাশি নিজস্ব 888sport live footballানুচিন্তন সম্পর্কেও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। যা কিনা এই 888sport sign up bonusকথার পাঠকদের কাছে ‘উপরি-পাওনা’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আমরা এখানে কয়েকটি নমুনা তুলে দিচ্ছি:
ক. ‘আজীবন নির্বিবাদী ও নির্লিপ্ত থেকেও দেখেছি সমাজ-সংসারকে একেবারে ভুলে থাকা কিংবা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অসহ্য হলে প্রতিবাদ করতেই হয়। আমি ব্যঙ্গের তীর ছুড়ি’ (পৃ. ১৫)।
খ. ‘নিজের লেখা ঘষামাজা করা আমার চিরকালের স্বভাব’ (পৃ. ৭২)।
গ. ‘আমাদের 888sport live footballে… নববসন্ত প্রথম আধুনিক 888sport app download apkর বই। তবু নববসন্তে আমি আমার কথা পুরোপুরি গলা খুলে বলতে পারিনি। নিজের মনের কথা নিজের মতো করে বলতে আমার আরো তিন-চার বছর লেগে যায়। দিক নির্ণয়ে এসে আমি তার সন্ধান পাই’ (পৃ. ৮৩)।
ঘ. ‘প্রতিষ্ঠান বা দল তৈরি করে 888sport live football সৃষ্টি করা যায় না। 888sport live football সৃষ্টি সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ কাজ, একাকী মানুষের কাজ। কিন্তু 888sport live footballিকদের উৎসাহ দেওয়া, তাদের অধিকার আদায় এবং তা রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে, তার প্রয়োজনও আছে। তার প্রধান কাজ লেখকের এবং লেখার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা’ (পৃ. ৯৪)।
ছয়
কবি অমিয় চক্রবর্তী তাঁর এক 888sport liveে বলেছিলেন, ‘888sport live chatের মধ্য দিয়ে ভাব, তথ্য, রূপের 888sport live chatিত প্রকাশ।’ এইটিই যে শুধু গল্প, 888sport app download apk বা 888sport alternative linkের ক্ষেত্রে সত্য তা কিন্তু নয়। বরং আত্মজীবনীও যদি কোনো 888sport live footballিকের হাতে ‘888sport live chat’ হয়ে ওঠে, তবে সেটিও হতে পারে তাঁর একটি অখ- আত্মিক পরিচয়ের সাক্ষ্য। যেখানে ভাব, তথ্যের 888sport live chatিত সমন্বয় লক্ষ করা যায়। আবুল হোসেনের আমার এই ছোট ভুবন 888sport sign up bonusচিত্রখানা পাঠ করে তেমনি একটি 888sport live chatিত প্রকাশের পরিচয় পাওয়া যায়। এই 888sport sign up bonusকথা শেষ হয়েছে ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্টে এসে। জীবনের সেই পর্ব ছিল, লেখকের ভাষায়, ‘জীবনের এক সবুজ অধ্যায়’। আমরা আশা করছি, তাঁর জীবনের পরবর্তী অধ্যায়গুলোর 888sport sign up bonusচিত্র কবি আবুল হোসেন দ্রুত পাঠকের হাতে তুলে দেবেন।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.