ভূ888sport apk পৃথিবী ও তার প্রাণীদের বিবর্তনের কথা বলে। এই বিবর্তন প্রধানত আবহাওয়া পরিবর্তন ও গাঠনিক পরিবর্তনের জন্য হয়ে থাকে, যার ইতিহাস লেখা থাকে পাথরের খাঁজে খাঁজে। ভূ888sport apkীরা সেই লেখা পড়ে বিবর্তনের সময় ও কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন। এভাবেই মানুষের শরীরগত এবং তার মস্তিষ্কের বিবর্তনের ইতিহাসও জানা গেছে জীবাশ্ম পরীক্ষা করে। কিন্তু মানুষের মনের কোনো ফসিল হয় না। একই মানুষ বস্তুবাদী ও ভাববাদী। একদিকে ষড়রিপু, অন্যদিকে প্রেম, ভালোবাসা ও মমত্ববোধ। এত বড় পৃথিবীতে মানুষের মতো কল্পনার জগতে আর কেউ বিচরণ করে না। তাই বোধহয় মানুষ এত একা। মানুষ তার কল্পনার জগৎকে 888sport live chat ও 888sport live footballের মাধ্যমে যখন থেকে প্রকাশ করতে শুরু করল, সেখানে রয়ে গেল তার মনের আবেগের ছাপ। পরিবর্তনশীল
প্রকৃতির মতোই মানুষের মনও বদলে যায় সময়ে সময়ে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, পরিজন ও সমাজ অনুঘটক হয়ে কাজ করে। মানুষের ভাবাবেগ বা মনের পরিবর্তন তার কর্মজীবন থেকে, সৃষ্ট 888sport live chat-888sport live football থেকে উদ্ধার করা অসম্ভব কিছু নয়। সেখানে প্রতিফলিত হয় তার মনন ও চিন্তন। আশপাশের মানুষ, ঘটনা, দুর্ঘটনার প্রভাবে সময়ের সঙ্গে তা বদলে যায়। রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশি বিস্তৃত সৃষ্টিকাজেও এরকম আকস্মিক বা ক্রমিক বাঁকবদল। তাঁর গদ্যে, পদ্যে, গানে
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তা। কেমন সেই মোড়-ফেরানো তারই এক খোঁজ।
আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা দীর্ঘ সময় রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছি তাঁর সৃষ্টিকর্মে। সেই ষোলো বছর বয়সে এক মেঘলা দিনের ছায়াঘন দুপুরে খাটের ওপর উপুড় হয়ে শ্লেটে লিখলেন – ‘গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে’। সেই শুরু হলো যাত্রা আর শেষ হয়েছে একাশি বছর বয়সে মৃত্যুর কয়েকদিন আগে ৩০ জুলাই
১৯৪১-এ ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি/ বিচিত্র ছলনাজালে/ হে ছলনাময়ী।’ একজন লেখকের পক্ষে ষাট বছর দীর্ঘ সময়। আর এই সময় তাঁর মনে যেসব বড় পরিবর্তন ঘটেছে তা ভীষণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে 888sport app download apkয়, গল্প-888sport alternative link-888sport liveে এবং শেষে কিছুটা গানে।
সব প্রাণীই বেঁচে থাকার জন্য তার চারপাশের সমাজ থেকে শিক্ষা অর্জন করে, যা মূলত নকলবিদ্যা। একমাত্র মানুষই এই সামাজিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত শিক্ষাও অর্জন করে; কিন্তু তা সময়সাপেক্ষ। দেয়ালঘেরা ছাদের নিচে স্কুলের ক্লাসঘর রবীন্দ্রনাথের পছন্দ ছিল না, কারণ তিনি চাইতেন প্রকৃতির মধ্যে থেকে মনের বিকাশ, তথ্য জানার নয়। বাবা দেবেন্দ্রনাথের এমনিতেই রবির লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল আর তাই ওর ইচ্ছেমতোই বাড়িতে মাস্টার রেখে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হতে লাগল। বিষয়গুলোর মধ্যে যেমন ভাষাজ্ঞান ছিল তেমনি 888sport live football, ভূগোল, ইতিহাস, পুরাণ ইত্যাদি। আর ছিল গানের শিক্ষক। যদিও গানের চর্চা ঠাকুরবাড়িতে ছিলই বরাবর এবং গান ও ভাবের প্রথম পাঠ জ্যোতিদাদার কাছেই, যদু ভট্টের কাছে শিক্ষানবিশি। বাড়িতে ছিল জ্ঞানী-গুণিজনের
আসা-যাওয়া। উপনিষদ থেকে দর্শনের শিক্ষাটা পেয়েছেন বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের থেকে। এভাবেই ছোটবেলা থেকে শিক্ষিত হয়ে ওঠেন, যা তাঁর মানসিক গঠন ও বিকাশে নিজস্বতার ছাপ ফেলে।
কিশোর রবীন্দ্রনাথ বারো-তেরো বছর বয়সেই বৈষ্ণব888sport live footballের কাব্যরসে স্নাত। বৈষ্ণব888sport live footballের কথা, ভাষা, ছন্দ এবং নাটক তাঁকে সম্পূর্ণ গ্রাস করেছিল। প্রকৃতির সৌন্দর্যও তাঁকে মোহিত করত। তার ওপর ব্রাহ্ম হওয়ার সুবাদে সমগ্র পরিবারই হিন্দুসমাজে ব্রাত্য, যার জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা ছিল না। এমনই একটা মুক্ত পরিবেশে বৈষ্ণব888sport live footballের অনুকরণে মৈথিলী ও ব্রজবুলি ভাষায় রচনা করলেন একগুচ্ছ 888sport app download apk, যা তিনি তাঁর প্রিয় শ্রোতা ও পাঠক বৌঠানকে পড়াতেন। বৌঠান অর্থাৎ জ্যোতিদাদার স্ত্রী কাদম্বরী দেবী। বৌঠান তাঁর 888sport app download apkর নিচে লিখে দিতেন ‘ভানুসিংহ’, তাই এই 888sport app download apkগুচ্ছের নাম হলো ভানুসিংহের পদাবলী। ষোলো থেকে তেইশ বছরের মধ্যে বাইশটি পদ রচনা করেন, যার মধ্যে নটি গানের সুর পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের চোদ্দো বছর বয়সে মা সরলা দেবী যখন মারা যান তখন মৃত্যু সম্বন্ধে কোনো স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়নি। জীবন888sport sign up bonusতে লিখছেন, ‘যে-রাত্রিতে তাঁহার মৃত্যু হয় আমরা ঘুমাইতেছিলাম, তখন কত রাত্রি জানি না, একজন পুরাতন দাসী আমাদের ঘরে ছুটিয়া আসিয়া চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিল, ‘ওরে তোদের কী সর্বনাশ হল রে।’ তখন বউঠাকুরানী তাড়াতাড়ি তাহাকে ভর্তসনা করিয়া ঘর হইতে টানিয়া বাহির করিয়া লইয়া গেলেন। … প্রভাতে উঠিয়া যখন মা’র মৃত্যুসংবাদ শুনিলাম তখনো সে-কথাটার অর্থ সম্পূর্ণ গ্রহণ করিতে পারিলাম না।’ তাই মায়ের মৃত্যুর পর কাদম্বরী দেবীই হলেন মাতৃহীন বালকদের মাতৃসম আবার বন্ধুও – ‘বাড়িতে যিনি কনিষ্ঠা বধূ ছিলেন তিনিই
মাতৃহীন বালকদের ভার লইলেন।’ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বন্ধুতা ছিল অনেক গভীর এবং হৃদয়স্পর্শী। তাই প্রতিটা 888sport app download apk বা গান লেখার পরই তাঁকে আগে শোনানো চাই-ই। বৌঠানের প্রশংসাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। চব্বিশ বছরের মধ্যে তিনি লিখে ফেললেন সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান এবং ভানুসিংহের পদাবলীর মতো চারটে কাব্যগ্রন্থ এবং অনেক গান, বিশেষত ধর্মসংগীত, ঋতুসংগীত। বাল্মিকী প্রতিভা ও কাল মৃগয়া – দুটো গীতিনাট্য। মাইকেলের মেঘনাদ বধ কাব্যের সমালোচনা দিয়ে গদ্য888sport live footballের শুরু। রবীন্দ্রনাথের চব্বিশ বছর বয়সে ঠাকুরবাড়িতে অঘটন ঘটে। কাদম্বরী দেবীর অস্বাভাবিক অকালমৃত্যুতে রবীন্দ্রনাথ শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন এবং কিছু সময়ের জন্য মানসিক ভারসাম্যও ব্যাহত হয়। এই মৃত্যুকেই তিনি তাঁর প্রথম শোক বলে উল্লেখ করে একই নামে 888sport app download apk লেখেন। জীবনের দ্বিতীয় শোকই হয়ে উঠল তাঁর জ্ঞানত প্রথম শোক এবং স্থায়ী – ‘আমার চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়।’ কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর কিছু সময় তিনি লিখতে পারেননি। কিন্তু তারপরই আমরা তাঁর লেখায় একটা অপূর্ব উত্তরণ দেখি, যা 888sport live footballের বিবর্তন বললে অত্যুক্তি হবে না। এ-ঘটনার পর তাঁর রচিত 888sport app download apk ও গানের প্রথম সংকলনগ্রন্থ কড়ি ও কোমল – জীবনদর্শনের এক নতুন সংজ্ঞা আমরা পেলাম। হঠাৎই দেখি চ-ীদাসের আধ্যাত্মিক প্রেমের রস, স্পর্শ নেই অথচ দোলা আছে। এই প্রেম মানুষকে কাঁদায়, পাগল করে, বাউল করে। এই পরিবর্তনকে স্বীকার করে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি নিজেই। লিখছেন, ‘তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে আমার পায়ের নীচ থেকে যেন পৃথিবী সরে গেল, আমার আকাশ থেকে আলো নিভে গেল। আমার জগত শূন্য হল, আমার জীবনের সাধ চলে গেল।’ এই বৈরাগ্যই আবার তাঁর রচনায় প্রকাশ পেল। তিনি লিখলেন, ‘সেই শূন্যতার কুহক কোনদিন ঘুচবে, এমন কথা আমি মনে করতে পারি নি। কিন্তু তার পরে সেই প্রচ- বেদনা থেকেই আমার জীবন মুক্তির ক্ষেত্রে প্রথম প্রবেশ লাভ করলে। আমি ক্রমে বুঝতে পারলুম, জীবনকে মৃত্যুর জানালার ভিতর থেকেই না দেখলে তাকে সত্যরূপে দেখা যায় না। মৃত্যুর আকাশে জীবনের যে বিরাট মুক্ত রূপ প্রকাশ পায় প্রথমে তা বড় দুঃসহ। কিন্তু তারপরে তার ঔদার্য মনকে আনন্দ দিতে থাকে। তখন ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ অনন্ত সৃষ্টির ক্ষেত্রে হালকা হতে দেখা দেয়।’ মননের এই উত্তরণকেই রবীন্দ্রনাথ স্বাগত জানিয়ে তাঁর 888sport app download apk ও গানে পরিবর্তন ও বিবর্তন এনেছেন। তাঁরই কথায়, ‘যে গেছে, সে সমস্ত জগৎ হইতে তাহার লাবণ্যছায়া তুলিয়া লইয়া গেছে।’ বৌঠানের মৃত্যুর পর তিনি যেসব 888sport app download apk ও গান লিখতে শুরু করেন সেগুলো আগের থেকে অন্যরকম। জীবনের দর্শনটাই পালটে গেল। মৃত্যুশোক এসব জয় করে জীবনের আনন্দটাকে সঞ্চয় করে অসাধারণ সব গান ও 888sport app download apk লেখেন। এর প্রকাশ অন্যভাবে তাঁর সেই সময়ের গানে পাই, ‘কেহ কারো মন বুঝে না, কাছে এসে সরে যায়।/ সোহাগের হাসিটি কেন চোখের জলে মরে যায় ॥’ এই গানের শেষ দুটো পঙ্ক্তি ভারি সুন্দর, ‘এ রজনী রহিবে না, আর কথা হইবে না -/ প্রভাতে রহিবে শুধু হৃদয়ের হায়-হায় ॥’
কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর কিছু আগে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয়। বিয়ের পর রবির একটা খাতায় বৌঠান একটা লেখা দেখে চমকে যান। তাতে লেখা ছিল, ‘হেথা হতে যাও পুরাতন!/ হেথায় নতুন খেলা আরম্ভ হয়েছে।’ 888sport app download apkটা কড়ি ও কোমলে গ্রন্থিত। হয়তো রবীন্দ্রনাথ ভাবজগতে একটা পরিবর্তনের মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন; কিন্তু সেটা কোনদিকে তা বোঝার আগেই এই দুর্ঘটনা, যা তাঁকে একটা নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে – ‘ছাড়িয়া চলিয়া গেলে কাঁদি তাই একা/ বিরহের সমুদ্র তীরে।’ জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এই বিরহের ব্যথা নিভৃতে নয়ন ভাসিয়ে তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন – ‘কত দিবসের তুমি বিরহের ব্যথা,/ কত রজনীর তুমি প্রণয়ের লাজ,/ সেই হাসি সেই অশ্রু সেই-সব কথা/ মধুর মুরতি ধরি দেখা দিল আজ।’ তিনি লিখছেন, ‘এরই মধ্যে স্থির করলুম শোকের মধ্যে দিয়ে নয়, প্রাণের আনন্দ ভেলায় ভাসতে হবে। তবেই শোকের ঊর্ধ্বে ওঠা যাবে।’ সেই সময়ে ওই দুঃসহ দুঃখের ভেতর তিনি মনের মধ্যে একটা আকস্মিক আনন্দের হাওয়া টের পেয়েছিলেন, ‘যাকে ধরেছিলুম তাকে তো ছাড়তেই হল, এতে বেদনা পেলেও সেই ক্ষণেই একে মুক্তির একটা পথ মনে করে উদার শান্তি পেলাম। সেই বৈরাগ্যের ভেতর দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও গভীররূপে রমণীয় হয়ে উঠল। জগৎকে সম্পূর্ণ দেখার জন্য যে দূরত্বের প্রয়োজন মৃত্যু সেই দূরত্ব ঘটিয়ে দিয়েছিল। সে সময় সমস্ত রাতটার ওপর দু’হাত বোলাতাম আবার সকালবেলার ভোরের আলোয় মনের চারিদিকের আবরণ স্বচ্ছ হয়ে আসত।’ রবীন্দ্রনাথের এই স্বীকারোক্তিই বলে দেয় তাঁর রচনায় প্রকৃতি প্রেমের উৎসের সন্ধান। জানিয়ে দেয় তাঁর 888sport app download apkয় ও গানে প্রকৃতি আর প্রেম একাকার হয়ে যাওয়ার কারণ।
এ প্রসঙ্গে একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে। এটা অনেকেরই জানা। জোড়াসাঁকোয় দ্বারকানাথ ঠাকুরের গলিতে ধনাঢ্য বাস্তববাদী সংসারী দেবেন্দ্রনাথ রাস্তার থেকে ঈশোপনিষদের বই থেকে ছেঁড়া একটা পাতা কুড়িয়ে পেয়ে পড়লেন আর তাতে লেখা রয়েছে একটা শ্লোক ‘ইশাবাস্য মিদং সর্বং’। সেই শ্লোকই তাঁর মনে ঝড় তুলে দিলো। ভোগ, সুখ, আভিজাত্য, কৌলীন্য, প্রতিষ্ঠা – সব তুচ্ছ মনে হলো তাঁর। অধ্যাত্ম-জীবনের অন্তর্লীন আহ্বান তাঁকে বরাবরের জন্য আত্মস্থ করে নিল। এরকমই হয়। আধুনিক চিকিৎসা888sport apk বলে, যাদের ভাবাবেগ প্রবল, একটা ঘটনা বা দুর্ঘটনা, একটা কথা বা একটা জীবনের সমাপ্তি তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিনের ক্ষরণ এত বাড়িয়ে দেয় যে হঠাৎই বড় ধরনের মানসিক পরিবর্তন চলে আসে। এ সময়ে স্কিৎজোফ্রেনিয়া বা হ্যালুসিনেশনের মতো মানসিক রোগও হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ নিজের মানসিক পরিবর্তনের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘সন্ধ্যাসংগীতের পর আমি যখন প্রভাতসংগীত রচনা করতে শুরু করি তখন আমার এক জাগরণ হয়েছিল। মানবধর্মের দুই সত্তা ‘অহং’ ও ‘আত্মা’র আমার কাছে পূর্ণ প্রকাশ হয়েছিল। ‘অহং’-এর বদ্ধতা থেকে ‘আত্মা’র মহাকাশে আমার চিন্তার উত্তরণ ঘটেছিল। বৌঠানের সহযোগিতায় আমার এই উত্তরণ সম্ভব হয়েছিল। আর তাঁর হঠাত চলে যাওয়ার পর আমার ‘আত্মা’ পরমাত্মার সঙ্গে ধীরে ধীরে মিলে যেতে লাগল। আমি আরও মুক্ত হলাম।’ ‘হৃদয় আজি মোর কেমনে গেল খুলি/ জগৎ আসি সেথা করেছি কোলাকুলি’ – প্রভাতসংগীতে এই আত্মমুক্তির প্রাণের স্পর্শ আমরা পাই। মৃত্যুশোকের ধাক্কা সামলে উঠে যখন পরমাত্মার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করলেন তখন বেদনার মধ্যে জীবনের যে আনন্দ পেয়েছিলেন তার প্রকাশ কড়ি ও কোমলে। ‘তুমি কোন কাননের ফুল,/ তুমি কোন গগনের তারা!/ তোমায় কোথায় দেখেছি/ যেন কোন স্বপনের পারা!’ রবীন্দ্রনাথ অবশ্য তাঁর মানসী কাব্যগ্রন্থকেই প্রথম কাব্যপদবাচ্য রচনা বলে মনে করেন। ‘সমাজ সংসার মিছে সব,/ মিছে এ জীবনের কলরব।/ কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে/ হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব।/ আঁধারে মিশে গেছে আর সব।’ এসময় তিনি মায়ার খেলা গীতিনাট্যও রচনা করেন। কিন্তু প্রকৃত উত্তরণ দেখা যায় গীতালি, গীতিমাল্য ও বিশেষ করে গীতাঞ্জলি রচনাকালে। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখছেন, ‘বিশ বছর বয়সের সেই প্রভাতে রবির কর যে প্রাণের পরে পশিল তা বোধকরি জীবনবোধের সমগ্রতায় পূর্ণ প্রকাশ পায় পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে।’
পঁচিশ বছরের শোকগাথা তিনি শেষ জীবন অবধি মনে রেখে গান ও 888sport app download apk লিখে গেছেন। যদিও সামাজিক এবং অন্য বিষয় নিয়েও 888sport app download apk লিখেছেন অনেক। তবে পঁচিশের ভাবাবেগ ষাটের ‘প্রথম শোক’ গল্পে অনায়াসে এসে যায়। লিপিকাগ্রন্থে গল্পের কিছু অংশ পড়া যাক –
সেই নির্জনে হঠাত পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আমাকে চিনতে পার না?’
আমি ফিরে তার মুখের দিকে তাকালেম। বললেম, ‘মনে পড়ছে, কিন্তু ঠিক নাম করতে পারছি নে।’
সে বললে, ‘আমি তোমার সেই অনেক কালের, সেই পঁচিশ বছর বয়সের শোক।’ …
আমি জিজ্ঞাসা করলেম, ‘আমার সেই পঁচিশ বছরের যৌবনকে কি আজও তোমার কাছে রেখে দিয়েছ।’
সে বললে, ‘এই দেখো না গলার হার।’
দেখলেম, সেদিনকার বসন্তের মালার একটি পাপড়িও খসে নি। …
আমি তার হাতখানি আমার হাতে তুলে নিয়ে বললেম, ‘এ কি তোমার অপরূপ মূর্তি।’
সে বললে, ‘যা ছিল শোক, আজ তাই হয়েছে শান্তি।’
এটা গল্প না হয়ে কাব্যগাথাও হতে পারত। যা হোক, গদ্যের আঙিনায় যখন ঢুকেই পড়লাম, তখন দেখা যাক পঁচিশের পর কাব্যে একটা পরিবর্তন এলো সে-সময়ে গদ্যে তাঁর মনের ভাবনাটা কোথায়।
ঠাকুরবাড়ি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হলেও হিন্দু আচার-সংস্কারগুলো বজায় ছিল। তবে অবশ্যই পৌত্তলিকাচার বর্জন করে। রবীন্দ্রনাথের গল্প, 888sport live ও 888sport app বিষয়ে লেখার মধ্যে প্রথমদিকে ধর্মীয় ও লোকাচারের গোঁড়ামি লক্ষ করা যায়। এসব লেখায় হঠাৎই আমূল পরিবর্তন আসে পিতা দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর। আসলে মনের পরিবর্তন আর লেখায় তার প্রতিফলনে বিবর্তন। দেবেন্দ্রনাথের প্রচ- ব্যক্তিত্ব সমস্ত ঠাকুরবাড়িকে আচ্ছন্ন করে রাখত, যার থেকে রবীন্দ্রনাথ নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ ওনাকে নিয়ে তিনটে রচনা লিখেছেন – ‘মহর্ষির জন্মোৎসব’, ‘মহর্ষির আদ্যকৃত্য উপলক্ষে প্রার্থনা’ এবং ‘মহাপুরুষ’ – এবং এই তিনটে লেখা থেকেই বোঝা যায় ধর্ম ও সমাজ সম্বন্ধে মহর্ষির মতামত রবীন্দ্রনাথের জীবনে ও লেখায় কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল।
রবীন্দ্রনাথ পিতার ভেতর দিয়ে বিশ্বপিতাকে দেখতেন। তাঁর কথায়, ‘আমাদের পিতামহের (দ্বারকানাথ) মৃত্যুর পর আমাদের পরিবার সহসা ঋণরাশি ভারাক্রান্ত। কী ভীষণ দুর্দিন তখন এসেছিল। উনি একা বহুবিধ প্রতিকূলতার মধ্যে দুস্তর ঋণসমুদ্র সন্তরণপূর্বক কূলে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন এবং আমাদের ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচিয়েছিলেন। আমরা রক্ষা পেয়েছিলুম।’ ধনীর সন্তান ও জন্মাবধি ভোগের মধ্যে বড় হয়েও ভোগসুখের অভ্যাস খর্ব করে শান্ত সংযত শৌর্যের সঙ্গে তিনি সমস্ত পরিবারকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন, সে-কথাও জানিয়েছেন। তারপরই বলছেন, ‘তাঁর সেই অসামান্য বীর্য, সেই সংযম, সেই দৃঢ়চিত্ততা, ত্যাগ স্বীকার আমার জীবনদর্শন তৈরিতে সাহায্য করেছে।’ এই স্বীকারোক্তিই বলে দেয় পিতৃদেবের জীবনের ছায়া রবীন্দ্রনাথের ওপর এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছিল যে, ওনার জীবদ্দশায় ওনার মতের বিরূপ কোনো মতাদর্শ প্রকাশে সচেষ্ট হননি। অথচ তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তিনি ধর্ম ও সমাজ নিয়ে একগুচ্ছ 888sport live লেখেন, যা আগের লেখা থেকে আলাদা।
গল্প-888sport alternative linkেও সেই বিবর্তনের প্রতিফলন, যা সুবৃহৎ 888sport alternative link গোরাতে প্রকট।
মহর্ষি ছিলেন ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহস্থ। একাধারে বিষয়ী, ঘোরতর সংসারী, অন্যদিকে ঈশ্বরের সেবা। ‘মহর্ষি’ হওয়ার আগে তিনি গরিব প্রজাদের কর মওকুফ করতেন; কিন্তু পরে কর আদায়ে কড়া মনোভাব ছিল। এ-বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের যুক্তি হলো, ‘বাধ্য হয়েই, সংসারটা টিকিয়ে রাখার জন্যই। তাঁর ভাণ্ডার ধর্মপ্রচারে মুক্ত ছিল, কত অনাথ পরিবারের তিনি আশ্রয় ছিলেন, কত দরিদ্র গুণীকে তিনি অভাবের পেষণ থেকে উদ্ধার করেছেন, দেশের কত হিতকর্মে গোপনে সাহায্য করেছেন। তিনি আমাদের ধনসম্পদের মধ্যে রেখেও সংযমী হতে শিখিয়েছেন। আড়ম্বর ও ভোগোন্মত্ততার হাত থেকে রক্ষে করেছেন।’ এত সাংসারিক হয়েও একদিন আত্মার প্রতি পরমাত্মার আহ্বান শুনে সংসারের বন্ধন ছিঁড়ে তিনি দুর্গম পথে যাত্রা করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘জগতে যে সকল মহাপুরুষ ধর্ম-সমাজ স্থাপন করে গেছেন, তাঁরা যা দিতে চেয়েছেন তা আমরা নিতে পারি নি। ধর্মসংস্কারের বদলে ধর্মকে বর্জন করে সংস্কার নিয়েছি। সংস্কারের ভালর দিকটা দূরে রেখে কু-অভ্যেসগুলো সযতেœ ধর্মের নামে চালানোর চেষ্টা করেছি। ধর্মের আসনে সাম্প্রদায়িকতাকে বরণ করেছি। মহাপুরুষগণ ধর্মসম্প্রদায় স্থাপন করেন, আমরা সম্প্রদায়টাকেই নিই, ধর্মকে নয়। কারণ বিধাতার বিধানে ধর্ম জিনিসটা নিজের স্বাধীন শক্তির দ্বারাই পেতে হয়।’ তিনি আরো বলছেন, তাঁর পিতা কখনোই ধর্ম, সমাজ এবং ঈশ্বর সম্বন্ধীয় যাবতীয় ধারণা কারোর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেননি। তাঁদের এ-ব্যাপারে স্বাধীনতা ছিল।
স্বাধীনতা থাকতে পারে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballে তার অনুপস্থিতি দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত। 888sport live football যদি মনের প্রতিফলন হয় তবে বলতে হয়, কী এমন হঠাৎ মনের পরিবর্তন হলো পিতার মৃত্যুর পর যে, তিনি মুক্তহস্তে আধুনিক মনের ভাবনা লিখতে শুরু করলেন। 888sport live football যেমন সমকালীন সমাজের প্রতিফলন, তেমনি স্রষ্টার মনের আয়না। তবে সবসময় হয় না। সামাজিক জীবন, লেখকের বিশ্বাস ও লেখার বিষয় সবসময় মেলে না। ধর্ম, শাস্ত্র ও সমাজ নিয়ে আদর্শগত ও ব্যবহারিক জীবন নিয়ে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি, মতামত ও কর্মজীবন অনেক ক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র। বিশেষ করে ১৯০৫ সালে দেবেন্দ্রনাথের মৃত্যুর আগে ও পরের রচনাগুলোর মধ্যে বিভেদ লক্ষ করার মতো। একদিকে ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আস্থা ও মান্যতা, অন্যদিকে হিন্দুসমাজের সামাজিক প্রথাগুলোর কিছু প্রথার নৈতিক ও ব্যবহারিক সমর্থন।
তবে এ-কথা স্বীকার করতেই হয়, আজকের দিনে সমাজ নিয়ে আমাদের ভাবনা দিয়ে সে-সময়টাকে বিচার করলে ভুল হবে। তবু তখনই তো রামমোহন, বিদ্যাসাগরের মতো সমাজ সংস্কারক মুখ খুলেছিলেন সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য। পৌত্তলিকহীন ব্রাহ্মধর্মের রামমোহন আর দেবেন ঠাকুর মিলেই নবপত্তন করেন। কিন্তু হিন্দু সমাজের মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে অনেক কুপ্রথা ব্রাহ্মসমাজ বর্জন করতে পারেনি। সে-সময়ের সমাজকে উপেক্ষা করতে পারেননি রবীন্দ্রনাথও।
888sport promo codeশিক্ষা বিস্তার সমর্থন করলেও ‘888sport promo codeবিদ্বেষী’ শব্দবন্ধে যে-সমস্ত মতবাদকে চিহ্নিত করা হয়, সেগুলো রবীন্দ্রনাথের লেখায় পাওয়া যায়। 888sport promo codeকে আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার তখনো তিনি দেননি। বরং পুরুষের হাতেই তার রশি ধরিয়ে রেখেছেন। তার সমর্থনে তিনি বলেছেন, ‘নূতন শিক্ষাপ্রাপ্ত বঙ্গভূমির নূতন চিন্তাস্রোত ও জীবনস্রোতের সহিত প্রাচীন সমাজতন্ত্র মিশিতে পারিতেছে না। তখনকার জীবন্ত বিশ্বাস এখন জীবনহীন প্রথায় পরিণত হয়েছে।’ শাস্ত্র অনুসারে পুরুষদের বহুবিবাহপ্রথা বিশেষ করে ব্রাহ্মণদের কৌলীন্য রক্ষার জন্য এবং সন্তানধারণের জন্যই বিবাহ – এরকম কয়েকটা তখনকার প্রচলিত মতবাদ মানতে না পারলেও মেয়েদের বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করা দূরের কথা, তিনি তাঁর দুই কন্যার নাবালক বয়সেই বিয়ে দেন। এ নিয়ে তিনি সুদীর্ঘ আলোচনার পর বলেছেন, ‘যেখানে শিক্ষার প্রভাব হইতেছে, সেখানে বাল্যবিবাহ প্রথা আপনিই উঠিতেছে, যেখানে হয় নাই সেখানে এখনো বাল্যবিবাহ উপযোগী।’ আমরা জানি, ঠাকুর পরিবারে শিক্ষার কোনো খামতি ছিল না, এমনকি বাড়ির মেয়েরাও যথেষ্ট শিক্ষিত ছিল এবং আরো শিক্ষিত করা হতো। তাহলে সে-শিক্ষার প্রভাব ঠাকুর পরিবারে বা তাঁর নিজের জীবনে পড়ল না কেন? অন্যদিকে সামাজিক উন্নতি, শিক্ষার প্রসার এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ – এই তিনের সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাল্যবিবাহের ব্যাপারে। আইনের জোরে বা বক্তৃতার তোড়ে যে বাল্যবিবাহ দূর করা যাবে না, সেটাকে সত্যি মেনে বিদ্যাসাগর মশাইয়ের প্রচেষ্টার প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হলো। তবে এটাও বলেছেন, শিক্ষিত লোকেদের ক্রিয়াকর্মই অনেকটা অশিক্ষিতদের প্রভাবিত করে। এই রবীন্দ্রনাথকে আমাদের কেমন অচেনা লাগে। অবাক হতে হয়, ধর্মের দোহাই দিয়ে হিন্দুসমাজে যেভাবে 888sport promo codeদের গৃহবন্দি করে রাখা হতো অথবা অবলা বলে অসম্মান করা হতো (যদিও এখনো হয়ে থাকে), যখন তিনি সেরকম মনোভাবে লেখেন, ‘স্ত্রীজাতির মধ্যে প্রথম শ্রেণীর কবির আবির্ভাব এখনও হয় নি!’ অথচ বিশ্বে প্রথম 888sport app download apk লেখেন এক 888sport promo codeই, নাম এনেদুয়ানা। সমাজে 888sport promo codeকে কবি হিসেবে প্রকাশ করার বা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সুযোগ পুরুষেরা দেয়নি, সাহায্য করেনি – এমন অভিযোগ তো থাকতেই পারে। তা সত্ত্বেও সে-যুগে বেশকিছু মহিলাকবি নিজের ক্ষমতা ও প্রতিভার জোরেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন। 888sport promo code-পুরুষের বুদ্ধি, কর্মক্ষমতা, বাহির জীবনে কর্মদক্ষতা নিয়ে মানুষ কখনো সমান দৃষ্টিভঙ্গি দেয়নি। যদিও জীববিদ্যা বলে, এরা দুজনেই একই প্রজাতির। প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে প্রজনন ক্ষমতাধারী ছাড়া 888sport promo codeর সঙ্গে পুরুষের কোনো প্রভেদ নেই। সেটা অবশ্য যে-কোনো জীবের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অথচ রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সময়ের লেখায় আমরা 888sport promo codeর বর্ণনায় এসব ভাষা পাই যেমন, ‘মেয়েদের সৃজনশক্তির বল নেই’, ‘পুরুষদের মত বলিষ্ঠ বুদ্ধি নেই’, ‘মেয়েরা দুর্বল’, ‘সন্তানধারণ থেকেই স্ত্রী পুরুষের প্রধান প্রভেদ হয়েছে’, ‘সাধ্বী স্ত্রীর প্রতি যদি কোন স্বামী পাশব ব্যবহার করে, তবে সে ব্যবহারের দ্বারা স্ত্রীর অধোগতি হয় না, বরং মহত্ত্বই বাড়ে’ ইত্যাদি। এসব কথা যে-কোনো 888sport promo codeর পক্ষে অসম্মানজনক। কিন্তু এই মনোভাব কি তিনি সত্যিই মনে পোষণ করতেন? না এর পেছনে কারো প্রভাব ছিল। কারণ এই একই রবীন্দ্রনাথ লিখছেন গোরা, স্ত্রীর পত্র, ঘরে বাইরে, নষ্টনীড়। সময়টা লক্ষ করার মতো। এসবই লিখছেন ১৯০৫ সালে পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পর। এমন তো নয় যে, পিতার মৃত্যু তাঁর মনকে এমন আলোড়িত করল যে তিনি হঠাৎ ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন তাঁর মতামত নিয়ে। আসল কথা, বৌঠানের মৃত্যুর পর দেবেন্দ্রনাথের ছায়াবৃত হয়ে গিয়েছিলেন, নিজস্ব মতামত প্রকাশে বাধা আসত। কিন্তু তাঁর মৃত্যু, দেবেন্দ্রনাথ-প্রভাবমুক্ত হওয়ার পর নিজের ভাবনা, ভাবাবেগ প্রকাশ পেতে লাগল। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর যে-ভাবনা এসেছিল, ‘যাকে ধরেছিলুম তাকে তো ছাড়তেই হল, এতে বেদনা পেলেও সেই ক্ষণেই একে মুক্তির একটা পথ মনে করে উদার শান্তি পেলাম। সেই বৈরাগ্যের ভেতর দিয়ে
প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও গভীররূপে রমণীয় হয়ে উঠল। জগৎকে সম্পূর্ণ দেখার জন্য যে দূরত্বের প্রয়োজন মৃত্যু সেই দূরত্ব ঘটিয়ে দিয়েছিল।’ এক্ষেত্রে প্রকৃতির সৌন্দর্য তো ছিলই, সেখানে কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি বরং সমাজ, 888sport promo code, ধর্ম এসবে নিজস্ব মতামত এতদিন যা মনে মনে পোষণ করতেন কিন্তু প্রকাশ পেত না তা বন্যার বাঁধ ভাঙার মতো হু-হু করে প্রকাশ পেতে লাগল। বৌঠানের মৃত্যুশোকের মতোই পিতৃশোক তাঁকে বেদনা দিলেও জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো মুক্তির স্বাদ পান।
মুক্ত ধর্ম ও সমাজ নিয়ে 888sport alternative link গোরা পিতার মৃত্যুর দুবছর পরে লেখা শুরু করেন। এখানে হিন্দুসমাজ ও সংস্কার নিয়ে যে মানসিক দ্বন্দ্বের উপস্থাপনা করা হয়েছে তা ওনারই মনের প্রতিফলন, যা অনেক আগেই পোষণ করতেন। তাঁর আদর্শের ভারতবর্ষে
হিন্দু-মুসলমান-ইংরেজ সবাই সমানভাবে নতুন ভারত সৃষ্টি করবে। ‘হে মোর চিত্ত’ (১৯১০) 888sport app download apk/ গানে যার চিন্তা স্পষ্ট। গোরা ধারাবাহিক প্রকাশকালে ধর্ম নিয়ে, বিশেষত মুসলমানদের অবস্থান পরিপ্রেক্ষিতে অজিত চক্রবর্তীর সঙ্গে দীর্ঘ চিঠি আদান-প্রদানের কথা আমরা জানি। পরে পিয়ারসনকে এক চিঠিতে জানান, গোরা ট্র্যাজেডি হিসেবে শেষ করতে চেয়েছিলেন কারণ সে-সময়ে ইংরেজের সঙ্গে হিন্দু রমণীর বিয়ে সম্ভব ছিল না। শেষও করেছিলেন সেই মতো। কিন্তু সিস্টার নিবেদিতার পীড়াপীড়িতে 888sport alternative link মিলনাত্মক হয়। ১৯০২ সালে ‘সমাজভেদ’ 888sport liveে তিনি লিখলেন, বাল্যবিধবাকে নানা আচারের মধ্যে বেঁধে গৃহবন্দি করে রাখতে যেখানে দোষ নেই, সেখানে অল্পবয়সে কুমারীর বিবাহ দেবার আবশ্যকতা কিসের? ইউরোপের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে বেশি বয়সে বিয়েটাই সমাজে প্রচলিত। সভ্যতা ও সমাজের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সামাজিক নিয়ম গড়ে ওঠে। কিন্তু ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ভাবাবেগ শেষ পর্যন্ত তাঁর মানসিকতার বদল ঘটিয়ে প্রকৃত ‘প্রগ্রেসিভ’ রবীন্দ্রনাথকে টেনে আনে। সমাজ ও 888sport promo code সম্বন্ধে সে-সময়ের ‘উত্তর-আধুনিক’ ভাবনার প্রকাশ ঘটে। মানুষকেই তিনি ধর্মের ওপরে স্থান দিয়েছেন বারবার, মানবতাবাদকে সর্বজনীন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এসবের পেছনে কাজ করেছে পশ্চিমের দেশগুলোতে 888sport promo codeমুক্তি আন্দোলন নিয়ে লেখা নানা পত্র-পত্রিকায়, নিবেদিতাসমেত একাধিক প্রগতিশীল 888sport promo codeর সাক্ষাৎ। ভাগ্নি সরলাদেবীর সদ্য বিদেশ থেকে ফেরা আধুনিক মনোভাবের সঙ্গে পরিচয় ও রাজনীতিতে যোগদান তাঁকে প্রভাবিত করে। একদিকে যেমন গল্পের নায়িকাদের অন্দরমহল থেকে বাইরে বৈঠকখানায় টেনে এনেছেন, পরপুরুষের সঙ্গে পরিচয় ও মেলামেশার সুযোগ করে দিয়েছেন, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের উত্থান দেখিয়েছেন, সেইসঙ্গে অন্যদিকে বধূনির্যাতন, পণপ্রথা, সমাজ ও সংসারে মেয়েদের প্রতিবাদ এবং মৃণালকে ঘরের ও মনের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে বিদ্রোহিনী হয়ে স্বামীকে চিঠি লেখার স্পর্ধা এসবই সে-সময়ের ‘উত্তর-আধুনিক’ চিন্তা। আমাদের এখনকার সমাজ এখনো এই জায়গায় পৌঁছতে পারেনি, যা তিনি আগেই স্বপ্ন দেখেছিলেন। আবার ভালোবাসা, মানবপ্রেম এসবের জন্যও মেয়েদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছেন। টগর বোষ্টমীর ওরকম গৃহত্যাগ আর মৃণালের সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতার পিঠে ওরকম চাবুক আজো চালাতে কেউ সাহস করবে না।
ছড়া : রবীন্দ্রনাথের মনের আরো একবার পরিবর্তন আমরা দেখি তাঁর মৃত্যুর চার বছর আগে। এরও প্রতিফলন তাঁর কাব্য888sport live footballে। আমরা জানি, তিনি ছড়া লেখায় জাদু সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এটা ভারি অবাক করে দেয় যে, তাঁর প্রথম ছড়ার বই খাপছাড়া প্রকাশ পায় ১৯৩৭ সালে এবং এরপর তাঁর দুখানি ছড়ার বই – ছড়ার ছবি ও ছড়া যথাক্রমে ১৯৩৮ সালে ও ১৯৪১ সালে তাঁর মৃত্যুর পর বেরোয়। অথচ এর অনেক আগে ১৮৯৪ সালে অর্থাৎ তাঁর তেত্রিশ বছর বয়সে তিনি লোক888sport live football 888sport liveগুচ্ছের মধ্যে ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ নামে পরপর দুটো 888sport live লেখেন। মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে থেকে ছড়া লেখায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার বাসনা নিঃসন্দেহে মনের কোনো পরিবর্তিত তাড়না থেকেই।
অধিকাংশ শিশুর মতো রবীন্দ্রনাথেরও ছেলেবেলা কেটেছে ছেলেভুলানো ছড়া শুনে। বাড়ির খাজাঞ্চি কৈলাস মুখুজ্যের কাছে একেবারে ছোটবেলায় ছড়া শুনতেন এবং শুনে বিমুগ্ধ ও অভিভূত হতেন। এই ছড়া তাঁর শিশুমনে অকারণ আনন্দ দিত। ছেলেবেলায় এসব ছড়া শুধু মনোরঞ্জনের জন্য। ছন্দ, কথা ও বলার ঢং এমনই যে, তা 888sport sign up bonusতে ধরে রাখাটাও খুব সহজ। পুনরাবৃত্তি করলেও কোনো আপত্তি নেই। ছড়া শোনামাত্র তিনি বলতে শুরু করতেন। পরিণত বয়সে সেই ছড়া মনে পড়ার সময় ছড়ার রস আস্বাদনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ছেলেবেলার 888sport sign up bonus রোমন্থনে আনন্দ পেতেন। মানে বোঝার চেষ্টা তখন দূরের কথা; শুধু শব্দের ধ্বনি-মাধুর্য ও ছোট ছোট উজ্জ্বল ছবি শিশুর মানসপটে একে একে ফুটে উঠত। ছড়ার সহজ-স্বাভাবিক কাব্যরসই তাঁর কাছে প্রধান আকর্ষণ। মৌলিক ছড়ার ছন্দে শুধু মুগ্ধই হননি, এই ছড়ার ছন্দকে বজায় রেখে 888sport app download apkও লিখেছেন। তিনি এই 888sport app download apkগুলোকে ছড়া বলেননি, অথচ শিশু গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যেমন – ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান’ লোকছড়াটার মোহ থেকে তিনি মুক্ত হতে পারেননি। ১৮৮৫ সালে বালক পত্রিকায় তাঁর একটি 888sport app download apk প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ – দিনের আলো নিবে এলো/ সূয্যি ডোবে ডোবে।/ আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে/ চাঁদের লোভে লোভে।/ বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে/ ছেলেবেলার গান -/ ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর/ নদেয় এল বান।’ পাঁচটি স্তবকের শেষেই রয়েছে এই শেষ দুই ছত্র। তবে শেষ স্তবকে রয়েছে ছেলেবেলার সেই গান, এভাবে – ‘কবে বিষ্টি পড়েছিল,/ বান এল সে কোথা।/ শিব ঠাকুরের বিয়ে হল,/ কবেকার সে কথা।/ … নদেয় এল বান।’
888sport live footballের নবরসে ছড়ার কোনো স্থান নেই, তাই ছড়াকে রবীন্দ্রনাথ বাল্যরস বলে অভিহিত করেন। বাল্যবয়সে ছড়ার ছন্দ ও কথা পরবর্তী কঠিন বাস্তব জীবনে মনে পড়লে হৃদয় আন্দোলিত করে। কথার পর কথা বসিয়ে ছন্দোবদ্ধ ছড়ায় টুকরো টুকরো অনেক বিচ্ছিন্ন সম্পর্কহীন ঘটনা বলা হয়, যার সঙ্গে বাস্তবে কোনো মিল নাও থাকতে পারে। ছড়া বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা অসম্ভব কিন্তু স্বপ্নজগতে দারুণ আলোড়ন তোলে। স্বপ্নময় এক রাজ্য জন্ম নেয় যেখানে হৃদয়বৃত্তির মূল্যটাই বেশি। ছড়া স্বপ্নদর্শী মনের অনায়াস সৃষ্টি বলে এর রসগ্রাহীদের কাছে রসগ্রহণে বাধা আসে না। লোকছড়ার ছন্দ আসলে ছন্দ শাস্ত্রের স্বরবৃত্ত ছন্দ। এটা রবীন্দ্রনাথের প্রাকৃত-বাংলার প্রকৃতি, প্রধানত কথ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু ছড়া পড়তে যত সহজ লেখা যে অত সহজ নয় তা তিনি প্রথম ছড়ার বই খাপছাড়ার ভূমিকায় লিখছেন, ‘সহজ কথায় লিখতে আমায় কহ, যে,/ সহজ কথা যায় না লেখা সহজে।’ আর ভূমিকার শেষ তিনটে লাইন, ‘ঠিকানা নেই আগুপিছুর,/ কিছুর সঙ্গে যোগ না কিছুর,/ ক্ষণকালের ভোজবাজির এই ঠাট্টা।’ নিয়মহীন নিয়মটাই আসল নিয়ম-মজা।
বাংলার লোক888sport live footballে প্রচলিত ছড়াগুলোকে নানা জেলা থেকে সংগ্রহ করে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে পুনরায় লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজন অনুভব করেন রবীন্দ্রনাথ। কারণ এই ছড়াগুলোর ভেতর থেকে একটা সময়ের ও স্থানের ভাষা ও ইতিহাস জানা যায় এবং একটা অকৃত্রিম সুন্দর কাব্যরস পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় দুটো জনপ্রিয় ছড়া, যা আমরা অনেকেই ছোটবেলায় বলতে বলতে খেলেওছি – ‘আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে’ এবং ‘ইকির মিকির চামচিকির’ – বাংলার বিভিন্ন জেলায় এদের উচ্চারণের ভাষা ভিন্ন, ছড়ার মজাটা এক।
ছেলেবেলায় শোনা ‘জাদু, এ তো বড় রঙ্গ জাদু, এ তো বড় রঙ্গ’ এই লোকছড়াটির প্রতি এতই আকৃষ্ট হন, অনেকটা ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুরে’র মতন, এবং ছড়াটা তাঁর মনের ভেতর এতটাই স্থায়ী জায়গা করে নেয় যে, ১৯৩৫ সালে এসে ওই ছড়াটির সামান্য পরিবর্তন করে ‘রঙ্গ’ নামে একটি 888sport app download apk লেখেন, যা প্রহাসিনী গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়। লক্ষ করার বিষয়, লোকছড়ার নকল করে লিখেও তিনি ছড়া নয়, 888sport app download apkই লিখলেন। 888sport app download apkর প্রারম্ভেই ঋণ স্বীকার করে লিখেছেন, ‘এ তো বড় রঙ্গ’ ছড়াটির অনুকরণে লিখিত। এটা রহস্যময় রবীন্দ্রনাথের অন্য এক রহস্য।
রবীন্দ্রনাথ অকপটে স্বীকার করেন, সহজ লেখা একেবারেই সহজ নয়, বরং কঠিন অনেক সহজে লেখা যায়। প্রথম ছড়ার বই খাপছাড়ার শুরুতেই এ-কথা বলেন ছড়ারই ছন্দে। খাপছাড়া ও ছড়ার ছবি পরপর দুটো ছড়ার বই এবং খুব কাছাকাছি সময়ে লেখা। শেষের বইটা অবশ্য আলমোড়ায় বসে লিখেছিলেন। এর তিন বছর পর ১৯৪০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে তিনি কালিম্পংয়ে থাকাকালে হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁকে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে তিনি অপেক্ষাকৃত সুস্থ হয়ে ওঠেন ও পরে শান্তিনিকেতনে ফিরে যান। পুত্রবধূ প্রতিমা ঠাকুরের লেখায় আমরা জানতে পারি, ‘কলকাতায় থাকার সময় শেষের দিকে যে 888sport app download apkগুলি লিখেছিলেন, বেশিরভাগ সেইগুলিই ‘রোগশয্যায়’ নাম দিয়ে ছাপা হয়। এই বই এবং ‘আরোগ্য’র অনেক 888sport app download apkই তাঁর নিষ্ঠাবান অনুরাগী সেবক-সেবিকার উদ্দেশে লেখা।’ (নির্বাণ, পৃ ২৪)। এ-কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য এই যে, এর পরই ১৯৪১ সালে তিনি ছড়া গ্রন্থের 888sport app download apkগুলো লেখেন। এ-গ্রন্থের শুরুতে অনেকটা স্বীকারোক্তির মতো, ‘অলস মনের আকাশেতে/ প্রদোষ যখন নামে,/ কর্মরথের ঘড়ঘড়ানি/ যে-মুহূর্তে থামে,/ এলোমেলো ছিন্ন চেতন/ টুকরো কথার ঝাঁক/ জানি নে কোন স্বপ্নরাজের/ শুনতে যে পায় ডাক …’। এর থেকে বোঝা যায়, ছড়া লেখার জন্য দুটো প্রধান শর্ত দরকার, এক. ধীরেসুস্থে কর্মাবস্থার অবসরে ছেলেবেলার স্বপ্নরাজ্যে ফিরে গিয়ে সেখান থেকে সবাইকে টেনে আনতে হবে, আর দুই. সহজ ভাষায় সহজ করে বলতে হবে। অস্বীকার করার উপায় নেই, কঠিনকে সহজ করে বলার মতো ভাষা ও দক্ষতা কবির ছিল। কিন্তু এই অবকাশ কবির জীবনসায়াহ্নে এসেছে বলেই মনে হয়। আমরা দেখেছি তিনি ছবি আঁকা শুরু করেন মধ্যবয়সে এবং তার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতেন। তাহলে কি একনাগাড়ে লেখা থেকে বিশ্রামের জন্য ছবি আঁকা? এও তো মনের ভাব প্রকাশের জন্য এক ভাষা। তাহলে কি ছিয়াত্তর-সাতাত্তর বছর বয়সেও আর একটা ‘ব্রেক’ চাইছিলেন? অবশ্য তারও আগে 888sport app download apk লেখার ফাঁকে নানারকম কল্পচিত্র আঁকতে দেখেছি 888sport app download apkরই মধ্যে। ছেলেবেলার স্বপ্নজগতে ফিরে গিয়ে জীবনকে আরো একবার উজ্জীবিত করা। অথবা, এমনও তো হতে পারে, মনোগ্রাহী লেখার ফাঁকে ফাঁকে ছড়া লিখেছেন এবং পরে তা একত্র করে গ্রন্থস্থ করেছেন। এ নিয়ে গবেষণা চলতে পারে। তবে রোগমুক্তির পর অলস মনের আকাশে ছেলেবেলার স্বপ্নরাজ্যের বাসিন্দারা আনাগোনা করতেই পারে। মনে রাখতে হবে, কবি এখন ক্লান্ত। ছড়ার পরেই শেষ লেখা গ্রন্থের 888sport app download apkগুলো লেখা শুরু করে দিয়েছেন। অবশ্য সব 888sport app download apk তিনি নিজে লিখতে পারেননি, মুখে বলে যেতেন, অন্যরা লিখতেন। এই শেষ লেখা শুরুর আগেই তিনি লেখেন, ‘বাঁধনটাকেই অর্থ বলি,/ বাঁধন ছিঁড়লে তারা/ কেবল পাগল বস্তুর দল/ শূন্যেতে দিকহারা।’ এভাবেই ছড়ার অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করেন। মনের এ-পরিবর্তন তাঁর কাব্য888sport live footballে ছড়া হয়ে ফুটে উঠেছে।
গান : রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে প্রিয় ছিল গান রচনা। গান লিখে এবং তাতে সুর দিয়ে তিনি যে বিশেষ আনন্দ পেতেন তা নিজেই স্বীকার করে গেছেন বারবার। প্রতিটি গান তাঁর এক বিশেষ ভাবাবেগের প্রকাশ। এই ভাবাবেগের পরিবর্তন অনির্দিষ্ট। কোনো সময়কাল দিয়ে ধরা যায় না। কখনো ধর্ম, কখনো প্রেম, আবার কখনো প্রকৃতি। তাদেরই আবার সময়ে সময়ে ভিন্ন রূপ। সকালে একরকম তো সন্ধ্যা বা রাতে অন্যরকম। এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক বা আনুষ্ঠানিক বিষয় নিয়ে ফরমায়েসি গান। রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর রচিত সব গানকে গীতবিতান গ্রন্থে সংকলিত করে গেছেন। শুধু তাই নয়, সব গানকে তিনি নিজে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন কয়েকটি বিষয় ও ভাবের ওপর – পূজা, প্রেম, প্রকৃতি, স্বদেশ, আনুষ্ঠানিক ও বিবিধ। গীতবিতান গ্রন্থের বিন্যাস মূলত কাব্যকেন্দ্রিক। যুগ-কাল-পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি যে পরিবর্তনপ্রয়াসী ছিলেন গীতবিতান গ্রন্থের তিনটে প্রকাশিত সংস্করণ তা-ই প্রমাণ করে। তিনি ষাট বছরেরও বেশি সময় ধরে গান রচনা করে গেছেন। এই বিশাল সময়ের ব্যাপ্তিতে সমগ্র সংগীত সৃষ্টি পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, গানের বৈচিত্র্যের পরিবর্তন হয়েছে সময়ের হাত ধরে। এই বৈচিত্র্য দেখা যায় সুর সৃষ্টির ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথ মূলত কবি। তাই কাব্যের মাধুর্যের পরিবর্তন হয়তো ততটা ধরা পড়ে না, যতটা সুরের উত্তরণ এবং বিবর্তন।
রবীন্দ্রনাথের গানের শিক্ষা ছোটবেলা থেকে। প্রধানত বিষ্ণু চক্রবর্তী, যদু ভট্ট, শ্যামসুন্দর মিশ্র প্রমুখ গানের শিক্ষকের কাছে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত দিয়ে এবং তার সঙ্গে বিদেশি সংগীতের সুর শেখা, যা প্রধানত জ্যোতিদাদার কাছে। ফলে তিনি নিজে যখন গান রচনায় ব্রতী হলেন, তখন এগুলো তাঁকে প্রভাবিত করে। পূজা পর্যায়ের গান সেসময় ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, ঠুংরি বা টপ্পা এসবের সুর ভেঙে একটা নতুন ধারার সুর তৈরি করছেন, যাতে রাগ-রাগিণীর ভাব আছে; কিন্তু তান ও অলংকার নেই। এগুলোকে গীতধর্মী বলা যেতে পারে। এরকম প্রকৃতি বা প্রেম পর্যায়ের গানও। পরে অবশ্য তিনি এর প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেন এবং শেষের দিকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে যে-গান আমাদের সমৃদ্ধ করেছে তাকে কাব্যধর্মী বললে অত্যুক্তি হবে না। এ-সময়ের গানের সুর 888sport app download apkর ছন্দকে অনুসরণ করছে।
গানের সুরের এই ক্রম-উত্তরণ বা বিবর্তন হয়েছে সময় ধরে এবং সেই সময়কে তিনটে ভাগে ভাগ করা যায়। দেখা যায়, গান-জীবনের প্রথমদুটো দশক তিনি যে-সমস্ত গান সৃষ্টি করেছেন তার অধিকাংশই বিশিষ্ট হিন্দুস্থানি গান, পাশ্চাত্য গান ও 888sport app প্রাদেশিক সুর অবলম্বন করে। স্বতন্ত্র রচনা প্রায়ই দেখা যায় না, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। এ-সময়ের গানগুলোর মধ্যে – তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা, কোথা আছ, প্রভু, যাও রে অমৃতধামে, শুভ্র আসনে বিরাজ, বনে এমন ফুল ফুটেছে, আঁখিজল মুছাইলে জননী, মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, সংশয় তিমির মাঝে, এত আনন্দধ্বনি উঠিল কোথায়, নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে, খাঁচার পাখি ছিল, তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা এবং আরো অনেক গান। বাল্মিকী প্রতিভা, কালমৃগয়া ও মায়ার খেলা এই সময়ে রচিত।
নতুন শতাব্দী অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে তাঁর গানে একটা পরিবর্তন দেখা যেতে লাগল। তিনি রাগ-রাগিণীর উপাদানগুলো নিলেও বাহুল্যকে বর্জন করলেন। রাগের কাঠামোর ওপর গান তৈরি করলেন কাব্যের ভাবানুসারে। হিন্দুস্থানি গান ভেঙে গান রচনার বদলে রাগের ভিত্তিতে কাব্যের ওপর গান তৈরি করলেন। সংগীত সম্বন্ধে তাঁর ভাবাবেগের পরিবর্তন দেখা যেতে লাগল যেসব গানে তার মধ্যে রয়েছে দেশাত্মবোধক গান, কারণ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে গেছেন। গান নিয়ে নানা পরীক্ষাও তিনি করেছেন এ-সময়ে। গীতিমাল্য, গীতালী ও গীতাঞ্জলি এ-সময়েই লেখা। লোকসংগীতের সুরগুলোর ব্যবহারও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ-সময়েই তিনি ছটা নতুন তাল সৃষ্টি করে তাঁর কাব্যের উপযুক্ত করে অসাধারণ গান রচনা করেন। এই গানগুলোর মধ্যে আছে – দুয়ারে দাও মোরে রাখিয়া, বাজাও তুমি কবি, এবার তোর মরা গাঙে, যদি তোর ডাক শুনে কেউ, আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে, অন্তর মম বিকশিত করো, আমার সোনার বাংলা, আমার মাথা নত করে দাও, আজি ঝড়ের রাতে, বসন্তে কি শুধু কেবল, এবার নীরব করে দাও হে তোমার, হে মোর চিত্ত, পুণ্য তীর্থে, ঘরেতে ভ্রমর এলো, জনগণমন-অধিনায়ক (মাঘোৎসবের জন্য ১৯১১ সালে), আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, যদি প্রেম দিলে না প্রাণে, এতদিন যে বসেছিলেম, নিশিদিন মোর পরানে, আমরা সবাই রাজা, পাখি আমার নীড়ের পাখি ইত্যাদি। এই গানগুলোর সময়কাল মোটামুটি কুড়ি বছর ধরা যায়। এখানে একটা কথা বলাই যায়, ভিন্ন সুরের মিশ্রণে নতুন গান রচনার খেলা খেলেছেন। জনগণমন গানটা ইংরেজি ফ্রেজিং সুরে শুরু হলেও প্রতি পঙ্ক্তির শেষে কীর্তনের হরি বোল ধ্বনির সুর মিশিয়েছেন জয় হে জয় হে জয় হে গাইবার সময়।
এরপর তিনি গান রচনা করেছেন কাব্যরসের ভিত্তিতে। 888sport app download apkই গান হয়ে উঠছে। এ-সময়ে পাঁচটি হিন্দি-ভাঙা আর চারটি
মাদ্রাজি-ভাঙা গান ছাড়া আর ভাঙা গান নেই। আলাদা করে আর গান নয়। এটাই হলো তাঁর সৃষ্টির যুগ। তাঁরই কথায়, ‘888sport appsে সঙ্গীতের প্রকৃতিগত বিশেষত্ব হচ্ছে গান, অর্থাৎ বাণী ও সুরের অর্ধ888sport promo codeশ্বর রূপ। কিন্তু এই রূপকে সর্বদা প্রাণবান করে রাখতে হলে হিন্দুস্থানি উৎসধারার সঙ্গে তার যোগ রাখা চাই। কিন্তু অনুকরণ করলেই নৌকাডুবি। … হিন্দুস্থানি সুর ভুলতে ভুলতে গান রচনা করেছি। ওর আশ্রয় ছাড়তে না পারলে ঘরজামাইয়ের দশা হয়। … গান লিখি, তাতে সুর বসিয়ে গান গাই। … এখন যা গান লিখি তা ভালো কি মন্দ, সে-কথা ভাববার সময় নেই। ওগুলি আমার একান্তই অন্তরের কথা, অতএব কারোর না কারোর অন্তরের কোনো প্রয়োজন মিটতে পারে – ও গান যার গাওয়ার দরকার সে একদিন গেয়ে ফেলে দিলেও ক্ষতি নেই, কেননা, আমার যা দরকার তা হয়েছে’ (সংগীতচিন্তা)। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এই ভাবধারাতেই, এই ভাবাবেগেই গান সৃষ্টি করে গেছেন। চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা ও শ্যামা নৃত্যনাট্য এ-সময়েই লেখা। এ-সময়ের কিছু গান – বাহির পথে বিবাগী হিয়া, যখন মল্লিকা বনে, বাজে করুণ সুরে, নৃত্যের তালে তালে, তুমি কি কেবলি ছবি, হে নিরুপমা, ওগো বধূ সুন্দরী,
কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি, ওগো কিশোর আজি, নহ মাতা নহ কন্যা, কেন নয়ন আপনি ভেসে যায়, নীলাঞ্জন ছায়া, হে নূতন দেখা দিক আরবার (শেষ জন্মদিনে লেখা) ইত্যাদি।
সৃষ্টিকর্তার ভাবাবেগ তাঁর সৃষ্টির ওপর প্রতিফলিত হয়। কিন্তু ভাবাবেগ নিজস্ব ও চারপাশের পরিবেশের ওপর অর্থাৎ স্থান-কাল ও পাত্রের ওপর নির্ভরশীল। শুধু ভাবাবেগ হয়তো কাব্য ও গান তৈরিতে সাহায্য করে। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা হয়তো কবির মনকে কিছুটা বুঝতে পারি। এই সিঁড়ি-ভাঙা অংকের উত্তর থেকে প্রশ্নে ফেরাটা প্রায় অসম্ভব। তবু কিছু চিহ্ন থেকে যায় 888sport live footballের আনাচে-কানাচে, যা থেকে সৃষ্টিকর্তার মনটাকে ছোঁয়া সম্ভব হলেও হতে পারে। সেরকমই একটা প্রচেষ্টা যেখানে রবীন্দ্রনাথের কাব্য, গদ্য, ছড়া ও গানের বিবর্তনের কিছু অংশ থেকে তাঁর সামগ্রিক মন বা ভাবাবেগের সময়ে সময়ে পরিবর্তনটা বোঝা যায়।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.