নিত্য যে পুরাণ

দেশ নাটককে দল হিসেবে এখন আর নবীন গোষ্ঠী কিংবা নবীনের গোষ্ঠী বলা যাবে না, তাদের নাট্যচর্চার বয়স বেড়েছে, দলের সদস্যরা স্থিতধী হয়েছেন এবং নাট্যসৃজনে তারা ব্যাপ্ত রয়েছেন প্রায় দেড় যুগ হতে চললো। আশির দশকের শেষাশেষি দেশ নাটকের নাট্যচর্চা যখন শুরু হয় তখন মঞ্চ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তালতায় টলমল করছে, তাদের নিয়মিত নাট্যচর্চায় ছিল এর প্রতিফলন, মহারাজার গুণকেত্তন, খেলা কিংবা রিসার্চ – এইসব নাটকে সমকালীনতার ছাপ ছিল প্রবল। রাজনীতির নাটকও যে রাজনীতিকে ছাপিয়ে গভীরতর জীবনবোধকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টায় সার্থক হয়ে উঠতে পারে সেটা তাদের পরবর্তী প্রযোজনা বিরসা কাব্য দেখে সকলে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। মাসুম রেজা প্রণীত এই নাটকে পাত্রপাত্রীর 888sport free bet ছিল বড় আকারের, সাঁওতালবিদ্রোহের ইতিহাসকে সমকালীন তাৎপর্য যোগাতে নাট্যকার কোনো মোটা দাগের ছবি আঁকতে যাননি এবং নবীন-নবীনার বিশাল এক বাহিনী নিয়ে পরিচালক শামসুল আলম বকুলও যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় রেখেছিলেন। লৌকিক আচার মঞ্চে মূর্ত করে তোলার প্রতি তাদের আগ্রহের প্রকাশও এখানে লক্ষ করা যায়। এই প্রযোজনা ইঙ্গিত দিয়েছিল যে দেশ নাটক মঞ্চকে তার সমগ্রতা নিয়ে চিনতে, জানতে ও বুঝতে চায়। এই ধারাতে তাদের পরবর্তী সফল প্রযোজনা ছিল পশ্চিমবাংলার খ্যাতিমান নাট্যকার মনোজ মিত্রের নাটক দর্পণে শরৎশশী। নাটক

হিসেবে যেটি ঐতিহাসিক বটে, নাটক করার কাহিনী, তবে এ ছিল যেন নাটক-বিষয়ে দলেরই নিজস্ব স্টেটমেন্ট। দুই ভিন্নধর্মী নাটকের সার্থক রূপায়ণের মধ্য দিয়ে নাট্যপ্রেমীরা জেনে গিয়েছিল 888sport appsের নাট্যধারায় আরেক নিবেদিত সৃষ্টিশীল গোষ্ঠী আবির্ভূত হয়েছে এবং তারা নাটক নিয়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করছে।

যে-প্রতিশ্রুতি দেশ নাটক গোড়া থেকে প্রবলভাবে মেলে ধরেছিল তার সার্থকতার স্মারক হিসেবে আমরা নিত্যপুরাণকে চিহ্নিত করতে পারি। দলের সাম্প্রতিক এই প্রযোজনা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সমালোচকদের দ্বারা নন্দিত হয়েছে এবং দেশের বাইরেও অভিনীত হয়ে খ্যাতি কুড়িয়ে এনেছে। ইতোমধ্যে নাটকের পঞ্চাশতম অভিনয়-রজনী অতিক্রান্ত হয়েছে এবং আশা করা যায় নিত্যপুরাণ শততম অভিনয়-রাত্রি পেরুতে সমর্থ হবে। কোনো নাটক সার্থক হয়ে ওঠে যে-যৌথতার ভিত্তিতে, অর্থাৎ অনেক ধরনের 888sport live chatরূপের সংশ্লেষণ ও মিথষ্ক্রিয়ায় নাটকের নাটক হয়ে ওঠা, সেটা খুব সহজ অর্জন নয়। এক্ষেত্রে নিত্যপুরাণের সফলতা নানা দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য, কেননা এখানে আমরা কেবল সফল নাট্যকার ও পরিচালককে পাই না, সমমাত্রার কাজ আমাদের উপহার দিয়েছেন অভিনেতাদল, নাটকের আবহসংগীত কিংবা পোশাক-পরিকল্পনায়ও পাই চিন্তার সমধরনের ক্রীড়াপরায়ণতা এবং সব মিলিয়ে প্রযোজনায় যোগ হয়েছে বহুমাত্রিক সাফল্য।

নিত্যপুরাণ মহাভারতের একলব্যের কাহিনী ঘিরে আবর্তিত। পুরাণকে আধুনিক তাৎপর্য দেওয়ার প্রচেষ্টা সম্প্রতি ফ্যাশন-দুরস্ত হয়ে উঠছে, আর এজন্যে মহাভারত তো এক স্বর্ণখনি হয়ে আছে। অজস্র কাহিনী-পার্শ্বকাহিনী, চরিত্র-পার্শ্বচরিত্র নিয়ে পঞ্চপাণ্ডব ও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের যে চিরায়ত বর্ণনা সেখানে যে-কোনো 888sport live footballকারবারি খুঁজে পান স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যবহারের যোগ্য বহু আখ্যান। ঘষেমেজে আপন অভিরুচি অনুযায়ী তা সাজিয়ে তুলতে তাই তাঁরা সহজেই প্রলুব্ধ হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 888sport app download apk কিংবা নাটকে বারবার ফিরেছেন মহাভারতের কাছে, নতুনভাবে বলেছেন পুরাণের কোনো কথা। বুদ্ধদেব বসুও প্রবল টান অনুভব করেছেন মহাভারতের আখ্যানের প্রতি। আর বাংলা রঙ্গমঞ্চে মহাভারত তো সর্বদা সজীব হয়ে থেকেছে। তবে প্রত্যেক যুগেই 888sport live football888sport live chatীরা পুরাণকে বিবেচনা করেছেন তাঁদের নিজস্ব সময় ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা জারিত করে। সেক্ষেত্রে মাসুম রেজাও সমকালীন 888sport live chatীদের প্রচেষ্টার অনেক নিকটবর্তী থেকেছেন, তাঁদের দ্বারা নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁর আখ্যান নির্বাচন ও উপস্থাপনা শাঁওলী মিত্রের প্রযোজনা নাথবতী অনাথবৎ-কে 888sport app download for android করিয়ে দেবে এবং তিনি একলব্যকে নাটকের কেন্দ্রে স্থাপন করলেও তা ক্রমে দ্রৌপদীকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে আর সদ্গুরু ও ব্রাত্য-শিষ্যের দ্বন্দ্ব থেকে নাটক পৌঁছে যায় সমাজে 888sport promo codeর অধস্তনতার সম্পর্কের জটাজালে। সেই দিক দিয়ে দেখলে মাসুম রেজা অনেক বেশি জটিল বিন্যাস তাঁর ‘কাহিনী’র গাত্রে বয়ন করে দিতে পেরেছেন। নাটকের রচ888sport promo codeতিতে তিনি অবশ্য বড়ভাবে প্রভাবিত হয়েছেন সেলিম আল-দীন ও তাঁর বর্ণনাত্মক রীতি দ্বারা। সেলিমকে তিনি সাক্ষাৎগুরু মেনেছেন, কিন্তু মাসুম রেজা যতোটা না নাট্যকার ঠিক ততোটাই নাট্যপরিচালক, ফলে বর্ণনার যে-আধিক্য রয়েছে তাঁর রচনায়, মঞ্চায়নে সেখান থেকে তিনি অনেক সরে এসেছেন এবং দুই সংলাপের মধ্যবর্তী বর্ণনা পরিহার করে প্রচলিত সংলাপনির্ভর নাটকের ভাষ্যই দাঁড় করিয়েছেন মঞ্চে। অধিকন্তু তাঁর নাটকের যে ক্লাইম্যাক্স কিংবা নাট্য-আখ্যান যে-রুদ্ধশ্বাস পরম্পরায় এগোয় সেটা তো পাশ্চাত্যরীতির অনেক কাছাকাছি। সেই দিক দিয়ে এই নাটক একই সঙ্গে বর্ণনাত্মক রীতির সফলতা ও সীমাবদ্ধতা উভয়কে প্রকাশ করেছে প্রত্যক্ষে ও পরোক্ষে।

মহাভারতে একলব্যের যে-কাহিনী আমরা পাই সেখানে দ্রৌপদীর কোনো ভূমিকা নেই, কিন্তু মাসুম রেজা অনার্য নিষাদ গোত্রীয় একলব্যের সঙ্গে আর্যশ্রেষ্ঠ পঞ্চপাণ্ডবদের সংঘাতে দ্রৌপদীকে এনে কাহিনীর যে নতুন বিন্যাস দাঁড় করিয়েছেন সেখানে তাঁর সার্থকতা অনস্বীকার্য। দ্রোণাচার্য দীক্ষাদানে সম্মত হননি নিুগোত্রীয় বালক একলব্যকে, আর প্রত্যাখ্যাত একলব্য সর্জবনে ফিরে দ্রোণের মৃন্ময় মূর্তি গড়ে একনিষ্ঠ সাধনায় শিখেছেন শরবিদ্যা। মৃগয়ায় আগত কুরুপাণ্ডবদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে এই সর্জবনেই এবং সপ্তশর নিক্ষেপ করে পাণ্ডবদের সারমেয়র কণ্ঠসংরোধ করে তিনি আপন অলীক কুশলতার পরিচয় প্রদান করেন। আর্যশ্রেষ্ঠত্বের জাত্যাভিমান বজায় রাখতে অর্জুন দ্রোণাচার্যের শরণ নেন। তিনি একলব্যের কাছ থেকে গুরুদক্ষিণা বাবদ কৌশলে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি দাবি করেন এবং এভাবে হরণ করেন একলব্যের শরনিক্ষেপ ক্ষমতা। মহাভারতের এই কাহিনীতে উচ্চাবচ-দ্বন্দ্বের বিভিন্ন মাত্রার প্রকাশ রয়েছে এবং রাজনীতি-সচেতন আধুনিক নাট্যকার এখানে অনেক ধরনের সামাজিক সত্যের প্রতিফলন খুঁজে পেতে পারেন। তবে কাহিনীর এই উপরকাঠামো থেকে পাত্রপাত্রীর অন্তরে প্রবেশ করতে চেয়েছেন মাসুম রেজা এবং তিনি দ্রৌপদীকে মঞ্চে এনে 888sport promo code-পুরুষের সম্পর্কসূত্রের জটিলতার খেলার সঙ্গে মিলিয়ে দেন কাহিনীকে। কাজটি খুব সহজ ছিল না এবং সার্থকতার সঙ্গে তা করতে পেরেছেন নাট্যকার আর সেই সূত্রে তাঁর কল্পনার বিস্তার প্রমাণ করেছেন।

পঞ্চপাণ্ডবদের সঙ্গে বাকযুদ্ধের পর ধনুর্বিদ্যার কৌশল-যুদ্ধে অবতীর্ণ হন একলব্য এবং বৃক্ষশাখে ঝুলন্ত দ্রৌপদীর কুন্তল দ্বিখণ্ডীকরণের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে পাণ্ডববধের অধিকার অর্জন করেন, তবে স্থির হয় রক্ষা পাবেন কেবল এক পাণ্ডব। সৌভাগ্যবান সেই পাণ্ডব কে হবেন, এই প্রশ্ন ঘিরে নাট্যসংঘাত তীব্র হয়ে ওঠে। একলব্য আহ্বান জানান রাজকুলবধূ পঞ্চপাণ্ডবভোগ্যা দ্রৌপদীকে, তিনি এসে যেন ব্যক্ত করে যান পঞ্চস্বামীর মধ্যে কে তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রিয়, অন্তরের গভীরে কার ভালোবাসায় তিনি মনেপ্রাণে সমর্পিতা, তিনিই বেঁচে যাবেন প্রাণে। এমনি প্রশ্ন নিয়ে নাটকের দ্বিতীয়ার্ধে মঞ্চে প্রবেশ করেন দ্রৌপদী, যাঁর প্রসঙ্গ ইতোমধ্যে বারবার উচ্চারিত এবং যিনি আসেন কাহিনীর জটিলতা-আকীর্ণ পটভূমিকায়, চমৎকার এক নাট্য-আবহ সৃষ্টি করে। দ্রৌপদীর আবির্ভাবের পর নাটক বাইরের জগৎ থেকে অনেক বেশি করে প্রবিষ্ট হয় অন্তরের জগতে এবং যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকুল, সহদেব ও ভীমসেনের ভালোবাসার আকুতি, তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে 888sport promo codeর প্রতি অনুসৃত দৃষ্টিভঙ্গি ভেতর-বাহিরকে আবার একই সঙ্গে প্রতিফলিত করে। এই জটিল পরীক্ষার   সরল সমাধান যে-নাট্যকারকে আকর্ষণ করবে না, সেটা ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। কাহিনীর নবতর বিন্যাস থেকে আবার ফিরে যাওয়া হয় মহাভারতের মূল আখ্যানে, দ্রৌপদীর ভালোবাসার পরীক্ষার উত্তরটুকু আর জানা হয়ে ওঠে না, জিজ্ঞাসাগুলো প্রবল হয়ে জেগে থাকে এবং সেই প্রশ্নের মীমাংসার আগেই সর্জবনে আবির্ভূত হন দ্রোণাচার্য, অনার্য শিষ্যের কাছে দাবি করেন গুরুদক্ষিণা আর শঠতা দিয়ে রুদ্ধ করেন বহু সাধনায় অর্জিত নিুবর্গীয় উখান। এই নাটকীয় মুহূর্তে ভীমসেন চিৎকার করে ওঠেন, ‘হায় একলব্য হায়’, যে-আর্তনাদে আছে মমত্ব, আছে হাহাকার, গণ্ডি পেরোতে না-পারার বেদনাও সেখানে মিশে থাকে। আর দ্রৌপদী, আদরে-সোহাগে ভরে-থাকা রাজকুলবধূ অপেক্ষায় থাকেন কবে তিনি পাবেন প্রকৃত প্রেমের সাক্ষাৎ, যে-ভালোবাসার চকিত ইশারা তিনি দেখেছিলেন একলব্যের নিবেদনে।

কোনো সুলিখিত নাটক দাবি করে দক্ষ ও কুশলী মঞ্চায়ন এবং সেই বিচারে নিত্যপুরাণের ভাণ্ডারে সাফল্যের অনেক উপাদান রয়েছে। সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় সামগ্রিক নাট্যচিন্তার বিষয়, নাটকের উপস্থাপন, অভিনয়, সংলাপ, দেহভাষা, নৃত্যভাষা, পোশাক, মঞ্চসজ্জা, আলোক-পরিকল্পনা ইতাদি সমন্বিতভাবে উপস্থাপন করতে পেরে দেশ নাটক দলগত সিদ্ধির পরিচয় রেখেছে। শরীরী ভাষার প্রয়োগ দ্বারা পরিচালক অনেক নাট্যমুহূর্ত নির্মাণ করেছেন, যা একই সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন ও অর্থবহ। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাঁকে যুগিয়েছেন যোগ্য সমর্থন। আর সবার ওপর নজর কেড়েছে একলব্যের ভূমিকায় দিলীপ চক্রবর্তীর কৃতকর্ম। তাঁর অভিনয় যথার্থ অর্থেই পারফরম্যান্স, অ্যাকটিং নয়। এই তরুণের ভবিষ্যৎ মঞ্চ-সফলতা আমরা কামনা করি। দ্রৌপদীর ভূমিকায় নাজনীন হাসান চুমকি দর্শকমনে দাগ কাটতে সমর্থ হবেন। বন্যা মির্জা যে একটি গৌণ চরিত্রে অভিনয় করার সৎসাহস দেখিয়েছেন এবং প্রমাণ করেছেন মঞ্চে কোনো আবির্ভাবই গৌণ নয়, সেজন্যে তাঁকে সাধুবাদ জানাতে হয়। সংগীত এই নাটকের সঙ্গে সমতালে চলেছে এবং রেকর্ডে ধারণ করে নয়, বাদনকারীরা ছিলেন মঞ্চ-সংলগ্ন, সেটা আবহসংগীতকে ভরপুর আমেজ এনে দিয়েছে। পোশাকে রঙের ব্যবহার বুদ্ধিপ্রভ, ঠিক তেমনি বস্ত্রখণ্ডের বিভিন্ন ধরনের প্রয়োগ। আলোক-পরিকল্পনা ভিন্নতর ব্যঞ্জনা-সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায় দেশ নাটক সম্মিলিতভাবে নাটকসৃজনে সফলকাম হতে পেরেছে।

তবু কিছু কথা থেকে যায় এবং সেটা যতোটা না সমালোচনামূলক তার চেয়ে বেশি আক্ষেপধর্মী। এমন চমৎকার নাট্য-সম্ভাবনা আরো বেশি সফল হতে পারত যদি পরিপূর্ণ মনোযোগ, শ্রম ও অনুশীলন এর পরতে পরতে জড়িয়ে থাকত। নাটক এমন এক 888sport live chat যার বাঁধুনি হতে হয় টানটান, নির্মেদ, নিষাদপুত্র একলব্যের ধনুর্বাণের মতোই নিপুণ লক্ষ্যভেদী। সেখানে সামান্যতম শৈথিল্যও অর্জনকে হাতছাড়া করে দেয়, করতলগত হয়েও 888sport live chatার্জন ক্ষুদ্র কোনো ফাঁক বা ফাঁকি গলিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। এ-কথাগুলো কোনো বিশেষ ত্রুটিনির্দেশক নয়, সামগ্রিকভাবে এই উপলব্ধি জাগে নিত্যপুরাণ দেখে। অভিনেতা অভিনেত্রীরা দু-একজন ব্যতীত বাকিরা উৎরে গেছেন কিন্তু মনে দাগ কাটতে পারেননি। ব্লকিং চলনসই হয়েছে, তবে সুরে-ছন্দে-লয়ে বাধা হয়নি, যা এই নাটকে কাম্য ছিল। একই কথা নাট্যকার সম্পর্কেও প্রযোজ্য। তিনি নাট্যভাবনায় মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, ভাষার ওপর দক্ষতার ছাপ রয়েছে রচনায়, কিন্তু স্থানে স্থানে অমনোযোগ ও অযত্নের ছাপও সুস্পষ্ট। শিথিল বাক্যের অজস্র উদাহরণ টানা যায়, তৎসম শব্দ-সমৃদ্ধ সংলাপে রয়েছে একান্ত কথ্য প্রয়োগ (পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রোণাচার্য কী হয় আপনার!), ‘মেধা আর মাধুর্য’ মিশিয়ে যে-দীক্ষা দেন দ্রোণাচার্য সেটা ঠিক বোধগম্য হয় না। শরনিক্ষেপে সারমেয়র কণ্ঠরোধ করে সেই কৃতিত্বকে নির্দেশ করে একলব্য যখন বলেন, “সপ্তশর নিক্ষেপের এই অভূতপূর্ব ও অসাধারণ ‘শৌর্য’ থেকে কি আমার পরিচয় স্পষ্ট নয়!” তখন ‘কৌশল’ স্থলে ‘শৌর্য’ কথাটির প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন জাগে। কিছুকাল পরেই তো আমরা দেখি ভীমসেনের বিস্মিত প্রশ্নের জবাবে একলব্য বলে, “আমি ছাড়া এই ‘কৌশল’ জগতে আর কেউ জানে না।” অথচ সংলাপ-রচনায় সিদ্ধির স্বাক্ষর তো নাট্যকার প্রভূতভাবে দিয়েছেন, তিনিই লিখেছেন এমন শ্রুতিমধুর সংলাপ, “তৃণ সে যতই পত্রপুষ্পে ভরে উঠুক, অশ্বত্থের সাথে চলে কি তার তুলনা? ক্ষুদ্র বলিভুক, তার যতই হোক গতি, শ্যেণের উচ্চতায় কি সে উড়তে পারে কোনোদিন? উল্কামুখী শৃগাল, কী ক্ষমতা তার অবাধ্য হয় অরণ্যের চিতার সিংহের?” অন্যদিকে আমরা দেখি দ্রৌপদী ও একলব্যের মধ্যে আর্তিভরা করুণ রসঘন দৃশ্যে একলব্য সংলাপ উচ্চারণ করে (দিলীপ চক্রবর্তী এক্ষেত্রে সৃজনে সক্ষম হয়েছেন অসাধারণ নাট্যমুহূর্ত), “অরণ্যচারী আমি, একা, না বেসেছি ভালো, না পেয়েছি ভালোবাসা কারো। ভালোবাসা চাই, দ্রৌপদীর ভালোবাসা, এক ফোটা ভালোবাসা দ্রৌপদীর। ঐ অঙ্গুলিপঞ্চকের যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ, তার নখ থেকে তুলে দেওয়া এক ফোটা ভালোবাসা। দূর্বা ঘাসের ডগায় এক বিন্দু শিশিরের মতো। সেই ভালোবাসা দিয়ে দ্রৌপদী, পূর্ণ করুন একলব্যের হৃদয়।” কিন্তু এর পরক্ষণেই একেবারে বাংলা live chat 888sportের দৃশ্য, আঃ আঃ করতে করতে আর্তরবে ভেঙে পড়ে দ্রৌপদী, কী হয়েছে একলব্য জানতে চাইলে বলে, ‘এক অজানা অদৃশ্য বাণবিদ্ধ হয়েছি আমি।’ অজানা বাণে বিদ্ধ হওয়ার এমনতর প্রকাশ্য রূপেও ক্ষান্ত হয় না দ্রৌপদী, বলে, ‘তুমি ছুঁড়েছ সে বাণ।’ এইসব অসংলগ্নতা ও শৈথিল্য দূর করা খুব কঠিন কাজ ছিল না, কিন্তু নাট্যশরীরে এমনি উপস্থিতি নিত্যপুরাণের মতো উল্লেখযোগ্য প্রযোজনার প্রতি সুবিচার করেনি। এই শিথিলতার উৎস কোথায় সেটা আমাদের জিজ্ঞাসা হয়েই থাকলো।

তবে সব মিলিয়ে উচ্চকণ্ঠে সাধুবাদ জানাতে হয় দেশ নাটককে, নবীনেরা প্রাজ্ঞ হয়েছে এবং তার স্বাক্ষর প্রদান করেছে সৃজনশীলতায়, এর চেয়ে আনন্দময় ঘটনা আর কী হতে পারে! সেই সাথে বয়সে বাড়লেও দলে বহাল আছে নবীনের উচ্ছলতা, স্পর্ধায় তারা আকাশস্পর্শী হতে পারে এটাও তো এক সুখকর অভিজ্ঞতা। পুরাণের নব-উত্থান ঘটিয়েছে নিত্যপুরাণ, প্রাচীনের এই নবীনকরণের মধ্যেই তো 888sport live chatের সার্থকতা, সেই প্রস্ফুটন যে দেখতে পেলাম মঞ্চে সেজন্যে তাদের কাছে ঋণী হয়ে রইলাম আমরা। কামনা করি নবীনের প্রাজ্ঞতা ও প্রাজ্ঞজনের নবীনতা অব্যাহত থাকুক দেশ নাটকে, সমৃদ্ধি আসুক দেশের নাটকে।