শুক্রবারের পূর্বাহ্ণ। জাহিন বসে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের পুকুরপাড়ে। চারদিকের প্রাচীন গাছগুলোর ছায়া নিয়ে পুকুরের জল আরো নিকষ নীলের গভীরে নিজেরাই গোসলে মগ্ন। প্রতি শুক্রবারের মতো হাফপ্যান্ট পরে সাঁতার কাটার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে এলেও কী এক অনুভূতি তাকে অবশ করে রেখেছে। গ্রামের বাড়ির পুকুরটার সঙ্গে অনেক টুকরা টুকরা 888sport sign up bonus নামের ভালোবাসা তাকে হয়তো ওভাবে আনমনা করে রেখেছে। কিন্তু‘ জাহিন পুকুরের জলের ভেতর বাবার করুণ মুখটার প্রতিবিম্ব দেখল যেন। সে চমকে উঠল। একটা সরিষার আগুনলাগা হলুদ দিগন্তের সোনালি বিকেল তার চোখের সামনে উন্মোচিত হতে থাকল। কৈশোরে সেই দিগন্তছোঁয়া মাঠের সামনে বসে কত ভাবনায় ভেসে গেছে সে। প্রেম ভাবনাটুকুর উন্মেষের আগেই সে প্রেমে পড়েছিল। তা আর কারো নয়; দোয়েলের লেজ-দোলানো, তিড়িং-বিড়িং ফড়িঙের পাখনা মেলা এই দিগন্তবিস্তৃত আর অবারিত আকাশছোঁয়া দিগন্তের প্রতি ছিল তার প্রেম। এই মনোমুগ্ধকর, ভাবনাবিলাসী দিগন্ত তাকে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছিল। মগ্নতার স্বপ্ন।
তারপর বুয়েটের জীবন। পেট্রোলিয়াম ও খনিজসম্পদ কৌশল বিভাগে বিদ্যার্জনে খুব ব্যস্ততা থাকলেও একসময় সেই ব্যস্ততার মাঝেও স্বপ্ন ভর করত। বাবা-মায়ের পরিতৃপ্ত মুখটা মনে পড়লেই সেইসব স্বপ্ন ডানা মেলে আরো বিস্তৃত হতো। কিন্তু বিপর্যয় এলো, শেষ বর্ষ পার হতে না হতেই।
পুকুরজলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে 888sport sign up bonusকাতরতায় ডুবে গিয়েছিল জাহিন। ঠিক তখনই তার মুঠোফোন বেজে উঠল। ফোনটা ধরতে তার হাত কাঁপল। কিছুক্ষণ সে ইনকামিং কলটার দিকে তাকিয়ে থাকল। বড় খালা ফোন করেছেন। ধরতে গেলেও কেটে গেল লাইনটা। ঠিক তখনই আবার মামার ফোন এলো। মামা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো বাবা, দুলাভাই অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। তাঁকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি।
কী আশ্চর্য! তার চোখের দৃশ্যকল্পে নিমগ্ন জলের মাঝে বাবাকে সে একটু আগে ছাদের কার্নিশ থেকে পড়ে যেতে দেখছিল! চমকে সে থমকে গেল। অনেক প্রশ্ন করতে গিয়েও মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল সে। বাবা না থাকলে তার সমূহ বিপদের সংকেতগুলো গাছের পাতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, মৃদু বাতাসের ছন্দে ছন্দে বয়ে চলেছে যেন। পৃথিবীটাকে নিঃসঙ্গ আর একা মনে হওয়ার সঙ্গে তার নিজেকে স্বার্থপর মনে হলো। তাহলে বাবারা কি পৃথিবীর এমন এক সম্পর্কের নাম, যিনি সন্তানের জন্য প্রতিরক্ষা-ব্যূহ? তাঁর অনুপস্থিতি এমনকি বিনাশের সময়ও নিজের আত্মরক্ষার প্রসঙ্গটাই সবার আগে মনে আসে?
সে উঠে দৌড়াতে চাইল। কিন্তু মনের প্রতিরক্ষাহীনতার চেতনা তাকে এতো আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, শরীর একেবারেই স্থির হয়ে জমে আছে যেন। জাহিনের আজ মনে হলো, মানুষ আসলে নিজকেই ভালোবাসে বলে অন্যের যত্নের সমানুপাতিক তার ভালোবাসা। বাবার অসহায় চেহারাটা মানসপটে ভেসে উঠতেই তার যত্ন করার জন্য এবার জাহিনের ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠল। তার দ্রুতপদের গতি বাবাকে দেখার জন্য, তাঁকে সারিয়ে তোলার আকুতির সঙ্গে দ্রুততর হতে থাকল।
ছাত্রাবাসে এসে সে কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিতেই একজন ছাত্রনেতা এসে কক্ষের সব ছাত্রের উদ্দেশে বলল,
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা শোডাউন হবে। ওদের সঙ্গে আমরাও মিলব। আন্দোলনে এই রুমের যদি কাউকে অনুপস্থিত পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একজন প্রতিবাদ করল,
ভাই, এটা বুয়েট। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমরা নই। এই শেষ বর্ষে এসে মিছিল-মিটিং করার সময় আমাদের নেই।
এই কুত্তার বাচ্চা, দেশ বড় না তোর বুয়েট আর পরীক্ষা বড়? একটা দল নিজেরা ভোটে অংশগ্রহণ না করেই সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করবে, হরতাল-ধর্মঘট আর জ্বালাও-পোড়াও করে সারাদেশ অচল করে ধ্বংস করবে আর তুই বাল তুলে লাল করে দিবি …
আপনার জন্য দেশ, কারণ আপনি নেতা হতে চান। আমার জন্য বই কারণ আমি পেটপোষা সামান্য চাকুরে অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। এ দেশের যেমন চিত্র।
তাদের কথায় মন নেই জাহিনের। মামার ফোনে বলা বাক্যটা তাকে অস্থির করে তুলল,
বাবার পাঁজরের পাঁচটা হাড় ভেঙে গেছে …
নেতাগোছের ছেলেটা তার সঙ্গে তর্কে মেতে ওঠা তরুণের ওপর তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এসব দেখার মতো রুচি এবং সময় কোনোটাই নেই জাহিনের। সে কাঁধে ঝোলানোর ছোট্ট ব্যাগটায় কয়েকটা কাপড় চালান করে দিয়ে ছাত্রাবাস থেকে কেটে পড়ল।
ডক্টর’স ক্লিনিক তাঁকে রেফার্ড করেছে মেডিক্যাল কলেজে। তারা বলেছে, তোমার বাবার অবস্থা অনেক ক্রিটিক্যাল।
আন্তঃ অথবা অন্তনগর কোনো বাস চলছে না। রিকশা নিয়ে রেলস্টেশনে এসে জাহিন জানল সকাল ৯টায় একটা ট্রেন আছে। কিন্তু পথে পথে কে বা কারা রেলের ফিশপ্লেট তুলে ফেলায় সেই ট্রেনটা 888sport appয় কখন ফিরবে তা-ই নিশ্চিত নয়। স্টেশনে মানুষ গিজগিজ করছে। ট্রেনের টিকেট না কাটলে টিকেট পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠবে।
তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো বাবা!
কিন্তু টিকেট কাটার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। যে ট্রেন উত্তরবঙ্গে ফিরে যাবে তা এখনো 888sport appর স্টেশনে এসে পৌঁছতেই পারেনি।
তুমি কতদূর জাহিন? তোমার বাবার মুখ দিয়ে রক্তবমি হচ্ছে, বাবা … তবু মেডিক্যালের ডাক্তারদের বিকার নেই। তুমি না এলে …
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, ট্রেনের খবর নেই। বন্ধুদের পরামর্শ চাইলে তারা তার কথায় কর্ণপাত না করে বলল,
ক্যাডার কুত্তার বাচ্চারা সুজনকে মেরে তার হাত ভেঙে দিয়েছে। তার মাথা ফেটে গেছে। শালার চিকিৎসাটাও করাতে হচ্ছে লুকিয়ে লুকিয়ে। পুলিশ সুজনের নামেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে এতো দ্রুত একটা কেস সাজিয়ে ফেলেছে। থাক এসব, তুই ট্রেনের আশায় বসে না থেকে একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে যা …
অ্যাম্বুলেন্স যদি অগ্রিম টাকা পরিশোধ করতে বলে? ব্যাগের ভেতরের গোপন পকেটে লুকিয়ে রাখা দামি হাতঘড়িটা বের করে সেদিকে তাকিয়ে থাকল জাহিন। ছিনতাইয়ের ভয়ে গত আটটা বছর এভাবেই এই রোলেক্স ব্র্যান্ডের দামি ঘড়িটা পাহারা দিয়েছে সে। একজন স্কুলশিক্ষকের সন্তানের হাতে এই ঘড়ি কত বেমানান – 888sport appয় অনেকের সঙ্গে মিশতে গিয়ে সে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। হলি ক্রসের এক ছাত্রীকে টিউশনি করাতে গেলে বাড়ির কর্ত্রী বেশ সহৃদয় ব্যবহারই করছিলেন। কিন্তু একদিন জাহিনের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়েই তার চোখের ভাষা বদলে গেল। যেন তিনি একজন বুয়েট পড়–য়া ছাত্র নয়; একজন ফোর টুয়েন্টি ছাত্র যে তার মেয়েকে পটাতে এসেছে ভেবে তার দিকে সন্দেহভরা চোখে তাকিয়ে আছেন। তার চোখের ভাষা জাহিনকে অস্বস্তিতে ফেলল। একজন টিউশনি করা মামুলি মানুষ রোলেক্সের মতো দামি ঘড়ি পরে ভদ্রমহিলাকে অপমানিত করল যেন।
জাহিন সেদিন বুঝেছিল, মূল্য দিয়ে যারা দুনিয়ার সবকিছু মূল্যায়ন করতে চায় তাদের কাছে কম মূল্যের পরিবারের একজন মানুষের কাছে দামি কোনো দ্রব্য থাকা অপরাধের। এই পয়সা আসে কোত্থেকে Ñ তাদের মনে হয়তো এমন প্রশ্ন সবার আগে উঁকি দেয়। মেয়েটাকে পরদিন থেকে সে আর পড়াতে গেল না। তার মা ফোন করে প্রশ্ন করল,
তুমি আমার মেয়েকে পড়াতে এলে না কেন?
দেখুন ম্যাডাম, আমার মাথাটা রোলেক্স ঘড়ির থেকে অনেক দামি। যারা সেটা মূল্যায়ন করতে সমর্থ নয়, তাদের সঙ্গে সময় নষ্ট করে কী লাভ?
কেন, তোমার মাথাটার মূল্যায়ন করলে কি আমার মেয়েকে পড়ানোর জন্য কোনো টাকা নেবে না? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে থেমে গেল জাহিন। তার শিক্ষক বাবার কথা মনে পড়ল। বাবা তাকে সবসময় বলতেন,
বাবা সেইসব মানুষকে বন্ধু বানাবে না এমনকি সেইসব মানুষের সঙ্গে মিশবেও না, যারা জ্ঞান এবং নিজের সংস্কৃতিচর্চা থেকে বিচ্যুত হয়েছে। যদি তাদের বন্ধু বানাও, তাহলে একসময় দুঃখ পাবে।
কেন বাবা?
কারণ তাদের অনুভব আর বোধের জায়গা শূন্য। নিজের স্বার্থে এরা যে কারো সঙ্গে প্রতারণা করতে দ্বিধা করে না।
কিন্তু এখন ছাত্রীর মায়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জাহিনের কান্না পেল। এমন প্রশ্নে কী বলা যায় – ভাবতে গিয়ে তার মাথা ধরে এলো। এসএসসিতে ভালো ফল করার জন্য বাবা তাকে এই দামি ঘড়িটা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। বাবা, জগতের এইসব বাস্তবতা সম্পর্কে কি কিছুই জানেন না? নাকি জেনেও এই কাজটা তিনি ইচ্ছা করেই করেছেন যেন ছেলে বাস্তবের অন্তরালের পরাবাস্তবতা দেখে বড় হওয়ার জন্য লড়াই করতে শেখে। কিন্তু, সে একটা ব্যাপারে খুব নিশ্চিত যে, এই উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করতে গিয়ে বাবাকে অনেক বছর ধরে টাকা জমাতে হয়েছে। তার মানে, তিনি তার সন্তানের চমকে দেওয়ার মতো ফল অর্জনের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। এক ঘড়ি উপহার দিয়ে বাবা তাকে জগতের কত রং চেনালেন! সে জানে এই উপহারটুকু দেওয়ার জন্য তার স্কুলশিক্ষক বাবা স্কুলে এমনকি টিফিনটুকুও হয়তো খাননি, বাদ দিয়েছেন নিজের সব শখ আর আহ্লাদ। বাবার সময় আর কোনোদিন রঙিন হয়নি। মধ্যবিত্ত এক পরিবারে যে বাবার মানসপটে একজন মেধাবী আর ভালো সন্তানের মুখচ্ছবি ভাসতে থাকে সেই বাবার মতো হতভাগ্য পৃথিবীতে আর কেউ নেই। সন্তানের ভবিষ্যৎ সফলতার প্রত্যাশায় এই হতভাগ্যতা তাদের কপালে অহমিকার তিলক হয়ে যায় বলে ‘ত্যাগ’কেই তারা গভীর মমতায় লালন করেন।
না, ঘড়িটা তার বাবার 888sport sign up bonus। এটাকে সে বিক্রি করবে না। 888sport sign up bonusটাই আসলে জীবনের তরঙ্গায়িত ঢেউ আর ভালোবাসা, ভাবল জাহিন। যে-888sport sign up bonusগুলো আনন্দে হৃদয়কে উদ্ভাসিত করে সেখানেই লুকিয়ে আছে ভালোবাসার গোপন সব সূত্র। আর যেসব 888sport sign up bonusতে আছে লাঞ্ছনা ও বেদনা, মানুষ সেখান থেকেই বস্তুত শিখে নেয় পলায়নপরতা।
অনেক চেষ্টা করেও কোনো অ্যাম্বুলেন্স সে জোগাড় করতে পারল না। রোগী না থাকলে নাকি পথে অ্যাম্বুলেন্সও পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশি ভাড়ার কথা বলেও কোনো লাভ হলো না। মহাসড়কের অনেক জায়গায় গাছের ডাল ফেলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
তোমার বাবার মেরুদ-ের নিচের অংশে বড় ধরনের ফ্র্যাকচার। ডাক্তার বলছেন …
সারাজীবন বিছানায় শুয়ে থাকা বাবাকে কল্পনা করতে গিয়ে জাহিনের চোখ জলে ভিজে উঠল। চোখ মুছতে গিয়ে খেয়াল করল তার পাশে এসে কখন যেন এক তরুণী বসেছে। ঝাপসা দৃষ্টিতে ভেসে ওঠা তরুণীর মুখটা ক্রমশ স্পষ্ট হলে সে নিজেকে সামলে নিল। কী আশ্চর্য, তার স্কুলজীবনের সহপাঠী অর্চনা বীথি তার পাশে বসে আছে? অর্চনার সঙ্গে আজ ছয় বছর পর দেখা। ওর 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ কি শেষ? কিন্তু জাহিনের দিকে তাকিয়ে অর্চনার হৃদয় মনে হয় গলে গেল,
জাহিন, কী হয়েছে? তুমি কাঁদছিলে?
বীথি, অ্যাই মিন অর্চনা বীথি? তুমি!
হ্যাঁ, জাহিন। এতোদিন পর তোমাকে দেখলাম। কিন্তু তুমি … কেন, জানতে পারি? বীথির প্রশ্নে নিজেকে সামলে নিল জাহিন। বলল,
তোমার মুখ দেখে আমারও মনে হচ্ছে, বড় কোনো ঝামেলা হয়েছে। বাসায় যাচ্ছো?
মা খুব অসুস্থ। এখনই বাসায় যেতে বলছে। কিন্তু তার কী অসুখ, কোথায় এখন – আমার এসব প্রশ্নের উত্তরে সবাই আমতা আমতা করছে। অর্চনার গলার স্বর রুদ্ধ হয়ে এলো। কাঁপা এবং আবেগজড়িত কণ্ঠে সে বলল,
এই হরতালের মধ্যেই সবাই যেতে বলছে। আমার প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে। আমি তো বুঝতে পারি …। কিন্তু জাহিন, বলো প্লিজ। তুমি কেন রেলস্টেশনে? কেন কাঁদছিলে?
বাবা অ্যাক্সিডেন্ট করে এখন হাসপাতালে, বীথি। তোমার মতো সবাই আমাকে ভিন্নভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। বুঝতে পারছি না, এখন বাবার আসলে কী অবস্থা। কিন্তু অ্যান্টির কী হয়েছে জানতে পারোনি? এই প্রশ্নে টলটল জলে অর্চনার চোখ ভরে উঠল …
হার্ট অ্যাটাক। আমি বুঝতে পারছি, মা আর নেই।
বলে চোখ ঢাকল অর্চনা। জীবনের এই নিষ্ঠুর সময়ে, এতোদিন পর একই উদ্দেশে আগত দুই সহপাঠীর এভাবে সাক্ষাতের মাঝে ঈশ্বর কী ইঙ্গিত রেখেছেন, জাহিন তা জানে না। কিন্তু, মা অথবা বাবার এমন পরিস্থিতিতে সমস্ত চরাচরকে অন্ধকার মনে হলেও তাদের এখন একে অন্যকে বড় আপন মনে হচ্ছে। নির্জন কোনো বরফের মহাসাগরে অথবা পর্বতে পথ হারানো পথিক যেন তারা – একে অন্যের বেদনার গায়ে উত্তাপের চাদর বানিয়ে দুজন কাছে আসছে দুজনের। বাবা-মায়ের জীবন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা তাদের কিশোরবেলার দেখা স্বপ্নপতনের বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দিয়ে একে অন্যের প্রতি সহমর্মী করে তুলল। অর্চনা এবার কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
আমার জন্য মায়ের লাশটা নিয়ে সবাই হয়তো অপেক্ষা করছে …
কী অদ্ভুত! এ যেন সেদিন, কয়েকজন বন্ধু জাহিনকে ধরে এক বিকেলে অর্চনাদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিল। অ্যান্টি জাহিনকে দেখে বলেছিল,
বাপরে, ধন্য হলাম বাপ! তুমি তবু এলে। বীথি তোমার কথা খুব বলে। বলে, ‘মা আল্লাহ যদি জাহিনের মাথাটা আমাকে দিত! তাহলে টো টো করে ঘুরে বেড়াতাম।’ আমি ওকে বলেছি, জাহিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায় না বলেই ওর মাথা অমন।
বীথির মায়ের বানানো গাজরের হালুয়া, কচুরি আর চিড়াভাজার সঙ্গে ছোলামাখার অপূর্ব স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। কিন্তু মানুষটা আর নেই!
আগের রাতের ৯টার ট্রেন ছাড়ল পরদিন বিকেল ৩টা ৪৭ মিনিটে। কী আশ্চর্য, ট্রেন ফাঁকা! নাকি তাদের এই বগিটা ফাঁকা। ফিশপ্লেট তুলে রাখার ভীতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাহলে?
মা হারানোর আশঙ্কার মুহূর্তে একজন শোকে মুহ্যমান মেয়ে, আর মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাওয়া বাবার একটি ছেলের জন্য ঈশ্বর আজ কত দয়ালু হয়ে উঠেছেন! মা অথবা বাবাকে হারালে চেনা মানুষের মাঝে সন্তানরা তার ছায়া খুঁজে বেড়ায়। টিপটিপ 888sport sign up bonusময় বৃষ্টির এক বিকেল বুকের ভেতর হাহাকারের বজ্রপাত হয়ে যায়। মায়ের সঙ্গের সব 888sport sign up bonus বীথিকে অবশ করে ফেলছিল। সে জাহিনের কাঁধে আলতো করে মাথা রেখে নীরব কান্নার জন্য আশ্রয় খুঁজল। বিকেল পেরিয়ে সাঁঝ নেমে এলো। সাঁঝের আলোতে সারাজীবন এতো রহস্যময়তা আর মায়া খুঁজে পেলেও, অর্চনার মনে হচ্ছে তার কিশোরীবেলার আবেগ সাঁঝের মায়াতে আসলে মৃত আত্মার বিষন্নতা ছাড়া আর কিছু ছিল না। সন্ধ্যা পেরিয়ে অন্ধকার এক অচেনা জগতে হিসহিস, ঝিকঝিক শব্দ তুলেও রেলের লাইনে আলো ফেলে ফেলে সাবধানে চলছিল যন্ত্রদানবটা। সামনে আলো থাকলেও পেছনের এই দিকটায় থিকথিকে অন্ধকার। বগির ভেতরের আলোও নেভানো। যেন লুকিয়ে লুকিয়ে এতবড় এক ট্রেনের পথচলা!
ট্রেনটা ধীরে ধীরে তখন গতি হারিয়ে ফেলছিল – যেন এই যন্ত্রদানবটাও থেমে গিয়ে অন্ধকারের নির্জন শান্ততার কোলে আশ্রয় খুঁজছে। একসময় ট্রেনটা থেমেও গেল। চারদিক ভুতুড়ে শান্ত। বগির ভেতর এই নির্জনতা, আর দিগন্তজোড়া মাঠের অন্ধকারের শান্ততা দুই তরুণ-তরুণীর কাছে মহার্ঘ্য কোনো প্রেমের মুহূর্ত বয়ে আনল না। বরং তাদের বিমূর্ত অসহনীয় কষ্ট তাদেরই হৃদয়ের অশান্ততার খাদ্য হয়ে উঠেছে। কষ্টকেও আলিঙ্গন করার মতো তাদের ভাগ্য হলো না। বাইরে অসংখ্য টর্চের আলো জ্বলছে-নিভছে। জাহিন বগির দরজায় এসে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল। মানুষের আর্তনাদের সঙ্গে উল্লাসও ভেসে আসছে। টর্চের জ্বলা-নেভার মাঝে সে এ-ও দেখল যে, প্রাণপণ চেষ্টায় নিজেকে ছোটানোর চেষ্টা করলেও কারা যেন বিস্রস্ত পোশাকের মেয়েটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা নিশ্চয়ই কোনো বগির যাত্রী! জাহিনের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। সে দ্রুত এসে জানালায় মাথা রেখে নুয়ে পড়া বীথির হাত ধরে বলল,
বীথি আমাদের পালাতে হবে … তাড়াতাড়ি ওঠো।
অর্চনা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে। যেন, বোঝার চেষ্টা করছে জাহিনের মাথা কি নষ্ট হয়ে গেছে? সে তাকে নিয়ে এই জীবন থেকে, নাকি জীবনের পথে পালাতে বলছে? কিন্তু অমন আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকা তার আর হলো না। জাহিন তার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বলল,
ট্রেন লুট হচ্ছে। মেয়েদের ধর্ষণের জন্য ওরা ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এই কথাতেও অর্চনার ঘোর কাটল না,
ওরা!
মানুষকে নিয়ে যারা রাজনীতির খেলায় নেমেছে। সাধারণ মানুষের লাশ না পড়লে কি আন্দোলনের পক্ষ অথবা বিপক্ষ নিজেদের স্বার্থকে পোক্ত করতে পারবে?
বীথির হাত ধরে সে দৌড়াতে গিয়ে থেমে গেল। একদল ‘ধর’ ‘ধর’ বলে এলোপাতাড়ি দৌড়াচ্ছে। তারা কি তাদের দেখে ফেলল? জাহিন ট্রেনের পেছন-গতির পথ বেছে নিল। দুই বগির মাঝখানের ফাঁকার নিচ দিয়ে প্রায় ক্রল করে তারা উলটোদিকে এলো। এ পাশে এসেই তিনজন মিলে এক 888sport promo codeর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার এক ভয়ংকর দৃশ্যে তাদের চোখ আটকে গেল। এই দৃশ্য তখনো ঘোরের মাঝে থাকা বীথিকে এবার সচেতন করে তুলল। সে দ্রুত পা চালাতেই পাথরের ওপরের কাঠের সঙ্গে পায়ে ধাক্কা খেল। ডান পা রেলের জয়েন্ট নাটের শক্ত লোহা দিয়ে কেটে গেল। সেই পায়ের ব্যথা ভুলে বীথি শক্ত করে জাহিনের হাত ধরে তাকে অন্ধের মতো অনুসরণ করে গেল। ততক্ষণে দুজন তাদের পিছু নিয়েছে। ট্রেনের বগিগুলোর পশ্চাৎ অংশগুলো পেরিয়ে যেতে যেতে তারা একটা ব্রিজ পেয়ে গেল। কিন্তু তারা ব্রিজে উঠে মনে হয় ভুল করল। পেছনে ধাওয়া করা লোকগুলো থেমে গিয়ে গুলি ছুড়ছে, নাকি তখনো ধাওয়া করছে, জাহিনের তা ভাবার সময় ছিল না। সে নিচে বর্ষার প্রমত্তা যমুনার গর্জন শুনল। নদীর এই ভয়াল রূপ শুধু 888sport appsের বন্যার কারণে নয়। নেপাল-ভারতের প্রবল বন্যার স্রোতের তোড় এসে মিলেছে বাংলার এই নদীতে। বীথি কি সাঁতার কাটতে জানে? এই প্রশ্ন কেন মাথায় এলো জানে না জাহিন।
কিন্তু ভাবনাটাই যেন একটা বুলেট হয়ে বিদ্ধ করল বীথিকে। একটা গুলির শব্দ আঁধারের বুক চিরে, নদীর ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দকে বিধ্বস্ত করে মনুষ্যবিহীন এই জগতের চারদিক কাঁপিয়ে তুলল। অর্চনা আর্তনাদ করে জাহিনকে আঁকড়ে ধরল। তপ্ত রক্তের ঘ্রাণ জাহিনকে অবশ করে ফেলল যেন।
বীথি?
আহ, জাহিন …
বীথি! অর্চনা?
বীথি বুঝতে একটু সময় নিল যে, সে সত্যিই বুলেটবিদ্ধ
হয়েছে। ছুটির দিনে বারান্দায় বসে আয়েশ করে চা খেতে খেতে সে পত্র-পত্রিকায় এমন কত খবর পড়েছে! বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যার দৃশ্য, বাঁচার জন্য রক্তাক্ত বিশ্বজিতের ব্যাকুলতা – এসব দৃশ্যে যদিও অনেকক্ষণ চুপ করে সে বসে থেকে চা ঠান্ডা করে ফেলেছে; কিন্তু সিরিয়া, ফিলিস্তিন অথবা আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিভীষিকার খবরে, আহত-নিহত শিশুকে আঁকড়ে মায়েদের আহাজারির ছবি দেখতে গিয়েও তার চায়ের স্বাদে ভাটা তো পড়েনি! তরবারির নৃশংসতা আর বুলেটের ভয়াবহতা Ñ কোনটা মানুষকে বেশি আকুল করে? তরবারি দিয়ে মানুষকে আঘাতের দৃশ্যে ভেতরটা স্তব্ধ হয়ে যায়, বেঁচে থাকা নিরর্থক হয়ে যায়, চা ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু বুলেটবিদ্ধ মানুষ সেভাবে মানুষকে তাড়া করে না কেন? যারা বুলেট ছোড়ে অর্চনা তাদের কাউকে নৃশংস বলে পত্রিকায় সম্বোধিত হওয়ার খবর দেখেনি, কোনোদিন পড়েওনি। এই বোধের পার্থক্য কি শুধু মানুষের প্রতি আস্থা অথবা আস্থাহীনতার কারণে? মানুষ হয়েও মানুষকে কাছ থেকে খুন করার দৃশ্যে মানুষের সব বিশ্বাস আর আস্থার স্থানটুকু শূন্য হয়ে যায় বলে চা ঠান্ডা হয়ে যায়? নাকি বুলেটবিদ্ধ মানুষের পাশে কোনো একজন মানুষ সবসময় দাঁড়িয়ে যায় – এমন ভাবনায় আস্থা রেখে অর্চনাও সারাজীবন চায়ের কাপে পরবর্তী চুমুক দিলেও তা আর বিস্বাদ লাগেনি। আজ তার এই বুলেটবিদ্ধতার পেছনেও তাকে আস্থায় নেওয়া একজন তরুণের সংগ্রাম আছে। আছে মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসার ইতিহাস। বীথি শক্ত করে জাহিনকে জড়িয়ে ধরল,
আমার কী সৌভাগ্য দেখো! মায়ের মৃত্যুকে আর তার 888sport sign up bonusকে সারাজীবন আর বয়ে বেড়াতে হবে না। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য জাহিন, তোমাকে এভাবে চিনতে পারার পর আর কিছুদিন বেঁচে থাকার ইচ্ছাটুকুকে …
বাঁ পাঁজরের পাশ থেকে ফিনকি দিয়ে ঝরা তপ্ত রক্তের স্রোত তার বোধকে তাড়নার জগতে 888sport sign up bonus হাতড়াতে বললেও তার শরীর ক্রমশ শীতল হয়ে আসছে। জাহিন ধরে আসা কণ্ঠে বলল,
বীথি … তোমার কিছুই হবে না। আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নেবো, নিশ্চয়ই।
এই ভুল করো না। জা … হি … ন।
তা হয় না। তা হয় না।
চোখটা অন্ধকারেও সয়ে এসেছিল। হৃদয়টা অন্ধকারের ভাষাটাও রপ্ত করেছিল। কিন্তু বীথির চোখের সেই অভিযোজন হারিয়ে যাচ্ছে। চোখ থেকে দূর আকাশে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে দেখতে পাওয়া তারাগুলোর আলো ঝাপসা থেকে ঝাপসাতর হয়ে উঠছে। এক একটা তারা ছড়িয়ে আর আকাশ এবং মেঘের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়ে মায়ের মুখ হয়ে যাচ্ছে। জীবনের এই অন্তিম মুহূর্তে কত কথা বলতে ইচ্ছা করছে! জাহিনের জন্যই সারাজীবন এতো কথা সে জমা রেখেছিল! অথচ কৈশোর থেকে যৌবনের এই সময় পর্যন্ত সব কাক্সিক্ষত সময় এক স্বপ্নতরুণের সঙ্গে কাটাতে চাইলেও, কী এক আড়ষ্টতায় জাহিনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাকে সে দমন করে রেখেছিল।
অষ্টম শ্রেণির এক বিকেল বীথির 888sport sign up bonusতে ভেসে উঠল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংকে বিশেষ কৃতিত্ব নিয়ে মাস্টার্স করা কলেজের উপাধ্যক্ষ আলী হোসেন স্যারের অংকের টিউশন ক্লাস। জাহিনসহ তারা আরো সাতজন তাঁর কাছে গণিতের পাঠ নিত। স্যার রহস্য করে বলছেন,
এই অংকটা তোরা কেউ করতে পারবি না। তোদের মধ্যে যদি কেউ এই অংক কষতে পারিস তাকে আমি সারাবছর টিউশন ফি ছাড়াই পড়াব। তিনি একটু থেমে যোগ করলেন,
সত্যিই, বড় ক্লাসের একটি অংক ভুলবশত আমাদের পাঠ্যবইয়ে সংযোজিত হয়েছে।
আলী স্যারের কথায় ক্লাসে পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। অধিকাংশই গভীর মনোযোগে বই-খাতার মধ্যে ডুবে আছে। আদনান আর মিসির অংক মেলানোর আশা বাদ দিয়ে নির্ভার ভঙ্গিতে কলম দিয়ে দাঁত ঠোকাচ্ছে। তার কয়েক মিনিট পর জাহিন বলল, স্যার অংকটা আমার হয়েছে। আলী হোসেন স্যার তাচ্ছিল্যভরে হেসে বললেন,
বল বেটা, তোর অংকের ফলাফল কী এসেছে?
৪৫৬ স্যার।
মানে, বইয়ে দেওয়া ফলাফলের সাথে মিলে গিয়েছে তাই তো?
জি, স্যার।
এই তো ভুলটা করেছিস। আর কেউ কি আছিস যার অংকটা করা হয়েছে?
দুজন ভিন্নভিন্ন অযুত 888sport free bet জানালেও বাকি কারো মাথায় অংকটা খেলছিল না। সুতরাং আলী স্যার সদম্ভে ঘোষণা করলেন,
এই শহরের গণিতের সব ধেড়ো ধেড়ো শিক্ষক নিয়ে আমি বসেছিলাম। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অংকটার ফলাফল হবে ৭৬। তোরা ফলাফলটুকু তোদের বইয়ে ঠিক করে নে। বলে, তিনি ব্ল্যাকবোর্ডে তিন ধাপে অংকটা কষে দেখালেন। জাহিন দাঁড়িয়ে বলল,
স্যার, গণিত বইয়ের ফলাফল ঠিক দেওয়া আছে। স্যার ভ্রু কুঞ্চিত করে বিরক্ত কণ্ঠে বললেন,
ওই বেটা, তুই আমার চেয়ে বেশি ম্যাথ বোঝোস? তোর মাথা নষ্ট নাকি! আয় দেখি, ব্ল্যাকবোর্ডে। বইয়ের ফলাফলের সাথে মেলানোর জন্য তুই কীভাবে অংকটা ভুল করলি – আমরা সবাই দেখি।
বলে তিনি ক্লাসরুমে জাহিনের চেয়ার-ডেস্কে বসলেন। জাহিন পাঁচ ধাপে অংকটা করল এবং অংকটা ধরতে স্যার কোথায় ভুল করছেন তা খুব বিনয়ের সঙ্গে বুঝিয়ে বলল। বাইরে ফাগুন-বিকেলের কনে দেখা আলোয় বিস্তৃত মাঠের প্রান্তে পলাশের গুচ্ছে লাবণ্যময় প্রভা এই সময়কে যে কারো মনলোকে চিরতরে প্রথিত করার জন্য যথেষ্ট। আলী স্যার রুমাল দিয়ে বারবার মাথা মুছছেন। চশমা খুলছেন আর পরছেন। একসময় তিনি উঠলেন। চিন্তিত পদক্ষেপে অন্য কোনো সমাধানকে খুঁজতে খুঁজতেই ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে গিয়ে জাহিনকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
তুই বেটা, টিউশন পড়িস ক্যান?
গণিত এক 888sport live chat স্যার। আপনার মতো শিক্ষকের কাছে তার রহস্যটুকু শেখার জন্য।
আলী হোসেন স্যার কলেজ পর্যন্ত আর কোনোদিন অন্য কোনো ছাত্রকে পড়াননি। অংক নিয়ে তিনি মেতে উঠেছিলেন জাহিনের সঙ্গে এবং তার কাছ থেকেও টিউশন ফি নেওয়া তো দূরের কথা, বীথি জানে – স্যার তাকে কত ভালোবাসতেন! বিকেলে জাহিনকে নিয়ে ফুটবল খেলার মাঠে বন্ধুর মতো তারা দুজন হাঁটতেন। হাস্যোজ্জ্বল মুখে কীসব গল্প করত দুজন।
জাহিনের সঙ্গে দেখা করে তাকে কিছু প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করত, সেই বয়সে অমন জটিল অংকটা সে কীভাবে করেছিল? জগতের সব ম্যাথের মধ্যে যে রহস্য তেমন এক রহস্যময় মাথা আর মন নিয়ে জন্মানো জাহিনকে অনেক কথা বলতে চাইলেও সেই রহস্যময়তার সূত্র ধরেই বীথি জেনেছিল, কোনো একদিন, কোনো এক অন্ধকার রাতে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠা এক ভুতুড়ে আলোর শহরের শেষ এবং নির্জন প্রান্তে জাহিনের সঙ্গে তার নিশ্চিত দেখা হবে। এ নিয়ে সে কম স্বপ্নও দেখেনি।
স্বর্গের কোনো এক আলো কি বীথিকে আগেই বলে দিয়েছিল যে, এই স্বপ্ন-ইচ্ছার মাঝেই লুকিয়ে আছে জীবনের যবনিকাপাত? জীবনের মাঝে যেভাবে মৃত্যুও চুপটি আর ঘাপটি মেরে জড়িয়ে থাকে? কিন্তু জাহিন বেঁচে থাকুক, দীর্ঘ দীর্ঘ কাল। মহান আল্লাহর কাছে বীথি এই প্রার্থনা সন্তর্পণে করল। এবং সে নিশ্চিত, স্রষ্টা তার এই প্রার্থনা শুনবেন। যাকে স্রষ্টা এমন মেধা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, তাকে নিয়ে তাঁর কোনো উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্য তাকে দিয়ে পূরণ না করানো পর্যন্ত তিনি তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন …। এবং জাহিনের নিরাপত্তা নিয়ে দুই চোখের ঘোরে ক্রমশ গাঢ় হয়ে ওঠা অন্ধকারকে প্রাণপণে তাড়িয়ে সে জাহিনকে বলল,
তাই-ই হয়। আমাকে টানলে তোমার নিজের জীবনও হুমকির মধ্যে পড়বে। আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করবে জাহিন, প্লি … জ …
বলো, অর্চনা।
অ … র্চ … না? তুমি সারাজীবন আমাকে এই নামেই মনে করো … উফ … আমার চোখ থেকে সব আলো নিভে যাচ্ছে।
অর্চনা, আমাকে শক্ত করে ধরো। রেলসেতু পার হয়ে আমরা একটা হাসপাতাল খোঁজ করব।
তার আর প্রয়োজন নেই। আমার আর সময় নে … ই। কিন্তু জাহিন, কখনো কাউকে বলার প্রয়োজন নেই যে, আমরা একসঙ্গে একই ট্রেনে সহযাত্রী হয়েছিলাম।
না, অর্চনা … এভাবে বলো না। তা হয় না।
হয়। আমি তোমার নির্জন একাকিত্বে বাস করতে চাই। প্লি … জ।
নিচে পানির তোড় আর জলের প্রমত্তায় জেগে ওঠা ছন্দভাঙার গান বীথির বেদনার্ত কণ্ঠে যেন আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছে। বুলিয়ে যাচ্ছে মায়ার স্পর্শ। কী আশ্চর্য! মা হারানো এই লগ্নে নিজেকে ক্রমশ হারিয়ে ফেলতে তার খারাপ লাগছে না। মনে হচ্ছে মায়ের আত্মা তার আত্মার ভেঙে পড়া ডানার শক্তি হয়ে তাকে উড়িয়ে নিতে এসেছে। পিপাসার্ত ঠোঁটে কথাগুলো আর ফুটতে চাইছে না।
উফ, একটু পা … নি, জাহিন। সেতুর রেলিংয়ের সঙ্গে শরীরটা এলিয়ে রেখে ব্যাগের পকেট থেকে পানির বোতল বীথির মুখে ধরতেই সে তার অনন্ত পিপাসার্ত গলার মাঝে একসঙ্গে সব জলবিন্দু নিতে চাইল। তারপর ধাতস্থ হয়ে বলল,
তোমাকে আমি সেই কিশোরীবেলা থেকে হিংসা করেও ভালোবেসেছি। ঘৃণা করেছি তোমার মেধাকে। সবসময় মনে হয়েছে, তোমার মেধাটুকু আমাকে তোমার কাছে যেতে দেয় না। অথচ অদ্ভুত ব্যাপার কি জানো? আমি তোমাকে ভালোও বেসেছি তোমার প্রবল মেধার কারণেই … দূর থেকে … অ … নে … ক দূর থেকে …
বীথির রক্তমাখা শরীরটা আঁকড়ে ধরতেই রক্তের ঘ্রাণে তার চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে উঠল। বাবারও এমন রক্তক্ষরণ হচ্ছে! পুরো দেশটাকেই 888sport promo codeর জরায়ুর অ্যান্ড্রোকার্টিয়াম বলেই তার মনে হলো। জরায়ুর ঝিল্লিপর্দা বা অ্যান্ড্রোকার্টিয়াম নবজাতকের ত্বক হতে চাইতে গিয়ে কোনো প্রাণের অস্তিত্বকে আলিঙ্গন করতে না পেরে 888sport promo codeর ঋতুস্রাবের সময় ঝরে যায়। প্রতিমাসে একবার মা হতে না পারার ব্যর্থতা এভাবেই জরায়ুর কান্না হয়ে যায়। ঋতুস্রাব যেমন শুধু রক্ত নয়, বরং অ্যান্ড্রোকার্টিয়ামের ঝরে যাওয়ার রক্তক্ষরণমাত্র, তেমনি এই 888sport apps এমনকি এই বিশ্বে যত রক্তক্ষরণ ততবার মানুষকে মানবিক হয়ে ওঠার, তাদের মৃত্তিকালগ্ন হওয়ার আহ্বান। কিন্তু মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা তার স্বপ্নকে বপন করে রাখে আকাশে বলে তাদের বায়বীয় হয়ে যেতে হয়। বিশ্বজুড়ে তাপিত প্রাণের এই বায়বীয় রূপ মানবতাকে আর ধারণ করতে পারছে না বলেই মানুষের এতো পতন! পতনের রক্তরক্ষরণ!
জা … হি … ন আর এ … ক … টা অনুরোধ; এ দেশে থেকো না … আজকের দিনটা তোমাকে তাড়া করুক Ñ আমি চাই না। এ দেশে থাকলে আমাকে নিয়ে যেটুকু 888sport sign up bonus তা যাতনা হয়ে যাবে।
হ্যাঁ, তুমি আজ থেকে আমার অর্চনাই হয়ে থাকবে Ñ যেখানেই থাকি। কিন্তু আমার জন্য তোমাকে বেঁচে থাকতেই হবে, অর্চনা। আমরা না সহযাত্রী। তোমার পথটাই আমার পথ …
স্রষ্টা তোমাকে ভালো একটা মাথা দিয়ে এই পৃথিবীতে কোনো না কোনো উদ্দে … শ্যে পাঠিয়েছেন। তোমাকে আমার ইচ্ছা পূরণের জন্যই বেঁচে থাকতে হবে।
জাহিন আর কোনো কথা বলল না। অর্চনার মাথাটা কাঁধে ফেলে সে দ্রুত পা চালাতেই বীথি তাকে বলল,
কোনো লাভ নেই। আমার ক … ষ্ট হচ্ছে। এই শেষ সময়ে আমাকে আর কষ্ট দিয়ো না, জা … হিন। বরং এই অন্ধকারেও তোমার চোখের আলো … টুকু দেখতে দাও। দা … ও, প্লি … জ।
অর্চনার জিহ্বা শব্দের উচ্চারণকে ধরার জন্য তার ঠোঁটকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারছে না। তার শব্দগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে। কাঁধ থেকে অর্চনাকে নামিয়ে সেতুর রেলিংয়ের গা ঘেঁষে সে বসে পড়ল। গভীর আর মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকাল অর্চনার চোখে,
অর্চনা …
মানুষের মেধাটা কখন তার চোখের আলো হয়ে যায় জানো, জা … হিন? যখন সে তার স্বপ্নকে মানুষের মাঝে, মাটির কাছে জলের মাঝে জল হয়ে খুঁজে বে … ড়া … য়। তুমি একটু আগে যখন 888sport promo codeর অ্যান্ড্রোকার্টিয়ামের ঝরে যাওয়ার সঙ্গে মানবতার পতনের সূত্র খুঁজছিলে – আমি তোমার চোখে চেয়ে ঠিক তা পড়ে নিলাম …
চমকে উঠল জাহিন। কার সঙ্গে সে? কার রক্তমাখা শরীরটা আঁকড়ে আছে এতোক্ষণ? অর্চনা নামের এই মানবীর শরীরে
স্বর্গের সব দূত আর অ্যাঞ্জেলরা ভর করেছে কি? অর্চনা তার এই ভাবনাটুকুও ধরে ফেলল,
হ্যাঁ, জীবনে একবারই এই বোধ আসে। এই দেহ ছেড়ে চলে যাওয়ার কালে তোমার মনের কথনটা আমার প্রাণের কান দিয়ে শুনতে পাচ্ছি সেজন্যেই। আমাকে মনে হলেই জেনো, অর্চনা তোমাকে ভালোবাসত বলে তোমার আত্মার কথনটা আমার কান দিয়ে না হলেও শুনতে পেয়েছিলাম …।
জাহিনের দুচোখ ভরে আসা অশ্রুবিন্দুরা এবার টপটপ জল হয়ে ঝরে পড়ল,
তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না, অর্চনা।
তুমি বাবাকে সমাধিস্থ করে মায়ের কবরের পাশে একটু দাঁড়িয়ো … আমার আত্মার উপস্থিতি তাকে জানিয়ো …
প্রাণটা কেঁপে উঠল জাহিনের। বাবা? তাহলে বাবাও কি
এতোক্ষণে …
অর্চনা কথা বলার সব শক্তি হারিয়ে ফেলছিল। শেষবার অস্ফুট স্বরে শুধু বলল,
আবার বলছি, আমার লাশটা এই নদীতেই সমাধিস্থ করো। ফেলে দিও প্রবহমান জলে। এই নদীমাতার দেশের স … ব … খানে আ … মি মিশে গেলেই …
আর কিছু বলতে পারল না অর্চনা। শেষবার জাহিনের কলার শক্ত করে ধরতে চেয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল জাহিনের চোখে। তার মুখে এবার স্নিগ্ধ হাসি ফুটে উঠল। ছড়িয়ে গেল তার ডানহাত, নুয়ে পড়ল শরীর।
অর্চনার নুয়ে পড়া এমন সমর্পিত শরীরটা নিয়ে জীবনে এই প্রথম শব্দ করে কেঁদে উঠল জাহিন।
মৃত্যুপথযাত্রী এক 888sport promo codeর প্রথম প্রেমে পড়া এক যুবকের আবেগের তোড় প্রমত্তা নদীর স্রোতে কান্না হয়ে দ্রুতগতিতে ছুটছে অর্চনার নিস্পন্দ, প্রাণহীন শরীরটা নিয়ে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.